দিবি আরোহণ...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১১/০৪/২০১৪ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের এতদঞ্চলের অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে অতিরঞ্জন একটি প্রচলিত প্রথা বটে। এই যেমন কাউকে আশীর্বাদ করতে বলা, 'হাজার বছর পরমায়ু হোক' বা 'শত পুত্রের জননী হও' ইত্যাদি। যদিও জানি বাস্তবে তা সম্ভব নয়। তবুও তো বলা হয়, না কি?

পশ্চিমের লঙ লিভের অনুকরণে আমরা অমুক গান্ধী বা তমুক বসুর জন্ম-মৃত্যুদিনে বিরাট সভা করে বলছি, 'যুগ যুগ জীও'। যদিও জানি, যুগ যুগ কেউই বেঁচে থাকেনা বা বাঁচিয়েও রাখা যায়না। তাঁদের মহত্ত্ব, বীরত্ব ইত্যাদি অতুলনীয় কীর্তির গৌরব প্রচারের জন্যই এই অতিশয়োক্তি। বাস্তবে না হোক আমাদের স্মৃতিতে তাঁদের বাঁচিয়ে রাখারই প্রয়াস এটি।

এই যেমন শ্রীরামের কাহিনীই বলি। শ্রীরাম পনের বছর বয়সে সীতাকে বিয়ে করলেন। সাতাশ বছর বয়সে বনে গেলেন, বিয়াল্লিশ বছর বয়সে অযোধ্যায় ফিরে রাজ্যে অভিষিক্ত হলেন। তারপর একাদশ সহস্র বছর রাজত্ব করে স্বর্গারোহণ করলেন। এই শেষের কথায় অর্থাৎ একাদশ সহস্র বৎসরের কথায়ই যত ধন্দ! রামের মতো একজন রাজার এগারো বৎসরের রাজত্বকালের আশ্চর্য ঘটনাবহুল অতুলনীয় কীর্তিগাঁথাকে বর্ণনা করতে হলেতো এটুকু অতিশয়োক্তি সিদ্ধ বটে।

পুরাণের অতিরঞ্জন, একটি চাবিকাঠি। এখানে 'সহস্র' হলো উপলক্ষণ প্রয়োগ। আরও দু-একটি উদাহরন দিই। কার্তবীর্যার্জুন পঁচাশি হাজার বছর বেঁচেছিলেন। অলর্ক, ছেষট্টি হাজার বছর রাজত্ব করেছিলেন। এই হাজারের উপলক্ষণটা বাদ দিলে, কার্তবীর্যার্জুন পঁচাশি বছর বেঁচেছিলেন। অলর্ক ছেষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাহলেতো আর কোন ধন্দ থাকেনা। কেমন কীনা! এও সেই কীর্তিরই গৌরব প্রচার। যে দেশে যেমন প্রথা। যস্মিন দেশে যদাচার। এও সেই 'যুগ যুগ জীও'র প্রাচীন সংস্করন।

ইদানিং তো দেখছি, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের উৎসব আয়োজন, জন্মাষ্টমী বা ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, বড়দিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের চেয়ে কম নয়। প্রাচীনকালের মানুষেরাও ইন্দ্র, রাম, কৃষ্ণ এঁদের নিয়েও উৎসব আয়োজন, যজ্ঞ, কাঙ্গালিভোজ ইত্যাদি করতো বটে।

সনাতন ধর্মের শাস্ত্রকথায় 'দিবি আরোহণ' বলে একটি বিষয় আছে। দিবি আরোহণ, মানুষেইরই দেবত্ব লাভের কথা। উত্তম মানুষ প্রতিলোম ক্রিয়ায় দেবতা হন। প্রতিলোম ক্রিয়ার আশ্চর্য সূত্র হলো, উত্তম মানুষ প্রথমে মানুষ রূপেই পুজিত হন। তারপর তিনি দেবতা হন এবং আরও পরে তাঁকে জ্যোতিষ্ক রূপে কল্পনা করা হয়।

যেমনটা পুরাণের বিজ্ঞ ব্যাখ্যাকারগণ ইন্দ্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, শুরুতে ছোট ছোট গোষ্ঠী বা ট্রাইব আকারে আর্যদের ভারত উপমহাদেশে আগমন ঘটে। ধারনামতে ২০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি কোন এক সময়ে আর্যগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে অনার্যদের সাথে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেই সময়ে যুদ্ধের প্রয়োজনে আর্যদের কয়েকটি গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে একজন সেনানায়ক নিযুক্ত করে এবং তার উপাধি হয়, 'ইন্দ্র'। এই ইন্দ্রদেরই একজনকে বলা হয়েছে, 'পুরন্দর ইন্দ্র', যিনি অনার্য বা অসুরদের অনেক পুরি ধ্বংস করেছিলেন। কয়েক শতাব্দি পরে এই ইন্দ্র দেবতারূপে পুজিত হতে থাকেন।

যেমনটি শাস্ত্রকথায় বলা হয়েছে, ইন্দ্র একাধিক এবং সকল ইন্দ্রই মানুষ ছিলেন পরে দেবতা তারপরে সূর্য।

ঋগ্বেদে মানুষ, দেবতা এবং সূর্য এই তিন রূপেই ইন্দ্রের প্রশস্তিগীত রচিত হয়েছে।

মনুষ্যরূপ ইন্দ্র,
৹ "যুবা, মেধাবী, প্রভূতবলসম্পন্ন, সকল কর্মের ধর্তা, বজ্রযুক্ত ও বহু স্তুতিভাজন, অসুরদের নগর বিদারকরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-১১, ঋক-৪ (ঋগ্বেদ/১/১১/৪)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।
৹ "বজ্রধারী ইন্দ্র প্রথমে যে পরাক্রমের কর্ম সম্পাদন করেছিলেন, তাঁর সে কর্মসমূহ বর্ণনা করি। তিনি অহিকে হনন করেছিলেন, তৎপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন, বহনশীল পর্বতীয় নদীসমূহের পথ ভেদ করে দিয়েছিলেন।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-৩২, ঋক-১ (ঋগ্বেদ/১/৩২/১)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।
৹ "বজ্রবাহু ইন্দ্র স্থাবর জঙ্গমদের এবং শান্ত পশু ও শৃঙ্গী পশুদের রাজা হলেন; তিনি মনুষ্যদের রাজা হয়ে নিবাস করেছেন, এবং যেরূপ চক্রের নেমি মধ্যস্থ কাষ্ঠসমূহকে ধারণ করে, সেরূপ ইন্দ্র সকলকে আপনার মধ্যে ধারণ করেছিলেন।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-৩২, ঋক-১৫ (ঋগ্বেদ/১/৩২/১৫)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।

দেবতারূপ ইন্দ্র,
৹ "হে ইন্দ্র! তুমি অশ্ব দান কর, গো দান কর, যবাদি ধান্য দান কর এবং তুমি নিবাস হেতুভূত ধনের প্রভু ও পালক। তুমি শিক্ষার নেতা, তুমি বহুদিনের পুরাতন দেব, তুমি কামনা ব্যার্থ কর না, তুমি সখাদের মধ্যে সখা। তাঁরই উদ্দেশে আমরা
এ স্তুতি পাঠ করি।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-৫৪, ঋক-২ (ঋগ্বেদ/১/৫৪/২)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।
৹ "হে ইন্দ্র, তুমি শূর তুমি দাতা; আমি মনুষ্য, আমার মনোরথ পূর্ণ কর। তুমি সহায়বান, অগ্নি যেমন শিখা দ্বারা পাত্রকে দগ্ধ করে, তুমি সেরূপ ব্রতরহিত দস্যুকে দগ্ধ কর।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-১৭৬, ঋক-৩ (ঋগ্বেদ/১/১৭৬/৩)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।

সূর্যরূপ ইন্দ্র,
৹ "চারদিকের লোকেরা সূর্যরূপ ইন্দ্রের প্রতাপান্বিত, অরুষ ও বিচরণকারী অশ্ব যোজনা করছে। আলোকগণ আকাশে দীপ্যমান রয়েছে।"
৹ "তারা ইন্দ্রের কমনীয়, রক্তবর্ণ, তেজঃপূর্ণ ও পুরুষবাহক হরি নামক অশ্বদ্বয় রথের উভয় পার্শ্বে সংষোজিত করে।"
৹ "হে মনুষ্যগণ! সূর্যরূপ ইন্দ্র নিদ্রায় সংজ্ঞারহিতকে সংজ্ঞা দান করে, অন্ধকারে রূপরহিতকে রূপ দান করে, জলন্ত রশ্মির সাথে উদিত হন।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-৭, ঋক-১,২,৩ (ঋগ্বেদ/১/৭/১,২,৩)। অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত।

এই যে আশ্চর্য বলবীর্যশালী পুরুষ, স্বাভাবিক দিবি আরোহণের ফলে ইনিই আন্তরীক্ষ দেবতারূপে কল্পিত হন। যেমন রাম ও কৃষ্ণ ভগবান হয়েছিলেন, কালান্তরে। এই যেমন নবদ্বীপের নিমাই মিশ্র নিজ মহিমায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য হয়েছিলেন। যেমন এই প্রক্রিয়ায়ই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও ভগবান হয়েছিলেন।

এমন ভাবনায়ই হয়তো অঙ্গিরার পুত্র সব্য ঋষি ইন্দ্রের উদ্দেশে ঋক রচনা করেছিলেন,
৹ "যদি পৃথিবী দশগুণ হত, যদি মানুষসকল নিত্যকাল জীবিত থাকত, হে মঘবন্! তাহলেই তোমার ক্ষমতা প্রকৃতরূপে প্রসিদ্ধ হত; তোমার বলসাধিত ক্রিয়া আকাশের ন্যায় মহৎ।"
ঋগ্বেদ, ১ম মণ্ডল, সূক্ত-৫২, ঋক-১১ (ঋগ্বেদ/১/৫২/১১)। ঋগ্বেদ সংহিতা, অনুবাদক: নরেশচন্দ্র দত্ত। হরফ প্রকাশনী, কলকাতা ৭০০০০৭।


মন্তব্য

দীনহিন এর ছবি

এই হাজারের উপলক্ষণটা বাদ দিলে, কার্তবীর্যার্জুন পঁচাশি বছর বেঁচেছিলেন। অলর্ক ছেষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন।

যেমন রাম ও কৃষ্ণ ভগবান হয়েছিলেন।

ইন্দ্রের কাহিনিটি তো জানা হল, রাম বা কৃষ্ণের ও কি এমন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা আছে?

৹ "যদি পৃথিবী দশগুণ হত, যদি মানুষসকল নিত্যকাল জীবিত থাকত, হে মঘবন্! তাহলেই তোমার ক্ষমতা প্রকৃতরূপে প্রসিদ্ধ হত; তোমার বলসাধিত ক্রিয়া আকাশের ন্যায় মহৎ।"

এই উদ্ধৃতিটি মারাত্মক হয়েছে, প্রৌঢ় ভাই। অতিশয় বা অতিরঞ্জের চরিত্র মানুষের দেখি সেই আদিকাল থেকেই!

অনেক দিন পর পেলাম আপনাকে। আর অনেক কিছু জানলাম, প্রৌঢ় ভাই।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সবজান্তা এর ছবি

দিবি আরোহণ খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার মনে হয় আমার কাছে। প্রথম এই শব্দটার নাম জানি সমরেশ বসু'র উপন্যাস 'শাম্ব' পড়তে গিয়ে। অবশ্য নামটা না জানলেও, প্রক্রিয়াটার ব্যাপারে পড়েছিলাম আরো আগেই, "ভোলগা থেকে গঙ্গা"তে। সদ্য কৈশোরে, সেই প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করি যে, অলৌকিকতাটুকুকে ছেঁটে ফেলে দিলে, যেটুকু রয়ে যায়, তা ইতিহাসের একধরনের প্রতিচ্ছবিই। দুঃখমিশ্রিত কৌতুকের সঙ্গে আরো লক্ষ্য করি যে, নিজের ভূমিকে রক্ষা করতে যেয়ে জীবন দিলো যে কৃষ্ণবর্ণের অধিবাসী, তাকেই অসুর হিসেবে চিত্রায়িত করে, মন্দের প্রতিভূ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম আমরা।

ধর্মগ্রন্থের অতিশয়োক্তি বাদ দিয়ে ইতিহাসটুকু দেখার ব্যাপারে আমার বেশ আগ্রহ আছে। কিছুদিন আগে ভাবছিলাম, মুহাম্মদ পূর্ব ইসলামের ইতিহাস কেমন ছিলো, সেই ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানি না। কেবলই এক চর্বিত চর্বণ- আইয়ামে জাহেলিয়াত এবং অরাজকতা। কিন্তু ইসলামের এই একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের পূর্বে আরবের লোকদের জীবনাচার, সংস্কৃতি এগুলি নিয়ে তেমন জানি না। ইন্টারনেট খুঁজে যা পাই, তার অধিকাংশই অথেন্টিক মনে হয় না, বরং ভক্তিরসে জারিত। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এক বড়ভাই (এবং একদা সহব্লগার) একটা লেখার সন্ধান দিলেন, সম্ভবত কারো মাস্টার্স/পিএইচডি থিসিস। পুরোটা পড়া হয়ে উঠেনি, তবে লেখাটা চমৎকার।

আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। কিন্তু হঠাৎ শেষ করে দিলেন। আরো একটু বড় করতে পারতেন মনে হয়- দিবি আরোহণের ব্যাপারটাকে আরো বিস্তৃত করে বলার সুযোগ আছে। এই বিষয়ে আপনার আরো লেখা পড়তে আগ্রহী।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সবজান্তা ভাই,
সে লেখাটা কি আমরাও কোনোভাবে পড়তে পারি? হাসি
ঐ যুগটার আসল ইতিহাসে আমারও কিঞ্চিৎ আগ্রহ আছে কিনা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সবজান্তা এর ছবি

আমার পোর্টেবল হার্ডড্রাইভে পিডিএফটা আছে সম্ভবত। এই মুহূর্তে আমি ল্যাবে, তাই রাতে বাসায় যেয়ে খুঁজে দেখতে হবে। আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসটা সম্ভব হলে আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিন, আমি ওই ঠিকানায় পিডিএফটা পাঠিয়ে দিবো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কোলাকুলি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, আমিও মুহাম্মদপূর্ব আরবের ইতিহাস জানতে চাই। যদি অনুগ্রহ করে লেখাটা পিডিএফ এই ই-মেইল এ পাঠিয়ে দেন, কৃতজ্ঞ থাকবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও ইসলাম-পূর্ব আরবের ইতিহাস জানতে আগ্রহী। দয়া করে যদি আমার ই-মেইল ঠিকানায় (নিচে দিয়েছি) পাঠান, তাহলে খুবই বাধিত হব। আর আপনার যদি সুযোগ হয়, তাহলে William Robertson Smith-এর Lectures on the religion of the semites বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

emran.huq@gmail.com

অসংখ্য ধন্যবাদ!

Emran

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমাকও দেবেন প্লীজ।

____________________________

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভাবনা ভাই, অনেক দিন পরে আপনার লেখা পেলাম। আর লেখাটাও সেরাম হয়েছে। দিবি আরোহণ শব্দটাই তো জানতাম না! আরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। আর লেখাটাও আরো বড় হলে ভালো লাগতো। যা হোক, আপনি এভাবে আরো লিখবেন, এি আশায় রইলাম।

____________________________

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

প্রফেসর সাহেব, দীর্ঘকাল পূর্বে এতদঞ্চলের ধর্ম ও মিথ নিয়ে আমার বড্ড আগ্রহ জন্মেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন লাইব্রেরী, মসজিদ, এতিমখানা, মঠ, মন্দির, আশ্রম ইত্যাদি ঢুঁড়ে বই পড়ে নোট করতাম। সেকালেতো ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা। তো সেই সব নোটবই এখন ঝাঁপিবন্দী। কখনও সখনও খুঁজে পেতে একটা নোটবই বের করি, নিজের জন্যই বটে, স্মৃতিচারণে সুখ পাই। তো তা থেকেই কখনও সখনও একটা-দুটো লেখা প্রস্তুত করি। বেশী পরিশ্রম ইদানিং শরীর-মনে সয়না। তাই হয়তো লেখাটার আকার-আকৃতি এমনটাই হয়েছে। ক্ষমা-ঘেন্না করে নেবেন। আর এভাবেই নাহয় আপনাদের সাথে একটা যোগসূত্র থাকুক।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, লেখাটা আরও একটু বড় করা যেত বটে।
যাহোক, অসুরদেরকে শুধু অসুন্দর ভাবলেই চলবেনা। তাঁরা কিন্তু প্রচন্ড বলবীর্যবান প্রজাতির মানুষ ছিলেন। এই আমরা যেমনটি বলি, 'লোকটার গায়ে অসুরের শক্তি। কোন কোন দেবগোষ্ঠীও নিজেদেরকে অসুর বলে পরিচয় দিতেন। আর্যরা কিন্তু দক্ষিণ ভারতের অনার্যগোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করেনি। তারা কাশ্মীর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং উত্তর ভারতের কোন কোন অংশে অনুপ্রবেশ করেছিল। এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনার্যদের সাথে সমঝোতা করে বসবাস করেছে। আবার কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে হরপ্পা বা মহেন-জো-দারো সভ্যতা আর্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। বরং আর্যদের আগমনের পূর্বেই প্রাকৃতিক কারনে, জলবায়ু পরিবর্তন ও জলোচ্ছাসের কারনে নগরগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এর দ্বীমততো অবশ্যই আছে ভারতকাহিনীতে।
ধন্যবাদ, মনযোগ সহকারে পড়বার এবং বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাকেও যদি একটু কষ্ট করে ই-মেইল করেন অশেষ কৃতজ্ঞ থাকবো।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

দুঃখমিশ্রিত কৌতুকের সঙ্গে আরো লক্ষ্য করি যে, নিজের ভূমিকে রক্ষা করতে যেয়ে জীবন দিলো যে কৃষ্ণবর্ণের অধিবাসী, তাকেই অসুর হিসেবে চিত্রায়িত করে, মন্দের প্রতিভূ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম আমরা।

আজো তো দুনিয়া জুড়ে এই কৌতুকের আধুনিক সংস্করণের নিত্যই দেখা মেলে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

মন মাঝি এর ছবি

ইন্টারনেট ঢুঁড়েও ইসলাম-পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কে অতিশয়োক্তিমুক্ত, ভক্তিরসমুক্ত কিছু পেলেন না কেন বুঝলাম না। আমিতো আপনার এই মন্তব্য পড়ে গুগলাতে গিয়ে প্রায় সাথে সাথেই অনেক কিছু পেয়ে গেলাম। অবশ্য ঠিক কি খুঁজছেন সেটাও একটা প্রশ্ন। আপনার প্রশ্নের মধ্যেই একটু ঝামেলা দেখতে পাচ্ছি। "মুহাম্মদ পূর্ব ইসলামের ইতিহাস" ঠিক কি জিনিস বুঝতে পারলাম না। আপনি কি মুহাম্মদ/ইসলাম-পূর্ব মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস জানতে চাচ্ছেন? এটা তো বিশাল একটা ক্ষেত্র এবং এর উপর বইপত্র বা রিসোর্সের অভাব নাই, কারন মধ্যপ্রাচ্য বললে সেই সুমেরীয়, ব্যাবীলনীয়, আক্কাদিয়ান, মেসোপটেমিয়ান থেকে শুরু করে পার্শিয়ান, বাইজেন্টিয়ান, আরব এবং আরও বহু কিছুই চলে আসে এর আওতায়। আপনি কি সুনির্দিষ্ট ভাবে "আরব" জাতির বা জাহানের ইসলাম-পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন হল কোন "আরব"-দের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? বর্তমানে আরবরা পূর্বে এশিয়ার ওমান থেকে শুরু করে পশ্চিমে উত্তর-আফ্রিকা পার হয়ে মরক্কো / মৌরিতানিয়া পর্যন্ত একটি বিশাল প্যানএথনিক জনগোষ্ঠী বা জাতি (অর্থাৎ একাধিক এথনিসিটির সমন্বয়), যাদের একটা বিরাট অংশই ইসলাম-উত্তর কালে আরবি ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করে নেয়া আদতে অনারবদের বংশধর, এথনিক বা নৃতাত্ত্বিক ভাবে আরব নয়। কিন্তু তারপরও আরব। এদের মধ্যে কাদের ইতিহাস জানতে চান? দেঁতো হাসি

আপনার মন্তব্য পড়ে সার্চ দিতে গিয়ে আমাকেও এই প্রশ্নগুলির সম্মুখীন হতে হয়েছে। যাজ্ঞে, আমার সার্চ থেকে পাওয়া "অতিশয়োক্তিমুক্ত, ভক্তিরসমুক্ত" জাতীয় কিছু রিসোর্সের উল্লেখ করলাম নীচে --

বই
-----

১। Philip K Hitti-র
"History of the Arabs" (1937) এবং
"The Arabs: a short history" (1943),
২। Robert G. Hoyland-এর "Arabia and the Arabs: From the Bronze Age to the Coming of Islam" (2001),
৩। David Price-Jones-এর "The Closed Circle: an Interpretation of the Arabs"

ইন্টারনেট
-----------

উইকিপিডিয়া নিবন্ধঃ
১। Arab people -- http://en.wikipedia.org/wiki/Arabs ;
২। Pre-Islamic Arabia -- http://en.wikipedia.org/wiki/Pre-Islamic_Arabia ;
৩। Dilmun -- http://en.wikipedia.org/wiki/Dilmun

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (অনলাইন)
History of Arabia -- http://www.britannica.com/EBchecked/topic/31568/history-of-Arabia

রেড্ডিটের আস্কহিস্টোরিয়ান্স বিভেগের একটা দুর্দান্ত আলোচনা
What was the Arab world like before Islam? : What was Arab religion, society, culture and all around general life like before the spread of Islam? (৩৫১ টি মন্তব্য, প্রায় প্রতিটি মন্তব্যই দারুন) -- http://www.reddit.com/r/AskHistorians/comments/15wv6z/what_was_the_arab_world_like_before_islam/ ;

বিবিধঃ
১। Conrad Taylor (প্রবন্ধ) -- "Arabia before Muhammad" -- http://www.conradiator.com/downloads/pdf/ArabiaBeforeMuhammad.pdf ; (PDF)
২। Medieval Sourcebook: Pre-Islamic Arabia: The Hanged Poems, before 622 CE ( ইসলামপূর্ব আরবি কাব্য হচ্ছে ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজজীবনের ইতিহাস রচনার অন্যতম প্রধান কাচামাল ) - http://www.fordham.edu/halsall/source/640hangedpoems.asp ;
৩। VOA ভিডিও -- "Saudi Arabia's Pre-Islamic History Revealed" - http://www.voanews.com/content/saudi-arabias-pre-islamic-history-revealed/1555885.html ;
৪। ইউনিভার্সিটি অফ পিসা-র প্রি-ইসলামিক এ্যরাবিয়ান স্টাডিজ পোর্টালঃ "Arabia Antica: History and Culture of Pre-Islamic Arabia" - http://arabiaantica.humnet.unipi.it/ ;
৫। Pre-Islamic Arabia (প্রবন্ধ / নিবন্ধ) -- http://www.saylor.org/site/wp-content/uploads/2011/08/HIST351-1.1-Pre-Islamic-Arabia.pdf ; (PDF)

গুড রিডিং!

****************************************

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মনমাঝি।। আমি হয়তো এই খোঁজার শ্রমটাই করতে চাইনি। যাহোক আপনার আগ্রহে ও শ্রমের ফলে বেশকিছু প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া গেল, এবং সেটা শেয়ার করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

দীনহিন এর ছবি

এই হাজারের উপলক্ষণটা বাদ দিলে, কার্তবীর্যার্জুন পঁচাশি বছর বেঁচেছিলেন। অলর্ক ছেষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাহলেতো আর কোন ধন্দ থাকেনা।

শুধুই কি এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় একে? শোনা যায়, আগের যুগের ক্যালেন্ডারও বয়স হাজার বছর বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী ছিল?

যেমন রাম ও কৃষ্ণ ভগবান হয়েছিলেন।

রাম বা কৃষ্ণের ও কি কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা আছে?

"যদি পৃথিবী দশগুণ হত, যদি মানুষসকল নিত্যকাল জীবিত থাকত, হে মঘবন্! তাহলেই তোমার ক্ষমতা প্রকৃতরূপে প্রসিদ্ধ হত; তোমার বলসাধিত ক্রিয়া আকাশের ন্যায় মহৎ।"

দুর্দান্ত একটি কোট! মানুষের প্রাগৈতিহাসিক খ্যাতিপ্রীতি বোঝার জন্য খুব দরকারী!

লেখাটি পড়ে অনেক কিছুই জানলাম প্রৌঢ় ভাই। ভাল থাকুন এবং আরও লিখুন।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যে বড়ই প্রীত হলাম।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

শামীমা রিমা এর ছবি

চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মেঘলা মানুষ এর ছবি

পুরোনো একটা কৌতুক মনে পড়ল।

নতুন বিয়ের পর মামাশ্বশুর এসেছেন, পুত্রবধূ কদমবুচি করে উঠে দাঁড়ানোর পর মামাশ্বশুর আশীর্বাদ করলেন, "আমার মাথার চুলের সমান তোমার আয়ু হোক।" মামাশ্বশুর টুপি খোলার পর দেখা গেল, তাঁর মাথায় ১০০% টাক, একগাছি চুলও নেই খাইছে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দারুণ! কৌতুকটা পছন্দ হয়েছে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আয়নামতি এর ছবি

হো হো হো

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমরা কি সুর নাকি অসুর? নাকি সুরাসুর?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমরা সুরাসুরই বটে।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

এই লেখা সম্পর্কে একটা কথাই বলব, অসামান্য এবং অসাধারণ!

কার্তবীর্যার্জুনের সহস্রবাহুর কথাও আছে, তা দিয়ে সহস্রাধিক নারীর সঙ্গে জলকেলির সময় রাবণ বিরক্ত করাতে বেচারাকে কী শিক্ষাটাই না দিয়েছিলেন। আবার কাশীদাসের মহাভারতেও এর উল্লেখ পাই অর্জুনের সাথে যুদ্ধে। অর্থাৎ ইনি ত্রেতা পেরিয়ে দ্বাপরেও রাজত্ব করেছিলেন! বুঝুন কাণ্ড!

"ভোলগা থেকে গঙ্গা"- জীবনটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ছেলেবেলায়, বোধহয় ক্লাস নাইনে। ইন্টারনেটে আপনার লেখাটা একটা মূল্যবান দলিল হয়ে থাকবে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য। হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধুপ্পুস করে শেষ না করে আরেকটু কইতে পারতেন। খালি ভূমিকা দিলেন; বাকিটাও দেন পর্ব করে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লীলেনদা, এসকল বিষয়ে আপনার লেখাপড়া অনেক। মন্তব্য আকারে আপনিই নাহয় কিছু বলেন। নতুন কিছু জানা-শেখা হবে। আগেও আপনার মন্তব্যের প্রত্যোত্তরে বলেছিলাম। আবারও বলি, বহুকাল পূর্বে আমাদের এই অঞ্চলের ধর্ম ও মিথ নিয়ে আগ্রহের কারনে লাইব্রেরী-মঠ-মন্দির-আশ্রম-মলজিদ-এতিমখানা ঢুঁড়ে বইপত্র পড়ে নোট করতাম। সে সময়ে নেটের সুবিধা ছিলনা। আর তখনতো কল্পনায়ও ছিলনা যে সেগুলো নিয়ে কখনও এভাবে লিখবো।
একটা গল্প বলি, যদিও গল্পটি বহুল প্রচলিত। ওমর খৈয়াম একরাতে রুবাই লিখতে লিখতে অনেক দেরিতে তার নেশার চাগান দিল। তিনি শুড়িখানায় যেয়ে হাঁক দিলেন, কই হে এক পাত্র উত্তম শিরাজী আনতো। দোকানদার কাঁচুমাচু হয়ে বললো, হুজুর, শিরাজীতো ফুরিয়ে গিয়েছে। তখন ওমর খৈয়াম নিম্নস্বরে বললেন, তাহলে দিশীই যাহোক কিছু দাও। দোকানি লজ্জিতভাবে বললো, হুজুর আজ আর কোন ধরনের মদই অবশিষ্ট নেই। তখন ওমর খৈয়াম বললেন, বেশ, ব্যবহৃত মদের পাত্রগুলো ধুয়ে তাইই নাহয় দাও। আমার যে আবার নেশার জিম্মাদারিগো।
তা আমিও ঐ রকম পাত্র ধুয়েই চালাচ্ছি, দাদা। গুপন কথা, কাউকে আবার বলবেন না যেন! হা হা হা।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

টুকটাক পড়েছি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে লেখার খাটনি অনেক। অনেক কিছু ঘাঁটতে হবে; তাই আপনার দিকে তাকাচ্ছিলাম আর কি

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার লাগল।
ভাবনা-দাদা, ডক্টর দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'লোকায়ত দর্শন' সংগ্রহে আছে কি? এই লাইনের অসামান্য বই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, এক লহমা। বইটার কথা অনেক শুনেছি বটে, তবে বইটা আমার নাগালে আসেনি। এবারে অবশ্যই সংগ্রহের চেষ্টা করবো।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

আমার আছে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধার দেন। হা হা হা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হা হা ডক্টর দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'লোকায়ত দর্শন' সংগ্রহ করেছি। সাথে আরও কিছু অসহজলভ্য বই। হাসি

মন মাঝি এর ছবি

পুরানে মানুষ থেকে দেবতা হয়ে যাওয়াদের বয়স নিয়ে অতিরঞ্জন তথা সবাইকে হাজার-হাজার বাঁচিয়ে রাখাকে আপনি বলেছেন 'উপলক্ষণ প্রয়োগ'। আমি বলি 'ওয়াসার বিল' প্রয়োগ। ঢাকা ওয়াসার পানির মিটারে ইউনিট হিসাবে রিডিং উঠে। এক ইউনিটে ১০০০ লিটার। কিন্তু এই লিটারের হিসাব মিটারে দেখা যায় না, ইউনিটটাই মূলত দেখায়। কিন্তু বিল করার সময় বিলের কাগজে পুরো লিটারের হিসাবটাই দেখানো হয়। যেমন মিটারের ২৭০০, বিলে হয় ২৭০০০০০। বিলের রিডিং-এর সাথে মিটারের রিডিং-এর এই পার্থক্য দেখে এক নতুন ওয়াসার মিটার-রিডার মহোদয়কে যখন জিজ্ঞেস করলাম এর কারন, উনি বললেন - এত কিছু জানি না, আপনি বিলের শেষ তিনটা শুন্য বাদ দিয়ে দেন তাহলেই মিলে যাবে। পুরানকাররাও মনে হয় তাই করতেন - ওয়াসার মিটার-রিডারের মতই আসল বয়সের শেষে তিনটা সম্মানসূচক শুন্য বসিয়ে দিতেন মাত্র। এটা বোধহয় ধরে নেয়াই ছিল যে পাঠকরা পড়ার সময় ঐ সম্মানসূচক ত্রিশুন্যের লেজ খসিয়ে নিয়েই বিষয়টা বুঝে নিবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি ওয়াসার বিল বুঝেন, তাহলে পুরানও বুঝবেন। কুনো ব্যাপারই না! দেঁতো হাসি

লেখাটা অত্যুত্তম হয়েছে। চলুক

****************************************

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে যে ধারনা পেলাম তাতে কি এই মিমাংসায় আসা যায়না যে বর্তমান ওয়াসার মিটার রিডাররা মূলত পুরাণকারদেরই উত্তরপুরুষ! হা হা হা।

আয়নামতি এর ছবি

সবজান্তা আর লীলেন্দার সাথে একমত। আরো বলা হলে জমতো ভালু। অবশ্য আপনি বলেছেনও সেটা কেন যায়নি...
তাই আরো জানবার আফসোস থেকেই গেলু ভাইয়া! অনেকদিন কোনো পোস্ট পাচ্ছি না আপনার কাছ থেকে।
এবার ঝাপি থেকে বের করুন দেখি নতুন কোনো লেখা। শুভকামনা হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দ্বিতীয়বার পড়লাম লেখাটা। পুরোপুরি দিবি আরোহণ না; তবে কৃষ্ণ আর রাম নিয়ে একটা লেখার জন্য কিছু নোট তৈরি করছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।