দৈনন্দিন

চরম উদাস এর ছবি
লিখেছেন চরম উদাস (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৫/২০১৫ - ৯:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘুম থেকে উঠি, হাত মুখ ধুই
কফির কাপ হাতে নিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করি
স্ক্রিন জুড়ে দেখি রক্তাক্ত মগজ
ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারগুলো একে একে বদলে যায়
কেউ কেউ অভিজিৎ রায় হয়, কেউ রাজীব, কেউ বাবু, কেউ বিজয়
কেউ বা মাজল মি নট, কেউ শুধুই অন্ধকার।

ছোট কেউ মরলে একটা স্ট্যাটাস পয়দা করি
বড় কেউ মরলে আস্ত একটা ব্লগ
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে হুঙ্কার দেই, কলম চলবে
লাইক, শেয়ার আর কমেন্ট আসে নগদে
ফাডায়ালাইছেন ভাই
একেবারে সত্যি কথা বলছেন জনাব।

পালে পালে শুয়োরের পাল এগিয়ে আসে -
হাইজ্যাকারে মারছে নাকি প্রেম ঘটিত বিষয়?
কোথাকার কোন ব্লগার মরছে তা নিয়া লাফালাফি
বুঝলাম ঘিলু ফালানো তেমন ঠিক হয়নাই
কিন্তু এইসব লেখালেখি করাও কি ঠিক?
শুয়োরের সাথে কাদায় নেমে কুস্তি লড়ি
লড়তে লড়তে আমি মানুষ থেকে শুয়োর হয়ে যাই
শুয়োর শুয়োরই থাকে।

ধর্মের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
ধর্ম চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, খবরদার
ধর্ম বড় শান্তির জিনিস
ধর্মের দোষ বলে যদি হৈচৈ করিস
তবে দেব কল্লা নামিয়ে।

সরকারের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
সরকার চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, খবরদার
আমরা না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হতো না
আমরা না থাকলে এই দেশখানা সৃষ্টি হতো না
তাই আমরা যা ভিখ দেই, মাথা পেতে নাও
ওরা এলে এইটুকুও পাবেনা।

বিরোধীদের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
বিরোধী চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, খবরদার
গদি দে হারামজাদা, পরে অন্য আলাপ।

জনগণের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
তারা বলে, জরুরী কাজে বাইরে আছি
ফিরে এসে জবাব দিব।

আমি হাই তুলতে তুলতে আবার হুঙ্কার দেই,
কলম চলবে
অসির চেয়ে মসি বড়
মাজল মি নট
তারপর ভরপেট ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাই।

পরদিন ঘুম থেকে উঠি, হাত মুখ ধুই
কফির কাপ হাতে নিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করি
স্ক্রিন জুড়ে দেখি রক্তাক্ত মগজ
আড়চোখে নিশ্চিত হয়ে নেই মগজটা আমার নয়তো
তারপর প্রোফাইল পিকচার বাছাই করি
কখনো অভিজিৎ রায়, কখনো রাজীব, কখনো বাবু, কখনো বিজয়
কখনো মাজল মি নট, কখনো শুধুই অন্ধকার।


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

বুঝলাম ঘিলু ফালানো তেমন ঠিক হয়নাই
কিন্তু এইসব লেখালেখি করাও কি ঠিক?

দিনশেষে এইখানেই দাঁড়ি দি্তে হয়। আর কথা বাড়ায়া ফায়দা নাই।

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

আসলেই নাই।

স্পর্শ এর ছবি

আমরা না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হতো না
আমরা না থাকলে এই দেশখানা সৃষ্টি হতো না
তাই আমরা যা ভিখ দেই, মাথা পেতে নাও
ওরা এলে এইটুকুও পাবেনা।

... ওরা ক্ষমতায় থাকলে এসব দেখে, আশাভঙ্গের বেদনা কম হতো।

অবশ্য, ওরা থাকলে অভিজিৎ দা নিশ্চিত এবার দেশে আসতেন না। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে এমনটা কেউ ভেবে নিত না। কে জানে, হয়তো এই জীবনগুলো বেঁচে যেত। রুদ্ধ পরিবেশের চেয়ে মুক্তির ভ্রম বেশি জীবনঘাতি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাফি এর ছবি

দুএকটা লেখক বোলগার মরলে হুয়াট ইজ দি প্রোবলেম?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সরকারের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
সরকার চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, খবরদার
আমরা না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হতো না
আমরা না থাকলে এই দেশখানা সৃষ্টি হতো না
তাই আমরা যা ভিখ দেই, মাথা পেতে নাও
ওরা এলে এইটুকুও পাবেনা।

মাসুদ সজীব এর ছবি

কলম চলবে

এটা এখন আমার কাছে শুধু বুলি মনে হয়। মুক্তমনার উপর আঘাত এসেছে পৃথিবীর সব জায়গায়, কিন্তু এই আধুনিক যুগে একের পর এক ধারাবাহিক ভাবে চাপাতি দিয়ে ব্লগার খুন বিশ্বে আর কোথাও কি হচ্ছে? লেখার কারণে কি কোথাও এখন এত প্রাণ দিতে হচ্ছে? যদি উত্তর ‘না’ হয় তাহলে এটাও মানতে হবে ’কলম চলবে’ না। থেমে যাবে, এমন প্রকাশ্য মৃত্যুকূপে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে ভয় করবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে, তারচেয়ে বড় কথা নতুন করে জন্মাবে না মু্ক্তমনা মানুুষ। কথাগুলো শুনতে হতাশাময় হলোও আমি জানি এই বাংলাস্তানে এটাই এখন চরম সত্য।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ফারাবী  এর ছবি

"সরকারের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
সরকার চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, খবরদার
আমরা না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হতো না
আমরা না থাকলে এই দেশখানা সৃষ্টি হতো না
তাই আমরা যা ভিখ দেই, মাথা পেতে নাও
ওরা এলে এইটুকুও পাবেনা।"

অবস্থা এই-ই। আর সজীব ভাইয়ের কথার সাথে সহমত। 'কলম চলবে' এইটা একটা ফাঁপা বুলি হয়ে দাড়িয়েছে। কল্লার মায়া ত্যাগ করে লিখে যাবে, জীবনের প্রতি এত উন্নাসিক ক'জন আছে?

rizvee এর ছবি

এর ফল শুধু আমি ভোগ করবো না এর ফল আপনাকেও ভোগ করতে হবে। পার্থক্য একটাই আমি হয়তো চাপাতি দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হব আর আপনি হবেন গ্রেনেড দ্বারা!! আমি আপনি আমরা কেউ চুপ থেকে রেহায় পাবো না। যারা চুপ মেরে বসে আছেন তারাও হবেন নেক্সট টার্গেট। পার্থক্য একটাই কেউ আগে কেউ পরে...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

জনগণের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
তারা বলে, জরুরী কাজে বাইরে আছি
ফিরে এসে জবাব দিব।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

rizvee এর ছবি

ভাইয়া কীবোর্ড আর চলছে না
বাধ্য হয়ে কার্টেসীর মত মরণব্যধিতে নিজেকে সপে দিলাম

"একটা জিনিস খেয়াল করলাম।
রাজীব ভাই মারা যাবার এক বছর পরেও তিনি বেশ উচ্চকিত নামগুলির একটি ছিলেন।
অভিজিৎদার মারা যাবার মাসখানেকের মাথাতেও কিছু প্রতিবাদ চলছিলো।
বাবু মারা যাবার পর সপ্তাহখানেক...
আর অনন্ত বিজয়দা মারা যাবার মুটামুটি ঘন্টা দুয়েক পর আমার ফেসবুক হোমপেজ অন্য ইস্যুতে ভরে গেছে।
সময়ের আবর্তে মনে হচ্ছে কদিন পর সাংবাদিকেরা খোঁজ নেবেন মাস শেষে, "ভাই এ মাসে কজন ব্লগার মরলো?"
৮৪ জনের লিস্টে যখন আছি, আজ হোক কাল হোক মরতে তো হবে।
সুহৃদদের কাছে একটাই অনুরোধ, যতই পরে মরিনা কেন, প্রতিবাদে একটা স্ট্যাটাস অন্তত দিয়েন।
ভুলে যেয়েন না...
আপনাদের মাঝে আমিও তো ছিলাম!"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

১) অর্গানাইজ
২) মেইক আ স্ট্যাটেজি
৩) ফাইট ব্যাক

শিশিরকণা এর ছবি

ব্লগার হইল এক রকমের কীট। তেলাপোকার মতন। এরা তো আর মানুষ না। দুই চারটা মরলে কিছু আসে যায় না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ফেরিওয়ালা এর ছবি

মাসে একটা করে মারার চেয়ে ১০০-২০০ যতগুলা নাস্তিক আসে এক ঘরে নিয়া বোমা দিয়া উড়ায়ে দিলেই পারে। জানোয়ার গুলার মিশন লেভেল-২ দেখতে মন চায়, যেই লেভেলে মোডারেট মুসলিম গুলার বাচ্চাদের স্কুলে যেয়ে একটা একটা করে মাথায় গুলি করে মারা হবে (পাকিস্তান এর মত), মসজিদ যাওয়ার পথে অথবা অফিস যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরণে বাকিগুলাকে মারা হবে। আশা করি তারপরেও এই মোডারেট গুলার মন্তব্যে হেরফের হবে না, আশা করি তখনও তারা বলতে পারবে যে দোষতো শুধু জঙ্গিদের ছিল না, আমার বাচ্চারও কিছু দোষ ছিল, কোন না কোন ভাবে নিশ্চয়ই ধর্মের অবমাননা করেছিলো, অকারণে কাউকে কি এরা মারতে পারে?

অতিথি লেখক এর ছবি

কলম চলবে বা এসব কথার আর দরকার নাই। উদাসদা, আমরা চাইলে অগ্রীম লিখে রাখতে পারি কিছু --- চাইলে এমনকি একটা একটা ফরম্যাটও তৈরি করে রাখা যেতে পারে। প্রতি মাসে একজন ব্লগার চাপাতির নিচে যাচ্ছে, এ যেন সেই দৈত্য যে প্রতিদিন একজন করে মানুষ ভেট নিতো। আবার শুরু হইছে আল কায়েদার গপ্পো গাথা। যতসব------- যা্ক এডি কওয়ার কোনো মানে নাই।

স্বয়ম

ইয়ামেন এর ছবি

আজকে দেখলাম সিএনএন এর ওয়েবসাইটে শীর্ষ খবরগুলোর মধ্যে অনন্ত বিজয়ের হত্যার ঘটনাটা এসেছে। আচ্ছা এই সরকার আর কতদিন 'আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরাই জঙ্গিদের থেকে এই দেশকে মুক্ত রাখতে পারব' বুলি দিয়ে বহির্বিশ্বকে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা দেখিয়ে যেতে পারবে?
এরা ব্লগারদের নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে একেবারেই আন্তরিক না। কিন্তু এদের এটা বোঝারও সামর্থ্য নাই যে যতই শফি হুজুরের তেঁতুল চাটুক এরা, সময়মত মৌলবাদীদের কোপ এদের মাথায়েও এসে পড়বে। দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভয় হয়।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

গুরু গুরু

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

শুয়োরের সাথে কাদায় নেমে কুস্তি লড়ি
লড়তে লড়তে আমি মানুষ থেকে শুয়োর হয়ে যাই
শুয়োর শুয়োরই থাকে।

এটাই ট্যাগ লাইন।। (নির্লিপ্ত নৃপতি)

এক লহমা এর ছবি

একটা চতুর পরিকল্পনা আবার দেশটাকে মেধাশূণ্য করার চক্রান্তের বাস্তবায়ন করে চলেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।