স্কুলজীবন: পরী দেখা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: রবি, ০৮/০৭/২০০৭ - ৯:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিন.

পরীরা সুন্দরী হলে কি হবে? তাদের দৃষ্টি থাকে মানব-সন্তানের ওপর। একটু রূপবান হলেই ধরে নিয়ে বিয়ে করবে। পরীরা আছর করে সুন্দর সুন্দর ছেলেদের ওপর আর জ্বিনেরা সুন্দরী মেয়েদের ওপর। পরীরাজ্য আমাদের রাজ্য থেকে অনেক বড়। কুকাফ নগরী তাদের রাজধানী।

পাশের গ্রামের বরকতকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো কুকাফ নগরীতে। বিয়ে প্রায় আসন্ন। কিন্তু তার কান্নাকাটিতে তাকে আবার ফেরত দিয়ে গেছে। ফেরত ও যেমন তেমনভাবে দিয়ে যায় নি। গাছের মগডালে একটি পাতার ওপর ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছে। স্পর্শ করলেই পড়ে যাবে। অনেক কসরৎ করার পরেই তাকে নামানো গেছে।

জ্বীন হোক, পরী হোক; কিংবা ভূত - তারা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলে। তারা মানুষের চাইতে যতোই শক্তিশালী হোক, মানুষের কাছে তারা অসহায়। দেওবন্দের হুজুর ৩ টি বদ জ্বীনকে বোতলে পুরে রেখেছেন, খা বাড়ির ইব্রাহিম মাওলানা ওখানে পড়তে গিয়ে নিজের চোখে দেখে এসেছে।

জ্বীন-পরীরা মানুষ কিংবা পশু যার বেশই নিক না কেন, তাদের ছায়া নেই। সূর্যের আলোতে গেলেই পরিষ্কার বুঝা যাবে, কে মানুষ আর কে ছদ্মরূপী জ্বীন। আয়াতুল কুরসী পড়ে ফু দিলে এক ফুৎকারে উড়ে যাবে সব জ্বীন-পরীর দল। সরকারী রাস্তাকে বড় ভয় ওদের। রাত-বিরেত যা-ই হোক না কেন, সরকারী রাস্তায় ওরা কারো ক্ষতি করতে পারে না। তাই চেষ্টা করে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাস্তার পাশে কোথাও নামাতে। তারপর খপ করে ধরে ফেলে।

ছোটবেলায় মোটামুটি এরকমই ছিলো আমার পরীদের সম্পর্কে জ্ঞান। ক্লাস ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষার শেষ দিন। একা একা ফিরছি। হঠাৎ পথে দুইটা পরমা সুন্দরী মেয়ে। সুন্দরীদের প্রতি একটু অন্যরকম ফিলিংস ওই অতটুকু বয়সেও আমার ছিলো। কিন্তু এই নির্জন রাস্তায় তাদেরকে দেখে আমার সমস্ত অন্তরাত্মা সচেতন হয়ে উঠলো। এরা পরী না হয়ে যায়ই না।

আমার আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করতে, তাদের মধ্যে একজন বললো, "আমাদের সাথে যাবি?"

"না।"

"তোকে চকলেট খাওয়াবো। আমাদের সাথে চল।"

"না। যাবো না।"

আমি রাস্তা ছাড়ি না। হাঁটা বন্ধ করি না। ওরা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একজন বলে, "খেঁজুর গাছের সাথে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলবো।"

আমি ছিঁচকাঁদুনে না। বরং কান্নাকাটিকে আমার কাছে ছোটবেলা থেকেই প্রেস্টিজ ইস্যু মনে হত। তারপরেও কেঁদে ফেলি ভয়ে। পাশের ছোট্ট খেঁজুর গাছের কাঁটাগুলো তখন লকলক করছে।

অন্যজন বলে, "থাক ছেড়ে দে!"

আমি দৌঁড়ে এক নিঃশ্বাসে চলে আসি বাড়িতে। জমজম কুয়ার পানির সাথে কয়লা ভিজানো পানি মিশিয়ে চোখে মুখে ছিঁটা নিতে নিতে বর্ণনা করি, ওদের ছায়া ছিলো না।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখার ধরণ এবং বিষয়বস্তু চমৎকার। আপনাকে ৫ দিলাম।

সৌরভ এর ছবি

আহহারে, কী চরম সুযোগ মিস!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দৃশা এর ছবি

আমার কোনদিন জীবন্ত পরা(জ্বিন) দেখা হইল না...আফসোস...
তিরিভুজ আংকেলের মত কই "৫ দিলাম"...মুহাহহাহাহা

দৃশা

আলভী এর ছবি

জটিল ম্যান হাসি
ক্যারি অন।

ঝরাপাতা এর ছবি

ইস আপনি এমুন একটা চান্স মিস করলেন? এতোদিনে আপনি পরীস্থানের বাদশাহ জিংগালু জোংলা হইয়া কোয়েকাফের সব পরীগণের সাথে . . . , না আর কমু না।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আসল কথাটাই পোস্টে বলা হয় নাই। পরীদের যে চাহিদা, সেটা মিটানো কোনো মানবসন্তানের কম্মি নয়। পরীরা দীর্ঘায়ূ, মানব সন্তান সহজেই জরাক্রান্ত। ঠিকঠাক সার্ভিস না দিতে পারলেই ঘাড় মটকে...

কে সেই রিস্কে যায়? হাসি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান এর ছবি

--------------------------
আমার রুজি রোজগার

অছ্যুৎ বলাই লিখেছেন:
আসল কথাটাই পোস্টে বলা হয় নাই। পরীদের যে চাহিদা, সেটা মিটানো কোনো মানবসন্তানের কম্মি নয়। পরীরা দীর্ঘায়ূ, মানব সন্তান সহজেই জরাক্রান্ত। ঠিকঠাক সার্ভিস না দিতে পারলেই ঘাড় মটকে...

কে সেই রিস্কে যায়? হাসি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মন্তব্যটাই হয়তোবা পোষ্টের চেয়ে জম্পেস হয়েছে ... অগত্যা ৫!

শ্যাজা এর ছবি

জটিলস হো হো হো)


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

??? এর ছবি

সরকারি রাস্তার জায়গাটা আনকোড করতে পারলাম না। নিশ্চয় এর কোনো উপায় আছে। আমি যে ভার্সনটা ছোটবেলায় শুনেছি সেখানে রাস্তার জায়গায় অন্য কিছু ছিল। তবে রাস্তা, বিশেষত সরকারি রাস্তা জিনিসটার এখানে দারুণ কোনো কনটেক্সচুয়াল মীনিং আছে আমার মনে হচ্ছে।

সুন্দর একটা গল্প। সুন্দর করে বলা। অভিনন্দন অছু্ৎ বলাই!

নিঘাত তিথি এর ছবি

এই প্রতিভা নিয়ে এত দিন বসে ছিলেন!

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আরশাদ রহমান এর ছবি

একটা নয় একজোড়া পরী!
ছোটবেলায় গল্প অনেক শুনেছি তবে দেখা হয়নি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হাসান ভাই, মন্তব্য অনেক ইজি। লিখতে গেলেই ঘুম পায়। হাসি

শ্যাজা দি, ধন্যবাদ। আন্তরিক।
সুমন ভাই, অনেক ধন্যবাদ। খুব সম্ভবত কিছু হাদীস/ কিতাব আছে, যাতে রাস্তার মাটিকে পাক বলা হয়েছে। কনটেক্সচুয়াল মিনিংটা নিশ্চিত না, তবে জনশ্রুতি আছে ভূত নাকি সরকারী রাস্তায় অ্যাটাক করে না। পুরাটাই তো বোগাস। হাসি

তিথি, এতদিন নড়ানড়া করে প্রতিভার অপচয় করতে চাই নি। এখন একটু সচল হওয়ার চেষ্টা। তবে প্রতিভার প্রতিভার অলসতা সহসা কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। (প্রতিভা থাকলে তো?)

আরশাদ ভাই, নিজের চোখে পরীদেখার সৌভাগ্য আসলেই রেয়ার কেস। কী সুযোগটা যে মিস করলাম!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

??? এর ছবি

হতে পারে। রাস্তার মাটি পাকসাফ এমন ধারণা থেকে এটা বলা হতে পারে। কিংবা আরো কনটেক্সচুয়াল কিছু থাকতে পারে। বোগাস যদি সত্য মিথ্যা অর্থে বলেন , তাইলে তো বোগাসই। কিন্তু মানুষের কালেকটিভ আনকনশাসকে ঐতিহাসিক ভাবে ট্রেস করতে হলে এসব কাহিনী এবং এর কোডিংগুলো খুবই দরকারি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কিন্তু মানুষের কালেকটিভ আনকনশাসকে ঐতিহাসিক ভাবে ট্রেস করতে হলে এসব কাহিনী এবং এর কোডিংগুলো খুবই দরকারি।

একদম ঠিক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাশীদ এর ছবি

তিথির মত আমিও অবাক। এই প্রতিভা এতদিন ছিল কই?

তবে ঠিক, বেশি নাড়াচাড়া ভাল নয়। প্রতিভা উপচে পড়ার আশংকা থাকে। তাই অলসতা ধরে রাখুন আর মাঝেমাঝে এমনই সচল হয়ে উঠুন হুটহাট।

ভাল লাগল খুব।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নজমুল আলবাব এর ছবি
অচেনা এর ছবি

পরীদের যে চাহিদা, সেটা মিটানো কোনো মানবসন্তানের কম্মি নয়।

কই পাইলেন? রেফারেন্স দেন। শয়তানী হাসি

পোস্ট সম্মন্ধে নতুন করে বলার কিছু নাই। আমি আগেই বলছি ঝরঝরে গদ্য লেখার নিটোল একটা হাত আছে আপনার। সো বিপ্লব।

-------------------------------------------------
যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।