বর্ণমালার পাঠ - মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: সোম, ১৬/০৩/২০০৯ - ৩:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এ লেখাটা মূলত: গৌতমের এ পোস্টের মন্তব্য।

১ ও ২:
এই যে এখানে ‘অ’ বর্ণটি শেখানো হচ্ছে, এতে শিশু আসলে কী শিখছে। শিশু শিখছে একটা ‘অ’- আর কিছু না। শিশু শুধু জানে এটা তাকে শিখতে হবে; কিন্তু কেন শিখতে হবে এবং ‘অ’-এর সাথে কীসের কীসের সংযোগ ঘটবে- তা সে জানে না।

অ যে একটা প্রতীক এটাই তো শেখানোর মূল উদ্দেশ্য। ইংরেজিতে ফোনেম (উচ্চারণের মূল একক) আর বর্ণমালার বর্ণ সমান্তরাল না। অর্থাৎ বর্ণমালার সাথে তার উচ্চারণ কী হবে তার জন্য শব্দ শেখার কথা বলা হয়।

বাংলাতে সুবিধা হলো, ফোনেম আর বর্ণের দূরত্ব বেশ কম। এ কারণে আমরা যা পড়ি (বানান করে) তাই উচ্চারণ করি। সেজন্য বাংলা বর্ণ কেবল বিমুর্ত প্রতীক নয়, উচ্চারণের এককও। যেমন, ম(অ) উচ্চারণের সময় আমাদের জানা হয়ে যায় ম-ধ্বনিটা কী হবে। ইংরেজিতে, এম (m) শিখলে কিন্তু তা হয় না। এমের পাশাপাশি এম যুক্ত শব্দও লাগে যাতে এম যে আসলে mmmmm (ওম) ধ্বনি তা জানা হয়।

কোন বর্ণের সাথে কোন বর্ণের সংযোগ ঘটাতে হবে কিনা তা একই কারণে বাংলায় যত স্পষ্ট ইংরেজিতে তত স্পষ্ট নয়। ধরুন। আম উচ্চারণেএর সময়, 'আ' ধ্বনি আর 'এম' ধ্বনি এমনি এমনি এসে যায়। ইংরেজিতে ভাওয়েল গুলো সবসময় একই ধ্বনি-পরিবর্তন নির্দেশ করে না। যেমন, বাগ (bug) ও পুট (put) এর মধ্যে u এর উচ্চারণ ভিন্ন। এ ভিন্নতা কেবল "শেখার" মাধ্যমেই জানা যায়। শিশু কী জেনে শিখবে না মুখস্থ শিখবে?

বাংলা বর্ণমালায়, বর্ণগুলোর সজ্জা কী ভিত্তিতে করা হয়েছে, তা আমি জানি না, তবে অনুমান করি, নিতান্ত খেয়ালের বশে করা হয়নি।
আবার, বর্ণভিত্তিক ব্যবস্থার অসুবিধা যা বলেছেন তা দেখা যায়, যেসব বর্ণ শব্দের শুরুতে বসতে পারে না তা শেখাতে গিয়ে। এর মধ্যে, অনুস্বার, বিস্বর্গ, চন্দ্রবিন্দু, ড়, ঢ়, ঞ, ঙ, ৎ এসব বর্ণ আছে। এসব বর্ণ একক ভাবে উচ্চারণ করা যায় না।

আমি তাই এখনও বর্ণ ভিত্তিক ব্যবস্থার বিপরীতে সুবিধা অসুবিধা দুইই দেখি।

৩. শব্দ ভিত্তিক পদ্ধতি
আমি এখনও এটার কার্যকারিতা ভাল দেখতে পাচ্ছি। সবগুলো বর্ণ না শেখানো গেলেও ভাল মতো বাছাই করে বেশ কিছু বর্ণ সহজে শিখিয়ে ফেলা যায়। এর খারাপ-ভাল তুলনামূলক দিক আপনার লেখায় আসেনি। তাই বুঝতে পারছি না।

৪. বাক্য ভিত্তিক পদ্ধতি
এখনও কোন ইংরেজি বই দেখলাম না এ পদ্ধতির। কাজেই আপনি যেমন বলেছেন, তেমনটিই ধরে নিচ্ছি। এখন প্রশ্ন হলো, শিশুকে ছন্দের মাধ্যমে আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্য ঠিক আছে, কিন্তু ধ্বনির সাথে কী যোগ ঘটছে এ পদ্ধতিতে?

"অজগর সাপ অনেক বড়" কেবল এটকুতে অ-ধ্বনিটি আসছে (অ, জ, গ, অ, ব, ড়) মোট ছ'বার, আর এ আসছে একবার। এখানে বাক্যটি সম্ভবত এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যেন অ-ধ্বনি প্রাধান্য পায়। তা না হলে শিশু কেমন করে কীসের সাথে পরিচয় হবে? নাকি অ-বর্ণটি প্রথমে আসছে বলেই তাকে বলা হবে, এটা অ-ধ্বনি? এভাবে সব ধ্বনিকে প্রাধান্য দিয়ে কি বাক্য রচনা সম্ভব? যেমন, পরের বাক্য, "আমটি তুমি হাতে ধর" তে আ-ধ্বনি মাত্র দু'বার আসছে (আ, হা)!

৪.২ ও ৪.৬:
শিশুরা আগে পড়তে শেখে, এবং সেটাই উপভোগ করে। লিখতে শেখা বেশ পরের ব্যাপার। আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য পড়তে পারানো। লিখতে শেখানোর আগে আৎকা আৎকি শেখানো বা তাকে উপভোগ করতে দেয়াটাই আমাদের দেখা মতে সহজ। (জানি না অন্য কারো ভিন্ন মত থাকতে পারে)।

৭.
এভাবে তাকে কি শব্দের বিমুর্ত রূপের দিকে ঠেলে দেয়া হলো না? আগে যেখানে বর্ণ ছিল। এখন "অজগর" শব্দ সমষ্টি একটা অজগর সাপের রূপ ধরে থাকবে শিশু মনে। আমাদের অ-ধ্বনি কোথায় থাকবে? শব্দ-ভিত্তিক, বা নেহায়েৎ বর্ণভিত্তিক ব্যবস্থায় অ-ধ্বনি আর বর্ণের স্থান কাছাকাছি ছিল।

যেসব পয়েন্ট লেখা শেখানোর সেগুলো নিয়ে আর মন্তব্য করছি না।

সতর্কতা-১:
কেন? আমাদের সাধারণ মানুষের উচ্চারণ খুব কমই সঠিক। হ্রষ আর দীর্ঘ ধ্বনি পার্থক্য করে উচ্চারণ খুব কম বাবা-মাই করেন। কিন্তু লেখার সময়, বা পড়ার সময় তা আবার ঠিক ঠিক আসে। আমরা যদি স্বর-অ, স্বর-আ আর বদলে কেবল, অ, আ বলি তাতে পার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে না। হ্রষ আর দীর্ঘ ই, উ ধ্বনি সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে গেলে তো আবৃত্তির পাঠ নিতে হবে। তার চেয়ে বর্ণের সাথে এরকম একটা কোয়ালিফায়ার থাকলে কী সমস্যা?

সতর্কতা-২:
এটা সাধারণ বাবা-মারা কেমনে করে পারবে? সময়, নিজেদের শিক্ষা, লজ্জা, আরো কত কী আছে। একটা কিছু রেডিমেড হাতে ধরায়া দ্যাও। হাত-মুখ ধুয়া সকাল সন্ধ্যা পড়তে বস। এই সিস্টেম একেবারে আদর্শ না হলেও, খুব খারাপও না কিন্তু। শিশু নিজের আগ্রহ মতো বইটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করুক।

সতকর্তা-৩:
এটা ভাল পয়েন্ট। মেয়ের সাথে আমাদের যা দৈনন্দিন কার্যকলাপ তার ভিত্তিতেই বাক্য, শব্দ বাছাই করে থাকি। তার যে সব বিষয়ে, বস্তুতে আগ্রহ বেশী সেগুলোই প্রাধান্য পায়।

সতর্কতা-৪:
এটা পরিত্যাগ করা কঠিন। সুখী মানুষ হয়ত বেশী কঠিন ধারণা কিন্তু 'মা' বলে পাশে একজন মহিলা কিন্তু মনে হতে পারে খুব স্বাভাবিক। আমি এটা পুরোপুরি ত্যাগ করতে চাই। কেবল বস্তুবাচক বিশেষ্য, পরিচিত নির্দিষ্ট কিছু ক্রিয়াপদ ছাড়া ভিন্ন কিছু আমি পারত পক্ষে ব্যবহার করতে চাই না। এমনকি ল এর পরিচয় দিতে লাল বলে পাশে লাল রঙের একটা ছোপ খুব স্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু আমি এড়াতে চাই।

সতর্কতা-৫:
বাধ্যতামূলক শর্ত পড়ে ফেলেছি বলে অনেক কথা জমে গেল। বড় মন্তব্য না লিখে আলাদা পোস্ট করে দিলাম।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।