শর্টকাট

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: সোম, ১৭/০৮/২০০৯ - ২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোঃ মনির হোসেন। বয়স ২২। বাড়ি নরসিংদী। উচ্চতা ৫ ফুট ৪। শরীর পাতলা। গায়ের রঙ শ্যামলা থেকে কালোর দিকে। গাঞ্জা ছাড়া তেমন কোন বদভ্যাস নাই। পেশায় পকেট মার।

মনির হোসেনের ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার ঝোঁক ছিলো। কিন্তু বাপে শান্তিতে থাকতে দেয় নাই। স্কুল কামাই দিলেই ফাটানো মাইর। মাঝ খান থিকা মনির হোসেনের স্কুলও হয় নাই, পড়াশুনাও হয় নাই। ১৭ বছর বয়সেই সে পালিয়ে ঢাকায় আসে। কয়েকদিন রিক্সা চালায়। কষ্ট লাগে। এরপরে একটা ছিনতাইকারী দলের সাথে ভিড়ে যায়। ইনকামের বেশিরভাগ টাকাই অন্যের পকেটে চলে যায়। তার ভাল্লাগে না। ইতোমধ্যে পকেট মার হিসেবে হাত পাকা করে। এই কাজে সে বিরাট প্রতিভা। এহনতক ধরা পড়ে নাই। আর ব্যবসায় হিসেবেও স্বাধীন। সে কোনো দলে ভিড়ে নাই, পুলিশকে বখরা দেয়ার মধ্যেও নাই। এক এলাকায় বেশিদিন কাজ করে না। তার নীতি হলো গেরিলা আক্রমণের নীতি। শর্টকাটে কাজ সেরে চম্পট।

আজ সকাল বেলায়ই সে এমন একটা কাজ সফলভাবে শেষ করেছে। অবশ্য একটু যে ঝঞ্ঝাট হয় নি, তা নয়। ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনো আধাপাকা চুলের মাঝারী গড়নের লোকটির ব্যাগ কেটে ৫০০ টাকা নোটের দুটি বান্ডিল সরিয়ে নেয়ার পরেই লোকটি কি করে যেন টের পেয়ে যায়। মনির হোসেন সময় নষ্ট করে না। দৌঁড়ায়, তারপর গলি তস্যগলির মাঝে হারিয়ে যায়।

ক্রিকেটের প্রতি মনির হোসেনের ভালোবাসাটা এখনো মরে নাই। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশের ৪র্থ ওয়ান ডে শুরু হবে বেলা আড়াইটায়। মনির হোসেন মহব্বত আলীর মৌসুমী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে সেখানেই বসে যায়। আড়াইটার পরে লোকজনের ভিড় কম থাকে। আর হোটেলের টিভিতে খেলাও দেখা যায়। মহব্বত আলীও কোনো অজানা কারণে মনির হোসেনকে খুব স্নেহের চোখে দেখে। তার মেয়ে মৌসুমীর বয়স অবশ্য এখন মাত্র ৭।

খেলার শুরুতেই মনির হোসেনের বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়। এমনিতে গত ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ বিপাকে আছে, তারপরে আবার টসে হেরে বোলিং। আগের ম্যাচের মতো জিম্বাবুয়ে আজও যদি ৩০০+ স্কোর করে ফেলে তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যে হাল, তাতে হার নিশ্চিত। জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষে তার ধুকপুকানি আর থাকে না, তবে চেহারা আরো বিমর্ষ হয়। এই ম্যাচ আর জেতার আশা নাই। ৩১২ রানের মধ্যে এক কভেন্ট্রির ১৯৪!

মনির হোসেন তারপরেও খেলা দেখে। আজ কাজকামের আর চাপও নাই। সকালে যে দাও মেরেছে, তাতে আগামী কয়দিন কাজ না করলেও চলে। জুনায়েদ তামিম ঠান্ডা মাথায় খেলেও রানরেট ঠিক রাখে। জুনায়েদ আউট হয়ে গেলে আশরাফুলের খেলা দেখা তাকে খুব কষে একটা গালি দেয়। কিন্তু তামিম যতক্ষণ আছে, ততোক্ষণ কিছুটা আশা আছে। ম্যাচের শেষের দিকে আবারও মনির হোসেনের বুক ধুকপুক করে। তবে এবার উত্তেজনায়। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারে না। ২ দিনের মধ্যেই বাংলোদেশ অস্ট্রেলিয়া হয়ে যাবে এমনটা সে আশা করে নাই। তামিম সমানে পিটায়। তবে শেষের দিকে প্রচন্ড ক্লান্ত সে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান নেয়। ক্লান্তিতে পা চলে না, এই বুঝি উইকেট থ্রো করে। অন্যপ্রান্তে চিয়ার বয় রহিম তাকে উৎসাহ দেয়, "আরেকটু কষ্ট কর দোস্ত, আরেকটু!" বাংলাদেশ জিতে, মনির হোসেনের মনে ফুর্তি আর ফুর্তি। ইতিমধ্যে রাত নেমেছে। মৌসুমী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কাস্টোমারও বেড়েছে। মহব্বত আলীর তরফ থেকে সবার জন্য চা ফ্রি!

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটা মনির হোসেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। অবশ্য এ অংশটা তার কখনোই ভালো লাগে না। নিজের অতীতের কথা মনে হয়। অনেক মারকুটে ব্যাটসম্যান ছিলো সে আবার পি-টু-পি স্পিনার। টেপ টেনিসও টার্ন করাতে পারতো। আর লাইন লেংথে কন্ট্রোল ছিলো মারাত্মক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটা কখনোই উপভোগ করে না সে।

প্রসপার উৎসেয়ার মুখে হারের ক্লান্তি, সাকিবের মুখে কথার ফুলঝুরি ছাপিয়ে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে সে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের দিকে মনোযোগ দেয়। ১৯৪ রান করা কভেন্ট্রি আর ১৫৪ রানের জবাব দিয়ে ম্যাচ জেতানো তামিম যৌথভাবে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। পুরস্কারের অঙ্কটা ৫০০ ডলার!

৫০০ ইউএস ডলারে কত কোটি জিম্বাবুইয়ান ডলার আর তা বহন করতে কতোগুলো ব্রিফকেস লাগবে, এ সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও ১ ইউএস ডলারে কত টাকা, সে হিসাব মনির হোসেন জানে। কিছুদিন আগেও এয়ারপোর্ট-উত্তরা এলাকায় সে কয়েকটা ছোটখাটো কাজ করেছে। মনির হোসেন ঐকিক নিয়মে খারাপ না। ৫০০ ডলারে কত টাকা তা চোখের নিমিষেই হিসাব করে ফেলে, এরপর ১৯৪ আর ১৫৪ কে যোগ করে দেখে প্রতি রানের জন্য তামিম ও কভেন্ট্রি কতো করে পেলো।

মুজতবা আলীর পন্ডিত মশাইয়ের গল্প নিয়ে মনির হোসেনের মাথাব্যথা নেই, তবে রানপ্রতি টাকার হিসেবটা বের করে মনির হোসেনের চোখমুখ একটু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেখানে আত্মবিশ্বাস থাকে, পরিতৃপ্তি থাকে, হয়তো একটু অবজ্ঞাও মিশে থাকে।


মন্তব্য

মামুন হক এর ছবি

চমৎকার লাগল!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

কীর্তিনাশা এর ছবি

দুই সেকেন্ডে দুই আঙুলের ম্যাজিকে দুই বান্ডিল টাকা পেলে তো অবজ্ঞার হাসি ফুটবেই ঠোঁটে।

অণুগল্প চমৎকার লাগলো........ হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

বাহ!

---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো অনুগল্পটি! চলুক
..................................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

ভাল লাগলো গল্পটা হাসি

---------------------
আমার ফ্লিকার

অতিথি লেখক এর ছবি

তেমন একটা মজা পেলাম না

সূর্যবদী মেঘ...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

গল্পটা ভাল্লাগল, বলাই'দা।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভাল লাগছে। খেলার প্রেক্ষাপটটা নিয়ে আসার কারণে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে পড়ছি আর ভাবতেছিলাম শেষটা কিভাবে করেন? চমৎকার।

রেশনুভা

প্রকৃতিপ্রেমিক(অফলাইনে) এর ছবি

সমসাময়িক ঘটনা আসাতে গল্পটা প্রাণ পেয়েছে, ভালোও লেগেছে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পের শেষটা ভালো লেগেছে। চরিত্রে গল্পটা অণু থাকেনি আর...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো... বেশ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

চমৎকার থীম! খুবই ভালো লেগেছে। লেখাটি পড়ে একটা আইডিয়া এলো মাথায়। পকেটমারার একটা ওয়ার্ল্ডকাপ প্রতিযোগীতা হলে কি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এই গল্পে আমি ব্যক্তিগত আক্রমন অনুভব করছি। প্রথম লাইনটাতেই আমারে ব্যক্তিগত আক্রমন করা হৈছে। আমি এর বিচার চাই। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনার নাম কি মনির হোসেন?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মোঃ মানে কী?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মানে দিয়া কী করেন? আমার নামে মোঃ আছে, এই গল্পেও মোঃ আছে। তাছাড়া, আমারে ব্যক্তি আক্রমন পরের লাইন গুলোতেও করা হৈছে। বলাই'দার বিরুদ্ধে হরতাল ডাকুম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ইউরো কেইস নাকি? চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- না, ঐ হিসাব য়ূনুইচ্চার সাথে। বলাই'দার সাথে না। বলাই দা জেলা, বয়স, উচ্চতা নিয়া আমারে পারসোনাল এ্যাটাক করছে। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হিমু এর ছবি

"মনির হোসেন না হোক" মানে কী? তোর নাম তো মনির হোসেন বইলাই জানতাম! এইসব কী কছ মনিরা?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখাটা বোলার্স ব্যাক ড্রাইভ হইসে।
সোজা ৪।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

গল্প ভাল হইছে।
ধুসর গোধূলির কেইসটা কী?

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

তানবীরা এর ছবি

তাইলে রান প্রতি কতো ট্যাকা হইলো? আমদানি ভালো হইলে আমিও ক্রিকেট খেলবো।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বলাইদা, দুর্দান্ত লাগল। শেষে এসে কুকুরের তিন পায়ের সাথে পন্ডিত স্যারের যে তুলনা করলেন, এক কথায় তা অপূর্ব। আপনে নমস্য

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

লেখক মনে হয় বাংলাদেশের খেলা দেখে নিজের প্রতিক্রিয়া মোঃ মনির হোসেনের নামে চালিয়ে দিয়েছেন ...... খেলাধুলার খবরগুলো এই ধাঁচের হলে খারাপ হই না।

অমিত আহমেদ এর ছবি

শুধু লেখার জোরে সামান্য গল্প কেমনে দুর্দান্ত হতে পারে তার একটা উদাহরণ এই গল্পটা। দারুন! আর এটা অণুগল্প না, পূর্ণাঙ্গ গল্পই হয়েছে। গল্পের শেষ আরেকটু ধীরে করলেও পারতেন।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।