আনিনিসসুনাকের সংলাপ

চরম উদাস এর ছবি
লিখেছেন চরম উদাস (তারিখ: শনি, ১৪/০২/২০১৫ - ১:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ নির্দলীয় সচেতন সুশীল নাগরিক কমিটির (আনিনিসসুনাক) সভায় বলে যাচ্ছিলেন কামাল হোসেন,
- এই যে পেট্রোল বোমা মারছে বিরোধীদল ...

কেউ একজন গলা খাঁকারি দেয়। তিনি ভুল বুঝতে পারেন। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় হতে হলে কখনো সরকার, বিরোধীদল এ জাতীয় শব্দ সরাসরি উচ্চারণ করা উচিৎ নয়। দাঁড়িপাল্লা সমান রাখার জন্য একবার বিরোধীদল উচ্চারণ করলে, একবার সরকার কথাটাও উচ্চারণ করতে হবে। নাহলে পাল্লা একদিকে হেলে পড়বে। কিছুদিন আগে সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি থেকে একজনকে বের করে দেয়া হয়েছে। তার পাঁচ মিনিটে দেয় একটা বক্তৃতায় মোট ২৭ বার সরকারীদল, আর ২৯ বার বিরোধীদল শব্দ ছিল। বিরোধীদলের সমালোচনা দুইটা বেশী হওয়াতে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিনি আসলে একটু আওয়ামী ঘেঁষা। এই ঘটনার পর থেকে একদিকে ঘেঁষে যাবার ভয়ে কেউ সহজে আর সরকার বা বিরোধীদল জাতীয় শব্দ ব্যাবহার করে না। গুনতিতে একটু ভুলচুক হলে একদিকে ঘেঁষে পড়তে হবে।
কামাল হোসেন দ্রুত সংশোধন করে বলেন,
- এই যে পেট্রোল বোমা মারছে দুর্বৃত্তরা, কেন মারছে? মারছে কারণ দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। আলাপ আলোচনার পরিবেশ নেই। একটা শিশুকেও যদি ঘরে বন্দী করে রাখা হয়, শিশু কান্নাকাটি করবে। রাগ করে এটা সেটা ভাঙ্গবে। সেই ক্ষেত্রে দোষটা কি পুরোপুরি শিশুকে দেয়া যায়? এই ক্ষেত্রে সমাধান একটাই শিশুর সাথে কথা বলতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে। তার সাথে সংলাপের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।

দেশের অবস্থা দিনকে দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছিল তাতে সবাই আশাই ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়। এবার বুঝি আর কোন সমাধান নেই। দিনের পর দিন পেট্রোল বোমার আঘাতে একে একে পুড়ে মরাই বুঝি দেশের মানুষের নিয়তি। সমাধান চলে আসলো আচমকাই। দেশের দশ বারোজন বিশিষ্ট নাগরিক মিলে উদ্যোগ নিয়ে 'আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ নির্দলীয় সচেতন সুশীল নাগরিক কমিটি' ব্যানারে বের করেই ফেললো সমাধানের একটা উপায়।সভা শেষে আনিনিসসুনাকের সবাই একমত হল, সব সমস্যার সমাধান সংলাপে। তাই কাজ নয়, কথা এই নীতিতে আগাতে হবে। দেশের রাজনীতিবিদদের তো আর ঘাড় ধরে সংলাপে বসানো সম্ভব না। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। সিদ্ধান্ত হল আনিনিসসুনাকের নেতৃত্বে দেশের নিরপেক্ষ নির্দলীয় সচেতন সুশীল মানুষজন সংলাপ করবে পেট্রোল বোমাতে পুড়ে যাওয়া মানুষের সাথে, তাদের পরিবারের সাথে। কথা বলে তাদের কষ্ট দূর করবে, স্বজন-হারাদের কষ্ট কমাবে। এই সংলাপের সাফল্য দেখে দেশের বখে যাওয়া রাজনীতিবিদরাও এগিয়ে আসবে। নিজেদের মধ্যে কথা বলে ভেদাভেদ দূর করবে। তালিকা করা হল দেশের বড় বড় নিরপেক্ষ নির্দলীয় সচেতন সুশীল মানুষদের।

২।
সোনা বানু, তারা মিয়া আর তার ছেলে সুজনের খবর পেয়ে আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধিদল নিয়ে রংপুর চলে আসেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির প্রধান আনু মুহম্মদ । চিৎকার করে কাঁদছিল তারা মিয়া - মোর ছোল আর বউক আল্লা তুই কারি নিলু ক্যা। নিজেও পুড়েছেন তারা মিয়া। কিন্তু স্ত্রী সোনাবানুর পুড়ে গেছে আশি ভাগ, দশ বছরের সন্তান সুজনের পঁচানব্বই ভাগ। সুজন চলে গেছে গতকাল রাতে, স্ত্রী গেল আজকে বিকেলে। পুড়েছে আট বছরের মেয়ে আরজিনাও, তবে বেঁচে আছে এখনও।
আনু মুহম্মদ বলেন, মন খারাপ করবেন না ভাই। এর বিচার হবেই। এইসব পেট্রোল বোমা হামলার দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে নিতে হবে।
পাশ থেকে তার সহকর্মী ফিসফিস করে তার কানে কিছু বলেন। তিনি গলা খাঁকারি দিয়ে আবার বলেন,
এইসব পেট্রোল বোমা হামলাকারী ও নির্দেশকারী যেই হোক না কেন, তার বিচার করতে হবে।
পাশ থেকে তার সহকর্মী আবার ফিসফিস করে কিছু বলে।
তিনি সংশোধন করে বলেন,
মূল কথা হচ্ছে পেট্রোল বোমা বন্ধ করতে হবে। এমনিতেই দেশের তেল গ্যাস সব পাচার হয়ে যাচ্ছে। তার উপর যদি এভাবে পেট্রোল বোমা বানিয়ে বানিয়ে দেশের সব তেল শেষ করে দেয়া হয় তবে আমাদের কি হবে? দেশের মূল্যবান তেল দিয়ে বোমা বানানো বন্ধ করতে হবে।
তারপরেও পাশ থেকে সহকর্মীর ফিসফিসানি থামে না। বুঝতে পারেন পাল্লা এখনও একদিকে হেলে আছে।
তিনি যোগ করেন,
- সেইসাথে গুম ও ক্রসফায়ারও বন্ধ করতে হবে।
তারপর একটু থেমে শ্লোগান দেয়ার মতো করে বলেন,
- আমার সাথে সাথে বলুন, পেট্রোলবোমা... ক্রসফায়ার বন্ধ কর
তারা মিয়া বিড়বিড় করে বলে,
- পেট্রোল বোমা বন্ধ কর... ক্রসফায়ার বন্ধ কর।
আনু মুহাম্মদ খুশি হয়ে হয়ে বলেন,
- ব্যথাটা কি একটু কম লাগছে না এখন?
তারামিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। পাশে শোয়া আরজিনাও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

৩।
ফেনীর দাগনভুঞাতে কাৎরাচ্ছিল মিলন, খোকন,বেলাল, মামুন, হোসাইন, মানিক, সোবহান, সবুজ, মাকসুদ, ও সেমনা খাতুন। কাৎরাতে কাৎরাতে একজন একজন করে তাদের পোড়ার গল্প বলতে থাকে আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধি শফি হুজুরের কাছে। শফি হুজুরের বয়স হয়েছে। বার্ন ইউনিটে বসে এদের পোড়ার গল্প শুনতে শুনতে তাঁর চোখ লেগে যায়। মিলন, খোকন,বেলাল, মামুন, হোসাইন, মানিক, সোবহান, সবুজ ও মাকসুদের গল্প শেষ হয়ে গেলে তিনি চোখ খুলনেন। সেমনা খাতুন বলছিল তখন। পোড়া শব্দটি বারবার শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে যান শফি হুজুর। এই পোড়ার দেশের অবস্থা যে কি হবে কে জানে। দেশে যেভাবে নাস্তিকতা দিনকে দিন বাড়ছে তাতে দেশের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার। গত সপ্তাহে বাবুনগরীর কাছ থেকে খবর পেয়েছেন একদল নাস্তিক মিলে নাকি সবার সামনে ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে নাস্তিকতার উৎসব করবে। বাবুনগরী থেকে থেকে অনেক উদ্ভট খবর আনে। কিন্তু যদি এটা সত্যি হয় তবে কি হবে? বাংলার মাটিতে আস্ত একটা কোরআন শরীফ যদি পুড়ে যায় নাস্তিকের হাতে? কি জবাব দিবেন তিনি উপরওয়ালার কাছে? ভাবতে ভাবতে আবেগে তাঁর চোখ ভিজে যায়। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। তিনি বেঁচে থাকতে পবিত্র গ্রন্থের একটা পাতাকেও পুড়তে দিবেন না। মনে মনে শপথ করেন। তারপরেও চোখের জল বাধ মানে না। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন,
- ইয়া খোদা, রহম করো।
শফি হুজুরের কান্না দেখে সেমনা খাতুন কথা থামিয়ে দেয়। হুজুরের পবিত্র কান্নার জল দেখে খনিকের জন্য হলেও শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়।

৪।
মাইশার খবর পেয়ে আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের সেন্ট্রাল রোডের বাসায় গিয়ে হাজির হন দেশবরেণ্য লেখক সাংবাদিক আনিসুল হক। মাহফুজা বেগম হতভম্ভ মুখে বসে আছেন। তার এখনও ঘোর কাটেনি। নিজের চোখের সামনে স্বামী আর চোদ্দ বছরের মেয়েকে পুড়ে যাবার দৃশ্য দেখার চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু আর নেই। আনিসুল হক আবেগি মানুষ, অল্পতে চোখে পানি চলে আসে। তিনিও হতবাক মুখে মাইশার মায়ের সামনে বসে থাকেন। কি বলবেন বুঝতে পারেন না। পাশ থেকে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছেলেটি ইঙ্গিত দেয়।
তিনি গলা খাঁকারি দিয়ে মৃদু গলায় বলেন,
- এই অপরাধের বিচার হতে হবে। এর দায়িত্ব বিরোধীদলকে ...
পাশ থেকে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট গলা খাঁকারি দেয়। তিনি সংশোধন করে বলেন,
- এর দায়িত্ব সরকার ও বিরোধীদলকে নিতে হবে। অবরোধের নামে বিএনপি যে পেট্রোলবোমা ...
পাশ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট আবার গলা খাঁকারি দেয়। তিনি একটু বিরক্ত হলেও দ্রুত সংশোধন করেন,
- দুর্বৃত্তরা যেভাবে দিনের পর দিন পেট্রোলবোমা হামলা করে যাচ্ছে। বিরোধীদল যেভাবে...

আবার পাশ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্টের গলা খাঁকারি। তিনি একটু বিষণ্ণ হয়ে কথা থামিয়ে দেন। তবে কি তিনি দিনকে দিন আওয়ামী ঘেঁষা হয়ে যাচ্ছেন? সতর্ক না হলে যে কোন দিন আনিনিসসুনাক থেকে তার নাম কাটা যাবে।
তিনি প্রসঙ্গ বদলে মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করেন,
- মাইশা কি কিশোর আলো পড়ত?
মাইশার মা কোন উত্তর দেন না। তিনি হালে পানি পান,
- আহারে মেয়েটি। হয়তো মেয়েটি কিশোর আলো পড়ত। হয়তো তার বাবা প্রথম আলো পড়ত। প্রথম আলো আজকে দেশের সর্ববৃহৎ পত্রিকা। প্রথম আলো থেকেই আমরা প্রথম প্রতিবাদ করি এসব দুর্বৃত্তদের দুর্বৃত্তপনার।
পাশ থেকে পরিবারের কেউ একজন বলেন, উনি দুইদিন ধরে না খেয়ে আছেন। আপনারা এখন আসুন।
আনিসুল হক বলে যান, আমার মা উপন্যাসেও এরকম একটা ব্যাপার ছিল। আপনি কি মা উপন্যাসটি পড়েছেন?
চলে যাবার আগে তিনি 'মা' উপন্যাস সাইন করে এক কপি তুলে দেন মাইশার মা এর হাতে। মাইশার মা 'মা' কোলে নিয়ে বসে থাকে।

৫।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছটফট করছিল রিপন গাজি। কোমরের নিচ থেকে অনেকটা অংশ আগুনে ঝলসে গেছে তার। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই সে। আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধিকে দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক চিনতে পারেন না।
- কি নাম বললেন আপনার?
- ফারুক
- আপনি কে?
- আমি লেখক, কবি, সাংবাদিক, বাম নেতা এবং বুদ্ধিজীবী।
ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধিদলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
- আমি তো শুনেছিলাম দেশের বড়বড় বুদ্ধিজীবীদের পাঠানো হচ্ছে পোড়া মানুষদের সাথে সংলাপের জন্য। কিন্তু আমার রোগীর কাছে এইটা কি পাঠাল? ইনাকে তো চিনলামই না।
আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধিদল বিরক্ত যায়। একজন জিজ্ঞেস করে,
- আপনার রোগী কতটুকু পুড়েছে?
- চল্লিশ ভাগের মতো পুড়ে গেছে।
- চল্লিশের জন্য কি প্রোফেসর ইউনুস আসবে নাকি? আশির উপরে পুড়লে তখন নাম জানা কাউকে পেতেন। আর তা ছাড়া আপনি না চিনলেও ইনি অনেক বড় বুদ্ধিজীবী।
বড় বুদ্ধিজীবী রিপন গাজীর সাথে একতরফা সংলাপ করে যায় -
গ্রিসের তরুণেরা পারে, আমরা কেন পারি না? গ্রিসের সিসিফাসীয় নিয়তি লঙ্ঘন যখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল তখনই উদয় ঘটল পুঁজিবাদবিরোধী বামপন্থী সিরিজা পার্টির। এক দশকের বঞ্চনা, জাতীয় অপমান আর নৈরাশ্য ছিঁড়েফুঁড়ে তারা গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম দিল। গ্রিকরাই গণতন্ত্র উদ্ভাবন করেছিল, গণতন্ত্রকে পুনরায় উদ্ভাবনের কৃতিত্বটাও তাদেরই। এবং সেই গণতন্ত্র এখন পুঁজিবাদের লাগাম পরাতে চাইছে। লাগামছাড়া মুনাফা পুঁজি ও শ্রমিক উভয়কেই বিপদে ফেলে ...

শান্তশিষ্ট ডাক্তার আচমকা ক্ষেপে যায়।
- কি এসব পুঁজি পুঁজি লাগাইছে এখানে এসে। রোগীর শরীরের অর্ধেক গেছে পুড়ে। প্রতিদিন নার্সরা তার ড্রেসিং করে আর পুঁজ পরিস্কার করে কূল পাচ্ছেনা। এর মধ্যে পুঁজি পুঁজি শুরু করছেন আপনারা এসে।

হঠাৎ করেই চোখ খুলে রিপন গাজি। বড় বুদ্ধিজীবীর চোখেমুখে আনন্দের ছটা দেখা যায়। সংলাপে কাজ হয়েছে। দুইদিন পর রিপন গাজি চোখ খুলেছে। রিপন গাজি শোওয়া থেকে একটু উঠে বসার চেষ্টা করে। বুদ্ধিজীবী তার মাথাটা কোলে তুলে নেয়। তারপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুদ্ধিজীবীর কোল ভাসিয়ে বমি করে ফেলে রিপন গাজি।

৬।
প্রোফেসর ইউনুস যখন আনিনিসসুনাকের প্রতিনিধি হয়ে হাজির হলেন তখন কনস্টেবল শামীমের তাজা লাশের পাশে বসে ছিল তার সহকর্মীরা। সাথে আহত হয়েছে আরও আটজন। কারো অবস্থা একটু ভালোর দিকে, কারো খারাপ। নামিদামি ব্যক্তিকে দেখে সব পুলিশ সদস্য একটু নড়েচড়ে বসে। শামীমের সাথেই আহত হয়ে তার এক সহকর্মী একই হাসপাতালে ছিল। সেও শোওয়া থেকে উঠে বসে। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার মুখের দিকে। তিনি বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে একটু মাথা নাড়েন । তারপর মুখ খুলেন অল্প। খুলেই কিছু না বলে আবার মুখ বন্ধ করে ফেলেন। খবর পেয়ে হাসপাতালের নার্সরা ছুটে আসে, কাজ ফেলে ডাক্তারাও চলে আসে। শামীমের রুমে তিল ধারণের ঠাই নেই। কিন্তু কেউ শামীমের লাশের দিকে তাকায় না। সবার দৃষ্টি তাঁর দিকে দিকে। সেকেন্ড যায়, মিনিট যায়, ঘণ্টা পার হয়। তিনি অল্প একটু মুখ খুলেন। ঝিমিয়ে পড়া রোগী, ডাক্তার, নার্স সবাই আবার নড়েচড়ে বসে। এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। তিনি খোলা মুখ দিয়ে একটু বাতাস বের করে আবার মুখ বন্ধ করে ফেলেন। তার পাশে বসা সহকারী ফিসফিস করে বলে,
- উনি কথা খুব মেপে বলেন।
সেকেন্ড যায়, মিনিট যায়, ঘণ্টা পার হয়। তিনি অল্প একটু মুখ খুলেন। সবাই আবার এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। এবার নিশ্চয়ই তিনি কিছু বলবেন। শামীমকে নিয়ে কিছু বলবেন, সান্ত্বনার কথা কিছু বলবেন, আশার কথা কিছু বলবেন। তিনি খোলা মুখ দিয়ে একটু বাতাস টেনে আবার মুখ বন্ধ করে ফেলেন। চারপাশে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়। উনি কি আদৌ কিছু বলবেন? বললে কি বলবেন? পাশে বসা সহকারী আবার ফিসফিস করে বলে,
- অবশ্যই বলবেন। উনি শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু রাগলে সর্বনাশ। গেলবার কেউ একজন গ্রামীণ ব্যাংকে হাত দিয়েছিল। তিনি গর্জে উঠেছিলেন, হাত ভেঙ্গে দিব বলে। আর এখন তো পুরা দেশের উপর হাত দেয়া হচ্ছে। তিনি রেগে গিয়ে কার যে কি ভাঙ্গবেন, কে জানে।
সহকারীর কথা শুনে সবার গুঞ্জন থামে। সবাই আবার এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকায়। তিনি মুখ খুলেন। চোখটা আধবোজা ছিল। সেটা খুলে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকান কনস্টেবল শামীমের লাশের দিকে। ঠোঁটটা নড়ে ওঠে অল্প। কিছু একটা বলবেন বুঝি এবার। তিনি খোলা মুখ দিয়ে একটু বাতাস ছেড়ে আবার মুখ বন্ধ করে ফেলেন।

(প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত বা পুড়ে আলুপোড়া হনুমানে পরিণত কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে এই গল্পের কোন সম্পর্ক নেই।)


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

"মাইশার মা 'মা' কোলে নিয়ে বসে থাকে।"

এই জায়গায় এসে আসলেই চোখে পানি চলে আসল। উদাস ভাই, আপনি যে কিভাবে হাঁসাতে হাঁসাতে হঠাৎ মাঝখানে চোখে জল আসার মত জিনিস ঢুকিয়ে দেন, আপনি মানুষটা আসলেই ভালো না।

লেখা চমৎকার হইছে। চলুক

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

চরম উদাস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রাসেল শাহরিয়ার এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন। এইসব সুশীলরা কখনো দেশটার ভাল চায় না, তারা সবসময় নিজেদের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত থাকে। চলুক

ইকারাসের ডানা  এর ছবি

গুরু গুরু

বড় বুদ্ধিজীবি বলে কি আল্লামা চে গুয়েভারোকে বোঝানো হয়েছে। বড় বুদ্ধিজীবি কথাটা কম হয়ে গেল না। উনাকে তো গ্রীসের প্রেসিডেন্ট বানানো উচিত।

শিশিরকণা এর ছবি

আপনার লেখায় প্রথম মন্তব্য করার সুযোগ কখনোই পাই না। হয় এটা সচলের কোন বাগ নয়ত এই লেখায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। হবারই কথা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

চরম উদাস এর ছবি

চার নাম্বারে নেমে গেলেন তো হাসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

মন খারাপ
টাইপো ছিল একটা:
উনি দুইদিন ধরে না খেয়ে আছেন। আপনার এখন আসুন।

এক লহমা এর ছবি

কি আর বলব, বলার নাই কিছু। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মুক্তমন এর ছবি

অনেক কিছু লিখেছিলাম........পরে সব মুছে দিলাম ৷ আপনার এই লেখা মন্তব্যের অপেক্ষা রাখে না ৷

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার একটাই ছোট বোন। খুব আদরের, খুব। আমরা দুজনেই জব করি কিন্তু একসাথে থাকার সুযোগ হচ্ছে না। কারণ দুইজনের অফিস ঢাকা শহরের দুই মাথায়। গত সপ্তাহে ও দেশের বাড়ি যাবে। রাতে টেনশনে ঘুমাতে পারি নি। আজ সে বাসা থেকে ঢাকায় ফিরবে। কিছুক্ষণ আগে বাসে উঠেছে। প্রচন্ড টেনশনে আছি, যদি কিছু হয়ে যায়। আব্বা বাসে তুলেও দেওয়ার পর থেকে টেনশন করছেন।

আমাদের সবাইকে টেনশনে রাখার অধিকার এইসব রাজনীতিবিদদের কে দিয়েছে, কে? উদাস ভাই, আপনার লেখাটা পড়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়লাম। ভাল থাকবেন।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আফসোস, এরপরও সুশীলরা সুশীলই রয়ে যাবে..

লেখা বরাবরের মতোই লক্ষ্যভেদী, ধারালো..

তাসনীম এর ছবি

চলুক

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ড: কামাল থেকে শুরু আর ইনুসে শেষ । ব্যাফক বড় মানুষ উনারা। এই সুশীলরা এতটাই নিরপেক্ষ যে মাপা যায় না এক্কেবারে।

-------
রাধাকান্ত

নিহন আহসান এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তমনের সাথে একমত। এ পোস্ট মন্তব্যের অপেক্ষা রাখে না।

ময়ুখ কিরীটি এর ছবি

আপনার বেশিরভাগ লেখাই কমেন্টের অপেক্ষা করার মতো না......জীবিত, অর্ধমৃত কিংবা আলুপোড়া মানুষ মাত্রই এইসব দিনরাত্রির লেখা উপলব্ধি করে উদাস হতে বাধ্য.......সন্ধ্যার উদাসীনতা আমার প্রতিদিনের না বলা গুমোট চিন্তাকে আপনার লেখার সাথে মিলিয়ে দিচ্ছে আজ মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

বাস্তবিকই বলার কিছু নেই । শুধু আশা করতে পারি যে শীঘ্রই সকল পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে আর আমাদের মতো আম পাবলিক এই যাতাকল থেকে মুক্তি পাবো । মন খারাপ

মহাবিশ্বের পরিব্রাজক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলে যাবার আগে তিনি 'মা' উপন্যাস সাইন করে এক কপি তুলে দেন মাইশার মা এর হাতে। মাইশার মা 'মা' কোলে নিয়ে বসে থাকে।

আবেগে হু হু করে কেঁদে ফেললাম :'(

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

নিষ্ঠুরতার বিচারে আমাদের দেশের লাগাতার পোড়াযজ্ঞের কুশীলবগুলো আইএস ও বুকোহারামের সমতুল্য হলেও তারা আইএস বুকোদের চেয়ে বেশী ভাগ্যবান। কারণ বুকোহারাম বা আইএস আমাদের দেশের মত কোন রেডিমেইড আন্তর্জাতিক মানের সুশীল পায়নি যারা সিরিয়া, ইরাক বা নাইজেরিয়ায় দু‘পক্ষকে সংলাপে বসার আহব্বান জানাবে। যারা বিভিন্ন অতি উর্বর মস্তিষ্কের যুক্তি দিয়ে তাদের অমানবিক কাজকে জায়েজ করার উদ্যোগ নিবে।
আপনি যেভাবে আমাদের সংলাপ বিশারদবৃন্দকে আন্তর্জাতিকতা দিলেন তাতে তাদের কপালে আইএস বা বুকোহারাম কর্তৃক সংলাপের দূতিয়ালী করার জন্য ডাকিত হয়ে যেতে পারেন শীগ্রই।

- পামাআলে

তারেক অণু এর ছবি

সব শালা সভ্য হবে---

আয়নামতি এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

সুশীলতা বড় সংক্রামক রোগ

ট্রোল

অতিথি লেখক এর ছবি

সুশীলদের মতামতের মধ্যে তো একটা ভ্যারিয়েশন থাকার কথা। কেউ বলবে 'গুলি করো', কেউ বলবে 'ক্ষমতা ছাড়ো', আর কেউ বলবে 'আড্ডা মারো' । সবাই দেখি একসাথে 'সংলাপের' কথা বলছে (একরডিং টু 'আলু' পত্রিকা) । উটপাখির ফেটিশ থেকে এখন শালারা উটপাখির চাষ শুরু করেছে।
"সুশীল হবেন কিভাবে - How to be an ostrich" - টু ডু লিস্টে যোগ করেন।
-সো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আন্নে এট্টা কাট্টা বাক-শালী চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুবোধ অবোধ এর ছবি
Somnath Bachhar এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- গুরু গুরু হাততালি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।