ফ্রিজিং রেইন

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি
লিখেছেন জোহরা ফেরদৌসী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/০৮/২০১৩ - ১:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দীর্ঘ ছুটির পরে কাজে ফিরেছে মিলি। বিচ্ছিরি অসুখের চিকিৎসায় ভেঙ্গে পড়েছে শরীর। নিজেকে টেনে টেনে চলে ও। এ শহরের বাসগুলো ইচ্ছে করলেই নিচু করা যায়। বয়স্ক কিংবা হুইল চেয়ারের যাত্রী দেখলেই বাসের চালকেরা বাস নামিয়ে নিচু করে দেয়। কিন্তু মিলিকে বাইরে থেকে দেখে ওর শারীরিক অবস্থা বুঝার উপায় নেই। তারপরেও চালককে অনূরোধ করলে, নিচু করে দিতো যাতে বাস থেকে নামতে সহজ হতো। মিলি কিছুতেই তা করবে না। অদ্ভুত এক আত্মমগ্ন অভিমানে ডুবে আছে ও। তাই প্রতিবার বাসে ওঠা নামা করতে কষ্টে নীল হয় ও। নিজেকে নিজেই বলে, “কষ্টেরা নীলই হয়, মিলি, নীলই হয়...”

ছুটির দু’বছরে জীবনটাই বদলে গেল। বালির বাঁধের মত ধ্বসে পড়লো ভ্রান্তিগুলো। নিজেকে খুব দুঃখী মনে হয় মিলির। শরীরের আর মনের ক্লান্তি স্নায়ুর ওপরও চেপে বসে এক এক সময়...পরাভূত করে ওকে...তখন সামনের মনিটরটা ঝাপসা হয়ে আসে। কখনও কখনও অবসন্ন মিলি ডেস্কের ওপর দু’হাতে নিজেকে আড়াল করে মাথা রাখে। আহ্‌, এমন করে যদি সমস্ত পৃথিবীটাকে আড়াল করা যেত!

...২...

কাজে ফেরার দ্বিতীয় সপ্তাহে একটা মিটিংয়ে যেতে যেতে মার্গারেট বলল, “Mili, let me tell you. Sophal also just came back from leave. He did not start working full time yet. I guess he finished chemo not long ago.”

মিটিংয়ে সোফালের ম্যানেজার লুক, সোফাল, মার্গারেট আর মিলি। এগ্রিকালচারাল জিডিপি গ্রোথের রেট নিয়ে কি একটা গড়বড় লেগেছে। লুকের গ্রুপ একটা নাম্বার রিপোর্ট করছে, এদিকে মিলিদের গ্রুপ থেকে আরেকটা নাম্বার বলা হচ্ছে। ম্যাথোডোলজিতে তফাতটা কোথায়, তাই নিয়ে কথা হচ্ছে। টেবিলের এই ধার থেকে মিলি তাকিয়ে দেখছে সোফালকে। পঞ্চাশোর্ধ এই ক্যাম্বোডিয়ানকে লুঙ্গি, গেঞ্জি পরিয়ে দিলে অনায়াসে মিলিদের গ্রামের সলিমুদ্দীন চাচা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। সোফাল কথা বলছে খুব ধীর স্থির, নিচু স্বরে। মিলি দেখছে আর ভাবছে সেই প্রথম দিন কিভাবে ওকে ডাক্তার বলেছে কথাটা? এই দেশে ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় রোগিকে “ব্যাড নিউজ” দেয়ার জন্য। যার রোগ তাকেই বলা হয় রোগের অবস্থা, চিকিৎসা, সম্ভাব্য ফলাফল...চিকিৎসা সফল হওয়ার বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা...অসফল হলে কতদিনের মধ্যে বেজে উঠবে ছুটির ঘণ্টা...সব কিছু...কোথাও কোন লুকোচুরি নেই...রোগিকেই শুনতে হবে সবার আগে...পরিবার পরিজন একটু “রেখে ঢেকে” কিছু বলতে পারবে না...

মিলি জানে, সোফালকে আর ওর স্ত্রীকে তার কনসাল্টেশন রুমের নির্জনে ডাক্তার বলেছে, “I am extremely sorry, Mr. and Mrs. Nong. Mr. Nong, your reports have come and they are not good. Now I can say unequivocally that you have got cancer…”

মিলি নিশ্চিত জানে, সোফাল আর ওর স্ত্রী আগে থেকেই দু’জন দু’জনের হাত ধরে বসেছিল। মিলি জানে সেদিন সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলেও ওরা দু’জন নিশ্চুপ বসেছিল। কেউ কোন কথা বলেনি। কফি কাপে চামচ নাড়ার শব্দটাই ছিল সেই সকালের একমাত্র শব্দ। তারপর বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পথটুকুতেও ভাঙ্গেনি সেই নৈঃশব্দ। অথচ ক’দিন আগেও হয়তো ওরা আগামী সামারের ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যাবে সেই পরিকল্পনা করছিলো। কিংবা ব্যাকইয়ার্ডের গার্ডেনে কী কী সবজির চাষ করবে তার কথা বলাবলি করছিলো।

এখন ডাক্তারের কথা শুনে ধরার মধ্যেই কেঁপে উঠে দু’জনের হাত। মিলি জানে, এই সময় ডাক্তার হাত রাখেন ওদের দু’জনের হাতের ওপর...কিন্তু তাতেও কিছু হয় না...হঠাৎ সর্বস্ব হারানো মানুষ দু’জন নির্বাক তাকিয়ে থাকে ডাক্তারের মুখের দিকে...ডাক্তার তখন বলে চলেছে সম্ভাব্য ট্রিটমেন্ট রেজিম...সার্জারি, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি...সাইড এফেক্ট...সারভাইভাল রেট...

ডাক্তারের কাছে সমস্ত খবর আছে...শুধু নেই এই মাত্র মরে যাওয়া স্বপ্নগুলোর খবর...

...৩...

সামারে অফিসের কাছেই একটা পার্কে পিকনিক হল। বিশাল পার্কের এক ধারে একটা ছোট্ট পন্ড। তার চারিদিকে শান বাধানো পথ, মাঝে মাঝে গাছের ছায়ায় কাঠের বেঞ্চি পাতা। পন্ডের এক ধারে একটা উইপিং উইলো গাছ। জলের পাশে উইলো গাছগুলো দেখলেই মিলির দেশে দেখা হিজল গাছের কথা মনে পড়ে যায়। হিজল গাছের পাতারাও এমন চিরল আর এভাবেই নুয়ে পড়ে জল ছুঁয়ে থাকে। কেন যেন খুব মায়াময় লাগে উইলো গাছগুলোকে মিলির।

খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই হুল্লোড় করে বেসবল আর ব্যাডমিন্টন নিয়ে মেতে উঠলো। নাসরীন আপা আর মিলি পন্ডের চারিদিক ঘেরা পথটা ধরে হাঁটতে গেল। পাশের রিটায়ার্ড হোমের কিছু বুড়োবুড়ি বেঞ্চিতে বসে গল্প করছে। এক তরুনী মা গাছের ছায়ায় উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়ছে। তার ছোট্ট মেয়েটা গোলাপী রঙ্গের তিন চাকার সাইকেল চালাচ্ছে। মায়ের মতই ব্লন্ড চুল পেয়েছে মেয়েটা, বাতাসে সেই চুল উড়ে এসে মুখ ঢেকে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর মা চোখ তুলে দেখছে মেয়ে কত দূর গেল। বাচ্চা মেয়েটা প্রতি চক্করেই দূরত্ব বাড়াচ্ছে আর কচি কণ্ঠে মা’কে জানান দিচ্ছে, “Mommy, I’m here. See I can do this! ”

কিছুক্ষণ পর সোফাল এসে যোগ দিল মিলিদের সঙ্গে। নাসরীন আপা আর সোফাল দীর্ঘদিনের সহকর্মী। দুজনেই বড় হয়ে যাওয়া ছেলে মেয়েদের গল্প করছেন, মিলি পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে শুনছে। এই সময়টায় মিলির আতঙ্কটা ফিরে আসে। মিলির মেয়ে বৃষ্টি সবে এলিমেন্টারী স্কুল শুরু করেছে। কবে হাই স্কুল পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি যাবে, কবে গ্রাজুয়েশন করবে...সময় পাওয়া যাবে তো? মিলি প্রাণপনে স্মরণ করে ওর সোশাল ওয়ার্কার হ্যাদারের কথা, “One day at a time, Mili, one day at a time. Never think about what will happen tomorrow… Live in the moment… Enjoy your today.” মিলি কিছুতেই আর সাইকেল চালানো বাচ্চা মেয়েটা আর ওর মায়ের দিকে তাকাতে পারে না। একটু পিছিয়ে পড়ে ও উইলো গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। গাছের চিরল পাতাগুলো নুয়ে পন্ডের জল ছুঁতে চাইছে। কখনও পারছে, কখনও পারছে না। মৃদু বাতাসেরা দূরত্ব করে দিচ্ছে পাতা আর জলের মধ্যে...

...৪...

মাঝে মাঝে অফিসের হলওয়েতে, কিচেনে মিলির সাথে দেখা হয়ে যায় সোফালের। সাধারনতঃ চুপচাপ স্বভাবের সোফালকে “কেমন আছো ?” জিজ্ঞেস করলেই, খুব ক্লিষ্ট একটা মুখ করে ও। বলে, ভাল নেই। শরীরে নানা রকম উপসর্গ, ডাক্তারদের একটাই কথা, “You know what we did to you. We put poisons in your body, Mr. Nong. Chemotherapy is simply a combination of poisons. So, don’t complain. Just ignore those pains. Live your life.” ডান পা টা টেনে টেনে হাঁটে সোফাল। একদিন বলল, ডাক্তাররা বলেছে রেডিয়েশনের সাইড এফেক্ট। যদি সারেও, সময় লাগবে। না সারলে তো কথাই নেই। গাড়ি ড্রাইভ করতে পারছে না। স্ত্রী অফিসে আনা-নেয়া করছে সেই কবে থেকে। স্ত্রীর কাজের পথের উল্টো পথে শহর উজিয়ে আসতে বেশ সময় যায়, তাই সোফালের খারাপ লাগছে। মিলি সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “It’s ok, Sophal. I am sure she doesn’t mind. You would have done the same if she were in your situation.”

সোফাল জবাব দেয়, “I don’t feel good about it. I feel like I am becoming a burden.”

সোফাল মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে শূন্য চোখে তাকায়। মিলি জানে সোফাল আড়াল করতে চায় ওর দু’চোখ।

কিছুক্ষণ পরে সোফাল হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, “Mili, I have never asked you. Do you feel the same way after cancer?”

মিলি কেঁপে ওঠে ভেতরে। ও কি করে বলবে এই স্বল্প চেনা ভিনদেশী মানুষটাকে ঝড়ের রাতে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোর কথা? হঠাৎ, ফ্ল্যাশব্যাকের মত মিলি শুনতে পায়, শাহেদের বিক্ষুব্ধ গলার “আমি কী পাপ করেছিলাম যে আমাকেই বাস করতে হবে এই বিচ্ছিরি অসুখটার সাথে?”... ভাড়া করা নতুন এপার্টমেন্টের দরজা খোলার সময় বৃষ্টির জিজ্ঞাসা, “মা, বাবা আসবে না আমাদের সঙ্গে?”... ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুনে গুনে রাতের পর রাত পার করে দেয়া...

মিলি এসবের কিছুই কাউকে বলতে পারে না। তাই জোর গলায় হেসে ওঠে বলে, “No Sophal, I never had to feel that way. I am extremely lucky.”

...৫...

দেখতে দেখতে উইন্টার চলে এলো। একদিন খুব তুষার পড়েছে। তুষার পড়া থামতে না থামতেই ফ্রিজিং রেইন। এই সময় রাস্তা, ফুটপাথ, গাড়ির উইন্ডশীল, জানালা- সবকিছুর ওপর কাঁচের মত স্বচ্ছ আর শক্ত বরফের স্তর পড়ে থাকে। রাস্তা, ফুটপাথের ওপর হাঁটা খুব বিপদজনক। পা পিছলে পড়লে হাড়-গোড় ভেঙ্গে নির্ঘাত হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ। পিচ্ছিল রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ পরিষ্কার করাও এক বিরাট ঝামেলার কাজ। একে তো ঠাণ্ডা, তারওপর বরফের স্তর পাথরের মত কঠিন হয়ে জমে থাকে। অফিসের সবাই মিলে অনুযোগ করছে কত কঠিন এই সব দিনগুলোতে স্নো পরিষ্কার করা, গাড়ি ড্রাইভ করা। নবীশ ড্রাইভার মিলি বলছে কতক্ষণ লাগে গাড়ির উইন্ডশীল্ড আর জানালায় জমে থাকা বরফ পরিষ্কার করতে। কিচেনের সেই আড্ডায় সোফালের কাছে মিলি প্রথম জানলো, গাড়ির হিটার ও ডিফ্রস্টার চালিয়ে কিভাবে ভেন্টিলেটরটা ঘুরিয়ে দিলে অল্পক্ষণের মধ্যে জমে থাকা কঠিন বরফ গলে যায়। হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ইস্পাত কঠিন বরফ ভাঙতে হয় না।

...৬...

এ বছরের সামারে হঠাৎ একদিন মিলি খেয়াল করলো বেশ কিছুদিন দেখেনি সোফালকে। নাসরীন আপাকে জিজ্ঞেস করতেই শুনলো, ভাল নেই সোফাল। ফিরে এসেছে বিচ্ছিরি অসুখটা।

তারপর নিয়মিত বিরতিতে মিলি খোঁজ নেয় লুক, ক্যারোলিন, এন্ড্রুর কাছে। কখনো শুনে দ্বিতীয় দফা কেমো চলছে...কখনো রিকভার করছে...কখনো হাসপাতালে...

একবার দেখতে যেতে চেয়েছিলো মিলি। শুনলো, ওর ফ্যামিলি প্রাইভেসী চাইছে। কাজেই যাওয়া হল না।

...৭...

সামার গড়িয়ে উইন্টার চলে এলো। ডিসেম্বর মাস। সকালে এন্ড্রু এলো মিলির কিউবিকলে, “মিলি, একটু বসতে পারি?”

মিলি হাত ইশারায় ওকে বসতে বলে। এন্ড্রুর গলা বিষণ্ণ শোনায়, “I know you kept asking about Sophal. I wanted to give you the news personally before it goes on official e-mail…he passed away yesterday.”

মিলি কিছু বলে না। এন্ড্রুও না। কয়েকটি নির্বাক মুহূর্ত।

এন্ড্রু চলে যেতেই মিলি গিয়ে দাঁড়ায় কাছের জানালাটায়। বাইরে তখন শোঁ শোঁ বাতাস। ঘুর্ণি বাতাসে উড়ছে সাদা সাদা তুষার। এই মৌসুমের এটাই প্রথম তুষার ঝড়। । রাস্তাঘাট, মাঠ, বাড়ির ছাদ, গাড়ির উইন্ডশীল, গাছের পাতা সব দখল করে নিচ্ছে মুঠো মুঠো সাদা সাদা তুষার...

...৮...

লুকের অফিসে জানালার পাশের টেবিলটাতে তিনটা কনডোলেন্স কার্ড রাখা। মিলি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বাইরের পার্কিং লটে তুষারের স্তর ভারী হচ্ছে...দূরের বাড়িগুলোর ছাদের ওপর জমাট বাঁধা তুষার...পত্রশুন্য গাছের ডালগুলোতে ঝুলে আছে পেঁজা পেঁজা তুলার মত তুষার.. জানালার পাশের চেয়ারটাতে বসে মিলি লিখতে থাকে, “My dear Sophal, you were my cancer buddy at work. Today, God made me lonely at work. I will miss you.”

নিজের কিউবিকলে বসে আছে মিলি। শুনশান নীরব অফিস। ক্রিসমাসের আর দেরী নেই। অনেকেই ছুটি নিয়ে অন্য শহরে আপনজনদের কাছে চলে গিয়েছে। মিলি উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এত নিঝুম কেন চারিদিক? কোথাও কি কোন নবীশ ড্রাইভার খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গাড়ির উইন্ডশীলের বরফ পরিষ্কার করছে না? আহ্‌ ঈশ্বর, দু’চোখ ভিজে আসে কেন?

মিলি মনে মনে বলে, “It’s OK, Sophal. God knows I love loneliness...”


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

জমাট বাঁধা একটা রিক্ততা আছে গল্পটায়। বিষণ্ণতায় ডুবিয়ে দেয়া প্রতিটি লাইন। নিখুঁত বর্ণনা। গল্পের প্রতিটি ধাপে ধাপে মিলির সাথে সাথে পাঠকও একাকীত্বে লীন হয়ে গেল

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, তাপস। মিলির কষ্টটুকু ছূঁয়ে দেয়ার জন্য।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

আপনার লেখে এভয়েড করতে হবে। টিস্যু নষ্ট করার কোন মানে হয় না

চলুক

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

গৃহবাসী বাউলের তো মন আর্দ্র হওয়ারই কথা।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারিক এর ছবি

আমার ভাইও নিশ্চয় সোফাল কিংবা মিলির মতই কষ্ট পায়। হায়, আমি যদি সে কষ্টের কিছুটা শেয়ার করতে পারতাম!

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তারিক, আপনার ভাই এখন কেমন আছেন? তাঁকে আমার অনেক অনেক শুভ কামনা জানাবেন। ঈশ্বর তাঁর মঙল করুক।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারিক এর ছবি

তাঁর মুখের একদিকের একটা চোয়াল ফেলে দিয়ে পায়ের নিচের অংশের এক টুকরো হাঁড় এনে প্রতিস্থাপন করেছে। জিহ্বাও কিছুটা কেটে নিয়েছে। তারপর একটানা কিমো আর রেডিওথেরাপি নিয়ে গেছে। এখনো পেটের সাথে লাগানো পাইপ দিয়ে খাবার নিচ্ছে। এত কষ্ট দেখে সহ্য করা খুবই কঠিন। আর, যার এই কষ্টটা হচ্ছে তিনি কিভাবে তা সহ্য করে যাচ্ছেন!

আপনাকে ধন্যবাদ। কষ্টের এই লেখাগুলো পড়ে কষ্ট আরও বেড়ে গেলেও ভালো লাগে।

সামনের উইকেন্ডে গেলে আমি নিশ্চয় তাঁকে আপনার কথা বলব।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তারিক, আপনার ভাইয়ের কথা জেনে খুব খারাপ লাগছে। আমি প্রার্থনা করছি তিনি সেরে উঠুন। ঈশ্বর তাঁকে দ্রুত রোগমুক্ত করুন, আমেন।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

জোহরা, তোমার এ লেখার এ পর্ব অনেক স্বাভাবিক লাগল। চলুক
আজ থেকে বছর দেড়েক আগের এক সন্ধ‌্যায় এক কলীগ-এর ফোন-টা এসেছিল, তার স্ত্রীর টার্মিনাল ক্যান্সার ধরে পড়েছে কয়েক ঘন্টা আগে। তারপর সাক্ষী থাকলাম এক অসীম সাহসী অসম যুদ্ধের। কয়েকদিন আগে মহিলা চলে গেছেন। কলীগের শুরু হয়েছে আর এক যুদ্ধ।
এই লাইন-এর দুটি অসাধারণ গল্প
Thom Jones-এর I Want to Live
এবং
Alice Elliott Dark-এর In the Gloaming
যদি পড়ে না থেকে থাকো এখন-ও, পড়ে ফেলতে পারো।
- একলহমা

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অমিত ‘দা পড়ার জন্য। তোমার কলিগের শুভ কামনা করছি।

গল্পগুলোর নামের জন্য আরেক দফা ধন্যবাদ। পড়ব সময়, সুযোগ করে।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

চিনির পুতুল এর ছবি

অসাধারণ লেগেছে!

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মর্ম এর ছবি

মাঝে মাঝেই মানুষ এত অসহায়- আর এই কথাটা মনে হয় যখন তখন এত বিশ্রী লাগবে!

পরশু এক ক্যান্সার রোগিকে দেখে এলাম। তাঁকে দেশের বাইরে ডাক্তাররা ফিরিয়ে দিয়েছেন, দেশেও জবাব দেয়া হয়ে গেছে- রক্ত দেয়া হচ্ছে তাই তখনো হাসপাতালে।

বলছিলেন- হাসপাতালের খাবার ভাল লাগে না! বাসায় ফিরে গিয়েই ইচ্ছেমত খাবেন!

কথা থাকে আর কোন! মন খারাপ

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কথা থাকে আর কোন!

না আর কোন কথা থাকে না, মর্ম। থাকে শুধু অসহায়ত্বের বেদনা।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রীমা মারীয়া  এর ছবি

গল্পটা অসাধারণ লেগেছে। গলার কাছটাতে ভারী কি যেন জমে উঠেছে পড়তে পড়তে!

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, রীমা, আপনার সংবেদনশীল মন্তব্যের জন্য।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

বুঝেচি, মন্ট্রিয়লে আমার সঙ্গে দেখা হলনি তাই দুঃখে এমন উদাসী উদাসী গল্প লিখছেন... চিন্তিত

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এক্কেবারে লাখ কথার এক কথা। আর কুনোদিন এরাম করবেন, কৌস্তভ? এবারে তো শুধু উদাসী গল্প লিখেই শেষ করলাম, এর পরের বারে কিন্তু গলায় দড়ি দিব, হুঁ।

আফটার অল আমি হ’লাম গে ঠাম্মি। মনে থাকে যেন, হুঁ চোখ টিপি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রাত-প্রহরী এর ছবি

আমার মা এমন জীবন পার করেছেন আট মাস। তারপর আকাশের তারা হয়ে গেছেন।
আহ্‌! এতো কষ্ট। এই কষ্টের কথা মনে থাকলে আপনার লেখা পড়বোনা আর। মন খারাপ

-------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

পলাশ, আপনার মায়ের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষাদভরা ভালো লাগা!

র.নাহিয়েন

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, নাহিয়েন পড়ার জন্য ও সহৃদয় মন্তব্য করার জন্য।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ একটি গল্প পড়লাম। মনের মধ্যে আর্দ্রতা ছড়ায়। নির্মেদ বর্ণনার প্রতিও চরম ভাললাগা।
নিরন্তর শুভেচ্ছা। ভাল থাকবেন আর বেশি বেশি স্বপ্ন দেখবেন। স্বপ্নই সম্ভাবনা।

অলওয়েজ ড্রিম।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

স্বপ্নই সম্ভাবনা।

চলুক

অনেক সময়ই স্বপ্নেরাই বন্ধু।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষণ্ন করে দিল গল্পটা।

স্বয়ম

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, স্বয়ম।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

মন খারাপ

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, ইয়াসির।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তিথীডোর এর ছবি

বড্ড মন খারাপ করা গল্প...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তবু যে পড়েছো তিথী চোখ টিপি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ফ্রিজিং -

____________________________

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

বন্দনা এর ছবি

গল্প ভাল লেগেছে আপা, তবে আপনি সবসময় দুঃখ-জাগানিয়া লেখা লিখেন কে্ন?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আপনি সবসময় দুঃখ-জাগানিয়া লেখা লিখেন কে্ন?

তাই না কি, সব সময় মন খারাপ করা গল্প লিখি? দেখি তাহলে খুঁজে পেতে একটা মন ভাল করা গল্প বলা যায় কি না!

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ছায়ামানবী এর ছবি

আম্মুর কেমো চলার সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যেত, তখন আম্মুর পাশে গিয়ে দেখতাম নিঃশ্বাস চলছে কি না। আম্মু এখন সুস্থ, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার অভ‌্যাসটা রয়ে গেছে।

আপনার গল্পটা আমাকে সেই পুরোনো দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিলো। চলুক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আপনার মাকে আমার শুভ কামনা।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ! অসাধারণ!

রাস্তাঘাট, মাঠ, বাড়ির ছাদ, গাড়ির উইন্ডশীল, গাছের পাতা সব দখল করে নিচ্ছে মুঠো মুঠো সাদা সাদা তুষার...

কি চমৎকার মেটাফোর!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, রোমেল।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।