আবু কায়সার : একজন প্রিয়তম কবি

জিফরান খালেদ এর ছবি
লিখেছেন জিফরান খালেদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১০/২০০৭ - ২:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জয়নুল গ্যালারিতে

মাঝে মাঝে এরকম হয়; সব সময় নয়, ওই যেরকম
খুব ভোরবেলায় এলিনাকে দেখা গিয়েছিলো মামাদের
জামগাছতলায় - এলিনা কি দ্যাখেনি আমাকে -
অন্ততঃ আমার তো তাই মনে হয়েছিলো ঘুমঘুম চোখে
থেমে গিয়েছিলো হিসি করা খুব ত্রস্তে ঘুরে ইজেরের
ফিতে বাঁধতে বাঁধতে আমি ভুলেছি নিজস্ব ডাকনাম।

এলিনা কি মনে মনে দেখেছিলো সেই ভুলে যাওয়া
কে জানতো এলিনারা একদিন যাবে; মরে যাবে এইভাবে!

কে জানতো দুপুরের রাঙা অন্ধকারে এক রাজার বাড়িতে
নিরেট দেয়াল ফেটে যাবে কামাতুর, তক্ষকের শীতকারে
কেবল পাথর নয় ছিলো গন্ধরাজ ঝরে পড়া সুঁড়িপথ
ছিলো ভার্মিলিয়ন ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি দীর্ঘ; জ্যামিতিক
অতি সুখে কখনো কেঁদেছে অলিন্দের দুলে ওঠা ছবি?

মাঝে মাঝে এরকম অনিশ্চিত ধূপছায়া কচিত কখনো
সব সময় নয়; ওই যেরকম হয়েছিলো সেবার হঠাত
পরাগপুরের ভিড়ে, মফঃস্বলে সাতগাঁ-লোকালে -
অচেনা কি চিনবে এখন? ট্রেনের জানালা দিয়ে যার
উত্তরীয় উড়ে গিয়েছিলো, কে জানে কি ছিলো তার নাম
এই কথা ওকি ভেবেছিলো একা আলাপের ফাঁকে একবার!

আজ এতদিন পরে মেঘের বিকেলে জয়নুল গ্যালারিতে
ঘুরে ঘুরে দেখি অন্য এক এলিনাকে; সে কিন্তু দ্যাখেনি!

আবু কায়সার

সিকদার আমিনুল হক, ফারুক আহমেদ ও আবু কায়সার এই ত্রিমূর্তি দীর্ঘদিন একসাথে ছিলেন (একটি লিটল ম্যাগ করতেন - নামটা মনে পড়তেসে না); ফারুক আহমেদ আমি লন্ডনে আসা অবধি লিখছিলেন সাহিত্য-পাতাগুলোতে বিভিন্ন দৈনিকের আর বাকি দুই অসম্ভব শক্তিশালী কবি পরলোকগত।

এর মধ্যে আবু কায়সার আমার দুর্দান্ত প্রিয় একজন কবি; না, আসলে, সবচেয়ে প্রিয়দের মধ্যে উনি একেবারেই শুরুর দিকে। তাঁর কবিতায় আমি, ক্লিশে হয়ে যায় - তবুও বলি, মহত কোনো বোধকে মহাচেতনার মতো করে স্পর্শ করতে পারতাম যেনো, জীবাননন্দ দাশের মৃত্যুর আগে যেমনটা করে শরীরময় একটা বিস্ময়কর বিষণ্নতা তৈয়ার করে... খুব বেশি কবিতা পড়া হয়নি তাঁর, অন্ততঃ সবটুকু না পড়লে একজন কবি সম্বন্ধে কিই-বা লিখা যায়? তাই, আন্তরিক মুগ্ধতা ছাড়া কিছু প্রকাশ করতে পারছি না... তাঁর সমস্ত কাজ সংগ্রহে আনার হুকুম দিসি দেশের কাব্যাক্রান্ত বন্ধুদের; যোগাড় হলে আমার ওনাকে বিশদভাবে পরিচয় করায় দেওয়ার সাধ আছে...

জীবিতকালে কয়েকবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিলো, যুগান্তরে ছিলেন তখন। আমি অত্যন্ত অর্থহীন যে লিটল ম্যাগটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারী পত্রিকা হিশেবে বের করতাম টিউশানির টাকায়, সেটিতে প্রকাশের জন্যে আমার আবদারে কয়েকটি কবিতা তিনি পাঠিয়েছিলেন;আমার পত্রিকায় প্রকাশের বেশ খানিক পর, তাঁর মৃত্যুর বছর দু-এক আগে, উপরে দেয়া এই কবিতাটিই প্রথম আলো সাহিত্য-পাতায় আসে বেশ খানিক্টা পরিবর্তিত রূপে (সেই রূপটাও বাংলাদেশে); আমার পত্রিকায় প্রকাশিত ভার্শানটি-ই আমার ভাল লেগেছে বেশি; সেটিই দিলাম এখানে আর খুব মনে মনে চাইছি সুমন ভাই বা ইমরুল ভাই যদি তাঁকে নিয়ে একটু আলোচনা করতেন... অথবা, যে-ই তাঁর লিখালিখি বা তঁর সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত, তিনি কিছু লিখলে খুবি সুখী হবো।

দাবিটা যদিও সুমন ভাই ও ইমরুল ভাইয়ের প্রতি বেশি...।

পুঃ - এইখানে আমি হন্ডাত ত লিখতে পারি না বলে সেগুলি ত করে দিলাম...


মন্তব্য

জিফরান খালেদ এর ছবি

নেট ফেট নাই এখন... বাসা বদলাইসি, এইখানে থিতু হওয়ার আগেই আবারো চেইঞ্জ করতে হবে মনে হচ্ছে... বহুত ঝামেলা... নেট এর অভাবেই সচল্বাসীদের বিরক্ত করতে পারতেসি না আগের মতো... আবু কায়সার সম্পর্কে কারো কিছু বলার থাকলে খুবই খুশি হইতাম...

আর নেট নিই, আবার গুঁতামো সবাইরে...

একটু পরেই ফুট্মু, ভাল থাকেন...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দাবিটা লুৎফর রহমান রিটনের কাছেও রাখতে পারেন। রিটনের ছোটদের কাগজ-এর সময়কালের আবু কায়সার সংক্রান্ত কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ একদিন করেছিলেন আমার সঙ্গে ফোনালাপের সময়।

আবু কায়সারকে আমি কাছে থেকে জানিনি, তাঁকে প্রথম চিনি ষাটের দশকে কচি ও কাঁচা কাগজে ধারাবাহিক উপন্যাস রায়হানের রাজহাঁস পড়ে। এতোটাই প্রিয় ছিলো সেই লেখা যে আমার ছোটো ভাই আবু কায়সারের মৃত্যুর সংবাদ আমাকে ইয়াহু মেসেঞ্জারে জানায় এইভাবে : রায়হানের রাজহাঁস মারা গেলেন!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জিফরান খালেদ এর ছবি

জুবায়ের ভাই, আপনাকেও লিখতে বলতে চাইতেসিলাম আমি। কেন জানি ভয় লাগতেসিলো একটু, তাই করি নাই... আপনাদের তারুণ্যে এরাঁই তো দাপিয়ে বেড়াতেন, বোধকরি...

অজস্র ধন্যবাদ রিটন সাহেবরে রেফার করবার জন্যে...

এইখানে, এক্ষন, দাবি উত্থাপন করলাম...

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ধন্যবাদ জিফরান এবং মুহম্মদ জুবায়ের।
আবু কায়সারকে নিয়ে অবশ্যই লিখবো।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রিটন ভাইয়ের লেখার লিঙ্কটা এখানে রেখে গেলাম - এই হচ্ছেন আবু কায়সার


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

উনার স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলি পড়তে দারুন লাগে!!

****************************************

জিফরান খালেদ এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দীর্ঘকাল পর্যন্ত আমার কাছে ছিল 'আবু কায়সার মানে রায়হানের রাজহাঁস'। কথাটা মনে হয় এখনো সত্যি। কারণ গত সাড়ে তিন দশকে রায়হানের রাজহাঁস আমার মাথা থেকে বের হয়নি। প্রতিনিয়ত আমার স্বপ্ন আর বাস্তব একটা আরেকটার ভেতরে ঢুকে পড়ে। আবু কায়সারের লেখা অ্যাডভেঞ্চারের গল্পগুলো পড়া হয়েছে আরও অনেক পরে, কিন্তু পড়ে বিশেষ ভালো লাগেনি। দোষটা বোধ করি খোদ আবু কায়সারের। সম্ভবত তাঁর আর কোন গদ্য রায়হানের রাজহাঁসকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। তাঁর কোন কাব্যগ্রন্থ আমার পড়া হয়নি। দোষটা আমার। এখন তাঁর কাব্যগ্রন্থ খুঁজতে গেলে আমাকে গন্ধমাদনে বিশল্যকরণী খোঁজার খাটুনি দিতে হবে। এদেশে খুব বাজার চলতি লেখক না হলে তিনি চলে যাবার পর তাঁর বই বাজার থেকে নাই হয়ে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।