আগুন জ্বলার প্রহর

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: রবি, ০১/০৬/২০০৮ - ১২:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখন আমি জানি বুকের ভেতর কিভাবে কখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। কিভাবে সব ভয়, দ্বিধা, দ্বন্দ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিভাবে সর্বগ্রাসি ক্রোধ হয়ে ওঠে ভয়াল অস্ত্র।

মাঝরাতে বরিশালগামি বড় লঞ্চে যখন ডাকাত পড়লো তখন লঞ্চটা মেঘনা নদীর বাঁকে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি আর আকাশে পান্ডুর চাঁদ ছড়াচ্ছিলো ভৌতিক জোছনা। ডাকাতরা যাত্রীদের সবাইকে খুঁজে, খুঁচিয়ে, মেরে লঞ্চের নিচতলায় জড়ো করলো। তখন পাঁচ থেকে সাতশ জন যাত্রীর সবাই যে যার মত চেঁচাচ্ছিলো, কাঁদছিলো। কেউ কেউ চেষ্টা করছিলো পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কিন্তু পঁচিশ/ ত্রিশজন ডাকাত অস্ত্রের মুখে তাদের এমন ভাবে ঘিরে রাখলো, এমন বেধরক পেটালো যে কিছুক্ষণের মধ্যে লঞ্চে শুনশান নিরবতা নামলো। শোনা যাচ্ছিলো কেবল ইঞ্জিনের একটানা ঘর ঘর আওয়াজ।

এর মধ্যে ডাকাতরা লুন্ঠন শুরু করলো। টাকা, মোবাইল, ঘড়ি, সোনার গহনা সহ যা কিছু মূল্যবান সব। কখনো কারো কারো পিঠে ওরা সজোরে লাথি হাকাচ্ছিলো। কারো বা কপালে জুটছিলো রাইফেলের বাটের সজোর আঘাত। ভয়ে সবাই ঠক ঠক করে কাঁপছিলো। তখন লঞ্চের যাত্রীরা সবাই যেন একেকটা ইঁদুর - পালাবার জন্য গর্ত খুঁজছে। কিন্তু কে জানতো ওদের মাঝেই থাবা শানাচ্ছিলো হিংস্র দাঁতাল বাঘ?

ডাকাতরা লুন্ঠনের শেষ পর্যায়ে যখন সেই অষ্টাদশী মেয়েটির দিকে হাত বাড়ালো, যাকে দেখে লঞ্চের প্রায় সব তরুনের মন দুলে উঠেছিলো। সেই মেয়েটি যখন - না! না! না! বলে চিতকার করে উঠলো তখন সবার বুকে যেন সেই বাঘ গর্জে উঠলো। তবু সবাই বসে ছিলো। তখনো কিছু ভাঙার অবশিষ্ট ছিলো।

ডাকাতরা তখন মেয়েটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মেয়েটির অসহায় আর্তচিতকারে লঞ্চের ইঞ্জিনের শব্দ ঢাকা পড়ে গেছে। এমন সময় একটি বাঘ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এ সেই তরুন যে আর সবার মতো চুপচাপ বসে ছিলো ভয়ে। এ সেই তরুন যে ডাকাত হামলার আগে লঞ্চের ছাদে পায়চারী করছিলো আর দেখছিলো আকাশের চাঁদের জোছনায় মেঘনার পানির লুটোপুটি। এখন সে হিংস্র বাঘে পরিনত হয়েছে। ছুটে গিয়ে সে ঝাপিয়ে পড়লো ডাকাত-সর্দারের উপর। কিন্তু সে একা কি করে পারবে ওদের সাথে? অস্ত্রের এক আঘাতে লুটিয়ে পড়লো সে।

মুহুর্তে কি যেন হয়ে গেল। যাত্রীরা সবাই উঠে দাঁড়ালো। ছেলেটি যেন মরেনি, সে যেন একটি স্ফুলিঙ্গ হয়ে সবার প্রানে দাউ দাউ আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেল। একটি বাঘ আত্মবিসর্জন দিয়ে জন্ম দিয়ে গেল শত শত বাঘ। যাত্রীরা সবাই ছুটে গেলো ডাকাতদের দিকে। ঘিরে ধরলো পশুগুলোকে।

এখন ওরা জানে কিভাবে বুকের মাঝে আগুন জ্বলে ওঠে। পুড়িয়ে দেয় সব ভয়, দ্বিধা, দন্দ্ব। থাকে কেবল দুকুল উথলানো ক্রোধ। জান্তব পশুদের পিপড়ার মতো পায়ে দলার শক্তি ভর করে দেহের প্রতিটি কোষে। নিমেশে ওরা ঘিরে ধরলো ডাকাতদের। কিছু একটা ঘটবে এখন। ডাকাতদের চোখে ভর করেছে আতঙ্ক। আর যাত্রীদের চোখে আগুন।

কীর্তিনাশা


মন্তব্য

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আর আমিও সে আগুন দেখতে পাচ্ছি কীর্তিনাশার চোখে, দাউ দাউ বুকের ভেতর। তর তর করে এগিয়ে চল, সামনের পথ তোর জন্য অবারিত।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সব কাঠেই আগুন থাকে
কিন্তু সব কাঠই অপেক্ষা করে কোথাও একটা দেশলাই জ্বলে উঠবার

অপূর্ব  সোহাগ এর ছবি

সব আগুনে দহন কী আর থাকে?

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
কীর্তিনাশা

রায়হান আবীর এর ছবি

সুন্দর লাগলো গল্পটা...
---------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রায়হান আবির।
কীর্তিনাশা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।