‘ভাঙনের শব্দ শুনি’

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০১/২০০৮ - ২:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই রচনার শিরোনাম সেলিম আল দীনের লেখা একটি টিভি নাটক থেকে ধার করা। আশির দশকের গোড়ার দিকে বিটিভিতে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পাওয়া একটি মিনি সিরিয়াল। যতোদূর মনে পড়ে, এই টিভি পর্দায় হুমায়ূন ফরীদির সর্বপ্রথম খল চরিত্রে অভিনয়, অতি তরুণ বয়সে সে করেছিলো মধ্যবয়সী গ্রাম্য মাতবর সেরাজ তালুকদারের চরিত্রটি। ‘আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি, পানি’ সংলাপটি তখন মানুষের মুখে মুখে। নাটকের প্রযোজক ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

সেলিম আল দীন চলে গেলেন, কোনো ঘোষণা না দিয়ে। ৫৮ বছর কি চলে যাওয়ার বয়স? আমাদের মতো কতো হেঁজিপেঁজি মানুষ পৃথিবীতে দীর্ঘকাল বেঁচে আছি, থাকবো। সময় না হতেই চলে যাবেন সেলিম আল দীনের মতো প্রতিভাবানরা। ঠিক সুবিচার মনে হয় না।

আজ আমার মন ভালো নেই। সকালে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও গেলাম না, ইচ্ছে করলো না। সাতসকালে ঢাকা থেকে ফোন এলো পীযূষ ও ফরীদির। তার আগেই বিডিনিউজ আমাকে খবর দিয়ে দিয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় আসাদকে ফোন করি, কানাডায় দিনু বিল্লাহকে, ন্যাশভিলে রেজাকে। কারো সঙ্গেই বেশিক্ষণ কথা বলা সম্ভব হয় না। নিকটজনের প্রয়াণে যেরকম হয়।

না, সেলিম ভাই আমার রক্তসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন না, ছিলেন আত্মার আত্মীয়। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ও খুব গভীরে যায়নি। অথচ আশ্চর্য এক বাঁধনে তিনি বেঁধে ফেলেছিলেন আমাকে এবং আমার মতো আরো অনেককে তাঁর রচনা, প্রতিভা এবং অসামান্য কর্মদক্ষতায়। আমাদের মুগ্ধ ও মোহিত করে রাখলেন অনেকদিন ধরে। এবং অতঃপর প্রস্থান করলেন।

১৯৭৩-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম কেনা কয়েকটি বইয়ের মধ্যে ছিলো টিএসসি-র বুকস্টোর থেকে কেনা একটি পেপারব্যাক ‘সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য’। রচয়িতা সেলিম আল দীন। তখন তিনি উঠতি নাট্যকার, স্বাধীনতার পরে ঢাকার নতুন ধারার নাটকের প্রধান পুরুষদের একজন। ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ ততোদিনে অভিনীত হয়ে গেছে, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটছে। ঢাকা থিয়েটার গঠিত হলো, সূচনাপর্ব থেকে অন্তিম দিন পর্যন্ত সেখানে জড়িত ছিলেন তিনি।

সেলিম আল দীনের রচনা এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনার যে যুগলবন্দী তৈরি হলো ৭৩-এ, তা বাংলাদেশের নাটককে দিয়েছে অপরিমেয়। সেলিম আল দীনের রচনায় মঞ্চে এলো বাংলাদেশের প্রথম মিউজিক্যাল স্যাটায়ার ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘শকুন্তলা’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘হাতহদাই’, ‘বনপ্রাংশুল’, ‘চাকা’, ‘সাইফুল মুলক বদিউজ্জামাল’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘নিমজ্জন’। ৭৭-এ বাংলাদেশের প্রথম পথনাটক ‘চরকাঁকড়ার ডকুমেন্টারি’। টিভিতে ‘রক্তের আঙুরলতা’, ‘গ্রন্থিকগণ কহে’। এই তালিকা নিতান্তই অসম্পূর্ণ, যা তাঁর রচনার ব্যাপ্তি ধারণ করে না।

সেলিম আল দীনের নাট্যরচনার শুরু ছিলো পাশ্চাত্য ধাঁচে, কিছুটা অ্যাবস্ট্রাক্ট ধরনের। অবিলম্বে তিনি নিজের পথ খুঁজে পেলেন দেশীয় ঐতিহ্য ও লোকজ ধারা এবং প্রাচ্য দর্শনে। তাঁর সব উল্লেখযোগ্য কাজ এই ধারার।

সাহিত্যরচনা তিনি শুরু করেছিলেন কবিতা দিয়ে, বেশিদিন থাকেননি সেখানে। রসিকতা করে বলতেন, আমি তো ব্যর্থ কবি, তাই গদ্যরচনা করি।

তবে তাঁর কিছু নাটকে আশ্চর্য কাব্যময় কিছু পংক্তি আমরা পেয়েছি। স্মৃতি থেকে উদ্ধার করি ‘শকুন্তলা’ নাটকের একটি সংলাপ : আমার প্রার্থনা চৈত্রের শিমুল তুলো – লক্ষ্যহীন কেবলই উড়ে যায়, স্পর্শ করে না!

ঠিক তার বিপরীতে মানুষের প্রতিদিনের মুখের ভাষার একটি নমুনা ‘কিত্তনখোলা’ থেকে : ডালিমনের গায়ের ঘাম, চুকা চুকা গন্ধ।

অনেক বড়ো ক্ষমতাবান লেখক ছাড়া এই বৈপরীত্য ধারণ করা সম্ভব নয়। পড়াশোনায় ছিলেন অক্লান্ত, আগ্রহ ছিলো তাঁর বিচিত্র বিষয়ে। সেলিম আল দীন কীরকম বিশুদ্ধতাপিয়াসী পরিশ্রমী লেখক ছিলেন তার পরিচয় দিতে এটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে শকুন্তলা নাটকটি তিনি সতেরো-আঠারোবার লিখেছিলেন। লিখতে বসলে আহার-নিদ্রা ভুলে যেতেন, লিখতেন ঘোরগ্রস্তের মতো। এমন ঘটনাও আছে, একটা লেখা রাত তিনটায় শেষ করে ফরীদিকে ডেকে আনছেন পড়ে শোনাবেন বলে।

কবি রফিক আজাদ আজ পুত্রহারা হলেন। সেলিম আল দীনকে তিনি বলতেন বেটা, সেলিম ভাই তাঁকে বাপ ডাকতেন। বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের বন্ধুত্বে আজ ছেদ পড়লো।

সেলিম ভাইকে আমি প্রথম দেখি ৭৪ বা ৭৫-এ টিএসসির দোতলায় ঢাকা থিয়েটারের রিহার্সালে। একদিকে নাটকের মহড়া চলছে, আর তিনি মেঝেতে বসে গভীর মনোযোগে কাগজপত্র ওল্টাচ্ছেন, পাণ্ডুলিপি সংশোধন করছেন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। এরপর মগবাজারে আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ে ঢাকা থিয়েটারের মহড়া হতো, সেখানেও প্রায় একই ভঙ্গিতে তাঁকে দেখতাম। বাচ্চু ভাইয়ের পুরানা পল্টনের বাসায়ও হুবহু এক ভঙ্গিতে তাঁকে দেখেছি। সেলিম ভাইকে ভাবলে মেঝেতে বসা তাঁর এই ছবিটিই আমার মনে আসে।

একটু আগে ঢাকা থেকে আমার আরেক বন্ধু আলমগীর ফোন করে বলে, আজ আমার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে দোস্ত। সেলিম ভাই আমাদের কী ভালোবাসতেন, সেই মানুষ আজ নেই।

ঢাকায় তখন রাত একটা, বান্ধবহীন আলমগীর একা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে সেলিম ভাইয়ের জন্যে মন খারাপ করে। সেলিম ভাই আমাদের চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের বড়ো ছিলেন। হয়তো তাঁর এই প্রস্থান (নাটকীয় বলতে লোভ হয়, প্রস্থান শব্দটি নাটকে অপরিহার্য শব্দ) আমাদের ক্রমাসন্ন পরিণতির কথা ভাবায়। মনে হয় ভাঙনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর আমাদের কালের নায়করা কেউ কেউ প্রস্থান করেছেন, অনেকে প্রস্থানোদ্যত। মৃত্যুর খুব কাছে থেকে ফিরে আসা রাইসুল ইসলাম আসাদ প্রায় পঙ্গু অবস্থা কাটিয়ে নতুন করে হাঁটা শিখছে, ফরীদি হাঁপানি-নিউমোনিয়ার প্রকোপ সামলে হাসপাতাল থেকে সদ্য ফিরেছে, ফুটবলার নান্নুকে ডাক্তার জবাব দিয়ে গেছে। আমরা সবাই আসছি কিছু আগে বা পরে।

বিদায়, সেলিম ভাই। একজন অনুরাগীর অভিবাদন নিন।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি ভাবছি এই শূন্যতাসমুহ পুরন হবে কি দিয়ে?
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা সংস্কৃতিমুখীতা ও পরবর্তীদিনগুলো যে প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিল তারাই এতোদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন এদেশের মনন ও চেতনাগত বিনির্মানে ।
শত প্রতিকুলতার পর ও আমরা তাই ভাবনার জগতে নিস্ব হয়ে যাইনি ।

কিন্তু এই মানুষগুলো ফুরিয়ে যাবার পর?

আজকাল সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যাদের আইকন হবার ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে তাদের ভাবনার জগতের যে ছবি দেখি ,আমি আতংকিত হই

আগামী দিনের বাংলাদেশ ভাবলেই আমার চোখে একটা ভাবনাবিবর্জিত,বুদ্ধিবৃত্তিহীন,অসংস্কৃত শ্মশান চোখে ভাসে
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি কিন্তু অতোটা নিরাশ নই। একটা সময় ছিলো যখন আমিও আপনার মতো কিছুটা 'আতংকিত' বোধ করতাম। আপনাদের মতো পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধিদের দেখে আমার ধারণা পাল্টাচ্ছে। লক্ষণ থাকলেই যে কেউ সত্যি সত্যি আইকন হয়ে উঠবে বা টিকে থাকবে এমন কোনো কথা নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সহমত, তবে হাসান মোরশেদ ভাইয়ের ভয়টা আমার মধ্যেও কাজ করে। ইয়ো-বাজির মাত্রা দেখে ভয় লাগে। অধঃগতির কারণ নিয়ে আপনারা দুই জনেই কিছু লেখা দিলে ভাল হত। এই পরিবর্তণটা অগোচরেই অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এর কারণ অনুসন্ধান আবশ্যক।

অভাবটা কি সময়ের, নাকি সামর্থ্যের? ইচ্ছার অভাব আছে বলে আমি মনে করি না। ব্যাটে-বলে হচ্ছে না কেন? যেই সুযোগগুলোর জন্য আপনাদের প্রজন্ম অনেক অপেক্ষা করেছেন, সেগুলো এই প্রজন্ম অতি দ্রুত পেয়ে যাওয়াই কি সমস্যা? উদাহরণ, বিভিন্ন রকম মিডিয়ায় অসংখ্য আউটলেট, মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মত বাড়াবাড়ি।

আমার নিজের কাছে একটা ব্যাপার বেশি ভীতিকর লাগে। কিছু মানুষ জৌলুসের আবেদন অগ্রাহ্য করে ঠিক কাজটি করে গেছেন, ঠিক লেখাগুলো লিখে গেছেন। অনেকটা পিতাসুলভ ছিল তাদের অবস্থান। মন মানতে না চাইলেও বুঝতাম যে তাঁরাই ঠিকটা করছেন, তাঁদের পথটাই অনুসরণ করা উচিত। ইদানিং সেটা নেই আর। এখন যেন তাঁরা "মাফ করেন, চাচা"র চাচাসুলভ হয়ে গেছেন।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে সমস্যাটা প্রকট, কিন্তু এর প্রতিকার কী? কাউকে ধরে-বেঁধে লেখা শেখানো যায় বলে আমার মনে হয় না। তবে, বিদ্যমান লেখকদের নিশ্চয়ই পথ দেখানো যায়। এক্ষেত্রে ব্লগের মত প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা কেমন? উদাহরণ, ব্লগ আছে বলেই কি হাসান মোরশেদের লেখাগুলো আমরা পাই, নাকি ব্লগ আছে বলে ঔপন্যাসিক হাসান মোরশেদ হারিয়ে যাচ্ছেন ব্লগার হাসান মোরশেদের দাপটে? (দৈবচয়ন মাত্র।)

'আইকন' বিষয়ে ব্যক্তিগত একটা কৌতূহল। একটা সমাজকে ঠিক পথে রাখার জন্য কতজন আইকন দরকার এবং কী কী ক্ষেত্রে? সাহিত্যের জগতেই বা এর ভূমিকা কেমন?

একের পর এক যেসব মহারথী হারিয়ে আমরা বিষন্ন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু কবিতাজগৎ থেকে এসেছেন। নিদেন পক্ষে কবিতায় এদের বিচরণ ছিল (সাময়িক হলেও)। ভাল লেখক হতে হলে কি কাব্যমনস্কতা আবশ্যক? নাকি ঐ স্টিরিওটাইপটা আরো বেশি ভয় ছড়াচ্ছে?

ইন্টারভিউ কোয়েশ্চনেয়ারের মত হয়ে গেল! এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আপনাদের দুই জনের মতামত জানতে পারলে ভাল হত।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই মন্তব্যটা আলাদা একটা পোস্ট হিসেবে দিলে একটা ভালো ও দরকারি আলোচনার সূত্রপাত হতে পারতো। আপনি যখন করেননি, আমিই করবো খুব শিগগির।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সাহসে কুলাচ্ছিল না। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া হয়ে যেত! খাইছে আমার অনেক প্রশ্ন আছে আমার পূর্ববর্তী দুই-তিন প্রজন্মের কাছে। আলোচনাটা আসলেই দরকার। প্রয়োজনে এই নিয়ে পোস্টাকৃতির লেখা নিয়ে বe করা যায়। আমি চেষ্টা করবো নাহয় আমার চিন্তা/প্রশ্নগুলো গুছিয়ে পোস্ট হিসেবে দিতে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বe-এর আইডিয়াটা পছন্দ হলো। শুরু করে দিন। ড্রামরোল ...

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

সহমত। এই আলোচনাটা খুব জরুরী। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যেই মননকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, সেই বন্দোবস্ত অনেকটাই বদলে গেছে। নতুন আর্থ-সামাজিক এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটা জাতির মনন কোন দিকে এবং কিভাবে বদলে যেতে পারে, সেটার টেস্ট কেস বাংলাদেশ। শুরু হোক নতুন করে আলোচনা - খুবই ইন্টারেস্টিং হবে। আপনার ওপেনিং ডেলিভারির অপেক্ষায়...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ইশতিয়াক রউফের বe-এর প্রস্তাবে আমার সমর্থন জানিয়েছি। এখন তাঁর উদ্যোগের অপেক্ষায়।

এই বিষয়ে একটি পোস্টে বোধহয় কুলিয়ে ওঠা যাবে না। তা ছাড়া দীর্ঘ মন্তব্য পড়ার চেয়ে আলাদা পোস্ট অনেক আরামদায়ক। বe হলে আলাদা পারস্পেকটিভও পাওয়া যাবে। কী বলেন?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আপনার থেকেই প্রথম পোস্ট আশা করতেছি এই বিষয়ে। ব-e ট-e পরের ব্যাপার।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তথাস্তু। তবে একটু সময় চাই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

মন্তব্য নেই ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মৌনব্রত অক্ষয় হোক।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

থার্ড আই এর ছবি

'নীল নীল কষ্ট' গুলো আরো নীল হয়ে উঠবে...
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ সঙ্গী হওয়ার জন্যে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার লেখা থেকে অনেক বেশী করে জানলাম সেলিম আল দ্বীন কে।

ভাই আপনিও তো অসাধারণ লেখেন!!

হয়তো তাঁর এই প্রস্থান (নাটকীয় বলতে লোভ হয়, প্রস্থান শব্দটি নাটকে অপরিহার্য শব্দ) আমাদের ক্রমাসন্ন পরিণতির কথা ভাবায়।

মুগ্ধ হয়ে রইলাম!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সেলিম আল দীনকে এই সামান্য রচনায় কিছুই চেনা যাবে না, বড়োজোর একটা ভূমিকামাত্র হতে পারে। তবু আপনার ভালো লাগলো জেনে ভালো লাগলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমি এখনো ভাবতে পারছি না। স্যারকে দেখতে পাচ্ছি। কলাভবনের সামনে ফস্ করে সিগারেট ধরিয়ে হা হা করে হাসছেন।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনি কিছু লিখলে খুব ভালো হয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কনফুসিয়াস এর ছবি

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

====================
অবিরাম ছুটে চলায় হঠাৎ থমকে যাওয়া

'

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

মুজিব মেহদী এর ছবি

তাঁর কিছু নাটকে আশ্চর্য কাব্যময় কিছু পংক্তি আমরা পেয়েছি।
এটা তিনি সচেতনভাবেই করতেন।
তাঁর একটি তত্ত্ব আছে, নাম দ্বৈতাদ্বৈতবাদ। এ মতবাদে শিল্পআঙ্গিকসমূহের অবিভাজ্যতার কথা বলা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে রচিত শকুন্তলা পর্যন্ত তিনি তাঁর লেখালেখিতে পাশ্চাত্য দর্শন দ্বারা চালিত হন। তবে এর পরে তিনি যা কিছু রচনা করেছেন সবই তাঁর ওই দ্বৈতাদ্বৈতবাদী তত্ত্বকে সমর্থন করে। ২০০৫-এ মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশিত তাঁর রচনাসমগ্র-১ এর ভূমিকায় এ বিষয়ে তিনি বলছেন ...[i]শকুন্তলা পরবর্তী কাল থেকে আমি শিল্প আঙ্গিকে দ্বৈতাদ্বৈতবাদী। কিত্তনখোলা কেরামতমঙ্গল হাতহদাই চাকা প্রভৃতি লেখার মধ্যে আমি কাব্য সঙ্গীত উপন্যাস উপাখ্যানের অন্তর্গত সুরকে একটি মাত্র আঙ্গিকে সমাহৃত করতে চেয়েছি।[/i]

জুবায়ের ভাই, আপনার দেয়া তাঁর রচনার তালিকায় যুক্ত 'সাইফুল মুলক বদিউজ্জামাল' নামটা নিয়ে আমার সংশয় আছে। এটি একটি কিসসাপালার নাম বলে জানি। এটি সেলিম আল দীনের রচনা কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। এ ব্যাপারে কি আরেকটু তথ্য দেয়া যাবে ?
..................................................................................
আজ আমি মেঘের বিস্তারে
ইচ্ছাহীন নির্বিরোধ প্রণত হলাম।
সেলিম আল দীন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান তথ্য/ব্যাখ্যা ও মন্তব্যের জন্যে। আসলে আমার হাতের কাছে বইপত্র তেমন কিছুই নেই। যা কিছু লিখেছি তার অধিকাংশ স্মৃতি থেকে। সাইফুল মুলক নিয়ে আমার দেওয়া তথ্য সঠিক না-ও হতে পারে। যাচাই করে নেবো। আপনি যদি কিছু জানতে পারেন, জানালে খুশি হবো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যাচাই করে জানা গেলো, 'সাইফুল মুলক বদিউজ্জামাল'-এর কাহিনী অবলম্বনে সেলিম আল দীন লিখেছিলেন নাটকটি। রচিত হয়েছিলো গ্রাম থিয়েটারের জন্যে, মঞ্চস্থও হয়েছিলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ফারুক হাসান এর ছবি

যখন ভান্ডারে মণিমুক্তো জড়ো হতে থাকে তখন কেউ সেই জড়ো হওয়া মুক্তোর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাই না, ভুলে থাকি যারা আমাদের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেন তাদেরকে।
তারা চলে যাবার পর আমাদের সম্বিত ফিরে পাই, হায়, কার কাছ থেকে পাবো আর সেই সাহিত্যের মালা, সেই নাটকের মুক্তো!
জুবায়ের ভাই, আপনার পোস্টটিতে জ্বলজ্বল করছে সেই মণিমুক্তোর নামগুলি, যা সেলিম আল দীন আমাদের দান করে গেছেন, কোনোদিনই যিনি দান করবেন না আর!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

জ্বলজ্বল করছে সেই মণিমুক্তোর নামগুলি, যা সেলিম আল দীন আমাদের দান করে গেছেন, কোনোদিনই যিনি দান করবেন না আর!

সেলিম আল দীন যা দিয়ে গেছেন তা কিছু কম নয়। আমরা অহংকার করতে পারি। আর তাঁর কাছে যা পাওয়া হলো না, আর হবে না - তা নিয়ে দুঃখবোধ ছাড়া আর কী করতে পারি? বরং এই আশা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে পারি, ভবিষ্যতে অন্য কেউ সেই অসমাপ্ত কাজগুলি করবেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নামহীন এর ছবি

কাল রাতে আমিও উদত্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ালাম ঢাকার রাস্তায়। চিৎকার করে কাঁদতে পারলে হয়তো একটু স্বস্তি পেতাম! ভাল লাগছে না কিছুই...
স্যার নেই; বিশ্বাসই হচ্ছেনা। জীবন এতো ছোট কেনো?
জুবায়ের ভাই ভাল থাকবেন, আপনার মনের অবস্থাটা ঠিক বুঝতে পারছি!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

স্যার নেই; বিশ্বাসই হচ্ছেনা। জীবন এতো ছোট কেনো?

একসময় বিশ্বাস হবে। করতে হবে। তখন আমরা হিসেব কষতে বসবো আমরা আসলে ঠিক কী এবং কতোটা হারালাম।

কাল ভাবছিলাম আমাদের চার চারজন আইকন - সেলিম আল দীন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আজাদ - ষাট বছরে পৌঁছাতে পারলেন না।

ভালো কথা, মন্তব্য করলেন অথচ নাম-পরিচয় জানালেন না কেন? ধন্যবাদ আপনাকে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

এই লেখাটার অপেক্ষায়ই ছিলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সৌরভ এর ছবি

হাসান মোরশেদের ভয়টাই আমাকে গ্রাস করে।
আমাদের মননের অভিভাবকের স্থানগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ধূপছায়া এর ছবি

হারিয়ে গেলেই খুঁজি তারে
দিব্য আলোয় দেখি না...

নজমুল আলবাব এর ছবি

পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল চোখের সামনেই সবকিছু দেখছি।

মোরশেদ যে আশঙ্কা করলেন সেই একি আশঙ্কা আমাকে প্রতিদিন প্রতিক্ষন দাবড়ানি দেয়।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সৌরভ ও নজমুল আলবাব, আপনাদের আশংকাগুলির হয়তো একটা ভিত্তি আছে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে হয় আমার। এ বিষয়ে আরেকটু বিশদ আলোচনা হবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

শ্রদ্ধা প্রায় কৈশরে টিভিতে দেখেছি, ভাঙনের শব্দশুনি। আরেকটু বড় হয়ে তাঁর মঞ্চ নাটক- মুনতাসীর ফ্যান্টাসি, কেরামতমঙ্গল, বনপ্রাংশুল -- ইত্যাদি। এই গুনী সম্পর্কে আর কী বলবো? শুধু এইটুকু বলি:

মৃত্যূতেই থেমে যায় না জীবন। সেলিম আল দীনের মৃত্যূ নেই!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সেলিম আল দীন আমাদের আরো বহু বহু কাল উজ্জীবিত করবেন তাতে সন্দেহ নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।