স্মৃতির শহরে রাশেদের সাথে

অদ্রোহ এর ছবি
লিখেছেন অদ্রোহ [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৮/০৪/২০১১ - ১২:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
দিনটা ছিল বোশেখের এক রৌদ্রতপ্ত দুপুর, এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে। খাওয়ার সময় দুদন্ড জিরিয়ে নেওয়ার আগে আলগোছে হাতে তুলে নিয়েছিলাম বইটি। এরপরের ঘন্টাখানেক আমি আক্ষরিক অর্থেই বুঁদ হয়ে ছিলাম, মুহুর্তের জন্যও চোখ সরাইনি(বা বলা ভাল সরাতে পারিনি) বইয়ের পাতা থেকে । চোখের কোনায় পানি চকচক করেছিল কিনা মনে নেই, তবে পড়া শেষে ভেতরটা ভীষণরকম কুঁকড়ে গিয়েছিল, সেটা দিব্যি দিয়েই বলা যায়। রাশেদের সাথে আমার পয়লা মোলাকাত হল এভাবেই, আর প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আমার বন্ধু রাশেদ চলে গেল প্রিয় বইগুলোর ছোট্ট তালিকার কাতারে।

২. ব্যাপারটা কাকতাল কিনা জানিনা, মোরশেদুল ইসলামের কাজের সাথে প্রথম পরিচয়ও কিন্তু মুহম্মদ জাফর ইকবালেরই আরেকটা দুর্দান্ত কিশোর উপন্যাস, দীপু নাম্বার টু এর মধ্য দিয়ে। মনে পড়ে, ছবিটা দেখে মনে হচ্ছিল, দীপু যেন আমার উড়ুক্কু কল্পনার দীপুর সাথে ঠিকঠাক মিলে গেল। তখনই ছবিটার প্রতি একটা দারুণ রকম মোহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর এটুকু হলফ করে বলতে পারি, বড়বেলায় ফের ছবিটা দেখার পর সেই মোহভঙ্গ হয়নি, সেই বালকবয়েসের মুগ্ধতার রেশ তখনও অনেকটা থেকে গিয়েছিল। এরপর মোরশেদুল ইসলামের খেলাঘর, দূরত্ব ছবি দুটো দেখেছি, তবে কোনটিই জাফর ইকবালে সাথে যুগলবন্দির ফিরিস্তি নয়। তবে কেন জানিনা প্রায়ই মনে হত, দুষ্টু ছেলের দল, হাতকাটা রবিন বা আমার বন্ধু রাশেদের মত কিশোর বয়সের দুমলাটের ভালবাসাকে সেলুলয়েডিত করতে মোরশেদুল ইসলামই হতেন সবচেয়ে যোগ্য লোক ।

৩. বেশ কিছুদিন আগেই শুনেছিলাম সরকারী অনুদানে মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনাতেই রুপালী পর্দায় রাশেদকে দেখা যাবে। তখন থেকেই শুরু অপেক্ষার প্রহর গোনার। অবশেষে এই এপ্রিলে এসে মুক্তি পেল ছবিটি। আর দুদন্ড ফুরসত পেয়েই ছবি দেখার মওকা ছাড়লামনা, সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একেবারে সোজা সিনেমা হলে। এখানে বলে রাখছি, আমার কাছে বইটার একটা নিজস্ব আবেদন আছে। সেই প্রীতির জায়গাটুকু থেকে ছবিটার কাছ থেকে প্রত্যাশা আকাশ না ছুঁলেও পারদটা অনেকটা চড়া ছিল। একেবারে যাকে বলে "স্ট্রাইকিং অ্যাপিয়ারেন্স" না হলেও প্রথমেই রাশেদকে দেখে সেই কল্পনার রাজ্য টলে যায়নি, সেজন্য পরিচালকের একটা বাহবা পাওনা থাকবে। বেশ নিপাট চেহারার চালাক চতুর গোছের রাশেদের প্রথম দর্শনে খুঁত যদি ধরতেই হয়, তবে বলব বয়সটা সামান্য বেশিই হয়েছে হয়তোবা। তবে সেটাকে খুব বেশি আমলে না নিলেও চলে। ইবুর চরিত্রটাও টাল খায়নি, তবে এই জায়গায় আমার একটু খেদ আছে, সে কথায় পরে আসছি। গল্পের কাহিনি অনেকেই জানেন, তাই সেটা নিয়ে লম্বা ফিরিস্তি দেওয়াটা জলঘোলা করাই হবে। সিনেমাটার প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধের ওপরে, তাই সেই সময়কার আবহটা পুরো ছবি জুড়েই ছিল। রাশেদ-ইবু সহ বাকিদের গেটআপ বা অন্যান্য দৃশ্যগুলো সেভাবেই সাজানো হয়েছে। সিনেমার শুটিং হয় ছিমছাম দিনাজপুর শহরে, নদীতীরের দৃশ্যগুলো ছিল এককথায় চমৎকার। সিনেমাটোগ্রাফি তাই বেশ ভালমত উতরে গেছে বলা যায়। তবে যে ব্যাপারটা আলাদা করে বলতেই হয় সেটা মূল উপন্যাসের সাথে দারুণ সামঞ্জস্য। বইয়ের পাতায় যেমনটি পড়েছিলাম, পর্দায় ঠিক সেই কাহিনিই দেখলাম। খুব বেশি নিরীক্ষার ব্যাপারে পরিচালক বেশ সংযত থেকেছেন, কোন উটকো মোচড় দিয়ে কাহিনির বারটা না বাজানোয় তাকে আরেকটা ধন্যবাদ দিতেই হয়। রাশেদের অভিনয়ে খানিকটা আড়ষ্টতা থাকলেও ওই বয়েসী ছেলেদের মধ্যে সেটা কিছুটা থাকাটাই স্বাভাবিক। এদিক দিয়ে ইবুকে কিছু জায়গায় বরং বেশি সাবলীল মনে হয়েছে। বাকি কিশোর অভিনেতারাও পাশ মার্ক পাবে। অন্যান্য কলাকুশলীদের কথা বলতে গেলে আলাদাভাবে বলবব রাইসুল ইসলাম আসাদ আর পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের কথা। অভিনয়ের এন্তার সুযোগ তাদের ছিলনা, তবে যেটুকু করেছেন সেটুকুতেই নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। তবে আলাদাভাবে অরু আপা আর শফিক ভাইয়ের চরিত্রদুটোর কথা বলতেই হয়। হোমায়রা হিমুর অভিনয় কিছুটা মাত্রায় মেলোড্রামাটিক, কিছু জায়গায় একটু চপলমতীও মনে হয়েছে। এদিকে আরমান পারভেজ মুরাদ শফিক ভাইয়ের চরিত্রে আমার ভাবনার সাথে অবিকলই মিলে গেছেন।

৪. অভিনয়ের কাসুন্দি বাদ দিলে স্রেফ ডিরেকশনের বিচারে ছবিটাকে দুর্দান্ত না বলতে পারলেও ভাল বলতেই হবে। নদীতীরের বা রেলব্রিজের ওপরে লংশটের দৃশ্যগুলোর কথা আলাদাভাবে বলব। আবহ সঙ্গীত অনেকটাই প্রথাগত, যুদ্ধের দৃশ্যগুলোতে প্রথাগত দামামা বা পরিচিত দেশের গানের নেপথ্য সুরের কথা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে। এখানেও বাঁধাগতের বাইরে গিয়ে অন্য কিছু করার যথেষ্টই অবকাশ ছিল। তবে একটা কথা বলতেই হবে, রাশেদের ওপর থেকে ফোকাসটা মাঝে মাঝেই সরে গিয়েছে বলে মনে হয়েছে। মূল বইটা না পড়া থাকলে এই ব্যবধান আসলে ঠিক গোচরে আসবেনা, তবে স্পটলাইট আরেকটু কম ইবুকেন্দ্রিক হলেও পারত। এটা অবশ্য আমার একান্তই নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, এর সাথে একমত হবেননা এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে।

৫.

ছবির শেষ দিকের অংশটকুর জন্য আসলে অনেকটাই মুখিয়ে ছিলাম। যুদ্ধের ডামাডোলে একদল অকুতোভয় কিশোরের রোমাঞ্চকর কাহিনি যেমনি আচমকা শুরু হয়েছিল , অমনি সেটা আচমকাই শেষ হয়ে গেল। ইবু তার অনেক দিনের গোপন ক্ষত শত চেষ্টা করেও মুছে ফেলতে পারেনা, তাই সে টের পায়, রাশেদের সাথে তার অদৃশ্য এক ধরনের যোগসূত্র রয়েই যায়। সেই রাশেদ, যার বাবা খানিকটা "পাগলা কিসিমের", যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির হালহকিকত রাখে, সেই রাশেদ, যে কিনা ভয়ের তোয়াক্কা না করে গুলি বয়ে নিয়ে যায়, যে কিনা আহত মুক্তিযোদ্ধা শফিক ভাইকে দুঃসাহসিকভাবে ছিনিয়ে আনে, যে কিনা মৃত্যুকে আয়নায় দেখেও জয় বাংলা বলতে কুন্ঠাবোধ করেনা। এসবই বহবার পড়া, চোখ মুদলেই আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাই। সবকিছুর পরেও রাশেদের জন্য আমার ভেতরের স্পর্শকাতর অনুভূতিতে নাড়া দেওয়ার জন্য মোরশেদুল ইসলাম একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তাই এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের প্রজন্মের যাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগের বিশেষ স্থান রয়েছে, যারা কৈশোরের মাতাল করা সময়ে "আমার বন্ধু রাশেদ" পড়ে এক অব্যক্ত বেদনায় কাতর হয়েছে, তাদের কিশোরবেলার সেই সুপ্ত স্মৃতির শহরে আরেকটা দুর্দান্ত সফরের জন্য এই ছবির চেয়ে মোক্ষম দাওয়াই আর কিছু হতে পারেনা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

রাশেদের উপর একটা লেখার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করতেসিলাম। চমৎকার একটা রিভিউর জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারিস। মজার ব্যাপার হল, আমি বইটা পড়েছি মাত্র ক'দিন আগে। মুভিটা মুক্তি পাবার পরপর। একদিন গিয়ে দেখে আসবো, আশা করি।

---আশফাক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সিনেমাটা ভালো লাগে নাই
নির্মাণ অত্যধিক দুর্বল
মোরশেদুল ইসলামের এযাবত যতো কয়টা সিনেমা দেখছি তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বাজে নির্মাণ
এটা নিয়ে একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছা ছিলো, অর্ধেক লিখে রাখছি। সময়ের অভাবে শেষ করতে পারতেছি না... হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রনজু এর ছবি

একমত নজরুল ভাই এর সাথে।
মোরশেদুল ইসলামের সবচেয়ে দুর্বল মুভি বলে মনে হয়েছে।

নিবিড় এর ছবি

দেখব কী দেখব না বুঝছি না। এক সময়ে নাড়া দিয়ে যাওয়া বইগুলোর উপর আশা থাকে অনেক, বেশির ভাগ সময় মুভিগুলো সেই আশা পূরণ করতে পারে না। আবার দেখার পর একেক জন একেক কথা বলছে। তোমার রিভিউ পড়ে মনে হল দেখে ফেলি আবার নজু ভাইয়ের কমেন্টে মনে হচ্ছে থাক পুরাতন রেশ টা থেকে যাক।

অফটপিকঃ রাশেদ কে নিয়ে লেখার আগে রাশেদের অনুমতি নিয়েছোতো চোখ টিপি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ইন্টারেস্টিং। নজরুল ভায়ের প্রতিক্রিয়া এ পর্যন্ত যারা ছবিটি দেখেছে, তাদের কারো সাথেই মিললো না...

অপেক্ষায় থাকলাম নজু ভাই।
[সম্পাদনাঃ এই মন্তব্য নজরুল ভায়ের মন্তব্যের জবাবে দেয়া। কীভাবে যেন নীচে চলে এলো।]

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখে নেই সিনেমাটা। তারপর তোর রিভিউয়ের উপরে নাহয় আরেকটা রিভিউ লেখা যাবে হাসি

ধৈবত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নির্মাণ খারাপ হইছে বলছি, তবু বলি এটা সবার দেখাই উচিত। দুর্বলতার পুরোটাই নির্মাণ ঘাটতি। এগুলা নিয়া মাথা আপাতত না ঘামাইলেও চলে। আমার চোখ আর একজন কিশোরের চোখ ভিন্ন হবে। সেই চোখেই কিশোরটা দেখুক স্বপ্নের এই সিনেমাটা। দল বেঁধে দেখুক।

এজন্যই মূলত আমি এখন লিখতে চাই না। চাই না এই সিনেমা লোকজন না দেখুক।
দেখুক সবাই।
পুরনো হয়ে গেলে তারপর লিখবো সমালোচনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা পরিষ্কার আছে, পোলাপানের অভিনয় করার চেষ্টাটা আছে... আন্তরিকতাটা আছে... আর কী চাই?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক
কথাটা ভালো লাগসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় কোন বইয়ের চলচ্চিত্র রূপায়ন হতে যাচ্ছে শুনলেই আমার ভয় লাগে, কিন্তু রাশেদের বেলায় আমার মনে হইছে নির্মান যাই হোক এই ছবিটা হওয়া দরকার। নজরুল ভাইয়ের কমেন্টটা পছন্দ হইছে।

-রিসালাত বারী

রনজু এর ছবি

একমত।।

তিথীডোর এর ছবি

লেখাটা কাল রাতেই পড়েছিলাম, ক্লান্ত থাকায় লগাই নি।

মুভি দেখি কালেভদ্রে ইয়ে, মানে..., দীপু নাম্বার টু দারুণ লেগেছিল।
এই ছবিটার ব্যাপারে এক বন্ধুর নেতিবাচক মন্তব্য দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে। দেখব নাকি দেখব না?? চিন্তিত
খুব প্রিয় কোনো বইয়ের চিত্রায়ন কল্পনাকে ছুঁতে না পারলে মন খারাপ হয় খুব।

রিভিউ ভাল্লাগলো, আপনার লেখার ধরন পছন্দ করি, সেটা বোধয় আগেও বলেছি। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ফাহিম হাসান এর ছবি

এই বইয়ের শেষ পাতা পড়তে গিয়ে কতবার চোখ ভিজে গেছে ইয়ত্তা নেই। আশা করি নির্মাতা সিনেমাতে এই আবেগটুকু তুলে ধরতে পেরেছেন।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

সচরাচর এমন ই হয় । খুব ভালো লাগার বই গুলো সেলুলয়েডে এলে কেমন জানি ফিকে পড়ে যায় । অতিরঞ্জন কিংবা অতি বিয়োজনের জন্যেই ...। আরো একটা কারণ আছে মনে হয় পরিচালক চিত্রনাট্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরার অনেক আগেই আমাদের মাঝে তার প্রথিতযশা এক চিন্তা শিকড় গজিয়ে আগেই বসে আছে বলে , তিনি নতুন করে যাই দেখান তাতেই সংঘাত বাজে আমাদের নিজস্ব চোখের সাথে ভাবনার পর্দায় ।
আমি নিজে খুব পছন্দের বই গুলোর সিনেমা রুপ দেখতে যাই না এই কারণেই ।

বইখাতা এর ছবি

সিনেমাটা দেখতে হবে। আশাহত হওয়ার ভয় আছে বুঝতে পারছি, তারপরও ইচ্ছা আছে, দেখবো। তবে আমি মূলত 'গেরিলা' দেখার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।

অপছন্দনীয় এর ছবি

উঁহুঁ সিনেমা দেখবো না, যত ভালই হোক না কেন।

অত্যন্ত প্রিয় গল্পের বই পড়লে সিনেমা দেখা খালি আশাভঙ্গেরই কারণ হয়ে দাঁড়ায় আমার জন্য মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

শৈশব-কৈশরের প্রিয় বইগুলার চলচ্চিত্র রূপায়নে বরাবর আহত হইছি। কল্পনার সাথে কেন যেন কখনই মেলে না। তবে তাই বলে চলচ্চিত্র দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি নাই। এইটাও অবশ্যই দেখব। রিভিঊ ভাল্লাগসে।

-রিসালাত বারী

পৃথ্বী এর ছবি

এটা এমন এক কিশোর উপন্যাস যেটা পড়লে মনে হয় বড়রাও কেঁদে দিবে।

বইয়ের উপর ভিত্তি করে যেসব চলচ্চিত্র বানানো হয়, সেগুলোতে সাধারণত মূল কাহিনীর অনেক কিছুই বাদ পড়ে যায়। এক্ষেত্রেও কি সেরকম কিছু ঘটেছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

জাফর স্যারের বেশ কিছু প্রিয় বইয়ের তালিকায় আমার বন্ধু রাশেদ' আছে সর্বাগ্রে। সেই ছেলেবেলায় বইটি পড়ার পর পর-ই কেন যেন বাসায় ঘোষনা দিয়েছিলাম, এই বই এর গল্প নিয়ে আমি মুভি বানাবো (এটা আমি আমার কোনো লেখাতেও লিখেছিলা বোধ হয়)।
বড়বেলায় এসে নাটক নিয়ে টুকটাক কাজ করার সুবাদে ভেবেছিলাম এটা হয়তো করতে পারবো। তলে তলে যে এতো কিছু হয়ে গেছে খবর-ই রাখিনি। "হার্ট ব্রেক" করা কষ্ট নিয়ে হঠাত শুনি রাশেদ'কে নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে। সেই শোনা হজম করতে করতেই শুনতে পেলাম অলরেডি টৈরি হয়েও গেছে। সিনেমা হলে রিলিজের অপেক্ষা মাত্র!!!!! সেই থেকে রাশেদের জন্য মন খারাপ করে ঘুরছি। সাহস করে ছবিটা দেখতে যেতে পারছিনা।

আপনার চমতকার রিভিওটা আরো ভয় ধরিয়ে দিল জানিনা কেন। তবে, না না করেও হয়তো দেখেও ফেলবো আমার প্রিয় রাশেদ'কে।

বন্দনা এর ছবি

আমার বন্ধু রাশেদ' বইটি আমার সংগ্রহে জাফর স্যারের প্রথম বই। কিশোর বয়সে বইটা পড়ে এতোটাই আলোডিত হয়েছিলাম যে বাসায় ঘোষনা দিয়েছিলাম বড় হলে এই বইরের গল্প নিয়ে মুভি বানাবো।
বড়বেলায় এসে নাটক নিয়ে কিছু কাজ করার ফলে একটু আশাবাদিও হয়ে ঊঠছিলাম স্যারের কাছ থেকে স্ক্রিপ্টটা আদায় করার ব্যাপারে।
হায়রে!! তলে তলে যে এতো কিছু হয়ে গেছে খবরই রাখনি। কখন এটা তৈরি হয়ে গেছে জানতেও পেলাম্না?!!
জানলাম ছবি রিলিজের দিনে। "হার্ট ব্রেক" করা কষ্ট নিয়ে ঘুরছি কিছুদিন ধরে। অভিমানে ছবিটা দেখতে যেতেও ইচ্ছা করছেনা।

আপনার চমতকার রিভিউ পড়ে তো আরো ভয় ধরে গেল!!
না না করেও হয়তো দেখেই ফেলবো আমার বন্ধু রাশেদ'কে।

বন্দনা এর ছবি

আমার বন্ধু রাশেদ' বইটি আমার সংগ্রহে জাফর স্যারের প্রথম বই। কিশোর বয়সে বইটা পড়ে এতোটাই আলোডিত হয়েছিলাম যে বাসায় ঘোষনা দিয়েছিলাম বড় হলে এই বইরের গল্প নিয়ে মুভি বানাবো।
বড়বেলায় এসে নাটক নিয়ে কিছু কাজ করার ফলে একটু আশাবাদিও হয়ে ঊঠছিলাম স্যারের কাছ থেকে স্ক্রিপ্টটা আদায় করার ব্যাপারে।
হায়রে!! তলে তলে যে এতো কিছু হয়ে গেছে খবরই রাখনি। কখন এটা তৈরি হয়ে গেছে জানতেও পেলাম্না?!!
জানলাম ছবি রিলিজের দিনে। "হার্ট ব্রেক" করা কষ্ট নিয়ে ঘুরছি কিছুদিন ধরে। অভিমানে ছবিটা দেখতে যেতেও ইচ্ছা করছেনা।

আপনার চমতকার রিভিউ পড়ে তো আরো ভয় ধরে গেল!!
না না করেও হয়তো দেখেই ফেলবো আমার বন্ধু রাশেদ'কে।

ইমন এর ছবি

"আমার বন্ধু রাশেদ" নিয়ে ভেতরে ভেতরে সব সময় চেয়েছি ভালো একটা কাজ হোক। পাবলিক লাইব্রেরিতে মোরশেদ ভাই, চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির অনুষ্ঠানে দেখায় এটা প্রথম জানুয়ারীতে। সৌভাগ্যক্রমে আমি প্রথম পাবলিক প্রদর্শনীটাই দেখতে যাই। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হই। সবল নির্মাণ, দূর্বল নির্মাণ...এসব বলে আসলে একটা সিনেমার সমালোচনা করাটা আমার ইদানিং মনে বাঁধে। নিজে সিনেমা বানাতে চাই হয়ত তাই...সিনেমার সমালোচনাতে কিছুটা নমনীয় আমি। কিন্তু আমি যাদের সাথে বসে দেখেছি সিনেমাটা ১২-২০ বছরের অধিকাংশ দর্শক ছিল তারা। সিনেমা দেখে বের হয়ে দেখেছি অনেকের চোখে জল। আমার নিজেরও সিনেমা দেখার সময় চোখ যে ভিজেনি তা নয়। ভালো লাগাটা ঐ জায়গাতেই।
আমি সবাইকে অনুরোধ করব প্লিজ সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখুন। নিজে দেখে তারপর সমালোচনা করুন। সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু এই ছবি নিশ্চয় আমাদের রুগ্ন সিনেমার জগতে এক পশলা বৃষ্টি। কেননা আমাদের নতুন প্রজন্ম নিশ্চিত ভাবেই এই সিনেমা দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নতুন ভাবে ভাবার সুযোগ পাবে। “শীলা কি জোওয়ানী” জেনারেশনের জন্য এই সিনেমা যদি একটু হলেও দেশ নিয়ে ভাবার সুজোগ করে দেয় তাহলেই কিন্তু এর সার্থকতা বলব আমি। একটা সিনেমা আসলে না দেখে খারিজ করে দেয়াটা সহজ। দেখে নিজের মত করে সমালোচনা করাটা বরং অনেক কঠিন। আমরা না হয় বাংলা সিনেমার ভালোর জন্য এতটুকু কষ্ট করলাম।
নজরুল ভাই আপনি সিনেমাটা নিয়ে কি রিভিউ লিখবেন তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আর এই পোষ্টের লেখক কে ধন্যবাদ সুন্দরভাবে একটা রিভিউ লেখার জন্য।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

রিভিউ ভালো লাগলো।

ইমন এর ছবি

"আমার বন্ধু রাশেদ" নিয়ে ভেতরে ভেতরে সব সময় চেয়েছি ভালো একটা কাজ হোক। পাবলিক লাইব্রেরিতে মোরশেদ ভাই, চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির অনুষ্ঠানে দেখায় এটা প্রথম জানুয়ারীতে। সৌভাগ্যক্রমে আমি প্রথম পাবলিক প্রদর্শনীটাই দেখতে যাই। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হই। সবল নির্মাণ, দূর্বল নির্মাণ...এসব বলে আসলে একটা সিনেমার সমালোচনা করাটা আমার ইদানিং মনে বাঁধে। নিজে সিনেমা বানাতে চাই হয়ত তাই...সিনেমার সমালোচনাতে কিছুটা নমনীয় আমি। কিন্তু আমি যাদের সাথে বসে দেখেছি সিনেমাটা ১২-২০ বছরের অধিকাংশ দর্শক ছিল তারা। সিনেমা দেখে বের হয়ে দেখেছি অনেকের চোখে জল। আমার নিজেরও সিনেমা দেখার সময় চোখ যে ভিজেনি তা নয়। ভালো লাগাটা ঐ জায়গাতেই।
আমি সবাইকে অনুরোধ করব প্লিজ সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখুন। নিজে দেখে তারপর সমালোচনা করুন। সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু এই ছবি নিশ্চয় আমাদের রুগ্ন সিনেমার জগতে এক পশলা বৃষ্টি। কেননা আমাদের নতুন প্রজন্ম নিশ্চিত ভাবেই এই সিনেমা দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নতুন ভাবে ভাবার সুযোগ পাবে। “শীলা কি জোওয়ানী” জেনারেশনের জন্য এই সিনেমা যদি একটু হলেও দেশ নিয়ে ভাবার সুজোগ করে দেয় তাহলেই কিন্তু এর সার্থকতা বলব আমি। একটা সিনেমা আসলে না দেখে খারিজ করে দেয়াটা সহজ। দেখে নিজের মত করে সমালোচনা করাটা বরং অনেক কঠিন। আমরা না হয় বাংলা সিনেমার ভালোর জন্য এতটুকু কষ্ট করলাম।
নজরুল ভাই আপনি সিনেমাটা নিয়ে কি রিভিউ লিখবেন তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আর এই পোষ্টের লেখক কে ধন্যবাদ সুন্দরভাবে একটা রিভিউ লেখার জন্য।

কনফুসিয়াস এর ছবি

রিভিউ ছোট হয়ে গেছে বেশি। গল্পটা নিয়ে আরেকটু বললে ভাল হতো। হাসি
এই সিনেমাটা দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে। আমার ছোট ভাই দেখে বললো খুব নাকি ভাল লেগেছে, ওরা সব বন্ধুরা মিলে ভার্সিটি থেকে দেখতে গিয়েছিলো। এটা শুনে খুব ভাল লেগেছে।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

"আমি সবাইকে অনুরোধ করব প্লিজ সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখুন। নিজে দেখে তারপর সমালোচনা করুন। সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু এই ছবি নিশ্চয় আমাদের রুগ্ন সিনেমার জগতে এক পশলা বৃষ্টি। কেননা আমাদের নতুন প্রজন্ম নিশ্চিত ভাবেই এই সিনেমা দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নতুন ভাবে ভাবার সুযোগ পাবে। “শীলা কি জোওয়ানী” জেনারেশনের জন্য এই সিনেমা যদি একটু হলেও দেশ নিয়ে ভাবার সুজোগ করে দেয় তাহলেই কিন্তু এর সার্থকতা বলব আমি। একটা সিনেমা আসলে না দেখে খারিজ করে দেয়াটা সহজ। দেখে নিজের মত করে সমালোচনা করাটা বরং অনেক কঠিন। আমরা না হয় বাংলা সিনেমার ভালোর জন্য এতটুকু কষ্ট করলাম।"

কথাগুলো খুব ভালো লাগলো। ফিল্মবোদ্ধাদের বলবো, কেবল ফিল্মবোদ্ধা হসেবে নয়, বাংলাদেশি হিসেবে একটু পক্ষপাতিত্ব করেই না হয় লিখলেন রাশেদ নিয়ে। সমালোচনা করা সহজ, ভালো কিছু করা কঠিন। আজ শুধুই সমালোচনা করলে ভবিষ্যতের ফিল্মমেকাররা ভাববে, কী লাভ ভালো ফিল্ম বানিয়ে? যাই, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান বানাই গিয়ে। তাই পারলে প্রশংসা করুন। আর সমালোচনা করলেও তার মধ্যে যেন উৎসাহজনক কিছু থাকে

---আশফাক

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম মুভিটা দেখতে হবে----------------------
কামরুজ্জামান স্বাধী।

তাসনীম এর ছবি

দীপু নম্বর টু শৈশবের সাথে জড়িয়ে আছে। ছবিটাও খুব ভালো লেগেছিল। এটাও দেখতে হবে, আমার অবশ্য হলে যাওয়ার উপায় নেই, ডিভিডি রিলিজ হলে দেখব। "আমার বন্ধু রাশেদ" বইটা বের হতে হতে আমি বড় হয়ে গিয়েছি কিন্তু যাদের স্মৃতির শহরে আছে এটা তাদের অবশ্যই দলবেঁধে যাওয়া উচিত এই ছবিতে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি তো দেখি ভিলেন হয়ে গেলাম মন খারাপ
আমি কিন্তু সবসময় বলি ছবিটা অবশ্যই সবাই মিলে দল বেঁধে দেখা উচিত সবার। এখনো বলছি। ছবিটা অনেক ভালো লাগবে বলেই ধারণা করি।
আমি যে অর্থে বলেছি, সেটা বোধহয় এখনো পরিষ্কার করে বুঝাতে পারিনি। আর চেষ্টা করলাম না মন খারাপ

সমালোচনা করা সহজ, ভালো কিছু করা কঠিন

এই কথাটা খুব ভুল। বাংলাদেশে ভালো সমালোচক খুঁজে পাওয়ার চেয়ে কঠিন কাজ খুব কমই আছে। সমালোচনা বলতেই যারা নিন্দা ভাবেন, তাদেরকে কিছু বলার নাই। সমালোচনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।

এখানে একটা গপ কই।
এসএসসি পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষা। অংক পরীক্ষার খাতা নিয়া স্যার ঢুকলো। যারা ফেল করছে, তাদের খাতা দিয়া দিলো... কিছুই কইলো না। যারা পঞ্চাশের নিচে পাইছে, তাগোরে একটা কইরা বেতের বাড়ি দিলো... কিন্তু পিটাইলো কাগোরে জানেন? যারা আশির আশেপাশে নাম্বার পাইছে
আমি সেই দলে ছিলাম। আমরা মার খানেওয়ালারা চেইতা গিয়া জিগাইলাম এইডা কেমুন বিচার?
স্যার কইলো, যেগুলা ফেল করছে হেগুলারে কিছু কয়া লাভ নাই, পিটাইতে হইবো সম্ভাবনাময়গুলারে, ক্যান আরো ভালো করলো না!

মেহেরজানের কোনো সমালোচনা দরকার নাই, কিন্তু আমার বন্ধু রাশেদের সমালোচনা অবশ্যই দরকার আছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রাহিন হায়দার এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সুযোগের অপেক্ষায় আছি। ভালো হোক খারাপ হোক দেখব। রিভিউটার জন্য ধন্যবাদ। -রু

মুস্তাফিজ এর ছবি

রিভিউএর জন্য ধন্যবাদ। ছবিটা দেখা হয়ে উঠেনি এখনও।

...........................
Every Picture Tells a Story

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

প্রিয় উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন নিয়ে গোছানো লেখাটি পড়তে ভালো লাগলো। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কোন গল্প কিম্বা উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নই শতভাগ সফল হতে পারে না। সেখানে অপূর্ণতা রয়েই যায়। কল্পনার রঙ যে কোটিমিশেলী, তাকে কি সেলুলয়েডে আঁকা যায়?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মেহেরুন এর ছবি

আমি জনাব নজরুল ইসলাম এর সাথে সম্পুর্ন একমত। ছবির সমালোচনার প্রয়োযন আছে। বিশেষ করে আমার বন্ধু রাশেদের মত ছবি। আমাদের দেশে অনুদানের ছবির কথা ভাবলেই মনে হয় পরিচালক কিছু টাকা অনুদান পেয়ে দায়সারা গোছের কিছু একটা বানিয়ে ফেলবেন যেটাতে ভাল টাইপ কিছু ধারনা থাকবে কিন্তু মেকিং হবে হেলেফেলা টাইপ এর... আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভালো ছবির সংখ্যা খুব ই কম। যা হয়েছে তাও অল্প বাযেটের অবাস্তব অভিনয়ের ছবি। যুদ্ধের যেকোন ছবির জন্য অনেক বেশি বাজেট দরকার, নাহলে যুদ্ধ দেখান যায় না... খুব হাস্যকর লাগে। আর যুদ্ধ দৃশ্য ছাড়া যুদ্ধের ছবি বানানোর মত জায়গায় আমাদের চলচিত্র শিল্প এখনো পৌছায়নি।

এই সিনেমার মেকিং নিয়ে বিশাল আলোচনা করা যায়। কিশোরদের দুর্বল অভিনয়, টপ শট গুলোর অদ্ভুত স্থিরতা ... এই ছবি আরো সময় নিয়ে তৈরি হওয়া উচিত। এতকিছু বলার পরেও আমি বলব সবার উচিত সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখা, অন্যকে দেখতে বলা। এই রকম গল্প নিয়ে ছবি তৈরি করায় উতসাহ দেয়ার জন্যই যাওয়া উচিত। ছবির শুধুমাত্র গল্পটার জন্য হলেও যাওয়া উচিত... রাশেদের জন্য যাওয়া উচিত...

নজরুল ইসলাম এর লিখার অপেক্ষায় থাকব কিন্তু কোথায় দেখতে হবে জানলে ভাল হত !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।