কে দায়ী?

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/১১/২০০৮ - ৭:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেক ছোটোবেলায় যখন রাজীব গান্ধী বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন আমি খবরটা প্রথম পেয়েছিলাম টিভি থেকে। খবরটা পাড়ায় সবাইকে জানাতে গিয়ে আমি এক অদ্ভুত প্রতিরোধের সম্মুখীন হলাম। এর আগে পর্যন্ত আমি কখনও এই সমস্যার মুখে পড়িনি। দেখলাম পাড়ায় আমার সমবয়সী বন্ধুদের মধ্যে দুরকম মতামত চলছে। উভয় বক্তব্যের মূলে আছে একই কথা - রাজীব গান্ধী মারা যাননি। প্রথম তত্ত্ব হল, এত বড় বিস্ফোরণের পরেও তাঁর চটি পাওয়া গেল কি করে। আমেরিকার হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। আরেক মত বলে আমেরিকা ধরে নিয়ে গেছে রাজীব গান্ধীকে। আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে ভারতকেও ভেঙে দেবার চক্রান্ত করছে। আমি সংখ্যাগুরুর মতামত বুঝে বাড়ি ফিরলাম যে রাজীব গান্ধী মারা যায়নি। বাবা-মা কে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনোভাবেই বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না, মনে দ্বিধা নিয়েও তখনকার মত মেনে নিলাম যে রাজীব গান্ধী হয়ত মারাই গেছেন।

আজকে সেই ঘটনার সতেরো বছর পরে আমি জানি রাজীব গান্ধী মারা গেছেন এল-টি-টি-ইর কিছু সুইসাইড স্কোয়াডের আক্রমণে। যারা আমাকে তখন বলেছিল, তারাও এখন তাই জানে হয়ত। বাস্তব হল, চারদিকে কমিউনিজমের মাঝে বড় হয়ে সব কিছুতেই আমেরিকার দোষ খুঁজে বের করা আমাদের অভ্যাসে এসে গিয়েছিল। সোভিয়েত তখন ভারতের মিত্রদেশ। ভারতের অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ, সবেই আমেরিকা দায়ী। আর সোভিয়েত হল সঠিক - সেটা আফগানিস্তানেও আবার যুগোশ্লোভিয়াতেও। আমার নিজের তখনো বোঝার ক্ষমতা নেই। তাই সবার মত, আমার কাছে রাজনৈতিক পৃথিবী ছিল কেজিবি আর সিআইএ নামে দুই প্রতিষ্ঠানের লড়াই, যার মধ্যে আমি হলাম কেজিবির দলে। আর পাকিস্তানের দলে সিআইএ। আর এদের কাজ হল ষড়যন্ত্র করা। আমি জানতাম ভিয়েতনামের কথা, অথচ জানতাম না স্ট্যালিনের গণহত্যার কথা। সেই সেদিনের আমি-কে তুলে আজকের ভারতে বসালে সত্যি অবাক হতাম। হায়দ্রাবাদ শহরে এমনকি আমেরিকান ভিসা পাবার জন্য এক বিশেষ জাগ্রত দেবতা আছে - ভিসা বালাজি। অবাক হবার কিছু নেই যে মন্দিরে আজকাল দর্শন পাওয়া যায় না।

আবার প্রসঙ্গে ফিরি, আজকের যুগে এই ধরণের ষড়যন্ত্রের গল্প সংখ্যায় বড় বেশী হয়ে গেছে। আরও ইন্টারনেটের কল্যাণে আরো বেশী মানুষের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় আমি আরো বেশী বেশী গল্প জানতে পারছি। এইরকম গল্পের সাথে আমার পুনঃপরিচয় ৯/১১-র সাথে। আমি আল কায়দা নামটা ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই দেখি অনেকেই বলছে এসব আমেরিকার নিজেরই করানো। কারণ, ঘটনার বিবরণ ও সরকারি ব্যাখ্যায় মধ্যে অনেক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। অথচ মজার কথা, ৯/১১ র ঘটনার সরকারি ব্যাখ্যার পরিবর্ত ব্যাখ্যাটা এক লাইনেই সীমাবদ্ধ থাকে - বিস্তারিত আকারে আসে না। অনেক সাইটেও দেখলাম বুশ নির্বাচন জেতার জন্য এসব করিয়েছে। আর আফগানিস্তান আক্রমণের পরে তো যুক্ত হল আক্রমণ করার উদ্দেশ্যেই ৯/১১ ঘটানো। কিন্তু ঘটনা হল, ব্যাখ্যায় অসঙ্গতি অন্য কোনো ব্যাখ্যাকে শক্তিশালী করে না। অন্যভাবে বললে, যতই ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, ব্যাখ্যায় ফাঁক থাকতে বাধ্য। যেমন, কোনো মার্ডার সাইটে খুনীর সিগারেট টুকরো পাওয়া গেল আর সন্দেহভাজনদের মধ্যে একজন সেই সিগারেট ব্যবহার করে - এই দুই ঘটনা থেকে কখনই একশো শতাংশ প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে সেই খুনী। আবার এই ব্যাখ্যার ফাঁক থাকার মানে এই নয় যে অন্য কেউ খুনী - তার জন্য পরিবর্তিত প্রমাণ লাগে। আর বুশ বা সরকারের পক্ষে করানোর জন্য যতজন বিশ্বস্ত লোক দরকার ততজন বিশ্বস্ত লোক আমেরিকায় নেই। করানো ঘটনা হলে যারা যারা জানে বা ঘটনায় অংশগ্রহণ করেছে তারা এতদিনে ফাঁস করিয়েই দিত - যেমন দিয়েছিল বানানা রিপাবলিকের বেলায়। সবশেষে, দেশ আক্রমণের জন্য কোনো ছোটো বাহানাই তো যথেষ্ট ছিল, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের শুরুর আগে কতজন মারা গিয়েছিল যে যুদ্ধ শুরু করতে হয়েছিল?

যাহোক, এ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বন্ধুমহলে বেশ ক'বার অপ্রিয় হয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবার সমস্যা একটাই - সবাই মার্কিন রাষ্ট্রকে সর্বশক্তিমান মনে করে। তাই যে কোনো উপায়ে পৃথিবীর যে কোনো ঘটনায় নির্বিচারে আমেরিকার অদৃশ্য হাত পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবং, আমেরিকাকে দায়ী বানালে আর প্রমাণের দায় থাকেনা, কারণ আমেরকা সর্বশক্তিমান, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ আনাই সম্ভব নয়। আর আমেরিকার নিজের নাগরিকেরাই যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, সে হিসাব নেই। মজার কথা, আমার সেই বন্ধুমহলের অধিকাংশই জীবনের কিছুটা সময় অন্তত আমেরিকায় কাটিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের সাধের সোভিয়েতভূমি দর্শন হয়নি।

দেশে একের পর এক জঙ্গী আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে এই একই মানসিকতার পুনঃপর্যবেক্ষণ হল আমার। যে যার মত আমেরিকা, ভারত, ইসরায়েল বা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে দায়ী করে চলেছে। বিজেপি বা কংগ্রেসকে দায়ী করার সংখ্যাও নিতান্ত কম না। কথা শুনে মনে হয় সবাই নিজের মত করে আগে থেকেই জানে কে দায়ী, শুধু ব্যাখ্যাটা মিলিয়ে দিতে পারলেই খুশী। তথ্য আয়তনে বাড়ার সাথে সাথে তথ্যের বিশ্বস্ততা আরো কমে গেছে জনসাধারণের কাছে। আর প্রযুক্তির যুগে সব ঘটনার একাধিক ব্যাখ্যা দেওয়া অসম্ভব কিছু না। আমার ব্যক্তিগত ধারণায়, দিনে দিনে সামাজিক অসাম্য বৃদ্ধির কারণে মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়ছে। শুধু তাই নয়, অর্থের অসাম্যটা আজকের যগে তথ্যের অসাম্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। তথ্যের অভাব আর বিশ্বাসের অভাব, এই দুই ফাঁক বোজাতে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো বিকল্প নেই। আর এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারি পদ্ধতিগত অস্বচ্ছতা, যা আদপে দুর্নীতির আরেক পথ।

কিছুদিনের মধ্যে আমার তো মনে হয় একটা সাধারণ তত্ত্ব চলে আসবে বাজারে - আমরা সবাই ম্যাট্রিক্সের মত কোনো এক মায়াজালে জিম্মি হয়ে আছি। কোনো সর্বশক্তিমান রাষ্ট্র বা ব্যক্তি আমাদের কোনো এক অদৃশ্য সূত্রে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আমাদের ইচ্ছা-চিন্তা-ভাবনা। সবই ষড়যন্ত্র!!


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমরা সবাই ম্যাট্রিক্সের মত কোনো এক মায়াজালে জিম্মি হয়ে আছি। কোনো সর্বশক্তিমান রাষ্ট্র বা ব্যক্তি আমাদের কোনো এক অদৃশ্য সূত্রে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আমাদের ইচ্ছা-চিন্তা-ভাবনা। সবই ষড়যন্ত্র!!

এই জিনিসটা আমারও মনে হয় প্রায়ই

আর সবচে বেশি যে অনুভূতিটা হয় তা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলার মতো কিছুই খুঁজে পাই না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঠিক ।
মানুষে মানুষে দূরত্ব ক্রমশঃ বাড়ছে । এটা সব সময়ই ছিলো কিন্তু এই সময়ে এটা বাড়ছে প্রতিরোধহীনভাবে । নানা ধরনের পকেট তৈরী হচ্ছে । মানুষ নিজেদের অবস্থানমতো এক একটা পকেটের মধ্যে আটকে যাচ্ছে ।
চিন্তা-ভাবনা,দর্শন,যুক্তি ,আবেগ -সবকিছু সহ মানুষ ঐ পকেটবন্দী হয়ে যাচ্ছে ।
পূর্বনির্ধারিত ধারনা ও মতবাদের বাইরে যে সত্য থাকতে পারে, তত্বের পরিসীমার বাইরে তথ্য লুকানো থাকতে পারে, আধুনিক মানুষের সেই সত্যটা বিস্মৃত হচ্ছে ভয়ংকর রকম ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

............... মন খারাপ
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

রেজওয়ান এর ছবি

মুম্বাইয়ের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী আক্রমণ সম্পর্কে যতই পড়ছি ততই আশ্চর্য ও হতভম্ব হচ্ছি। এতো হলিউড মুভিকেও হার মানায়:

২৬ জন সন্ত্রাসী কোন মাদারশীপ থেকে রাবারের ডিঙ্গী করে গেট অফ ইন্ডিয়ায় নামে। সেখানে রাস্তার গাড়ী হাইজ্যাক করে পরিকল্পিত টার্গেটে গিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, নির্বিচারে মানুষ মারে। বেছে বেছে বৃটিশ ও আমেরিকান হস্টেজ বন্দী করে দুটি আন্তর্জাতিক হোটেলে। পুলিসের সন্ত্রাস বিরোধী সেলের চীফকে মারে। তাদের দৃশ্যত: কোন এজেন্ডাও নেই এবং পালাবার কোন পথ নেই। শুধুই মৃত্যু চারিদিকে।

কেন? কিসের জন্যে?

এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভারতের আসন্ন নির্বাচনের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর হত্যা এবং শেখ হাসিনার উপর এরকম আঘাত আসতে পারে এমন গুজব একই সুত্রে গাঁথা মনে হয়।

আমরা যা দেখছি শুনছি তার থেকে সত্য অনেক দুরের কিছু।

আমার সমবেদনা রইল সেইসব নিরপরাধ লোকদের জন্যে যারা বলি হলেন এইসব শয়তানি কার্যক্রমে। আমরা সত্যিই "ম্যাট্রিক্সের মত কোনো এক মায়াজালে জিম্মি হয়ে আছি"।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

দিগন্ত এর ছবি

প্রথমদিকে আমিও এরকমই মনে করতাম। কিন্তু, এখন এত ঘনঘন জঙ্গী আক্রমণ হচ্ছে যে "ভোটের আগে" ব্যাপারটা আর গুরুত্ব পায় না। এটা এখন অবিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা প্রবাহের একটা অংশমাত্র ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সৌরভ এর ছবি

আমি অবাক হয়েছি, মনমোহন সিং এর গতানুগতিক বহির্শক্তির আক্রমণ ধরনের কথা বলে যাওয়া দেখে। বহির্শক্তি হোক আর অন্তর্শক্তি, এইরকম ফিল্মি স্টাইলে আক্রমণ কীভাবে করা সম্ভব? যেখানে গত কয়েক মাস থেকেই এ ধরনের সাবধানবাণী আসছিলো, মুম্বাই আক্রান্ত হতে পারে, সেখানে এই ঠুনকো নিরাপত্তার দায় কীভাবে রাষ্ট্র ও সরকার এড়ায়?

নিউইয়র্ক টাইমস অনেক বিশেষজ্ঞের মতামত দিয়ে বলছে, এই ঘটনার ধরন ও মোটিভ আল-কায়দা থেকে অনেক দূরে। সংগঠিত আক্রমণ প্রমাণ করে যে, কিছু একটা বড় মোটিভেশন তো আছেই নাশকতাবাদীদের। কিন্তু পুরনো জুজু দের দায়ী করার চেয়ে এবার অন্য কোন পরিচয় খোঁজার সময় এসেছে মনে হয়।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার কাছে অবাক লেগেছে তিনজন বড় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনা। দুইজন মরেছে সিনেমা হলের সামনে (জানিনা কেন দুই জন বড় কর্মকর্তা একই সাথে সিনেমা হলের সামনে মারা পড়লেন, হয়তো সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন, যাহোক)। আরেকজন তো মারা পড়লেন তার টীমকে তাজ হোটেলে লিড দিতে গিয়ে! আমি অতি আশ্বর্য এবং অবাক কারণ (ভারতীয়) টিভিতে যা দেখলাম তাতে দেখা যাচ্ছে পুলিশের সেই বড় কর্মকর্তা তার কার থেকে নামলেন একদম সিভিল পোষাকে, তার মন ভীষণ বিষন্ন, হাতে একটা হেলমেট, সেটা একবার অনিচ্ছায় মাথায় দিচ্ছেন আবার নামাচ্ছেন। এভাবেই ভিডিওটা দেখলাম। জানিনা উনি কিভাবে মারা গেলেন। কোখাও কেউ স্পষ্ট করে লিখছেনা। পুলিশ বলছে ২০এর বেশী সন্ত্রাসী এই হামলা চালিয়েছে, এর মধ্যে ৪ জন মারা পড়েছে আর ৯ জন ধরা পড়েছে। আমি বুঝিনা বাকী আর কয়জনই বা রয়েছে আর তাদেরকে কেন এই দুইদিন পরেও ধরা যাচ্ছেনা। সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপার হলো তাজ হোটেলে এখনো বিস্ফোরণ হচ্ছে এবং হাস্যকর হলেও সত্যি (লাইভ দেখছি) যে একটি মাত্র দমকল দিয়ে সেই আগুন নেভানো হচ্ছে। অবস্থা যতটা ভয়ংকর বলে বর্ণনা করা হচ্ছে ঠিক ততটাই দায়সারা তা মোকাবেলার পদক্ষেপ।

খুবই আজব কান্ডকারখানা চলছে। সন্দেহ করতে চাইনা কিন্তু সবকিছুই কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আশা করি সময়ের সাথে সবই প্রকাশিত হবে।

দিগন্ত এর ছবি

সন্দেহ করতে চাইনা কিন্তু সবকিছুই কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
- আমারও একই অবস্থা ... প্রথম ব্যাপারটার কোনো বোধগম্য ব্যাখ্যা আমিও পাইনি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নির্জর প্রজ্ঞা এর ছবি

আমি অবাক হলাম জেনে আপনার বন্ধুরা যারা এদেশে থেকে গেছে তারা কেনো মনে করে আমেরিকা সর্বশক্তিমান। অর্থনৈতিক নাকি রাজনীতিক কলাকৌশলে?

পৃথিবীতে মার্কিন সরকারের যে অর্থনৈতিক ফিগার দেখানো হয় ফাকফোকরের পরিমান তাতে বিপুল। আসল কথা ভেতরের অবস্থাটি অনেক শোচনীয়। সব কথা বলা সম্ভব না না। তবে একটা প্রমান দেখাই মার্কিন সংকটেরঃ

নিচের লিংকটি আমাদের প্রিয় প্রফেসর Dr. Constand-র।

http://www.uwf.edu/rconstand/

ব্যক্ত হোক তোমা-মাঝে অনন্তের অক্লান্ত বিস্ময়
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

দিগন্ত এর ছবি

প্রযুক্তিগত ভাবে আমেরিকা অনেকটাই এগিয়ে, তাছাড়া, যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে আমেরিকাই এক নম্বরে। তাই সর্বশক্তিমান মনে করা সহজ। যদিও আমেরিকা দেশটাও আর দশটা দেশের মতই জনগণ নিয়েই তৈরী ... তাই দোষগুণ, ভাল-খারাপ সময় থাকবেই।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রানা মেহের এর ছবি

সমবেদনা রইলো সাধারণ মানুষগুলোর জন্য
যারা হিন্দু মুসলিম ভারতীয় আর শুধুই 'মানুষ'
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তানবীরা এর ছবি

কোথায় আমরা নিরাপদ??? আকাঙ্খিত নিরাপত্তা কোথায় আমাদের?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার লেখাটার জন্য দিগন্তকে ধন্যবাদ।

আমার ব্যক্তিগত ধারনা---মানুষের একটা অন্যতম প্রবৃত্তি হল সবকিছুর পেছনে একটা গূঢ় কারন, একটা 'সুক্ষ্ম কারচুপি' বা কোন ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করা।

কেন?

কারন, সাদা-মাটা সত্য---খুবই 'সাদা-মাটা'। মনকে আঁচ দেবার মত যথেষ্ট তাপ নেই তাতে। আমাদের দরকার এমন কিছু---যা আমাদের বিরক্তিকর এই 'সাদা-মাটা' জীবন থেকে মুক্তি দেবে।

কিছু দিনের মাঝে হয়ত আমরা অনেক কিছু জানতে পারব এই ব্যাপারে। মনমোহন সিং-এর কথা শুনে মনে হল যে কোন অবস্থায় 'পার্শ্ববর্ত্তি' দেশের ওপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারলেই বাঁচেন।

জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা এসেছে নৌকা নিয়ে। এতে অন্ততঃ হামলাকারীদের ভৌগলিক উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে।

আমি জানি---এই ঘটনা আজ হোক কাল হোক---শেষ হবেই। এবং শেষের রুপটা মোটামুটি সকলের জানা। বিশ-বাইশটি তরুন কি প্রেরনায় জীবন বাজী রেখে একটা রাষ্ট্রের ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গেল--আমাদের হয়ত জানা হবে না কোনদিন। কি কারনে এতগুলো প্রান মহাভারতের অভিমন্যুর মত
চক্রব্যুহ ভেদ করে গেল যখন জানে যে বেরিয়ে আসার মন্ত্র তাঁদের জানা নেই?

ভারতের যে কাজটা করা জরুরী--সেটা খুব সম্ভবত অন্যকোন বহিঃশক্তির উপর দোষ চাপানোর রেগুলার ফর্মা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের আভ্যন্তরীন দোলাচালগুলোর দিকে নজর দেয়া।

যে প্রানগুলো ঝরে গেল---তা সে যে পক্ষেই হোক না কেন--সমবেদনা রইল তাদের প্রিয়জনদের জন্যে।

দিগন্ত এর ছবি

ভারতের যে কাজটা করা জরুরী--সেটা খুব সম্ভবত অন্যকোন বহিঃশক্তির উপর দোষ চাপানোর রেগুলার ফর্মা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের আভ্যন্তরীন দোলাচালগুলোর দিকে নজর দেয়া।

- এটা গণতন্ত্রের একটা দুর্বল দিকের ফলশ্রুতি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের তো পার্শ্ববর্তী দেশে ভোট চাইতে হয় না। তাই সহজ লক্ষ্যভেদ ... আমার মনে হয় পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই কমবেশী এই প্রবণতা দেখা যায়।

আবার অন্যদিকে দেখলে, আন্তর্জাতিক সীমানা ব্যবহার করা যে কোনো জঙ্গী-গোষ্ঠীর পক্ষেই সুবিধাজনক, এতে তদন্ত অনেক পিছিয়ে দেওয়া যায়। পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সম্পর্ক তো কেমন সেটা সবাই জানে। পালানোর সহজ পথ। ভারতীয় জঙ্গী-গোষ্ঠী আক্রমণ করলেও সহজে পালানোর জন্য সীমানা ব্যবহার করবেই। অন্য দেশের সংগঠন কাজটা করেছে আর অন্য দেশের সীমানা ব্যবহার করা হয়েছে - দুটো সম্পূর্ণ আলাদা অভিযোগ।

এই ক্ষেত্রে এখনও অবধি বলা হয়েছে ইন্টারসেপ্টেড ফোন-কলে জঙ্গীরা পাঞ্জাবী-উর্দুতে কথা বলেছে (পাবলিক শোনানো হয়নি)। এটাই পাকিস্তানের দিকে একমাত্র তীর। অথচ, গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনের মধ্যে একজনকেই বলা হয়েছে যে সে পাকিস্তানী নাগরিক - তাহলে বাকিরা কোথাকার? সমস্ত ব্যাপারে অস্বচ্ছতা সরকারি দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রণদীপম বসু এর ছবি

সব ষড়যন্ত্র !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখাটা পড়ে আপনার বিষন্নতাটাকে অনুভব করলাম। সহানুভুতি রইল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আশা করি আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতরা সবাই নিরাপদ আছেন ... যেই করে থাকুক, মূল কথা হলো এরা পশু ... এবং ভারত সরকারের এই সবগুলা টেররিস্টের বিচার (২৬ জন সম্ভবতঃ) প্লাস তাদের মূল উৎপাটন করতেই হবে
নিউজ ফলো করে মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে ,,, শুনলাম কয়েকটা টেররিস্ট নাকি হোস্টেজের বেশে পালিয়ে গেছে? সত্যি নাকি?
সিএনএন দেখে খানিকটা বিরক্ত হয়েছি ... মনে হয়েছে ব্যাপারটা হ্যান্ডল করায় সরকারের দক্ষতার অভাব আছে ... মানুষ অযথাই ভিক্টিম হয়েছে ... অথচ সেসব বাদ দিয়ে এরা খালি "ইনডিয়ার ৯/১১" জাতীয় আইকনাইজেশনে ব্যস্ত !!! ,,, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষমাস
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সচেতনা এর ছবি

হ্যাঁ, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার যে এরকম একটা ঘটনা আয়ত্বে আনতে এত সময় নিচ্ছে কেন। বিশেষ করে ভারতের মত একটা দেশের পক্ষে। ওরকম দায়িত্বপূর্ণ একজন পুলিশ অফিসারের একেবারে সিভিল পোষাকে ঢোকাটা ভুল করেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর এতবড় একটা ঘটনার খবরের তিলমাত্রও ইন্টেলিজেন্সের কাছে ছিলনা!!! এই ঘটনা অনেক প্রশ্ন তোলে। নিরাপত্তার ঢিলে অবস্থাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যেন গলদটা আসলেই কোথায়।
লেখাটা মনে ধাক্কা দিল। দিগন্তের অনুভূতির সাথে নিজের মন খারাপ শেয়ার করছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।