যে শিকারি শিকার চেনে না

চরম উদাস এর ছবি
লিখেছেন চরম উদাস (তারিখ: সোম, ১০/০৮/২০১৫ - ৫:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোটের উপর তিনভাগে ভাগ করা যায় মানুষকে সন্ত্রাস সংক্রান্ত বিষয়ে
শিকারি - সন্ত্রাসী
শিকার - যে সরাসরি সন্ত্রাসের কবলে পড়ে আহত বা নিহত হয়েছে
দর্শক - যারা সন্ত্রাসী নয়, সরাসরি সন্ত্রাসের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি কিন্তু সমস্ত ঘটনা দেখছে এবং জানছে।
এই দর্শককে আবার তিন ভাগে ভাগ করতে পারি
অন্ধ দর্শক
প্রতিবাদী দর্শক
সমর্থনকারী দর্শক

একটা বড় বৃত্ত এঁকে হয়তো বোঝানো যায়। বৃত্তের একেবারে লাল কেন্দ্রে আছে শিকারি। এই দলটা অনেক ছোট। ধরি মাত্র একজন। বৃত্তের এরপরের ধাপে আছে শিকার। সংখ্যাটা শিকারি থেকে হয়তো সামান্য বেশী। শিকারি সশস্ত্র। তার বেছে নেয়া শিকার প্রায় সবসময়েই হয় নিরস্ত্র, বাধা দেয়ার ক্ষমতা নেই একেবারে। নেকড়ে শিকার হিসেবে বিড়ালকে বেছে নিতে পারে, বাঘকে কখনো নয়। তাই ধরা যাক একজন শিকারির জন্য দুইজন শিকার। এরপরের অংশে আছে দর্শক। সেটা আসলে বাকি সবাই। তাই একজন শিকারি, দুইজন শিকার ধরলে সেই অনুপাতে এক হাজার দর্শক অন্তত থাকবে বলে ধরা যায়। সেই একহাজারের মধ্যে হয়তো ছয়শো অন্ধ দর্শক, তিনশো সমর্থনকারী দর্শক আর একশো প্রতিবাদী দর্শক। কে জানে প্রতিবাদী দর্শকের সংখ্যাটা হয়তো এর চেয়ে আরও অনেক অনেক কম। কম হোক বা খানিক বেশী, এই প্রতিবাদী দর্শকই থাকে শিকারির পরবর্তী লক্ষ্য। দর্শক থেকে সে শিকারে পরিণত হয়ে যায় কিছু বুঝে উঠার আগেই।

টেররিজম রিসার্চ ওয়েবসাইটে এক লাইনে সন্ত্রাসকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে - Terrorism is a criminal act that influences an audience beyond the immediate victim। সন্ত্রাস এরকম একটি অপরাধমূলক কাজ যা তার সরাসরি শিকারের বাইরেও একটা বড় দর্শক শ্রেণীকে প্রভাবিত করে। এখানে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করাই মূল লক্ষ্য। শিকার মূল লক্ষ্য না। উদাহরণ হিসেবে ১৯৭২ এর মিউনিখ অলিম্পিকের কথা বলা হয়। ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর অর্গানাইজেশন এগারোজন এথলেটকে হত্যা করে। এই এগারোজন খুব ক্ষুদ্র একটা সংখ্যা, এবং এগারোজন নিরীহ মানুষকে মেরে কোন লাভ নেই। লাভ হচ্ছে এরকম বড় একটা ইভেন্টে এরকম সাড়া জাগানো একটা কাজ করে কোটি কোটি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। টিভি, রেডিও বা সরাসরি মিলিয়ে ওই অলিম্পিকের দর্শক ছিল এক বিলিয়নেরও বেশী মানুষ। এক এক বিলিয়ন লোককে ধরে নাড়া দেয়া, এটাই ছিল সন্ত্রাসের মূল লক্ষ্য। এবং এই নাড়া দেয়া এবং ভয় বা আতঙ্কের পরিমাণ বহুগুণে বাড়ানোর জন্য সন্ত্রাসীরা বেছে নেয় ভয়ঙ্কর কোন মৃত্যুর পদ্ধতি। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হুমায়ূন আজাদের উপর হামলা এবং পরপর এই চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে মারা ঘটনা (এই লেখাটা যখন লিখছিলাম তখন চারজন ছিল, এখন পাঁচজন হয়ে গেছে!)। প্রতিটা ক্ষেত্রে মারার জন্য আশ্রয় নেয়া হয়েছে নৃশংস পদ্ধতি। ডিজিটাল যুগে মৃত্যুর পরপরই তাদের রক্তাক্ত লাশ, ছিন্নবিচ্ছিন্ন মগজ, মুখ সব কিছুর ছবি ছড়িয়ে পড়ছে পত্রিকার পাতায়, ফেসবুকে। কেউ হয়তো খুশী মনে শেয়ার দিচ্ছে, কেউবা হয়তো চরম আক্রোশ নিয়ে, কেউবা কষ্ট পেয়ে। কিন্তু এই ধরণের ছবি যত ছড়াচ্ছে সন্ত্রাসীর উদ্দেশ্য তত বেশি সফল হচ্ছে বলে মনে হয় আমার। সন্ত্রাসের মূল ভিত্তি আতঙ্ক, ভয় ছড়ানো, দেখিয়ে দেয়া - দ্যাখ আজ বাদে কাল তোরও এমন পরিণতি হবে। একইভাবে যেমন ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে তার লাশ ক্ষতবিক্ষত করে ঝুলিয়ে রাখা হতো গাছের সাথে। উদ্দেশ্য একটাই, আতঙ্ক সৃষ্টি করা। একই কাজ এখন আইসিস করছে। মানুষকে পোড়ানোর ভিডিও, মানুষকে জবাই করার ভিডিও, শিরচ্ছেদ করার ভিডিও।

বাংলাদেশের মত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? genocidebangladesh ওয়েবসাইটের মতে সুস্পষ্ট হিসাব পাওয়া মুশকিল। এক লক্ষের সামান্য বেশী বলে একটা তালিকার হিসাব পাওয়া যায়। কিন্তু সব মিলিয়ে সেটা দুই লক্ষও হতে পারে, আরও অনেক বেশিও হতে পারে। দেশের তৎকালীন জনসংখ্যার বিচারে এটা দেশের শতকরা একভাগ থেকেও কম। বাকিরা কি করেছে? বাকিদের একটা বড় অংশ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার সাহস বা সুযোগ না পেলেও নানাভাবে সহায়তা করে গেছে, নানাভাবে যুদ্ধ লড়ে গেছে। আবার একটা অংশ ছিল, যেটাও নিতান্ত ছোট নয় যারা সেই সমর্থনকারী দর্শকের কাতারে। নাহ, এখানে সমর্থনকারী দর্শক বলতে রাজাকার, আলবদর এদের বুঝাচ্ছি না। এরা সব শিকারি দলেই। সমর্থনকারী দর্শক যারা মুক্তিযুদ্ধকে একটা গণ্ডগোল বলে মনে করেছে। চারিদিকে ফুটফাট যুদ্ধ হতে দেখে বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকিয়ে, ইন্ডিয়া আর আওয়ামীলীগ মিলে কি ঝামেলা শুরু করলো এসব। এরকম বাড়াবাড়ি করছে বলেই তো পাকিস্তান রেগে গিয়ে একটু মারছে। উশৃঙ্খলা বন্ধ করলেই পাকিস্তান আর মারবে না। এসব বলতে বলতে পকেটের টুপি পরে ফেলেছে। আর অন্ধ দর্শকও ছিল। যারা কই যুদ্ধ, কি কি আর এমন ঝামেলা বলে ঘুরে বেড়িয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজে শিকারে পরিণত হয়েছে।

আমার এক দূরসম্পর্কের মামার কাহিনী শুনেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ঠ্যাঙ নাচাতে নাচাতে তিনি বলে গেছেন- আরে রাখ, পাকিস্তানি মিলিটারিরে হারানো কি এত সোজা। দুনিয়ার সেরা মিলিটারি বাহিনীর একটা পাকিস্তান মিলিটারি। দুই একটা গাদা বন্দুকের ঠুসঠাস গুলি কইরাই যদি দেশ স্বাধীন করা যাইত তাইলে কামই আছিল। হুদাই নিজেরাও মরতেছে, আমাদেরেও মারতেছে। কি লাভ এই গণ্ডগোল করে। শিলে পাটায় ঘষাঘষি, মরিচের জীবন শেষ। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিনি রাজাকার ছিলেন না, যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। কারো কোন ক্ষতি করেন নি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়াতে তার কোন অবদান নেই। তার মতো অনেক মানুষ হয় অন্ধ নয় বধির হয়ে নয়টা মাস কাটিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে জয় বাংলা বলে রাস্তায় বেরিয়ে একটু আনন্দ ফুর্তিও করেছেন। এমন না যে তিনি বাংলাদেশ হয়ে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছেন, আবার এমনও না যে তিনি খুব খুশীও হয়েছেন। আচ্ছা স্বাধীন হইছে, ভালো। না হইলেও সমস্যা ছিলোনা। স্রোতের সাথে গা ভাসানো এরকম লোকের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এরাই অন্ধ দর্শক। সময়ে সময়ে এরা অন্ধ দর্শক থেকে সমর্থনকারী দর্শকে পরিণত হয়। তবে প্রতিবাদী হওয়াটা এদের রক্তে নেই।

মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে নীরবে যুদ্ধ চলছে অনেকদিন ধরেই। দেশের বেশিরভাগ নীরব দর্শক একে যুদ্ধ বলে মানতে নারাজ। অনেকে হেসেই উড়িয়ে দেয় এই বলে, আরে কিসের যুদ্ধ? কই যুদ্ধ? দুই চারটা নাস্তিক ব্লগার মরছে তাদের কৃতকর্মের জন্য। দেশের মানুষের তাতে কি আসে যায়। কি আসে যায় সেটা সময়ই হয়তো বলে দিবে।দেশে ব্লগিং এর শুরু সেই ২০০৫/০৬ সালের দিক থেকে। মুক্তিযুদ্ধ, মৌলবাদ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে লিখে গেছে, লিখে যাচ্ছে ব্লগাররা গত দশ বছরে ধরে। প্রশ্ন জাগে কোথায় ছিল তখন নাস্তিকরা? কোথায় ছিল তখন ধর্মের সমালোচনাকারীরা? তারা এখানেই ছিল, এখানেই আছে। ধর্ম নিয়ে, মৌলবাদ নিয়ে, বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে লেখালেখি বাংলাদেশে দশ বছর না মাত্র, তারও অনেক আগে থেকে চলে আসছে। তাহলে কেন তথাকথিত নাস্তিক বলগারদের জন্ম ফেব্রুয়ারির ১৫, ২০১৩ তে হল? এ প্রশ্নের উত্তর না জানা বা না বোঝার মতো এত বড় বোকা মানুষ কিভাবে হয়? আজকের এই ব্লগার হত্যার কারণ কি ধর্মানুভূতিতে আঘাত? কখনোই না। তবে কারণ কি? উত্তরটা ঈশপ তার গল্পে সেই কতকাল আগেই দিয়ে গেছে।

বাঘ ও মেষশাবক - ঈশপের গল্প
এক বাঘ, পর্বতের ঝরনায় জলপাল করতে গিয়ে দেখতে পেল, কিছু দূরে, নীচের দিকে, এক মেষশাবক জলপান করছে। বাঘ মনে মনে ভাবল, আজকে এই মেষশাবকে হত্যা করে এর কচি মাংস খাব কিন্তু বিনা দোষে এক প্রাণীকে হত্যা করা উচিত নয়। অতএব একটা দোষ দেখিয়ে তাকে হত্যা করতে হবে।
এই চিন্তা করে,বাঘ তাড়াতাড়ি সেই মেষ শাবকের কাছে গিয়ে বলল, ওরে শয়তান, তোর এতো বড় সাহস, আমি এখানে জল খাচ্ছি দেখেও তুই জল ঘোলা করছিস। মেষ শাবক শুনে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘সে কি মহাশয়! আমি কিভাবে আপনার জল ঘোলা করলাম, আমি জল উপরে খাচ্ছিলাম আর আপনি উপরে জল খাচ্ছিলেন, নিজের জল ঘোরা হলেও উপরের জল ঘোলা হওয়া সম্ভব নয়।’
যাই হোক, তুই এক বৎসর আগে তুই আমার অনেক নিন্দা করেছিলি, আজ তোকে আমি তার উচিৎ শিক্ষা দিব। মেষ শাবক ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘হুজুর আমার আপনি আমার উপর শুধু শুধু দোষ আরোপ করছেন, কেননা আমি এক বছর আগে তো জন্মই নেই নি, সুতরাং আমি কিভাবে আপনাতে তিরস্কার করতে পারি।
বাঘ বলল, ‘সে সত্য কথা, সে তুই না কিন্তু তোর বাপ আমার নিন্দা করেছিল, তুই কর আর তোর বাপ করুক, একই কথা; আর আমি তোর কোন অজুহাত শুনতে চাই না। এই বলে বাঘ দুর্বল মেশ শাবককে হত্যা করল।
উপদেশ: যদি তোমার মধ্যে কোন অন্যায় বোধ না থাকে তবে বলবানের সামনে মাথা নও না করে সাহসের সাথে লড়াই করা উচিত। আমি অপরাধী নই বা এই রকম করাটা অন্যায় এই বলে কোন অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।

এত সহজ একটা হিসাব বুঝতে কেন ভুল হচ্ছে আমাদের বারবার? মৌলবাদের সাথে রাজনীতির খিচুড়ি মেশানো নেকড়ে এটা। এই নেকড়ের সাথে লড়াই এর ইতিহাস অনেক অনেক পুরনো। ৭১ এর হিন্দু আর ২০১৫ এর নাস্তিক একই মেষশাবক। সেই পুরানো খেলা। একই খেলোয়াড়, একই শিকারি, একই গেম প্ল্যান। কোন মেষশাবক জল কতটুকু ঘোলা করলো তার সাথে এই শিকারের কোন সম্পর্ক নেই। যেকোনো অজুহাত দিয়ে এই শিকার হতোই হতো। অন্যকে দোষ দেয়ার আগে নিজের দিকে ফিরে তাকাই। আমি নিজেও কিছুদিন আগে হয়তো একই রকম ভুল করেছি। আসিফ মহিউদ্দিন এর কাবা নিয়ে ট্রল করা দেখে বিরক্ত হয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছি এসব করে তিনি মুক্তমনাদের উল্টো বিপদে ফেলেন কিনা। তার লেখালেখি বা স্টান্টবাজি অপছন্দ করা, তার কাজকর্মে বিরক্ত হওয়া সবই ঠিক আছে। কিন্তু "কঠোর ভাষায় ধর্মের সমালোচনাকারী অথবা ধর্মকে উপহাসকারী যে কারো কাজের জন্যই মুক্তমনাদের আজকে এই শিকারে পরিণত হওয়া" - সরাসরি বা ইঙ্গিতে এই জাতীয় কোন কথা বলা মারাত্মক ভুল। কোন তথাকথিত নাস্তিক ধর্মের অবমাননা করছে আর এই কারণে তাদের বা তাদের সমমনা মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। নাস্তিক হবার কারণে রাজীবকে হত্যা করা হয়নি। রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে নাস্তিকতা নিয়ে রাজনীতি শুরু করার উদ্দেশ্য নিয়ে। এবং সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ সফল। রাজীবকে হত্যার পর রক্তের দাগ মুছতে এবং আরও অনেক রক্তের পথ পরিষ্কার করতে নাস্তিকতাকে, ধর্মের সমালোচনা করাকে ব্যাবহার করে হয়েছে, হচ্ছে। এই হত্যার উৎসবের অনেকটাই শুরু হয়েছে শাহবাগ থেকে। যেই শাহবাগ প্রথমবারের মতো দেখিয়ে দিয়েছিল চল্লিশ বছর আগের ঘটে যাওয়া যুদ্ধকে এখনও ভুলে যায়নি দেশের অনেক মানুষ। ৭৫ এর পর একটু একটু করে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া মৌলবাদের যেই চারাগাছ আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে, প্রথমবারের মত সেই গাছকে শক্ত একটা ধাক্কা দিয়েছে দেশের তরুণরা। দেখিয়ে দিয়েছে চল্লিশ বছর আগে ধর্ষণ আর হত্যার মহোৎসব করে যারা এখন আধাহাত দাড়ি রেখে সেটার দোহাই দিয়ে রক্ষা পেতে চাচ্ছে, তারা অত সহজে রক্ষা পাবে না। আর তাই শাহবাগ, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে শুরু করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো প্রতিটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই নাস্তিক আখ্যা দিয়ে ব্লগার হত্যার সাথে। ধর্ম এখানে তলোয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই তলোয়ারের মালিক এক কঠিন রাজনীতিবিদ। যেই মুহূর্ত থেকে জননী জাহানারা ইমাম ঘাতক, দালালদের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন সেই মুহূর্ত থেকে তিনি নাস্তিক হয়ে গেছেন। যেই মুহূর্তে ডক্টর জাফর ইকবাল জামাতের বিরুদ্ধে, রাজাকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন সেই মুহূর্ত তিনি নাস্তিক হয়ে গেছেন। হুমায়ূন আজাদের না হয় মুখ খারাপ ছিল, কোন রাখঢাক না করে তিনি কঠোর ভাষায় মৌলবাদীদের আক্রমণ করেছেন। ডক্টর জাফর ইকবাল বা জননী জাহানারা ইমাম কি তাদের সমস্ত জীবনে একবারও ঈশ্বর, নবী নিয়ে তথাকথিত অবমাননামূলক কিছু বলেছেন? কিন্তু এরাও তো হয়ে গেছে নাস্তিক, মৌলবাদীদের সবচেয়ে বড় দুই টার্গেট। তাই বাস্তবতা এটাই মৌলবাদের বিরুদ্ধে, জামাতের বিরুদ্ধে, রাজাকারের বিরুদ্ধে আপনি যেই মুহূর্তে কলম ধরেছেন সেই মুহূর্তে আপনিও হয়ে গেছেন টার্গেট। সেই কলম দিয়ে আপনি মধু ঝরিয়েই লিখুন আর আগুন ঝরিয়েই লিখুন কিছু আসে যায় না। ধর্মের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েই লিখুন, উপহাসই করুন বা ধর্মকে যথেষ্ট পরিমাণে সম্মান দিয়েই লিখুন কিছুই আসে যায় না। আপনি কার বিরুদ্ধে লিখছেন সেটাই বড় সমস্যা এখানে, কিভাবে লিখছেন সেটা এক্ষেত্রে অর্থহীন। আজ থেকে হয়তো অনেক বছর পর আমরা পুরো ঘটনা অন্তরালের সবকিছু জানতে পারব। কার ফান্ডিং এ , কার বুদ্ধিতে, কার কলকাঠি নাড়ায় এই নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে। আপাতত শুধু এটা বুঝি এখানে কে উগ্র নাস্তিক আর কে শান্ত নাস্তিক আর কে আদৌ নাস্তিক না সেই প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর।

এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। এই অন্ধকারের খবর সবার আগে জেনে গেছে দেশের নবীন কিছু লেখক, কিছু ব্লগাররা। যে কারণে কিছু বোঝার আগেই এই যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে চলে এসেছে তারা। প্রতিবাদী দর্শক থেকে নিজের অজান্তেই সৈনিক হয়ে গেছে। আমিও হয়তো সেই যুদ্ধের এক নগণ্য সৈনিক। কখনও হতাশ সৈনিক, কখনও পথভ্রষ্ট সৈনিক, কখনও আবার নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়ানো সৈনিক। কখনও নিজের সহযোদ্ধাকে ভুল বুঝা সৈনিক, কখনও ভুল মানুষকে সহযোদ্ধা ভাবা সৈনিক। কখনও মূল অন্যায়ের প্রতিবাদী সৈনিক, কখনও পথ ভুলে এদিকে সেদিকে অযথা দৌড়ানো সৈনিক। কিন্তু নীরব দর্শক নই কখনও, অন্ধ দর্শক ছিলাম না কখনও। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য অন্ধ নীরব দর্শকদের নসিহত করা না। সেই চেষ্টা কতটুকু কাজে দিবে সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। আমি শুধু জানি, শিকারি তার শিকার ফুরালে এরপর দর্শকদের দিকে এগিয়ে আসবে। তখন আপনি অন্ধ দর্শক ছিলেন নাকি প্রতিবাদী নাকি সমর্থনকারী সেটা আর খতিয়ে দেখবেনা। দেশকে বাংলাস্তান বলা বা পাকিস্তান আফগানিস্তানের সাথে তুলনা করা বড্ড নোংরা শোনায়। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে অনেক আলাদা এটা যেমন সত্য। তেমনি এটাও সত্য রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক অনেক বিষয়ে এদের সাথে আমাদের মিল আছে। একটা রাষ্ট্রের ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হবার জন্য কি কি মালমসলা দরকার? দেশের বড় অংশের পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব, সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা একসাথে চলতে দেয়া, ঘন জনবসতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, মিলিটারিভিত্তিক রাজনীতি, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলার অভাব এবং সবচেয়ে বড় মসলা দেশের সিংহভাগ জনগণের নিজের গায়ের উপর সরাসরি কিছু না এসে পড়ার আগ পর্যন্ত নির্লিপ্ত থাকার দুর্দান্ত ক্ষমতা। টম এন্ড জেরি কার্টুনে একবার দেখেছিলাম এক ছোট্ট দুঃখী পাখি নিজেই নিজের গায়ে লবণ মসলা মেখে বারবার টমের কাছে গিয়ে বলে তাকে খেয়ে ফেলতে। মাঝেমাঝে দেশটাকে দেখলে সেই ছোট্ট দুঃখী পাখির মতো মনে হয়। জেরির মতো কিছু ইঁদুর ছানা হয়তো অযথাই দৌড়াদৌড়ি করে পাখিটাকে বাঁচানোর জন্য। আমি জানি আমার এই লেখা পড়তে পড়তে কেউ কেউ হয়তো হেসেই কুটি কুটি হচ্ছে, কোথাকার কোন নাস্তিক ব্লগার মরছে আর তাতেই দেশ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে এই লোক অযথাই চিলাপাল্লা করছে। কেউকেউ হয়তো অভিমানে গাল ফুলাচ্ছে, কেন আদরের বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হয়ে যাবে অযথা আশংকা প্রকাশ করছি। আশংকা যদি ভুল হয় তবে সেই ভুল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ভুল হবে নিঃসন্দেহে। পাকিস্তানের বা আফগানিস্তানের আজকে যে অবস্থা তার শুরু হয়েছে এখানে সেখানে ধর্মের দোহাই দিয়ে এরকম ইতস্তত কিছু ঘটনা ঘটার মধ্য দিয়েই। মালমসলা সব রেডি ছিল, আভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি এসে শুধু পালে হাওয়া দিয়েছে। চোখের নিমিষে দুটি ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি হয়ে গেছে কিছু বুঝে উঠার আগেই। মাত্র কদিন আগেও মসজিদে বোমা হামলায় যেই মানুষগুলো মারা গেল তারা কি যুক্তিবাদী নাস্তিক ছিল, নাকি নবীর অবমাননাকারী ছিল নাকি শুধুই নামাজ পড়তে আসা একদম সাধারণ মানুষ ছিল? তার আগে পাকিস্তানের স্কুলে গুলির আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ১৩২ টি শিশু কি কোন সীমা লঙ্ঘন করেছিল নাকি কারো অবমাননা করেছিল?

আজকে যেই আপনি সাত খণ্ড রামায়ণ শুনে কান চুলকাতে চুলকাতে প্রশ্ন করেন, সবই বুঝলাম কিন্তু ধর্ম নিয়ে খোঁচাখুঁচি করাটা কি ওদের ঠিক হয়েছিল? না হয় একটু জবাই হয়ে মরেই গেছে কিন্তু তাই বলে কি নবীকে অবমাননা করা ঠিক হয়েছে? আজ থেকে পাঁচ দশ বছর পর যখন নগরের ব্যস্ত শপিং সেন্টারে, সিনেমা হলে, বটমূলে বা মসজিদে আপনার আপনজন বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকবে তখন আমি এসে কান চুলকাতে চুলকাতে বলবো না, ঘটনাটা কি একটু খুলে বলেন দেখি ভাইজান। উনি কার অবমাননা করছিলেন? নাকি পরকীয়া প্রেমের ঘটনা? সবই ইঙ্গ মার্কিন ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র, বুঝলেন কিনা? আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবো। কিছু বলার বা লেখার শক্তি আমার আর অবশিষ্ট থাকবে না তখন। শুধু এখন যাবার আগে শুধু ফিসফিস করে একটি কথাই বলে যাবো আবারও - পরবর্তী পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবার জন্য যা যা মালমসলা দরকার তার সবই নিয়ে বাংলাদেশ তৈরি।
আপনি তৈরি তো?


মন্তব্য

নিটোল এর ছবি

চলুক
ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। মডারেটদেরকে এসব প্রসঙ্গে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হলেও তাদের কোনো যুক্তিযুক্ত অবস্থানে যেতে দেখি নাই।

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই আপনার লেখাটা পড়ার আগে আমার মনে হতো বাংলাদেশ হয়তো পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবে না ।
কিন্তু এই পরিণতি থেকে উত্তরণের উপায় কি??
আর অনেক প্রতিবাদী দর্শকের ক্ষমতাও সীমিত থাকে - তারা কি করবে ??
আর যে লোকটার বা যার নেতৃত্বের ক্ষমতা ছিল এগুলো ঠেকানোর তাঁকে মেরেই ফেলা হলো !! মন খারাপ

চরম উদাস এর ছবি

উত্তরণের উপায় একটাই, কিছু না করে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা লোকজনের এক্টিভ হওয়া। দেশ পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হয়ে যাবে, এই আশংকা ভুল প্রমাণ হোক। আমাদের কথাই আমাদের মুখে চড় হয়ে ফেরত আসুক। হাসিমুখে সেই চড় মেনে নিব। ঠিক যেমন শাহাবাগের চড় খুশী মনে মেনে নিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠিকভাবে হবে না। দুই একটা লোক দেখানো জেল জরিমানা টাইপ শাস্তি হবে। লোকজনও সব ভুলে যাবে। এত এত মানুষ যে কোন রাজনীতি ছাড়া কোন নেতা ছাড়া রাস্তায় এসে জড়ো হবে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য এক হবে সেটা আমি কল্পনা করিনি। আজকে শাহাবাগের এই আন্দোলন নানা রাজনীতি আর স্বার্থের কবলে পড়ে যতই কমেডি হয়ে যাক খুব বেশী আফসোস নেই। ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তে যে আবেগ, যে আদর্শ নিয়ে তরুণরা রাস্তায় নেমে এসেছিল সেটা আমাদের জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা। দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেলে হয়তো আবারও এরকম কিছু হবে। তাই আমি মনে প্রাণে চাই এরকম অভূতপূর্ব কিছু আবারও ঘটুক। কেউ এসে আমার দুই গালে দুই চড় মেরে বলুক, এই দেখ গর্দভ, খুব আফগানিস্তান পাকিস্তান বলে চেঁচাচ্ছিলি, এই দেখ আমরা বাংলাদেশই আছি, থাকবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেলে হয়তো আবারও এরকম কিছু হবে।

আমি নিশ্চিত। হবেই।

রিপন

এক লহমা এর ছবি

গুরু গুরু

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সবজান্তা এর ছবি

০১

আপনার লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে তুলে এনেছে। অবশ্য তুলে এনেছে বলা ঠিক হবে না- এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সামনে জুলজুলে চোখে তাকিয়ে আছে। খুব অল্প কিছু মানুষ বাদ দিলে বাকিরা হয় সমস্যাটাকে চিনতে পারছে না, অথবা গুরুত্বটা স্বীকার করতে চাইছে না।

ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কিংবা সচেতন, প্রগতিশীল মানুষের বাইরে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ আমার পরিচিত গণ্ডীতে আছে, আমি তাদের বেশ কয়েকজনকে খুব সরলভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্লগার হত্যার ব্যাপারে তাদের কী মনে হয়। একজন, আই রিপিট, একজনও মনে করেনি এটা বাংলাদেশের জন্য খুব সিগনিফিক্যান্টলি বড় সমস্যা। দেশ আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া তো আরো দূরের ব্যাপার। তাদের ভাষ্য অনেকটা এমন- দেশে তো খুন খারাবি কোনো নতুন ঘটনা না। শুধু ব্লগার মরলে আলা্দাভাবে এতো উতলা হওয়ার কী আছে। আমি তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি গতবার বিএনপি-জামাত আমলের বাংলাভাইয়ের সেই দিনগুলির কথা। দুঃখজনকভাবে, বাফার ওভারফ্লো হয়ে সেইটুকু স্মৃতি তারা সবাই ভুলে গেছেন।

০২

এই বিষয়ে আমি একটা ব্লগ অর্ধেক লিখে ফেলে রেখেছি। ওটা শেষ করা হবে বলে মনে হয় না, তাই মন্তব্যেই বলি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এই সংঘর্ষ আমাদের দেশে অনিবার্য ছিলো। পচাত্তর পরবর্তী সময়ে যে বিনা আয়াসে, আয়েশে মৌলবাদকে আমরা বাড়তে দিয়েছি, সেটা অল্প ক'দিনের লেখালিখি কিংবা প্রতিবাদে হারিয়ে যাবে না। জামাতে ইসলামি অত্যন্ত সফলতার সাথে সামাজিক পরিমণ্ডলে নিজেদের এস্টাবলিশ করেছে। আমার অনুমান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার চেয়েও এই সামাজিক প্রতিষ্ঠার দিকে তাদের মনযোগ বেশি ছিলো। আজ তাই আমরা যখন পালটা চ্যালেঞ্জ করছি, তখন প্রতিরোধ আসছে। এইটুকু অনুমেয়। কিন্তু এই ক্রিটিক্যাল সময়ে এই সরকারের থেকে যে সাপোর্টটা পাওয়া উচিত ছিলো, কিংবা পাবো বলে আমরা অনেকেই ভেবে রেখেছিলাম, সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটা হত্যাকাণ্ড যখন এক ধরনের নিরব সমর্থন পাচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছ থেকে, তখন বিপদটা খুব বড় হয়ে উঠে। আমি নিশ্চিত জানি, এই আওয়ামী লীগই আজ যদি বিরোধী দলে থাকতো, তারা ঠিকই ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো। কিন্তু এখন প্রতিবাদের বদলে তারা তৈরি করেছে ওলামা লীগ।

০৩

বিপদের মাত্রাটা স্পষ্টতই অধিকাংশ মানুষ বুঝতে অপারগ। তাদের কাছে এটা শুধুই কিছু নাস্তিক ব্লগার হত্যা, যাতে হয় তাদের সমর্থন আছে, অথবা তারা ইনডিফারেন্ট। আমরা যতোই নারীর ক্ষমতায়ন, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি, সামাজিক নানা সূচকের উন্নতির ঢেঁকুর তুলি- সবটুকুকে শেষ করে ফেলতে এই নিঃস্পৃহতাটুকুই যথেষ্ট। এই সহজ সত্যটুকু ধরার মতো বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এবং সরকারের আছে কিনা, সেইটাই এখন দেখার বিষয়।

সত্যপীর এর ছবি

চুয়াল্লিশ বছর আগে পূর্ব পাকিস্তানে প্রোপাগান্ডা চলেছিল টার্গেট অডিয়েন্সকে মালাউন ডেকে। তারা মালাউন, আল্লার অভিশাপ্প্রাপ্ত। তারা ধ্বংস হোক। মালাউনের জমি দখল করা জায়েজ, তার মেয়ে গণিমতের মাল। তারা সকল প্রোপাগান্ডা কন্সেন্ট্রেট করেছিল একটি শব্দে ফোকাস করে, মালাউন। মানুষ হত্যাকে জায়েজ করা হয়েছিল মালাউন হত্যা ডেকে, হে বিশ্ব আমরা মানুষ মারছিনা আমরা মালাউন মারছি। ইটস ওকে।

আজকে টার্গেট অ্যান্টি পাকিস্তানির দল, জামাত শিবিরের উপর মুতে দেয়া মানুষ। প্রোপাগান্ডা শুরু হল, নাস্তিক। ফোকাস ওয়ার্ড, শাহাবাগি নাস্তিক। ওরা নাস্তিক, ওরা আল্লার নবীর অবমাননাকারী। তাদেরকে হত্যা আমাদের কর্তব্য। হে বিশ্ব, হে দেশ, হে প্রধানমন্ত্রী, হে আইজিপি। মানুষ মারছিনা, নাস্তিক মারছি। ইটস ওকে।

দ্য মোর ইট চেঞ্জেস, দ্য মোর ইট রিমেইন্স দ্য ফাকিং সেইম। সেই পুরানো শিয়ালে একই গান গাইছে।

..................................................................
#Banshibir.

Hasan Rahman এর ছবি

তবুও আমরা লড়ব, আমরা লড়ব আমাদের সাধ্যমত। আমি লেখক নই যে লিখে যাব, আমি আমার মত করে আমার প্রিয় বাংলাদেশের জন্য লড়ে যাব। চরম উদাস এবং সবজান্তা দুজনেই অতি সত্য কিছু কথা তুলে ধরেছেন। আওয়ামীলীগের দুই একজন প্রগতিশীলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, তাঁদের বক্তব্য হল ফেসবুক এই ধরনের আলোচনার যায়গা না। তো ঠিক কোন মাধ্যমে আলোচনা করব সেটা ঠিক জানিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেই মানুষ এবং রাজনৈতিক দলকে গত প্রায় দুই যুগ ধরে সমর্থন করে আসছি তাঁদের কাছে এরকম কিছু আসা করিনি। যেই দলের সমর্থন গত ২৪ বছর ধরে নির্দ্বিধায় করে আসছি তারা যখন আমার কিংবা আপনার বা আমাদেরকে বিনা দ্বিধায় মরতে দেখে এবং দেখেও না দেখার ভান করে অথবা আমাদের দোষ খুঁজে বেড়ায় তখন যাব কোথায়? হুমায়ুন আজাদ যখন আহত হলেন কিংবা আহমেদ শরীফ যখন ফতোয়ার শিকার হলেন তখন যদি শেখ হাসিনা প্রতিবাদ করতে পারেন, আজকে তিনি ক্ষমতায় তখন কেন খুনিরা ধরা পড়বেনা অথবা বিচার হবেনা? শেখ হাসিনার উপর যারা হামলা করেছিল ২১শে আগস্ট, অথবা লালদিঘির ময়দানে অথবা কোটালিপাড়ায় যারা বোমা পুতেছিলে তারা আর যারা অভিজিৎ দা কে হত্যা করল তারা কি ভিন্ন শিবিরের লোক? আমার মত সাধারণ বুদ্ধির মানুষের কাছে শেখ হাসিনার শত্রু আর মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতার শত্রু একই। অভজিত কিংবা শেখ হাসিনা একই শ্ত্রুরই মুখোমুখি! অথচ কেন হাটাহাজারির মাদ্রাসায় জমি বাড়ে কেন? কেন এই সময়ে ওলামা লীগ আস্ফালন করে। আপনি বলবেন কৌশল? তাই যদি হয় আপনি কি নিশ্চিত যে এই কৌশল কাজে আসবে? অথবা আসতে আসতে আমরা বেঁচে থাকব? হুমায়ুন আজাদ মারা যাবার পরেও একইভাবেই তার চরিত্র হনন করা হয়েছিল। মসজিদে মসজিদে ইমামরা বয়ান করেছিল আজাদ নাকি ভায়াগ্রা অভারডোজে মারা গিয়েছিলেন। তাতে কি শেখ হাসিনা হ্যমায়ুন আজাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা থেকে বিরত হয়েছিলেন? শেখ হাসিনাকে এখনো এই দেশের অনেকেই হিন্দু বলে প্রচার করেন, আমার অনেক পরিচিত মানুষ আমাকে বলে নৌকায় ভোট দিলে মুসলমান কাফের হয়ে যায়! এই মানুষগুলো কি কোনদিন আওয়মালীগ করবে? শেখ হাসিনা যদি দেশে শরীয়তের আইন কায়েম করেন তাও? সমস্যার সমাধান এত সোজা না, এই দেশের মানুষের মন বদলানো এত সোজা না, কিন্তু দেশনায়ককে কেবল জনগনের দেখানো পথে হাটলে হবেনা, দেশনায়ককে পথ দেখাতে হবে। ১৯৭০ এও মুজিব ছাড়া গুটিকয় মানুষই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার সাহস করতে পেরেছিলেন। মুজিবই আমাদের পথ দেখিয়েছিলেন, জনগন মুজিবকে পথ দেখায়নি। আজকে সুন্দরবনের বাঘেরা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আজকে অভিজিতেরা পথে প্রান্তরে মৃত পড়ে থাকছে। যাদের জন্য মুজিব প্রান দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের টাকায় বাঘের জলছাপ দিয়েছিলেন পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে বাঘ শিকার বন্ধ করেছিলেন। আমরা যখন বন্য প্রাণী সবংরক্ষন আইন করেছিলাম তখন পৃথিবীর খুব কম দেশে এইটা ছিল। তো তাঁর মেয়ের কাছে অন্তত এইটুকু আশা থাকে যে তিনি আমাদেরকে এবং আমাদের বাঘেদেরকে দেখে রাখবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

জামাত-শিবির নাম শুনলেই কিছু বলার আগেই মুখের কথা থামিয়ে জন্য হাজার মানুষ ছুটে আসে-জামাত শিবির নিয়ে টু শব্দ করা যাবে না। আর আজকাল পথে ঘাটে কেবল শুনি-অমুক তো ইসলামবিরোধী, তমুক তো নাস্তিক। যারা বলছে তাদের একটা বড় অংশকে দেখলেই বোঝা যায় কোনো মন্তব্য করতে তারা কতটা সক্ষম/অক্ষম। তবু তারা বলবেই, একদল ব্রেইনওয়াশড হয়ে যাওয়া মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ ধর্মের নামেই ভয় পায়। আর আমরা আমজনতা ঠিকঠিকই সব ভুলে যাই দু’দিন পর।

নজমুল আলবাব এর ছবি

৭১ এর হিন্দু আর ২০১৫ এর নাস্তিক একই মেষশাবক। সেই পুরানো খেলা। একই খেলোয়াড়, একই শিকারি, একই গেম প্ল্যান।

আসল কথা এটাই। আগেরবার যুদ্ধ করার মতো যথেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। এবার নেই। আমরা নির্দিষ্ট অন্ধকারের দিকে এহিয়ে চলেছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন বিশ্লেষন।লতাপাতা বাদ দিয়ে একদম গোড়ায়।ব্লগার হত্যা যে একটি রাজনৈতিক ইস্যু সেটাই এই লেখায় উঠে এসেছে।তবে সমস্যা হল,বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল এই নিয়ে কনসার্ন না।বিএনপির কথা বাদই দিলাম।আওয়ামীলীগ এর আচরন না মৌলবাদী,না সেক্যুলার না মডারেট।তারা সম্পূর্ন সুবিধাবাদী আচরন করছে।কাল শুনলাম ব্লগারদের লেখার কারনে গ্রেফতার করা হতে পারে!!! সেলুকাস..

#নিটোল_আরন্যক

অতিথি লেখক এর ছবি

এতসব কিছুর পরও আমি আস্থা রাখি শেখের বেটির উপর।

(আস্থা রাখার কারণটা আমার প্রিয় একজন কলামিস্টের ভাষায় বলি-)

কারণ তিনি জানেন, যুদ্ধে জয়ের জন্য মূল শত্রুর কাছ থেকেও সময় চেয়ে নিতে হয়। যেমনটি নিয়েছিলেন স্ট্যালিন। হিটলারের উদ্দেশ্য সেনাপতি স্ট্যালিন বুঝেছিলেন সবার আগে। তাই চূড়ান্ত লড়াইয়ে হিটলারকে পরাজিত করার জন্য হিটলারের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তিনি জানতেন, হিটলার এই চুক্তি ভঙ্গ করবেন। তার পরও নিজেকে সর্বোচ্চ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার যতটা সময় পাওয়া যায় সেটা নিয়েছিলেন স্ট্যালিন।

বাই দ্য বাই, ঐ শুক্রবারেরই একটা নিউজ শেয়ার করি-

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে লালখান বাজারের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। খুলসী থানার ওসি নিজামউদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুফতি ইজাহার চট্টগ্রামের লালখানবাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ মামলার আসামি।
হেফাজত নেতা মুফতি ইজাহার নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। তার পরিচালিত লালখানবাজার মাদ্রাসার ছাত্রবাসে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে চারটি গ্রেনেড ও পিকরিক এসিডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।
ঐ ঘটনায় পুলিশ নগরীর খুলশী থানায় হত্যা, বিস্ফোরক ও এসিড আইনে তিনটি মামলা করে। মামলাগুলোতে ইজাহার ও তার ছেলে হারুনকে আসামি করা হয়।

নিউজের লিঙ্ক goo.gl/u6dG7N

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

৭১ এর মেষশাবকের হাতে অস্ত্র ছিল, বর্তমানের মেষশাবকের হাত খালি। আমার হিসেব বলে, যে নৃশংসতার সাথে ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে, তার কিছু, পুরোটা বা বেশি যদি ফেরানো হয়; তাহলে এই দর্শকেরা হয়ে যাবে গান্ধীবাদী, হত্যার বদলে হত্যা ভালোনা বলে চেঁচিয়ে উঠবে

প্রো ৭১ গোষ্ঠীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে; আগামী এক দশক এক গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হবে যুদ্ধ ও এর থেকে প্রাপ্ত শ্লাঘাকে সম্পূর্ণ ভুলিয়ে দেয়ার কিংবা রিভাইভ করার

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

"আমিও হয়তো সেই যুদ্ধের এক নগণ্য সৈনিক। কখনও হতাশ সৈনিক, কখনও পথভ্রষ্ট সৈনিক, কখনও আবার নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়ানো সৈনিক। "

এটাই শেষমেষ সান্ত্বনা। যুদ্ধ তো চালিয়ে যেতেই হবে। যদি আমাকে দেখে আর একজনও এগিয়ে আসে!

____________________________

তাহসিন রেজা এর ছবি

অনিশ্চিত এক অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

bashabi এর ছবি

বাঙালি দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগ পর্যন্ত্ উদাস হয়ে বসে থাকে। আমার ধারণা বাংলাদেশ স্বাধীন হত না যদি না পাকিস্তানি গুলা বেকুব এর মতো গণহত্যা শুরু করত. বাংলাদেশ এর মুক্তিযোদ্ধা দের একটা বিশাল অংশ ছিল গ্রামের কৃষক র সাধারণ মানুষ। তারা কি স্বাধীনতার মানে কতটুকু বুঝত। এইসব মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন বলেই দেশ তা স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রুমির মতো মানুষ খুব কম যারা দেশের কথা ভেবেই যুদ্ধে গিয়েছিলেন। আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি ভাগ্গিস পাকিস্তানি গুলা ২৫ সে মার্চ এমন গণহত্যা শুরু করেছিল। সেইজন্যে আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছি। না হলে এখনো বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হয়েই থাকত।

শাহবাগ এর আন্দোলন ও তাই. emotional বাঙালি তার emotion ৪২ বছর ধরে চাপা দিয়ে রেখে ছিল. এই মাটিতে যে রাজাকারদের বিচার কোনদিন হবে সেটার দুরাশা কেউ আগে করে নাই. কিন্তু সমস্ত কিসুর পরে বিচার শুরু হলো। পলাতক বাচ্চু রাজাকার এর ফাসির আদেশ হলো. তারপর কাদের মোল্লার যখন যাবজ্জীবন এর রায় হলো তখন ও হয়ত বাংলায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেটা মেনে নিত. গন্ডগোল বাধালো কাদের মল্লার V চিন্হ। পাকিস্তানি বাপেদের মতো এক এ ভুল করে কাদের মোল্লা নিজের মরণ নিজেই ডেকে আনলো। ওই V চিন্হ না দেখালে শাহবাগ আন্দোলন এত সাকসেসফুল হত কিনা সন্দেহ আছে.

তাই আমি এখনো আশাবাদী। কোপ দিয়ে কয়টা গলা নামাবে। সামনে থেকে যারা যুদ্ধ করে তারা আগে শহীদ হয় এটাই নিয়ম। কিন্তু এখন আপাত অদৃশ্য হলেও এই যুদ্ধে আরো বাঙালি সামিল হবে এটাই আমার বিশ্বাস। একটা ঘা খাওয়ার অপেক্ষা। দুর্ভাগ্য যে সেই ঘা টা হবে অত্যন্ত্য নির্মম।

করিম বস এর ছবি

ব্লগার হত্যা জামাত শিবিরের সুক্ষ খোভ এর বহিঃপ্রকাশ! গন জাগারণ মন্চের আবরীভাব এর কারণে তাদের টানা রাজপথে আন্দোলনের কারণে কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়! না হয় হয় বিচারটি অন্য রকম হতে পারত জামায়াত মনে করে সরকারের সাথে সমযতা করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো সম্ভব ছিল! আর এইটা গণজাগরণ মূল উদ্দোক্তা ব্লগারদের প্রচার আন্দোলনের দ্বারা সম্ভব হয়নি! এইজন্যই শিবির তাদের নাস্তিক উপাধি দিয়ে জনগণ কে বিভ্রান্ত করে সরকারকেওও নাস্তিক সরকার প্রচারের সড়যন্তে ব্যস্ত! আর ব্লগার হত্যা করে শিবির নিরব প্রতিশোধ নিচ্ছে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

নগর পুড়লে দেবালয় সেটা এড়াতে পারে না, দেবভক্তরা চেপে গেলেও...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এটা সেই পুরোনো যুদ্ধ, ৪৪ বছর পুরোনো যুদ্ধ, এখনো চলছে, আগামীতেও চলবে। চাপাতি চালাতে যতই আস্তিক নাস্তিক লেবাস দেয়া হোক, টার্গেট অডিয়েন্স একই, এটা বুঝতে ভুল করলে সমস্যা আপনার। আপনি ভাবছেন আপনি তো আস্তিক নিরাপদ, কিন্তু যেদিন তীর ছুটে আসবে তখন আর সময় থাকবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক
এই কথাগুলো আমরা সবাই নানা ভাবে বলার চেষ্টা করছি গত কয়েক বছর, কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে কিংবা আদৌ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে লম্বা আলোচনা করা যায়। আমার মনে হয় এরচেয়ে রাষ্টের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই বাংলাদেশের মূল সমস্যা। আমি-আমরা করে বদলে গিয়ে দেশ বদলে দিতে যেখানে শত বছর লাগবে সেখানে রাষ্ট্র চাইলে সেটা কয়েক বছরে সম্ভব। যতদিন রাষ্ট্র ভোটের নোংরা রাজনীতি থেকে বের হওয়ার নৈতিকতা অর্জন করতে পারবে না ততদিন বাংলাদেশের পেছনের দিকে এই পথ চলা বন্ধ হবে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়েশা আখতার এর ছবি

আমার কথাগুলোই যেন আপনি বললেন। পরিচিত এক সময়ের প্রগতিশীল অনেককেই হঠাৎ বাড়াবাড়ি রকম ধার্মিক বা সুবিধাবাদি হতে দেখে অনেক দিন ধরেই এই আশঙ্কা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এরা এদের আসার রাস্তা সুগম করছে।

বৃষ্টি স্নাত কবি এর ছবি

সব সময়ের মতোই ভালো লেখা।
একদম প্রথমে ১০০০ দর্শকের ভাগ করাটা ঠিক করে ফেলুন। ছোট্ট জিনিষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখার জলজ‌্যন্ত উদাহরন।

অতিথি লেখক এর ছবি

উইকেন্ডে আমি অনলাইনে ঢুকি না, যদি না বাংলাদেশের খেলা থাকে। তারপরও শনিবার খবরটা পেয়ে গিয়েছিলাম। যদিও এই ধরনের খবরে এতদিনে “অভ্যস্থ” হয়ে যাবার কথা ছিল তারপরও একন পর্যন্ত কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিনা।

রুটিন করে ব্লগার খুনের পরে আমার রুটিন হচ্ছে সচলে কে কি লিখল, চরম উদাস কি স্ট্যাটাস দিল সেগুলো পড়ে আরও উত্তেজিত হওয়া; হয়তো ফেসবুকে শেয়ার করা ... তারপর আবার অপেক্ষা 

যারা ভালো লিখতে পারেন তারা তাদের কাজ করছেন, আমরা পাঠকরা পড়ছি, এটাই কি যথেষ্ট ? এখন পর্যন্ত “অন্ধ দর্শক” ক্যাটাগরির কাউকে চোখ খুলতে রাজী করাতে পারলাম না। এর বেশী নিশ্চয়ই কিছু কি করা যায়?

যদি কোন ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমি অংশ নিতে আগ্রহী।

পিয়াল, সিডনী
aa_pial@yaহoo.com

নাম নাই এর ছবি

বাশেরকেল্লা, গোলাম মওলা রনি সাহেব, এ কে এম ওয়াহেদুজ্জামান সাহেব কিংবা আরো অন্যান্য সেলিব্রিটিরা যখন IS এর সমালোচনা করে কোনো পোস্ট দেন তখন তাদের ফ্যানরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যান. এক দল তাদের সমর্থন করেন আর এক দল বিরোধিতা করেন.

অনলাইন এ আছি ২০১০ থেকে, আমার আশংকা হচ্ছে ২০১০-১১ তে আস্তিক নাস্তিক দন্দ শুধু ব্লগে সীমাবদ্ধ থাকলেও সেটা যেমন ধীরে ধীরে বাস্তব জগতে এসেছে ঠিক তেমনি IS সমর্থক ও সমালোচনাকারীদের দন্দ বর্তমানে অনলাইন এ সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা ধীরে ধীরে সমাজে প্রকাশ্যে চলে আসবে. ইসরাইল তো IS কে পরোক্ষভাবে সাহায্য করবেই তাতে তাদের লাভ কিন্তু বহু মুসলমান তাদের ট্রাপে পা দিছে এবং IS সমর্থকের সংখা এখন হাজার হাজার নয় বরং লক্ষ লক্ষ. ফেচবুকে বাক্তিগত কোন তথ্য নেই শুধু ধর্মীয় বাণী এমন ID তো আছেই এমনকি আরো দেখেছি যেখানে এক সময় বাক্তিগত তথ্য ছিল কিন্তু এখন আর নেই

রানা মেহের এর ছবি

আপনার লেখাটা অনেক অনেক জরুরী ছিল। ধন্যবাদ চরম উদাস। জরুরী একটা দলিল হয়ে থাকবে এই লেখা।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ফুজিয়ামা এর ছবি

এই দর্শকদের ভিতর যারা হত্যার শিকার হয়ে যাওয়া মানুষটির দোষ কতটুকু সেই চুল চেরা বিশ্লেষণ করতে বসে, তাদের সাথে শিকারীর তেমন কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ব্যাচের ২৮ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৩ জন দেশের বাইরে চলে গেছে। আমি সুযোগ পেয়েও যাই নি। প্রধান কারণ আমার আব্বা-আম্মা বয়স্ক এবং অসুস্থ আর আমি তাঁদের একমাত্র ছেলে। আমি চাইলেই আমার দায়িত্ব এড়াতে পারব না। ব্লগে লেখালেখি করি প্রায় ৪ বছর হয়ে গেল। জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে লিখবার কারণে একাধিকবার থ্রেট খেয়েছি। আগে ব্লগে লিখতাম কেউ কিছুই ভাবত না। কিন্তু এখন একজন একজন করে ব্লগার খুন হয় আর বাসা থেকে এক ধরণের কান্নাকাটির সন্মুখিন হতে হয়। আমি একমাত্র ছেলে, আমার কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে তাঁরা বাঁচবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমার বাবা-মা'কে দোষ দিতে পারি না। আমার বাবা একজন আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও কোন ঝুঁকি নিতে রাজী নন। ব্লগারদের বিরুদ্ধে মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্র উভয়ের রোষানল পতিত হওয়ার পর থেকে আমারও সেই ইচ্ছা এবং সাহস নেই। তাই আজকাল ফুল-ফল-লতা-পাখি নিয়েই ব্যস্ত থাকি। জানি এটা কাপুরুষতা তারপরেও নিজেকে প্রবোধ দেই এই বলে যে ভবিষ্যতে আবারও লিখব। চউদা, আপনার লেখাটা প্রতিমুহূর্তে গালে কষাঘাত করে। বিবেকের আয়না থেকে তো আর পালানো সম্ভব না। একটা সময় ভাবতাম বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান হবে না। কারণ এইদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুফিবাদের মাধ্যমে, তলোয়ারের মাধ্যমে নয়। এখন আর সেটা মনে হয় না। কিন্তু কি আর করা। আমার তো আর পালাবার রাস্তা নেই। এই দেশেই থাকতে হবে, এইখানেই মরতে হবে। আম্মা-আব্বা ইদানিং বলছেন দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতে। কিন্তু আমি সেটা চাই না। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোটা কখনোই সমাধান না। আবার দেশে বসে চাপাতির কোপ খাওয়াও সমাধান না। তাহলে সমাধানটা কি?

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

পাকসার লেখার পরেই কিন্তু হুমায়ূন আজাদের পর হামলা হলো, আমার অবিশ্বাস লিখেছিলেন আরো আগেই। সবকিছু একটা প্যার্টান-ই ফলো করে। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যেমন তার শাসনামলের উপর দায় চাপানোর প্রবনতা, ধর্ষণ হলে পোশাকের- এইসবের সমস্যার প্যাটার্ন একই- এবং অনেক গভীরে নিহিত।

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।