চামেলী হাতে কিছু নিম্নমানের মানুষ

আশফাক আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন আশফাক আহমেদ [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৬/০৮/২০১৩ - ৩:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিনার টাওয়ার খুঁজে পেতে মোটামুটি ঘাম বেরিয়ে গেলো।
মুহিতের ভাষ্যমতে, গুলশান-২ থেকে সোজা নাক বরাবর পাঁচ মিনিট হাঁটলেই ৮ নম্বর রোড। রোডের মাথায় সৌদি দূতাবাস। দূতাবাসের গার্ডদের জিজ্ঞেস করলেই নাকি মিনার টাওয়ার দেখিয়ে দেবে।
গার্ডদের চেহারা-সুরত দেখে মনে হল না, এরা কোন সাহায্য করতে পারবে। এদের চেহারা ও ভাবভঙ্গিতে “ঢাকায় নতুন এসেছে, ঢাকায় নতুন এসেছে”---এমন একটা ভাব প্রবল। আমার ধারণা, এটা যে ৮ নম্বর রোড---এইটুকুও এরা জানে না। মিনার টাওয়ার চেনা তো দূরের কথা।
এক্সকিউজ মি, এটা কি ৮ নম্বর রোড?---আমি কথাবার্তায় যথাসম্ভব বিনয়ী হবার চেষ্টা করি।
জ্বি, এইটাই ৮ নম্বর। তাদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠে। আমার প্রথম অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়।
মিনার টাওয়ারটা কোথায় বলতে পারেন?
দু’জনই তাদের থুতনি চুলকাতে লাগলো। থুতনি থেকে ঘাড়, ঘাড় থেকে মাথা। বোঝা গেল, মিনার টাওয়ার সম্পর্কে এদের কোন ধারণা নেই।
ঢাকার অধিকাংশ দারোয়ানেরই এই অবস্থা। এরা আশেপাশে কোথায় কী আছে, সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না রেখেই দিনের পর দিন গার্ড দিয়ে চলেছে। অদ্ভূত।
রোডের মাথায় একটা পান-বিড়ির দোকান আছে। ১১টার একটু বেশি বাজে। সো, দোকান খালি। দোকানীকে জিজ্ঞেস করে দেখা যেতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে দূতাবাসের গার্ডের চেয়ে স্থানীয় দোকানীরা অনেক ভালো তথ্য দিতে পারে।
চাচা?
হুঁ?
এইখানে মিনার টাওয়ারটা কোথায়, বলতে পারেন?
দোকানী আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসেন। তাচ্ছিল্যের হাসি। আমি পাত্তা দিই না। আবার জিজ্ঞেস করি, চাচা, এইখানে মিনার টাওয়ারটা কোথায়, বলতে পারেন?
আগে একখান পান খান দেখি।
আমি চাচা পান খাই না।
ও, আপনারা তো শহরের মানুষ। পান খাইবেন ক্যান? নেন, একখান সিগারেট খান।
আমি একটা বেনসন কিনি। ধরাই না।
হুম, কি জানি কইতেসিলেন? চাচা এবার আমাকে খানিকটা গুরুত্ব দিতে শুরু করেন।
চাচা, মিনার টাওয়ারটা...
হে হে। এইটাই মিনার টাওয়ার।
আমি অবাক হই। গুলশানের মত এলাকায় একটা টাওয়ারের ঠিক নিচে এরকম পান-বিড়ির দোকান থাকবে, ভাবা যায় না। মতিঝিল হলে না হয় একটা কথা ছিল।
এই যে ডানদিকে একটা চিপা গলি দেখসেন না, গলি দিয়া ঢুইকা ডানে মোড় নিলেই...চাচার কথা আমার কানে আর প্রবেশ করে না। এই সরু গলিটা এতোক্ষণ চোখে পড়লো না ক্যানো? আশ্চর্য। টাওয়ারের ছাদে বড় বড় অক্ষরে ‘MINAR TOWER’ লেখা। এটাও চোখে পড়া উচিত ছিল। নিজের নির্বুদ্ধিতায় আমার অবাক হওয়া উচিত। অবাক হতে পারছি না। এমনিতেই পনের মিনিট লেট হয়ে গেছে। আর লেট করা ঠিক হবে না। আমি ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগাই।

অফিসটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবাসিক এপার্টমেন্টের একটা ফ্লোরে চারটা স্যুট। তার মধ্যে একটা ভাড়া নিয়ে অফিস জাঁকিয়ে বসেছে। নতুন কোম্পানি। হাতে সম্ভবত প্রজেক্ট-টজেক্ট তেমন একটা নেই। তাও লোক নিচ্ছে কেন কে জানে।
প্রমাণ সাইজের একটা হলরুমে আমাকে বসিয়ে রেখেছে অনেকক্ষণ হল। পরীক্ষা নাকি শুরু হয়ে গেছে। রিটেন টেস্ট। আমারটা আর নেবে বলে মনে হচ্ছে না। আধা ঘণ্টা লেট করার শাস্তি। আরেকটু আগে রওনা দেয়া উচিত ছিল। সে উপায় নেই। সকালে হাসপাতালে খাবারটা দিয়েই ছুট দিয়েছি। মা বললেন, এখন তো বাসে ভীড় থাকবে। যেতে পারবি?
আমি বললাম, পারবো। না পারার কি আছে?
দুশো টাকা নিয়ে যা তাও। সিএনজিতে করে চলে যাস।
নিতান্ত অনিচ্ছায় দুশো টাকা পকেটে পুরলাম। বাসায় এই মুহূর্তে কোন ক্যাশ নেই। এই সময় এইসব বাজে খরচ করা চলে না। বাসে যাব, এমনটাই মনস্থির করলাম। মাকে পরে টাকা ফেরত দিয়ে দিলেই চলবে।
শাহবাগ মোড়ে এসে দেখি অন্য যেকোন দিনের চেয়ে আজকের অবস্থা ভয়াবহ। মনে হচ্ছে, দু’দিন হরতালের পর আজ আবার অফিস-আদালত খুলেছে। মানুষে-জিনিসে সব বাস ঠাসাঠাসি হয়ে আছে। পাদানিতে ঝুলে থাকারও কোন সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
সিএনজিগুলো একটাও ওদিকে যাবে না। সব ফার্মগেট পর্যন্ত যাবে। তাও একজন প্যাসেঞ্জার নেবে না কেউ। চারজন যোগাড় হলেই তবেই এক-একটা সিএনজি ছাড়ছে।
আমি মোটামুটি আশা ছেড়ে দিয়েছি এমন সময় একটা প্রায় খালি বাস এসে এ যাত্রায় গুলশানগামী অফিসজীবী ও আমার মত চাকুরীপ্রার্থীদের উদ্ধার করলো। শৈশবে গুলশান বলতে যে অভিজাত স্বপ্নপুরীর কথা মনে হত, আজকের গুলশানের সাথে তার বিস্তর ফারাক। এটি এখন পুরোপুরি একটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। মধ্যবিত্ত এখানে জীবিকার প্রয়োজনে দিনভর শ্রম দিচ্ছে। হয়তো অচিরেই উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্তের ভীড়ে অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকার সামান্য বাইরে নতুন কোন গুলশানে বসতি গড়বে। মধবিত্তের শ্রম ও ঘামের গন্ধ এদের দীর্ঘদিন পছন্দ হবার কথা না।
মুর্তজা আহমেদ?
সিনিয়র ভাই গোছের এক এমপ্লয়ী এসে আমাকে ডাকাডাকি শুরু করলেন।
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। কর্পোরেট কার্টেসী।
এই রুমে গিয়ে বসুন। আপনার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সব দেয়া আছে। আধ ঘণ্টা পর আপনাকে ভাইভার জন্য কল করা হবে।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক বাবা, অন্তত পরীক্ষাটা তো নিচ্ছে।
প্রশ্ন মোটামুটি সোজাই ছিল। একটা ফিগারের পারস্পেক্টিভ দেয়া ছিল। এর টপ ভিউ আর রিয়ার ভিউ আঁকতে হবে। ঝটাঝট এঁকেও ফেললাম। আরেকটা ছিল ডিজাইন। দোতলা বাড়ির দরজা-জানালা ডিজাইন করতে হবে। এটা একটু সময় নিল। জানালাগুলো বিশেষ করে পেইন দিল।
ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতাও মন্দ বলবো না। এটা আমার ফার্স্ট চাকরির ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ বলতেই যে ইমেজটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে---তা হল অতিরিক্ত স্মার্ট একদল লোক তাদের জ্ঞান ও গরিমা দিয়ে একের পর এক আপনাকে ধুয়ে দিচ্ছে। অসহায়ের মত বসে থাকা ছাড়া এক্ষেত্রে আপনার আর তেমন করার কিছু নেই। এদের মধ্যে অতি উৎসাহী একজনকে পাওয়া যাবে, যিনি সম্ভবত প্রথমবারের মত ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন। ইনার প্রিপারেশনও থাকবে ভালো। গতকাল রাতেই উইকি ঘেঁটে অনেক কিছু জেনে এসেছেন তিনি। সম্প্রতি কোন টেকনোলজি ডেভেলপ করলো এবং সামনের বছরগুলোতে কোন টেকনোলজি আসতে যাচ্ছে, নিয়মিত বিরতিতে সেইসব তাজা তাজা জ্ঞানের কথা তিনি আপনাকে শুনিয়ে ছাড়বেন। বোর্ডের অন্য সদস্যরা কিছুক্ষণ পরপরই তার দিকে বিরক্ত দ্‌ষ্টিতে তাকাবেন। আপনিও সেটা খেয়াল করবেন, কিন্তু তার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
ইন্টারভিউ নিচ্ছেন এক বুড়োমত ভদ্রলোক। বেশ শক্ত-সমর্থ। পাকা চুল ছাড়া বোঝার কোন উপায় নেই যে, ইনার বয়স সত্তরের কোঠায়।
শুরুতেই আমার সাথে বেশ ইজি হয়ে নিলেন উনি। চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলেন,
বাসা কোথায়?
আমি বিনীত স্বরে জবাব দিই, জ্বি, খিলগাঁও। পরক্ষণেই মনে হয়, ‘জ্বি’ টা না বললেও চলতো। ইনি সম্ভবত অতিরিক্ত ভদ্রতা পছন্দ করেন না।
বাবা কী করেন?
জ্বি, রিটায়ার্ড। আবারও মুখ ফসকে ‘জ্বি’ বেরিয়ে পড়ে।
মা?
গ্‌হিণী। এবার ‘জ্বি’ বর্জনে সফল হই আমি।
অফিস কিন্তু সকাল আটটায়। আসতে পারবা তো?
জ্বি, পারবো, স্যার। আমি আশাবাদী হয়ে উঠি।
পারবা? আজকেই তো আধা ঘণ্টা লেট করে ফেললা।
আমি নীরব থাকি। ডিফেন্স করার মত কিছু খুঁজে পাই না। ইনিয়ে-বিনিয়ে বাবার অসুখ, হাসপাতাল---এইসব প্যাঁচাল পারতে পারি। কী দরকার? আমার দুঃখ-বেদনা-সমস্যা আমার কাছেই থাকুক। এগুলো কোন কমার্শিয়াল প্রডাক্ট না যে বাজারে সেল করে বেড়াতে হবে।
খিলগাঁ থেকে আসবা কীভাবে? কোন ডিরেক্ট বাস আছে?
মালিবাগ মোড় পর্যন্ত আসবো স্যার। ওখান থেকে ডিরেক্ট বাস পাওয়া যায়।
চাকরি টা কি তোমার খুব জরুরী? মানে, ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেয়ার কোন ব্যাপার-সেপার আছে?---ভদ্রলোকের কণ্ঠ যথেষ্টই আন্তরিক।
জরুরী দেখেই তো ইন্টারভিউ দিতে এলাম। বাসায় রোজগেরে কেউ নেই। ফিক্সড ডিপোজিটের উপর আর কতো চলা যায়? তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে...
ভদ্রলোক আমার সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করেন। উনার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। আকারে-ইঙ্গিতে অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, চাকরিটা আমার হচ্ছে না। আমার তাতে মাথা ব্যথা নেই। মস্ত বড় কোন ইন্টারভিউ বোর্ডকে মোকাবেলা করতে হয়নি, আপাতত এতেই আমি খুশি।

বাইরে এসে দেখি রাস্তাঘাট ভেজা। তার মানে এইমাত্র এক পশলা ব্‌ষ্টি হয়ে গেছে। এই মৌসুমে ভালোই ব্‌ষ্টি হচ্ছে। বন্যা-টন্যা হবে কিনা কে জানে।
৯৮’র বন্যাটা আমার বেশ মনে পড়ে। আমাদের বাসা থেকে মেইন রোড দেখা যেতো। সকালবেলা সারি সারি নৌকা সেখানে ভীড় করতো। বাবা তার প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে নিয়ে টিফিন ক্যারিয়ার সমেত কোন একটা নৌকোতে উঠে পড়তেন। আমি আর মুশফিক বাবার সাথে নৌকোয় চড়ার জন্য কান্নাকাটি করতাম। মুশফিকের আগ্রহটা ছিল একটু বেশিই। পানির উপর অফিসগুলো কেমন করে ভেসে থাকে---এটা তার দেখা চাই-ই চাই।
বাবা বলতেন, পানিটা একটু কমুক। তোদের নিয়ে একদিন ঘুরতে বেরোব। মা বাবাকে ফোড়ন কাটতেন, তুমি আর ঘুরতে বেরোইসো? শুকনার দিনই বের হও না, আর এখন তো বন্যা-বাদলের দিন। মা’রও নিশ্চয়ই আমাদের মত নৌকায় করে ঢাকা শহর দেখবার খুব শখ ছিল।
আমরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ক’টা নৌকা এলো আর ক’টা নৌকা ছাড়লো-গুণতাম। সকালে এক দফা। বিকেলে আরেক দফা। আমার আর মুশফিকের একটা খেলা ছিল। আমি বলতাম, দেখিস, আর ৫টা নৌকার মধ্যে আব্বু চলে আসবে। মুশফিক বলতো, উহুঁ। আর তিন নৌকার মধ্যেই আব্বু চলে আসবে, দেখো। ভাগ্যক্রমে মুশফিকের প্রেডিকশনই ঠিক হতো। গণনা ও বিচারে ও বরাবরই ভালো।
সেই পানিতে দুর্গন্ধ ছিল। তবু সেই পানির প্রতি আমাদের ভয়াবহ আকর্ষণ ছিল। পানি যখন আরো বাড়লো, আমাদের বাসা থেকে মেইন রোডে যাবার জন্য একটা সাঁকো তৈরি করা হল। আমরা সকাল-সন্ধ্যা সেই সাঁকো এপার-ওপার করতাম। এখন এই কাজ করতে গেলে ভয় করবে। তখন ভয়-ডর ছিল না। সাঁতার জানতাম না, কিন্তু পড়ে গেলে যে কী হবে---সে নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল না।
একদিন বাবা আসতে দেরি করছেন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি আর মুশফিক সাঁকোর ওপারে দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। জিয়া, রনি আর নাতাশার আব্বা আঙ্কেলেরা তো এসে গেছেন। আমাদের বাবা আসছেন না কেন? আমরা অস্থির হয়ে গেলাম।
মুশফিক বললো, চল, বাড়িওয়ালা আন্টিদের বাসায় গিয়ে বাবার অফিসে ফোন করি। আমাদের তখন ল্যান্ডফোন ছিল না।
আমি বললাম, কিন্তু অফিসের নাম্বার তো জানি না।
মুশফিক বললো, আন্টিরা জানবেন নিশ্চয়ই।
মুশফিকের যুক্তি আমার পছন্দ হল। আমরা দু’জনে মিলে আন্টিদের বাসায় কলিংবেল টেপাটেপি করতে লাগলাম।
পুরো বিল্ডিং-এ এই বাড়িওয়ালাদের বাসাতেই তখন কলিংবেল ছিল। এই কলিংবেলটার প্রতি আমার এক ধরণের মুগ্ধতা ছিল। যখনই সুযোগ পেতাম, চারপাশটা ভালো করে দেখে নিয়ে বেলটা টিপে দৌড় লাগাতাম। আন্টি সম্ভবত বুঝতেন, এটা আমাদের কাজ। তাই আর কিছু বলতেন না। বড় ভালো মানুষ ছিলেন তারা।
মা দেখি আন্টিদের ড্রয়িং রুমে মুখ ভার করে বসে আছেন। বাবাকে ফোন করা হয়েছে। কেউ ফোন ধরছে না। পথে কোন এ্যাক্সিডেন্ট-ট্যাক্সিডেন্ট...মনের ভেতর যা গুজগুজ করছিল, তা মুখে আনতে পারি না আমরা। মুখে আনলে যদি সত্যি হয়ে যায়! গত ক’দিনে বেশ কিছু নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎস্প্‌ষ্ট হয়েও মারা গিয়েছে অনেকে। পত্রিকায় দেখা সেই দুঃসংবাদগুলো আমাদের মনে আনাগোনা করতে থাকলো।
বাড়িওয়ালা আন্টি বললেন, চিন্তা করো না, সালমা। ভাই নিশ্চয়ই অফিসের কাজেই অন্য কোথাও গিয়েছেন। এসে পড়বেন।
মা বললেন, কিন্তু দেরি হলে তো আপনাদের এখানে একটা ফোন দিত অন্তত।
আন্টি আমাদের জন্য আপেল আর চকোলেট নিয়ে আসেন। আপেলের প্রতি আমাদের কারোরই রুচি ছিল না। বিস্বাদ একটা ফল। চকোলেটটা আমরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলাম। বিদেশী চকোলেট। আন্টির বড় বোন আমেরিকা থেকে নিয়ে এসেছেন।
এরপর এল কোক। কোক আমাদের পছন্দ ছিল না। আমরা ছিলাম সেভেন-আপের ভক্ত।
মুশফিক মুখ ফসকে বলে ফেললো, আন্টি, সেভেন-আপ নাই?
মা বিব্রত বোধ করলেন। মুশফিকের দিকে কড়া চোখে তাকালেন। মুশফিকের এত কোন ভাবান্তর হল না।
আন্টি সেভেন-আপ নিয়ে এলেন। বিত্তবানদের বাসায় এগুলোর ভালো মজুত থাকে। বিত্তবান হবার একটা লক্ষণই হচ্ছে বাসায় সবসময় কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইসক্রীম আর মিষ্টি মজুত থাকা।
মা কিছু খাচ্ছেন না। আন্টি এটা লক্ষ করলেন। বললেন,
সালমা, আরেকবার ফোন করে দেখবা?
দেখি, ভাবি।
মা টেলিফোনের ডায়াল ঘোরাচ্ছেন। তার চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছায়া।

হাসপাতালে এসে শুনি, বাবাকে নতুন টেস্ট দেয়া হয়েছে। আর কতো টেস্ট করাবে এরা? শরীরের প্রতিটা পার্টসই তো টেস্ট করে ফেলেছে প্রায়।
প্রথম দু’দিনেই টেস্টের পেছনে খরচ হয়েছে হাজার বিশেক টাকা। এক্সরে থেকে শুরু করে এমআরআই কিছুই বাদ পড়েনি। এখন আবার যোগ হয়েছে এন্ডোস্কপি-কোলনস্কপি। সব শালা টাকা হাতানোর ধান্দা। আমি নিশ্চিত, বাবার অন্ত্রে বা পাকস্থলীতে কোন গণ্ডগোল নেই। ঐদিন তো ডাক্তার বলেই দিলেন, হাড়ে সামান্য সমস্যা। ক’দিন ইলেকট্রিক সেঁক দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এর মধ্যে আবার এইসব ঝামেলা!
কোলনস্কপির কতগুলো পূর্বশর্ত আছে। আপনি পরীক্ষার দু’ দিন আগে থেকে মাছ-মাংস-সবজি কিছু মুখে দিতে পারবেন না। তাহলে খাবেটা কী? দুধ আর ডিম। ভাত না খেলেই ভালো। রুটি ইজ ওকে। প্রচুর পানি খেতে হবে। আর হ্যাঁ, চা খাওয়া চলবে না। আরো কীসব হাবিজাবি বলে গেল নার্স।
মা’র মুখটা শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে আছে। টেনশনে। বাসায় ক্যাশ টাকা বলতে কিচ্ছু নেই। এদিকে টেস্ট না করালেও নয়। মনের মধ্যে একটা খুঁতখুঁতানি থেকে যাবে না হয়।
মেজ মামা ফোন দিসিলো।
কী বললো?
কী আর বলবে? বাবার অবস্থা জিজ্ঞেস করলো।
আর?
বললো, টাকাপয়সা কিছু লাগলে বলতে। পাঠায়ে দিবে।
মা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। একটা বড় রকমের বোঝা কিছুক্ষণের জন্য তার কাঁধ থেকে নেমে গেল। উনি জানেন, এই স্বস্তি বেশিক্ষণের নয়, তবুও তিনি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে স্বস্তিটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছেন।
ছোটমামাকে ফোন দিব?
কী দরকার?
আসতে বলি। রাতটা এখানে কাটিয়ে যাক একদিন। তুমি বাসায় গেলা। রেস্ট নিলা।
লাগবে না। মাশুক কি পারবে তোর আব্বাকে বাথরুম করায়ে দিতে?
মা’র কথায় যুক্তি আছে। বাবা প্‌থিবীর কারো সেবা গ্রহণ করতে রাজি নন। আর যদি রাজি হন-ও বা, বাবার মেজাজের তোড়ে সেবাদাতা অচিরেই ব্যাগপ্যাক করে পালাবে।
হাসপাতালে ভর্তি হবার কিছুদিন আগে ছোটমামা বাসায় এসেছিলেন। ছোটমামা গুণী মানুষ। চুল কাটতে জানেন, শেভ করাতে জানেন এবং রান্নাবান্নাও জানেন ভালো। মহা উৎসাহে তিনি বাবার চুল কাটানো এবং শেভ করানোর দায়িত্ব নিলেন। চুল কাটার পর্বটা নির্বিঘ্নেই শেষ হল। গোল বাধলো শেভ করতে গিয়ে। বাবার মেজাজ তখন খিঁচিয়ে উঠেছে। কারণে অকারণে একটু পরপরই খেকিয়ে উঠছেন। মামাও ততক্ষণে নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। দুলাভাইকে সামলে তার অভ্যাস আছে, এরপরও। শেষমেশ আর শেষরক্ষা হল না। বাবার গাল কেটে বসলেন তিনি। ফলাফল, ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস আসার পূর্বেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালানো।
আমরা তবু মা’কে গুঁতোই, আচ্ছা, আমরা কেউ না হয় একদিন রাতে থাকলাম। তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট করে আসো।
মা এবার আর কিছু বলেন না। সম্ভবত আমাদের ছেলেমানুষী যুক্তিতে মনে মনে হেসে ওঠেন।
মুশফিক একটা বুদ্ধি বের করে।
বাসায় তো একটা টেবিল ফ্যান পড়ে আছে। ওটা না হয় এইখানে নিয়ে আসি। গরমটা আর গায়ে লাগবে না তাহলে।
মা ইতস্তত করেন। লাগবে না। তাছাড়া তোরা ঘুমাবি কীভাবে? তোদের রুমও তো গরম।
কথা সত্য। রুমের সিলিংটার বয়স হয়েছে। ঘোরে কী ঘোরে না। বহুদিন ধরেই পাল্টাবো পাল্টাবো করেও পালটানো হচ্ছে না। আপাতত, টেবিল ফ্যানটাই ভরসা। মুশফিক অবশ্য একটা বুদ্ধি বের করে, আমরা তিনজন না হয় একই রুমে ঘুমাবো।
হায়। এই সহজ সমাধানটা আমার মাথায় আসলো না।
কিন্তু এতো বড় জিনিসটা আনবি কীভাবে?
কতো বড় আর জিনিস? আমরা মা’র কথাকে উড়িয়ে দিয়ে বলি, এইটুক একটা জিনিস। রিকশাতে করেই আনা যাবে।
হাসপাতালে নিয়ে ঢুকতে দেবে তো? মা’র তবু সন্দেহ কাটতে চায় না।
না দেয়ার কী আছে? আর একেবারেই না দিলে ‘ম্যানেজ’ করা যাবে। ব্যাপান্না।
এইখানে সবকিছুই টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা যায়।
দুপুর তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নাকি দর্শনার্থী আসা নিষেধ। একদিন দুপুরের খাবার আনতে আনতে তিনটে বেজে গেলো। দারোয়ান আমাকে ঢুকতেই দেবে না। আমাকে ঢুকতে দিলে নাকি তার চাকরিটা থাকবে না। পেছনে একটা গেট আছে। ওটায় নরম্যালী গার্ড থাকে না। সেদিন ওখানেও গার্ড বসিয়ে রেখেছে। যথারীতি সে ভীষণ সৎ। ও কর্তব্যপরায়ণ। হাজার কাকুতি-মিনতি করেও তাকে কনভিন্স করতে পারলাম না। মুশফিককে ফোন দিলাম। ও এসে আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে গেলো।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, ম্যানেজ করলি কীভাবে?
ঘুষ দিয়ে। আবার কীভাবে?
দিলি কখন? আমি তো খেয়ালই করলাম না।
চোখ থাকতে হয়, বড় ভাই। চোখ থাকতে হয়। তোর সামনেই তো দিলাম।
আমি ঘটনাটা মনে করার চেষ্টা করলাম। আমার স্ম্‌তিশক্তি খারাপ। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার ডিটেইলস ভুলে যাব, এতোটা খারাপ না। অনেক হাতড়ে-পাতড়েও কখন সে টাকাটা দারোয়ানের পকেটে পুরে দিল, তার সন্ধান পেলাম না।
বুদ্ধিমান প্‌থিবীর সামনে নিজেকে তখন আমার নেহাতই শিশু মনে হচ্ছে।
বাবাকে যখন ভর্তি করা হয়, বাবার বেডটা ছিল একেবারে কর্নারে। জানালা থেকে বেশ দূরে। একদমই আলোবাতাস পান না। মা’র অবস্থাও কাহিল। পাশের বেডটা খালি হবার জন্য আমরা মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকি। ষোল কোটি মানুষের প্রার্থনাও ঈশ্বর মাঝে মাঝে ফেলে দেন, কিন্তু আমাদের চার-পাঁচজনের প্রার্থনা তিনি বোধহয় শুনলেন। দু’দিন পরেই পাশের বেডের লোকটা চলে গেলেন। আমরা ওয়ার্ডের সিনিয়র সিস্টারকে ধরলাম। বললাম, বাবাকে ঐ বেডে সরিয়ে আনা যায় কিনা। উনি স্রেফ ‘না’ করে দিলেন।
কোন প্রসেডিউর? কোন উপায়?
বললাম না, হবে না? উনার কন্ঠে ঝাঁঝ। বুঝেন না ক্যানো? উনার সব ফাইল এই বেড নাম্বার অনুযায়ী করা। এখন বেড চেঞ্জ করলে গ্যাঞ্জামে পড়বো আমরা...আপনারা না।
দেখুন ম্যাডাম, এবার মুশফিক এগিয়ে আসে। আপনি আমাদের হেল্প করলে আমরাও তো আপনাকে হেল্প করতে পারি, নাকি?
আপনি কি আমাকে ঘুষের প্রস্তাব দিচ্ছেন? আপনার সাহস তো কম না। মহিলা এবার আমাদের দিকে তেড়ে আসেন।
এই ঘটনার দু’দিন পর বাবা জানালার কাছের বেডটা পান। কীভাবে---মুশফিককে আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। তবে ঐ মহিলা এখন নিয়মিত বাবার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন দেখছি।

আবারো বাসায় ফেরা। আবারো বাসের জন্য অপেক্ষা।
মুশফিক আজ আর বাসায় ফিরবে না। হলে থাকবে। ওর নাকি কী একটা প্রজেক্টের কাজ আছে। আমার ধারণা, ওসব প্রজেক্ট-টজেক্ট কিচ্ছু না। ওর একটা নতুন এ্যাফেয়ার হয়েছে। মেয়ে সম্ভবত মেডিক্যালে পড়ে। ঢাকা বা সলিমুল্লাহ কিছু একটা হবে। আজকাল প্রায়ই ওকে মোবাইলে ব্যস্ত থাকতে দেখি। ওর কখনো মোবাইল ম্যানিয়া ছিল না।
আমার ধারণা, দুঃসময়েই মানুষের সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে।
ফারহান ছিল আমাদের সার্কেলের সবচেয়ে লাজুক ছেলে। ফার্স্ট ইয়ার শেষ। অথচ ও তখন পর্যন্ত ব্যাচের কোন মেয়ের সাথে সামনাসামনি কথা বলেনি। একটা মেয়ের সাথে ম্যাসেঞ্জারে সামান্য চ্যাট করতো শুনতাম। আমরা পাত্তা দিইনি। ওর গার্লফ্রেণ্ড জুটলে সূর্য রেগুলার পশ্চিম দিকে ওঠা শুরু করবে, এমন একটা ধারণা আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল ছিল।
সেকেণ্ড ইয়ারের মাঝামাঝি ওর আব্বা মারা যান। ওর বড় ভাই সবে পাশ করে বেরিয়েছেন। চাকরি-বাকরি কিছু হয়নি। ভয়ংকর দুঃসময় ওদের। এর মধ্যেই ওকে দেখি, আমাদের ছেড়ে ওর সেই ম্যাসেঞ্জার বন্ধুকে নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াতে। আমাদের চোখে লাগে ব্যাপারটা। শালা তোর বাপ মরসে, কই একটু চুপচাপ থাকবি, আর তুই কিনা প্রেম করে বেড়াস?
আমরা অনেক বোকা ছিলাম। আমরা অনেক শিশু ছিলাম।
আমরা বুঝতে পারিনি, সেই সময়টায় নিজের কষ্টগুলোও শেয়ার করার জন্য ওর একটা অবলম্বন দরকার ছিল। আমরা, তার বোকা ও শিশু বন্ধুরা সেই অবলম্বন হতে পারিনি। হতে পেরেছিল এক নাম না জানা ম্যাসেঞ্জার কন্যা।
আমি সকালবেলা কেনা সিগারেটটা ধরাই।
ধোয়াঁর একটা কুণ্ডলী পাকানোর চেষ্টা করি। পারি না।
মুহিতকে একটা ফোন দেয়া দরকার।
ফোনে ব্যালান্স নেই। থাকলে তো আর মিনার টাওয়ার খোঁজা নিয়ে এতো হুজ্জত করতে হত না।
হুট করে একটা নরম বাতাস এই শহরের উপর দিয়ে বয়ে যায়। তার তো আর ট্রাফিক পুলিশের চোখ রাঙানি খাবার ভয় নেই। সেই স্নিগ্ধ বাতাসে আমরা আসন্ন ব্‌ষ্টির সম্ভাবনাকে খুঁজে পাই। অনেক উপরে বেশ গোলগাল একটা চাঁদ আমাদের অবুঝ আনন্দ দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে। কেয়ার মত অল্প কিছু মানুষ, সেই হাসির শব্দ শুনতে পায়---আমি জানি।


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

আমার এই রকম গল্প ভালো লাগে, নিস্তরঙ্গ নদীর মত, ঝড় ঝঞ্জা নেই, গল্পের ক্লাইম্যাক্সে পৌছুবার কোন তাড়া নেই, একলা মনে গুটগুট করে চলছে, হঠাৎই থেমে যাচ্ছে। তারপর কি হলো? নাহয় নাই জানলাম, কেমন জানি শান্তি শান্তি কিছুটা সময় কাটানো চরিত্র গুলোর পাশাপাশি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সত্যপীর এর ছবি

ভারী চমৎকার.

..................................................................
#Banshibir.

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

প্রিয় কবির কবিতার শিরোণাম দেখে ঢুকলাম। লেখা চলুক।
প্যারাগুলোর মধ্যে এক লাইন করে গ্যাপ দিলে পড়তে আরও সুবিধে হবে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তিথীডোর এর ছবি

এখন পর্যন্ত সচলে লেখা আপনার পোস্টগুলোর মধ্যে এটা সেরা। চলুক
পাঁচতারা দিলাম।
[চার তারা লেখায়, বাকি তারাটা আবুল হাসানের কবিতার শিরোনামের সুবাদে। হাসি ]

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একটু বেশি কথাবার্তা আছে বলে মনে হইল। কিন্তু গল্প বলার তাড়া না থাকা ভালো।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

দুঃসময়েই মানুষের সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে।/quote]

ধারাবাহিক করেন। ভালো লাগছে পড়তে।

বন্দনা এর ছবি

অদ্ভুত ভালো লাগলো, আপনার গল্পের গাথুনি বেশ চমৎকার ভাইয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

এক টানে পড়লাম .... ভালো লাগলো!
চলুক!

....জিপসি

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

গল্পটা মোবাইল থেকে দুপুরে পড়েছি, এখন কমেন্ট করছি!
পড়তে খুব ভালো লাগছিলো, আরো আশা করছিলাম। কেমন যেনো অতৃপ্তি থেকে গেলো!
ভালো থাকবেন খুব।

-নিয়াজ

সাত্যকি এর ছবি

ভীষণ ভালো হয়েছে রে ! আমার নিজেরই কলম নিয়ে বসে যেতে ইচ্ছে করছে।

সুমাদ্রী এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে আশফাক, অনেকদিন পর লিখলেন। চলুক।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

খুব প্রিয় লেখকদের মন্তব্য পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।

বন্ধু সাত্যকি, অনিন্দ্যদা, সত্যপীর দাদা, শিশিরকণা, ত্রিমাত্রিক কবি, তিথীডোর, সুমাদ্রী, জিপসি, নিয়াজ, বন্দনা দি, কমল---সবাইকে তাদের ভালোলাগা জানানোর জন্য ধন্যবাদ

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

দূর্দান্ত গল্প, আশফাক। কিছু কিছু জায়গায় “হুমায়ুন হুমায়ুন” মনে হয়েছে। সেটা আমার ভুলও হতে পারে। গল্প/উপন্যাস যাই হোক, চলুক।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আশফাক আহমেদ এর ছবি

বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমি ঠিক এই মন্তব্যটার অপেক্ষাতেই ছিলাম। নিজের লেখালেখি সম্পর্কে আমার ভালোই এক ধরনের নির্মোহ ভাব আছে। সেখান থেকে আমি জানি, আমার লেখায় হুমায়ূন আহমেদের খানিকটা হলেও প্রভাব আছে। লেখার সময় সচেতনভাবেই সেই প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি। তাও কিছুটা ছাপ হয়তো থেকে যায়

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা
ইসরাত

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গল্পটা কি শেষ? প্রথমে মনে হচ্ছিল লম্বা গল্প, কিন্তু শেষের দিকে এসে ইচ্ছে করছিল আরেকটু চলুক। চমৎকার লিখেছেন নিঃসন্দেহে হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দুর্দান্ত এর ছবি

ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্যাটিগরীতে বিশ্বাস রাখতে চাই। অর্থাৎ এটি একটি ধারাবাহিক হবে। কারণ একটি দুর্দান্ত ধারাবাহিক-এর সমস্ত চিহ্ন এ লেখায় প্রবলভাবে উপস্থিত। যে নৈর্ব্যক্তিকতা থাকলে এ ধরণের গল্প ঠিকমত রসঘন হয় এ লেখায় তা পুরোপুরি উপস্থিত। এখন যা দরকার তা হচ্ছে যে বিশাল ক্যানভাস-এর আবহ-র প্রস্তুতি এ লেখায় অনুভূত হচ্ছে সেটার প্রতি সুবিচার করে লেখাটিকে পর্ব থেকে পর্বান্তরে এগিয়ে নিয়ে চলা।
পরবর্ত্তী অংশের জন্য সাগ্রহ অপেক্ষায় থাকলাম।
- একলহমা

রাত-প্রহরী এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।