গল্প: ভালোবাসার ডিজুস সময়

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বুধ, ১৩/০২/২০০৮ - ১০:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

_ শেন্টুদের বাড়ীর পার্কিং এরিয়ায় কার থেকে নামতেই ওদের শেফার্ড জিমি ঘেউঘেউ করে ওঠে। সেকেন্ড ফ্লোরের ব্যালকনিতে শেন্টু লাভ বার্ডগুলার সাথে খোঁচাখুচি করতেসিল। আমাকে দেখে শাউট করে - 'ম্যাক্স, ই-য়ো ম্যা-এ-ন! এতো আর্লি আর্লি কাহিনী কি?'
আমি জিমির দিকে তাকাই - 'দোস্ত, তোগো জিমি কি বান্ধা আছে?'
-'কাওয়ার্ড ম্যা-এ-ন!!! কিশসু হবে না, সোজা কাম ইন।'
এই হালাদের বাসায় আসা বহুত ঝামেলা, কুত্তা জিমির ঘেউঘেউ, মেইন গেইটে কেডস খুলে তারপর হাঁটা লাগে। আমার এইসব ভালো লাগে না অ্যাট অল। খালি পায়ে টাইলসের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ঊঠতে নার্ভাস লগে, আই ফিল, স্লিপ করে পড়ে যাবো। শেন্টুর রুমে ঢুকে দেখি আগের ডিভানটা নাই। ফ্লোরে ম্যাট্রেজ বিছানো, কুশনের পাশে ল্যাপটপ, রুমের রাইট কর্নারে টোশিবা সাউন্ড সিস্টেম, ওয়ালে টুয়েন্টি ফোর ইঞ্চি সনি ফ্লাটস্ক্রীন টিভি। টাইলসগুলোও নতুন নতুন লাগতেসে। কুশনটা সরায়ে বসতেই আই ওয়াজ লাইক থান্ডার্ড। শেন্টু তার মিস্টিরিয়াস হাসিটা আমাকে ছুড়ে বলে - 'হো-য়া-ট-স আপ, বাডি। এমুন টাশকি খাইলি ক্যানো?'
পৃষ্ঠা উল্টাই পাল্টাই - 'এই রেয়ার কালেকশন, হাউ কাম?'
- নোরা।
- হোয়াট? এই জিনিশ নোরা দিসে?
- ইয়াপ।
- আজকাল খুব লাল হইতেসো মনে হয়!

এইচবিও'তে 'বর্ন টু রাইড' চলতেসে। স্কীন টাইট স্ক্র্যাচ জিন্সের জিপার টেনে শেন্টু পেছনে আন্ডারওয়্যারের রিবনটা বের করে দেয়। রুবার , স্পষ্ট পড়া যায়। আসল ব্র্যান্ড। ওর প্যান্টটা মনে হয় নিউ - 'এইটা ব্যাক রজারস, নাকি গ্যাজস?'
- 'স্যর-ই মাইট, ঐসব ক্ষ্যাত জিনিশে আমি নাই। এইটা লেটেস্ট - স্পিরিট নেক্সট।' মেটালিক বেল্টের হুক সেট করতে করতে শেন্টু লাইটারটা শো করে। বেল্টের সাথে কালার ম্যাচ করা, ব্লু ফেম। পুরা জোস। পয়জন'র ঘ্রাণটা পুরা রুমে ছড়িয়ে পড়ে। রাইট দ্যাট মোমেন্ট ঝনঝন করে বাজে - দরদে ডিসকো দরদে ডিসকো ওম শান্তি ওম, শেন্টুর এইচ-পি আই প্যাক এস ডব্লিউ সিক্স ফাইভ ওয়ান ফাইভ। নোরার ফোন।
- 'ইয়াপ, জা-ন। হোয়াট? রিয়েলী! ঝা-ক-কা-স হইসে, ঝা-ক-কা-শ।'
শিন্টুরে এক্সসাইটেড মনে হইতেসে - 'হোয়াট'স আপ? হইসে কী?'
- নিশিতা ইজ ব্যাক ফ্রম ব্যাংকক ।
- 'ক-ঠি-ন'।
- 'লেটস মুভ, ইয়ার ।'

দুই
ডমিনাসের ব্যূফেতে আজ ক্রাউড নেই তেমন। শেন্টু নোরাকে ফোন দিচ্ছে, কুইক জা-ন। নিশিতা দূর থেকে দৌড়ে এসে আমাকে সফটলি হাগ করে - 'তুই ফ্যাট গেদার করলি কবে দোস্ত?' আমি মাসলটা কার্ভ করে বলি - 'ফ্যাট কই? দেখ! তুই স্লিম হইলি ক্যামনে? ব্যাংককে খাস কি?'
- 'আর কইস না দোস্ত, ফুড ইজ অ্যা রিয়েল প্রব দেয়ার। ঠু স্পাইসি।'
- হট?
- ইয়াপ।
- লাইক য়্যূ, অর মোর?
- অই কুত্তা, শুওর, বান্দর। ডি জি এম।
- হোক্কে সুইট হার্ট।
- তাইলে খাস কি?
- লাঞ্চে 'টেস্ট অব ইন্ডিয়া'। কাঁচা মরিচ দিয়ে ডাইল-ভাত খাই। ডিনারে হোস্টেলের ফ্রায়েড রাইস। খাই আর কান্দি। খাই আর কান্দি।
শেন্টু গল্পে জয়েন করে - 'হাউ অ্যাবাউট ব্যাংকক?'
- লটজ অব ফান। ফ্রিডম। ফ্রেন্ড।
- গ্র্যাড কবে?
- দেরী আছে রে, দুইবার প্রোবেশন খাইসি।
- তারপরে এমবিএ?
- আরে না। পড়ালেখার গুষ্টি কিলাই। তোরা দেশে অনেক মৌজ মাস্তি করোস। আই ডোন ওয়ান্যা মিস মোর - - -
আমি এবার নিশিতার পাশের চেয়ারে বসি - 'দোস্ত আমারে ব্যাংকক নিয়ে যা। অ্যাবাক-এ ক্রেডিট নিবে না?'
- 'এই লাস্ট মোমেন্টে কি গিয়ে কি করবি? তোর ইন্টার্ন কবে?'
- 'ও-নো- ও, দিল্লী দূর আছে ইয়ার। আমারে ব্যাংকক নিয়ে যা। এইসব ক্যাচাল আর ভাল্লাগে না। '
- 'ডোন্ট অ্যাক্ট লাইক অ্যা কিড, হে-ই হোয়াটস আপ?' নিশিতা ভ্রু কুঁচকায়।
- 'বাপের ঘ্যানঘ্যান ভাল্লাগে না। হি আন্ডারস্ট্যান্ডস নাথিং।'
শেন্টু খ্যাকখ্যাক করে হাসে - 'শুরু হইসে?'
নিশিতার অ্যাটেনশন আমার দিকে।
'বাপরে কইলাম, তুমি রি-রোলিং স্টিল কারখানার মানুষ, ওখানেরই থাকো, এর বাইরে আইসো না। আমারে আমার মত চলতে দাও। বাপ বালছাল কিসসু বুঝে না। সারাদিন প্যানপ্যান। এত টাকা কই নিই, কিসে খরচা করি। এইসব ভাল্লাগে না।'
- 'পুঅর ফেলো!'
নিশিতার নি:শ্বাসটা একেবারে আমার বুকের ডেপথে টাচ করে।
'কী তোমরা আমারে বাদ দিয়া ধুমাইয়া আড্ডা দিতেসো?' লিকলিকে শরীরের নোরা 'ইউঊউ, ফেয়ারী উইচ' চিৎকারে কুঁকিয়ে ওঠে। নিশিতা উঠে নোরাকে লাইট কিস করে।
- 'সৌ লং টাইম - - -। '
- ' তোমরা কী এতো আলাপ করলা?'
- 'এমনিতে, কিসু না। ফাও গ্যাজাইতেছি।'
নোরাকে পেয়ে শেন্টুর মুখে হাসি ফুটছে। এই সুযোগে আমাকে কিক-কমেন্ট করে - 'আমাগো ম্যাক্সের মন উদাস, একটা চিক দরকার।'
নোরা আঁতকে উঠে - 'ক্যা, রিপার খবর কি?'
- 'হু ইজ রিপা?' নিশিতাও কিওরিয়াস।
আমি ব্রোকেন হার্ট, বুক চাপড়াই - 'নাইটমেয়ার, অল নাইট মেয়ার।'
- 'দোস্ত তুই টোটাল কয়টা ড্রপ আউট করলি, হিশাব আছে?'
- ' হাইড আউট শেষ?' নোরাও খোঁচা দেয়।
- 'আবার জিগস? রোমিও নেভার ক্রাইস।' নিশিতা আমার পিঠে চাপড় দেয়।
- 'আয়্যাম হাঙরী।'
- 'মী ঠু।'
ডমিনাসে তখন ব্রায়ান অ্যাডামস - 'আই উ'ন্ট কুইট, অ্যা উইল গো ডাউন উইথ মাই শীপ, আনটিল আই ফাইন্ড য়্যূ।'

তিন
নিশিতাদের রুফটপে সুইমিং পুল। আমাদের এবারের গেদারিংটা অনেকদিন পর। হাল্কা শীত শীত লাগতেসে। নোরা সাভারিয়া জ্যাকেট পরেছে। নতুন ট্রেন্ড।
- 'তোরা কেউ বইমেলায় গেসিলি?'
- 'হোয়াট?'
- 'বই মেলা। একুশের মেলা।' নিশিতা মাথা তুলে তাকায়।
- 'য়্যূ গট ট্র্যাশ ইন ব্যাংকক, প্যাল। হোয়াট দ্য হেল দেয়ার? বেটার গো এটসেট্রা, বুক ওয়র্ম; য়্যূ উইল ফিল বেটার।'
- 'আমি গেসিলাম ওয়ান্স, প্রোগ্রাম ইভেন্ট।' নোরা একটি প্রাইভের রেডিওর জকি। হেভবী পপুলার। পোলাপাইন পুরা পাংখা। রিসেন্টলি একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে পড়তেসে। ফেব্রুয়ারী মাসে মিউজিক ট্র্যাকের ফাঁকে ফাঁকে একুশে নিয়ে ইনফো দেয়া লাগে।
শেন্টু ব্যাগ থেকে হ্যানিক্যান বের করে - 'ক্যান য়্যূ ম্যানেজ সাম হট ওয়াটার?'
নিশিতা তুচ্ছ হাসি হেসে ভেতরে যায়।
- 'ইটস গন্যা বি অ্যা মেমোরঅ্যাবল নাইট আউট'। শেন্টু গুনগুন করে সুর তোলে।
নিশিতা আসতেই নোরা চিৎকার দেয় - 'ও-ই য়ে। পু-উ-রা জটিল, গুরু।'
আমি তাড়াতাড়ি হান্ড্রেড পাইপার্স হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করি - 'ফ্রম ব্যাংকক?'
- 'হোয়াটস আপ ড্যুড? লেভেল পড়ে দ্যাখ, জি বি জি' নিশিতা ধমক দেয় - 'অনেক কষ্টে কাস্টমস পার হইসি'।
- 'ফা-টা-ই-য়া ফেলছোসরে দোস্ত - - -'। শেন্টুর উল্লাস।

রাতের গভীরতা বাড়লে কুয়াশার কারণে চাঁদ দেখা যায় না। আমরা পারস্পরিক ঘন হয়ে আসি আর রুমের ক্যান্ডেলগুলো রোমান্টিক হয়ে ওঠে ক্রমাগত। নিশিতা আমার কানের কাছে ফিসফিশ করে - 'উইল য়্যূ বি মাই ভ্যালেন্টাইন?' কিউপিডের তীর এবার আমাকে অবশ করে দেয় - 'লেটস মেইক আউট টু নাইট - - ?'

ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁলে গ্লাসের টুং-টাং শব্দে চিয়ার্স ধ্বনিত হয়।
শেন্টু-নোরা আমাদের ভ্যালেন্টাইন উইশ করলো কিনা সেটা মনে পড়ে না।

_______________________

ফুটনোট:
গল্পটির অনুপ্রেরণা, বছর দুই আগের সাপ্তাহিক২০০০ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন 'জেনারেশন ডিজুস'।

ছবিটি এখান থেকে নেয়া।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখাটির কিছু কিছু শব্দ নতুন মনে হতে পারে। তাদের জন্য 'সরল ডিজুস ডিকশনারী':
১) আবার জিগস = পুনরায় জিজ্ঞাসা
২) হোয়াট'স আপ ড্যুড! = বন্ধু কি খবর?/কি হয়েছে?
৩) ই-য়ো ম্যা-এ-ন = আরে তুমি?
৪) হেই হোয়াটস আপ = কুশল জিজ্ঞাসা
৫) পু-উ-রা টশকি = হতভম্ব হওয়া অর্থে
৬) ফাও গ্যাজানো = অহেতূক আড্ডা
৭) আজাইরা প্যাচাল = কারণবিহীন বকবক
৮) ও-ই য়ে = আশ্চর্য হ্যাঁ-বোধক অর্থে
৯) ও-নো-ও = না বোধক
১০) ফা-টা-ই-য়া ফেলসি = দারুণ বা অসাধারণ অর্থে
১১) প্যাল = কাছের বন্ধু সম্পর্ক
১২) জোশ = মুগ্ধতা প্রকাশ
১৩) নাইট আউট = রাতের পার্টি (সারারাত ব্যাপী)
১৪) ড্রপ আউট = প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া
১৫) ধুমাইয়া আড্ডা = দীর্ঘক্ষণ আড্ডা
১৬) মেইক আউট = অতি ঘনিষ্টতার সম্পর্ক
১৭) হাইড আউট = ঘনিষ্টতার স্থান/ রোমান্স স্পট
১৮) পাংখা = ভক্ত, অনুরক্ত/ অতিরিক্ত স্মার্ট
১৯) খুব লাল = রোমান্টিকতার মাত্রা বোঝাতে
২০) ক-ঠি-ন = মুগ্ধতা প্রকাশ।
২১) ঝাক্কাস = চমৎকার
২২)চিক = বান্ধবী
২৩) ডি জি এম = দূরে গিয়া মর
২৪) জি বি জি = গাধার বাচ্চা গাধা
২৫) ক্ষ্যাত = রুচিহীন/পুরোনো

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

হেভি ইন্টারেস্টিং লাগলো। বাট এতো ইংলিশ ইউজ টলারেট করা যায় না দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

রাইট ফ্রেন্ড, কাড়ন এটি ভালোওয়াশার ডিজুশ গলপো।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

শিমুল, তোমার এই গল্পটা পড়তে পড়তে আমার খুব কষ্ট হলো। তোমার লেখার দোষ না। এই চরিত্রগুলি ও এই সংলাপ আমি চিনি না। অনুমান করি, ঠিক ছবিটাই তুমি তুলে এনেছো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রিয় জুবায়ের ভাই, এগুলো আপনার প্রজন্মের চেনার কথা না। আমাদের দূর্ভাগ্য - হুট করে একটা অদ্ভুত সময় চলে এলো, অদ্ভুত জীবনাচরণের প্রজন্ম; না বাংলা - না ইংরেজী। এবং বাঙালী মধ্যবিত্তের চৌকাঠে যখন চর্চাগুলো আগ্রাসী হয়, তখন কেবলই দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মিসফিট আমরা।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঘাবড়ানোর কারণ নেই। বৃহৎ বাংলাদেশের ও বাঙালি সম্প্রদায়ের পরিপ্রক্ষিতে দেখলে এরা ভয়াবহ রকমের সংখ্যালঘু তো বটেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৌরভ এর ছবি

জুবায়ের ভাই, আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। আমার দেশ থেমে গেছে মাত্র ছয় বছর আগে। আমিও চিনিনা এই সংলাপ আর চরিত্র।

শিমুল ঠিক জায়গায় আঘাত করেছেন।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সৌরভ, অচেনা সময়ে এই আঘাতে কী আর ভাঙন ঠেকানো যাবে?

তানভীর এর ছবি

বেশ কয়েক মাস আগে সাপ্তাহিক ২০০০-এ 'ডিজুস অভিধান' দিয়েছিল। তখন টার্মগুলো দেখেছি। ইংরেজীগুলো বাদে বাকী অনেক টার্মতো আমরা নিজেরাই ডিজুস আসার অনেক আগে থেকে বলি (যেমন- ক-ঠি-ন, আজাইরা, টাশকি, জোস, ধুমায়ে, গ্যাজানো, ইত্যাদি)। আর ইংরেজীগুলো মনে হয় তিশমা টাইপ গুলশান-বনানীর বালক-বালিকারা আগেও বলত। শুধু ডিজুসের কল্যাণে ইদানীং মনে হয় এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের টিভি খুললেই এখন আঁতকে উঠি।

সৌরভের সাথে একমত পোষণ করেই বলছি ঠিক জায়গায় আঘাত করেছেন।

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক বলেছেন। একটা সময় হয়তো নির্দিষ্ট পরিসরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অথবা কেবলই ওরাং ওটাং জেনারেশনের ভাষা ছিল এসব। কিন্তু এখন ড়েডিও টু-ডে, ফুড়তির জোয়ার। গুলশান বনানীর শ্রেণীবিভাজন কিংবা বিয়োজন শেষে খিলগাও-শেওড়াপাড়া অথবা পল্লবীর কিশোর-কিশোরীগুলোও এসব বলছে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

এই শব্দের লিষ্টি যতই বাড়তে থাকবে, পুরনো প্রজন্মের সাথে নতুন প্রজন্মের দূরত্বও ততই বাড়বে।
শিমুলের জন্যে জাঝা।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দূরত্ব বেড়েই চলেছে, কনফু। এই লিস্টি লম্বা ছাড়া খাটো হওয়ার কোনো সম্ভবনা দেখছি না। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভয়ঙ্কর একটা গল্প। দেশে থেকেই আমি এদের চিনিনা। নিজেরে দুরাগত কোন দ্বিপের বাসিন্দা বলে মনে হয়।

শিমুলরে (বিপ্লব)

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রিয় আলবাব ভাই: দ্বীপের রাজপুত্র-রাজকণ্যারা স্বাভাবিক নিয়মেই বড় হোক। এসব ভীতি জাগানিয়া ব্যাপার যেনো ওদের স্পর্শ না করে।

হিমু এর ছবি

মন দিয়ে পড়লাম। স্টিভ লেভিটের ফ্রীকোনমিক্স এর একটা অধ্যায় আছে, সংস্কৃতির সংখ্যায়ন (কোয়ান্টিফিকেশন) নিয়ে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সমাজে সময়ের সাথে নামের পরিবর্তন নিয়ে একটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক প্রবন্ধ আছে। গল্পটা পড়ে সেটির কথা মনে পড়লো।

বাংলাদেশে এই জিভ জড় করে কথা বলার ব্যাপারটিকে ডারউইনীয় বিশ্লেষণ করা যায়। একটি ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে তুলনামূলকভাবে সপ্রতিভ ছেলেমেয়েরা এ ভঙ্গিতে কথা বলে। কাজেই নিজেকে সপ্রতিভ হিসেবে যাদের একটু কষ্ট করে জাহির করতে হয়, তারা খুব দ্রুত এই ভঙ্গিটি রপ্ত করে নিতে চেষ্টা করছে, সিলেকশন পটেনশিয়াল বৃদ্ধির জন্য। আমি খুব দুঃখিত হই যখন দেখি কেউ নিজের বাংলা উচ্চারণে একটা ইংরেজির ছোঁয়াচ দেয়ার চেষ্টা করে, কিংবা "ইউ নো" "আই থিঙ্ক" ইত্যাদি ঔপসর্গিক অলঙ্করণ দিয়ে নিজের কথায় একটা ইংরেজি প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করে। এর চেয়ে বিশুদ্ধ ইংরেজি গড়গড়িয়ে বললে বরং ভালো শোনায়। গত পাঁচ বছরে আবার ইংরেজিকে হটিয়ে হিন্দি ঢুকে পড়ছে কিশোরকিশোরীদের মুখে। এই মাউড়া আগ্রাসন রীতিমতো অপমানজনক, এবং সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এককালে মাউড়ারা ব্যবসা করতে এসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় প্রাণপণে কথা বলতো, এখন একটা জাতির প্রায় পুরো একটা প্রজন্ম সেই মাউড়াদের ভাষার উচ্ছিষ্ট দিয়ে নিজের কথাকে সাজাচ্ছে, এটি আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যর্থতার চরম উদাহরণ।

গল্পের ব্যাপারে মন্তব্য খুব সংক্ষিপ্ত, গল্পটি উপভোগ করতে পারিনি। কোথায় যেন হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। এর জন্যে যে কে দায়ী, বুঝতে পারছি না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যর্থতার উদাহরণটা যথার্থই মনে হলো। এ ব্যাপারে ব্লগেই আলোচনা জমতে পারে, অন্য পোস্টে।
।।।
হোঁচট খাওয়ার দায়টুকু পাঠকের নয় মোটেও। গল্পের পথ হয়তো মসৃণ হয়নি, অপরিপক্ক হাতে - - -।
পড়ার জন্য ও মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

দায়টুকু লেখককে তো দেয়া যাবেই না। বললেই হলো নাকি? সম্ভবত এই ক্রমবর্ধমান ক্রিওলাইজেশন সম্পর্কে মনের ভেতরে তিক্ততাটুকুই দায়ী। কে জানে, হয়তো এ ব্যাপার হাল ছেড়ে দিয়ে আরো "উদার" হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভোদাই-ই রয়ে গেলাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

উদার! নো ওয়ে!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ঝাককাস চোখ টিপি হয়েছে ... আমার তো ইদানিং ঢাকা গেলে নিজেকে ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে ... কুঁকড়ে থাকি নিজের ভেতর

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমারো ভয় দেশে নামতেই সাচ এ খ্যাট বিশেষন শুন্তে হয় কিনা। এই বিষয়ে মনে পড়ে পাশের বাসার এক পিসীর কথা। আশির দশকের মাঝামাঝি কোন এক আবাহনী-মোহামেডান যুদ্ধে আবাহনী ডাব্বা মারলো। মনখারাপ করে বাইরে এলাম। পিসী জানতে চাইলেন আমি কার সমর্থক। বললাম আবাহনী। তিনি বললেন, মাতাডারে টাহারে মাতাডারে টাহা.....
ডিজুস প্রজন্মের অমৃতভাষ্য আমাকে দৈনিকি নিকটবর্তী দেওয়ালে মাতা টাহানোর প্রেরণা দেয়।

শিমুলের গল্প শিমুলের মতোই। গল্পটা নজরে রাখা হলো।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অতিথি লেখক এর ছবি

এই চরিত্র আর সংলাপ আমিও চিনি না।
তবে, ড্যুড, গল্প দারুন হইসে, ও-ই-য়ে!

-শামীম হক

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে বিদেশে বসেও দেশের ডিজুস জেনারেশনের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমার তো দেখতে বেশ মজাই লাগে। তরুণেরা সব সময়েই নতুন কিছু একটা নিয়ে থাকতে চায়, যা বয়স্করা অনেক সময়েই পছদ করেন না।
তবে একটা কথা সত্যি। বয়েস বাড়লে এরাই আবার রক্ষনশীল হয়ে যাবে। শীর্ষেন্দু থেকে কোট করছি, "বিপ্লবের পথ সর্বদাই গার্হস্থ্যের দিকে বেঁকে যায়।"

-জাহিদ হোসেন
________________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অমিত আহমেদ এর ছবি

হাসি খুব ভালো মতই চিনি এ জেনারেশনকে। শিমুল ছাড়া আর কেউ লিখতে পারতো না এই লেখা।

উত্তম ও উপাদেয়।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রিয় বদ্দা, জাহিদ হোসেন, শামীম হক এবং অমিত আহমেদকে ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

পু-উ-রা ঝা-ক্কা-স হইসে!

ই-য়ো ম্যা-এ-ন, ফা-টা-ই-য়া ফেলসো!


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বদ্দার মতো আমারো ভয়, সাচ অ্যা খ্যাত- বিশেষণটা শুনতে হবে বোধহয়।
ভুল সময়ে আমি এসে পড়লাম, নাকি সময়টাই ভুল করে আমার সময়ে এসে গেলো, ঠিক মেলাতে পারি না।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নিঘাত তিথি এর ছবি

এতদূর থেকে শিমুল কেমন করে এই জেনারেশনকে লেখায় এইরকম করে তুলে আনেন ভেবে বিস্মিত হই!

কোন সন্দেহ নেই, যথার্থ পোস্ট। তবু উপভোগ করা যায় না। কেমন যেন চিড়বিড় চিড়বিড় অনূভুতি হতে থাকে পড়তে পড়তে মনের মধ্যে।

একটা কথা বলি, অপ্রাসংগিক কিনা বুঝছি না। এখানে ভারতীয়দের ইংরেজী উচ্চারণ শুনে মাঝে মাঝে ভড়কে যাই। ইংরেজী যে এরকম হিন্দীর মত হতে পারে কি করে ভেবে পাই না, হাসিই পায় শুনলে। ঠিক গতকালই এই নিয়ে আলোচনা করছিলাম। একটা পর্যায়ে মনে হলো আমাদের দেশের এই ডিজ্যুস জেনারেশনটার কথা। তখন মনে হলো, ভারতীয়রা ইংরেজীটাও হিন্দীর মত করে বলে। আর আমাদের দেশের এই ডিজ্যুস প্রজন্ম বাংলাটাও বলে ইংরেজীর মত। এফ এম রেডিওতে শুনতাম, "এখন যে সংঠি প্লে খরা(করা) হবে..." হায়রে! নাহ, ভারতীয়দের হিন্দী উচচারণের ইংরেজী তো তাহলে বরং অনেক ভালো, নিজের মাতৃভাষার প্রতি মমতাই প্রকাশ পায় তাতে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধন্যবাদ, নিঘাত তিথি। বুঝলাম - অবস্থানের পক্ষপাতিত্বের কারণে এরকম প্রেক্ষিতের লেখা কিংবা পড়া দুটোই মসৃণ হয় না। চোখ টিপি

ভারতীয়দের ইংরেজীতে আঞ্চলিক হিন্দির সুরটা খুব স্বাভাবিক মনে হয়। আমরা যেসব বাঙালী পারিবারিক কিংবা সামাজিক পরিবেশে ইংরেজী চর্চা করিনি, বরং ইংরেজী শিখেছি - অন্য একটি ভাষা হিসেবে, ভিনদেশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে - তাদের ইংরেজী উচ্চারণ খুব মানসম্মত হওয়ার কথা না । আমার নিজের ইংরেজীও মানসম্মত না। ব্রিটিশ/অ্যামেরিকান উচ্চারণের ধারে কাছেও নেই। তবুও এই ভেবে ভালো লাগে - অধুনা ঢাকার ইংরেজী বলা পুতুপুতু উঠতিদের মত সঙ-শব্দ বের হয় না।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমিও হয়ত বয়সের হিসেবে এই জেনারেশনের মধ্যে পড়ি। কিন্তু আমার লজ্জা হয় খুব...বিশ্বাস করেন। এদের মত কারো সাথে যখন দেখা হয়ে যায়... কথা বলতে আমার ঘেন্না লাগে। তবে স্বস্তির ব্যাপার হল... আমার আশেপাশে যারা আছে তারা মোটেই ওরকম নয়।

অগ্রজদের কাছে আমার মাথা নীচু হয়ে যাচ্ছে এই গল্প পড়ে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। যারা আমাকে 'বাংলা' এনে দিয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা চাই আর সারাজীবন পৃথিবীর সবথেকে মিষ্টি বাংলা ভাষা নিয়ে বাঁচতে চাই...

এরকম একটা বিষয়কে এত কঠোরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য শিমুল ভাইকে (বিপ্লব)...

আর ক্ষমাপ্রার্থী লেখাটা অনেক দেরীতে পড়লাম বলে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা বেশ ভালো হয়েছে। ডিজুস জেনারেশন আমারই সমবয়সী। তারপরও নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি একারণে - আমি আমার বাংলা শুদ্ধভাবে বলতে, লিখতে, পড়তে সবসময় চেষ্টা করি।

ফেরারী ফেরদৌস

দেবদ্যুতি এর ছবি

চলুক

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।