গল্প: কর্পূরসম ভালবাসা

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৯/২০০৭ - ৪:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoএক

গাড়ির চাবিটা আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে অফিসে ঢুকলেন আজাদ সাহেব। ন’টা বাজে এরই মধ্যে অফিস বেশ জমজমাট।
“স্যার, আপনাকে জমীর সাহেব কল করেছিলেন!” একটা কিউবিকল থেকে গলা উঁচু করে বললো ক্রিয়েটিভের আসাদ।
“কি বলল?”
“আপনাকে কলব্যাক করতে বলেছেন।”
“সাব্বাস!”
একসারি কিউবিকল পেরিয়ে গতকাল রাত্তিরে টিভিতে শোনা একটা হিন্দী গানের কলি ভাজতে ভাজতে নিজের রুমে ঢুকে পড়লেন তিনি।

রুমটাতে তাঁর নির্দেশে তিনি আসার আধা ঘন্টা আগেই এসি চালিয়ে দেয়া হয়। হীমশীতল রুমে এমডির বিশাল কাঁচে ঢাকা সেক্রেটারিয়েট টেবিলের অন্য প্রান্তে ঢুকে রিমোট চেপে টিভিটা চালিয়ে দেন তিনি, আর আরেকটা রিমোট চেপে পিওন আফজালের অপেক্ষা করেন। আফজাল হাতে কফির মগ নিয়েই রুমে ঢুকে। সস্নেহ তাকান আজাদ সাহেব, উনিশ-বিশ বছরের ছেলেটাকে মাত্র কয়েক হপ্তা হলো রেখেছেন। এরই মাঝে চালাক-চতুর ছেলেটা নিজের দায়িত্ব ভাল মতই বুঝে নিয়েছে। সকালে এসেই যে তিনি এক কাপ কড়া কফি খান সেটা এরই মাঝে ওর রপ্ত করা হয়ে গেছে। কাপে চুমুক না দিয়েই তিনি জানেন পরিমিত উষ্ণতার কফিতে কাঁটায় কাঁটায় দু’চামচ চিনি আর এক চামচ ক্রিম দেয়া আছে।

“আফজাল তোর এইচসির রেজাল্ট কবে রে?”
দু’হাত জোড় করে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় ছেলেটা, লাজুক গলায় বলে, “সামনের মাসে, স্যার!”
“পাশ করতে পারবি?”
“পারবো স্যার!”
ছেলেটার পারিবারিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। রংপুর থেকে এসেছে। বাবা-মা দু’জনেই বিড়ির ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। এইচএসসির পরে মনে হয় না আর পড়ার ইচ্ছা আছে। ফলাফল ভাল হলে সে ব্যাপারটা তাঁরই দেখতে হবে। তিনি এখনই কিছু বলেন না,
“আচ্ছা যা এখন!”

টিভি আর সংবাদপত্রের সাথে কফিটা আস্তে আস্তে শেষ করেন আজাদ সাহেব। এর পর উঠে রুমের লাগোয়া বাথরুমে চলে যান। বাথরুমের দেয়ালে নিজেকে দেখেন তিনি। পঁয়তাল্লিশ চলছে, অথচ দেখলে এখনো মনে হয় পঁয়ত্রিশ। ফর্সা, লম্বা, একহারা গড়ন, বিড়ালের মত কটা চোখ। একবিন্দু মেদ নেই দেহের কোথাও। প্রতিদিন সকালে আধঘন্টা যোগব্যায়ামের ফল এটা। চেহারাটাও কিছু মন্দ নয়। কেবল মাথায় টাক পড়ে গেছে। হাতে পানি নিয়ে মাথাটা ভেজালেন আজাদ সাহেব। টাক পড়াটা তাঁদের পরিবারের খানদানী ঐতিহ্য। বাবা-দাদার প্রমান সাইজ টাক তো ছিলই। উনারও ত্রিশয়ের মাথাতেই মাথায় টাক পড়ে গেল! সে সময় হেন জিনিস নেই তিনি এ মাথায় পড়েনি। ডিম, নিম থেকে শুরু করে যে যা বলেছে তাই মাথায় ঢালতেন। কিন্তু লাভ হয়নি। দু’পাশে আর পেছনে সামান্য চুলের নমুনা রেখে পঁয়ত্রিশেই পুরো মাথা সাফ হয়ে গেল।

এখন নাকি হেয়ার-গ্রাফটিং আরও কি কি সব এসেছে, মাথা ভরাবার জন্য। তান্নী বেশ জোরাজুরিও করেছিল সে সময়, সে বেঁচে থাকলে হয়তো আজাদ সাহেব করেই ফেলতেন এতদিনে, কিন্তু দশ বছর আগে তৌকিরকে জন্ম দিতে গিয়ে বউটা মরে যাবার পর তিনি আর তার প্রয়োজন বোধ করেন নি।

তোয়ালে দিয়ে মাথাটা মুছে রুমে ফেরত এসে ড্রয়ার থেকে নিকোটিন গামের বাক্স থেকে তিনটে গাম বের করে এক সাথে মুখে ঢুকিয়ে ফেললেন তিনি। সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করছেন গত তিন মাস থেকে। কফির পর মাথায় পানি, আর নিকোটিন গাম চিবুনোটা তারই ড্রিল। ছেলে বড় হচ্ছে, মা মরা ছেলেটার বাবাই সব। সেই বাবাকে দেখে ছেলে সিগারেট ধরুক সেটা চান না আজাদ সাহেব। নিজের বাবাকে কখনো কাছে পাননি তিনি, সেই অভাব তিনি তাঁর ছেলেকে বুঝতে দেননি কখনো। বাবা মারা গেলেন তাঁর বিয়ের ঠিক আগের দিন, ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারলেন না। তিনি সস্তা সিগারেটের লোভে সে আনন্দটা হারাতে চান না।

ফোন তুলে জমীরের নাম্বার টিপলেন তিনি, “দোস্ত, কল দিছিলি নাকি?”
“হ বেটা!” উল্লসিত গলায় বলেন জমীর, “তোর সেক্রেটারী পাওয়া গেছে।”
গত দু’হপ্তা আগে হঠাৎ করেই আজাদ সাহেবের ছ’বছরের সেক্রেটারী মেয়েটা চাকরী ছেড়ে চলে গেল। স্বামী-স্ত্রী নাকি ডিভি পেয়েছে, আমেরিকা যাবার সোনার হরিণ! ইন্টারভিউয়ের ঝামেলা এড়াতে সার্কুলার না ছেড়ে বন্ধুদেরকেই বলেছেন তিনি। এমনিতেই সবারই কেউ না কেউ সুপারিশ করার থাকে, এর চেয়ে না হয় ওরাই খুঁজে দিক।
“মেয়েটা কম্পিউটার জানে তো? টাইপ স্পিড? ইংরেজী জানে?”
“আরে ব্যাটা মেয়েতো কম্পিউটার সায়েন্সেরই ছাত্রী ছিল। কথাবার্তাও সুন্দর। স্মার্ট আছে।”
“আগে জবের এক্সপেরিয়েন্স আছে? বয়স কেমন?”
“নাহ! আগে কোন জব করে নাই। বাট সে পারবে। আর বয়স... উমমম... পয়ত্রিশ হবে! ম্যারিড।”
“ওই শালা, পয়ত্রিশ বছর হলে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ে ক্যামনে শুনি? অতদিন আগে কম্পিউটার সায়েন্স ছিল?”
“আরে ছিল! আমাদের বয়স ক্যামনে বাড়তেছে সে খেয়াল আছে?”
“হুম! এক্সপেরিয়েন্স নাই! তুই রেকমেন্ড করতেছিস? তাইলে নিয়ে নিব কিন্তু। আমার খুব সমস্যা হচ্ছে এখানে।”
“হ! মেয়েটা আমার ম্যানেজার মুনতাসীরের বোন। মেয়েটার মনে হয় চাকরী খুব দরকার! আমাকে মুনতাসীর আগেই কয়েকবার বলেছে। আমার মনেই ছিল না তোর কথা।”
“কবে থেকে জয়েন করতে পারবে?”
“আজই পাঠিয়ে দিতে পারি। তুই দেখে নে। কাল থেকে না হয় জয়েন করলো?”
“আচ্ছা রেজিউমি সহ পাঠিয়ে দে। নাম কি?”
“ফারজানা হক!”

দুই

ফাইলে চোখ বোলাতে বোলাতে ফোনের রিসিভার তুললেন আজাদ সাহেব, “হ্যালো!”
“স্যার, আপনি যে ভদ্রমহিলার কথা বলেছিলেন তিনি এসেছেন।”
“কোন ভদ্রমহিলা?”
“স্যার, ওই যে, আপনার সেক্রেটারীর পদের জন্য...”
“ওহ আচ্ছা! পাঠিয়ে দাও।”

আজাদ সাহেব এ জীবনে কম মেয়ের সান্যিধ্য পাননি। বাবা সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসার কাজে, মা মরা আজাদ সাহেবের বিনোদন মানেই ছিল মেয়ে। তান্নীকে বিয়ে করার আগে পর্যন্ত বন্ধু মহলে তাঁর নিকনেম ছিল “খেলোয়াড়”। সে সব পাল্টে গেল তান্নীকে দেখার পরে। তান্নীর সাথে তাঁর বিয়েটা প্রেমেরই ছিল। তান্নীকে তিনি প্রথম দেখেন তাঁর বন্ধু সাদিকের বিয়েতে। তান্নী ছিল বন্ধু সাদিকের বউয়ের বান্ধবি। চার বছর বয়সের ব্যবধান। সেই প্রথম দেখায় কি যে হয়ে গেল আজাদ সাহেবের, আগে কখনো হয়নি এমন। পারিবারিক ব্যবসা থেকে কম টাকার মালিক তিনি হননি, সেই টাকা দিয়ে এতদিন মেয়েদেরকে জল থেকে ডাঙায় তুলেছেন তিনি। তান্নীর বেলায় এসে বুঝলেন, টাকা দিয়ে সব পাওয়া যায় না। তান্নীর এক কথা, টাক মাথার ছেলেকে বিয়ে করবে না সে। পাক্কা তিনবছর লেগেছে ওকে মানাতে। তান্নীকে যখন বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স তেত্রিশ। খুব সুখী দু’টো বছর কেটেছে দু’জনের। এত সুখ যে তাঁর জীবনে কখনো আসবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি তিনি সে সময়। এত দিন এক মেয়েকে নিয়ে সংসার করা যায় না বলে বন্ধুদের খোঁচাতেন তিনি। তখন শুরু হয় বন্ধুদের তামাশা। সে তামাশার মধ্যেও একটা সুখ ছিল। সে সুখ খোদা কেড়ে নিলেন দু’বছরের মাথাতেই!

তান্নী মারা যাবার পরে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় বিয়ের চাপ এসেছিল বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে। সবার যুক্তি ছিল একা একা ছেলেকে মানুষ করাটা সম্ভব হবে না। কিন্তু সে চিন্তা করেই বিয়ে করেননি তিনি। তান্নীর এই একটা স্মৃতিই ছিল যা হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়, বুকে চেপে ঘ্রান নেয়া যায়। সে সাত রাজার ধনকে অন্য কারো হাতে তুলে দেয়ার বিশ্বাসটা তিনি অর্জন করতে পারেন নি। আর তান্নীর বিছানায় অন্য কারও কথা ভাবলেই মুখটা টক টক হয়ে ওঠে তাঁর। এত বড় অসম্মান তিনি তান্নীকে করতে পারেন না!

তবে মানুষের জৈবিক যে চাহিদাটা আছে সেটা সময়ের সাথে সাথে মিটিয়ে ঠিকই নিয়েছেন তিনি। পার্টিতে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়। এমন অনেকের সাথেই যারা তাঁর মতই জৈবিক চাহিদাকে চাহিদা হিসেবেই দেখেন, বাঁধনে জড়াতে চান না। তাঁদের অনেকের সাথেই একটা ফর্মাল রিলেশন তাঁর গড়ে উঠেছে। তিনি বুঝে ফেলেছেন তাঁর টাকা আর সুঠাম দেহের আকর্ষণটা এখন বজায় আছে। তিনি আরো জেনেছেন, মেয়ে, সে যে বয়সেরই হোক না কেন, ওদেরকে তিনি অনেকটাই বুঝতে পারেন। তাঁর খেলোয়ার জীবনের একটা নীতি তিনি এখনও মেনে চলেন, প্রতারণা নয়। যারা ওর সানিধ্য চায়, তাদের আগেই বুঝিয়ে দেয়া হয়, “ইউ ওন্ট গেট এনিথিং আউট অব ইট!”

দরজা খুলে যে মেয়েটা... মেয়ে নাকি মহিলা? আচ্ছা মহিলাই বলা যাক, দরজা ঠেলে যে মহিলাটা তাঁর রুমে ঢুকলেন তিনি পরিপাটি ঘরোয়া ধরনের মহিলা। আটপৌড় দেহে তাঁতের শাড়ি পরা, শ্যামলা মিষ্টি চেহারা, কোমড় পর্যন্ত লম্বা ঢেউ খেলানো চুল। মেয়েদের দেখলে এখনও সেই কলেজ জীবনের মত মনে মনে এক থেকে দশের মধ্যে নাম্বার দেবার অভ্যেস তাঁর। এ মহিলাকে দেখে সব গন্ডগোল লেগে যায় আজাদ সাহেবের। পেটের মধ্যে শীরশীরে একটা স্রোত বয়ে যায়, যে অনুভূতি আগে কেবল একজনের সান্যিধ্যেই পেয়েছেন তিনি। এ অনুভূতি যে আবার হতে পারে তা কখনো কল্পনাও করেননি তিনি, অনেকদিনের অনভ্যাসে আজাদ সাহেব দিশেহারা বোধ করেন।

তিন

রিমোটে চাপ দিয়ে ফারজানাকে ডাকেন আজাদ সাহেব। নিজের আবেগকে চাপা দিয়ে রাখতে পারেন তিনি। ফারজানার প্রতি যে অসহ্য আকর্ষণ তিনি বোধ করেন সেটা তিনি এই এক মাস নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছেন। এখন বয়স হয়েছে, ছেলেটা বড় হয়েছে, এসব তাঁকে আর মানায় না। আর সবচে’ বড় ব্যাপার হলো মেয়েটা বিবাহিতা। তাঁর নৈতিকতায় বাঁধা পড়ে।

মেয়েটা কাজ করে খুব মন দিয়ে, শেখার আগ্রহ আছে। কোন কারনে বকা দিলেও অন্য মেয়েদের মত মুখ ভার করে থাকে না, বরং সে ভুলটা যেন আর না হয় সে চেষ্টাই করে। দরজা ঠেলে ঢোকার সময় সেই একই অনুভূতি হয় আজাদ সাহেবের।
তিনি বলেন, “আপনাকে যে চিঠিটা টাইপ করে প্রিন্ট আউট নিতে বলেছিলাম সেটা করেছেন?”
অপরাধীর মত মুখ করে ফেলল ফারজানা, “না স্যার! আমি খানিকক্ষণের মধ্যেই নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা! আর গিভ অ্যান্ড টেক ফ্যাশনের জিএম কে যে ইমেইলটা করতে বলেছিলাম সেটা কি করেছেন?”
ফারজানার মুখ দেখেই বোঝা গেল সেটা সে বেমালুম ভুলে বসে ছিল, “স্যার, আমি এক্ষুণি পাঠাচ্ছি!”
“আপনার কি কিছু হয়েছে ফারজানা? কিছু নিয়ে ট্রাবলড? আপনাকে কিন্তু ঠিক সুস্থ দেখাচ্ছে না।”
আজাদ সাহেব বুঝতে পারলেন ফারজানা অফিসের বড় সাহেবকে ব্যক্তিগত কথা বলা যায় নাকি সে নিয়ে দোটানায় পড়ে গেছে। পরিবেশটা হালকা করার চেষ্টা করলেন তিনি,
“ফারজানা, আপনার এতদিনে জেনে যাবার কথা, আমি কিন্তু আমার অফিসের সবাইকে আমার পরিবারের সদস্যের মতই ট্রিট করি। ওদের যে কোন সমস্যার সমাধান কিন্তু আমি নিজ দায়িত্বেই করি!”
সেটা ফারজানা অন্যদের কাছ থেকে আসলেই জেনেছে। পুরুষ বসের আন্ডারে কাজ করার যে ভয়টা ওর আগে ছিল সেটা এ কয়দিনে পুরোটাই কেটে গেছে। এ কয়দিনে এক বারও নোংরা দৃষ্টিতে তাকাননি ভদ্রলোক, করেননি কোন অন্যায় আবদার। বরং নানান সময় সে যেন রাত নামার আগে বাসায় পৌঁছে যেতে পারে সে সমস্যার সমাধান করছেন।

ফারজানা এখনও ভাবছে দেখে আবার মুখ খুললেন আজাদ সাহেব, “আচ্ছা, লেট মি পুট ইট দিস ওয়ে! আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য আমার কাজের ক্ষতি হচ্ছে। আমি একটু আগে মিঃ নরম্যানের ফোন পেয়েছি। তিনি এখনো ইমেইল না পেয়ে কিছুটা বিরক্ত মনে হলো। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমি কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবো বলুন? আপনার সমস্যার সমাধান করে যদি আমার কাজটা ঠিক মত হয় তবে সেটাকে আমি গুড বিজনেস স্ট্রাটেজিই বলবো!”

আজাদ সাহেবের কথা শুনে সব খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ফারজানা, “স্যার, আপনাকে আমি বলেছিলাম আমি বিবাহিতা। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম!”
বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল আজাদ সাহেবের, “ফারজানা আপনি বসুন, বসে বলুন! কি ব্যাপার?”
শাড়ি সামলে চেয়ারে বসতে বসতে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেললেন ফারজানা, “স্যার, আমার বিয়ে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গত তিন মাস থেকে আমরা আলাদা থাকি।”
“আলাদা মানে? ডিভোর্স?”
“জ্বী না! অফিসিয়ালি আমরা এখনো স্বামী-স্ত্রী! কিন্তু আমরা থাকি আলাদা! আমার স্বামী জলিল কলেজে পড়ায়। আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে সে সেই কলেজের এক ছাত্রীকে নিয়ে বাসায় উঠেছে!”
“ছাত্রীকে নিয়ে!” বিস্ময় লুকাতে পারলেন না আজাদ সাহেব।
“জ্বী স্যার!”
“মেয়ের বাবা-মা?”
“মেয়েটা খুব গরীব পরিবারের। জলিল টাকা পয়সা দিকে কিভাবে যেন ম্যানেজ করেছে!”
“আচ্ছা! সে কি এখন কোন সমস্যা করছে?”
“না স্যার! সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আমাকে বের করে দেবার পর আমি প্রথমে ছিলাম আমার ভাইয়ের বাসায়।”
“মুনতাসীর হক?”
“জ্বী স্যার। পরে চাকরীটা পেয়ে আমি আলাদা বাসায় উঠেছি। আপনি তো জানেন একা মেয়ের বাসা পাওয়াটা কত ঝামেলা। আমি মিথ্যে বলে বাসা নিয়েছি। বলেছি আমার স্বামী দেশের বাইরে গেছেন চার মাসের জন্য। এখন বাড়িওয়ালা কিভাবে যেন সব জেনে গেছেন। তিনি সমস্যা করছেন এখন!”
“ভাড়া বেশি চাইছেন?”
“না স্যার!”
“তবে?”
কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল ফারজানা। যা বোঝার বুঝে নিলেন তিনি, “আপনি এ কথাটা আমাকে আগে বললেই আমি ব্যবস্থা করতাম।”
মুখ তুলে তাকালো ফারজানা।
“আমাদের কিছু ফুল ফার্নিশড অ্যাপার্টমেন্ট কেনা আছে বনানীর দিকে। বিদেশী ডেলিগেট দেশে আসলে তাঁদের থাকতে দেবার জন্য। তেমন একটা অ্যাপার্টমেন্টে আপনি উঠে পড়ুন!”
“স্যার...”
“আগে আমার কথাটা শেষ করতে দিন। আপনি একা মানুষ। আপনাকে আমাদের সবচে’ ছোট অ্যাপার্টমেন্টটাই দিচ্ছি। আপনি গিয়ে আসাদকে পাঠিয়ে দিন। আমি ওকে বলে দিচ্ছি। সেই সব ব্যবস্থা করে দেবে।”
“কিন্তু স্যার, এ সাহায্য আমি নিতে পারবো না! এটা স্যার...”
হাত তুলে ফারজানাকে থামিয়ে দিলেন আজাদ সাহেব, “আপনি ভাবছেন আপনাকে এমনি এমনি থাকতে দিচ্ছি? প্রতি মাসের বেতন থেকে ভাড়া কাটা যাবে। এর মধ্যে আপনি অন্য কোন বাসা পেলে সেটায় উঠে যাবেন। তবে তার কোন বাধ্যকতা নেই। আপনার যে ক’দিন ইচ্ছা আপনি থাকতে পারেন।”
কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে আসলো ফারজানার, “স্যার, আমি যে কি বলে আপনাকে...”
“হয়েছে! আপাদত আপনি ইমেইলটা পাঠান আর চিঠিটা প্রিন্ট করে আমাকে দিয়ে যান। তাহলেই হবে!”
বের হবার সময় খুশীর তীব্রতার দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে বিব্রত হয়ে আড় চোখে তাকাল ফারজানা। না দেখার ভান করে মুচকে হাসলেন আজাদ সাহেব, কে বলবে এ মেয়ের বয়স পঁয়ত্রিশ!

চার

তিনটে মাস দেখতে দেখতেই চলে গেল। এর মাঝে ফারজানার সাথে আজাদ সাহেবের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। যে কোন সমস্যার তাঁর কাছে ছুটে আসার একটা অভ্যেস হয়েছে মেয়েটার। আর ওর যে কোন সমস্যার সমাধান করে একটা আলাদা তৃপ্তিও পান তিনি।

মেয়েটার সাথে যে আর আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই সেটা বেশ বোঝা যায়। মাঝে মাঝে কথার ভঙ্গিতে ছেলেমানুষী আবেগটাও চাপা থাকে না। এ কদিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক ব্যক্তিগত আলাপও হয়েছে। ফারজানা জেনে গেছে আজাদ সাহেবের দোষ গুলো, গুন গুলো। জেনে গেছে ঠিক সময় না খেলে তাঁর অম্বলের ব্যাথা হয়। সিগারেট ছাড়ি ছাড়ি করে ছাড়া হয়না শুনে সে দায়িত্বটাও সে নিজেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে! আজাদ সাহেবও জেনেছেন ফারজানার বড় ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। জানে ডিভোর্স নিয়ে আরেকটা বিয়ে করার জন্য পরিবার থেকে চাপ আসছে।

এর মাঝে অফিস মহলে যে কিছু গুজব ছড়িয়েছে সেটাও বোঝা যায়। এক শুক্রবার দুপুরে ফারজানার বাসায় দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি, সে থেকেই রটনার সূত্রপাত। গতমাসেই হঠাৎ ছুটির দিনে দুপুরে খাওয়াবে এ আবদার নিয়ে আসে ফারজানা। তান্নী মারা যাবার পরে বাবুর্চির হাতের রান্না ছাড়া কিছু খাওয়া হয়নি শুনে ফারজানার চোখে একটা মমতা দেখেছিলেন তিনি, তার পরদিনই এ নিমন্ত্রণ। আজাদ সাহেব ভাল করেই জানতেন এ নিয়ে পরে কথা ছড়াবে। অ্যাপার্টমেন্টের দাড়োয়ান অফিসেরই লোক। বড় সাহেব তাঁর সেক্রেটারীর বাসায় এসেছেন, এ রসালো গল্প ছড়াতে বেশী সময় নেবে না।

সেটা এড়াতে তিনি প্রস্তাব দেন কোন রেস্টোরেন্টে খাওয়া হোক। সে নিয়ে ফারজানার সে কি রাগ! সে যে সারাদিন ধরে বাজার করেছে তার কি হবে? আর হোটেলেই যদি খাওয়ানো তবে আর দাওয়াত কেন। সে রাগ একটা গোপন আনন্দ নিয়েই তিনি উপভোগ করেছিলেন।

দাওয়াতটা ছিল তাঁর আর তৌকিরের। ছেলেকে নিয়ে ড্রাইভ করে যেতে যেতে তিনি একটু বিব্রতই বোধ করেন। ছেলেটা বড় হয়েছে, সে কি না কি ভাবে। তার উপর যেই তিনি কখনো শার্ট-প্যান্ট ছাড়া বেরোন না, তিনি আজ পাজামা-পাঞ্জাবী পড়েছেন। তবে ছেলে দাওয়াতে কেমন রিঅ্যাক্ট করে সেটা দেখার একটা গোপন ইচ্ছাও তাঁর ছিল। ছেলেটা তাঁর জীবন। ও কষ্ট পায় এমন কোন পদক্ষেপ তিনি নেবেন না!

তিনি হাঁফছেড়ে লক্ষ্য করলেন তৌকির ফারজানাকে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিল। সব আলোচনাতেই বেশ আগ্রহ নিয়েই অংশগ্রহন করলো। এমনকি ক্লাসের একটা মেয়েকে যে তার পছন্দ সেটাও ফারজানার চাপাচাপিতে স্বীকার করে ফেলল। কিছু ব্যাপারে মনে হয় বাবারা যতই চেষ্টা করুক, মার স্থান নিতে পারেন না।

সেদিন বাসায় আসার পথে ছেলে বলল, “ড্যাড! আই লাইক হার। আই লাইক হার অ্যা লট! সি ইজ মোর দ্যান অলরাইট!”
একটা সময় আসে যখন ছেলেরা বাবা হয়ে যায়, আর বাবারা ছেলে। আজাদ সাহেব রাস্তার দিকে ঠাঁয় তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করতে করতে বুঝলেন, সে সময়টা আজ চলে এসেছে!

হঠাৎ দরজা খুলে ঢুকে ফারজানা ঢুকে পড়ায় চিন্তার তাল কাটে। অফিসে অফিসের ফর্মালিটিজ ঠিকই মেনে চলে দু’জন। এভাবে জিজ্ঞেস না করে হুট করে তো রুমে ঢুকে পড়ার তো কথা না। দুম দুম করে হেঁটে একদম আজাদ সাহেবের সামনে চলে এলো ফারজানা। চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে, মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে। ভয় পেয়ে গেলেন আজাদ সাহেব, “কি হয়েছে ফারজানা?”
“আমি যা শুনেছি, সেটা সত্যি নয় বল! বল সত্যি নয়।” হিশিয়ে উঠে বলল ফারজানা।
“কি শুনেছো? আবার কিছু বলেছে তোমাকে অফিসের লোক? তোমাকে না বলেছি ওদের কথায় কান না দিতে?”
“বলেছেই তো! সব বলেছে! অ্যানার কথা বলেছে, বলেছে মিসেস আদনানের কথা, সীমা, খুশবু, নাটালী, কজনের কথা বলবো?”
শীড়দাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল আজাদ সাহেবের। এদের কথা আজ হোক কাল হোক ফারজানা জানবে সেটা ঠিকই জানা ছিল আজাদ সাহেবের। তিনিই বলতেন, কিন্তু কিভাবে শুরু করা যায় সেটাই বুঝতে পারছিলেন না। একটা মেয়েকে, যার সাথে কি সম্পর্ক সেটাই স্থির হয়নি তাকে কি হুট করে বলা যায়, “এসব মেয়েদের সাথে শারিরীক সম্পর্ক আছে আমার!”
“আমিই বলতে চেয়েছিলাম ফারজানা...”
আঙ্গুল তুলে হিশিয়ে উঠলো ফারজানা “একটা কথাও বলবে না তুমি! তুমি একটা... তুমি একটা... তুমি ভেবেছ আমি ওদের মতো!”
“না, ফারজানা! তুমি এই চিনলে আমাকে! তুমি... তোমাকে কখন ওভাবে দেখেছি আমি। তোমাকে আমি... তুমি বোঝ না... সামথিং হ্যাজ হ্যাপেনড বিটউইন আস... তুমি ভাবলে কি করে এমন কথা!!”
আজাদ সাহেবের গলায় এমন একটা অসহায়ত্ব ছিল যে ফারজানা দিশেহারা হয়ে গেল, “কত বার? আমার সাথে পরিচয়ের পরও তুমি কত বার...?”
“একবারও না। ফারজানা! একবারও না। আমার মাথাতেই আসেনি এ কথা। আই কুডন্ট ইভেন থিংক অব...”
ফারজানা কাঁদছে দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে ধরে ফেললেন আজাদ সাহেব। ওঁর বুকে মাথা রেখে মৃগী রুগীর মত কাঁপতে লাগলো ফারজানা। ওর কাঁপুনি সঞ্চারিত হলো তাঁর মাঝেও। তিনি বুঝে গেলেন যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন তার বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে এখন।
তিনি শুললেন ফারজানা বিড়বিড় করে বলছে, “আর কোন দিনও না। কোনও দিনও যেন না হয়! আই উইল ডাই! আই উইল ডাই আজাদ!”

পাঁচ

আজাদ সাহেবের বয়স বাড়লেও তাঁর মধ্যে তারুন্যের একটা ছটফটানী আছে। তিনি গোসলে হেঁড়ে গলায়া গান করেন। নাস্তার টেবিলে ছেলের সাথে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করেন। সারাক্ষণ হাতে গাড়ির চাবি ঘুরান। ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দেবার পথে দু’জনে হেড়ে গলায় বাংলা আন্ডারগ্রাউন্ড রক ব্যান্ডের সাথে গলা মেলান। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ছেলেকে বলেন, “ইয়ো, চেক আউট দ্যট হট মামা, ডগ!” হাঁটেন লাফিয়ে লাফিয়ে। সে হাঁটার পথে কোকের ক্যান দেখলে সেটায় সজোরে লাথি মারেন। ভাঙা দেয়াল দেখলে সেটা এড়িয়ে না গিয়ে তার উপরে লাফিয়ে অন্যপ্রান্তে পড়েন। অফিসের বাতিল কাগজ গোল করে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে তাক করেন।

ফারজানার স্বীকারোক্তি পাবার পরদিন তিনি তাঁর ছটফটানীর চরমে গিয়ে পৌঁছুলো। গোসলে হঠাৎ করেই ছেলেবেলায় শোনা একটা গান মনে পড়ে গেল। সেটাই গাইলেন চড়া স্কেলে, “শোনো, কোন একদিন/আকাশ বাতাস জুড়ে রিমঝিম বর্ষায়/ দেখি, তোমার চুলের মত মেঘ সব ছড়ানো/চাঁদের মুখের পাশে জড়ানো/মন হারালো হারালো, মন হারালো/সেই দিন!”

নাস্তার টেবিলে একটা আপেল তুলে নিলেন কেবল। ছেলে আগেই খাওয়া শেষ করে বসে আছে। তিনি আপেলে কামড় দিয়ে বললেন, “লেটস রক অ্যান্ড রোল!”
ছেলে কৌতুক নিয়ে বলে, “আহ হা! সামওয়ান ইজ ইন গুড মুড টুডে!”

গাড়িটা অফিসে পার্ক করে লাফিয়ে লাফিয়ে চার তলায় উঠে গেলেন তিনি। গানটা মাথা ঢুকে গেছে, “আরো একদিন, তামশী তমস্যিনী রাত্রি/ ঘুম-ঘুম/ নিঃঝুম/জীবন পথের সব যাত্রী/ আমি একেলা চলেছি নিরুদ্দেশ যাত্রী/রাত-জাগা এক পাখি/শুনি জীবন জয়ের গীত-গাত্রী/মনে হলো দুখ-রাতে/যেমন করে ভোলাতে/মন হারালো হারালো, মন হারালো/সেই দিন!” এতদিন আগে শোনা গানের কথাগুলো যে মনে আছে এটাই বিস্ময়!

অফিসে ঢুকতেই কিউবিকল থেকে গলা তুললো আসাদ, “স্যার...”
“নট নাউ আসাদ, নট নাউ...” গান ভাজতে ভাজতেই রুমে ঢুকে পড়লেন তিনি।
চেয়ারে বসতে না বসতেই ফারজানা কফির কাপ নিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো। আফজাল ছেলেটা তাঁকে অবাক করে দিয়ে জিপিএ পাঁচ পাওয়ার পর তিনি ওকে আর কাজ করতে দেননি। ছেলেটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন তাঁর দেয়া বৃত্তিতেই ফিজিক্সে পড়ছে। ও চলে যাবার পর থেকে কফি আনার কাজটা ফারজানাই করে।

মাথায় গানটা ভাল মতই ঢুকেছে, “মন হারালো হারালো, মন হারালো...” গুন গুন করে গাইতে গাইতে কফির কাপটা নিলেন আজাদ সাহেব।
“স্যার, আমি একটা কথা বলবো!”
“একটা কেন? হাজারটা বল!” উদ্দাম গলায় অনুমতি দেন তিনি।
“স্যার আমি চাকরীটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছি!”
“কি?” বিস্ময়ে গান থেমে গেল আজাদ সাহেবের!
“স্যার, গতকাল জলিল এসেছিল। হি ওয়ান্টস মি ব্যাক!”
ঘটনাটা ঠিক বুঝতে পারলেন না আজাদ সাহেব, “মানে?”
“ও মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়েছে স্যার। কাল বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করেছে। সে নাকি ভুল করেছে। ওই মেয়ে নাকি টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। সে নাকি গত মাসেই সে মেয়েকে বের করে দিয়েছে। আমাকে যে সে ভালবাসে সেটা নাকি সে এতদিনে বুঝতে পেরেছে!”
“ইস দিস অ্যা জোক ওর সামথিং? এখন সে মাফ চাইলেই সব ঠিক হয়ে যাবে নাকি?”
“স্যার, সে গতকাল হাউমাউ করে কেঁদেছে। আমাকে না পেলে নাকি সে সুইসাইড করবে!”
“যে ছেলে ছাত্রীর জন্য বিয়ে করা বউকে মাঝ রাতে বাসা থেকে বের করে দেয় তার কথা তুমি বিশ্বাস করো?”
“স্যার, আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি। সেও বলছে জলিলের কাছে ফিরে যেতে।”
ফারজানার গলার মধ্যে একটা গোঁয়ারের মত টান আছে, সেটা লক্ষ্য করে থেমে গেলেন আজাদ সাহেব, শান্ত গলায় বললেন, “তুমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছো, তাই না?”
“স্যার, ওর সাথে এতদিন ঘর করেছি। ওকে চিনি আমি। আমি নতুন কোন রিস্কে যেতে চাচ্ছি না!”
“আচ্ছা! তাই হোক। তোমার জন্য শুভ কামনা রইলো তাহলে। গুড লাক!" ফিস ফিস করে বললেন তিনি, "তুমি কি আজই চাকরী ছাড়তে চাইছো?”
কথা না বলে অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা।
“আমাদের এক মাসের নোটিশ দেয়া নিয়ম। কিন্তু আমি দেখছি ব্যাপারটা। তুমি আসাদকে পাঠিয়ে দাও।”
হেঁটে আজাদ সাহেবের কাছে চলে এলো ফারজানা। আস্তে করে তাঁর গালে হাত রেখে বলল, “তুমি না থাকলে আমি যে কি করতাম। আমি ভুলবোনা তোমাকে!”
আজাদ সাহেবের মনে হলো সে হাত ভেঙে দু’টুকরো করে দেন তিনি। কিন্তু কিছু না বলে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে থাকলেন কেবল।

ফারজানা চলে যাবার পর অনেক চেষ্টা করেও তাঁর গানটা তিনি আর কিছুতেই মনে করতে পারলেন না।

© অমিত আহমেদ

পরিমার্জিত দ্বিতীয় প্রকাশ: গল্পগ্রন্থ, "বৃষ্টিদিন রৌদ্রসময়", শস্যপর্ব ও শুদ্ধস্বর প্রকাশন, বইমেলা ২০০৯


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পড়লাম।ভালো লেগেছে।
একটা মধ্যবয়েসী টানাপোড়েন।
তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম না।কালো কফিতে কেন ক্রিম আর চিনি মেশাবে?
কারেকশন কাম্য।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ!
কারেকশন করা হলো দেঁতো হাসি


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গল্পটা গতিশীল, চটুল, চেটে খাবার মতো মজার। কিন্তু শেষটা বড় তাড়াহুড়া, অপরিনত। কোথায় কি যেন নেই। মনে হয় ন্যারেশন বেশী, ডেসক্রীপশন কম। তাতে গভীরতা একটু কমে গেছে মনে হয়।

সরি, খুব বেশী বাজে বকি আজকাল। থাম্বস আপ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

একমত, একটা বিকল্প ending লিখে ফেলব নাকি?
ভাবছি!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

দৃশা এর ছবি

না হে ভায়া বড় হলেও পড়তে ভালই লাগল।
তয় বুড়ার এ দুঃসময়েও একখান মজার জিনিস মাথায় আসল।
বুড়া ১/কজ খাইয়া এখন ধরেন সবাইরে জিগাইয়া বেড়াইব "এঙ্গেজ না ফিরি...ফিরি না এঙ্গেজ?"

দৃশা

অমিত আহমেদ এর ছবি

হাঃহাঃহাঃ
আমার কেন জানি আকন্দ চাচুর কথা মনে পড়ে গেল!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার মনে হয় বিয়েটাকে আরো কনফার্ম করে ফেলা যায়।এই একেবারে বিয়ের বাজার টাজার করা,অমুক তমুকের আপত্তি ইত্যাদি।

শেষ সময়ে এসে দেখা গেল সেক্রেটারী তার আগের স্বামীর কাছে চলে গেছে কাউকে কিছু না বলে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বেচারা !

আমার কিন্তু এরকমই ভালো লাগলো । গল্পে এরকম তাড়াহুড়ো থাকলে বরং আরো বেশী ইন্টেক্ট ও ঠাসা বুনোট বোধ হয় ।
বেশী বিস্তার ঘটালে তো উপন্যাসই লিখে ফেলা যায় । দরকার কি?

অমিত আহমেদ কে বিপ্লব
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমার ইদানিং এক অসুখ হয়েছে - ছোট লেখা লিখতে পারছি না! একটা গল্পের আইডিয়া আসে... প্লট সাজানোর সময় ভাবি, আরে এটা তো গল্পে আঁটবে না। উপন্যাস বানাতে হবে। এইটা নিয়েও সেই অবস্থা!

আমি কাহিনীর বিস্তার ছিল এমন - আজাদ সাহেব আর তাঁর ছেলে তৌকির একই সময়ে প্রেমে পড়ে যাবেন। তৌকিরের জীবনটাও সেক্ষেত্রে উঠে আসতো - ওর ভাবনা, চাওয়া, পাওয়া। ও যে মেয়েকে ভালবাসে তার কথা আসতো। ফারজানার জীবন আরো ফোকাস করা হতো। ওর স্বামী, সেই মেয়েটা। আরিফ ভাই যা যা বললেন সেসবও। সব শেষে আজাদ সাহেব আর তৌকির দু'জনেই ছ্যাকা খেয়ে যেত। সে সুযোগে দু'জনে আরো কাছে আসতো। পাঠক দেখতো বয়সভেদে প্রেমের কোন তারতম্য নেই। একই ভাবে বোকা বানায় মানুষকে।

কিন্তু পণ করেছি ছোট গল্পই লিখবো - উপন্যাস নয়। তাই উপন্যাসের লোভ গলা টিপে মেরে এই গল্পটা নামানো হয়েছে।

সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ - আরিফ ভাই, অলৌকিক ভাই, সুমন ভাই, দৃশা আপু ও হাসান ভাইকে!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এইটা তো পড়ছি।
কমেন্ট করি নাই!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।