পরিসংখ্যানে মাপা প্রগতি

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৭/২০০৮ - ১০:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা শিশুকে জন্মের পর থেকে যত্ন্-আত্তি করে কিশোর করতে $২০০,০০০/= খরচ হয়ে যায়। ছেলেদের বেলায় কিছুটা কম, মেয়েদের বেলায় একটু বেশী। গত দু'মাসে এ নিয়ে অন্তত গোটা তিনেক রিপোর্ট দেখলাম; অস্ট্রেলিয়ার পত্র-পত্রিকায় আর চ্যানেল নাইনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামে। $২০০,০০০/= দিয়ে ক'বছর আগেও বাড়ী কিনে ফেলা যেত। আস্ত একটা বাড়ী কেনার টাকা দিয়ে সন্তান কে পুষতে চায়?

গত কয়েক বছর কৃষিখাতে উপযুক্ত বিনিয়োগ হয়নি, তাই খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে। উৎপাদন কমে গেলে জিনিসের দাম বাড়বে, এ তো জানা কথা। বছর দশেক আগেও পত্রিকার খবরে দেখতাম ইউরোপ-আমেরিকায় চাষীদের অর্থ সাহায্য দেয়ার কথা। বিনিময়ে তারা বাড়তি ফসল ডাম্প করে ফেলে বাজারে দামস্তর স্থিতিশীল রাখত। দিন বদলেছে। কৃষিভর্তুকি হারাম বলে ডব্লুটিও ফতোয়া দিয়েছে। শক্তিমান রাষ্ট্র নিজের বেলায় যা খুশি করছে তবে অন্যের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির বেলায় সুযোগমতো সেটাকে এক্সপ্লয়েট করে চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন, বিশেষ করে খরার প্রকোপে অস্ট্রেলিয়ার কৃষক স্মরণকালের ভয়াবহতম বেহাল দশায়। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল বা অনুপস্থিত। তালা ঝুলছে বহু ফার্মের গেইটে। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে চারজন করে কৃষক(খামারী) আত্মহত্যা করেছেন। উৎপাদন হ্রাসের ব্যাপারটা ক্রেতা বুঝতে পারছে বাড়তি দাম গিয়ে।

কিন্তু পেট্রল ও অন্যান্য জ্বালানীর দাম কেন বাড়ল সেটার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। ক'দিন আগেই ওপেক বলল বাজারে জ্বালানী তেলের পর্যাপ্ত সরাবরাহ আছে, চাহিদার মস্ত কোন হেরফের হয়নি। তাহলে? ২০০১ এ ৪২ সেন্টে এক লিটার পাওয়া যেত, ৫০সেন্টের উপরে গেলে জনগণ হাউকাউ শুরু করে দিত। ২০০৮ এ এসে এখন $১.৭০ প্রতি লিটার। কমবার যে কোন সম্ভাবনা নেই, তাও স্পষ্ট।

কেউ একজন একসময় বলেছিলেন, বাংলাদেশে মানুষের আয়ুর প্লট করলে তা গসিয়ান মেনে চলে। মানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। 'উন্নত' দেশে ঠিক তা চলে না। এখানে বুড়ো মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক অনুপাতে বেশী। হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ বাজেট খরচ হয় তাদের পেছনে। ওল্ড হোম, রিটায়ারমেন্ট ভিলেজ হাবিজাবি যা নাম সবগুলোতে বুড়ো মানুষের আশ্রয়।

এসব মানুষ তাদের যৌবনে উচ্ছল সময় কাটিয়ে এখন মৃত্যুর দিন গোণে। ছেলে মেয়েরা যে যার মতো। বছরে দু'বছরে হয়তো একবার দেখা মেলে। নিজ ঘরে মরে পড়ে থাকার খবরও দেখা যায় মাঝে মধ্যে।

জিনিসপত্রের দাম খুব চড়ে গেছে। সিনিয়র সিটিজেনের মাসিক ভাতায় আর চলে না। টিভির রিপোর্টার তাদের ভাঁড়ারে ঢুকে শূণ্য ফ্রিজ খুলে প্রধানমন্ত্রীকে দেখায়। পেনশন বাড়ানোর দাবী নিয়ে কিছু পেনশনার ডেপুটি পিএমের অফিসের সামনে মিছিল করেছে। মন্ত্রীদের সময় থাকে না; অফিস সহকারীর কাছে মিছিলকারীরা ক্যাটফুডের ক্যান রেখে এসেছে।

এখানে ওখানে যেতে শখ হয়, প্রয়োজন হয় কেনাকাটার। বুড়ো মানুষ ধীরে গাড়ী চালায়- রাস্তা আটকে রাখে; এটা কে সহ্য করতে পারে? কেউ ওভারটেক করে যায়- কেউ হর্ন দেয়, কেউ মধ্যমা দেখায়।

কুইন্সল্যান্ডের কিছু বৃদ্ধদের নিয়ে খবর বের হয়েছে। এরা বাজারে যাবার দরকার হলে অসুস্থতার ছল করে এম্বুলেন্স ডাকে। হাসপাতালে নেয়ার সাথে সাথে তারা ভাল হয়ে যায়। ইমার্জেন্সি থেকে বের হয়ে শপিং সেন্টারে হাঁটা দেয়। এম্বুল্যান্সে চড়লে $৩০০ গুণতে হয়, বৃদ্ধদের জন্য এটা ফ্রি। ট্যাক্সিতে চড়ার পয়সা খরচ করতে হয় না, অথবা তাদের সে পয়সা নেই।

এম্বুলেন্সঅলারা হিসেব করেছে তাদের ৬০-৮০ভাগ কল আসে মাথা ব্যথা, নখ ফোলা, চোখ জ্বালা, মাথা ঘোরা, টেনশন এসব সমস্যা জানিয়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেই বুড়ো মানুষদের শপিং ট্রিপ।

পরিসংখ্যানে মাপা প্রগতির জীবন শুকিয়ে যায়; করুণাধারায় কারো আসার অপেক্ষায়।


গতকাল লেখাটা লিখেছিলাম। নিজের কাছেই পছন্দ হচ্ছিল না। আজ কিছুটা সম্পাদনা করে আবার দিলাম। (প্রথম পাতায় আনার জন্য একটু কসরৎ করতে হল, এটা আশা করি নীতির বাইরে না।)


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

তথ্যগুলি ইন্টারেস্টিং কিন্তু তার চেয়ে বহুগুন বেশি দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক।


অলমিতি বিস্তারেণ

জিফরান খালেদ এর ছবি

হুমম।

দ্রোহী এর ছবি

দেখে নিও একদিন আমরাও -----

অনেকগুলো ওল্ড হোম বানাতে হবে। তারপর বুড়োবুড়িগুলোকে ধরে নিয়ে..........

আফসোস, একদিন আমিও বুড়ো হয়ে যাব!


কী ব্লগার? ডরাইলা?

অনিকেত এর ছবি

আলমগীর,

চমৎকার একটা হৃদয়-স্পর্শী লেখা।

ধন্যবাদ তোমাকে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বুড়ো হতে ইচ্ছে করে না! মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।