আট বছর। দিন, মাস,ক্ষণের হিসেব করে কী হবে? সত্যিটা হল, বিস্মরণের ধুলো ঢেকে দিয়েছে সব। যেমন করে বুক শেলফের পেছনের তাকে পরে থাকা প্রিয় বইয়ের প্রচ্ছদ ধূসর হয়ে যায়। যেমন করে প্রিয় গানের সুর নিওরনের সেফটি বক্স থেকে টুপ করে ঝরে পড়ে। যেমন করে ক্রমশ: বড় হয়ে যাওয়া আঙ্গুলের ত্বক থেকে হারিয়ে যায় সেই কবেকার আড়ংয়ের পথে পিতার নরোম মুঠোর নিরাপত্তা। যেমন করে হারিয়ে যায় মর্নিং ওয়াক থেকে পিতার কুড়িয়ে আনা স্নেহার্দ্র শিউলি ফুলের বিস্ময়। যেমন করে হারিয়ে যায় পরীক্ষার দিন ভোর বেলার ডাক, “এখনো ঘুমাচ্ছিস? ওঠ, ওঠ, পড়াটা শেষবারের মত রিভিশন দিয়ে নে। তার আগে একটু ঘাসের ওপর খালি পায়ে হেঁটে আয়। ভোরের হাওয়ায় মাথা পরিষ্কার হয়...”
স……ব হারিয়ে যায়। যাবে নাই বা কেন? জীবনতো দ্রুত লয়ের ট্রেন ছাড়া আর কিছু না! হুশ হুশ করে স্টেশনের পরে স্টেশন পেরিয়ে যায়। সর্বগ্রাসী জীবনের স্টেশনে স্টেশনে শুধু হুল্লোড় আর হুল্লোড়। দু’দণ্ড দাঁড়ানোর অবসর কোথায়? শুধু এক "নাম না জানা" গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা আর ছুটে চলা। কবে কোন স্টেশনে কে নেমে গেল, কে রাখে তার খবর? দু’হাতের আঙ্গুলের বাঁধনে যতই ধরে রাখতে চাই না কেন স্মৃতির জলেদের, তারা মানবে কেন অর্বাচীন আহ্লাদ? তাই আঙ্গুলের ফাঁক গলে শিশিরের শব্দের মত ঝরে যায় টুপটাপ...টুপটাপ...
আট বছরের কালবোশেখির ঝড়েরা আমাকে বেশ মজবুত করেছে, আব্বা। বেশ ভাল আছি। নিজেকে বেশ “ইনভিনসিবল” মনে হয়। শুধু বোকা ক্যালেন্ডারটা মনে করিয়ে দেয় আজ ২৫শে জুন। বিস্মরণের শান্ত জলে ভূষ করে জেগে উঠে অনেক বছর আগের এক দিন। বাদলের এক দিনে পিতা-পুত্রী বাজারে গিয়েছিলাম। শুকনো জায়গায় আচ্ছাদনের নিরাপত্তায় আমাকে রেখে কাঁদা মাখা কাঁচা বাজারে গিয়েছিলেন মাছ কিনতে। হাতের মুঠো থেকে ছোট্ট আমার হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলেছিলেন, “এখানে দাঁড়িয়ে থাক। একদম নড়বি না। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে আসছি। ভয় পাসনে, আমি ফিরে আসছি।” আমি কথা রাখতে পারিনি। নয় বছরের বালিকার সময় সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিল না। ঠিক কতক্ষণ পরে নিঃশব্দে কেঁদে উঠেছিলাম, মনে নেই। তবে একটা কথা রেখেছিলাম। বাজার করতে আসা ব্যস্ত মানুষের আনাগোনার মধ্যেও কাউকে বুঝতে দেইনি আমি বাবাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আকুল কাঁদছি।
সেই নয় বছরের বালিকা যদি সেদিন পেরে থাকে, এই চল্লিশের চালশে পড়া আমি পারব না! শুধু এই বোকা ক্যালেন্ডারটা মনে করিয়ে দেয় আজ ২৫শে জুন। আট বছর আগে আরেকবার বলেছিলেন, “কাঁদিস না”, বলেননি “ফিরে আসছি”। তাই পিতার হাতের মুঠোর মধ্যে আঙ্গুল জড়ানোর জন্য “ফেরা” আর হবে না কোনদিন। মিরপুরের কবরস্থানে গেলে শোনা যাবে শুধু বাতাসের ওপারের বাতাসেরা নিথর। কেউ বলে উঠবে না, “ভয় পাসনে, এক্ষুণি ফিরে আসছি...”
এখনতো আর কোন অপেক্ষা নেই। তাই খুব সহজেই ভুলে থাকা যায়। শুধু এই বোকা ক্যালেন্ডারটা মনে করিয়ে দেয় আজ ২৫শে জুন আর সামনের কালো মনিটরটাকে ঝাপসা করে দেয়। তার বেশী কিছু না, আব্বা, তার বেশী কিছু না...
।।২৫শে জুন, ২০১৩।।
মন্তব্য
লেখাটা পড়তে যেয়ে বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।।।।।।।।।।।।।।
ইসরাত
অনেক ধন্যবাদ ইসরাত পড়ার জন্য। দোয়ার করবেন আমার বাবার জন্য।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অনেক স্নেহ আর ভালবাসা - একজন পিতৃহারাকে আর একজন পিতৃহারার কাছ থেকে।
(তোমার এই লেখা যেমন হওয়ার কথা তাই হয়েছে - খুব সুন্দর)
- একলহমা
তোমাকেও অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, অমিত’দা। ভালো থেকো।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বুকের ভেতর থম ধরিয়ে দেয়া লেখায় কিছু না বলি বরং।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ, স্যাম।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ভালো থাকুন, আশা।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নীড়পাতায় বাবাকে নিয়ে লেখা দুইটি দারুন লেখা ---
পৃথিবীর সব বাবা ভালো থাকুন - সে এই দুনিয়াই হোক আর ঐ দুনিয়ায়।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বাবাকে কখনও বলা হয়নি, ' বাবা, তোমাকে বড় ভালবাসি।' আপনার পিতার জন্য শ্রদ্ধা জানাই জোহরা আপা।
বলা হয়নি কত কথা। সুমাদ্রী, আপনার বাবাকেও আমার প্রনাম রইল।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বাবাকে মিস করি সবসময়। উনি চলে গেছেন আটাশ বছর আগে। মারা যাবার এক মাস আগে আমাদের দেখতে আমেরিকায় এসেছিলেন মা সহ। সেই আমার সাথে শেষ দেখা। উনার একটি গেঞ্জি আছে আমার কাছে, মাঝে মাঝে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরি, গন্ধ নেই। আমাদের অনেকের মনের কথা তুমি বলে দিয়েছ। ভাল থেকো।
যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন তিনি।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আমাদের সমস্যা হলো, মনকে যতোই বলি পেছন ফিরিস না, তখন সে আরো বেশি বেশি পেছনেই তাকায় ! আসলে সামনের দৃশ্যপট যতোই সংকীর্ণ হয়ে আসে, আমাদের দূরবর্তী পেছন-স্মৃতিটাই মায়াময় হতে থাকে। ফিরে পাবো না বলেই !
আহা, 'টাইম, য়্যু আর অ্যান ওল্ড জিপসি ম্যান !'
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অনেক ধন্যবাদ রণদীপম’দা।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অনেক ধন্যবাদ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অনেক ধন্যবাদ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বাবাকে নিয়ে যে কোনো লেখাতেই আমার চোখ কেন যেন ঝাপসা হয়ে আসে। এখনো হলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বাবারা ঘুরে ফিরে সব এক রকমই।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
facebook
অনেক ধন্যবাদ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নতুন মন্তব্য করুন