দেশটি যে আমার!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: বুধ, ২৬/০৩/২০০৮ - ৫:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

… দেশের সংবাদের জন্যে এতো যে আগ্রহ, অধীরতা আমার, অনেকটা হয়তো নেশাগ্রস্তের মতো, কিন্তু কী দেখবো বলে আশা করি প্রতিদিন? স্পষ্ট কোনো উত্তর জানা নেই। ঘটনা-দুর্ঘটনা, হানাহানি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিপুল বিস্তার আর হতাশার খবরে ভরে থাকে কাগজ। দৈনিক দুঃসংবাদ নামে একটি কাগজ থাকলে খুব উপযুক্ত হতো বলে মনে হয়। কাগজে আর থাকে রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতা ও অদূরদর্শিতার লজ্জাহীন বিস্তারের সংবাদ – দেশ নয়, দেশের মানুষ নয়, তাদের ভালোমন্দে কিছু এসে যায়না, আমি এবং আমার দলই একমাত্র বিবেচ্য। এইসব দেখে দেখে ভারি ক্লান্ত লাগে, বিষাদে মন ভরে যায়। কখনো এমনও মনে হয়, প্রতিদিন একই খবর পড়ছি। ভাবি, কী হবে আর দেখে, একদিনের কাগজ দেখলে সারা বছরের খবর পাওয়া হয়ে যায়। অথচ পরেরদিন নির্ধারিত সময়ে আবার ইন্টারনেটে না গিয়ে উপায় থাকে না আমার – মনে হতে থাকে আজই হয়তো অন্যরকম কোনো একটি সংবাদ দেখবো। আমার দেশে নতুন ও সুন্দর কিছু একটা ঘটে যাবে আর আমি যথাসময়ে সে সংবাদটি জানতে পারবো না, তাই হয়! বাস্তব এই যে বাস্তবে কিছুই ঘটে না, সুসংবাদের অপেক্ষায় দিনের পর দিন চলে যায়, তবু আমার আশা মরে না। অন্তিম বিচারে আশা নিয়েই হয়তো মানুষ বেঁচে থাকে।

… তোমার এবং আমার স্মৃতিমন্থন করার কারণও কিছু আছে! সেদিন আমাদের প্রাণে অর্জনের অহংকার ছিলো, দুই চোখ ভরা স্বপ্নের দ্যুতি ও বিস্তৃতি ছিলো। আকাশতুল্য অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আমরা টগবগ তখন করছি, আমাদের সামনে কী আলোকময় অলৌকিক একটি ভবিষ্যৎ!

এই দিনে আজ সুদূর মনে হওয়া অনতিদূরের সেইসব কথা কি আমাদের স্মরণে আসবে না? মাঝখানের বছরগুলোকে ভাবলে ভুল, ব্যর্থতা ও হতাশার কথা আসবে, তা-ও নিশ্চিত। বিস্মৃত হতে আমরা প্রায়শ সচ্ছন্দ, হয়তো এই বিস্মৃতি না ঘটলে আমাদের দুঃখ-হতাশার আর শেষ থাকতো না, সর্বনাশে সম্পূর্ণ নিমজ্জন অমোচনীয়ভাবে ঘটে যেতে পারতো। তবু এই দিনটিকে স্মরণ না করে আমাদের উপায় নেই।

আজ আমাদের সেইসব স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সবই ভুল ও ব্যর্থ হয়ে গেছে বলে মনে হয়। বস্তুত আমাদের ব্যর্থ স্বপ্নের গল্প অগণন। এতোদিন হয়ে গেলো, তবু কিছু অর্জনের গরিমা নেই আমার দেশের, অর্থ-বিত্তের অহংকার নেই। আছে যতোটুকু, নেই তার থেকে ঢের বেশি। দারিদ্র্য নামে যা আছে অপরিমেয়, তাকে লোকে ভালো চোখে দেখে না, অভাবীদের গৌরব যদি কিছু থাকেও, নিত্যদিনের ক্লিন্নতার আড়ালে তা অনায়াসে ঢাকা পড়ে যায়। তা-ও সহনীয় হতে পারতো, কিন্তু আমার দেশ জগতের সেরা হয় দৈনন্দিন অসততা ও অসদুপায়ের জন্যে। রাজনৈতিক কোলাহলে সে সারা পৃথিবীর নিন্দা কুড়ায়। রাষ্ট্রপ্রধান হত্যায় আমাদের দক্ষতা একসময় রাষ্ট্র হয়ে যায় বিশ্বময়। নিত্যদিনের খুনখারাবিতে মানুষের জীবনই সর্বাপেক্ষা শস্তা ও সুলভ পণ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ক্ষমতাধররা লোভ ও নির্লজ্জতার নতুন নতুন শীর্ষ আবিষ্কার করে এবং সেই শীর্ষে তাদের আরোহণপর্বটি ঘটে সাড়ম্বরে, অকম্পিত ও অপরিবর্তিত মুখে। মানুষের কোনো কীর্তি বা সাফল্য নয়, বন্যায়-মহামারীতে-দুর্ভিক্ষে বছর-বছর পৃথিবীর তাবৎ সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় আমার দেশ। এতো যে নেই নেই, পর্বতপ্রমাণ আমাদের অক্ষমতা ও ব্যর্থতা, স্বপ্নভঙ্গের বিষাদ – তারপরেও মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলা কি মানায়!

তবু এই রুগ্ণ করুণ অসহায়, ক্ষুদ্র ভুখণ্ডটির জন্যে অতি উচ্চ একটি গৌরবস্তম্ভ ও শর্তহীন ভালোবাসা নিজের ভেতরে যত্নে লুকিয়ে রাখি। দেশটি যে আমার!

--------------------------------------------------------
স্বাধীনতা দিবসে আজ নতুন লেখা তৈরি করার ইচ্ছে ছিলো, সময় করা গেলো না। পুরনো একটা লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃত করে দিলাম। পুনরাবৃত্তির জন্যে ক্ষমা চেয়ে রাখি।


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

... তাই তো দেশমাতৃকা বলি। ভালবাসি বাংলাদেশ হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অমর অক্ষয় হোক এই ভালোবাসা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমার সকল ভালোবাসার শিকড় তো এটাই
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

শিকড়টি যেন সজীব থাকে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আসাদুজ্জামান রুমন এর ছবি

দেশটির জন্য যত্ন করে পুষে রাখা ভালোবাসার পাশাপাশি চাই পরিষ্কার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের পথ। না হলে পরবর্তী প্রজন্ম তো "আমাদের কিছু আছে" , এই কথাটাই বেমালুম ভুলে যাবে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি আশাবাদী মানুষ। কিছুই হারাবে না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তীরন্দাজ এর ছবি

মুলের প্রতি টান! বড্ড বেশী তীব্র। দেশে গেলে আরো বেড়ে যায়, আরো মূলের দিকে টানে। দেশে যাবার পর রাঙ্গামাটি, কক্সসবাজার, সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরে পরিতৃপ্ত। কিন্তু একদিনের জন্যে কুমিল্লার গ্রামে গিয়ে যতোটা তৃপ্তি, তার কাছাকাছি কিছুই নয়।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মুলের প্রতি টান! বড্ড বেশী তীব্র।

আপনার মতো আমিও পরবাসী। আপনার অনুভব আমি ঠিক বুঝতে পারি। মাঝে মাঝে ভাবি, দেশে বাস করলে কি তা অন্যরকম হতো?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আজ কেনো জানি জুবায়ের ভাইয়ের লেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যা লিখতে চেয়েছিলাম, তা তো হলো না। দেখি আজ সময় করে উঠতে পারি কি না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি আশাবাদী .... সচলায়তনের উদাহরনটাই ধরুননা ...এই যে দেশকে নিয়ে, ইতিহাস নিয়ে এত সচেতন আমাদের তরুণ প্রজন্ম, এমনটা কিন্তু দুনিয়াজুড়ে খুব কম ....আমরা একদিন উঠে আসবোই

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঠিক আমার কথাটাই আপনি বলেছেন। আমিও কিন্তু আমার রুগ্ণ দেশটির জন্যে একটি সুউচ্চ গর্ব ধারণ করে রাখি। দেশটি যে আমার!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ঝরাপাতা এর ছবি

হোক গরীবেরই দেশ, হোক অবহেলিতেরই দেশ,
তবুও আমার বাংলাদেশ।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।