গেবরাকম

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: রবি, ০৩/০২/২০০৮ - ২:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(অগাবগা পোস্ট। পড়লে টাইম নষ্টের গ্যারান্টি শতভাগ।)

ক'দিন ধরেই কম্পুটারে গোলমাল, স্টার্ট দিতে না দিতেই ঘটর ঘটর ঘটর একটানা আওয়াজ চলছে তো চলছেই। সারাদিনের মাথাভাঙ্গা খাঁটুনির পরে বাসায় এসে নয়া মাধুরীর আজা নাচলে নাচলে মেরি ইয়ার তু নাচলের মিউজিক; কিংবা ঘর কুটুমের দুর্দান্ত সূচনাসঙ্গীতের সাথে এই ঘটর ঘটরের ইমপ্যুরিটি মিশে যে অখাদ্য তৈরি হয়, তা বিনোদনের পরিবর্তে বোঝার মাথায় কঞ্চির আটি যোগ করে অনতিবিলম্বে শাট ডাউন বাটনে টিপি দিয়ে কম্পুটারের গণতান্ত্রিক কণ্ঠরোধে বাধ্য করে। স্বৈরাচারী আচরণ শেষে তার দিকে প্রগাঢ় মমতার চোখে তাকাই। পেছনের আধ পুরোনো ইতিহাসগুলো সাজানো ছবি হয়ে পলকহীন চোখের সামনে দিয়ে ২৫ এফপিএসে চলমান হয়।

প্রবাস জীবনের একেবারেই শুরুর দিকের কথা। তখন দিন আনি, রাতে খাই। কম্পুটার নেই। ইউনিতে দুইটা কম্পুটার ল্যাবে অ্যাকাউন্ট আছে। তার মধ্যে একটায় ফ্রি টেবিল পেতে বিশাল লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়, অন্যটায় অল লিনাক্স। ল্যাবে মেইন কাজই যেখানে এমএসওয়ার্ডে সিভি এদিক-ওদিক করে স্টুডেন্ট জব কিংবা ইন্টার্নশীপের জন্য আবেদন করা, সেখানে লিনাক্স লাইফ একটু দুর্বিসহই বটে। এর বাইরে আছে রাত্রে বাসায় ফিরে কম্পুটারবিহীন চরম বোরিং লাইফ!

অতএব ডিসিশান ফাইনাল হলো, উপোস দেই আর দাওয়াত খেয়ে বাঁচি, কম্পুটার কিনতেই হবে। তখনই প্রথম 'গেবরাকম'-এর খবর দেন এক বড় ভাই। এরা সেকেন্ডহ্যান্ড কম্পুটার বিক্রি করে। তখন পেন্টিয়াম ৪ এর যুগ। কোম্পানীগুলো তাদের সিস্টেম আপগ্রেডে ব্যস্ত; গেবরাকম তাদের কাছ থেকে পেন্টিয়াম ২ গুলো পানির দরে কিনে স্যাকারিনের শরবতের দরে বেচে দেয়। ১৫০/১৬০ ইউরোর মধ্যে মনিটরসহ কম্পুটার!

তিন বন্ধু মিলে বরিশাইলা নদীর মত আঁকাবাকা বাসরুট পার হয়ে গেবরাকমে পৌঁছাই। সে এক এলাহি কান্ড! সারি সারি সেকেন্ডহ্যান্ড কম্পুটারের বিরাট মচ্ছব লেগে গেছে! কিন্তু কেনার জন্য কম্পুটার চুজ করতে গিয়া কেমন মন খারাপ খারাপ লাগে। পেন্টিয়াম ৩ দেশে রাইখা এইখানে একগ্রেড পিছলাইতে মন সায় দেয় না। ব্যাংকে তখনো হাজার খানেক ইউরো আছে! হিবির কন্ট্রাক্ট আছে আরো ৩ মাস। এর মধ্যে কিছু একটা গুছাইতে পারবোই এই হাফ-বোকা, হাফ কনফিডেন্ট বিশ্বাসে ভর কইরা ৬০ ইউরো দিয়া শুধু একখান আইজো মনিটর কিন্যা ফিরা আসি। এরপর শুরু হয় ঘন্টার পর ঘন্টা ইন্টারনেটে সার্চ! কনফিগারেশন পছন্দ তো দাম আকাশছোঁয়া, আবার দাম লিমিটের মধ্যে তো প্রসেসর সেলেরন! অবশেষে সবদিক ম্যাচ কইরা আমার প্রথম ইন্টারনেট শপিংয়ের অভিজ্ঞতা দেওয়া যে মালখানি খরিদ করি, তা আজ অবধি মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট অবস্থায় সময়কে মোকাবেলা করে বেঁচেবর্তে আছে।

প্রমবেল হলো, সময়কে মোকাবেলা করলেও ধুলাকে মোকাবেলা করা অপেক্ষাকৃত দুরূহ কাজ। এখানে ধুলার অত্যাচার দেশের তুলনায় কম হওয়ায় ধুলা বিষয়ক সচেতনতাও কম। দেশে পোশাকে ঘামের গন্ধের আগেই ধুলার পরিমাণ দেখে ময়লা টের পাওয়া যায়, আর এখানে পক্ষকাল ধরে একই জামা পরে থাকলেও বাইরেটা চকচকে, যদিও ভিতরে চর্মরোগেরা ঘর গুছায়। কম্পুটারের ভিতরেও তাই ধুলা জমে, তেমন আঁশওয়ালা নয়, মিহি তুষারের মত - চিপগুলোর ফাঁকে ফাঁকে, কুলিং ফ্যানগুলোতে, কেসিংয়ের গায়ে।

ঘটর ঘটরের উৎস খুঁজি, ঠিক বুঝতে পারি না শব্দের উৎপত্তি কোথায়। প্রসেসরের ফ্যানটা ক্লিন দেই, হার্ডডিস্ক, ডিভিডি-রমে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালাই, পাওয়ার ইউনিটের ছোট ছোট স্ক্রুগুলো খুলে সেটাকে পুরো ন্যাংটো করে ধুলার বংশ নির্বংশ করি। সবই চকচকে তকতকে! তবুও স্টার্ট বাটনে টিপি দিয়ে আবারো সেই ঘটর ঘটর ঘটর!

মেজাজের বারোটা বাজলেও জীবনের শেষ চিকিৎসা ফর্মুলায় আরেকবার উলটায়া চেক কইরা দেখি, আসল কালপ্রিট হইলো গিয়া গ্রাফিক কার্ডের কুলিং ফ্যান। তারে ডিসকানেক্ট কইরা দিলেই সব ঠান্ডা। মামু কার্ডের নিচে তার ছোট্ট শরীর খানা লুকায়া রাখলেও পুরা ধুলার ব্যবসায় জমায়া ফেলছে। তারে খুললাম, ঝাড়ন-পোছন দিয়া ধুলা-বাণিজ্যের বারোটা বাজাইয়া আবারও কম্পুটার রিস্টার্ট দিয়া সেই পুরানা ঘটর ঘটর ঘটর! ততক্ষণে আমি মোটামুটি এসপার-ওসপারটাইপ ক্রেজি হয়া গেছি। মামুরে খুইলা ট্যাগের কাগজ সরাইয়া গুঁতাগুতি কইরা মরিচা ঝরাইয়া খাঁটি নারিকেল তেল মর্দন কইরাই তবে তার চিৎকার বন্ধ হইলো।


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

পড়লে টাইম নষ্টের গ্যারান্টি শতভাগ।

ভুয়া গ্যারান্টি হো হো হো

সারাক্ষণ হাসি-খুশি থাকি বলে একজন জিজ্ঞেস করেছিল, আমার মন আদৌ কখনও খারাপ হয় কি না।
আমি বলেছিলাম, অবশ্যই হয়। কম্পিউটার বিগড়ে গেলে বা কোনও কারণে নেটচ্যুত হলে দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অমিত আহমেদ এর ছবি

যাক, মিশন সাকসেসফুল তাহলে!
হাসি


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এরকম সময় নষ্টের গ্যারান্টিওয়ালা পোস্ট আরো ঘন ঘন দিয়েন। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়ে আরাম পাইলাম

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

টাইম নষ্টের গ্যারান্টি টা ভূয়া!!!!!
চমেৎকার হইছে বস্

বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অগাপোস্ট পড়ার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। এ পোস্ট থেকে একটাই শিখলাম, নেট না থাকলে সন্যাসীদেরও মন খারাপ হয়। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৌরভ এর ছবি

আমিও বড়ই সমস্যায় আছি।
চার বছরের পুরানা আমার ল্যাপি তোশিবা ডায়নাআপা (dynabook) বিগড়ায় গেছে। বুট হয় না। ইন্সটল সিডি ঢুকায় দিয়া ডিমে তা দিতে হয় একঘন্টা মতোন। তারপর সব ড্রাইভার লোড হইলে, সিডি খুইলা নিয়া রিবুট করলে ০.৩৩ এর সম্ভাবনায় রান করে।

(মেশিন তিনভাগের একভাগ প্রোবাবিলিটিতে রান করে, তাও আবার খুব বেছে দেওয়া কিছু কন্ডিশনে, আমি যে কম্প্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েট, এইটা কৈতেই লজ্জ্বা লাগে।)
ফেলেও দিতে পারিনা। টাকাও নাই যে, নতুন কিনবো।

এখন যা করি, তা হইলো, উবুন্টু লিনাক্সের লাইভ সিডি ঢুকাই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে লাইভ সিডি থাইকা টেস্টিং ওএস দাঁড় হয়্যা যায়। ইন্টারনেটও কানেক্টেড হয়ে যায়। রিমোট লগইন ম্যানেজার দাড় করায়া ল্যাবের পিসিতে লগইন করি। বাকিটা ল্যাবের সরকারি পিসিতে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ল্যাপটপে ফ্যাকড়া বেশি। এইদিকে এরকম অবস্থায় eBay তে পানির দরে বেচে দেওয়াই সর্বোত্তম অপশন হতো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৌরভ এর ছবি

হাতে টাকা থাকলে কোন চিন্তাই করতাম না।
আবর্জনা হিসেবে নিক্ষেপ। কারণ চার বছর যাওয়ার পর এইটার মার্কেট ভ্যালু মাইনাস। মাইনাস এইজন্যে যে, ময়লা হিসেবে ফেলতে তো পয়সা লাগবে। মন খারাপ


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অগাবগা পোস্ট আরো চলুক। ...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ত্যাল, এই ত্যাল ই হইলো জগতের তাবৎ সমস্যার সমাধান!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।