পাঁচ বছর পর- ১/৫

আলমগীর's picture
Submitted by alamgir on Sat, 29/05/2010 - 2:12am
Categories:

টানা প্রায় পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে কী দেখছি তাই নিয়ে এ লেখা। যারা দেশে আছেন তাদের কাছে আহামরি কিছু মনে হওয়ার কথা না। তবে যারা দু'তিন বছর ধরে বিদেশ আছেন তাদের কাছে কিছুটা অবাককর মনে হতে পারে। এ লেখাটা ইচ্ছে করেই প্রমিত বানানে লিখা না।

১.
প্লেনের চাক্কা মাডি ছানছে কি ছানছে না, লোকজন মোবাইল বাইর করা সারা। করে কী! হ, মামা আমি অমুক। তুমি কই? না, থাইল্যান্ডে দেরি অয় নাই। আমারে নিবার আও। হ, অহনই রওনা দেও। প্লেন থামার আগেই লোকজন আবার হিড়মার করে ব্যাগবোচকা বের করে খাড়া। দরজা খোলার সাথে সাথে দৌড়। আর আমরা বসে বসে অপেক্ষা করি কখন এই দৌড় শেষ হয়। একজন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসই করে ফেলল, আপনেরা নামবেন না? আমি বলি, সবাই নামুক আগে, প্লেন আমারে না নামায়া আবার ব্যাংকক যাবে না।

এত কথা মানুষ কেন মোবাইলে কয় তার ব্যাখ্যা মিলল, ব্রিজ থেকে বের হওয়ার পর পরই। বিমানবন্দের ভিতরে একটা ফুডা চামরাও খালি নাই। মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়া ছায়া ফেলাইছে; দিক নির্দেশনার বোর্ডগুলা পর্যন্ত। ইমিগ্রেশনের লাইনের আবার সেই হিড়মার। যতক্ষণ লাগবো ভাবছিলাম, তারচে অনেকটা তাড়াতারিই কাজ সারল। একটা ছবিও তুলে রাখল।

যে লোকগুলা একদণ্ড তর না সয়ে প্লেন থেকে দোড়াইল এরা এবার বসে আছে বেল্টের কাছে। বসে আছে বললে ভুল হবে, প্রায় সবাই হাতে-কানে মোবাইল দিয়ে বকবক করছে। হ, প্লেন নামছে, এই যে, ব্যাগের লাইগ্যা অপেক্ষা করতাছি। একটা আইছে, ও না, এইডা আমার না। মানুষ এত কথা বলতে পারে, জোরে জোরে, পাশের কারো তোয়াক্কা না করেই!

বিশ্বরোডের অবস্থা দেখি ভালো না। তবে রাস্তায় বেশ ভালো চেহারার বিস্তর গাড়ি। অস্ট্রেলিয়াতেও ডানেবামে এত সুন্দর গাড়ি দেখছি কিনা সন্দেহ। হুন ড্রাইভারও দেখলাম একটা।

২. একটা জানিজিগর দোস্ত থাকে মাদারটেকে। তার সাথে ভাবলাম সাক্ষাত করে যাই। তার আগে দুইটা মোবাইল ফোনের সিম কিনতে হয়। আহারে, একসময় আগারে পাগারে সিম বিক্রী হইত, এখন দেখি পাসপোর্টের কপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি হেনতেন দিয়া সিম কিনতে হয়। তবে দাম অনেক কম। লেখা ২৯৯টাকা, দাম ১৫০টাকা। কলরেটও দেখি বেজায় কম। দেশ ছাড়ার সময় গ্রামীণফোনে ৭টাকা মিনিট কল করতে হইছে, এখন দেখি এইটা প্রায় ৫০পয়সার মতো। মানুষকে প্রায় জোর করে বাচাল বানাচ্ছে।

ঢাকায় শুধু মানুষ আর মানুষ, কিলবিল করছে। কমলাপুরের ওভারব্রিজের উপর উঠে বাতাসের ঝাপটায় মনটা ভালো হয়ে যায়। শত শত মেয়ে গার্মেন্টেসে কাজ শেষে ফিরছে। বাজে কটা, সাতটা তো হবেই। কাল ভোরেই আবার উল্টা দিকে দৌড়াবে এ মানুষগুলা। ব্রিজের উপর উচ্ছে বিক্রি হইতেছে, কিনমু নাকি এক কেজি? এ জিনিসটা আমার পছন্দ, গত পাঁচ বছরে মুখে পড়ে নাই; দুএক বার করলা খাইছি যদিও। শেষবার আসার আগে তা-তির বাসায়।

৩.
আসলেই অনেক সময় চলে গেছে। দোস্তের একটা ভাস্তি ছিল, একেবারে লেপ্টালেপ্টি ছোট রেখে গেছিলাম। এসে দেখি, স্কুলগামী কিশোরি, চোখে চশমা। আমারে চিনতে না পাইরা ভয়ে দিছে দৌড়, এক্কেবারে মায়ের কাছে। মা, আমার নাম ধইরা একটা অচেনা লোক ডাকতেছে। মেয়ের মার চিন্তা মেয়ে ফুডুং ফাডুং করে, পড়াশোনা করে না। হিন্দী সিরিয়াল দেখে। মেয়ের স্বপ্ন হলো আড়জে হবে। বসুন্ধরাতে গিয়া একবার ফরমও নিয়ে ফেলছিল। পরে স্কুলে পড়ে শুনে রেডিওর লোকজন আর পাত্তা দেয় নাই। হৃদয় খান তার খুবই পছন্দ। ভেবে ভেবে বলি, হৃদয় খানের একটা সুপারহিট গান।

ঢাকায় বিদ্যুতের অবস্থা খারাপ, খারাপ না শোচনীয়। যে চারঘণ্টা দোস্তের বাসায় থাকলাম, মিনিট পনের কি বিশ হবে, বিদ্যুত দেখলাম। ঢাকায় আমার উল্লেখযোগ্য কোন সময় কাটে নাই। যা কাটছে, ট্রানজিট করার সময়। তাই এখন সিলেট যাইতে হবে।


Comments

অগ্নিবীণা's picture

আলমগীর ভাই,
আমাদেরও প্রায় ৫/৬ বছর হতে চললো দেশে যাওয়া হয়ে উঠছে না, পণ করে ফেলেছি এই বছর যাবোই যাব! আপনার লেখা পড়ে ইচ্ছেটা আরো সুতীব্র হয়ে উঠলো! গ্রেজুয়েশান শেষ করে আপনারা কী স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে গেছেন? অপনাসোনার জন্য রইল একরাশ আদর।

আলমগীর's picture

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। স্থায়ী শব্দটারই কোন স্থায়িত্ব নেই হাসি

হাসান মোরশেদ's picture

আইতাছি দেঁতো হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আলমগীর's picture

আসেন, নদীতে একটা পিকনিক হয়ে যাবে।

কৌতুহলী's picture

আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার অপেক্ষায় আছি। আপনি কি শাবিতেই জয়েন করছেন? খুব খুশী হব সত্যি হলে। আর না হলেও, দেশে ফেরার অভিনন্দন।

আমি শেষ দেশে গিয়েছি বছর দুয়েক আগে। আপনার মোবাইল ফোন বাহুল্যের কথা শুনে মনে পড়ল, সামুতে এক ব্লগার লিখেছেন, এখন নাকি মোবাইল ফোনের আরেক সাইড এফেক্ট হয়েছে----কেউই আর হাতঘড়ি পরে না ! হাসি

অতিথি লেখক's picture

খাঁটি কথা কইছেন ভাই। আমিও আগে হাতঘড়ি পড়তাম। এখন আর কিয়ের কি? মাল্টি কামের জিনিস মোবাইল তো আছেই। লইয়া দৌড়। ঘড়ির দিন শেষ হইয়্যা যাইতেছে।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

আলমগীর's picture

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। হ্যাঁ, শাবিতেই।

সজীব [অতিথি]'s picture

স্যার, শাবিতে ফিরলেন? শুনে ভালো লাগলো। আমি আপনার ছাত্র ছিলাম এনালগ ইলেকট্রনিক্স কোর্সে।

মামুন হক's picture

আলমগীর ভাই,
আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে সব চুকিয়ে দেশে ফিরে যেতে। কিন্তু সাহস হয় না। আপনার সময়টা নির্ঝঞ্ঝাটে কাটুক। লেখাটা ভালো লাগতেছে...চলতে থাকুক নিয়মিত।

আলমগীর's picture

ধন্যবাদ মাহু। ব্যাটেবলে হলো না এবার। তবে দেখা নিশ্চয়ই হবে সামনে।

দ্রোহী's picture

শুভকামনা রইলো।

আলমগীর's picture

অপারগতার জন্য আবারো ক্ষমাপ্রার্থী। বিশ্বাস হয় আবহটা বোঝবেন।

আলমগীর's picture

আমি আরেক্ট দিলাম। মাইনাসে মাইনাসে প্লাস।

প্রকৃতিপ্রেমিক's picture

মানুষে এত কথা বলতে পারে তা আমি ভাবতেও পারিনা। পরের পর্ব আসুক।

আলমগীর's picture

মানুষের কথা কী বলব। আমার নিজের ভাই সারাদিন মোবাইলের উপরে। ঝাড়ি-মাড়ি দিয়ে একটু কমছে।

তুলিরেখা's picture

চমৎকার লাগলো। চোখের সামনে দেখতে পেলাম যেন পর পর ঘটে যাওয়া ঘটনাসব।

প্রমিত ভাষায় না হওয়ায় বেশী ভালো লাগলো। কেন জানি প্রমিত বাংলাকে আমার কেমন একটা টাইট জামা আর টাই পরা হাঁসফাস লাগে মাঝে মাঝে, যদিও লিখিত আকারে কাজকর্মের ভাষার ক্ষেত্রে সেটা ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু মুখের ভাষার ক্ষেত্রে খোলা হাওয়ার জন্য মন কেমন করে।

আপনার দেশে অবতরণ সুখের হোক।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আলমগীর's picture

ধন্যবাদ তুলিদি। ভালো থাকেন।

অতিথি লেখক's picture

আপনার দেশে অবস্থান আনন্দদায়ক ও নিরাপড হোক।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

আলমগীর's picture

ধন্যবাদ পলাশ।

অনিকেত's picture

বস

তোমার সঙ্গেই আছি

জোর কদমে চলুক ---

আলমগীর's picture

চলে আসেন উস্তাদ। প্লেন পাঠায়া দিতামনি?

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

হাসি

আলমগীর's picture

বহুদিন বিয়ার খানা খাই না। বিয়ে লাগলে দাওয়াত দিয়েন কিন্তু।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

বিয়ার আমিও খাই না... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আলমগীর's picture

কার মনে কী
ডাল দিয়া রান্ধে ঘি। দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক's picture

দাদা, সিলেটে পাঁচ বছর পর কি দেখলেন???

আলমগীর's picture

আহ সিলেট! একটু সময় দেন।

সবজান্তা's picture

এরপর ঢাকায় আসলে জানায়েন।


অলমিতি বিস্তারেণ

সুহান রিজওয়ান's picture

হ... মাশ্রুমাড্ডার বীর কম্রেডদের পক্ষ থিক্যা আমিও আমন্ত্রণ জানাইলাম দেঁতো হাসি

_________________________________________

সেরিওজা

নিবিড়'s picture
আলমগীর's picture

প্রতিবার মাশ্রুম শব্দটারে দেখতে আমার শ্মশ্রু মনে হয়, যদিও আমার দাড়ি নাই দেঁতো হাসি

আলমগীর's picture

জানাইলে কিংবা না জানাইলে কী হইতে পারে সম্ভাব্য তা জানা দরকার চোখ টিপি

অতিথি লেখক's picture

বেশ আগ্রহী হয়ে পড়লাম। কারণ একসময় আমারও এমনি প্রত্যাবর্তণ ঘটবে...লেখা ভালো লাগছে...মোবাইলের ব্যাপারটা একদম ঠিক- মানুষকে ধরে বেঁধেই বাচাল বানাচ্ছে।

রিজভী

-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;

তাজিন's picture

সিলেট অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা।
ওখানে গেলে পুরো সময়টাই উল্লেখযোগ্য মনে হবে।
সুন্দর কাটুক.......।।

গৌতম's picture

আহা! আমি তো কমলাপুরের ওই ব্রিজের একটু সামনেই থাকি। আগে জানাইলে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে পারতাম। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু's picture

ওরে, কতো কথা কয় রে...! আবার মোবাইলেরও বদনাম করে !!

আহা সিলেট ! কতকাল সিলেট যাই না !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নৈষাদ's picture

স্বাগতম।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ's picture

ঢাকা যাতি মঞ্চায়। মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আলমগীর's picture

নেট সংযোগের করুণ অবস্থার জন্য সবাইকে আলাদা করে মন্তব্যের উত্তর দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।
রিজভী, নৈষাদ: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
তাজিন: কে এটা?
গৌতম: ঢাকা গেলে ওই দোস্তের ওখানেই উঠি, তাই দেখা অবশ্যম্ভাবী (বানান ঠিক আছে তো?)।
ধুগো, রণদা: চলে আসেন।
মামু: ১১৫কেবিপিসের (ছোট বি) লাইন দিয়া কদিন নেট প্র্যাকটিস করবেন আসার আগে।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.