মেঘ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-৩

অদ্রোহ এর ছবি
লিখেছেন অদ্রোহ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/১২/২০১০ - ১১:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেঘ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-১

মেঘ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-২

থানচি যখন ছেড়ে গেলাম আকাশটা সোনারঙা রোদে ঝকঝক করছে, আগের রাত্তিরের বৃষ্টির কোন ছিঁটেফোঁটাও তখন আর অবশিষ্ট নেই, দিব্যি ঝকঝকে আকাশ।মনটা আমাদের তখন বেজায় ফুরফুরে। তবে মুশকিলটা এই যে, নৌকায় উঠে আমাদের একজায়গায় গ্যাঁট হয়েই বসে থাকতে হল, নো নড়ন চড়ন। এমনিতেই এগারজনের ব্যাকপ্যাক তো ছিলই, তার ওপর যোগ হল চাল,কলা্‌, চিড়ের ভারি বোঝার হ্যাপা। আগেই জানতাম, এই যাত্রাটা হতে যাচ্ছে বেশ লম্বা, নদীতে পানি আচমকা বেড়ে যাওয়ায় রেমাক্রিবাজারে ঠিক কতক্ষণে পৌঁছুতে পারব সেটা তখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিলনা। মাঝির কথাবার্তা শুনে ঠাহর করতে পারলাম, আজকের দিনটা মোটামুটি কলা-চিড়ের ওপর দিয়েই পার করে দিতে হবে। দুপুর নাগাদ রেমাক্রিবাজারে ঠাঁই গাঁড়তে পারব এমন ভরসাও খুব একটা নেই। ঠিক ঐ মুহুর্তে এসব অযাচিত ভাবনা বয়ে বেড়ানোর কোন খায়েশ আমাদের ছিলনা। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল না করে পারলামনা, আগেরদিনের চেয়ে পানির উচ্চতা বেশ বেড়েছে বলে মনে হল। সেই সাথে স্রোতের ধাক্কাটাও দেখলাম বেশ জোরদার। এক রাতের বর্ষণেই এই অবস্থা, ঘোর বর্ষাকালে না জানি কি দশা হয়?

পাহাড়ে গোত্তা খাওয়া মেঘ

DSC04525

অপরূপা সাঙ্গু

DSC04555

সাঙ্গু পাহাড়ি নদী, থানচি থেকে নাফাখুমের দিকে যেতে পুরোটাই যেতে হবে স্রোতের বিপরীতে, তারমানে আমাদের সময়টা লাগবে অনেক বেশি। পাহাড়ী নদী বলে এর আচরণ ঠিকঠাক অনুমান করাটাও দুরুহ কর্ম, তবে এটা নিশ্চিত এর মাঝে বেশ ক জায়গায় কিছু জেন্টল স্লোপ পার হতে হবে। সেসব জায়গায় নৌকা কিভাবে এই প্রবল স্রোত উজিয়ে চলবে, সেটা ভাবতেই আমাদের শিরদাড়া দিয়ে উদ্বেগের চোরাস্রোত বয়ে গেল। তবে বলতেই হবে,নদীর দুপারের দৃশ্য দেখলে চোখ ফেরানো যায়না। তখনও আমরা থানচি পেরিয়ে এসেছি খুব বেশি দেরি হয়নি, সাঙ্গু এখানে অনেকটাই স্থিরমতি, আচমকা বেগড়বাই করার কোন লক্ষণও আপাতত প্রকাশ পাচ্ছেনা। দুদিকের লোকালয়ের আভাস তখনো পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি, মাঝে মাঝে চকিতের জন্য পাহাড়ের কোলে কাঠের খুদে বাড়িও চোখ এড়াবেনা। এই করতে করতে ঘন্টা দেড়েক পার হয়ে গেল, এবার আস্তে আস্তে নদী আপনবেগে পাগলপারা হওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে, জল এখন অনেকটাই ঘোলা, নৌকার গতিও কমে গেছে অনেকখানি। সামনে তাকিয়ে দেখলাম, দুপাশে বেশ কিছু পাথর, তার মধ্য দিয়ে সটান যেন ওপরের দিকে উঠে গেছে। বুঝলাম, সামনেই আমাদের প্রথম নতি পার হতে হবে।

তবে হাত নৌকায় এলে যে ব্যাপারটা চরম আত্মঘাতী হত, সেটা আমরা এর আগেই হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেছি। আমাদের সাথেই ঘাট থেকে আরেকদল অভিযাত্রী হাত নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এমনিতেই মন্থর গতি, তায় স্রোতের খপ্পরে হাঁসফাঁস করতে করতে অচিরেই তাদের এক পা এগোয় দুই পা পিছোয় দশা। আমরা যখন তাদের বেশ দূরে ফেলে এসেছি, খেয়াল করলাম তাদের নৌকা উল্টোদিকে ঘুরছে। ঐ নৌকার মাঝির দেখলাম বেজায় সাহস, কিন্তু এটা বুঝতে অন্তত দেরি হয়নি হাত নৌকায় বেশিদূর গিয়ে সেঁধে স্রোতে ভেসে যাওয়ার কোন মানে হয়না। যাই হোক, যা বলছিলাম, নদী্র এসব স্টেপ আপের সময় ইঞ্জিন নৌকাই আখেরে বেকায়দায় পড়ে যায়। কারণ এমনিতেই নৌকার ওজন বেশি, তারওপর কোন পাথরের সাথে গোত্তা খেয়ে তলা ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কাও অনেক। হাত নৌকার পলকা হওয়াতে এসব জায়গায় কিছুটা বাড়তি সুবিধে পায়। প্রথমবারের স্টেপ আপের সময় অবশ্য খুব একটা কষ্ট হলনা, সশব্দে ধুঁকতে থাকা ইঞ্জিন নৌকার ওপর সওয়ার হয়েই ওটা পার করে দিলাম আমরা।

কিন্তু পরের বার থেকেই লাগল যত গোল। এর মধ্যে আমরা তখনও তিন্দুতে এসে পৌঁছাইনি, ওদিকে বেলা এরই মধ্যে অনেকটা গড়িয়ে গেছে। পরের স্টেপ ডাউনে ইঞ্জিন পুরোদমে চালিয়েও দেখলাম নৌকা একবিন্দু নড়ছেনা, ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। দুপাশে তখন ভয়ংকরভাবে ফুঁসে ওঠা স্রোত আমাদের পাশ দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। বোঝা গেল, ইঞ্জিনের ওপর ভরসা করা বৃথা, এবার নৌকা থেকে না নামলেই নয়। খুব সাবধানে আমরা খানিকটা তীর ঘেঁষে নেমে পড়লাম। নদী অবশ্য খুব একটা গভীর নয় তখনো। তলায় কিছু আলগা পাথর ছিল, তাই প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছিল অতি সন্তর্পণে। তবে যে জায়গাটায় ঠিক নৌকা আটকে আছে ওখানে স্রোত রীতিমত ঘূর্ণিপাক তৈরি করেছে। সেখানে একবার পড়লে আমাদের লাইফজ্যাকেটও যে কোন ফায়দা দেবেনা সেটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হলনা কারো। ততক্ষণে মাঝিরা অবশ্য দড়ি দিয়ে নৌকা বেঁধে রীতিমত টানাহেঁচড়া শুরু করে দিয়েছে। আমরাও মিছে বসে না থেকে হাত লাগাতে শুরু করলাম। এর মধ্যে খুব সতর্কতার সাথে বড় পাথরগুলোকে পাশ কাটিয়ে নৌকা একতিল করে সামনে এগোতে শুরু করল। মাঝিদেরকে দেখে বুঝলাম তাদের দস্তুরমত ঘাম ছুটে যাচ্ছে। অবশেষে প্রথম স্টেপ ডাউনটা আমরা কোন হ্যাপা ছাড়াই পার হলাম।

প্রথম স্টেপ আপ

DSC04591

দড়ি ধরে মার টান

DSC04607

DSC04613

তিন্দুতে নামার ঠিক আগে যে স্টেপ আপটা পেলাম, সেটা অবশ্য আরো গোলমেলে। এখানে পাথরগুলো খুবই বিপজ্জনক, কিছু কিছু তো রীতিমত চোখা। এ জায়গায় নদী অনেকটা চওড়া হয় গিয়েছে, তাই আগের মত "দড়ি ধরে মার টান" পদ্ধতিতে লোকবলও লাগল দ্বিগুন। আমাদের মত কিছু উঁনপাজুরে গেলবার রেহাই পেলেও এবার সবাইকে শক্ত হাতে দড়ি ধরতে হল। এর পর শুরু হল মরণপণ টান। এই করতে করতে এবারের স্টেপ আপটাও মোটামুটি নির্বিবাদে পার হওয়া গেল। আর আমাদের একজনের এক পাটি জুতো সাঙ্গুর জলে চিরতরে হারিয়ে গেল, আফসোস বলতে এটাই। এরপর তিন্দু পৌঁছাতে আমাদের খুব একটা সময় লাগেনি। তবে কাকতাল যে কতটা বিটকেলে হতে পারে, সেটা বুঝলাম তিন্দুতে এসে। আমাদের আরো কিছু ভার্সিটি ফ্রেন্ড দেখি এখানে আড্ডা গেড়ে আছে। তবে তাদের সাথে কথা বলে মনটাই দমে গেল। আগেরদিনের বৃষ্টিতে নাফাখুমের পানি নাকি বেশ বেড়ে গেছে, কোনো গাইডই নাকি নাকি তাদের নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে তারা রেমাক্রিবাজার থেকেই নাফাখুম প্রজেক্ট ইস্তফা দিয়ে চলে এসেছে। ভাবনায় পড়ে গেলেও আমরা খুব একটা পাত্তা দিলামনা, দেখাই যাক সামনে কী আছে কপালে। তিন্দু একটা বেশ জনাকীর্ণ পাড়া(অন্তত এসব এলাকার নিরিখে তো বটেই)। আমাদের মাঝি ভাইয়েরা এখানে দেখলাম বেশ প্রেমসে মধ্যাহ্নভোজন সেরে নিচ্ছে। আমাদেরও পেটে খিদেটা বেশ ভালমত চাগিয়ে উঠল, কিন্তু বেরসিক সময় বাগড়া দেওয়ায় সে যাত্রায় ডাল-ভাতের ভোজনের পাট মুলতবি রেখে কলা চিড়ের ফলার দিয়েই দুপুরের পেটপুজোটা সেরে নিতে হল।

তিন্দুতে...

DSC04620

কান্ডারি হুঁশিয়ার..

DSCF0553

তিন্দু ফেলে যখন এসেছি, তখন ঘড়ির কাটা প্রায় বারটা ছুইঁ ছুঁই। তবে আশার কথা এই, সামনের পথ আর খুব বেশি বাকি নেই। আর আশঙ্কার কথা হল, এরই মধ্যে আমাদের একাধিকবার নৌকা ঠেলতে হতে পারে, বিশেষ করে বড়পাথরের ওখানে তো বটেই। বড়পাথর জায়গাটার একটু বর্ণনা এই মওকায় দিয়ে রাখি। বড়পাথর (অনেকে হয়তো আবার রাজাপাথর বলেও চিনে থাকতে পারেন) তিন্দু থেকে বেশ খানিকটা সামনে। হঠাৎ করে দূর থেকে দেখলে মনে হবে, নদীগর্ভে পেল্লায় কিছু পাথর আকাশ ফুঁড়ে উদয় হয়েছে। এটা বোধহয় বলে না দিলেও চলে, এসব দানবাকৃতি পাথরের জন্যই জায়গাটার নাম বড়পাথর। বড়পাথরে পাথরগুলো যেমন বিশাল, স্রোতের তীব্রতাও তেমনি প্রচণ্ড। এ জায়গায় এসে আমাদের কপালে দুশ্চিন্তার বিশাল খাঁজ পড়ে গেল, নৌকা তো স্রোত পেরিয়ে কোনভাবেই যেতে পারবেনা, তবে উপায়? এর আগে যেখানেই নেমেছি, নদীর গভীরতা ছিল কম, কিন্তু এখানে গভীরতা যে আসলে ঠিক কতটুকু তা বলার কোন উপায় নেই। আর একবার পাথরগুলোর সাথে ধাক্কা খেলে আর দেখতে হবেনা বৈকি। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখে পাথরগুলোর কিনার ঘেঁষে আমাদের নেমে পড়তে হল। এখানে মোটামুটি উদর পর্যন্ত পানি, তবে স্রোতটা তীব্র বলে আমরা মানবশিকল তৈরি করে নিয়েছিলাম। এ জায়গাটায় নামতেও হিম্মত লাগে, নৌকা ঠেলা তো দিল্লি দূর অস্ত। কিন্তু অন্তত দুজনকে হাত লাগাতে হবেই। আমাদের অনেকের সাহসটা একটু বেশিই ছিল, তাই নৌকা ঠেলে বড়পাথরও পার করে ফেললাম। তারপরও শেষ রক্ষা হতনা, যদিনা আমাদের অকুতোভয় মাঝি অংসাপ্রু একটা ঘূর্ণিপাকে পড়ে তলিয়ে যেতেন। ভাগ্য সেদিন সহায় না হলে আমাদের একজন মাঝিকে সাথে সাথে ধরে ফেলতে পারতনা, আর মাঝিও নিশ্চিতভাবে পাথরগুলোতে গিয়ে ধাক্কা খেত।

বড়পাথর
DSC00241

DSC00237

DSC00238

বড়পাথরের পর আর তেমন কোন ঝক্কি রইলনা। এবার পাহাড়গুলো আরো গগনচুম্বী হয়ে উঠেছে। এর মাঝে আমরা অনেকটুকু পথ পেরিয়ে এসেছি। বড়পাথরের পরও আরো বার দুয়েক নৌকা টানতে নেমে পরতে হয়েছিল, তবে অসব জায়গায় স্টেপআপগুলো অতটা খাড়া ছিলনা, তাই আমাদের খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি। এসব করতে করতে মোটামুটি বেলা তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই। অনেক দূর থেকে পাহাড়ের ওপর একটা ছোট্ট বাড়ি চোখে পড়ল। তিন্দু ছেড়ে আসা অবধি আর কোন ধরনের লোকালয় আমাদের চোখে পড়েনি। বুঝতে পারলাম, রেমাক্রিবাজার এসে গিয়েছি। হিসেব করে দেখলা, সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা, প্রায় সাত ঘন্টার এক রোমহর্ষক সফর আমরা সাঙ্গুবক্ষে কাটিয়ে এলাম। জার্নি বাই বোট বোধহয় একেই বলে!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ লিখেছিসরে ছোঁড়া। তবে এবার একটু পড়তে বোস। নইলে কদিন পর পরীক্ষার খাতায়ো যে গল্প লিখেই সময় কাবার করতে হবে

ধৈবত

অদ্রোহ এর ছবি

পড়া তো সেই কবেই শেষ, এবার একটু কিবোর্ডবাজি করি চোখ টিপি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

আবির [অতিথি] এর ছবি

বড় পাথরের যাত্রার কথা যত সহজে লিখে ফেলেছিস তত সহজে যদি পার হয়ে যেতাম তাহলে কি আর জমজমাট অ্যাডভেঞ্চারটা হতো নাকি রে?

অদ্রোহ এর ছবি

হুম, আরেকটু সবিস্তারে লেখা উচিত ছিল। বড়পাথরের পিলে চমকানো অভিজ্ঞতার তুলনায় বর্ণনাটা একটু ম্যাদামারা হয়ে গেছে। তবে কথা হল, এসব তো আর লিখে বোঝানো যায়না, তারপরও নিচে ভিডিও দিয়ে দিলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বেশ এ্যাডভেঞ্চারাস একটা যাত্রা হলো। আমি তো পাথরগুলো দেখেই নার্ভাস। পানির নিম্নগতিতে নৌকার যে এ্যাকসিলারেশন হয়, তাতে ওই মুহুর্তে পাথরের সাথে ঠোকাঠুকিতো বেজায় বিপদজনক হতো।

======================================
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অদ্রোহ এর ছবি

পাক্কা ছয় ছটি ঘন্টা সাঙ্গুর উত্তাল বুকে থাকতে হয়েছে, এ ধরনের অভিজ্ঞতা আসলেই সারাজীবন বাঁধিয়ে রাখার মত। অ্যাডভেঞ্চারের চূড়ান্ত হয়েছে বলতেই হবে। আর পাথরগুলো পাশ কাটাতে মাঝিদের যে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিতে হয়েছিল সেটা না বললেও চলে। প্রতি মুহুর্তেই ভয় হচ্ছিল, এই বুঝি নৌকা পাথরে বাড়ি খেয়ে উল্টে যায়, যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তাই ছিলই।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সাব্বাশ !! এই পর্বের বর্ণনা আর ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটা পুরোদস্তুর এডভেঞ্চার করে এসেছিস।

বড়পাথরের জায়গাটার ছবি দেখে আসলেই রোমাঞ্চ হচ্ছে। পাথরগুলো দেখে ভারতের দুবরাজপুরের পাথরস্তূপের কথা মনে পড়ে গেলো।

ছবির জন্যে ফটোগ্রাফারকে শুভেচ্ছা।
_________________________________________

সেরিওজা

আবির [অতিথি] এর ছবি

সুহান ফটোগ্রাফারের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য, একহাতে জান আর অন্যহাতে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলেছে যে!

অদ্রোহ এর ছবি

আসলেই, কোনরকম জ্যাঠামো করছিনা, এমন একটা অ্যাডভেঞ্চারের পর এখন নিজের কাছেই অবাক লাগে, যেকোন সময় অঘটনের সম্ভাবনা তো ছিলই। তবে নাফাখুম যাত্রা কোন অংশে কম না, সেটা আসছে সামনে।

ভাল কথা, দুব্রাজপুরের নাম শুনে রবার্টসনের রুবির কথা মনে পড়ে গেল দেঁতো হাসি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

রবার্টসনের রুবিতে কি দুবরাজপুর ছিলো নাকি ?? বীরভূম না ?? সেই মামা-ভাগনে রক ??

_________________________________________

সেরিওজা

অদ্রোহ এর ছবি

হ, মামা ভাগনে পাথরের কথা তো ইয়াদে আছে, তাইলে দুবরাজপুরের নাম শুনলাম কোথায়?চিন্তিত

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওহ! ব্যাকপ্যাক নিয়ে তো এখনই বেড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। নাফাখুমটাতে যাওয়া হয় নি। এই বর্ষাতেই নাফাখুম থেকে ঘুরে আসব ফর শিওর।

আচ্ছা, রেমাক্রিবাজারে গিয়ে কি রাতে থাকতে হয়? ওখানে থাকার ব্যাবস্থা কেমন?

ধন্যবাদ অদ্রোহ, চরম এ্যাডভেঞ্চারাস বর্ণনা আর সুন্দর সব ছবিগুলোর জন্য।
পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম। ঐশর কথা না শুনে, গল্পটা শেষ করেই পড়তে বসুন না হয়...!

দৃপ্র

অদ্রোহ এর ছবি

রেমাক্রিবাজারের বর্ণনা সামনে আসছে, এখনই তাই বলে দিতে চাইনা, আর কটা দিন সবুর করেন না হয়।

আর ঐশর পরামর্শটা পছন্দ হয়েছে, দেখি কি করা যায় চোখ টিপি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অদ্রোহ এর ছবি

অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়রা এই ভিডিওটি দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন।(এটি কিন্তু আমাদের প্রথম এবং সবচেয়ে সহজতম স্টেপ ওভারের সময়কার। পরের বার থেকে ক্যামের আর বের করা হয়নি, আগে তো নিজের প্রাণ বাঁচাতে হবে !)

-------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

পড়তে পড়তে মনে হল সব ছেড়েছুঁড়ে দেশে চলে যাই। জীবন কাটিয়ে দেই সাঙ্গুর ঢালে। আমাদের দেশটা এত সুন্দর! সবুজের আভাময়! আহা, কবে যাব পাহাড়ে ??

প্রথম ও দ্বিতীয় ছবিটা অসাধারণ। কি ক্যামেরা ব্যবহার করেন আপনি? আরও ছবির জন্য ইট রেখে গেলাম।

অদ্রোহ এর ছবি

ঠিক মনের কথাটাই বলেছেন, তখন মনে হত, পাহাড়ের ওপর একটা ছোট্ট ঘরে কোন পাহাড়ি মেয়ে সাথে গাঁটছড়া বেঁধে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেই।

আর ছবিগুলো আমার নিজের তোলা নয়, আমাদের ফটোগ্রাফার গ্রুপের সম্মিলিত অবদান এসব। ছবির জন্য শংসাবচন ওদের পৌঁছে দিলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

বাউলিয়ানা এর ছবি

জবরদস্ত অভিযান।

ছবিগুলাতে চলুক

অদ্রোহ এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তোর লেখা পড়েই তো আমার সাঙ্গু ভ্রমণ হয়ে গেছে রে।
সশরীরে যাবার আর দরকার দেকচি না চোখ টিপি

---আশফাক আহমেদ

অদ্রোহ এর ছবি

আমি জানতাম তুই এটাই বলবি। সবাইকে দিয়ে কি আর সবকিছু হয় রে...চোখ টিপি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

হিংসা হিংসা হিংসা!

প্রথম ছবির জায়গাটায় আমার একটা ছোট্ট বাসা চাই। আর সঙ্গে সাকী এবং কিছু শরবত (নো শরাব)। তাহলেই জন্নত!

অদ্রোহ এর ছবি

আলি সাহেবকে মাঝে মাঝে বড্ড হিংসে হয়। ওরকম একটা জীবন যদি পেতুম!

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সাকি কি জাপানিজ শরাব না? হাসি
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাকি কি জাপানিজ শরাব না? হাসি

সাকি, সাকী শব্দের অনেকগুলো অর্থ আছে। হাসি

১. প্রেমিকা
২. সুফি সাধকদের দীক্ষাগুরু
৩. সুরা পরিবেশনকারী তরুণ বা তরুণী (যেমনটি নিচের কবিতায়)

সাকি ও নর্তকী
-আসিফ নূর
: আসরকে কে বাজায়?
: চিরচেনা সাকি।
: জলসাকে কে নাচায়?
: নয়া নর্তকী।
: যখন শরাব শেষ
হারিয়েছে মাতনের রেশ,
থেমে গেছে সব ঢেউ রঙদরিয়ার;
পানশালা জানে, মাঝরাতে কে-বা কার।
তখন সবার তাড়াহুড়া,
একান্ত সঙ্গীর খোঁজ—আলুথালু বাড়ি ফেরা;
তখন উপেক্ষিত সবচেয়ে কারা?
: কে আবার, সাকি আর নর্তকী ছাড়া?

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

সেইটা 'সাকে', এই সাকী ওমর খই-আম এর স্বপ্নের সঙ্গিনী।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হোয়াইট ওয়াটার র‍্যাফটিং! অ্যাঁ
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অদ্রোহ এর ছবি

যাওয়ার সময় এগেইন্সট দ্য স্ট্রিম যেতে হয়েছিল বলে র‍্যাফটিং এর স্বাদ ঠিকঠাক পাইনি, তবে আসার সময়...থাক সেটা না হয় সামনেই বলি হাসি

-------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ্, জার্নি বাই বোট! মাতামুহুরী নদীর উজানে (থানচি থেকে আরও ভেতরে) দলবল নিয়া একবার অভিযান চালাইসিলাম সেই স্মৃতি মনে পইড়া গেল আপনার লেখা পড়ে।

সিরিজ চমৎকার লাগতেসে। চলুক

কুটুমবাড়ি

অদ্রোহ এর ছবি

মাতামুহুরী
তো লামা আর আলীকদমের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, অভিযান কি ওখানে করেছিলেন?

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ। আলীকদম থেকেই নৌকায় উঠি। যেখানে গিয়েছিলাম সে জায়গাটার নাম মিরিংচর, যেতে প্রায় চার ঘণ্টা লেগেছিল। ফেরার পথে স্রোতের অনুকূলে থাকায় অর্ধেক সময়েই চলে আসি।

কুটুমবাড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।