অন্ধলোকের কড়া নাড়া

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৬/২০১০ - ৯:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“One could spend years on this sentence” (from ‘Demeure: Fiction and Testimony’ by Jacques Derrida)

১.
এই পোস্টটি দীর্ঘ। বিরক্তিকর। এবং ক্লান্তিকর। তাই পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আরো আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি মূলত পাঠকের কাছে যার একটি পোস্ট আমাকে এই পোস্টটি লিখতে ঠেলা দিয়েছে। সেই ঠেলায় যদি ব্যক্তি মূলত পাঠক আক্রান্ত বোধ করেন, তাহলে বলব এটি কখনোই আমার উদ্দেশ্য নয়।

আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও একটি পরিস্কার ধারণা দেয়া দরকার। এই পোস্টটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ভোকাব’ (নিচের উদ্ধৃতি দ্রষ্টব্য) কীকরে শ্রেণীবৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ব্যবহৃত হতে পারে, তার কিছু ঈঙ্গিত একটি সীমিত টেক্সট থেকে নিঙ্গড়ে আনা। এবং আরো বলতে চাই যে ঈঙ্গিতগুলো আমি আমার বিশ্লেষণে পাচ্ছি সেগুলো কোনোভাবেই স্বতঃসিদ্ধতা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবীদার নয়। আলোচ্য টেক্সটটি পড়ে ‘আমার কী মনে হয়েছে’ সেটি নয়, বরং ‘আমি কী মনে হতেই পারে’ সেটিই আমার বর্ণনার বিষয়।

২.
টেক্সট : যে অংশটি আমি আমার লেখায় বোঝার চেষ্টা করেছি সে অংশটি পুরোটা একসঙ্গে নিচে দেয়া হল -

আমি কলকাতায় যে পাড়ায় বড়ো হয়েছি সেটা ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের আস্তানা। পারস্পরিক চেনা-পরিচয়ের পথ ধরে পরিবারগুলো এক পাড়ায় এসেছিল, সেজন্য সরকারি জমিবন্টনের সময় সামাজিক স্টেটাস নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে নি। এর ফল দাঁড়িয়েছিলো এই রকম যে পাড়ার ডেমোগ্রাফিটা একেবারে পাঁচমেশালি খিচুড়ি, ডাক্তার, প্রফেসর, মাস্টার যেমন আছে তেমনি আছে বাজারের সব্জিওলা, গৃহপরিচারিকা ইত্যাদিরাও। পাড়ার মাঠে খেলতে আসা বালকদের মুখের ভাষাও বৈচিত্র্যপূর্ণ, যতোটা হলে সেটা আমাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয় তার চাইতে অনেকটাই বেশি। তার উপর আমাদের বাড়ির গায়েই একটা মাঠ, সেখানে মোটামুটি ঊষালগ্নেই নানাবয়সী বালক চলে আসে একপাল, এবং তাদের "আলাপ" কান পেতে শুনলেই ভাষাতত্ত্বের উপর ভালো দখল জন্মে যায়। এই অবস্থায় বাল্যকালে আর যাই নিয়েই চিন্তা থাকুক, দুর্বল ভোকাব্যুলারির আশঙ্কা ছিলো না। সুখের বিষয়, বাড়িতে কথোপকথনে সেই জ্ঞানের কতোটা প্রয়োগ করবো, সে হুঁশ গজাতে সময় লাগে নি বিশেষ। ভাষা ব্যবহারের প্রসঙ্গে স্থান-কাল-পাত্র ব্যাপারটা যে ঐ সমৃদ্ধ ভোকাবের দাপটে আচ্ছন্ন হয়ে যায় নি, সুখের বিষয় সেটাই। সচলে কী ভাষায় লিখবো সে প্রসঙ্গ আলোচনার সময় এটাই তাই লিখলাম গোড়ার কথা হিসেবে।

৩.

প্রথম লাইনটি আমাকে ভাবাচ্ছিল। লাইনটি আবার উদ্ধার করছি :
আমি কলকাতায় যে পাড়ায় বড়ো হয়েছি সেটা ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের আস্তানা।

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ ‘আস্তানা’ ভুক্তিটি লক্ষ্য করি :

আস্তান, -না বি [ফা আস্.তান্, -তানহ্ ; তু ‘সং, হি আস্থান] ফকীরের বা সাধুসন্ন্যাসীর বাসের স্থান; আশ্রম, আড্ডা। “সম্মুখে একটি পিরের আস্তানা আ.দু ১০৮। এখন কোথায় আস্তানা করবে? গি.দ্বি ১০৮। ২ আড্ডামাত্র

উল্লেখ্য আ.দু হচ্ছে আলালের ঘরের দুলাল ও গি.দ্বি হচ্ছে গিরিশ গ্রন্থাবলী।

বাংলা একাডেমী’র সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে :

আস্তানা বি ১ খানকা; আশ্রম; বাসস্থান; আখড়া; হুজরা। ২ দীনের পর্ণকুটির; অস্থায়ী নিবাস; ডেরা। ৩ আড্ডা; বসত। ৪ বাসস্থান, আশ্রয়স্থল। [ফা. আসতানহ্]। আস্তানা গাড়া, আস্তানা করা ক্রি সাময়িকভাবে আড্ডা দেওয়ার জন্য কোনো স্থানে ওঠা। আস্তানো গুটানো ক্রি আড্ডা তোলা বা ভাঙ্গা।

আমি যা বুঝলাম, সেটি হচ্ছে (১) আভিধানিক অর্থ মেনে চললে, আস্তানা শব্দটি প্রধানত ধর্মীয় আশ্রম অর্থে ব্যবহার্য। (২) অন্যথায়, এর বাসস্থান অর্থেও ব্যবহার সম্ভব। যদিও সেই বাসস্থানের সাথে “দীনের পর্ণকুটির; অস্থায়ী নিবাস; ডেরা” ইত্যাদি বর্ণনা জড়িয়ে আছে।

আমার সাধারণ জ্ঞান বলছে এই দুই বিবেচনায় শব্দটির যে বর্তমান ব্যবহার তা সম্মানার্থক নয়। এমনিতেই সাধুর আশ্রমের জন্য ব্যবহার্য শব্দটিকে যখন সাধারণের বাসস্থান বোঝাতে ব্যবহার করা হবে তখনই তাতে এক মাত্রার ব্যঙ্গাত্মকতা যুক্ত হবে। সুতরাং ‘আস্তানা’ শব্দটির প্রয়োগ অসম্মানার্থক, তুচ্ছার্থক এবং শ্লেষাত্মক কি না, সেটি বুঝতে গুগলে অনুসন্ধান করলাম। অনুসন্ধানের ভুক্তিগুলো থেকে আস্তানা শব্দটি যে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে তার কয়েকটি নমুনা পেশ করছি। এক্ষেত্রে হয়ত পুনরুক্তি বর্জন করতে কিছু কিছু ভুক্তি বাদ দেয়া হচ্ছে। গুগলে প্রাপ্য :

১.আস্তানা কাজাখস্তানের রাজধানী ও প্রধান শহর

২.রাজধানীর দক্ষিণ দনিয়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে গতকাল সোমবার আরও ১০টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

৩.চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর একটি আস্তানা থেকে রোববার বিপুল পরিমাণ জেহাদি বই, পোস্টার ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

৪.ঢাকার দোহার উপজেলার মেঘুলা গ্রামে কথিত ভণ্ডপীরের আস্তানার সন্ধান পেয়ে ওই গ্রামের লোকজন ও মসজিদের মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

৫.মোহান্ত মহারাজ শ্রী শ্রী চন্দ্রনাথ ধামের তীর্থগুরু। তিনি এ স্থানে বাস করতেন বলে তাঁর নাম অনুসারে এ স্থানের নাম হয় মোহান্তের আস্তানা।

৬.শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী তামিল গেরিলা দল এলটিটিইর গোয়েন্দা প্রধানের গোপন আস্তানা দখল করেছে বলে আজ দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

৭.কুদ্দুছ ব্যাপারীর আস্তানা

৮.আস্তানা লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: শুক্র, ২০০৮-০৪-১১ ১৮:১৫)

৯.সিলেটের কমলগঞ্জ থানার একশ গজের মধ্যে ডাকাতের আস্তানা

১০.লাল শার্টদের আস্তানা খুঁজে গুলি চালাচ্ছে থাই সেনারা

১১. সেকশন-৬, ব্লক 'সি', রোড-১৩, প্লট-৫, পল্লবী, মিরপুরে ১৯৮৯ সালে হাক্কানী মিশন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে স্থাপিত হয় 'মিরপুর আস্তানা শরিফ'।

১২. ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: ধানমণ্ডি বত্রিশের কাছেই ঘাতকের আস্তানা

১৩. মাহীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল নিশি নেশাখোরের আস্তানা

ওপরের বাক্যগুলো থেকে আমি যা বুঝলাম তা হলো ‘আস্তানা’ শব্দটির দু-ধরণের প্রয়োগ হয়। এক - ধর্মীয় আশ্রম অর্থে। দুই - অনাকাঙ্ক্ষিত যেকারো বাসস্থান অর্থে। দ্বিতীয় অর্থে শব্দটির বিদ্রুপাত্মক প্রয়োগও বেশ দেখা যাচ্ছে। ‘আস্তানা’ শব্দটিতে তাই মিশে আছে অননুমোদন ও বিদ্রুপ।

সুতরাং মূলক পাঠকের নিম্নোক্ত বাক্যটিতে আমি অননুমোদন ও বিদ্রুপ খুঁজে পাচ্ছি। বাক্যটি হল :

আমি কলকাতায় যে পাড়ায় বড়ো হয়েছি সেটা ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের আস্তানা।

পূর্ববঙ্গ থেকে ‘আসা’ মানুষরা এই বাক্যে কাঙ্ক্ষিত নন।
বাক্যটি দাঁড়িয়ে আছে ভাষার শুদ্ধতার রক্ষাকর্তার ভূমিকায়।
ভাষায় কাঙ্ক্ষিত নয় পূর্ববঙ্গ।

৪.
মূলত পাঠক এই অনাকাঙ্ক্ষাকে অনুমোদন দেন। জানতে পারি, পূর্ববঙ্গের বিচিত্র শব্দাবলী ‘বাড়িতে কথোপকথনে’ কাঙ্ক্ষিত নয়। কেন নয়? এই জন্য নয় যে ঐ শব্দাবলী বাড়িতে কথোপকথনে ব্যবহার্য নয়। কারণ ‘পাড়ার মাঠে খেলতে আসা বালকদের মুখের ভাষা’ ঐ বালকরা নিজ নিজ ‘বাড়িতে কথোপকথনে’ও ব্যবহার করে না এমন কোনো ইশারা আমরা পাইনি। সুতরাং ঐ শব্দাবলী ব্যবহারে আপত্তির মূলে রয়েছে সেগুলোর ব্যবহারকারীরা স্বয়ং। যারা, পাড়ার ‘পাঁচমেশালি’ ডেমোগ্রাফিটা থেকে এসেছে। ‘একেবারে পাঁচমেশালি খিচুড়ি, ডাক্তার, প্রফেসর, মাস্টার যেমন আছে তেমনি আছে বাজারের সব্জিওলা, গৃহপরিচারিকা ইত্যাদিরাও’। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দ্বন্দ্বটা নিছক বাড়ির ভাষা বনাম খেলার মাঠের ভাষা শুধু নয়। দ্বন্দ্বটা ভৌগলিকও। বিভক্ত বঙ্গে। এবং অবশ্যমম্ভাবীভাবে শ্রেণীগত। নইলে আর কেন ডাক্তার-প্রফেসর-মাস্টার বনাম সব্জিওলা-গৃহপরিচারিকার এই ডাইকটমির অবতারণা? আর এই শ্রেণীদ্বন্দ্বের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল : ভাষার ভিত্তিতে একটি সামাজিক হায়ারার্কির নির্মাণ। ভাষার উঁচ-নিচু বিচারেরও ভিত্তি ঐ হায়ারার্কি।

মূলত পাঠক কি এই হায়ারর্কিকে মেনে নিচ্ছেন? ভাষায় চর্চা করছেন এই শ্রেণীবৈষম্যের? তিনি কি এই বৈষম্যের পদ্ধতি টিকে থাকাতে কিংবা টিকিয়ে রাখতে পেরে সন্তুষ্ট?

‘সুখের বিষয়, বাড়িতে কথোপকথনে সেই জ্ঞানের কতোটা প্রয়োগ করবো, সে হুঁশ গজাতে সময় লাগে নি বিশেষ। ভাষা ব্যবহারের প্রসঙ্গে স্থান-কাল-পাত্র ব্যাপারটা যে ঐ সমৃদ্ধ ভোকাবের দাপটে আচ্ছন্ন হয়ে যায় নি, সুখের বিষয় সেটাই।’

‘সুখের বিষয়’ শব্দবন্ধটির দ্বিরুক্তি আমাকে এই ভাবতে সাহায্য করছে যে, ভাষাকে নিজ শ্রেণীর কৌলিন্যের প্রকাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারার বিষয়টি মূলক পাঠককে সুখী করেছে। সন্তুষ্ট করেছে তার ভাষাভিত্তিক শ্রেণীবৈষম্য চর্চার অভিপ্রায়কে।

৫.
আলোচ্য টেক্সটের শেষ লাইনটি এমন :

‘সচলে কী ভাষায় লিখবো সে প্রসঙ্গ আলোচনার সময় এটাই তাই লিখলাম গোড়ার কথা হিসেবে।’

তাহলে, ঐ যে খেলার মাঠ আর বাড়ির কথোপকথনের প্রভেদ, এটি সচলায়তনের ভাষা নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক? (শ্রেণীবিচারের কথাটা বাদই দিলাম)।

আর যদি তাই হয়, তাহলে সবিনয়ে বলতে চাই:
ব্লগবাড়ি কারো বাড়ির ডাইনিং স্পেস নয়। এখানে কেউ কারো অভিভাবকও নন।
---------------------------------------------------------------------

পুনশ্চ :
ব্যস্ততার কারণে প্রথমে দিতে পারিনি। কিন্তু আমার আরো সামান্য কিছু বলার আছে। যা বর্তমান পোস্টটির মূলভাবনাকে আরেকটু স্পষ্ট করতে পারে।

মূলত পাঠক আমার আগের করা একটি মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন এইভাবে :

“কিছু বৈপ্লবিক মন্তব্যে বিস্মিত না হয়েও পারি নি, যেখানে 'সাধারণ সংবেদনশীলতা', 'পরিচ্ছন্ন' ও 'রুচিশীল পরিমণ্ডলের' মতো বিষয়ও পাঠকের পীড়াদায়ক বলে মনে হয়েছে। তবু 'সৌজন্যের সীমারেখায়' দাঁড়িয়েই এই মতানৈক্য মেনে নিই, যেহেতু ঐ সীমারেখা আমাকে পীড়া দেয় না, পীড়া দেয় তার অভাবই। ওল্ড ফ্যাশনড আর বলে কাকে! যাক, এ জন্মে আর হাংরি জেনারেশন হওয়া হয়ে উঠলো না।”

দুটি শব্দ আমার চোখে বিশেষভাবে পড়ল।

‘বৈপ্লবিক’ আর ‘হাংরি জেনারেশন’।

‘বৈপ্লবিক’ কথাটির মধ্যে আমি উর্ধতনের শ্লেষ শুনতে পেলাম। কারণ, মন্তব্য দিয়ে বিপ্লব হয় না। এই যে ‘হয় না’ - আমার সেই অক্ষমতাকে বিকটভাবে প্রশ্ন করলো যেন এই অভিধাটি। ঠিক ক্ষমতাকাঠামোর ওপরের তলা ছুঁড়ে দেয়া তীর্যক মন্তব্যে জর্জরিত হতে হয় নিচের তলার মানুষকে যেমনটি পূর্ববঙ্গের সেই ‘রিফিউজি’টি, যে তার পা ও পোষাক লাগানো মাটি নিয়ে সদাবিব্রত, আর ভাষা যেন তাকে প্রতিমূহুর্তেই আরো বেশি বহিরাগত, আরো বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত করে তুলছে, অভিজাত ‘ভাষার সভায়’ - হয়ত তেমনটি।

আর হাংরি জেনারেশন-এর কথা কেন? মনে পড়ে এই ‘বেয়াদব’ হাংরি জেনারেশনটাকে জুতোপেটা করে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করে, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জেল খাটিয়ে, যতভাবে পারা যায় হেনস্থা করে চুপ করিয়ে দিয়েছিল ক্ষমতাশালীরা। দুঃখ, আজও বিদ্রুপ এদের পিছু ছাড়ছে না।

মনে করাই, এই ‘ব্যর্থ’ আন্দোলন (‘বিপ্লব’?) এর পুরোধা মলয় রায়চৌধুরীর লিখেছেন :

“হাংরি আন্দোলনকারীরা সমৃদ্ধ করতে চাইলেন ভাষার তহবিল, বাচনের তহবিল, বাকবিকল্পের তহবিল, অন্ত্যজ শব্দের তহবিল, শব্দার্থের তহবিল, নিম্নবর্গীয় বুলির তহবিল, সীমালঙ্ঘনের তহবিল, অধঃস্তরীয় রাগবৈশিষ্ট্যের তহবিল, স্পৃষ্টধ্বনির তহবিল, ভাষিক ইন্টারন্যাশনালিটির তহবিল, শব্দোদ্ভটতার তহবিল, প্রভাষার তহবিল, ভাষিক ভারসাম্যহীনতার তহবিল, রূপধ্বনির প্রকরণের তহবিল, বিপর্যাস সংবর্তনের তহবিল, স্বরন্যাসের তহবিল, পংক্তির গতিচাঞ্চল্যের তহবিল, সন্নিধির তহবিল, পরোক্ত উক্তির তহবিল, পাঠবস্তুর অন্তঃস্ফোটোক্রিয়ার তহবিল, তড়িত ব্যঞ্জনার তহবিল, অপস্বর-উপস্বরের তহবিল, সাংস্কৃতিক সন্নিহিতর তহবিল, বাক্যের অধোগঠনের তহবিল, খণ্ডবাক্যের তহবিল, বাক্য-নোঙরের তহবিল, শীৎকৃত ধ্বনির তহবিল, যুক্তিচ্ছেদের তহবিল, আপতিক ছবির তহবিল, সামঞ্জস্যভঙ্গের তহবিল, কাইনেটিক রূপকল্পের তহবিল ...” (প্রতিসন্দর্ভের স্মৃতি, মলয় রায়চৌধুরী)

ওপরের কোনটি ভাষার মুক্তির অন্তরায়, আজ আমি তা জানতে চাই।


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণে চমৎকৃত হলাম।
(যদিও যুক্তি তর্কের সুযোগ থাকতেই পারে)

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ। যুক্তি-তর্ক কি আর শেষ হওয়ার হাসি
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মূলত পাঠক এর ছবি

আক্রান্ত বোধ করছি না, ঘোর বিরক্ত হয়েছি। এতো গবেষণা না করে সরাসরি জানতে চাইলে অনেক পরিশ্রম বাঁচতো আপনার।

'আস্তানা' শব্দের যতোগুলো অর্থ পেয়েছেন তার অনেকগুলিই আমি সচেতন বা অসচেতন যেভাবেই হোক এনেছি, এইগুলো:
বাসস্থান/ দীনের পর্ণকুটির / অস্থায়ী নিবাস / ডেরা / আড্ডা / বসত / বাসস্থান / আশ্রয়স্থল / আস্তানা গাড়া / আস্তানা করা।

এর মধ্যে 'সদর্থক' ও ততোটা সদর্থক নয় এমন অনেকগুলো অর্থ ছিলো, বাংলা একাডেমীর ৩ ও ৪ নং অর্থ যেমন। যাক, যা আপনার চোখে পড়েছে তাই লিখেছেন, বেশ কথা। সমস্যা দেখায় নয়, 'ধরে নেওয়া'য়। একে একে বলি।

জানি না পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ইতিহাস নিয়েও আপনি এই জাতীয় গবেষণা করেছেন কি না, করলে জানতেন, পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক পাড়াই ছিলো যেখানে তাঁদের সাময়িক আস্তানা গাড়তে হয়েছিলো। জমি দখল, রাত পাহারা, এ সবই ছিলো তার অংশ। সরকার পরে হস্তক্ষেপ করে কিছু ক্ষেত্রে ও জমিবন্টন হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনেককে ক্যাম্পেও থাকতে হয়েছে, তাকেও আস্তানা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ক্যাম্পই হোক বা ঐ জাতীয় বাসস্থান, ঘরবাড়ি সম্পত্তি এমনকি পরিজন হারানো মানুষগুলোর কাছে তা সাময়িকই ছিলো, বাস্তবে বা তাদের বিশ্বাসে। সহায়সম্বলহীন মানুষ প্রাসাদ বানায় নি এটা বুঝতেও গুগল লাগে না, কাজেই সেই বাসস্থানকে "দীনের পর্ণকুটির; অস্থায়ী নিবাস; ডেরা" যেটাই বলি সব অক্ষরে অক্ষরে মেলে। পেটের ভাত জোটাতে যাদের দিন কেটেছিলো তারা কাঁচের আলমারিতে রবীন্দ্রসাহিত্য সাজিয়ে ড্রইংরুম ফেঁদে বসে নি, বলাই বাহুল্য। এবং এই আর্থসামাজিক পরিস্থিতির বদল হতে অনেক সময় লেগেছে, অনেকের সেই সংগ্রাম আজও চলেছে। "আমি কলকাতায় যে পাড়ায় বড়ো হয়েছি সেটা ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের আস্তানা" এই বাক্যটিতে তাই নিখাদ সত্য আছে, প্রচ্ছন্ন ফ্রয়েডিয় তত্ত্বের দরকার নেই এর ব্যাখ্যায়।

"জানতে পারি, পূর্ববঙ্গের বিচিত্র শব্দাবলী ‘বাড়িতে কথোপকথনে’ কাঙ্ক্ষিত নয়।" জানতে পারা নয়, এটাও আরেকটা ধরে নেওয়া, এবং ডাহা ভুল। আমি যে একথা শুধু বলি নি তাই নয়, বরং এই প্রসঙ্গে এর ঠিক বিপরীতটাই বলবো। বাড়িতে অনভিপ্রেত যে ভাষার কথা আমি বলেছি তা হলো গালিগালাজের কথা। লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে পেট চলে যাঁদের তাঁদের সন্তানেরা অনেকেই অভিভাবকের সময়াভাবে এবং পরিবেশগত কারণে ঐ জাতীয় শব্দ শেখে, এবং ব্যবহারও করে। বাড়িতে সে সব শব্দ বলা অনুচিত সে কথা বলাই বাহুল্য। এবং ভোকাব্যুলারি বলতে এই সব কথাই বলা হয়েছে। আমার ধারণা অনেক পাঠকই সেটা বুঝেছেন, কারণ মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো সেটাই।

আপনার জ্ঞাতার্থে এবং ভবিষ্যতে গবেষণার সময় বাঁচাতে জানাই, বাড়িতে পূর্ববঙ্গের ভাষা অনভিপ্রেত ছিলো না, বরং ঐ ভাষাতেই বাড়িতে অধিকাংশ বাক্যালাপ হতো। এখনো যে ঢাকা বিক্রমপুরের বাঙাল ভাষা বলতে পারি এতোদিনের অনভ্যাসে, তার কারণও ঐটাই। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে লিখি নি লেখায়, দুটি লাইনের মাঝের শূন্যস্থান নিয়ে কোনো পাঠক এতোদূর ভাবিত হবেন জানলে লিখতাম হয়তো। "নইলে আর কেন ডাক্তার-প্রফেসর-মাস্টার বনাম সব্জিওলা-গৃহপরিচারিকার এই ডাইকটমির অবতারণা?" তার উত্তর মিললো কি? এরপরেও উত্তর না মিললে আমি নাচার!

‘সুখের বিষয়’ শব্দবন্ধটির দ্বিরুক্তি আমাকে এই ভাবতে সাহায্য করছে যে, ভাষাকে নিজ শ্রেণীর কৌলিন্যের প্রকাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারার বিষয়টি মূলক পাঠককে সুখী করেছে। সন্তুষ্ট করেছে তার ভাষাভিত্তিক শ্রেণীবৈষম্য চর্চার অভিপ্রায়কে।
প্রবাসী ভিন্নভাষী মানুষেরা যখন বাড়িতে মাতৃভাষার চর্চা করতে চান তখন সেটাকেও কি আপনার কৌলিন্যসূচক মনে হয়?

সচল আমার কেন, কারোরই ডাইনিং স্পেস নয়। লেখার এই প্রস্তাবনাটি এসেছে উদাহরণ হিসেবে, গাইডবুক রূপে নয়। স্থানকালপাত্র জিনিসটা বোঝা এতো কিছু কঠিন নয়, আমরা সকলেই নানা ভাষায় কথা বলি নানা ক্ষেত্রে, সেটা বুঝতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র লাগবে ভাবি নি। কিন্তু আমার লেখা আপনাকে 'পীড়া' দিয়েছে আপনার সে মন্তব্যের কথা দ্বিতীয় ভাগে উল্লেখমাত্রই আপনি এমন কঠিন গবেষণায় বসে যাবেন এতোটা ভাবি নি। যাক, আমার অকিঞ্চিতকর লেখা যে এমন ভাবনার উদ্রেক করেছে জেনে খানিক আত্মপ্রসাদ অনুভব করে নিই, শ্রেণীশত্রু জাতীয় গবেষণাপ্রসূত বক্তব্য আসার আগেই।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কিন্তু আমার লেখা আপনাকে 'পীড়া' দিয়েছে আপনার সে মন্তব্যের কথা দ্বিতীয় ভাগে উল্লেখমাত্রই আপনি এমন কঠিন গবেষণায় বসে যাবেন এতোটা ভাবি নি

ধরে নিল কে? আমি না আপনি? যাই হোক।

১.
আরেকটা কথা বাংলা একাডেমীর সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান দেখেছি বলে আমি উল্লেখ করেছি। সেখানে আমি যতটুকু কোট করেছি এর বেশি কিছু নেই। অর্থ বোঝাতে অভিধান ও সাধারণ ব্যবহার দুটোই ব্যবহার করেছি। সরাসরি বললেই পারতাম, যে শব্দটা আমার কানে বিদ্রুপের মতো শুনিয়েছে। তারপরও কানকে বিশ্বাস করতে চাইনি। ধরে নিলেই পারতাম।

২.

এর ফল দাঁড়িয়েছিলো এই রকম যে পাড়ার ডেমোগ্রাফিটা একেবারে পাঁচমেশালি খিচুড়ি, ডাক্তার, প্রফেসর, মাস্টার যেমন আছে তেমনি আছে বাজারের সব্জিওলা, গৃহপরিচারিকা ইত্যাদিরাও।

বাক্যটি খেয়াল করুন। এই বাক্যে "যেমন আছে তেমনি আছে" এই চারটি শব্দের অবতারণা করেছেন বলেই আমি 'শ্রেণীকরণটা' দেখতে পেয়েছি। আপনি লিখেছেন বলেই আমি 'ধরে নিয়েছি'।

৩.

প্রবাসী ভিন্নভাষী মানুষেরা যখন বাড়িতে মাতৃভাষার চর্চা করতে চান তখন সেটাকেও কি আপনার কৌলিন্যসূচক মনে হয়?

তা কেন হবে?
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মূলত পাঠক এর ছবি


"আমার লেখা আপনাকে 'পীড়া' দিয়েছে" এটা ধরে নিই নি, 'পীড়া' শব্দটি সে কারণেই উদ্ধৃতি চিহ্নের ভিতর বসেছে। 'উল্লেখমাত্রই' শব্দটি ইঙ্গিত করে সময়ের, একটি প্রকাশের অব্যবহিত পরে অন্যটির প্রকাশকে। কার্যকারণ সম্পর্ক থাকতেও পারে, তবে সে কথা বলা হয় নি।


'আস্তানা' বিদ্রুপের মতো না শোনাক, খুব গরিমাবাচক যে নয় সে অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে সেটা গরীবের ঘরে পদধূলি দেওয়া হোক জাতীয় না হলেও কাছাকাছি, যেহেতু আমার পরিবারও সেখানে আস্তানা পেতেছিলো। আপনি ধরে নেন নি, প্রমাণ করেছেন অভিধান খুলে। আমি অভিধানে চারটে মানে থাকলে তার একটা এলেও খুশি থাকি, এ ক্ষেত্রে অনেকগুলিই এসেছে। সমস্যাটা ঐ মানেতে নয়, আমি যে নিজেকে ঐ আস্তানা গাড়া লোকগুলির চেয়ে আলাদা প্রমাণ করতে চাইছি সেই ধরে নেওয়াতে। এটা ধরে না নিলে সমস্যা হতো না।


যেমন আছে তেমনি আছে-তে অসুবিধা কী? ধরেই নিলেন কৌলিন্যের কথা বলেছি? যে কথা বলা হয়েছে তা হলো পারিবারিক গাইডেন্স যারা পায় ও যারা পায় না তাদের সহাবস্থানের কথা। এই মাপকাঠিতে এরা ভিন্নশ্রেণীর তো বটেই। সব মানুষকে সমদৃষ্টিতে দেখার অর্থ কি এতে বিঘ্নিত হয়?


জানালার বাইরের গালিমিশ্রিত ভাষাকে বাইরেই রেখে আসতে চাওয়া থেকে কৌলিন্যের পরিচয় যদি পাওয়া যায়, তাহলে যে মেক্সিকান পিতা চান তাঁর সন্তানেরা বাড়িতে স্প্যানিশ বলুক তাঁর আচরণটা আলাদা কিসে? তাহলে তিনিও 'ভাষায় চর্চা করছেন এই শ্রেণীবৈষম্যের' ভাবলে সমস্যা হওয়ার তো কথা নয় ঐ থিয়োরিতে।

এই কলহের প্রয়োজন ছিলো না, যেহেতু 'ভাষাকে নিজ শ্রেণীর কৌলিন্যের প্রকাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারার' মতো কোনো ইচ্ছা বা তার প্রকাশ আমার লেখায় ঘটে নি, আমি নিজেই অন্য শ্রেণীভুক্তই নই যেখানে। উত্তর দিলেন, কিন্তু আন্দাজের বশে পূর্ববঙ্গকে টেনে এনে যে 'ফ পা'টি করেছেন সে বিষয়ে আশ্চর্য নীরবতা। যাক, এবার আমি একটা কথা বরং ধরে নিই যে আর ক্ল্যারিফিকেশানের প্রবল প্রয়োজন নেই। অতএব থামি।

ভালো থাকুন।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পূর্ববঙ্গ বিষয়ক ফ-পাটি কেন করেছি সেটি, নিচে একটি মন্তব্যের প্রতিউত্তরে দিয়েছে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

যেকোনো পাঠক যে বিরক্ত হতে পারে, এটি আমি আমার পোস্টের শুরুতেই বলেছি। আর আক্রান্ত হননি শুনে ভালো লাগল।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বাংলাদেশে আঞ্চলিক শব্দের সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট শব্দের অঞ্চলভিত্তিক অর্থও পালটে যায়। যেমন, 'মাগী' শব্দটা খুলনা/বাগেরহাট অঞ্চলে দেহব্যবসায়ী নয়; বরং সাধারণ নারী বুঝাতেই অহরহ ব্যবহৃত হয়।

কৌলিণ্য জিনিসটা কোয়ালিটির সাথে সবসময় সম্পর্কযুক্ত নয়; কিন্তু মানুষের বেড়ে ওঠার পরিবেশ কোয়ালিটি থেকে আরোপিত কৌলিণ্যকে বেশি গুরুত্ব দিতে শেখাতে পারে। তখন এমনকি কোয়ালিটির সাথে দ্বন্দ্বে কৌলিণ্যকে আঁকড়ে ধরার অপরিপক্কতাও অনেকের মাঝে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে আমার বিবেচনায় 'উদ্দেশ্যে' ফিরে গেলে বিচার করতে সুবিধা হয়। যেমন, একজন নাপিত এবং একজন প্রফেসর দুইজনের উদ্দেশ্যই মানব সমাজে অবদান রেখে আয়ের মাধ্যমে জীবন-ধারণ, যেখানে দুইজনের অবদানই মূল্যবান। সময় এবং কাল ভেদে দুইজনের আয়ে পার্থক্য থাকতে পারে, জীবনাচারে পার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু এই পার্থক্যগুলো (আয় এবং জীবনাচার) কৌলিণ্যের সংজ্ঞা নিরূপণ করলে একজন অসৎ উপায়ে বেশি আয় করা মানুষ বেশি কুলীন বলে গণ্য হতে পারে। তাছাড়া এক সময়ে একজন নাপিতের আয় বেশি আবার অন্য সময়ে একজন প্রফেসরের আয় বেশি হতে পারে।

দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম। তবে আপনার পোস্টের বিশ্লেষণে চমৎকৃত হলাম।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দুর্দান্ত এর ছবি

এর চাইতে গালাগাল ভাল।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কেন?
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মামুন হক এর ছবি

এতদিন জানতাম সচলায়তনে এক পোস্টের আলোচনা সেখানে না রেখে অন্য পোস্টের অবতারণা করাকে ঘোরতরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। অতীতে আমার এক পোস্টে মডারেটর সে বিষয়ে আলোকপাত করে মন্তব্যের সুযোগ রহিত করে দিয়েছিলেন, আমিও বিনা ব্যাক্যালাপে মেনে নিয়েছিলাম। জানি না সেই নিয়মের কোনো অদল-বদল হয়েছে কি না। হয়ে থাকলে আমার এই মন্তব্যটিকে অগ্রাহ্য করার অনুরোধ রইলো।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মামুন ভাই,

প্রথমত আমি মনে করছি না এটা আরেক পোস্টের আলোচনা। কারণ, সচলভাষা নিয়ে কোনো আলোচনা নাই। এখানে আলোচনাটা হচ্ছে, ভাষা কীভাবে শ্রেণীচেতনা দ্বারা চালিত হতে পারে (হচ্ছে কিংবা হয়েছে বলছিনা) সেটি একটি নির্দিষ্ট টেকস্টকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে। ঘটনাক্রমে ওই টেকস্টটি আরেকটি পোস্টের অংশ।

দ্বিতীয়ত আমি মনে করি, এই পোস্টটি ততটাই 'আরেকটা পোস্ট নিয়ে আলোচলা', যতটা ছিল সচলভাষা ১ ও ২।

তারপরও, যদি, মডারেটররা মনে করেন, আমি এটি অবশ্যই সরিয়ে নেব। তারা নিজেরাও এটি সরিয়ে নিতে পারেন।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

স্পর্শ এর ছবি

এই পোস্টটা রেফারন্স পোস্টের একটা মন্তব্য হতে পারত।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মূলত পাঠক এর ছবি

এখন দেখতে পাচ্ছি এই পোস্টটি আপত্তিকর অভিযুক্ত। জানিয়ে রাখি, সেই অভিযোগটি আমার তরফে আসে নি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আলাদা পোস্ট না দিয়ে ওই পোস্টে মন্তব্য আকারে দিলে ভালো হতো।

------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমি আবারও পৃথক পোস্ট দেয়ার সপক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করতে চাই।

আমি যে কারণে এই পোস্টটি লিখলাম সেটি হচ্ছে, কথ্য গালাগালির লেখ্য প্রয়োগ নিয়ে যেখানে কথাবার্তা হচ্ছে, সেখানে প্রারম্ভিকাতেই 'পূর্ববাংলা'র প্রসঙ্গ কেন- এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা। লেখক তার শৈশব-কৈশোরের সময়টা তুলে ধরেছেন। সেসময়, তার পাড়ায় পূর্ববঙ্গীয় মানুষের 'আস্তানা' হওয়ায় তার 'ভোকাব' 'সমৃদ্ধ' হয়ে ওঠে। ভোকাব বলতে, তিনি পরবর্তী বলেই দিয়েছেন, বোঝানো হয়েছে গালাগালকে। এই পর্যায়ে এসে আমার মনে প্রশ্ন ওঠে, পূর্ববঙ্গের মানুষ গালাগাল সঙ্গে করে আনলেন, নাকি পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেপেলেদের সাথে মেশার সুযোগ ঘটল বলে তিনি গালাগালে সমৃদ্ধ হলেন। এখানে ভূগোলটা ম্যাটার। সেক্ষেত্রে গালাগালের পূর্ব-পশ্চিম কীভাবে নিরূপিত হচ্ছে। আর যদি বিষয়টা ভৌগলিক না হয় (ধরে নিচ্ছি শুধু পূর্ববঙ্গের লোকেরাই গাইল পাড়ে না), সেক্ষেত্র গালাগালিটা কি একটা শ্রেণীচরিত্রের লক্ষণমাত্র। আর যদি তাই হয়, তাহলে গালাগালি ব্যবহার না করাটাও শ্রেণীচরিত্রের লক্ষণ কি না। আর সেটাও যদি হয়, তাহলে এটা কি সম্ভাব যে হ্যাঁ-গালাগালা বনাম না-গালাগালের খেলাটার পেছনের একটা শ্রেণীসংঘাত কাজ করছে?

প্রশ্নগুলো আগের কোনো পোস্টের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করিনি বলেই নতুন পোস্টের অবতারণ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মূলত পাঠক এর ছবি

হ্যাঁ-গালাগাল বনাম না-গালাগালের খেলাটার পেছনে একটা শ্রেণীসংঘাত কাজ করছে কি না সামাজিক স্তরে, সে উত্তর দেওয়ার দায় আমার নয়। আমি নিজে যে এই খেলাটা খেলতে বসি নি সেটাই আরেকবার বলি। দ্বিতীয় পর্বেই হিমুর ছোটোগল্পের উদাহরণ এনে সেটা বলেছি, আপনার চোখে পড়ে নি হয়তো। প্রোফ্যানিটি নিয়ে আমার শারীরিক মানসিক কোনো সমস্যাই নেই, কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সে নিয়ে সারমন দেওয়ারও অভিপ্রায় নেই। কথাটা ছিলো স্থানকালপাত্রের (এই শব্দবন্ধটি আইনস্টাইনকেও দু চার দিনের মেয়াদে এতো বার বলতে হয় নি)। লেখার বক্তব্য যেমন ভাষার পথনির্দেশক, তেমনি লেখার জঁর/ধরণটারও সে ব্যাপারে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। মোদ্দা কথা ছিলো এইটাই। বোঝা গেলো?

স্পর্শ এর ছবি

ধুর মিয়া! রীতিমত নাম ধরে কোট করে করে লিখসেন!! আবার বলেন রিলেটেড না... চিন্তিত


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কোট করসি সত্য। রিলেটেড না এও সত্য হাসি
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

স্বাধীন এর ছবি

একই কথা বলবো, আলাদা পোষ্ট না হয়ে মূল পোষ্টে মন্তব্য হলে বেশি মানানসই হতো। এই আলোচনা মূল পোষ্টে হলেসেই পোষ্টটি ঋষ্টপুষ্ট হতো।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এইটা কোনো মন্তব্য প্রতিবেদন না। এইটা পৃথক চিন্তার পৃথক অভিব্যক্তি। মূল বিষয়টা ভাষা (বিশেষ করে শব্দপ্রয়োগ) ও শ্রেণীবৈষম্য
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শব্দপ্রয়োগ ও শ্রেণীবৈষম্য মূলত পাঠকের একটা লেখার ভাষা থেকে খুঁজে বের করে করে এনালাইসিসয়ের পোস্ট দিলে অস্বস্থিকর হয়।

আশা করি বুঝতে পারছেন।

---------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

শুভাদা, বুঝতে পারতেসি না। কারো লেখাকে স্পেসিমেন হিসাবে নেয়ার স্বাধীনতা কি আমার নাই? আমি তো এই তাবৎ বিতর্কে (হিমুর লেখাটি লক্ষ্য করুন) এতদিন অংশ নেই নাই। এখনো আমার আগ্রহ নাই। মূলত পাঠকও তো এইখানে বিষয় না। বিষয়, একটা লেখা, যেখানে গালাগালের (যেটা বৃহত্তর ভাষার একটা অংশমাত্র) প্রসঙ্গে পূর্ববঙ্গের ভাষা (গোটাটাকেই) রেফার করা হইসে। আমার কৌতুহল হচ্ছে, এইটা কেন করা হল? এরমধ্যে শ্রেণী রাজনীতিটা কী?
আমার ব্যখ্যা দূর্বল হতে পারে। ভুলও হইতে পারে। কিন্তু ব্যখ্যা তো আমি যেকোনো টেকস্টেরই খুঁজতে পারি, তাই না?

অস্বস্তিটা কোথায়?
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

না, পারেন না সেটা বলি নাই। সেই স্বাধীনতা আছে। যেকোন টেক্সট আপনি নিতে পারেন। একা মূলত পাঠককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অস্বস্থিকর বলেছি।

পশ্চিম বাংলার অনেক প্রবন্ধকারের লেখায় শ্রেণী রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায়। তাঁদের অনেকের কাছে পূর্ব-বঙ্গ শব্দটি এখনো বাংলাদেশ হয়ে উঠে নাই।

এক ছফা ছাড়া আর কেউ এগুলো নিয়ে বিশদ করেননি।

-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

মূলত পাঠক এর ছবি

যদিও আপনি অনেক প্রবন্ধকারের দলে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করেন নি, তবে প্রসঙ্গটা আমার লেখার ব্যাখ্যা নিয়ে বলেই আমার কথা ঠিক না ভুল সেইটা বলি। আমার ঐ লেখায় 'পূর্ববঙ্গ' বলতে পূর্ববঙ্গকেই বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশ তখনো জন্মায়নি, কাজেই সেটা লিখলেই ভুল হতো।

আর যে রাজ্যে আমার জন্ম তার নাম 'পশ্চিমবঙ্গ', শব্দ কাটাছেঁড়া দিবস যখন পালনই হচ্ছে তখন এটাই বা বাদ যায় কেন।

রণদীপম বসু এর ছবি

সব্বোনাশ ! বৃক্ষ এইবার শাখা-প্রশাখা মেলতে বসেছে নাকি !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

জ্বী না। বৃক্ষের একটা ডাল নিয়া মাজন বানাইতে বসছি। মাজনের কাহিনী একেবারেই ভিন্ন। স্বয়ংসম্পূর্ণ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সহজীয়া এর ছবি

মায়রে বাপ টাইপের উত্তরাধুনিক ডিসকোর্স!!
মূলভাব যা বুঝলাম-

পশ্চিমবঙ্গীয় শ্রেণিবদ্ধ মানসিকতায় পূর্ববঙ্গের বাঙাল ভাষাকে নিচুস্তরে ফেলার মানসিকতা এবং ভাষার সুন্নতে খাতনার জন্য হাংরি জেনারেশনের বিপ্লবকে টুঁটি চেপে ধরে ফেলার পেছনের তাচ্ছিল্য উঠে এসেছে মূলত পাঠকের লেখায় যা দিয়ে আসলে অশ্লীল চেতনার প্রসারী শব্দবন্ধদ্বয়ের পেছনে আমরা এক গভীর উচ্চশ্রেণীজাত কৌলিণ্যের পরিচয় পাই; ফলতঃ তা দিয়ে সচল-ভাষা নামক এক নতুন ভাষারীতির উদ্ভাবনে আপাত অসফল প্রয়াস আমরা লক্ষ্য করছি সেই লেখায়!!!!

ধরলাম এইটা ব্যক্তিআক্রমন না(মূলত পাঠক আসলে নিছকই ভাষাআধিপত্যের শ্রেণী সামন্তের প্রতিভুদের একটি কাল্পনিক প্রতীক... ইত্যাদি ইত্যাদি)। তারপরেও প্রশ্ন থাকে, এইটা কি পরোক্ষভাবে একটা ভাষাবিভাজনের প্রয়াস নয়? উপরে যে ভাষায় আমরা বিভিন্ন মন্তব্য দেখতে পেলাম সেটা কি আমাদের প্রমিত ভাষা? সুস্পষ্টভাবে কি এখানে লেখ্য এবং কথ্য ভাষার বিভাজন আমরা লক্ষ্য করছি না? যে চোস্ত ভাষায় আমরা বন্ধুবান্ধবেরা কথা বলি( কখনো তা অশেষ খিস্তি সমেত), তা অবলীলায় সচলে ব্যবহার করলে আদৌ কি মডারেশনের গণ্ডি পেরোবে? নাকি প্রাকৃতজন তথা হাংরি জেনারেশন তথা ইলিয়াসীয় তকমা আগে গায়ে এঁটে নিতে হবে?

লেখকের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার কোন ধার ধারার প্রয়োজন নাই, কাজেই একটি রাইটার্স ফোরাম হিসাবে একজন লেখক যা খুশি তাই লিখতে পারেন। একটি ব্লগ তথা কমিনিউটি ফোরামে একটি লেখার দায়বদ্ধতা কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি। সামাজিক, আর্থরাজনৈতিক একটি মূল্যবোধের প্রতি অবশ্যই আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। কাজেই চাইলেই আমি হলোকস্টের পক্ষে কিংবা মৌদুদীর সাফাই গেয়ে সুশীল লেখা এখানে ছাপাতে পারবো না। অনুরুপভাবে কাউকে অকথ্য গালিগালাজ করে চূড়ান্ত অশালীনভাবে বা রেসিস্ট/সেক্সিস্ট কিছু লিখলেও তা নিয়মাবলীর বেড়াজালে আটকে যাবে।

ভাষা আধিপত্য কি সর্বত্রই বিরাজমান নয়। প্রতিটি কথ্য ভাষাই মূলত আধিপত্যশীল একটা ভাষারীতিকে রিপ্রেজেন্ট করে। ইসরাইলের ত্রাণবাহী জাহাজের হামলার প্রতিক্রিয়ায় আমরা বন্ধুমহলে যা বলাবলি করি, যেমন-
খানকির পোলা ইস্রায়েলি মাদারচোদগুলা বহুত বাইরা গেছে! বিনা উস্কানীতেই রিলিফ ফ্লোটিলায় এটাক মারাইছে।
তা যদি সচলে পোস্ট হিসেবে দেই তবে তার শালীনতার মাত্রা কে নির্ধারণ করবে? তার চেয়েও বড় কথা কিসের আলোকে?

পাইক্কাদের আম্মো হেইট করি। প্রকাশ্যে গালি দেই। সচলে যদি সেই গালি আমি দেই তাতেও কারো আপত্তি আমার গায়ে লাগবে; তবে তার চেয়েও বেশি গায়ে লাগবে যদি এর পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো যুক্তি দেয়া হয়।

হেইট কারণ মেনে চলে কিন্তু কখনোই লজিক মেনে চলেনা। লজিকাল হেইট বলে কিছু আমার জানা নেই। একইভাবে সেইন্টিমেন্টাল লজিক বা লজিকাল সেন্টিমেন্ট বলেও কোনকিছুতে আমার আমল নাই। লজিক এবং সেন্টিমেন্টকে একসাথে মিশিয়ে নিয়ে তারপরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তার পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে একধরণের সার্কুলার লজিক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

অনেক ধন্যবাদ।

________________________________
বিধিবদ্ধ পঙ্কিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
************************************

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

তবে, 'ভাষা আধিপত্য কি সর্বত্রই বিরাজমান' বলে একে বিনাবাক্যে মেনে নেয়ার কোনো কারণ তো দেখতেসি না। আর ভাষাতো 'স্থান-কাল-পাত্রে' বিভাজিতই। একে খামাখা টেপ মাইরা জোড়া লাগানোর দরকার নাই। খালি এইটা স্বীকার কইরা নিলে ভালো ভাষা 'স্থান-কাল-শ্রেণী'তে বিভাজিত।

পাকিস্তানিদের গালি দেয়া না দেয়া নিয়ে আমার এই পোস্টটা না।

আবারো ধন্যবাদ জানাই।

পুনশ্চ :

আপনার মন্তব্যের এই অংশটুকুর সাথে আমি অনেকটা একমত :

"পশ্চিমবঙ্গীয় শ্রেণিবদ্ধ মানসিকতায় পূর্ববঙ্গের বাঙাল ভাষাকে নিচুস্তরে ফেলার মানসিকতা এবং ভাষার সুন্নতে খাতনার জন্য হাংরি জেনারেশনের বিপ্লবকে টুঁটি চেপে ধরে ফেলার পেছনের তাচ্ছিল্য উঠে এসেছে মূলত পাঠকের লেখায় যা দিয়ে আসলে অশ্লীল চেতনার প্রসারী শব্দবন্ধদ্বয়ের পেছনে আমরা এক গভীর উচ্চশ্রেণীজাত কৌলিণ্যের পরিচয় পাই; ফলতঃ তা দিয়ে সচল-ভাষা নামক এক নতুন ভাষারীতির উদ্ভাবনে আপাত অসফল প্রয়াস আমরা লক্ষ্য করছি সেই লেখায়!!!!"

- কেবল শেষের ৪টি বিস্ময়বোধক চিহ্ন ছাড়া।

_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সহজীয়া এর ছবি

কেবল শেষের ৪টি বিস্ময়বোধক চিহ্ন ছাড়া।

কিছুটা বিনোদনসঞ্জাত তীব্র এক বিস্ময়বোধে আক্রান্ত হয়েই যে এই মুলভাবের পাঠোদ্ধার! আসুন তবে দেখি,

মাত্র চারটি লাইনের আলোকে আপনার এই সুবিশাল উত্তরাধুনিক পোস্টের দ্বারা রীতিমত মূলত পাঠক কে ভাষাআধিপত্যের শ্রেণী সামন্তবাদের প্রতিভুদের একটি কাল্পনিক প্রতীক বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার বিশ্লেষণের ধারা-

১. ....আমি কলকাতায় যে পাড়ায় বড়ো হয়েছি সেটা ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের আস্তানা।

নানাবিধ অর্থ এবং কতিপয় বাক্যপ্রয়োগ থেকে আপনার সিদ্ধান্ত-
...পূর্ববঙ্গ থেকে ‘আসা’ মানুষরা এই বাক্যে কাঙ্ক্ষিত নন।
বাক্যটি দাঁড়িয়ে আছে ভাষার শুদ্ধতার রক্ষাকর্তার ভূমিকায়।
ভাষায় কাঙ্ক্ষিত নয় পূর্ববঙ্গ।

ক্যামনে কি? স্রেফ সংবাদে ব্যবহৃত কিছু বাক্যের উদাহরণ থেকে এই মারাত্মক সমাধানে পৌঁছে গেলেন? আস্তানা শব্দের বাক্য ব্যবহারে কথাসাহিত্যিকদের উদাহরণটা কি দেওয়া যেত না? সৈয়দ মুজতবা আলী, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেকেই এই শব্দ বহুলভাবে তাদের লেখায় এনেছেন। ঠিক কোথায় তা হেয় করে ব্যবহৃত হয়েছে তা বুঝি নাই। ইন ফ্যাক্ট শব্দটা যে তুচ্ছার্থক তথা হেয়বাদী সেটাও এই প্রথম বুঝতে পারলাম। থাকার জায়গা=আস্তানা=কথ্যরীতি সমীকরণেই এতদিন অন্ধের মত আশ্বস্ত ছিলাম!

২। ...একেবারে পাঁচমেশালি খিচুড়ি, ডাক্তার, প্রফেসর, মাস্টার যেমন আছে তেমনি আছে বাজারের সব্জিওলা, গৃহপরিচারিকা ইত্যাদিরাও’।

...পাড়ার মাঠে খেলতে আসা বালকদের মুখের ভাষা’ ঐ বালকরা নিজ নিজ ‘বাড়িতে কথোপকথনে’ও ব্যবহার করে না এমন কোনো ইশারা আমরা পাইনি। সুতরাং ঐ শব্দাবলী ব্যবহারে আপত্তির মূলে রয়েছে সেগুলোর ব্যবহারকারীরা স্বয়ং।

সকলস্থানে সকল কথ্যরীতির ব্যবহার কাংক্ষিত নয়। এই ব্যাপারটি কি সেখানে স্পষ্ট নয়। আগের কমেন্টে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যে কথোপকথনের উদাহরণটি আমি দিয়েছি তা কি আমরা নিজ বাড়িতে ব্যবহার করতে পারি?(প্রাকৃতজন তথা হাংরি জেনারেশন তথা ইলিয়াসীয় তকমা আগে গায়ে না এঁটে??) যদি না পারি তবে সেটা উল্লেখ করা কি মারাত্মক দোষের কিছু???

এরপরে একেবারে ইহজাগতিক, ভৌগলিক মর্মোদ্ধার করে পাওয়া গেলো যে,
...মূলত পাঠক কি এই হায়ারর্কিকে মেনে নিচ্ছেন? ভাষায় চর্চা করছেন এই শ্রেণীবৈষম্যের? তিনি কি এই বৈষম্যের পদ্ধতি টিকে থাকাতে কিংবা টিকিয়ে রাখতে পেরে সন্তুষ্ট?

কস কি মমিন? এলাকার মাত্রিকতা, প্রান্তিকতা এবং পেশাগত বিভিন্নতার একটা আন্দাজ সংক্ষেপে দিতে গেলে তবে ক্যামনে দেই? ইহা উল্লেখ করলেই আমি শ্রেণীবাদী(বর্ণবাদী থেইক্যা কপি করলাম আর কি!), আধিপত্যবাদী হইয়া গেলাম? সাধে কি বলে উত্তরাধুনিকতা বড্ড জটিল! সবই এ্নটেনার উপ্রে দিয়া যায়!!

৩। ‘...সুখের বিষয়, বাড়িতে কথোপকথনে সেই জ্ঞানের কতোটা প্রয়োগ করবো, সে হুঁশ গজাতে সময় লাগে নি বিশেষ। ভাষা ব্যবহারের প্রসঙ্গে স্থান-কাল-পাত্র ব্যাপারটা যে ঐ সমৃদ্ধ ভোকাবের দাপটে আচ্ছন্ন হয়ে যায় নি, সুখের বিষয় সেটাই।’

ফলাফল-
‘সুখের বিষয়’ শব্দবন্ধটির দ্বিরুক্তি আমাকে এই ভাবতে সাহায্য করছে যে, ভাষাকে নিজ শ্রেণীর কৌলিন্যের প্রকাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারার বিষয়টি মূলক পাঠককে সুখী করেছে। সন্তুষ্ট করেছে তার ভাষাভিত্তিক শ্রেণীবৈষম্য চর্চার অভিপ্রায়কে।

২ এর সিদ্ধান্তের সপক্ষে মারাত্মক জোরালো প্রমাণ(!!) হিসেবে আমাদের সামনে সাক্ষী হিসেবে জ্বলজ্বল করছে দুইবার কওয়া সুখের বিষয়!!

৪। ...‘বৈপ্লবিক’ আর ‘হাংরি জেনারেশন’।

‘বৈপ্লবিক’ কথাটির মধ্যে আমি উর্ধতনের শ্লেষ শুনতে পেলাম। কারণ, মন্তব্য দিয়ে বিপ্লব হয় না। এই যে ‘হয় না’ - আমার সেই অক্ষমতাকে বিকটভাবে প্রশ্ন করলো যেন এই অভিধাটি। ঠিক ক্ষমতাকাঠামোর ওপরের তলা ছুঁড়ে দেয়া তীর্যক মন্তব্যে জর্জরিত হতে হয় নিচের তলার মানুষকে যেমনটি পূর্ববঙ্গের সেই ‘রিফিউজি’টি, যে তার পা ও পোষাক লাগানো মাটি নিয়ে সদাবিব্রত, আর ভাষা যেন তাকে প্রতিমূহুর্তেই আরো বেশি বহিরাগত, আরো বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত করে তুলছে, অভিজাত ‘ভাষার সভায়’ - হয়ত তেমনটি।

আর হাংরি জেনারেশন-এর কথা কেন? মনে পড়ে এই ‘বেয়াদব’ হাংরি জেনারেশনটাকে জুতোপেটা করে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করে, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জেল খাটিয়ে, যতভাবে পারা যায় হেনস্থা করে চুপ করিয়ে দিয়েছিল ক্ষমতাশালীরা। দুঃখ, আজও বিদ্রুপ এদের পিছু ছাড়ছে না।

মূলত পাঠকের লেখায় ঠিক কীভাবে এই সারমর্ম এসেছে তা অধমের মাথায় কিছুতেই ঢোকে নাই। স্রেফ নিজের অপারগতা বোঝাতে তিনি কি তা উল্লেখ করেন নি? দেখি তার কথা-
....তবু 'সৌজন্যের সীমারেখায়' দাঁড়িয়েই এই মতানৈক্য মেনে নিই, যেহেতু ঐ সীমারেখা আমাকে পীড়া দেয় না, পীড়া দেয় তার অভাবই। ওল্ড ফ্যাশনড আর বলে কাকে! যাক, এ জন্মে আর হাংরি জেনারেশন হওয়া হয়ে উঠলো না।

এখানে জুতোপেটা(!), বরখাস্ত(!), বিদ্রুপ(!) কইত্থাইক্যা আইলো!!!!!
**********************************************************
আশা করি এতগুলো বিস্ময়ের কারণ বোঝাতে পেরেছি।

পাকিস্তানিদের গালি দেয়া না দেয়া নিয়ে আমার এই পোস্টটা না।

এইটা যেহেতু চেইন রিএকশন টাইপের পোস্ট(পাকিস্তানীদের অপকর্ম এবং তার ফলে উৎপন্ন ঘৃণাজাত গালাগালি=>সচলভাষার মান নিয়ে আলোচনা=>আধিপত্যকামী পশ্চিমবংগীয় ভাষা) তাই মূল নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয় বলে মনে করি। হয়তো এই পার্টিকুলার পোস্টের ক্ষেত্রে অপ্রাসংগিক তবে সামষ্টিকভাবে খুব একটা অপ্রাসংগিক না।

ভাষা আধিপত্য কি সর্বত্রই বিরাজমান' বলে একে বিনাবাক্যে মেনে নেয়ার কোনো কারণ তো দেখতেসি না।

সেজন্যই আগের কমেন্টে লেখক এবং ফোরাম সংক্রান্ত আলোচনাটি করেছিলাম।

আর কিছুই বলার নেই। অনেক ধন্যবাদ। সতত শুভকামনা।
________________________________
বিধিবদ্ধ পঙ্কিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
************************************

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রথমত 'শ্রেণীবাদ' শব্দটা যোগানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ।


আপনার কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। বুঝলামও অনেকটা। 'উত্তরাধুনিকতা' নিয়ে আপনার রাজনৈতিক/মতাদর্শিক অবস্থানও আঁচ করলাম। আমাকে বিশ্লেষণে উত্তারধুনিক লেবেল লাগিয়ে দেয়ার কারণটি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সন্দেহ করি, এই লেবেলিংয়ের যতগুলো সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সবার প্রথমে দেয়া দেরিদার উক্তিটি। বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে ভাবাচ্ছে। সেকথা অন্যত্র বলব।


দেরিদাকে নিরূপায় আবারো কোট করছি :

"a 'text' is henceforth no longer a finished corpus of writing, some content enclosed in a book or its margins, but a differential network, a fabric of traces referring endlessly to something other than itself, to other differential traces. Thus the text overruns all the limits assigned to it so far ..." (Lving On, Jacques Derrida)

এটা বিশ্লেষণপদ্ধতির প্রশ্নমাত্র। ব্যক্তিশত্রুতার নয়।

অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শরতশিশির এর ছবি

ভাল লাগেনি, অনিন্দ্য। এর চেয়ে ভাল কিছু তোমার কাছে আশা করি। যেটা মূলোদা'র পোস্টে প্রতিমন্তব্যে আসতে পারতো, সেটা নিয়ে আলাদা পোস্টের কীই বা দরকার ছিলো।

আরও ভাল লাগেনি, তোমার 'পূর্ববঙ্গ' নিয়ে ডাইকোটমি। মূলোদা'র বক্তব্য পুরো ভুল বুঝে বলেছো, যেটা উনি আবার বলতে বাধ্য হয়েছেন। ভাল করে পড়ে তো বলার দরকার ছিল, নাকি?

আরও কিছু দুই দুইবার লেখে মুছে দিলাম। দেখা হলে তোমার সাথে এ নিয়ে বিস্তর আলাপ হবে।

ভাল থেকো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আপনার খারাপ লেগেছে জেনে ভালো লাগল। সবসময় ভালো লাগার জন্য ভালো ভালো গুডি গুডি টাইপ লেখা লেখা যায় না আপা। আর এইটা কেন স্বতন্ত্র পোস্ট সেইটা আমি বহুবার ব্যাখ্যা দিসি। যদি এতে আপনি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে কী আর করার। নিশ্চয়ই কথা হবে। তখন মুছে দেয়া কথাগুলা মন দিয়া শুনব।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শরতশিশির এর ছবি

আমি ঘুমোতে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু দেখে বলছি আর কি।

''গুডি গুডি টাইপ'' এনালিসিস তোমার কাছে কেউ চায় নি, তোমার দেখায় ভুল ছিলো শুধু সেটাই বলছি। এবং তোমার কাছে সেটা এক্সপেক্টেড না, কারণ তোমার জীবনদর্শণ দেখার ''চোখ'' আছে অনেকের চেয়ে পরিণত, বাই ট্রেইনিং অ্যান্ড বাই ইন্টেরেস্ট।

আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না, সেজন্য বলি নি কিন্তু! কষ্ট পেলে বরং আমার খারাপ লাগবে। হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি


আপা, আপনি আমাকে ওভাররেট করলেন বোধ হয়। আমার ট্রেইনিং (যদি তথাকথিত উচ্চশিক্ষা বুঝান) যেখানে হয়েছে, সেইখানে বছরের পর বছর চোখে সাম্রাজ্যবাদী বালি ঢালার চেয়ে বেশি কিছু হয় নাই। আমি সেই বালি ধোয়ার চেষ্টা করছি মাত্র।


অনেকসময় হয় কি, আপনি যা লিখতে চান, আপনার লেখাটা তা বলে না। লেখাকে লেখকের থেকে ডিসোসিয়েট করে যেকোনো সম-আলোচনার সীমানা কতটুকু এই নিয়ে থিওরিটাকাল 'মীমাংসা' আজও হয়নাই। ইয়েটসের প্রশ্নটাই করি : How can we know the dancer from the dance? আমি কেবল চেষ্টা করেছি dance টাকে ধরতে। এতে dancer এর ছবিটা যতটুক না আসলেই না, ততটুকই আসছে। মূলত পাঠক আমার অপ্রিয় কেউ তো না-ই, বরং পছন্দের ব্লগার। কিন্তু এইটা আমাকে এই পোস্টে বলতেই হবে, সেটা আগে বুঝি নাই।

আপনি কষ্ট পান, আমিও তা চাইনা। সত্যি।

_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শরতশিশির এর ছবি

আমার প্রথম মন্তব্য লম্বা হয়ে যাচ্ছিলো দেখে যা যা বলতে গিয়ে বলি নি, এখন আসলেই বলতে হবে।

ক্রিটিসিজাম তোমার স্ট্রাকচারালি ভুল কেন, দেখো।

যে ট্রেইনিং তুমি পেয়েছো (উচ্চশিক্ষা, দেখার চোখ, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ইত্যাদি ইত্যাদি, যা-ই বলো না কেন), সেখানে কিন্তু ''ক্রিটিকাল এনালিসিস' বলে একটা বিষয় আমরা শিখেছি। তুমি পেয়েছো কী-না জানি না, থার্ড ইয়ারে আমাদের একটা কোর্সই ছিল 'ক্রিটিকাল থিউরি' নামে।

যতদূর আমি শিখেছি অল্প কয়েকটা ক্লাস করে (আমি সেকেন্ড ইয়ার থেকেই চাকরি করতাম), তা হলো, তুমি যখন এনালিসিস/ ক্রিটিসিজম করবে, তখন হয় একই লেখকের কয়েকটা মৌলিক রচনা থেকে কোট করে ক্রিটিক করবে কোন সাব্জেক্ট নিয়ে, আর তা না হলে, একটা থিম/ টপিক চুজ করে সেটা নিয়ে কয়েকজন লেখকের মৌলিক রচনা টেনে এনে একটা কম্প্যারেটিভ বিশ্লেষণ করবে। সেই ডিসকোর্সে আবার অন্য ক্রিটিকদের কথাও টানতে পারা যায় রেলেটিভ হলে, বা বলা যায়, আনলে ভাল হয়।

মুশকিল হলো, তুমি অ্যাজাম্পশানে আগেই চলে গেছো। তোমার রেফারেন্স পয়েন্ট মাত্র একটা লেখা থেকে টেনে আনা কয়েকটা লাইন মাত্র। প্লাস, সেগুলোও ভুল বুঝার খেসারত/ ফলাফল হলো এই পোস্ট। যা-ই তোমার কনফিউশান/ কোয়েশ্চন ছিল, সেটা আলাদা করে 'পোস্ট' করে দেবার কোন দরকার ছিল না, যেটা আগেও বলেছি, অন্যরাও বলেছেন। কাজেই, যতই ডিকশনারি ঘেটে মিনিং বের করো না কেন, আর একটা লম্বা-চওড়া আপাতঃ দেখে মনে হওয়া ক্রিটিক করো না কেন, এটা আসলেই লিটারেরি ক্রিটিসিজম হয় নি। কারণ, আগের প্যারা দ্রষ্টব্য।

মূলত পাঠক যেভাবে নিজের নাড়ির/ শেকড়ের উৎপত্তি নিয়ে তোমার লেখাতে আর মন্তব্য ঘরে এসে বিশদ ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হলেন, উনি ব্রড মাইন্ডেড হতে পারেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতায় (আমি মনে করি, তিনি আসলেই তাই, জাস্ট ওঁনার লেখাগুলো দেখো), বা বলতে পারো তোমার অজ্ঞতায় উনি বরং তোমাকে বুঝাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু এই লিবারেল আমিও খুব অফেন্ডেড হতাম। উনি বলছেন না, কিন্তু আমি শিউর উনি হয়েছেন। তোমার কেমন লাগতো যদি তুমি নিজে বাস্তুহারা হতে, বাইরে থাকতে আর শুধুমাত্র শিকড়ের টানে এখানে এসে অনেক, অনেক সময়, মেধা, আর শ্রম দিয়ে বরং 'সচলায়তন'-এর জন্যে, এখানকার লেখার মানের জন্য, পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য (যেন সব বয়সের, রুচির লোক নিঃসংকোচে এসে পড়তে, লিখতে পারে) কাজ করে যেতে, এবং এত কিছুর পরেও মানুষ এসে ভুল বুঝছে আর তোমার মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছে? ভাল লাগতো না, তাই না? সেটাই। নীচে আনিস ভাইয়ের মন্তব্যটাও খেয়াল করো।

আমার কী মনে হয় জানো, তোমার উচিত হবে মূলো'দার সাথে পার্সোনাল কন্ট্যাক্ট করা। তাহলে অনেক ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে। এই কন্ট্যাক্টের মানে এই না যে, তুমি ব্যাক ডোর পলিটিক্স করছো। এটা এজন্যই করা উচিত যেন দিনের শেষে আমরা যে অ্যাগ্রি করি টু ডিস্যাগ্রি, সেটাই বজায় রাখা। আমরা কেউই চাই না উনি চলে যাক, কাজেই তুমি কন্ট্যাক্ট করো। ঠিক আছে?


কিছুটা অফটপিক (যদিও এটা আমি কালকে লেখতে চেয়েছিলাম, পরে মুছে দিয়েছি), আমার মায়ের দিক থেকে আমাদের 'আস্তানা' কিন্ত মুর্শিদাবাদে, আবার নানা-দাদা ওঁনাদের শিক্ষা-বিয়ে-সংসার-চাকরি সব কল্কাতাতেই ছিলো। আব্বু ছোট বয়সে কলকাতায় পড়া, মানুষ হওয়া। তারপর না এপারে আসা। আমার মায়ের আজকে 'ছোট খালাম্মা' (আমরা 'ছোট নান্না' বলি) মারা গেছেন কুল্টিতে, আমার মামারা আছেন কলকাতায়। বুঝতে পারছো তো, আমাদের কিন্তু বৃহত্তর পরিবারের একটা বড় অংশ ওপারে রয়ে গেছে। দেশ ভাগ কখনও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। বিশেষ করে, যখন জন্ম-বিয়ে-মৃত্যুর মতো ব্যাপারগুলো ঘটে। হ্যাঁ, আমরা বাংলা-উর্দু দু'টোই বলতে পারি (উর্দুতে অবশ্য আমরা কাজিনরা তত ফ্লুয়েন্ট না, এবং বলিও না), দু'পারের রান্না আমাদের বাড়িগুলোতে রাঁধা হয়, এবং তথাকথিত 'শুদ্ধ বাংলা' যেমন আমরা বলতে পারি, আবার তেমনি 'গেঁয়ো ভাষা'-ও বলতে পারি। কিন্তু, আমার ওপারের সাথে কানেকশান আছে দেখে যদি কেউ আমাকে বিদ্রুপ (ঠাট্টা ঠিক আছে) করে 'ঘটি' বলে, কিম্বা বলে, ''ও, তোমরা তো করেছি-খেয়েছি ছাড়া কিছু বলতে পারো না'' বলে, তাইলে তো সেটা 'স্টেরিওটাইপিং' করা হয়ে গেলো, তাই না? সেটা আমার পছন্দ না, এই এক কাতারে ''ওয়ান সাইজ ফিটস অল'' ছাঁচে ফেলে দিয়ে, যেটা তুমি অটোম্যাটিকালি অ্যাসাম্পশান করে নিয়েছো মূলো'দাকে নিয়েও। একদম, একদম ঠিক না, অনিন্দ্য!

আবার ব্যাক টু দি প্যাভেলিয়ান। চোখ টিপি

না, তুমি যেখানে পড়েছো, সেখানে পড়ে যে অনেক কিছু 'এক্সট্রা' শিখে গেছো, তা না কিন্তু। বা, আমিও পড়ে জগৎ সংসারের একজন 'বিশিষ্ট' দিগগজ হয়ে গেছি, তা-ও না। কিন্তু, আমরা নানাদিক থেকে একটা ব্যাপার দেখার টেন্ডেন্সি অর্জন করেছি, যা 'সাহিত্য' প্রচুর পড়লে এমনিতেও আসে। আসল কথা হলো, তুমি কী নিয়ে বেরিয়েছো। এটা এখন বুঝবে না, আরও যখন বয়সে এবং কাজে আরও কিছু অভিজ্ঞতার ঝুলি যোগ হবে, তখন বুঝতে পারবে। তোমার বয়সে আমারও তোমার মতো মনে হতো।

ভাল থেকো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

মূলত পাঠক এর ছবি

শরতশিশির,

অনেক ভালো কথা বলেছেন আমার নামে, তাই ধন্যবাদ জানাতে এই মন্তব্য। আরেকটি কথা, আপনি লিখেছেন "আমরা কেউই চাই না উনি চলে যাক", সে নিয়ে চিন্তা করবেন না। 'সুশীল' নামক গালিটা আমার জন্য আংশিক হতে পারে, কিন্তু পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়, আমি এসব সামান্য কারণে সচল ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবি না। সচলায়তনের সাথে নীতিগত তফাত ছাড়া অন্যান্য কারণের কোনোটাই ছেড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। সে কারণেই ব্যক্তিগত যোগাযোগ করাটা দরকারি নয়।

আনিস সাহেবও কিছু ভালো কথা বলেছেন, এর নিচে, ওঁকেও সেই মহানুভবতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

ভালো থাকুন।

শরতশিশির এর ছবি

মূলো'দাঃ

জেনে ভাল লাগলো। এই রকম উল্টপুরাণ ব্যাখ্যা, আর কারও কারও একতরফা জিদ আর বোকামী দেখে বিরক্ত হই মাঝে মাঝেই। কিন্তু সব মিলিয়েই আমরা একটি পরিবার, আমিও তাই-ই মনে করি, আর তখন সেই ছোটখাট অস্থিরতা অভারলুক করে যাই। তবে আমি বলি-ও, যখন বলার থাকে, কারণ না বললে কিছু ব্যাপার শুধু ঘটতেই থাকে অহেতুক।

আর, আপনার পোস্টগুলো দেওয়া ঠিক আছে, সেটা আপনি জানেনও।

ভাল থাকবেন। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

হিমু এর ছবি

আর, আপনার পোস্টগুলো দেওয়া ঠিক আছে, সেটা আপনি জানেনও।

আমি মূলত পাঠকের সচলভাষা পৃথক পোস্ট হিসেবে দেখে বিচলিত নই, যদিও এই পোস্টটিকে পৃথক পোস্ট আকারে দেখে মনে হয়েছে এটি একটি মন্তব্য হিসেবে পাঠকের পোস্টেই স্থান পেতে পারতো।

কিন্তু আপনি যে যুক্তি দিলেন, যে এক ব্যক্তির কয়েকটি বাক্য টেনে এনে বিশ্লেষণ করলে সেটি পৃথক সমালোচনা পোস্ট হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না, সেই একই যুক্তি আপনি সারপ্রাইজিংলি মূলত পাঠকের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছেন না। আপনার যুক্তি অনুসরণ করলে আমিও মূলত পাঠকের কাছে খানিকটা অনুযোগ করে বলতে পারি, মূলোদা আপনি কেন আমার পোস্টে ঐ সুচারু সমালোচনাটি মন্তব্য আকারে দিলেন না, বিশেষ করে পুরো পোস্টটিই যখন আমার একটি পোস্টের একটি মাত্র বাক্য এবং তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে লেখা?

আমরা একই যুক্তি খাটিয়ে দুটি পৃথক ফল পাই, যখন আমাদের একটা অন্তর্নিহিত বায়াস থাকে। আপনার মধ্যে এই বায়াসটাকে চিহ্নিত করতে পেরে উপকৃত হলাম। সব শিক্ষাই জীবনে কোনো না কোনো সময় কাজে আসে, এটাও আসবে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

শরতশিশির এর ছবি

উফ্‌, তুমি! হাসি

না হিমু, মূলো'দার প্রথম পোস্টে তোমার আর তাসনীম ভাই - দুজনের পোস্ট স্যাম্পল হিসেবে এসেছিলো, টপিক ডিসকাশন করতে গিয়ে। তুমি পোস্টে গিয়ে দ্যাখো। সেটা কম্প্যারিটিভ এনালিসিস ছিলো। আর অনিন্দ্য শুধু কয়েকটা লাইন টেনে এনে বলেছে মাত্র একটা লেখা থেকে, তা-ও সেটা বুঝার ভুল। কাজেই, দু'টো ভিন্ন বিষয়। আর, পোস্টের নাম 'সচল ভাষা' না হয়ে, 'সচল পরিবেশ' হলে মনে হয় বেটার হতো, যেহেতু মূল বক্তব্য সেটাই ছিলো।

দ্বিতীয় পোস্টটা রিএকশ্যানারি পোস্ট ছিলো ওঁনার, যেটা না দিলেও চলতো। তবে যেহেতু উনি বলেছেনই যে, সব মন্তবের উত্তর মিলিয়ে লিখেছেন, তাই আবার পোস্ট দিয়েছিলেন। তাই না? সেজন্য আমি আর কিছু বলি নি, কারণ যা বলার আগেই বলেছি।

আমরা সব কিছুতে একমত সব সময় হই না, হিমু, সেটা হওয়াও সম্ভবপর না। তাহলে তো সবাই সবার 'ক্লোনড' ভার্সন হয়ে যেতো। এটা তো বুঝো যে, তোমার মেসেজ দেবার ক্ষমতা আছে, ইউ ক্যান রাইজ আপ টু দি অকেইশান। একজন লেখক হিসেবে সেজন্য তোমার অনেক দায়িত্ব। তুমি পাকিদের গালি দিচ্ছো, দাও না, সেটা কে মানা করলো, কিন্তু সেটা যদি একটা ম্যাসেজের সাথে যায়, যেখানে হাজার হাজার পাঠক পড়ছে, সেখানে যারা গালি দিয়ে/ শুনে অভ্যস্ত না, তারা কিন্তু ঠিকই অস্বস্তিতে পড়বে, তা-ও এরকম সবচেয়ে বাজে গালি, যেটা আমার মুখ থেকে কোনোদিন বের হবে না। আমি-ও পড়েছি, সেজন্য আপত্তি জানিয়েছি। সেটা বলা মানে তোমাকে 'না' বলা নয়, তোমাকে হেইট করা নয়, তোমাকে কর্ণার্ড করা নয়। সো, খামাখা ভুল বুঝো না।

এখনও বায়াসড বলবা তুমি আমাকে? এইবার আমি তোমাকে গালি দেবো কিন্তু! চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

হিমু এর ছবি

আপনি দয়া করে যখন আমার সাথে কোনো তর্কে নামবেন, তখন খোঁড়া যুক্তি এড়িয়ে চলবেন। অনিন্দ্য রহমান যদি এই পোস্টটা সংশোধন করে কৌস্তুভদা, যিনি মূলোদার মতোই পূর্ববঙ্গে শেকড় রেখে যাওয়া মানুষ, তার একটি পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে বা উদ্ধৃতি দিয়ে একটি বাক্যব্যয় করে, তাহলেই কি ফস করে পোস্টের সব ত্রুটি উবে গিয়ে সেটি একটি স্বতন্ত্র পোস্ট হিসেবে প্রকাশযোগ্য হয়ে যাবে? তখন সেটাকে কমপ্যারাটিভ অ্যানালাইসিস তঘমা এঁটে হালাল বলে চালিয়ে দেয়া যাবে? মূলোদা কী বলেন?

আপনি আপত্তি জানিয়েছেন, তাতে তো আমার আপত্তি নেই। খারাপ লাগলে আপত্তি জানাবেন। কিন্তু যখন যুক্তি দিয়ে দুটো সমান জিনিসের একটাকে হারাম আর আরেকটাকে হালাল বলতে যাবেন, তখন নিজের বায়াসটাকে আর ডিফেন্ড করতে যাবেন না। সেটা আরো করুণ দেখায়।

গালি দিয়ে আমিও অভ্যস্ত না। আই রোজ আপ টু দ্য ওকেশান, অ্যান্ড শাভড দ্য ডার্টিয়েস্ট রাউন্ড আপ দ্য ব্যারেল। পাকিস্তানীদের গালি দিতে দেখে যাদের কোমলচিত্ত কুঁকড়ে গেছে, তাদেরকে তো আমি টেনে হিঁচড়ে আমার সাথে সুর মেলাতে বলিনি। যে আমার সাথে একই গালি দিচ্ছে না, তার ওপর গিয়ে চড়াও হইনি, বলিনি তুই আমার সাথে একই গালি না দিলে পাকিস্তানের দোসর। যে গালি দিতে চায় না, সে দেবে না। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়া মাড়ির জন্য সুপারি চিবিয়ে নরম করে দেয়ার যে মহান দায়িত্ব আমার কাঁধে চাপাতে চাইছেন, আমি সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানাই। পাকিস্তানীদের দেয়া আমার গালি ভালো না লাগলে সেটা মন্তব্যে জানান, ১ রেটিং মারেন, আমার লেখা বর্জন করেন, কেউ বাধা দেবে বলে মনে হয় না।

আমি আবারও ধিক্কার জানিয়ে যাই আপনার অসততাকে। গোল গোল কথা সাজালেই সেটা যুক্তি হয় না, আর যুক্তি যুক্তিই। হোয়াট ইজ গুড ফর গুজ, ইজ গুড ফর গ্যান্ডার।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

শরতশিশির এর ছবি

হিমু, ''খোঁড়া যুক্তি'', 'অসততা'' - এসব বলার পর মনে হয় না আমার আর কিছু বলা উচিত। তুমি একাই বলতে থাকো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

মূলত পাঠক এর ছবি

হিমু,

জানতে চেয়েছেন আমার মত, বলি সে কথা। মন্তব্য আলাদা পোস্ট হওয়া উচিত কি না সে নিয়ে আমি আমার যৎসামান্য সচলের ইতিহাসে কখনো কোনো মন্তব্য করি নি। এ নিয়ে আমার কোনো দৃঢ় সমস্যা নেই, সচলের পলিসি হিসেবে যা আছে সেটি সম্ভবতঃ কিছু বিতর্কিত সিচুয়েশন এড়াতে, এর থাকার কারণটা আমার ধারণা নৈতিকতার কারণে নয়। তবে এ সবই আমার ধারণা, নীতিনির্ধারণে আমার কোনো ভূমিকা নেই।

আমার লেখার কাটাছেঁড়া হয়েছে এই পোস্টে, তা নিয়েও আমার সমস্যা ছিলো না। কিন্তু ঐ অতিসূক্ষ্ণ বিশ্লেষণটি প্রকাণ্ড ভুল কিছু অ্যাসাম্পশনের উপর দাঁড়ানো, সমস্যা সেখানেই। তবে সে কথা আগেই হয়েছে অনেক।

আপনার যে লেখাটির বাক্যাংশ নিয়ে এতো আলোচনা, সেটি একটি উদাহরণ ছিলো। একটি লেখায় একটি গালি এলেই পরিবেশ কলুষিত হয়ে যাবে এমন ধারণা আমারও নয়। কিন্তু অনেকেই সেই সূত্র ধরে গালির বন্যা বইয়ে দেন, এর উদাহরণ দুর্লভ নয়। তখন সেই ব্যাপারটা আর সাহিত্যের প্রয়োজনে থাকে না। এ আপনার অপরাধ তা বলি নি। কিন্তু যেহেতু আপনার লেখা থেকে অনেকে প্রভাবিত হন, সে কারণেই আপনার লেখার উদাহরণ এনেছিলাম। এই পুরো ব্যাপারটা খুব সোজা ভাবেই বলার চেষ্টা করেছিলাম, সখেদে জানাই তাতে কাজ হয়নি। নিজের প্রকাশক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে দুষতে পারলে আমার নিজেরই ভালো লাগতো, সেক্ষেত্রে আরেক বার চেষ্টা করতাম হয়তো। কিন্তু নানা ভাবে খোলসা করেও বিশেষ কাজ হয়নি। তার উপর এই মনোবিশ্লেষণ, শ্রেণীবাদী চরিত্র, এমন সব নতুন নতুন দিক এসে গেলো যে বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। অনেকে কথা বলতে এসে তর্কের মুখে পড়লেন, সে দায়িত্ব আমি এড়াতে পারি না।

সকলকেই এবার একটি অনুরোধ করি, এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা যদি থামানো যায় তো ভালো লাগবে। আমি কোনো যুক্তিজাল বিছাতে বসি নি, এবং আমার মূল বক্তব্য গোড়াতে যা ছিলো সে বিষয়ে লেখকদের কাছে অনুরোধ থাকলেও কাউকে মেনে নিতে হবে সে কথা, এমনটা দাবিও করি নি। এতেও যখন লাভ কিছু হলো না, শুধু কয়েকপ্রস্থ বিবাদ ঘটে গেলো নানা জনের মধ্যে, তো এবার থামতে চাওয়া খুব অন্যায্য চাওয়া হবে না এই আশা রাখি।

হিমু এর ছবি

আমি একাধিক উদাহরণ দেখতে পেলে ধারণা করতে পারতাম, যে আপনার পোস্টটি পূর্ণাঙ্গভাবেই আমার ঐ পোস্টের ঐ বাক্য নিয়ে নয়। দুর্ভাগ্যবশত সেটা দেখতে পাইনি।

শুধু তা-ই নয়, বিচ্ছিন্ন উদাহরণ হিসেবে একটি স্বতন্ত্র পোস্টে আপনি আলোচনা করায় আমার পোস্টটি একটি মেরিটসম্পন্ন সমালোচনা থেকে বঞ্চিত হলো, এবং ভবিষ্যতের পাঠক সেই পোস্টটি পড়লে একটি সুলিখিত দ্বিমত পাঠের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। কয়েকজন সচল আমার পোস্টে আমাকে অন্ধ, অক্ষম, অপারগ জাতীয় অ-বর্গীয় মিষ্টি কথার মোড়কে গালাগালি করতে না পেরে সে সুযোগটিও আপনার পোস্টে গিয়েই চরিতার্থ করলেন। যেহেতু সচলভাষা নিয়েই আপনার উদ্বেগ, আমি আপনাকে তাই অনুরোধ করেছিলাম সে ব্যাপারেও আলোকপাত করার, আপনি অসম্মতি জ্ঞাপন করায় তা আর হয়ে ওঠেনি।

এই পোস্টে আপনার লেখার যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেই বিশ্লেষণের সাথে আমি একমত নই আপনার লেখার সাথে সুদীর্ঘ পরিচয়ের কারণেই। কিন্তু একই সাথে দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই সচলের ভাষা নিয়ে আপনার উদ্বেগপ্রকাশের একদিকদর্শী এবং একদৃষ্টান্তী অ্যাপ্রোচের সাথে। আমি মনে করি পোস্টটি আপনি আমাকে উদ্দেশ করেই লিখেছেন, এবং সেটি আমার পোস্টে মন্তব্যাকারে না দিয়ে আমার পোস্টটিকে দরিদ্র করে রেখেছেন। তবে আগেও যা বললাম, আমি বিচলিত নই এ নিয়ে, কারণ আপনার বক্তব্যের সাথে আমি একমত। যা দ্বিমত, তা আমি একটি গল্প লিখে প্রমাণের চেষ্টা করেছি, যে তীব্র ঘৃণা আর বিদ্বেষের পটভূমি না থাকলে "সাহিত্যে"ও এই অমার্জিত বাক্যব্যবহার অভিভাবকহীন। আমার তথাকথিত রাজনৈতিক নিবন্ধটিতে সেই ঘৃণার পটভূমি ছিল। অপরাপর ব্যক্তির সাথে গালিবিনিময়ের চর্চা সচলে বরাবরই নিরুৎসাহিত ছিলো, থাকবে এ কথাও জোর দিয়ে বলতে পারি। আপনি, প্রিয় মূলোদা, যা চিনতে ভুল করেছেন, সেটি পাকিস্তানীদের প্রতি আমার ঘৃণার চেহারাটি। স্বজনদের পূর্বমূল নিয়ে কথা উঠতেই আপনি যেমন ঘোর বিরক্ত হয়েছেন, তারা নিহত. ধর্ষিত, দগ্ধ হলে আমি নিশ্চিত, আপনি পোস্টটি লিখলে দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ ব্যবহার করতেন। আমি আরও হতাশ, তিন বছর ধরে সচলায়তনে লিখে এই ভরসাটুকু আপনার মনে জাগাতে পারলাম না, যে গালি পাকিস্তানীদের একটি জঘন্য আচরণে ক্ষুব্ধবিতৃষ্ণ হয়ে দিচ্ছি, সে গালি উঠতে বসতে সচলের অপর ব্যক্তিকে দেবো না। এই যে অপরিচয়, আহত হয়েছি এতেই।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রিয় শরতশিশির, আপনাকে একে একে জবাব দিই :

তখন হয় একই লেখকের কয়েকটা মৌলিক রচনা থেকে কোট করে ক্রিটিক করবে কোন সাব্জেক্ট নিয়ে, আর তা না হলে, একটা থিম/ টপিক চুজ করে সেটা নিয়ে কয়েকজন লেখকের মৌলিক রচনা টেনে এনে একটা কম্প্যারেটিভ বিশ্লেষণ করবে। সেই ডিসকোর্সে আবার অন্য ক্রিটিকদের কথাও টানতে পারা যায় রেলেটিভ হলে, বা বলা যায়, আনলে ভাল হয়।

আমি তো টিউটোরিয়ালের খাতা জমা দেই নাই।

আর আমাদের দেশে - কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ে - স্ট্রাকচারালিস্ট ক্রিটিসিজমের যে চর্চা হয়, সেটির ব্যবহার-উপযোগিতা গত শতকেই শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেকে মনে করেন।

পোস্টস্ট্রাকচারিজমে (- এরও অনেক ডালপালা আছে) একটা টেকস্ট কেন একটি বাক্য নিয়েও 'কাঁটাছেড়া' সম্ভব। যেটি আমি স্পষ্টভাবে আমার পোস্টের একদম মাথায় দেরিদার একটা উক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি।

এবং আমিও এও স্পষ্ট করে বলেছি (দয়া করে আরো একবার আমার পোস্টের প্রথম অংশটি পড়ুন) এখানে যে যুক্তি(হতে পারে ভঙ্গুর/অসাড়/কিংবা কারো কারো হিসেবে 'কুযুক্তি'মাত্র) উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে তার ভিত্তি 'কী মনে হয়েছে নয়' বরং 'কী মনে হতেই পারে'। সুতরাং 'অ্যাসামপশন'টা আপনার নতুন আবিস্কার করার দরকার নাই।


আমার কী মনে হয় জানো, তোমার উচিত হবে মূলো'দার সাথে পার্সোনাল কন্ট্যাক্ট করা। তাহলে অনেক ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে। এই কন্ট্যাক্টের মানে এই না যে, তুমি ব্যাক ডোর পলিটিক্স করছো। এটা এজন্যই করা উচিত যেন দিনের শেষে আমরা যে অ্যাগ্রি করি টু ডিস্যাগ্রি, সেটাই বজায় রাখা। আমরা কেউই চাই না উনি চলে যাক, কাজেই তুমি কন্ট্যাক্ট করো। ঠিক আছে?

আমার মনে হয় আপনিই আবার assume করে নিলেন, কে বা কারা চাচ্ছে উনি চলে যান। এটা আমার পোস্টের সাথে চূড়ান্তভাবে অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। আমি একটা সমবায়ী আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চেয়েছি মাত্র। এখানে মূলত পাঠক আমার লক্ষ্য নন। একা মূলত পাঠকের উপর হামলে পড়তে চাইলে আমি নিশ্চয়ই তাকে মেইল করতাম।


দেশ ভাগ কখনও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়।

অবশ্যই। আপনি আসলে এমন একটা প্রসঙ্গ (দেশভাগ) টেনে আনলেন যে বিষয়ে কথা বলতে গেলে আজকে আর কোনো কথাই বলতে পারব না। তাই সেটা সুযোগমতো পরে হবে।

আরেকটা কথা, মূলত পাঠক কিংবা আপনার পারিবারিক ইতিহাস আমি জানতে চাইনি। আমার আলোচনায় আমি টেক্সটের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। কারো ফ্যামিলি হিস্ট্রি ঘাটিনি। এই লেখাটা মূলতপাঠক না লিখে অন্য যে কেউ ( মনে করেন, যার ঠিকুজি কোনোভাবেই মূলত পাঠকের সাথে মেলে না) লিখলেও, বিশ্লেষণের ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না।

এটা এখন বুঝবে না, আরও যখন বয়সে এবং কাজে আরও কিছু অভিজ্ঞতার ঝুলি যোগ হবে, তখন বুঝতে পারবে

সব না বুঝা পর্যন্ত চুপ করে থাকি অথবা ফুল-পাখি-নকশিকাঁথা নিয়ে আলাপ করি, সেই ভালো।

_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ব্যাপক শিক্ষামূলক পোস্ট!

আর কার কী লাভ বা ক্ষতি হয়েছে আমি জানি না, তবে একটি শিক্ষা আমার হয়েছে। ভবিষ্যতে আপনার সাথে কখনো পরিচয় হলে আমি চেষ্টা করবো আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতে। কারণ সহজ সাধারণ বিষয়ের এত বিশ্লেষণ সইবার ক্ষমতা আমার নেই। রাজর্ষি এখানে "বিরক্ত" বোধ করলেও আমার এতখানি স্থৈর্য নেই, আমার ধারণা আমি আক্রান্তই বোধ করবো।

যে আলোচনাটি মূল পোস্টেই হতে পারতো, সেটার জন্য এমন টোনের আলাদা একটি পোস্ট আমার কাছে আক্রমণাত্মকই মনে হয়েছে, বিশেষত যেখানে উদ্ধৃতি টানা হয়েছে প্রধানত একজন লেখকের একটি পোস্ট থেকে। ভাষা নিয়ে গবেষণা বা বিশ্লেষণ এখানে নিতান্তই গৌণ দেখতে পাচ্ছি।

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ভবিষ্যতে আপনার সাথে কখনো পরিচয় হলে আমি চেষ্টা করবো আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতে।

বিশেষত যেখানে উদ্ধৃতি টানা হয়েছে প্রধানত একজন লেখকের একটি পোস্ট থেকে

আপনার এই দুটো কথা কৌতুকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলাম। 'প্রধানত একজন লেখকের একটি পোস্ট' থেকে প্রতিক্রিয়া (হোক অক্ষম বিশ্লেষণ) দিলে সেটিকে আপনার 'আক্রমণাত্মক' মনে হয়েছে। আবার 'প্রধানত একজন লেখকের একটি পোস্ট' থেকে (যেটি এই ক্ষেত্রে আমার ) আপনার মনে হয়েছে আমার সাথে কখনো পরিচয় হলে আপনি চেষ্টা করবেন আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে। আপনার কাছে কি নিজের এই অবস্থানটি 'আক্রমণাত্মক' মনে হচ্ছে না?

নাকি, Simply joking around...

_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ভেবেছিলাম, নীরবই থাকবো। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমার মন্তব্যের পেছনের চিন্তাটা জানানোর।

উদ্ধৃতি:
এই পোস্টটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ভোকাব’ (নিচের উদ্ধৃতি দ্রষ্টব্য) কীকরে শ্রেণীবৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ব্যবহৃত হতে পারে, তার কিছু ঈঙ্গিত একটি সীমিত টেক্সট থেকে নিঙ্গড়ে আনা। এবং আরো বলতে চাই যে ঈঙ্গিতগুলো আমি আমার বিশ্লেষণে পাচ্ছি সেগুলো কোনোভাবেই স্বতঃসিদ্ধতা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবীদার নয়। আলোচ্য টেক্সটটি পড়ে ‘আমার কী মনে হয়েছে’ সেটি নয়, বরং ‘আমি কী মনে হতেই পারে’ সেটিই আমার বর্ণনার বিষয়।

আপনি নিজেই বলছেন, আপনার বিশ্লেষণলব্ধ ইঙ্গিত কোনোভাবেই স্বতঃসিদ্ধতার এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবিদার নয়; এমনকি আপনার কী মনে হয়েছে সেটাও নয়, বরং আপনি কী মনে করতেই পারেন, সেটিই আপনার বর্ণনার বিষয়। এই কথার মধ্যেই কি বিষয়টি লুকানো নেই যে, কোনো ভাষিক বিশ্লেষণ নয়, নেহাত আক্রমণ করার লক্ষ্যেই পোস্টটি আপনার দেয়া?

আর ঠিক এই কারণেই আমার ধারণা আমি বিপন্ন বোধ করবো আপনার সাথে পরিচিত হলে (যদিও চাই ভুল হোক আমার এই ধারণা)। ভাবপ্রকাশে আমার প্রচুর সীমাবদ্ধতা আছে। তবুও আশা করি পরিষ্কার করতে পেরেছি আমার অবস্থান।

আর আমি joke around with utmost seriousness...

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আনিস ভাই,

আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি-

অনিন্দ্যের লেখাটায় আক্রমণের আঁচ দেখতে পেয়ে 'কখনো পরিচয় হলে আমি চেষ্টা করবো আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতে' পরে ভাষা পালটে আরো সুচারু হয়ে 'আমি বিপন্ন বোধ করবো ' বলা হলে সেটা চরম ব্যক্তি আক্রমণের পর্যায়ে পড়ে।

----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আপনি নিজেই বলছেন, আপনার বিশ্লেষণলব্ধ ইঙ্গিত কোনোভাবেই স্বতঃসিদ্ধতার এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবিদার নয়; এমনকি আপনার কী মনে হয়েছে সেটাও নয়, বরং আপনি কী মনে করতেই পারেন, সেটিই আপনার বর্ণনার বিষয়। এই কথার মধ্যেই কি বিষয়টি লুকানো নেই যে, কোনো ভাষিক বিশ্লেষণ নয়, নেহাত আক্রমণ করার লক্ষ্যেই পোস্টটি আপনার দেয়া?

জ্বী না। লুকানো নেই। কারণ টেক্সট = ব্যক্তি নয়।

আমার অ্যানালিসসকে স্বতঃসিদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি না করার অর্থ হলো :

যেকোনো টেক্সটের বিশ্লেষণে শেষ কথা বলতে যাওয়াটা বা শেষ কথা বলা যাবে এমন বিশ্বাসটা যে অসাড় হতে পারে সেটা স্বীকার করে নেয়া।

এবং খুব সম্ভবত সেই কারণেই আমার টেক্সচুয়াল বিশ্লেষণ থেকে ঐ টেক্সটের 'রচয়িতা' (যিনি একজন ব্যক্তি) নিজেকে তফাৎ রাখতে পারেন।

এবং খুব সম্ভবত সেই কারণেই আমার বিশ্লেষণটির মৌলিক উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে ব্যক্তি আক্রমণ নেই।

পাঠ এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সব মিলিয়ে আমি কেবল সহজীয়ার থেকে কপি মারলাম:

মায়রে বাপ টাইপের উত্তরাধুনিক ডিসকোর্স!!

সচলভাষার পোস্টেই হযতো্ প্রসঙ্গগুলো আসতে পারেতা। অনিন্দ্য রহমানের দাবী করা "পোস্টের মূল ভাবনা" আমার কাছে কিন্তু সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমরা কি অনিন্দ্য রহমানের কাছ থেকে সমস্ত ক্রিটিকের শর্ত পূরণ করে এমন একটা পোস্ট পেতে পারি না এই একই বিষয়ে...? "আপত্তিকর শিরোনামযুক্ত পোস্ট", "সচল ভাষা ১,২", "কুশলাদী জিজ্ঞাসা", এর মূল ভাবনাগুলো থেকে সরে এক্কেবারে নিখাদ একটা পোস্ট কিন্তু হতে পারে অনিন্দ্য রহমানের দাবি করা বিষয়টি।

আমার মনে হয় পরবর্তীতে এই বিষয়টি অনেকের কাজে আসবে। অন্তত আমিতো শব্দ ব্যবহারে আরো বেশি সচেতন হবোই। ( সঠিক প্রযয়াগের সতর্কতা সেন্সে।)

অভদ্র মানুষ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কয়েকটি অবজার্ভেশন।

প্রথমতঃ ব্লগটি মেটাব্লগিংয়ের সংজ্ঞায় পড়ে যায়। মেটাব্লগিং সচলায়তনে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু মেটাব্লগিংয়ের সংজ্ঞাটা অনেক লুজ, তাই যে কোন সমালোচনা, আলোচনা সবটাই মেটাব্লগিং হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। এতে করে যে কোন ধরণের আলোচনার পথই দেখা যাবে বন্ধ হয়ে যাবে। পোস্টটিতে যেভাবে যুক্তি তর্ক এবং বিশ্লেষণের ব্যবহার হয়েছে তাতে করে শুধুমাত্র মেটাব্লগিংয়ের গন্ডি ছাড়িয়ে পোস্টটা একটা আলোচনায় রূপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং এটা হয়ত প্রথম পাতায় প্রকাশ যোগ্য।

দ্বিতীয়তঃ ব্লগটির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ব্লগটি আমার কাছে বিভাজনপ্রবণ মনে হয়েছে। অনেকটা মূল প্রসঙ্গের বিপরীতে 'রেড হেরিং' এর মত। অনিন্দ্য বিষয়টা লক্ষ্য রাখতে পারতেন এবং পরবর্তীতে পাঠকের এধরনে মনোভাব আবার দেখলে তখন বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসতে পারতেন। সুতরাং কনটেকস্টের বিচার সমালোচনা মূলক পোস্ট হলেও ঠিক গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি আমার কাছে।

আশা করি অনিন্দ্য এই পোস্ট থেকে পাওয়া ধারনা ভবিষ্যত পোস্ট গুলোতে ব্যবহার করবেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আলোচনাটা অতীতের ধারাবাহী বিভাজনের রাস্তায় চলে যাওয়াতে আমিও অনেকটা বিব্রত হয়েছি। আমার মন্তব্যগুলোতে আমি সেই রাস্তা সচেতনভাবে পরিহার করার চেষ্টা করেছি। তারপরও যেহেতু ফাইনালি ফলটা খারাপই হলো, আমি কিছুটা দায় নিচ্ছি। মূলপ্রসঙ্গের আলোচনা অনেকগুলো কমেন্টই প্রতিফলিত হয়নি। এবং সেক্ষেত্রেও আমি পাঠকদেরকে জোরালোভাবে বা কনভিন্সিংলি মূল আলোচনায় টেনে আনতে পারিনি। আমি এটাও ভেবেছি নিজের পাতায় সরিয়ে নেব কি না। কিন্তু, একের পর এক কমেন্টে জড়িয়ে, এবং মূল প্রস্তাবনাটি বারবার স্পষ্ট করতে চাওয়ার প্রয়াসের মধ্যে নিজ পাতায় সরিয়ে নেয়ার ভাবনাটি হারিয়ে গেছে। এই মুহুর্তে লেবুর অন্তিম স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব। এবং লিখিত ভাষার অর্থ কীভাবে লেখকের সচেতন অভিপ্রায়ের বিপরীতে চলে যেতে পারে, সে বিষয়েও একটি যত্নশীল পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা রাখি।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পোস্টটিতে যেভাবে যুক্তি তর্ক এবং বিশ্লেষণের ব্যবহার হয়েছে তাতে করে শুধুমাত্র মেটাব্লগিংয়ের গন্ডি ছাড়িয়ে পোস্টটা একটা আলোচনায় রূপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং এটা হয়ত প্রথম পাতায় প্রকাশ যোগ্য।

তীব্র দ্বিমত। এই রকম পোস্ট সচলে স্থান পায়নি কখনও। গত তিন বছর ধরে সচলায়তন যেই চরিত্র ও প্রত্যাশা দাঁড় করিয়েছে, তার সাথে এই পোস্ট খুবই বেমানান।

পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে "মেটাব্লগিং", "ডুয়াল-পোস্টিং", "ত্যানা প্যাঁচানো", ইত্যাদি নিরুৎসাহিত সচলায়তনে। এগুলো নিয়ে জিরো-টলারেন্স পলিসি অনুসরণ হতে দেখেছি। এই পোস্টটা যে সেগুলো ভায়োলেট করে, তা কিন্তু এটাকে ডিফেন্ড করে মন্তব্য দিতে হওয়া থেকেই প্রত্যক্ষ। পূর্বে অনেক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এই রকম পোস্ট রহিত করতে।

অন্য পোস্টের মূল সুরটাকে একেবারেই বাইপাস করে গিয়ে একটা প্যারাগ্রাফ নিয়ে এত বেশি ত্যানা প্যাঁচানি এবং বিদ্রূপের পরও একটা পোস্টে সচলের নীড়পাতায় থাকার কথা না। এই পোস্টে মন্তব্য আরও বাড়তে দেওয়ারও কথা না।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ভেবেছিলাম আর মন্তব্য করব না। কিন্তু আবার ফিরতে হলো। কারণ এই অভিযোগগুলোর জবাব না দেয়া পর্যন্ত অস্বস্তিতে থাকব।

পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে "মেটাব্লগিং", "ডুয়াল-পোস্টিং", "ত্যানা প্যাঁচানো", ইত্যাদি নিরুৎসাহিত সচলায়তনে। এগুলো নিয়ে জিরো-টলারেন্স পলিসি অনুসরণ হতে দেখেছি। এই পোস্টটা যে সেগুলো ভায়োলেট করে, তা কিন্তু এটাকে ডিফেন্ড করে মন্তব্য দিতে হওয়া থেকেই প্রত্যক্ষ। পূর্বে অনেক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এই রকম পোস্ট রহিত করতে।

এটা মেটাব্লগ কি না সে বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।
কিন্তু "ডুয়াল-পোস্টিং" ও "ত্যানা প্যাঁচানো" কেন সেটা বুঝি নাই।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, নিজেকে ডিফেন্ড করতে চাইলেই কেউ দোষী হয়ে যান না। উপরন্তু বারবার একই অভিযোগ বহুলোকে করলেও সেটি শুধুমাত্র সংখ্যার বিবেচনায় প্রমাণ হয়ে যায় না। ডিফেন্ড করে মন্তব্য দেয়াটাই যদি দোষের "প্রত্যক্ষ" প্রমাণ হয়ে যায় তাহলে গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এটি একটি দুঃখজনক অবস্থান।


অন্য পোস্টের মূল সুরটাকে একেবারেই বাইপাস করে গিয়ে একটা প্যারাগ্রাফ নিয়ে এত বেশি ত্যানা প্যাঁচানি এবং বিদ্রূপের পরও একটা পোস্টে সচলের নীড়পাতায় থাকার কথা না। এই পোস্টে মন্তব্য আরও বাড়তে দেওয়ারও কথা না।

__অন্যপোস্টের "মূলসুরের" কাছে বাঁধা থাকতে হবে কেন ?

__একটা বিশেষ প্যারাগ্রাফ যদি আমাকে ভাবিত করে তাহলে সেটা নিয়ে
পোস্ট দেয়া যাবে না কেন?

__আমি বিদ্রুপ কোথায় করলাম?

__যদি করেও থাকি "বিদ্রুপ" করবার অধিকার আমার নেই কেন?

__আমি আমার ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী একটি লেখার মূলসুর নিরূপণ করার অধিকার রাখি না কেন?

__আর তর্কের খাতিরে যদি মেনে নিই মূলসুরটা বাইপাসড হয়েছে, তাহলে তো এই পোস্টটাই স্বাতন্ত্র পেয়ে যায়। কারণ, এইটার 'মূলসুর' রেফার করা লেখাটির মূলসুর থেকে ভিন্ন। তাই না?

__প্রথমত আমি ত্যানা প্যাচাইনি। কিন্তু তারপরও আমার জিজ্ঞাস্য : একটা প্যারাগ্রাফ নিয়ে কতবেশি "ত্যানা প্যাচানো" যাবে এটা নিয়ে কোনো নীতিমালা আদৌ রয়েছে কি? বা সেটা থাকা সম্ভব কি?

__এই বিষয়ে আরেকট সম্পূরক প্রশ্ন : মাজদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ এবং মুন সিনেমাল হলের মালিকানা সংক্রান্ত মামলার রায় অনুযায়ী সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল হওয়াটাকে জুডিশিয়াল "ত্যানা প্যাচানি" বলে আপনি মনে করেন কি?

আপনার পাঠ, মন্তব্য ও অবস্থান জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মডারেটররা চাইলে, এই্ পোস্টে মন্তব্য দেয়ার অপশন বন্ধ করে দিতে পারেন।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

* ডুয়াল-পোস্টিং বলিনি, সচলের নীতিগত স্তম্ভগুলোর একটা হিসেবে ডুয়াল-পোস্টিং উল্লেখ করেছি।

* মূল সুরে বাঁধা থাকা >> এটা মেনে না চললে লেখার অংশবিশেষ তুলে এনে যে-কাউকে মন্দ বানানো যায়।

* বিশেষ প্যারাগ্রাফ >> যদি সার্বিক কোনো বিষয় না হয়ে থাকে, যদি গ্লোবাল ডোমেইনে উদ্ধৃত প্যারাগ্রাফের কোনো অর্থ না থেকে থাকে, তবে সেটা লেখকের পোস্টেই থাকা উচিত। "ভাবিত" করলে লেখা যায় অবশ্যই, তবে স্রেফ বিষোদ্গারের জন্য আলাদা পোস্ট দেওয়া যায় না। সেটাই মেটাব্লগিং-এর সংজ্ঞায় চলে যায়।

* "আস্তানা" শব্দেরই যেমন বিশ্লেষণ করলেন! এরপরও যদি দাবি করেন যে কোনো প্রকার শ্লেষ বা বিদ্রুপ ছিলো না, তাহলে সেই কুতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখছি আমি।

* যোগ্যতা অনুযায়ী মূল সুর নিরূপণ >> আপনি যোগ্যতা ও মূল্যবোধের বিচারে নিজেকে একটি উচ্চ আসনে রেখেই পোস্টটি লিখেছেন। সেই কারণেই এই "আমার কি বোকা হওয়ার অধিকার নেই?" জাতীয় বক্তব্য ধোপে টিকছে না।

* মূলসুর বাইপাস >> ক্লাসিক ত্যানা প্যাঁচানি, তাই এটার জবাব দেওয়া নিষ্প্রয়োজন।

* ত্যানা প্যাঁচানির সীমা >> এটা প্রথাগত ভাবেই একটি সাবজেক্টিভ জাজমেন্ট, যা সচলে বেশ কঠোর ভাবে প্রযুক্ত হয়/হতো। সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছি। এই শিথিলতা আমাকে অস্বস্তি দেয়। ব্লগারে ব্লগারে ঝগড়ার জন্য নীড়পাতায় নতুন পোস্ট দেখতে চাই না আমি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ লিখেছেন:
সুতরাং কনটেকস্টের বিচার সমালোচনা মূলক পোস্ট হলেও ঠিক গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি আমার কাছে।

আমার এই লাইনের উপর দাঁড়িয়ে তোমার মন্তব্যটা আবার পড়।

এইরকম অতি প্রতিক্রিয়শীলতাও কিন্তু কাম্য নয়

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আপনি লেখাটাকে আগে প্রকাশযোগ্য বললেন, এবং পরে বললেন যে হয়তো না দিলেও চলতো। আমার কাছে প্রকাশযোগ্য লাগেনি একেবারেই। সেই কারণেই আমার দ্বিমতটুকু প্রকাশ করেছি। ভুল বুঝে থাকলে দুঃখিত।

হিমু এর ছবি

অন্য পোস্টের মূল সুরটাকে একেবারেই বাইপাস করে গিয়ে একটা প্যারাগ্রাফ নিয়ে এত বেশি ত্যানা প্যাঁচানি এবং বিদ্রূপের পরও একটা পোস্টে সচলের নীড়পাতায় থাকার কথা না। এই পোস্টে মন্তব্য আরও বাড়তে দেওয়ারও কথা না।

দুঃখজনকভাবে এই কথাটা হুবহু আমার "একটি অত্যন্ত আপত্তিকর শিরোনামযুক্ত পোস্ট" এর ক্ষেত্রে খাটে। পোস্টের মূল প্রস্তাবনা ছিলো জুলফিকার আলি ভূট্টো আর টিক্কা চাক্কা খানের নামে দু'টি কুকুর চরিত্র সৃষ্টি করা, ভূট্টো আর টিক্কা, যাদেরকে আমরা বাংলা সাহিত্যে অক্ষয় করে রাখবো। আমি পাকিস্তানীদের আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে একটি খিস্তিবাক্য লিখেছি পোস্টের শেষে। আমার প্রস্তাবনা অনুযায়ী আমি একটি কার্টুনব্লগ তৈরি করেছি, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তিনটির বেশি পোস্ট দিতে পারিনি সেখানে। যারা গত কয়েক দিন ধরে সেই প্রস্তাবনার ব্যাপারে কোনো রকম মন্তব্য না করে সেই খিস্তিবাক্য নিয়ে প্রচুর মন্তব্য, মেইল, ফেইসবুক মেসেজ চালাচালি করেছেন, তাদের কাজকে কি আমি ত্যানা প্যাঁচানি বলতে পারি, ইশতিয়াক?

সচলভাষা ১ পোস্টটি প্রথম পাতায় ছিলো। মন্তব্যও বাড়তে দেয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মন্তব্যের প্রত্যুত্তর না দিয়ে মূলোদা সচলভাষা ২ নামে আরেকটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তুমি একটি প্যারাগ্রাফের ব্যাপারে ত্যানা প্যাঁচানি নিয়ে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো, সেরকম প্রতিক্রিয়া ঐ দু'টি পোস্টের একটিতেও আমি দেখতে পাইনি। ওপরে দেখো শরতশিশিরকে আমি বায়াসের ব্যাপারে কী বলেছি।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

গিল্টি অ্যাজ চার্জড। আমি অন্য পোস্টেও মেটাব্লগিং নিয়ে কিছু বলিনি। আমার সেই নীরবতাকে আমি জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবো না। আমার কাছে সচলভাষাকে অনেক বেশি আলোচনামূলক মনে হয়েছিলো লেখকের লেখার গুণে, কিন্তু সেটাও দিনের শেষে মেটাব্লগিং-ই।

হিমু এর ছবি

অনিন্দ্য, আপনি একটা সিনারিও বিচার করুন। মনে করুন, আপনার এই পোস্ট থেকে প্রত্যেকে এক একটি বাক্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে আলাদা পোস্ট দিলেন। আলোচনাটা তখন একটি পোস্টের ছাতার নিচে না থেকে সারা সচল জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সেটা কখনো কখনো পীড়াদায়ক। আর প্রত্যেক আলোচনারই একটা হাফ লাইফ আছে। যখন আলোচ্য পোস্টের বাইরে গিয়ে সেটি পৃথক পোস্টে চলে যায়, দেখা যায় কয়েকদিন ধরে একটা তর্ক আস্তে আস্তে তিক্ত হতে হতে সবাইকে একযোগে ত্যক্ত করে। সেটা পৃথকভাবে প্রতিটি "আলোচনা"র স্বার্থ রক্ষা করলেও সামষ্টিক পরিবেশের স্বার্থ রক্ষা করে না। আর যেহেতু একটা বাক্য নিয়েই দেরিদা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে, আমরা বরং জীবনের বাকি দিনগুলি অন্যান্য বাক্য নিয়ে ভাবি [যদিও আমার পোস্টের একটি বাক্য নিয়ে বাকিদের সোৎসাহ আলোচনা দেখে মনে হয়েছে, দেরিদা ভুল বলেননি]।

আপনার এই পোস্টটি আপনি "সচলভাষা" পোস্টটিতেই দিতে পারতেন, ঠিক যেভাবে "সচলভাষা" পোস্টটি আমার "একটি অত্যন্ত আপত্তিকর শিরোনামযুক্ত পোস্ট"-এই মন্তব্য আকারে আসতে পারতো। যারা পৃথক পোস্ট হিসেবে অনিন্দ্যের এই পোস্টটিকে নিন্দাবাদ জানাচ্ছেন, তাঁদেরকে আমি মূলোদার পোস্টে হয় মন্তব্য করতে দেখিনি, অথবা ঠেসে বুড়ো আঙুল দেখাতে দেখেছি। এটি দুঃখজনক দ্বৈত আচরণ।

মডারেটররা হস্তক্ষেপ করলে আমি সচলভাষা প্রথমার্দ্ধ পোস্টটিকেও ব্লগারের নিজের ব্লগে সরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করবো। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমি চাই এই পোস্টে মন্তব্য বন্ধ হোক। নিজ ব্লগে সরিয়ে নিয়েছি। মন্তব্য বন্ধ করার ক্ষমতা আমার নাই। আমি আর এই পোস্টে ফিরছি না। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কালো-মডু এর ছবি

অনিন্দ্য রহমান, ভবিষ্যতে সচলায়তনে মেটাব্লগিং করলে আপনার অ্যাকাউন্টটি ৭ দিনের জন্যে মডারেশনের আওতায় আনা হবে। বিস্তারিত জানতে হলে এখানে দেখুন।