বিনয়বন্দনা, বিনয়াসক্তি ও বিনয়দশা

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৯/২০০৭ - ১১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
১.
বাংলা কবিতার যদি কোনো বংশলতিকা বা জিনিয়ালজি বানান হয়, তাহলে বিনয় মজুমদার থাকবেন কৈ? রবীন্দ্র-জীবনানন্দ ধারাবাহিকতায়? মানলাম, কিন্তু রবীন্দ্র-জীবনানন্দ-বিনয় ধারাবাহিকতায় এর পর রাখবেন কারে? আমরা কি গত ত্রিশ বছরে এরকম কারো কথা শুনেছি? কেন শুনি নাই? বিনয় মজুমদার এমন কী ঘটালেন বাংলা কবিতার এই ধারার নন্দনতত্ত্বের?

আশির দশকের শেষদিকে বিনয় মজুমদারের "ফিরে এসো, চাকা" বইটি হাতে পাই, আমার কবিতার প্রবল বাসনার যুগে। সেই প্রাবল্যসমেত যখন বইটা পড়লাম, মনে হল: আমার কোনো আশা নাই! ফিরে এসো চাকা নয়, যেন আমার ভাতিজা ফারহান বাড়ি থেকে ডাকছে, ফিরে এসো কাকা, বোল্ড হয়া গেছ তুমি, মিডলস্ট্যাম্প চাইর টুকরা হয়া গেছে!

কবির অবশ্য অন্যরকম আশ্বাস ছিল বইতে:

এরূপ বিরহ ভালো; কবিতার প্রথম পাঠের
পরবর্তী কাল যদি নিদ্রিতের মতো থাকা যায়,
স্বপ্নাচ্ছন্ন, কাল্পনিক।

সেটা শুধু আশ্বাসই থাকল, আমার শ্বাসকষ্টের কোনো উপশম হল না। ফলে, দ্বিতীয়বার বিনয় পড়লাম পুরোপুরি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে। তৃতীয়বার না-পড়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে। সংক্ষেপে এই হল বিনয়ের সাথে আমার কৌশলগত অপ্রেমের কাহিনী। তারপর মাইনরিটি হিসাবেই আমি বন্ধুদের বিনয়বন্দনা শুনলাম, বিনয়াসক্তি দেখলাম এবং বিনয়দশা কী জিনিস হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।

২.
বিনয়বন্দনার ইতিহাস অবশ্য প্রাচীন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, বিনয় নাকি "কবিতার শহীদ"! উনারা সাবধানী ছিলেন। উন্নাসিকতার রাজনৈতিক-অর্থনীতি বুঝতেন। সবসময়েই একটা "অন্য" "অন্য" ভাব ছিল তাদের, বিনয় সম্পর্কে। অমিতাভ গুপ্ত লেখেন:

আর তার, তোমার আমার
বাংলাকবিতার কাছে
ফুটে উঠবে বিনয় মজুমদারের মত
অন্যতর ঋতু ও প্রণাম

(অমিতাভ গুপ্ত, তিনি)

আমাদের শামসুর রাহমানও জানান যে, বিনয়-এর কবিতার স্বাদ তিনি পেয়েছেন। এই কবি বয়সে তার থেকে কিঞ্চিত্ ছোট হলেও কবি হিসেবে যে ছোট নন, সেকথাও নির্দ্বিধায় বলেছেন আমাদের বিনয়ী কবি। তিনি বিনয়ের অসুস্থতার কথা শুনেছেন, গায়ত্রী চক্রবর্তীর বিদেশে চলে যাওয়ার কথা শুনেছেন, এমনকি ফিরে এসো চাকা-র চাকা যে "চক্রবর্তী" সে খবরও রাখেন (শামসুর রাহমান, মেধাবী কবি অসামান্য ব্যক্তি বিনয় মজুমদার, লোক ২০০১)।

প্রথম সত্যিকারের বিনয়বন্দনা টের পাওয়া যায় জয় গোস্বামীতে। তিনি লেখেন:

বৃষ্টি থেমে আসছে -- এবার তরুণ সব ছেলে
আসবে, এসে দেখবে সেই অবাক চমত্কার:
সদ্য লেখা কবিতা আর সন্দেশের বাক্স পাশে ফেলে
ঘুমোচ্ছেন, ছেলেমানুষ, বিনয় মজুমদার!

(জয় গোস্বামী, হাসপাতালে)

৩.

এবার বিনয়াসক্তির কথা বলি। এক ধরনের টিপিক্যাল আসক্তি সেটা, আমার ধারণা, পয়ারের মধ্যে পরাতত্ত্বের অনুপ্রবেশের কারণে জন্মায়। মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায় -- আঠার মাত্রার এই বিষণ্ণ সত্যভাষণ একদিন আমাদের আড্ডার টেবিলে বোমার মত ফাটল। ১৯৮৭ সাল। ফাটালেন যিনি, তার দিকে আমরা তাকালাম। তিনি কোন্ পক্ষ? প্রকৃত সারস, নাকি নিকটে-আসা মানুষ? তিনি কিছু বললেন না। হাসলেন শুধু। হায় হাসি! হায় দেবদারু!

চমকিত হলাম। বিশ্ব পরিষ্কার দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগে সব "আমি" অর্থাত্ বিপন্নপ্রায় প্রকৃত সারস, আর অন্যভাগে যাবতীয় অপ্রীতি, অধরা ইত্যাদি: যাদের হাত থেকে "আমি" পলায়নপর বা যাদের দাপটে "আমি" দিশাহারা। এইভাবে কবি বিনয় মজুমদার মধ্য-আশি-র বাংলাদেশের কবিদের মধ্যমনি হয়ে উঠলেন। কিন্তু তাকে নিয়ে দৃশ্যত কোনো যৌথতা তৈরি হল না। প্রত্যেকের হৃদয়ে তিনি খুঁটি গাড়লেন, জয়পতাকা উড়ালেন, কিন্তু সেই হৃদয়সমূহ, বুঝিবা নৈকট্য ও সারস-সংক্রান্ত টানাপোড়েনের কারণে, পরস্পরের "বিনয়"-এ অংশগ্রহণ করল না। যার যার ব্যক্তিগত শিবপূজা চলতে থাকল ভিতরে ভিতরে। বিনয় এলেন, কিন্তু আমাদের একত্র হতে দিলেন না। কেবল একটা চেষ্টার কথা জানা যায়:

অমিতকে ভালো লাগবার জন্য
বিনয়ের প্রয়োজন
আমি ও অমিত
আমি ও বিনয়
আমরা তিনজন
তিনটি অন্ধকারে জোনাকির মতন

(রিফাত চৌধুরী, বিনয়কে নিয়ে তিনজন)

সেখানেও অন্ধকার তিনটিই। তারপর একদিন বিনয় নিজেই যখন কথাচ্ছলে বললেন:

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?

তখন আমাদের রাধাভাব আর ঠেকায় কে? আশি ও উঠতি নব্বই’র জগত রাতারাতি "বিনয়ময়" হয়ে ওঠল। বিনয় মজুমদার আর তার পংক্তিমালা হয়ে উঠল নতুন আর আধা-পুরান কবিদের কাঁচামাল। চাকা যে ফিরবে না, এই কাঁদো-কাঁদো ভবিষ্যদ্বাণী করলেন কেউ কেউ (রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, শামীমুল হক শামীম), কেউ আবার যতরকম শৈল্পিক আর বাস্তবিক চাকা আছে তার তালিকা বানিয়ে নিজেই সেই তালিকার নিচে শুয়ে পড়লেন (চাকার চালচিত্র - সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল), তার পংক্তিকে বইয়ের শিরোনাম বানালেন (প্রকৃত সারস উড়ে যায় - রহমান হেনরী), কেউ কবির আসন পেতে দিলেন বিজয় গুপ্তের পাশে (বিনয় - শামীম রেজা), কেউ আবার বেচারি গায়ত্রী চক্রবর্তীকে খুব একচোট ঝাড়লেন, কেউ বিনয়ের সাথে কোনো গণিত ছায়াছবির যৌথ প্রযোজনায় নামলেন (স্তন - আমীর খসরু স্বপন)। আরো কিছু আসক্ত উচ্চারণ:

সূর্য অস্ত গেলে বিশ্বের ঈশ্বর বাড়ি ফেরে
বিনয় কোথাও ফেরে না।

(মাহবুব কবির, বিনয়)

কবিতাকে বলি, তোমাকে কি তবে বিনয় পাঠিয়েছে?
এই অক্ষরাসরে? নাকি বিনয়ের বিনীত বিনয় কেউ?
কবিতা নিশ্চূপ থাকে। স্বভাবতই বিনয়ও নিরুত্তর।

(মাতিয়ার রাফায়েল, শ্বাসরোধীকথা)

ফুল হাতে আমরা ডিম-ভাঙ্গা দেখতে এলাম। অথচ বিনয় ডানাহীন পড়ে আছে খড়ে আর খুরে।
(সাখাওয়াত টিপু, খড়ে আর খুরে)

৪.
আসক্তির পানি নেমে গেলে তখন আরেক পরিস্থিতি। বিনয়-উপনিবেশের সত্যিকার ভুগোল বের হতে থাকে। যারা নির্বাণ পেয়েছেন, তারা ফোরফ্রণ্টে আসেন তখন। এই পরিস্থিতির নাম দেয়া যায় বিনয়দশা, কারণ সুফীবাদের চর্চার মত এখানেও যেন বিষয় আর বিষয়ীর ভেদ ঘুচে গেছে। বিনয় মজুমদার কে? যিনি লিখেছিলেন, না যিনি পাঠ করেছিলেন? নাকি দুজনাই? কারো কারো ফটো রিয়ালিস্টিক "বিনয়"কাব্য এসে থামে শেষ লাইনের দার্শনিক উদঘাটনে। কেউ কেউ আবার নিজনামে সারাক্ষণ বিনয়ের-ই কবিতা লেখেন। একটা পুরো উদ্ধৃতি দিই:

শাওন মাসের তৃতীয় দিবস। রোজ বৃহস্পতিবার ভোরবেলা আমার জন্ম।
সাল জানা নাই। তবে সংগ্রামের চেয়ে বয়সে আমি ছোট। আমার আম্মা
নিরক্ষর না। আরবিতে কোরান পড়তে সক্ষম। আর জনক নিরীহ ইশকুল
মাস্টার। রিটায়ার্ড। সত্। কর্মঠ। সকাল-সন্ধ্যা ননস্টপ কাজ করেন। কথা বলেন কম।
বিষয় আশ্চর্যের তবে বিবরণ সত্য। আমার বাপের বাপও ছিলেন মাস্টার। উপরন্তু পাঠান।
ঘোড়ায় চড়ে তিনি মক্কা-মদিনায় যান। তাঁরে আমি শুনেছি বটে নয়নে দেখি নাই।

দাদার ইন্তেকালের সময় আমার বাপের বয়স ছিল নিতান্তই কম। মাত্র সেভেন ক্লাসের ছাত্র।

বাপেরে দেখি। তার লগে আমার দারুণ সখ্য। যদিও আমার জন্মবিত্তান্ত তিনি লিখে রাখেন নাই।
অবশ্য তাঁর বাপেও তাঁর জন্মতারিখ লিখে রাখে নাই। আমরা কালচারের নিচে সন তারিখ দিই।

(মিজান মল্লিক, কালচারের সন তারিখ)

কাউকে কাউকে আবার বিনয়দশা থেকে শুরু করতে দেখা গেলেও উপসংহারে নিজের ধামেই পৌঁছান তারা। বিনয়-মুচড়িয়ে নিজের কাজ হাসিল করতে চান। এরকম একটা শুরু:

আমি মাধবীকে লইয়া কাব্য করতে করতে
যাচ্ছিলাম। মাধবীর মাধব রয়েছে
সেটা হচ্ছে তাহাদের একান্ত ব্যাপার
তার কোনো দাম নাই শুধু তার নাম

(কামরুজ্জামান কামু, আমার মাধবীকে লইয়া)

৫.

শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন বিনয় হচ্ছেন "কবিতার শহীদ"। আমাদের সমসাময়িককালে আমরা এমন অনেককে পেয়েছি যারা হলেন "বিনয়ের শহীদ"। যেন তার কাছে সমর্পিত হওয়াটাই কবিতার সবচেয়ে চালু ফ্যাশন। অথচ বিনয় লিখেছিলেন, "শয়নভঙ্গির মতো অনাড়ষ্ট স্বকীয় বিকাশ" নাকি সকলেই চায়! চায় নাকি?

নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকেই বিনয় মজুমদারের সাথে আমি আমার ক্ষুদ্র-শত্রুতা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। তিনি মোহনীয়, বিপজ্জনক এবং অত্যন্ত বড়মাপের আততায়ী। এত নিরীহ ভঙ্গি তার, কার সাধ্য এই দার্শনিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করবার? যখন তিনি ছুরি বাগিয়ে ধরেন তখন আত্মরক্ষা ভালো, নাকি বক্ষ উন্মোচন ভালো -- এই নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। এত সব জেনেও আমরা যে যার ভুমিতে দাঁড়িয়ে গোটা আশি দশক ধরে ভেবেছি এই কবির সাথে আমাদের মিলনের শ্বাসরোধী কথা। অন্তরঙ্গ শত্রুর মত তিনি আমাদের কাছে টেনে নিয়েছেন, উপমা ও দর্শনসন্ধান দিয়েছেন। এভাবে একটা মেটাফিজিক্স হয়ে গেছে। দেখেছি, আমাদের বন্ধুদের অনেককেই যাদের যাত্রা বিনয় দিয়ে শুরু আবার বিনয় দিয়েই শেষ!

বাংলা কবিতার যে ধারাটি রবীন্দ্র-জীবনানন্দ হয়ে বিনয় পর্যন্ত গেছে -- সেটাকে আমার রীতিমত ডেড-এন্ড লাগে। গত বিশ বছরের বাংলা কবিতার প্রতিধ্বনিময় বিনয়-ঘরানা এর প্রমাণ। "কবিতার শহীদ" অভিধা পাওয়ার পর বিনয় মজুমদার নাকি হেসেছিলেন, সেকি এই অনাগত শহীদদের কথা ভেবে?


মন্তব্য

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

লেখা ভাল লাগলো। বিনয় পড়া হয় নাই। পড়ার ইচ্ছা জন্মাল।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

ভাস্কর এর ছবি

এনামুল হকের কথা মনে আছে সুমন ভাই? যারে আমরা পাগলা এনামুল কইতাম? ৯০'এর শুরুর দিকে আজিজের আড্ডায় সে একবার হঠাৎ কইয়া উঠলো জীবনানন্দ আবার কবিতা লিখছে নাকি তার অনেক লাইনের চাইতে আমার কবিতার লাইন ভালো...কবিতাতো একমাত্র লিখছেন বিনয়


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

??? এর ছবি

ধন্যবাদ, দুর্বাশা। হাসি

ভাস্কর, পাগলা এনামুল-রে মনে নাই। স্মৃতিভ্রংশ ঘটতেছে মনে হয়!
.................................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখায় বিপ্লব দিলাম। ভালো লাগলো পড়ে।
বিনয় পড়ার পরে যা-সব অনুভূতি হয়, সেইসব ঠিকঠাক গুছিয়ে লেখাটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। সেই কারণে আরো বেশি ভালো লাগলো।
বিনয়-বন্দনার এত ইতিহাসও জানা ছিলো না। মজা লাগলো।

একটা কথা। বোকার মতই শোনাবে হয়তো, তবু বলে ফেলি। 'দশক'- শব্দটা নিয়া একটু কনফিউজড আমি। যেমন ধরুন, ৫২ সাল, এটা কি পঞ্চাশের দশক, নাকি ষাট? আমার ধারণা ষাট। মানে সেরকমই জানি আমি। ১৯৮৭ সাল সেই হিসেবে হবার কথা নব্বই-এর দশক। তাই না? হিসাবটা কি ভুল করলাম কোথাও?

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

??? এর ছবি

কনফু, দশকের ক্ষেত্রে ১৯৫২ সালকে পঞ্চাশের দশক ধরা হয় (১৯৫০-৫৯)। তেমনি আশির দশক হৈল ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ এরকম।
..................................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

জিফরান খালেদ এর ছবি

বিনয়ের সাথে পরিচয় এরশাদ আলমগীরের সূত্রে। তার অসম্ভব প্রিয় কবি হওয়ার সুবাদে আমি পাঠ করি এই কবিকে ও তার কবিতা লিখার তত্বায়ন। এবং, এরশাদ ভাইয়ের মতো বিনয়ের কবিতার ব্যাপারে তীব্র উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে না পারায় বরাবরই ছোট হয়ে থাকতাম। এখনো একটু একটু আছি।

বিনয়কে আমার ভালোই লেগেছিলো, কিন্তু কোথায় জানি আমার সাথে মেলেনি, যেমন মেলেননি সিলভিয়া প্লাথ ও থমাস গান্ ।

বিনয়-প্রসূত-স্তরাবলীর কোনটাতে তবে আমি?

সুমন ভাই, লিখার জন্যে ধন্যবাদ।

??? এর ছবি

"বিনয়-প্রসূত-স্তরাবলীর কোনটাতে তবে আমি?"
সম্ভবত বিনয়হীন চোখ টিপি

......................................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

তারেক এর ছবি

মাত্র ক'মাস আগে বিনয়ের বেশ কিছু কবিতা পড়া হল। কবিতা কখনই ঠিকঠাক বুঝি না; এক ধরণের মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে যাই কেবল। বিনয়ের প্রতিটি শব্দ, লাইন মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল যতবার পড়ি ততবার। যেমন এটা-

আমিই তো চিকিৎসক, ভ্রান্তিপূর্ণ চিকিৎসায় তার
মৃত্যু হলে কি প্রকার ব্যাহত আড়ষ্ট হয়ে আছি।
আবর্তনকালে সেই শবের সহিত দেখা হয়;
তখন হৃদয়ে এক চিরন্তন রৌদ্র জ্বলে ওঠে।
অথচ শবের সঙ্গে কথা বলা স্বাভাবিক কিনা
ভেবে-ভেবে দিন যায়; চোখাচুখি হলে লজ্জা ভয়ে
দ্রুত অন্য দিকে যাই; কুক্কুপিন্ট ফুলের ভিতরে
জ্বরাক্রান্ত মানুষের মত তাপ; সেই ফল খুঁজি।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

??? এর ছবি

বিনয় মজুমদারের প্রভাব তাহলে বেশ দূর পর্যন্ত রিচ করেছে। হাসি উত্পল কুমার বসু বা রণজিত্ দাশও নিশ্চয়!

................................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমার শৈশব আক্রান্ত হয়েছিল আবুল হাসান এ ।
হয়তো বা সে কারনেই আমি বিনয়ে শহীদ হইনি । আবুল হাসান আমার এন্টি ভাইরাস । তাই বেশ নিরাপদেই বিনয়াসক্ত হতে পেরেছি হাসি

আমাকে ও মনে রেখো
পৃথিবী,সূর্য ও চাঁদ এরা জ্যোতিস্ক এবং
আকাশের তারাদের কাছে চলে যাবো ।
আমাকে ও মনে রেখো পৃথিবীর লোক
আমি খুব বেশী দেশে থাকি নি কখনো ।
আসলে তিনটি মাত্র দেশে আমি থেকেছি,এখন
আমি থাকি বঙ্গদেশে,আমাকেও মনে রেখো বঙ্গদেশ তুমি ।

এই যে বিনয় বাবু,আপনাকে আমরা মনে রেখেছি দেখুন ।

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মোহক এর ছবি

গতবছর সামহোয়ারইন ব্লগে কৌশিক আহমদ কবি ব্রাত্য রাইসু'র একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন । সাক্ষাৎকারের শুরুতে কৌশিক রাইস্য প্রসংগে মন্তব্য করেছিলেন- বাংলাদেশের অনেক কবিতা পাঠক নাকি রাইসু'কে 'বাংলাদেশের বিনয় মজুমদার' বলে মনে করেন ।
তৎক্ষনাৎ অনেকেই কৌশিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্রাত্য রাইসুর কোন কোন কবিতার কারনে তাকে বিনয় মজুমদারের সাথে তুলনা করা যায়? বলাবাহুল্য তিনি তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন?
আপনি একজন সাহিত্য সমালোচক । একই প্রশন যদি আপনাকে করা হয়, উত্তর দেবেন কি?
বিনয় মজুমদারের কবিতার যে টোন,তার সাথে রাইসুর কবিতাকে এক কাতারে এনে- রাইসু আমাদের 'বিনয় মজুমদার' এরকম প্রচারনা কতোটুকু সৎ বলে আপনি মনে করেন?
অথবা সমসাময়িক কালে বাংলাদেশের আর কোন কবির মাঝে আপনি বিনয়ের ছায়া খুঁজে পান কিনা?

ভালো থাকবেন । সচলায়তনে আপনাদের কার্যক্রম অনেক ভালো লাগছে । আশা করছি, ব্রাত্য রাইসুকে খুশী করে উত্তর দেবার দায়বদ্ধতা আপনার নাই ।

??? এর ছবি

মোহক, ব্রাত্য রাইসু বা যে কাউকেই খুশি করে উত্তর দেবার দায়বদ্ধতা আমার নাই এবং প্রশ্নের সাথে এ ধরনের আশংকা যুক্ত করে দেয়ার চর্চাও ভালো নয়। আপনি কবিসভা ফলো করলে দেখতেন ইভেন বিনয় নিয়েও রাইসু-র সাথে আমার অনেক তর্ক হয়েছে অতীতে। এবার আপনার প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলি:

রাইসু বাংলাদেশের বিনয় মজুমদার এ হেন বাণী আমি প্রথম শুনলাম। এই অমর বাণীর স্রষ্টা কে বা কারা আমি জানি না। এখন কথা হচ্ছে, কাউকে তার পূর্বসুরীর ছায়ায় আবিষ্কার করা উত্তরসুরীর ক্যারিয়ার-এর জন্য খারাপ এবং ব্রাত্য রাইসু ডেফিনিটলি এই ধরনের প্রচেষ্টাকে রেসিস্ট করবে আমার ধারণা। আর যদি সেটা কেউ করেনও, ব্রাত্য রাইসু-র সাথে বিনয়ের কোনো মিল আমিতো দেখি না। রাইসু বাংলাদেশের "বিনয় মজুমদার" এই বিবৃতি দিয়ে কী প্রতিপাদন করতে চান বিবৃতিদানকারী?

১. রাইসু-র কবিতা বিনয়ের কবিতা দিয়ে প্রভাবিত
২. বিনয় যেমন তার দশকে সেরাদের একজন, রাইসুও তার দশকে সেরাদের একজন
৩. বিনয়ের কবিতা দিয়ে যেমন বাংলা কবিতার বাঁকবদল হয়েছে, তেম্নি রাইসুর কবিতা দিয়েও হবে।

এবার আমার মতামত:
১. না
২. মে বি
৩. বলার সময় এখনো আসে নি

সমসাময়িককালে কাদের মধ্যে "বিনয়" পাওয়া গেছে সেটা আমার লেখার মধ্যে আছে। এর বাইরে আপাতত আমি জানি না। আপনার জানা থাকলে জানিয়েন। ধন্যবাদ পাঠের জন্য।

......................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

শুদ্ধ [অতিথি] এর ছবি

বিনয়ে সত্যি ছেয়ে আছে অনেকখানি।তবে কেউই শেষ নয়,কিছুই শেষ নয় যতদিন না শেষ হয়ে যায়!কাজেই বিনয়ের হাত ধরেই একদিন অন্য কোনো সম্ভাবনা নিশ্চই দেখবো বলে আশা রাখি।আর বড় কবিদের ছায়াপাত বেশী সময়ের হয় বলে সময় লাগে বাঁক নিতে বা পেতে।এত দরদী লেখার জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।