নারীমুক্তি প্রসঙ্গ ও দীর্ঘকাল যাবত চলে আসা আমাদের ধর্মীয় ও মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা - পরবর্তী অংশ (এক)

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৩/২০১৫ - ১২:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আদিতে নারী-পুরুষ ছিলনা, ছিল মানুষ। পরবর্তীতে সেই অখণ্ড মানবসত্তা নারী-পুরুষে বিভাজিত হয়।

একটি রূপকের মাধ্যমেই শুরু করি।
স্থান: বেহেশত।
শুনশান মনোরম পরিবেশ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাশে স্নিগ্ধ সুবাশিত গন্ধ। একটি যুবাপুরুষ একটি স্ত্রীলোকের সাথে বসে আছে। পাশ দিয়ে গমণরত এক ব্যক্তি ঐ যুবা পুরুষটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আচ্ছা আপনি পৃথিবীতে কোন পুণ্যবান কাজ করেছিলেন যে কারণে আপনি আজ এখানে।' যুবাপুরুষটি উত্তরে বললে, '"আমিতো স্মরণ করতে পারিনে এমন কোন পুণ্যকর্মের কথা! তবে সম্ভবত এখানে আমার উপস্থিতি এই স্ত্রীলোকটির শাস্তিস্বরূপ! আমি পৃথিবীতে এই স্তীলোকটির স্বামী ছিলাম।"

ধারণা করি, অনেক পুরুষই অনুধাবন করেন যে, সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে! তারপরেও সেই তারাই দীর্ঘকাল যাবত ব্যক্তিমানসে প্রোথিত পিতৃতান্ত্রিক অহং এর বৃত্ত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন না। আমিও কী ছাই পারি!

লেকচার দেওয়া সহজ। নিজের প্রাত্যহিক জীবনে, আচরনে তা পালন করা দুরূহই বটে! থাক সে কথা। লেখার অংশে আসি।

পূর্বের লেখাটিতে কিছু ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলেছিলাম। এবার দেখা যাক, বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত লোকসাহিত্য ও কথ্যসাহিত্য তথা ছড়া, প্রবাদ, রূপকথা, ব্যবহৃত ভাষা এবং পারিবারিক-সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে কীভাবে নারী-পুরুষের লিঙ্গায়েত পরিচয় নির্মান হয়ে যায়!

লোকসংস্কৃতিতে পুরুষতন্ত্র বা পিতৃতন্ত্র:

বিভিন্ন সমাজে লোকসাহিত্য বিশেষভাবে সমাজে প্রচলিত কথ্যসাহিত্য তথা ছড়া, প্রবাদ, রূপকথা এবং পারিবারিক-সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে নারী-পুরুষের লিঙ্গীয় পরিচয় নির্মান হয়ে যায়। যেহেতু নারী-পুরুষের লিঙ্গায়েত নির্মানে সমাজে বিদ্যমান ক্ষমতা-সম্পর্ক একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, তাই সমাজে প্রচলিত ভাষা ও শ্রেণীবৈষম্যের মধ্য দিয়েই নারী-পুরুষের ক্ষমতা সম্পর্কটি স্থাপিত হয়।

বিশেষ কিছু আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান অল্পসংখ্যক মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া সর্বত্রই নারী-পুরুষের লিঙ্গায়েত পরিচয় নির্মানে সাধারনভাবে যে ভাবাদর্শটি কাজ করে, তা নারীকে পুরুষের অধীনস্ত করে তোলে।

লিঙ্গীয় ভাবাদর্শ সম্পর্কে ইথিওপিয়ার অ্যালেমেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ জেইলান হুসেনের সজ্ঞায়ন:

"লিঙ্গীয় ভাবাদর্শ হলো, সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে এক-একটা সমাজ লিঙ্গীয় সম্পর্ক ও আচরণসমূহকে নির্মাণ করে এবং সেগুলোকে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কিত কিংবদন্তী, আখ্যান এবং পুরাণ নিয়ে গড়ে ওঠে লিঙ্গীয় ভাবাদর্শ। লিঙ্গীয় ভাবাদর্শ বলে দেয় কীভাবে একটা সমাজের মধ্যে নারী-পুরুষের আচরণ করা উচিত। একটা সমাজের লিঙ্গীয় ভাবাদর্শ প্রোথিত থাকে প্রধানত ধর্মীয় ও সামাজীক মূলনীতিগুলির ভিতরে। এইসব মূলনীতি আবার ব্যবহৃত হয় প্রত্যেক লিঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন অধিকার, দায়-দায়িত্ব আর পুরস্কারের ন্যায্যতা প্রতিপাদনের ভিত হিসাবে। প্রতিদিনকার সামাজিক অনুশীলনের একটা
আঙ্গিক হিসাবে সমাজ তার লিঙ্গীয় ভাবাদর্শকে পাকাপোক্ত করে তুলতে থাকে।"

জেইলান হুসেন আরো বলেন,

"মৌখিক ঐতিহ্য সাধারণভাবে নারী-মাত্রকেই বোকা, দুর্বল, হিংসুটে, শয়তান, অবিশ্বস্ত, গুরুত্বহীন, পরনির্ভর, এবং প্রলুব্ধকারী হিসাবে চিত্রায়িত করে থাকে। এ ছাড়া মৌখিক ঐতিহ্য নারীর আনুগত্য ও একান্ত দাস-মনোভাবের উপর পুরুষের বিশেষ অধিকার ও ক্ষমতার চর্চাও করে থাকে। নারীর অধস্তনতা ও প্রান্তিকতাকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে পুরুষকে নারীর উপর কর্তৃত্ব করার বৈধতা দেয়।"

আফ্রিকার প্রবাদে বলা হয়েছে, 'জলের মুখ জগৎ যেমন, নারীর মুখ স্বামী তেমন।' বা 'নারী আর গাধা, নালিশ করেনা বহনের বোঝা নিয়ে।'

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরসিনাস কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক 'লরা ব্লচ' তাঁর রূপকথা নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ 'ইউরোপীয় ও চীনা ফোকলোরে লিঙ্গীয় প্রসঙ্গে' বলেছেন:

"সতী নারী এবং তাদের সৎ গুণাবলী আর অসতী নারী এবং তাদের দোষগুলো চিত্রণ করে এসব রূপকথার মাধ্যমে কাল-পরম্পরায় পুরুষান্ত্রিক ভাবাদর্শের আলোকে নারীর লিঙ্গায়েত নির্মান ঘটতে থাকে।"

বিভিন্ন রূপকথায় ডাইনি চরিত্র সৃষ্টি করে সেখানে মানবেতর নিকৃষ্ট শ্রেণী হিসাবে দেখানো হয়েছে নারীদেরকেই, পুরুষদের নয়। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের রূপকথায় এই ডাইনি চরিত্র নির্মিত হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক বা পিতৃতান্ত্রিক ভাবাদর্শের আলোকে।

ইউরোপের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই. সামন্তযুগে (১৪০০ খ্রীঃ - ১৭০০ খ্রীঃ) রাজা ও চার্চের একটানা স্বৈর-আধিপত্য যখন নানাভাবে প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছিলো এবং এগুলোকে দমন করবার জন্য তখন নৃশংস নারকীয় পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিলো। সে সময়ে প্রতিবাদী নারীদেরকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারার রাজকীয় ও ধর্মীয় আদেশ জারী হয়েছিলো। তারা ছিলো অবিবাহিত। পুরুষ ও অর্থের অভাবে তাদের বিয়ে হয়নি। অর্থনৈতিক কারনে তারা তৎকালীন সামাজিক প্রথা ভঙ্গ করে উপার্জনের জন্য কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে চেয়েছিলো। তারা প্রচলিত সামাজীক ও ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন করেছিলো তাই তারা বিদ্রোহী। কত নারীকে যে তখন পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো তার ইয়ত্তা নই।

পৃথিবীর কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ডাইনি অপবাদ দিয়ে হতার ঘটনাও ঘটেছে। পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শের বিপরীতে একদা যে সকল নারীরা বিদ্রোহ করে সমাজের অধিপতি শ্রেণীর হাতে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন, পিতৃতান্ত্রিক ভাবাদর্শে নির্মিত লোকগাথা বা লোকসাহিত্যে তাদেরকে 'ডাইনি' নামক এক নীচ চরিত্র নির্মাণ করে পুরুষতান্ত্রিক সেই বর্বরতাকে আড়াল করা হলো। আর সমাজের শিশু-কিশোরদের মানস গঠনে রয়ে গেল এক বৈষম্যমূলক গাথা-চরিত্র যার নাম 'রূপকথার ডাইনি'।

আমাদের সমাজে পরিবারগুলোতে পালিত আচার-অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেও ছেলে-মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই লিঙ্গীয় ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিত হয়ে ওঠে। আমাদের হিন্দু তথা সনাতন ধর্মমতাবলম্বী পরিবারে ব্রাহ্মণ বালকের জীবনে 'উপনয়ন' একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এর মাধ্যমে তার বিদ্যা ও ধর্মপালনের অধিকার জন্মে, কিন্তু নারীর উপনয়নের অধিকার নেই, বেদেও তার অধিকার নেই, পুজোয় ও সে উৎসর্গ করতে পারেনা।

হিন্দুধর্মে 'ভাইফোঁটা' নামেও একটা পারিবারিক-সামাজিক আচরিত প্রথা আছে যে অনুষ্ঠানে বোনেরা ভাইয়ের কপাটে ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে। এই দীর্ঘায়ু কামনার আচারটি মাত্র পুরুষের জন্যই নির্ধারিত, মেয়েদের নয়।

আবার মুসলমান পরিবারে ছোটবেলাতেই ছেলেদের মুসলমানী বা খৎনা করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ধুমধাম করে মাইক বাজিয়ে লোক নেমন্তন্ন করে ভুরিভোজের ব্যবস্থা করা হয়। আবার মুসলিম পরিবারে পুত্রসন্তান জন্মালে আযান দিয়ে তা জানান দেওয়ার রেওয়াজও প্রচলিত আছে। মেয়েসন্তান জন্মালে অবশ্য তেমনটি করা হয়না।

সমাজে আচরিত এসব আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লিঙ্গীয় বৈষম্যটি ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়। লিঙ্গীয় প্রপঞ্চের এই ছকবাঁধা ধ্যান-ধারণা যা পুরুষকে নারী অপেক্ষা অধিক গুরুত্ববান হিসেবে নির্মাণ করে তা দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সর্বত্রই বিরাজমান।

আমেরিকার বহুল প্রচারিত একটি ছড়ার বাংলারূপ:
"আগে আসে ভালবাসা তারপর বিয়ে,
তারপর নাম আসে বাচ্চা পেটে নিয়ে
প্রেমময়ী হও তুমি হোক মহাসুখ
তবে যেন কোলে আগে ছেলে-সন্তান আসুক
আর তার চুল যবে হবে কোঁকড়ানো
তখন তোমার হক মেয়ে-সন্তানও।" (মল্লিকা সেনগুপ্ত. ১৯৯৪:৯৫, ইংরেজী ছড়া থেকে অনুদিত)

চৈনিক প্রবাদে আছে, 'ছেলে পঙ্গু হলেও উজ্জ্বল দক্ষ মেয়ের চেয়ে ভাল।' (মল্লিকা সেনগুপ্ত. ১৯৯৪:৯৫)

আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গে প্রচলিত প্রবাদে বলা হয়েছে,
"গাইয়ের বেটি, বউয়ের বেটা
তবে জানবে কপাল গোটা।"

"ছেলের মুতে কড়ি, মেয়ের গলায় দড়ি।"

"ছুয়াক না দেখাই ঘুঘুর বাসা, মাইয়াক না কই বিশ্বাসের কতা।"

"মা কান্দে বেটির তানে/বেটি কান্দে নাঙের তানে।"

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচন:

"পতি ছাড়া কামিনী, যেন শশী ছাড়া যামিনী।"

"পুরুষের বল টাকা, নারীর বল শাঁখা।"

"ঝি জব্দ শিলে, বউ জব্দ কিলে।"

আবার আমাদের দেশ-গ্রামে ছেলেদের উদ্দশ্যে প্রচলিত কথা, 'সোনার আংটি বাঁকাও ভালো।'

আমাদের এই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে প্রচলিত কিছু জনপ্রিয় লোকনাট্য, 'গম্ভীরা', 'আলকাপ', সত্যপীরের পাঁচালী', 'হোলির গান' এ সবেতেই পুরুষপ্রধান্য। এ সব পালার নারী চরিত্র গুলোতেও পুরুষেরাই অভিনয় করে।

নারীরা আজকাল স্বাবলম্বী হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। এ বিষয়টিকে ব্যাঙ্গাত্বক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে কোন কোন লোকপালায়। হোলির গানের একটি পালা থেকে একটি উদ্ধৃতি,

"যুগের ব্যবহার দেখে মন মোর কাইন্দেছেরে ভাই
ওরে ধনী-গরীব সমান হইছে, কুনই তফাৎ নাই ৷৷
মেয়েলোকে হইছে অফিসার,
ওরে, হাট-বাজারে দেখ এখন মেয়েলোকের বাজার ৷৷
ওরে, স্ত্রীপুরুষ একসঙ্গে ভাই, নাই হে ভাববিচার
ওরে, এইরূপ চলিছে ভাইরে কলিরও বিচার ৷৷ (সংগৃহীত)

এ থেকে বোঝা যায় আমাদের সমাজমানস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীর স্বাধীনসত্বাকে মেনে নিতে পারছেনা। নারীজীবন স্বামী-সন্তান আর গার্হস্থ্য শ্রমের বদ্ধ কানাগলিতেই আবর্তিত হবে। এটাই তার নিয়তি।

আর আমাদের বাংলা অঞ্চলে, দক্ষিণারঞ্জনমিত্র মজুমদার রচিত 'ঠাকুরমার ঝুলি'ই সম্ভবত শিশু-কিশোরদের জন্য রূপকথার বই হিসাবে সর্বাধিক পঠিত পুস্তক। এই বইয়ের পাতায় পাতায় বর্ণিত গল্পগুলো শিশুকাল থেকেই ছেলে-মেয়েদের মনে লিঙ্গায়েত ধারণাটি নির্মাণ করে দেয়।

আমাদের ছড়াগুলিতেও পুরুষপ্রাধান্য প্রবল। যেমন:
"খোকা যাবে শ্বশুর বাড়ি -সঙ্গে যাবে কে
ঘরে আছে হুলো বেড়াল কোমর বেঁধেছে।।"

"খোকা ঘুমোল পাড়া জুড়োল বর্গি এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কীসে।।"

"আয় আয় টিয়ে, নায়ে ভারা দিয়ে,
না' নিয়ে গেলো বোয়াল মাছে,
তাইনা দেখে ভোদড় নাচে,
ওরে ভোদড় ফিরে চা',
খোকার নাচন দেখে যা ৷৷"

আমাদের পরিবারে আচরিত কিছু অভ্যাস-রীতি, যেমন পরিবারে কন্যাশিশুর জন্য পুতুল খেলা, রান্নাবাটি খেলা ইত্যাদি বিষয়গুলি ছোটবেলা থেকেই তাকে গার্হস্থ্য ব্যবস্থাপনা বা ঘরকন্যা করার শিক্ষাই দেয়। অপরদিকে পুরুষ শিশুদের জন্য ডাংগুলি, মার্বেল, নৈখেলা ইত্যাদি।

ইদানিং আমরা কন্যাশিশুদের জন্য কিনছি 'বার্বিডল' আর পুরুষশিশুদের জন্য নানাবিধ খেলনা বন্দুক, কামান ইত্যাদি। একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমরা তাদের মধ্যে লিঙ্গীয় বৈষম্যের বীজটি রোপন করে দিচ্ছি। যেন মাতৃত্বই মেয়েদের আসল পরিচয় আর পুরুষদের জন্য দখলদারিত্ব।

যেমনটা এক ইংরেজ কবি বলেছেন,
"মাঠের জন্য পুরুষ আর চুলোর জন্য নারী;
তলোয়ারের জন্য পুরুষ, সূচের জন্য নারী;
পুরুষের আছে মগজ, নারীর আছে হৃদয়;
পুরুষ দেবে আদেশ, পালন করবে নারী।" (অনুবাদকের নামটি জানা নেই)

আমাদের পারিবারিক জীবনে আচরিত রীতিসমুহে পরিবর্তন আনতে হবে। আর বার্বিডল অথবা খেলনা বন্দুক নয়, অন্যকিছু ভাবতে হবে। তাদের জন্য এমন পারিবারিক ও সামাজিক আবহ তৈরি করতে হবে যেন শিশুকাল থেকেই তারা সমতার শিক্ষাই পায়। ছেলে-মেয়ে নয়, মানুষ হিসাবেই যেন একে অপরকে চিনতে শেখে।

সময় হয়েছে, কথ্যসাহিত্য তথা ছড়া, প্রবাদ, রূপকথা ইত্যাদির খোল-নলচে পাল্টে ফেলার। সমাজে এ ধারণাগুলো প্রচলিত রেখে সমাজমানস পাল্টানো যাবেনা। আবহমানকাল ধরে চলে আসা পিতৃতান্ত্রিক যে ভাবাদর্শ আমাদের ভাষা-সাহিত্যে (ভাষা নিয়ে পরবর্তীতে লেখার ইচ্ছা আছে) প্রকটভাবে প্রতীয়মান তার অবসান ঘটাতে হবে। শুধুমাত্র নারীমুক্তির আন্দোলন করে পিতৃতান্ত্রিক এ ধ্যানধারণার পরিবর্তন ঘটানো যাবেনা। খুব বেশী, নারী অধিকার রক্ষায় কিছু আইন প্রণয়ন হবেমাত্র। আইনের সঠিক প্রয়োগ হবে কিনা সেটাও ভাববার বিষয় বটে!

অসম্পূর্ণ।

[url=http://www.sachalayatan.com/vabna/54068#comment-653412 ] আগের পর্ব [/url]

সহায়ক:
ফোকলোর ও জেন্ডার: সুস্মিতা চক্রবর্তী।
আমার দেশের রূপকথা: শ্রীধীরেন্দ্রলাল ধর।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

ভারতীয় উপমহাদেশে এই বিষয়ে দুটো ভাল রেফারেন্স বই হলো,

  • প্রাচীন ভারতঃ সমাজ ও সাহিত্য - সুকুমারী ভট্টাচার্য
  • ভারতীয় শাস্ত্রে নারীকথা - সিরাজ সালেকীন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। পড়বার ইচ্ছা রইল।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
"সময় হয়েছে, কথ্যসাহিত্য তথা ছড়া, প্রবাদ, রূপকথা ইত্যাদির খোল-নলচে পাল্টে ফেলার।" -
সেই যেদিন থেকে আমি আর আমার মা দুজনেই একই বছরে উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হলাম সেদিন থেকেই কথাটা শুনে আসছি। কিছু কিছু লেখা পড়েছিও । কিন্তু প্রগতির গতি এত ধীর যে আজ প্রায় পাঁচ দশক বাদেও কথাগুলি যেন সেই 'এখন সময় হয়েছে' স্তরেই রয়ে গেছে। তবু চেষ্টা করে যেতেই হবে, আমাদেরই করতে হবে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কতশত দশক ধরে চলে আসা ধারণা এত্ত সহজে কি পাল্টাবে! এখনও কত কাঠ-খড় পোড়াতে হবে! তা, সামান্য হলেও অবস্থা কিছুটা পাল্টেছে বটে!
পুরনো দিনের কথা, 'বলবীর্যশালী পুরুষ ভিন্ন অবলা নারীর গত্যন্তর নাই।'
এখনকার কথা, 'স্বামী-স্ত্রী দুজনার আয়েই কোনক্রমে সংসারের চাকাটা ঘুরছে।'
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আমার মনে পড়ছে, আমার ছেলেটা জন্মের পর খুব অসুস্থ ছিল, প্রিটার্ম বেবির যতধরণের অসুস্থতা সব ছিল, আমি নিয়মিত শিশু বিকাশ কেন্দ্রে দেখাতাম ওর দুই বছর বয়স পর্যন্ত, ভাবতাম, আমার বাচ্চার কোনো অস্বাভাবিকতা থাকবে না তো? একদিন কথায় কথায় একজন আমাকে বলেছিলেন, আরে আপা চিন্তা করেন কেন? সোনার আংটি ব্যাঁকাও ভাল!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার সন্তানের সুস্থ-সুন্দর আনন্দময় জীবন কামনা করি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

আয়নামতি এর ছবি

এ পর্বে কিছু মনের কথা বলেছেন, বেশ ভালো লাগলো চলুক
আসলে অনেক দূর হাঁটতে হবে মানসিকতা-সমাজিক চিন্তাচেতনা ইত্যাদির খোল নালচে বদলাতে।
কতটা সফল হওয়া যাবে জানা নাই যদিও, তবু শুরু হওয়া দরকার।
সভ্য হবার এতটা পথ উজিয়ে এসেও হ্যারি পটারের স্রষ্টা মহিলা বলে তাঁর নাম নিয়ে ক্যারিকেচারের আশ্রয় নিতে হয়।
পাঠক যাতে মনে করেন ওটা একজন পুরুষেরই লেখা!
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মাঠময় দৌঁড় ঝাপ করলো ভারতীয় ১১জন পুরুষ খেলোয়ার, আর হেরে যাবার দায় গিয়ে পড়লো গ্যালিরীতে বসে থাকা অানুষ্কার উপরে! এসব দেখে/ শুনে/পড়ে মাঝে মাঝে মনে হয় ক্ষেপিয়া গিয়ে যা মনে আসে বলি। বললে/লিখলে কতটুকু কী হয় আসলে???

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

যাক, গুছিয়ে লেখা গেছে তাহলে! হাসি পরবর্তী পর্বগুলোতে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য চাই। অর্থাৎ লেখার নির্দিষ্ট অংশবিশেষের উপর স্বীয় মতামত ও বিশ্লেষণ।
ধন্যবাদ, পড়বার ও মন্তব্য করবার জন্য। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

[ অটঃ বেহেশতেরে রুপক কইয়েন না গো, বেহেশত দেখাইতে না পাইরা
দোজখ দেখায়া দিয়া যাইব শ্যাষে। ঐডা রুপক না, ছহীহ বাস্তবতা। ইয়ে, মানে... ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বেহেশতকে রূপক বলি নাই। বলেছি, উপমাটাকে।

সাঁকোটাতো আপনিই নাড়ানো শুরু করলেন! ভয় পাইছি!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।