হঠাৎ করে বাংলাদেশ

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: শনি, ৩১/০১/২০০৯ - ৯:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গানের প্রেক্ষাপট একটু জানাই। ১৯৯৭ সাল। বিশ্বকাপ ক্রিকেট তখন এক বিশাল ব্যাপার আমাদের জন্য। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাইনি, টেস্ট তো দূরের কথা। আইসিসি ট্রফিতেও সুবিধা করতে পারি না। জিম্বাবুয়ের কাছে বরাবর হেরে যাই। তখন এক অসম্ভব ঘটনা ঘটে গেলো। কেনিয়াকে হারিয়ে আমরা আইসিসি ট্রফি জিতে গেলাম। সারা বাংলাদেশ বদলে গেলো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রঙ খেলা। ট্রাক ভর্তি করে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে তরুন-তরুনীদের উচ্ছ্বাস। তখনো আমার জীবদ্দশায় বাংলাদেশে এতো আনন্দের কিছু ঘটেনি।

কত ছোট ছোট ঘটনা।

বয়স বিবেচনায় রাস্তায় এক বৃদ্ধকে ছেড়ে দিলাম রঙের বালতি হাতে আমরা। বৃদ্ধ ফিরে এসে অভিমান নিয়ে বললেন, “আমাকে রঙ দিলানা?” রিক্সা দিয়ে যেতে যেতে আমাদের সামনে এসে হুড খুলে দিচ্ছে তরুনী মেয়েরা। মিষ্টির দোকানে বিনে পয়সায় মিষ্টি বিলানো হচ্ছে। পুলিশ কন্সটেবল এসে আদ্র চোখে জিজ্ঞেস করছে, “ভাই, আমরা ওয়াল্ডকাপে খেলুম, সত্যি?” সবাই জানে এটা। তবু তিনি আমাদের মুখে শুনতে চান। মা-খালারা হঠাৎ করেই ফোনে রান্না-সন্তানের আলাপ বাদ দিয়ে ক্রিকেটের কথা বলেন। বাসায় অসংখ্য পতাকা থাকা সত্ত্বেও নতুন পতাকা কিনে আনেন। ছোট চাচা ফোনে বাবাকে বলেন, “দাদা, চোখ দিয়ে এমনিতেই পানি পড়ছে… কী করবো বলেন তো?”

সেই সময়ের কথা ভাবলে চোখ কেমন জ্বালা করে ওঠে। দেশ যতোই খারাপ খেলুক না কেনো, রাগ করে থাকতে পারি না।

এরপর ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে দিয়ে লাকী আখন্দ অনেকদিনের অবসর ছেড়ে তাঁর এই গান নিয়ে আসেন।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

হঠাৎ করে বাংলাদেশ

গীতিকার: লাকী আখন্দ (সম্ভবত)
সুরকার: লাকী আখন্দ
শিল্পী: লাকী আখন্দ

বিশ্বকাপে দেখো হিম-শীতলের দেশে
জমেছে ক্রিকেট পুরোটা।
সাউথ আফ্রিকা নিয়ে যাবে কাপটা
ভাবছে সবাই এ কথা।
ওয়েসী ইন্ডিজ নাকি অস্ট্রেলিয়া পেলো
লংকা দুখের ঝাপটা।
শচিন না হলেও ওয়াসিম আক্রাম
জয় করে নেবে কাপটা।

বলতে পারি না আজ
কার হবে সেই মালা
স্বপনের সুবাস মাখা।
আমাদের হৃদয়ে
সবুজের মাঝখানে
বিজয়ের সূর্য আঁকা।

হঠাৎ করে বাংলাদেশ, চারিদিকে বাংলাদেশ।।
আলোর কিছু থাকছে রেশ
এতেই ভালো লাগছে বেশ।
হঠাৎ করে বাংলাদেশ, চারিদিকে বাংলাদেশ।।
আলোর কিছু থাকছে রেশ
এতেই ভালো লাগছে বেশ!

অচেনা নতুন ভোরে
আমাদের চোখে ধরে।।
আগামীর মাঠে বোনা
ফসলের আবেশ।

হঠাৎ করে বাংলাদেশ, চারিদিকে বাংলাদেশ।
আলোর কিছু থাকছে রেশ
এতেই ভালো লাগছে বেশ!

দূরের আকাশে আজ অবিরাম উড়ছে
উচ্ছ্বাসে কিছু পতাকা
বিশ্বকাপে দেখো আমাদেরও নাম লেখা
ডানা মেলে থাকা বলাকা।

হঠাৎ করে বাংলাদেশ, চারিদিকে বাংলাদেশ।
আলোর কিছু থাকছে রেশ
এতেই ভালো লাগছে বেশ!
হঠাৎ করে বাংলাদেশ, চারিদিকে বাংলাদেশ।
আলোর কিছু থাকছে রেশ
এতেই ভালো লাগছে বেশ!


মন্তব্য

বিপ্রতীপ এর ছবি

কান পেতে ক্রিকেট শোনার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

রাদিয়া এর ছবি

ইস্‌স সেই ১৯৯৭ এর ICC cup জয়!!! এক বলে এক রান... সে কি চরম মুহুর্ত। জয়ের পরেই সবাই মিলে হৈ হৈ করতে করতে রাস্তায় নামা
হাসি

দৃশা এর ছবি

হাততালি
বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফি জিতা আমাদের লাইগা ছিল বেদম বেদনার ঘটনা। ক্লাস সিক্সে পড়ি মনে হয়, খেলার পরের দিন ছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা। মনের সুখে খেলা দেইখা আনন্দ করলাম দিনভর রাতভর, মনে হয় সরকারি ছুটি দিছিল পরের দিন হাফ ডে, আমরাও ভাবলাম পরীক্ষা হইবো না। ওইদিন রাতে সবার আগে গেলাম ঘুমাইতে পরীক্ষা হইবো না এই খুশিতে। সকালবেলা এক ফ্রেন্ড ফোন কইরা জানাইল এক্সাম হইবই হইব, মাথায় ঠাডা! স্কুলে যাইয়া সবাই টিচারদের হাত পা ধইরাও পরীক্ষা পিছাইতে পারে না। সবডিরে কানে ধইরা হলে বসাইল, সবাই একে অন্যের দিকে তাকাইয়া চেহারা চায়, কি যে লিখছিলাম। আল্লাহ বাঁচাক টিচারগোরে! কত আর বানাইয়া লিখা যায়, ব্যাকারণ তো আর বানাইতে পারি না। যায় হউক... সে এক হৃদয়বিদারক স্মৃতি, এরপর যা মার্কস পাইছিলাম সেটা মনে করলেও হাসি আহে, এক যা শান্তনা আছিল যে আমার সঙ্গী-সাথীদেরও একই অবস্থা ছিল।
----------------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

আরে ! আপনি তো দেখি আমার ইয়ারমেট। আপনাকে আমি কোনও ভারিক্কি চালের বড় আফা মনে করসিলাম। আমিও ঐ বছর কেলাস সিক্সেই ছিলাম। আমার সাইজের কাউকে সচলে পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত !
------------------------------

--------------------------------------------------------

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

তখনো আমার জীবদ্দশায় বাংলাদেশে এতো আনন্দের কিছু ঘটেনি।

সেই সময়ের কথা ভাবলে চোখ কেমন জ্বালা করে ওঠে। দেশ যতোই খারাপ খেলুক না কেনো, রাগ করে থাকতে পারি না।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আহা! সেসব দিন আসিয়াছিল বটে!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমার সেদিন মনে হয়েছিলো, আজও মনে হয়- সেই একটি দিন, কেবল - 'স্বার্থক জনম মা গো, জন্মেছি এই দেশে।'

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

রেডিওতে ম্যাচের ধারাবিবরণী শুনছিলাম সেদিন। এরপর জেতার খবর পেয়ে এমন চিক্কুর দিয়া ফাল দিয়া উঠসিলাম তাতে আমার পায়ের রগে গিট্টু লাইগা গেসিল। এরপর ইস্কুলে যাওয়ার পথে কয়েক বালতি রঙ হজম কইরা স্কুলে পৌছায়া জানা গেল যে কেলাস হইবোনা তখন কি যে আনন্দ !! অনেক পুরানা স্মৃতি মনে পইরা গেল। সেই আনন্দ আজ আর পাইনা বাংলাদেশের জেতায়। কোথায় যেন কিছু একটা নেই !!! গানটা আমার অসম্ভব প্রিয় একটা গান। এখনো মাঝে মাঝেই আনমনে গুনগুনিয়ে উঠি গানটা শুনলেই।

-----------------------------------

--------------------------------------------------------

রানা মেহের এর ছবি

এ গানটাতো শুনিনি আগে!

কিন্তু সেই আইসিসি ট্রফি জেতার দিন!
ধন্যবাদ অমিত মনে করিয়ে দেয়ার জন্য
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আহা, সেই দিনগুলো! লুকিয়ে ক্লাসে রেডিও নিয়ে যাওয়া, ক্লাসের মধ্যে রেডিও শোনা...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হে হে হে। মজার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমরা রং দিচ্ছি। এই সময় সামনে পড়ল এলাকার এক বড় আপু। যথারীতি দিলাম ঢেলে। ব্যাস আর যায় কই আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার। উনি নাকি বিটিভিতে যাচ্ছিলেন কোন এক প্রোগ্রামের রেকর্ডিংয়ের জন্য্। আমরা যেন উনার ভাগ্যের আগুনে রং ঢেলে দিয়েছি। এমন চিৎকার। আমরা রং টং ফেলে কাছের এক বন্ধুর বাসায় পালিয়েছিলাম। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

হে হে। মিয়া এইটা একটা কাম কর্ছেন কন?


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।