'জানো খোকা তাঁর নাম?'

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: বুধ, ০১/০৮/২০০৭ - ৮:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জানুয়ারির দশ, ঊনিশশো বাহাত্তর। থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগে শীতকালের ওই দিনে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ তাকিয়ে ছিলো আকাশের দিকে। একবুক ভরা দুরু দুরু তাদের আশা। আনন্দ-অহংকার- শোক-বিষাদ মিলিয়ে বাংলাদেশে সে এক আশ্চর্য সময়।

মাত্র পঁচিশ দিন আগে শেষ হওয়া যুদ্ধে বিজয়-উল্লাসের সঙ্গে মিলেমিশে আছে ক্রমশ-প্রকাশমান হৃদয়বিদারক নিষ্ঠুর গণহত্যা ও স্বজন হারানোর কাহিনী, নির্যাতিত নারীদের নির্মম স্তব্ধতা। এমন একটি পরিবার সেদিনের বাংলাদেশে ছিলো না যেখানে এইসব বিষাদ-বিষণ্নতার গল্প নেই।

নয় মাসের যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত একটি নতুন দেশ। কিন্তু তারপরেও আমরা সেদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কারণ ওই আকাশপথেই আসবেন পরম নিকট অথচ স্বপ্নের একজন মানুষ। তিনিই পারেন কোটি কোটি বাঙালির শোক ও ক্ষতের উপশম ঘটাতে। সবাই জানে, তিনি ফিরে এলে সব হবে। এই দেশ সোনার দেশ হবে, তিনি বলেছেন। রক্তমাংসের মানুষ হয়েও তিনি সেদিন কিংবদন্তীর সমতুল্য। মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনের আগে দশটি মাস বাংলাদেশের এমন কোনো ঘর ছিলো না যেখানে তাঁর জন্যে প্রার্থনার হাত ওঠেনি। প্রার্থনা ছিলো, ফিরে এসো তুমি আমাদের স্বপ্নপূরণের দূত হয়ে।

হায়, দুঃখ এই যে মানুষের প্রার্থনা চিরদিন শুধু প্রার্থনা হয়েই থেকে যায়। পাওয়া হয় না। সেই মহাপুরুষপ্রতীম মানুষটি শেষ পর্যন্ত রক্তমাংসের আরেকজন সাধারণ মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলন কতো অল্প সময়ের মধ্যে!

যে ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস মানুষ অর্পণ করেছিলো তাঁকে সর্বান্তঃকরণে, কী নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলেন নিজেকে তার যোগ্য প্রমাণ করতে! তাঁকে সামান্যতম অসম্মান না করে বা তাঁর অসাধারণ সাফল্যকে মনে রেখেও বলতেই হবে, শেষ পর্যন্ত তিনি একজন ব্যর্থ শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করেছিলেন। মানুষকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি, সকলকে বিশ্বাস করতেন সর্বান্তঃকরণে, মানুষের মঙ্গলচিন্তায় একাগ্র ছিলেন, তাদের দুঃখকষ্টে কাতর হওয়ার গুণও তাঁর ছিলো।

কিন্তু এইসব মানবিক গুণ সফল শাসক হওয়ার প্রতিবন্ধক, তা তিনি জানেননি। কেবলই পিছুটান ও বোঝা হয়ে ওঠে তাঁর বিশাল মমতাময় হৃদয়টি। সফল শাসকদের কিছুটা অনুভূতিনিরপেক্ষ হতে হয়, আবেগ ও যুক্তির ভারসাম্য রচনা করতে হয়। অথচ সেখানেই তিনি বড়ো বেশি মানুষ ছিলেন, মানবিক ছিলেন। ফলে, শেষ বিচারে তিনি দেশের কাণ্ডারী হয়েও থেকে গেলেন শুধুই একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে, স্বপ্নপূরণের কোনো কৌশলই যাঁর জানা নেই।

ব্যর্থতার অনেক কারণ যুক্তি হিসেবে আনা যাবে _ পারিপাশ্বর্িকতা, জগৎ-রাজনীতি, ক্ষমতাবান বিশ্বের কূটতৎপরতা - এসবই সত্যি। কিন্তু তাতে ভুল ও ব্যর্থতার চিহ্নগুলি মুছে যাবে না। বিজয়ীকেই মানুষ বীরের সম্মান দিয়ে থাকে, পরাজিতকে নয়। সেরা খেলোয়াড়টি খেলেনি বলে আমার প্রিয় দল পরাজিত হয়েছে - এই যুক্তি ভক্তের সান্ত্বনা হতে পারে, ফলাফল তাতে পরিবর্তিত হয় না। পাঁচ-দশ বা পঞ্চাশ বছর পরে ফলাফলটিই শিরোনামে থেকে যায়, পরাজয়ের কারণ সেখানে গৌণ।

শেখ মুজিব তাঁর যুদ্ধের প্রথম অর্ধেকটা জিতেছিলেন প্রবল পরাক্রমে। তাঁর সাহস, দেশপ্রেম, সুবিবেচনা, মানুষকে সংগঠিত করার প্রায় অলৌকিক ক্ষমতা, নিয়মতান্ত্রিকতার গণ্ডিতে থেকেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অনিবার্য করে তোলার কৃতিত্ব - এইসব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার সুযোগ নেই। করলে তা শুধুই কুতর্ক এবং দুঃখের কথা, এরকম কুতর্ক করার মতো মানুষের অভাব বাংলাদেশে আজও নেই।

অকালপ্রয়াত আহমদ ছফা শেখ মুজিবের রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন, কিন্তু যুক্তিবাদী বলেই তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হয়েছিলো : "বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত-পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে। ... বস্তুত বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়, 'আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।' ... শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতির মহান স্থপতি এবং একজন মহান পুরুষ। সমস্ত দোষত্রুটি, রাজনৈতিক প্রমাদ এবং সীমাবদ্ধতাসহ বিচার করলেও তিনি অনন্য। শেখ মুজিবুর রহমানের তুলনা স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান।" বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শেখ মুজিবের ভূমিকা অস্বীকার করা মানুষদের সম্পর্কে ছফা তীব্র ও স্পষ্ট ভাষায় লিখেছিলেন : "বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক না থাকার যে লজ্জা, যে গ্লানি, সেটুকু ঢাকার অপকৌশল হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে তারা অক্ষম।"

কিন্তু শেষ পর্বে শেখ মুজিবের অসহায় পরাজয় ও ব্যর্থতা করুণ এবং অবীরোচিত। আজ তাঁকে নিয়ে যে বিতর্ক, বিক্ষোভ, কিছু বিদ্বেষ - তার কারণগুলিও যে অংশত তাঁর নিজেরই তৈরি তা-ও তো অস্বীকার করা চলে না।

সাহস ও বীরত্বের জন্যে মহাপুরুষের সম্মান তাঁর প্রাপ্য। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার ঘটনা পৃথিবীতে প্রতিদিন ঘটে না, সেই অতি বিরল কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেছিলেন। বাঙালির যুগ-যুগান্তরের অবদমিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাটিকে তিনি বাস্তব করে তুলেছিলেন আপন যোগ্যতার বলে। অথচ বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও তাদের হৃদয়ের নিঃশর্ত আস্থা পেয়েও অনেকটা যেন খেলাচ্ছলেই উদাসীন রাজার মতো সব হারিয়ে ফেললেন।

বাহাত্তরের জানুয়ারিতে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে কী না হতে পারতো এই দেশে। তাঁর মুখের কথায় গণআত্মাহুতি দেওয়ার জন্যে কয়েক লক্ষ মানুষ পাওয়া তখন অসম্ভব ছিলো না। সেই সময়টিকে যাঁরা দেখেননি, তাঁদের পক্ষে এটি অনুমান করাও অতি দুরূহ। তবু তিনি ব্যর্থ হলেন। ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্ত নিতে লাগলেন, পিছু হটতে বাধ্য হলেন। মিত্রদের থেকে একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘেরাও হয়ে থাকলেন পরীক্ষিত অবিশ্বস্তদের মধ্যে। তাঁর অসময়োচিত ও নৃশংস মৃত্যু এক অর্থে আত্মহত্যারই শামিল, তিনি নিজেই তা অনিবার্য করে তুলেছিলেন বলে মনে হয়।

বাহাত্তরের জানুয়ারির দশ তারিখেই সম্ভবত এ দেশের মানুষের সর্ববৃহৎ আশাভঙ্গের বীজটি রোপিত হয়েছিলো। ওই দিনের মতো এমন তীব্র একাগ্রতা নিয়ে বাঙালি আর কোনোদিন কারো কাছে কিছুর আশা করেনি। শেখ মুজিবের মতো একজন মানুষ আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে বাঙালির ইতিহাস গৌরব করতে পারে। আহমদ ছফা লিখছেন : "আজ থেকে অনেকদিন পরে হয়তো কোনো পিতা তাঁর শিশুপুত্রকে বলবেন জানো, খোকা, আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যাঁর দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তাঁর ভালবাসা। জানো খোকা তাঁর নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।"

==========================

সামহোয়্যারইন-এ প্রকাশিত হয়েছিলো জানুয়ারি ২০০৭-এ।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

স্পষ্ট দ্বিধাহীন কন্ঠে বলি- আমি এই মানুষ মুজিবকে ভালোবাসি ।
তাঁর পরে গত ৩২ বছরে এলো যারা, তার চেয়ে অনেক দক্ষ,অনেক সেয়ানা, অনেক কৌশলী ছিলো তারা- কিন্তু ঐ যে দেশকে ভালোবাসা,দেশের মানুষকে ভালোবাসা-শেখ মুজিব এক ও অনন্য ঠিক সেখানেই ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমিও শেখ মুজিবের দেশপ্রেম ও সাহসিকতার অনুরাগী। তাঁর রাজনীতি বা দল নিয়ে কোনো বিশেষ প্রীতি নেই। এমন একজন মানুষ আমরা আর পাবো না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তারেক এর ছবি

আপনাদের দুইজনের মন্তব্য যোগ করলেই আমারটা হয়ে যায়। হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মাহবুব সুমন এর ছবি

বংগবন্ধুর ডাক নামও " খোকা "।
একজন মানুষ যাকে শ্রদ্ধা করি অন্তর থেকে।

অচেনা এর ছবি












"বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত-পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে। ... বস্তুত বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়, 'আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।'

আর দাবায়ে রাখতে পারবানা
এক হাজার, দেড় হাজার বা দুই হাজার বছরের গোলাম
জাতির ইতিহাসে এত সুন্দর শৈল্পিক কথা আর কেউ বলতে
পারে নাই।

-------------------------------------------------
আমি ভালবাসি বিজ্ঞান
আমি ঘৃণা করি জামাত॥

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শেখ মুজিব অভিন্ন বলে কৃতজ্ঞ জাতি হিসেব আমরা তাঁর নামে সর্বাধিক কুৎসা রচনা ও রটনা করেছি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অচেনা এর ছবি

জুবায়ের ভাই 'গোলাম জাতি' খিয়াল কইরা।

-------------------------------------------------
আমি ভালবাসি বিজ্ঞান
আমি ঘৃণা করি জামাত॥

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঠিক। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেই মনের গোলামি যায় না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৌরভ এর ছবি

সবাই সব কথা বলে দিয়েছে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অরূপ এর ছবি

বরাবরের মতো ভালো লাগলো। ৭১ থেকে ৭৫ সময়কাল নিয়ে আরো লেখা পেলে ভালো হতো। ধন্যবাদ
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ, অরূপ। ৭১-৭৫ এবং তৎপরবর্তী সময়ের কথা কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। দেখা যাক, কবে গুছিয়ে বসতে পারি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৌরভ এর ছবি

আমিও শুনতে চাই এই সময়টার কথা।
অগ্রীম বুকিং দিলুম পড়ার।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

৭১ থেকে ৭৫ নিয়ে আসলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বেশি বেশি লেখা দরকার।
আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অরূপ / সৌরভ / আরিফ, আপনাদের আগ্রহের জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু একটু দ্বিধা আছে আমার নিজের। আমি যা লিখতে পারবো তা ইতিহাস নয়, নিছকই ব্যক্তিগত অবলোকন ও স্মৃতিকথা ধরনের হতে পারে বড়োজোর। তাতে কারো আগ্রহ থাকবে কি?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অরূপ এর ছবি

জুবায়ের ভাই এর ধোলাই খাওয়ার সময় উপস্থিত রেগে টং
আপনার লেখা বায়াস্ড মনে হয় না, বিভ্রান্তির ইতিহাসের চেয়ে একজন মুহম্মদ জুবায়েরের স্মৃতিকথা গুলোই না হয় শুনলাম। আপনি বলবেন, জালাল ভাই বলবে, এই সব গল্প শুনে আমরা ইতিহাসটা কল্পনা করে নেব..
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মুহাম্মদ জুবায়ের, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান তো আর আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবে না। একজন মাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান থেকে ইতিহাস উপাত্তও সংগ্রহ করবে না।
সুতরাং নিশ্চিন্তে লেখুন। এ হবে আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার ভাবনা-চিন্তার প্রতিফলন। আপনি যদি নিজের কাছে সত্ থাকেন তবে সেটাই হবে ইতিহাস।
শুরু করুন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সবজান্তা (অচল - বর্ত্মানে পাইপলাইনে) এর ছবি

"৭১ থেকে ৭৫ নিয়ে আসলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বেশি বেশি লেখা দরকার।"

সত্য কথা।

একটা মিথ্যা দশ বার বললে তা সত্যের মত শোনায়। আর এরই ফায়েদা তুলে জামাত শিবির। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে তাই সত্যকে তাই ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। ইতিহাসের বিকৃতিরোধকল্পে এর বিকল্প নেই।

একজন শেখ মুজিব, একজন লিজেন্ড। হ্যালির ধুমকেতু তাও শতাব্দীতে একবার আসে, একজন শেখ মুজিবের আসার সম্ভাবনা তার থেকেও কম। হয়ত তিনি শাসক হিসেবে আংশিক ব্যর্থ,কিন্তু তা তার প্রতিচ্ছবিতে বিন্দুমাত্র চির ধরাতে পারেনি বলেই আমার বিশ্বাস।

তাকে প্রকৃত সম্মান দিতে ব্যর্থ হলে, তার তিলমাত্র যায় আসে না, কিন্তু সেই ব্যর্থতা আমাদের জন্য অনেক ভারী হবে, যা আমাদের সামনে চলার পথ কে করে দিবে অমসৃণ, বন্ধুর।

পরিশেষে ধন্যবাদ, চমৎকার একটি লেখার জন্য। আরও পড়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম।

ঝরাপাতা এর ছবি

হ্যাঁ, আহমদ ছফার গুরু (যদ্যপি আমার গুরু) আব্দুর রাজ্জাক স্যারও বলেছিলেন, ইতিহাস শেখ মুজিবকে স্টেটম্যান হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো, কিন্তু তিনি হয়ে গেলেন পলিটিশিয়ান। আপনার লেখা ভালো লাগলো খুব। সেসময়ের ঘটনাগুলি জানতে চাই। বিশেষ করে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠার কথা বললেন। সে প্রেক্ষিতে যদি কিছু জানাতেন।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হিমু এর ছবি

জনগণের নেতা মুজিবের গুণ, আর শাসক মুজিবের ত্রুটি, দু'টি নিয়েই আলোচনা জরুরি। ত্রুটির কথা জানতে হবে শিক্ষা নেয়ার জন্যে। স্তাবকদের পাল্লায় পড়ে মুজিব সব হারালেন, সেই স্তাবকদের মশাল আর বহন করা নয়। তাঁর মাপের একজন নেতা কী ভুল করলেন, কেন ভুল করলেন, সেগুলি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

জুবায়ের ভাইয়ের কাছে আরো নিয়মিত পোস্ট পাওয়ার প্রত্যাশা বেড়ে গেলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুজন চৌধুরী এর ছবি

সবার মতো আমিও অপেক্ষায় রইলাম পড়ার জন্য (৭১-৭৫)।

___________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অরূপ ঘুমের চেয় যেমন নামাজ উত্তম তেমনি ধোলাই খাওয়ার চেয়ে লেখা উত্তম মেন করি। হাসি কারণ ওই কাজটাই মনে হয় একটু-আধটু পারি। শান্তির জায়গাও। আমাকে আপনার বায়াসড মনে হয়নি জেনে খুশি হলাম। কারো কাছে যেহেতু মাথা বন্ধক দেওয়া নেই, কারো সাফাই গাওয়ার দায়ও নেই। কিন্তু একটা বিপদ আছে। শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু না বললে আওয়ামী লীগের পক্ষেরা তাদের শত্রু জ্ঞান করে। আবার জয় বাংলা বললে আওয়ামীপন্থীর তকমা জুটে যায়। এই সরলীকরণে খুব বিরক্ত লাগে।

শোমচৌ আপনারা উৎসাহ দিলে সাহস দিলে নেমে পড়তে পারি। আমার মতামত বা অবলোকন হয়তো কারো কারো পছন্দ না-ও হতে পারে, কিন্তু ঘটনার বিকৃতি হবে না। নিজের কাছে সৎ থাকতে পারবো, এইটুকু কথা দেওয়া যায়।

সবজান্তা আপনার সঙ্গে একমত। লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্যে কৃতজ্ঞতা।

ঝরাপাতাযে লেখাটার কথা হচ্ছে, লিখে উঠতে পারলে আপনার কৌতূহল ও জিজ্ঞাসার উত্তরের কাছাকাছি যাওয়া যাবে মনে হয়। অন্তত আমার চোখ দিয়ে।

হিমু আপনার পরিষ্কার বিশ্লেষেণর ধরণটি আমার ভালো লাগে। ছোটো কথায় খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন শেখ মুজিব সম্পর্কে। আর লেখা বেশি পাওয়া বিষয়ে যা বললেন, আমার হৃৎকম্প ধরানোর জন্যে যথেষ্ট। হাসি

সুজন চৌধুরীধন্যবাদ আপনার আগ্রহের জন্যে।

মাহবুব সুমন ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

সবাই যা বলার বলে দিয়েছেন। জুবায়ের ভাইয়ের কাছে আমার প্রত্যাশাও অন্য সবার মতই!


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিলেন। প্রত্যাশামতো পেরে উঠবো তো?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

অবশ্যই পারবেন... ১০০ ভাগ নিশ্চিত আমি...


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

লেখাটা নিয়ে যতো ভাবছি, ততো হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

পড়ে ভাল লাগল ,,,
"কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। " এই ভালবাসাটাই কাল হয়েছিল, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি তাঁকে আসলেই ওরা খুন করবে। বেশী ভালবেসেছেন বাঙালীকে।

নির্মলেন্দু গুনের কবিতার একাংশ
"কারণ তুমি তো জান একটা গুলির দাম একজন কৃষকের একবেলা আহারের চেয়ে বেশী,
কারণ তুমি তো জান একটা গুলির দাম একজন শ্রমিকের একবার সিনেমা দেখার আনন্দের চেয়ে বেশি,
মূল্যহীন শুধু তোমার জীবন, পিতা!!"
কবিতাটা শুনলে সবারই গা কেঁপে উঠবে

খোকারা আরও আরও শুনতে চায়,চলুক

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

১৯৭৬-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে, শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র ছ'মাস অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তাঁর নাম প্রকাশ্যে নেওয়া অলিখিত ও অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ, নির্মলেন্দু গুণ বাংলা একাডেমিতে কবিতা পাঠের আসরে পড়লেন : আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি, আমি শেখ মুজিবের কথা বলতে এসেছি...

স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো উপস্থিত প্রতিটি মানুষ। সেদিনের কথা ভাবলে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি এর ছবি

অসাধারণ! অসাধারণ! বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রতাবর্তনের ভিডিও ফুটেজ দেখেছি; ন্যাশনাল জিওগ্রাফির আলোকচিত্রও দেখা আছে। কিন্তু কোনো কিছুই আপনার এই লেখার মতো হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
-বিপ্লব রহমান।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হয়তো লেখাটি উৎরে গেছে আহমদ ছফার অসামান্য উদ্ধৃতির গুণে। একদিকে তা যেমন নিরাবেগ, অন্যদিকে অসাধারণ কাব্যময় এ আবেগসঞ্চারী।

ধন্যবাদ, বিপ্লব রহমান।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হিমু এর ছবি

নির্মলেন্দুগুণের সেই কবিতা পাঠের ওপর একটা পোস্ট পড়তে চাই জুবায়ের ভাই, কবিতাটি সহ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হিমু, কবিতার একটি সফট কপি আছে আমার সংগ্রহে। এখন লেখাটা লিখতে পারলেই হয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।