জামিয়াহ আল-বাংলা কিতাব মাহফিল ২০২০

চরম উদাস এর ছবি
লিখেছেন চরম উদাস (তারিখ: সোম, ২৯/০২/২০১৬ - ৪:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবি হিলফুল ফুজুল বিন উমরের আদি নাম ছিল হিল্লোল ফজল। হিল্লোল নাম শুনে ফজল পর্যন্ত না গিয়েই নাক সিটকাতো প্রকাশকেরা। বাংলা একাডেমির আমীর আল্লামা শামসুর সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে লেখকের নামেও যেন কোন ধরণের উস্কানি না থাকে। হিল্লোল নামের মাঝে পরিষ্কার একটা হাসি মস্করা এবং হিন্দুয়ানী গন্ধ আছে। কিন্তু হিল্লোলরা হিন্দু নয়। একদিন হিল্লোল গাল ফুলিয়ে তার বাপ অমর ফজল কে গিয়ে ধরে, আব্বাজান আপনার নামটা ওমর না রেখে অমর রাখলেন কি করতে? আমার নামই বা হিল্লোল কেন রাখলেন? শুনে বুড়া ফোকলা দাঁত বের করে হেসে বলে, অমর ফজল মানে হইলো যেই ফজল মরে না। বাপ মরার দিন কবরে মাটি ফেলতে ফেলতে হিল্লোল বলছিল, হ্যাহ, অমর নাকি! পরদিন হিল্লোল উকিল ধরে নাম বদলায়। হিল্লোল ফজল হয় হিলফুল ফুজুল আর অমর হয় ওমর। পরে আবার মুন্সী এসে বোঝায়, ওমর না, উমর সঠিক উচ্চারণ। হিল্লোল আরও একবার বদলে হয় হিলফুল ফুজুল বিন উমর।

নাম বদলে হিলফুল বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দরবারে হাজির হয়ে। খোঁজ করা মাত্র তার সেক্রেটারি জিভ কেটে বলে, মহাপরিচালক আবার কি? উপরের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে, মহাপরিচালক তো একজনই, উনি। আপনি যারে খুঁজতেছেন সে আমীর। তারপর আরও একবার জিভ কেটে বলে, বাংলা একাডেমিই বা কি? জানেন না আমাদের নাম এখন, জামিয়াহ আল-বাংলা? বহুক্ষণ অপেক্ষা করে সে আমীর সামসুর দেখা পায়। পা ছুঁয়ে সালাম করে দুয়া নেয়। তিনি পানের পিক ফেলে বলেন, বেঁচে থাকো বাবা হিলফুল। আমি বড় খুশী হয়েছি। খেরেস্তানেরা বলে, নামে কি আসে যায়। কিন্তু আসলে নামই সব। নামের মধ্যে যদি গন্ধ থাকে তাইলে লেখা সুগন্ধি হবে কিভাবে?

হিলফুল পরদিন বগলে নিজের লেখা নতুন পদ্যের বই 'দুধের নহর' নিয়ে হাজির হয় মগবাজারে, প্রকাশক লিটন হাসনাতের কাছে। অফিসের দরজায় চাপ চাপ রক্ত দেখে ঘটনা বুঝে যায়। অফিসের ভেতরে ঢুকে দেখে তরুণ লেখক মনিরুল হাসান রক্তমাখা চাপাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে। হিলফুল একটু বিরক্ত মাখা কণ্ঠে বলে, এরে জবাই করলা কেন? মনিরুল হেসে বলে, নাম লিটন যে। হিলফুল আরও বিরক্ত হয়ে বলে, আরে পুরা নামটা জানবা না মিয়া? ওই যে দেখ দরজাতেই তো লিখা আছে। মনিরুল দরকার কাছে গিয়ে নানান করে নাম পরে, ল এ হ্রস্বি কার ট দন্ত্য ন হ এ আকার দন্ত্য স। হিলফুল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, হাসনাত, হাসনাত। মিয়া উদীয়মান লেখক হইছ আর এখনও বানান করে পড়া লাগে?
মনিরুল দাঁত বের করে হেসে বলে, আমি তো লেখি। পড়ি না।
তারপর আবার লিটন হাসনাতের রক্তমাখা নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে বলে, কাজটা কি তাইলে ভুল হয়ে গেল বড় ভাই?
হিলফুল আশ্বাসের সুরে বলে, ব্যাপার না। ভুল তো মানুষই করে। কিন্তু লোকটা খারাপ ছিল না। লিটন দেখে কোপ মারলা, হাসনাতটা খেয়াল করবা না?
মনিরুল হাসান শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায়। হিলফুল লাশটার একটা গতি করার চেষ্টা করে। পাশের দোকান থেকে দুজনকে ডেকে আনে। দুজনেই চোখ উল্টে বলে, লাশ কই? হিলফুল বলে, এই যে! তারা আবার বলে, কই? একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে হিলফুল বের হয়ে যায়।

লিটন হাসনাতের অফিস থেকে বের হয়ে খানিক ভাবে হিলফুল। নাম বদলালো এতো ঝামেলা করে এখন প্রকাশকও বদলাতে হবে। বই মেলা শুরু হতে মাত্র মাস দুয়েক বাকি। মনে মনে বইমেলা শব্দটা উচ্চারণ করে মনে মনেই জিভ কাটে হিলফুল। মেলা ভয়ঙ্কর শব্দ, এটা বদলে তাই মাহফিল করা হয়েছে এখন। সেইসাথে বই বদলে প্রথমে পুস্তক, তারপর আরও মোলায়েম শব্দ কিতাব করা হয়েছে। এই বছরের মেলার পুরা নাম তাই জামিয়াহ আল-বাংলা কিতাব মাহফিল ২০২০। একটু ভেবে রাস্তার অপর পারের সহিহ ধারা প্রকাশনীর অফিসে ঢুকে পরে হিলফুল। বৃদ্ধ প্রকাশক হামিদুল ইসলাম তার দিকে একবার তাকিয়ে কাজে ব্যস্ত হবার ভান করে। হিলফুল তার টেবিলে রাখা একটা বই তুলে নেয়। কবির নামটা বেশ সুন্দর, হেলাল হাফিজ। বই এর নামটাও চমৎকার, যে পানিতে আগুন জ্বলে। হিলফুল প্রকাশক হামিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে।
- এটা কার বই চাচাজান?
- ওই যে দ্যাখো, নামতো লিখাই আছে।
- তা তো বুঝলাম, কিন্তু কবি এখন কই? একটু পরিচয় করায়ে যদি দিতেন।
- আরে কবি কি আর বাইচা আছে? কে না কে কোপাইছে। তার বাসা থেকেই এই বইটা নিয়ে আসে আমার এক কর্মচারী। বেশ নাকি চলে এই বই। বই এর নাম ছিল, যে জলে আগুন জ্বলে। কি ভয়ঙ্কর চিন্তা করতো দেখি। আমি পরে জল রে পানি বানাইয়া এই মাহফিলে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেছি আরকি।
হিলফুল বইটার পাতা উল্টায়। দুই একটা কবিতা পড়ে। আস্তে আস্তে মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।
- চাচা, কবিতাগুলা কি আপনি পড়ছেন?
- আরে, আমার পড়ার সময় কই। খালি নামটা পড়ছিলাম। আর পদ্যের বই এই যুগে কেই বা পড়ে? খালি নামটা আর বইয়ের উপরের ছবিটা দেখে আরকি।
- চাচা, আপনার পড়া উচিৎ ছিল। এই যে দেখেন এই কবিতাটা। এইরকম আরও অনেক আছে।

হামিদুল বিড়বিড় করে পড়েন,
গাভিন ক্ষেতের ঘ্রাণ, জলের কসম, কাক
পলিমাটি চেনা মানে আমাকেই চেনা।
তারপর কলম দিয়ে 'জলের কসম' কেটে 'পানির কসম' বনিয়ে দেন।
কয়েকটা পাতা উল্টে আবার বিড়বিড় করেন,
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
লাল কলমে কাটাকাটি করেন আবার,
এখন যৌবন যার মাহফিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার জিহাদে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
আরও কয়েকটা পাতা উল্টে বিড়বিড় করেন, কি সর্বনাশ! কি সর্বনাশ!

হিলফুল বলে,
- চাচা সর্বনাশ হবার আগেই এই বই আপনি নামিয়ে ফেলেন। এইটা কারেকশন করে কুল পাবেন না। এর চেয়ে বরং আমার এই 'দুধের নহর' পদ্যের বইটা নেন। এইটা পাবলিশ করে ফেলেন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতেছি এইখানে উস্কানিমূলক কিছু পাবেন না। জল, যুদ্ধ, মিছিল, বিজয়, দোয়েল এইসবের বদলে এখানে পানি, জিহাদ, মাহফিল, আবাবিল এইসব পাবেন।
- আচ্ছা এই বই এর বিষয়ে কাউকে কিছু বইলো না। আমি সরানোর ব্যবস্থা করতেছি। আর তোমার বইটাই রেখে যাও বরং।

হিলফুলের বই মাহফিলে আসে তৃতীয় দিনে। মাহফিলে ঢুকার মুখে ড্রেনের পাশে দুইটা লাশ দেখতে পায় হিলফুল। সেদিকে না তাকিয়ে জোরে পা চালায়। 'লাশের সাথে সাহিত্য মেলাবেন না' এটাই এখন লেখালেখির মূলমন্ত্র। লাশের জায়গায় লাশ থাকবে, সাহিত্যের জায়গায় সাহিত্য। যেদিন প্রথম লেখক বই মেলার সামনে কোপ খেয়ে মারা যায় তার পরদিনই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই লেখকের দুই গরম উপন্যাস বের হয়। দুদু উল হকের নতুন প্রেমের উপন্যাস 'ভালোবেসে কামড়ে ধরি' বের হয় আর নিসা উল হক হাজির হয় তার 'চাপাতির দিনগুলিতে প্রেম' উপন্যাস নিয়ে। রগরগে এই দুই প্রেমের উপন্যাসের কাছে তাজা রক্ত পাত্তা না পেয়ে দুইদিনেই বাসি হয়ে যায়। সেবারের থেকে সাহিত্যের সবচেয়ে বড় জাতীয় পুরস্কারের প্রচলন করা হয়, বদরিয়া শান্তি সাহিত্য পুরস্কার। সাহিত্যের মাধ্যমে যারা শান্তি এনেছে, প্রতিবছর তাদের মধ্য থেকে সেরা জনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রথমবার সহ মোট তিনবার এই পুরস্কার পেয়ে দেশবরেণ্য প্রবীণ সাহিত্যিক দুদু উল হক সবচেয়ে এগিয়ে। তার পিছনেই আছে নিসা উল হক দুইবার পুরস্কার পেয়ে।

বিকেল চারটার মধ্যে সবাই জড়ো হয় মাহফিলের মাঝখানের জামতলায়। সেখানে চোখে সুরমা দিয়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী পরে বড় এক চেয়ারে বসে থাকেন প্রাক্তন বাংলা একাডেমি বর্তমানে জামিয়াহ আল-বাংলার আমীর। তাকে ঘিরে চাটাই পেতে বসে সবাই। এক এক করে সবাই নিজের নতুন বই নিয়ে গিয়ে জামিয়াহ আল-বাংলার আমীরকে পা ছুঁয়ে সালাম করে। তার পাশের দান বাক্সে হাজার খানেক টাকা ভরে। ঢুলুঢুলু চোখে আমীর বসে থাকলেও টাকা জমা হবার সময় আড়চোখে তাকান। তারপর সবাই নিজের বই থেকে কিছু অংশ পড়ে শুনায়, বই নিয়ে দুই চারটা কথা বলে। আজকেই তার বই এসেছে। হিলফুল তাই তার বই নিয়ে সেখানে হাজির হয়। জীবনমুখী কবি জামিল ইবনে কায়কাউস হাজির হয়েছে তার নতুন বই 'একটু একটু প্রস্রাব হয়েছিল' নিয়ে। সালাম ও হাদিয়ার পর বই খুলে কয়েক লাইন আবৃত্তি করে সে।

অবশেষে সে এসেছিল
অনেক প্রতীক্ষার পর
কত শত রাত জেগে
ভোরের আলোর একটু আগে
বেশী নয় বেশী নয়
একটু একটু প্রস্রাব হয়েছিল।

সবাই কিছুক্ষণ মারহাবা মারহাবা করে তার জীবনমুখী কবিতা শুনে। একাডেমির আমীর তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেন। তার পাশে দাঁড়ানো সম্পূর্ণ হালাল কবি মাজেদ ইবনে মাজিদি তার পদ্যের বই, 'ঢিলা কুলুখের পর' থেকে কয়েক ছত্র শোনায় এবার।

তোমায় আমি দেখেছিলাম ঢিলা কুলুখের পর
প্রথম দেখায় জেনেছিলাম আমিই তোমার বর
তোমায় নিয়ে অবশেষে বাঁধবো সুখের ঘর
কিভাবে আজ হলে তুমি আমার এতো পর
তোমায় আমি দেখেছিলাম ঢিলা কুলুখের পর।

হিলফুলের পাশে দাঁড়ানো দেশবরেণ্য সাহিত্যিক দুদু উল হক চোখ মুছে বলে, কি চমৎকার কথাগুলো দেখেছো? মনটা শান্ত হয়ে যায়। আমার মনে হয় এইবারের শান্তি সাহিত্য পুরস্কার হয় জামিল নয় মাজেদ পাবে। দুদু উল হকের হাতে তার নতুন উপন্যাস 'খোলা লজেন্স'। প্রচ্ছদটা চমৎকার। একটা খোলা লজেন্স মাটিতে পরে আছে, গায়ে ধুলোময়লা। তার উপর বেশ কয়েকটা মাছি বসে আছে। অদূরে লজেন্সের প্যাকেট পরে আছে। ছবির চারপাশে অনেকগুলা জিভের ছবি। সবগুলো দিয়ে লালা ঝরছে। দুদু উল হক তার কাঁধের ব্যাগ থেকে এক কপি 'খোলা লজেন্স' বের করে অটোগ্রাফসহ হিল-ফুলকে উপহার দেন। হিলফুল বইয়ের পাতা উল্টায়। প্রথম পাতার প্রথম লাইন, সালমার নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মবিন তাকে খাটে ফেলে দিয়ে বলে, তুমি মাশাল্লা বেশ সুন্দর হইয়াছ। উত্তরে সালমা বলে, হায় আল্লাহ, এইসব আপনে কি করেন?
আরও দুই এক লাইন পড়ে হিলফুলের কান ঝিমঝিম করে। তার চোখমুখ লাল দেখে ষাটোর্ধ গল্পকার চোখ টিপে বলেন, আরে তোমরা ইয়াং ম্যান এইটুকুতে লজ্জা পেলে হবে? লজ্জা তো নারীর ভূষণ। লজেন্স থাকবে প্যাকেটে। তোমাদের মতো ইয়াং ম্যানরা গিয়ে সেই লজেন্সের প্যাকেট টেনে ছিঁড়ে ফেলবে। এই না নিয়ম। লজ্জা পেলে চলবে?এক টানে প্যাকেট ছিড়তে হবে।
বলতে বলতে দুদু উল হকের চোখ চকচক করতে থাকে। গা ঘেমে যায়। তার দম নিতে সমস্যা হয়। হিলফুল তাকে ধরে ফেলে বলে, চাচা আপনি ঠিক আছেন তো?
মাজেদ ইবনে মাজিদির পর দাঁড়ায় বাংলাদেশ ইসলামী বাম মজলিশের সভাপতি এবং সুলেখক মওলানা ভট্টাচার্য মালেক নকশালবাদী তার প্রবন্ধ সংকলন 'মার্কস ও মওদুদী - একই বৃন্তে দুটি ফুল' নিয়ে। তিনি জোর গলায় বলতে থাকেন, অনেকের ধারণা কমিউনিজমের সাথে জামাতের বিরোধ আছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। মওলানা মওদুদী যে কথা আজ বলছেন, মহামতি মার্কস সেই একই কথা শত বছর আগে বলে গেছেন। এই যে পর্দা প্রথা নিয়ে সমালোচনা করতো দেশের তথাকথিত সেক্যুলাররা সেই পর্দা প্রথারও উৎপত্তি হয়েছে কমিউনিজম থেকে। আজকে যদি আমারা দেশের সমস্ত মেয়েদেরকে বোরখা দিয়ে আবৃত করে দিতে পারি। তবে কোন ছোট বড় উচ নীচ সুন্দর অসুন্দর থাকবে না। এই সম্পর্কে মহামতি মার্কস একবার বলেছিলেন ...
হিলফুল পাশে দাঁড়ানো দুদু উল হককে প্রশ্ন করে, আচ্ছা চাচা এই লোক তো নাম বদলালো না। ভট্টাচার্য নাম নিয়ে এখনও কোপ খায়নি যে।
দুদু উল হক হেসে বলে, শেয়ালের কুমিরছানা দেখানোর গল্পটা জানো না? এই ভট্টাচার্য আমাদের পালা একমাত্র কুমিরছানা। এরে দেখায়ে আমরা বলতে পারি, এই যে দেখ কি সুন্দর ভট্টাচার্যরা আছে! শুধু যে আছে তাই না, মওলানা হয়ে আছে। হে হে হে হে।
এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী হেফাজতে মুসলিম ওলামা লীগের নেতা আবদুল কাসেম ইবনে ওয়াদুদি দাঁড়ায় তার প্রবন্ধ সঙ্কলন 'তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ- কারবালার অন্যরূপ' নিয়ে। বাংলাদেশে মুসলিম বিজ্ঞান সমিতির সদস্য মাহফুজুল বিন ইকরামুল দাঁড়ায় তার বই 'বিবর্তন ও ইসলাম - আমরা বানর নই' এবং 'বিজ্ঞানের আলোকে জাকির নায়েক' নিয়ে। সবশেষে লাজুক মুখে হিলফুল দাঁড়িয়ে তার 'দুধের নহর' থেকে কয়েক লাইন শোনায়।

দুধের নহর
কি তার বহর
চাইনা জহর
চাইনা মোহর
এ শুধু মোর
বেহেশতের 'পর
দুধের নহর

দুদু উল হক জোরে জোরে মারহাবা, মারহাবা বলেন। সবাই তার সাথে গলা মেলায়। তারপর হিলফুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, তুমি দুধ নিয়া কবিতা লিখছ, আমি বড় খুশি হইছি। দুধের নহর, কি তার বহর। আহা, আহা। কি ছন্দ, কি মিল, কি দুধ, কি নহর। আহা, আহা। ইচ্ছা করে আবার তোমাদের বয়সে ফিরা যাই।

উত্তেজনায় আবারও দুদু উল হক ঘেমে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। হিলফুল আবার বলে, চাচা আপনি ঠিক আছেন তো?

আমীর এতক্ষণ চোখ বুজে ঢুলছিলেন। কষ্ট করে একটু চোখ খুলে পাশের হাদিয়া বাক্সের দিকে একটু তাকান। মনটা ভালো হয়ে যায়। এরপর সবার একটু খোঁজ খবর নেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রকাশক লিটন হাসনাত আর লেখক হাফিজুল আজিজের খোঁজ করেন। জানতে পারেন দুজনকেই জবাই করা হয়েছে। মৃদু গলায় সবাইকে একটু ভৎসনা করে বলেন, কোপাকুপি কিন্তু একটু বেশি হচ্ছে আজকাল। আমি তো বলেছিলাম মাসে যেন দশটার বেশী না হয়। নিসা উল হক আজকে উপস্থিত হয়েছেন একটু দেরীতে। আমীর চলে যাওয়া মাত্র সুযোগ বুঝে ব্যাগ থেকে তার বই বের করে ফেরি করতে লাগলেন, এই বইটি পড়লে আরও জানতে পারবেন কেমন মানুষ ছিলেন লিটন হাসনাত আর হাফিজুল আজিজ। তারা দুজনেই আমার বই এর ভক্ত পাঠক ছিলেন। তাদেরকে জানতে হলে আমার বই পড়তে হবে।

জামতলা থেকে বের হয়ে মেলার উত্তর কোনার মজা পুকুরের ধার ঘেঁষে আরও তিনটা লাশ দেখে হিলফুল। কাছে গিয়ে একজনের মুখ চেনে। তাদের পাড়ার মবিনুল ইসলাম। অল্পবয়সী ছেলে, বোধহয় পনের ষোল হবে। কোন লেখক, কবি বা প্রকাশক না। কেন মরল হিলফুল ঠিক বুঝতে পারে না। পেছন থেকে মওলানা ভট্টাচার্য মালেক নকশালবাদীর গলা শোনা যায়।
- কি মিয়া হিলফুল? কি দেখ অত মন দিয়া?
- লাশ।
মওলানা ভট্টাচার্য মালেকর মুখটা ক্রুর হয়ে যায়।
- কই লাশ?
- এই যে?
- কই?
মওলানা ভট্টাচার্য মালেক কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসতে থাকেন এবার। হিলফুলের একটু গা শিউরে ওঠে। প্রসঙ্গ বদলে মোলায়েম গলায় বলে,
- বস, আপনার বই এর বিক্রি কেমন?
ভট্টাচার্য মালেকের ক্রুর মুখটা একটু নরম হয়।
- বেশ ভালো, বেশ ভালো। গত বছর তো আমার লেখা 'মাও ও মওদুদী - লং মার্চ থেকে শাপলা চত্বর মার্চ' বেস্ট সেলার হয়েছিল একেবারে। এবারের বইটাও হবে ইনশাল্লাহ। আজ তাহলে চলি ইয়াং ম্যান। জাজাকাল্লাহ খায়রান।

ভট্টাচার্য মালেকের গলায় খাঁটি আরবি উচ্চারণে ইনশাল্লাহ আর জাজাকাল্লাহ শুনে আবারও একটু শিউরে ওঠে হিলফুল। পা চালিয়ে কিতাব মাহফিলের শিশু ও কিশোরদের অংশের দিকে আগায় হিলফুল। শিশু সাহিত্যিক আব্দুল মোতালেব শিশুদেরকে তার লেখা ছড়া আবৃত্তি করে শুনাচ্ছিলেন,

খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
নাস্তিক এলো দেশে
ছুরি চাকু জং ধরেছে
কোপ দিব কিসে ?
দাও ফুরল, বটি ফুরল
কোপের উপায় কি?
আর কটা দিন সবুর কর
চাপাতি শেনেছি।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হয়। মাহফিল আস্তে আস্তে খালি হতে থাকে। হিলফুল উল্টা পথে আবার জামতলা পার হয়ে মাহফিল থেকে বের হবার জন্য রওনা দেয়। জামতলা এখন পুরাই নির্জন। নির্জন অংশটা পা চালিয়ে পার হবার চেষ্টা করে সে। অন্ধকার ফুঁড়ে তিন চারজন মানুষ উদয় হয়ে হিলফুলের পথ আটকে দাড়ায়। হিলফুল যা বোঝার বুঝে ফেলে। একজন গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, কেমন আছেন হিল্লোল ভাই? হিলফুল প্রায় চিৎকার করে বলে, হিল্লোল না হিলফুল, আমি হিলফুল। জবাবে তারা খলখলিয়ে হাসে। হিলফুল প্রাণপণে স্মৃতি হাতরে বেড়ায়, কোথায় ভুল হয়েছিল? দুধের নহরে কোথাও কি কাউকে অসম্মান করা হয়ে গেছে ভুলে? কোথাও কি পানি জল হয়েছিল? মোহর কি অসভ্য শব্দ? কোথাও কি বেহেশতের বর্ণনায় কোন ভুল হয়ে গেল?

রক্তের বন্যায় ভাসতে ভাসতে হিলফুল নিস্তেজ হয়ে আসে। কত সময় পেরিয়েছে খেয়াল থাকে না আর। বহুদূর থেকে এক কিশোরীর ব্যস্ত গলা শুনে, বাবা লাশ, বাবা লাশ। বাবা বিরক্ত গলায় বলে, কই লাশ? কিশোরী বলে, এই যে। হিলফুল চিৎকার করে বলে, এই যে। বাবা বলে, কই? কিচ্ছু নেই। কথোপকথন আস্তে আস্তে আরও বহুদূর সরে যায়। পাশ কাটিয়ে একে একে আরও অনেকে চলে যায়। হিলফুল চিৎকার করে ডাকার চেষ্টা করে, এই যে এই যে। কেউ হিলফুলকে দেখতে পায় না, শুনতে পায় না। নিস্তেজ হিলফুল রক্তে ভেসে বেহেশতের দুধের নহর দেখার চেষ্টা করে। কিছু দেখা যায় না। চারিদিকে শুধু অন্ধকার। রাত পেরিয়ে দিন হয়। হিলফুলের চারিদিকে তবুও অন্ধকার। মেলায় আস্তে আস্তে চাঞ্চল্য বাড়ে। হিলফুল ক্ষীণ গলায় ডাকে, এই যে, এই যে। কেউ শুনতে পায় না। বিকেলের দিকে আবার সবাই জামতলায় হাজির হয়। হিলফুলের স্মরণে মিলাদ হয় প্রথমে। জামিয়াহ আল-বাংলাী আমীর কিছুক্ষণ বয়ান দেন, হিলফুল কত ভালো ছেলে ছিল এই নিয়ে। হালাল কবি মাজেদ ইবনে মাজিদি হিলফুলকে নিয়ে সদ্য লেখা কবিতা পড়ে শোনায়,
হিল হিল ফুল ফুল
কি লম্বা তার চুল
করে না সে ভুল
কভু ফেলে না লুল
বেহেশতেরই ফুল
হিল হিল ফুল ফুল

দুদু উল হক ঘোষণা দেন পরের মেলায় তার বইয়ের নায়কের নাম থাকবে হিল আর নায়িকার নাম ফুল। তিনি এর মধ্যে বই এর প্রথম অধ্যায় লিখেও ফেলেছেন। সেখান থেকে দুই এক লাইন পড়ে শোনান, হিল ফুলের কাছে গিয়ে তার জামার ভেতর হাত ঢুকায়। ফুল বলে, হায় আল্লাহ হিল ভাই আপনি আমারে চাবি ধরে মাইরা ফেলেন। প্রথম প্যারা শুনেই মাহফিলের অর্ধেক লোকের গা গরম হয়ে যায়। নিসা উল হক আবার ফেরি শুরু করেন, হিলফুল আমার বই এর ভক্ত ছিল। আপনারা এই বইটি পড়লে হিলফুল সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। শুধুমাত্র আজকের জন্য এই বইটির দাম আরও পাঁচ টাকা কমিয়ে দিচ্ছি। তবে নগদ পয়সাতে খরিদ করতে হবে।

হিলফুল সবার কথা শুনতে পায়। প্রাণপণে চিৎকার করে, এই যে এই যে। কেউ তার লাশের দিকে তাকায় না।


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

"দুদু উল হক ঘোষণা দেন পরের মেলায় তার বইয়ের নায়কের নাম থাকবে হিল আর নায়িকার নাম ফুল। তিনি এর মধ্যে বই এর প্রথম অধ্যায় লিখেও ফেলেছেন। সেখান থেকে দুই এক লাইন পড়ে শোনান, হিল ফুলের কাছে গিয়ে তার জামার ভেতর হাত ঢুকায়। ফুল বলে, হায় আল্লাহ হিল ভাই আপনি আমারে চাবি ধরে মাইরা ফেলেন। প্রথম প্যারা শুনেই মাহফিলের অর্ধেক লোকের গা গরম হয়ে যায়। নিসা উল হক আবার ফেরি শুরু করেন, হিলফুল আমার বই এর ভক্ত ছিল। আপনারা এই বইটি পড়লে হিলফুল সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। শুধুমাত্র আজকের জন্য এই বইটির দাম আরও পাঁচ টাকা কমিয়ে দিচ্ছি। তবে নগদ পয়সাতে খরিদ করতে হবে।

হিলফুল সবার কথা শুনতে পায়। প্রাণপণে চিৎকার করে, এই যে এই যে। কেউ তার লাশের দিকে তাকায় না।"

হালের ইমদাদুল হক মিলন, মুস্তফা সারওয়ার ফারুকিরা কি জীবনে এই শিক্ষা গ্রহন করবেন? যতই টুপি পড়ে ফেলুক না কেন, এভাবে চললে একদিন কোপ তাদেরও খেতে হবে কবি হিলফুলের মতই?

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

অতিথি লেখক এর ছবি

হালের ইমদাদুল হক মিলন, মুস্তফা সারওয়ার ফারুকিরা কি জীবনে এই শিক্ষা গ্রহন করবেন? যতই টুপি পড়ে ফেলুক না কেন, এভাবে চললে একদিন কোপ তাদেরও খেতে হবে কবি হিলফুলের মতই?

এই বিষয়টা তারা সেদিনই বুঝবেন যেদিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সবজান্তা এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

জাতির পক্ষে রচিত কবিতাগুলা দুর্দান্ত হইছে। তবে এখনো কবিতা ছবিতা ব্যবহার করছেন দেইখা বড়োই মর্মাহত। লাইনে যখন আসছেন আশা করি কাছিদা-শায়েরও আপনার কলমে উইঠা আসবে

রানা মেহের এর ছবি

মজার বদলে ভয় লাগলো।

হিলফুলের বই মাহফিলে আসে তৃতীয় দিনে। মাহফিলে ঢুকার মুখে ড্রেনের পাশে দুইটা লাশ দেখতে পায় হিলফুল। সেদিকে না তাকিয়ে জোরে পা চালায়।

এই জায়গাটা পড়ে মনে হচ্ছিলো দৃশ্যটা দেখছি।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আলতাইর  এর ছবি

কাসেম বিন আবু বাকার নাই কেনু? চাপাতি আনতে গেলাম!!!

কৌস্তুভ এর ছবি

ভাই, আপনিও নিজের নিকটা বদলে ফেলেন সময় আর কল্লা থাকতে থাকতে। চরম উদাস থেকে বেহদ্‌ দিওয়ানা হয়ে যাবার সময় এখনই।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কিছু বলার নাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতাগুলো জটিল হয়েছে। লেখায় পাঁচ তারা।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

এই অবধারিত বাস্তবে দুদিন পরই যেতে হবে তাই এইবেলাই প্রাণভরে হেসে নিই। ভাই অসাধারন হয়েছে লেখাটা।

সোহেল ইমাম

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

"জামিয়াহ আল-বাংলা কিতাব মাহফিল ২০২০" এই ২০২০ কি বাংলা সন, নাকি আরবী?

ঈয়াসীন এর ছবি

কেবলই দীর্ঘশ্বাস

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

দেবীপ্রসাদ চক্রবর্ত্তী এর ছবি

অদ্ভূত লেখা। অনেকটা যেন সত্তরের কলকাতার সময় আর তখনকার লিটল ম্যাগাজিনের স্বাদ পেলাম। রক্তাক্ত স্বাদ। এই সমাজ দেখতেই হবে ?

bashabi এর ছবি

এই লেখার বিষয় আর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো দ্বিমত নাই.
কিন্তু লেখা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলাম না. কিছুটা এক ঘেয়ে লাগলো। ঠিক এই ধাঁচ এর ই বেশ কয়েকটা লেখা পরেছি এই সচলয়াতন ব্লগ এই। চরম উদাস এর কাছে expectation একটু বেশি থাকে।

অনিকেত এর ছবি

গুরু গুরু

এক লহমা এর ছবি

কিছু বলার নেই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শওকত খান এর ছবি

পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো ২০২০ লাগবে না, এটা ২০১৭-তেই ঘটে যাবে। চউদাকে নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নাই। লেখায় ৫ তারকা।

শওকত খান

নজমুল আলবাব এর ছবি

আহারে হিলফুলের দল, কত চেষ্টা, রক্ষা পায়না তবু

দেবদ্যুতি এর ছবি

উত্তম জাঝা! ব্যাপারটা ঘটবেই, হিলফুল ফুজুলরা কেউই রক্ষা পাবে না একদিন এই দেশে।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

মনিরুল দাঁত বের করে হেসে বলে, আমি তো লেখি। পড়ি না।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি অতুলনীয়।

-চিহুয়াহুয়া

সুবোধ অবোধ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

আমি তো লেখি। পড়ি না।

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

আচ্ছা 'বাংলা' শব্দটার ছহীহ রূপ কি হবে? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দিলখুশ এর ছবি

আল বঙ্ঘালহ্‌?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কস্কি মমিন!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দ্রোহী এর ছবি

খাড়ান ভাইজান! ৫৭ ধারা আইতাছে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এমন হালাল লেখাতেও, দ্রোহীদা? তাহলে তো ৫৭ ধারার উন্নতি হয়েছে! ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।