বিবাহ করিব কিন্তু এ বিবাহ করিব না

দুর্বাশা তাপস এর ছবি
লিখেছেন দুর্বাশা তাপস (তারিখ: রবি, ০৯/০৩/২০০৮ - ৮:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবাই খুব সিরিয়াস লেখা দিচ্ছে, তাই আমি একটা ফাজলামো মার্কা পোস্ট দিলাম

রাজু আর শফি বারান্দায় বসে গল্প করছিল। রিফাত বাইরে থেকে ফিরে যোগ দেয় তাদের সাথে। একটা চেয়ার নিয়ে ব'সে শফির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দেয়- কি দোস্ত ছক্কাতো পিটাইয়া দিলা। শফির কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে, আঁচ করার চেষ্টা করে মন্তব্যটা কোন প্রসঙ্গে করা হল, কিন্তু বুঝতে পারে না। রিফাত অবশ্য মাঝে মাঝেই এমন রহস্য করে, কখন যে কোন প্রসঙ্গে কোন কথা বলবে বোঝা শক্ত।
শফি তেমন গুরুত্ব দেয় না- কিসের কথা বলছিস?
- হ্যা এখনতো এমন ভাব করতাছ কিছুই জান না আর ওই দিকেতো তোমার জ্ঞানী জ্ঞানী ডায়লগ শুইনা সবাই মহা ইমপ্রেসড।
- জ্ঞানী মার্কা ডায়লগ আমি মাঝে মাঝেই দেই, এটা নতুন কিছুনা। তো কে এত ইমপ্রেসড শুনি?
- আমার খালু।
- তো?
- আরও একজন মোটামুটি ইমপ্রেসড।
- কে?
- উনার মেয়ে।
রাজু এতক্ষনে রসের গন্ধ পায়- ঘটনা গুরুতর মনে হইতাছে।
রিফাত সায় দেয়- শুধু গুরতর না, খেলা ফাইনাল।
রাজুর উৎসাহ বাড়ে- আরে খুইলা বল না।
- খুইলা আর ঢাইকা বলার কিছু নাই, ঘটনা হইল গতমাসে আমি খালার বাসায় গেছিলাম, সাথে শফিও ছিল। খালা বলল- রাত্রে খেয়ে যা, আমি বললাম- তথাস্তু। তো সেদিন যেহেতু শুক্রবার ছিল তাই খালুও বাসায় ছিল। তো খালুর সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা কইতাছি আর এরমধ্যে শফিও তার স্বভাবসুলভ জ্ঞানী মন্তব্য একটার পর একটা চালায়ে যাইতেছে; রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি, সাহিত্যনীতি এবং দুনিয়ার যাবতীয় নীতি সম্পর্কে শফির যথেষ্ট জ্ঞান আছে আমরা সবাই জানি এবং সেও বেশ বীর বিক্রমে বাতলাবাজী চালায়ে গেল। আসলে আমি একটু ভয়ই পাইতেছিলাম, খালু একটু রাশভারী টাইপের লোক, এসব বাতলাবাজী শুনে ধমক না দিয়ে বসে।কিন্তু আমার আশঙ্কা মিথ্যা সপ্রমান ক'রে সম্পূর্ণ বিপরীত ফল ফলল। কিছু দিন আগে খালার বাসায় গেলাম, খালু আমাকে বেশ এটা সেটা জিজ্ঞেস করল- শফি তোমার কেমন বন্ধু, ছেলে কেমন, বংশ কি এইসব আরকি, তো তখনো আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি নাই। ইতিমধ্যে গোপনসূত্রে শফির আরো খোজখবর নেয়া হইছে এবং আজকে খালার বাসায় গিয়ে জানতে পারলাম আমাদের শফি সাহেবকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ঘেষণা করা হইছে।

অবশ্য ব্যাপারটা এমন না যে আমাদের শফি সাহেবকে দেইখাই হঠাৎ কইরা তাদের মেয়ের বিয়ের কথা মনে পইড়া গেল। এমনিতেই অনেকদিন থেকে ছেলে দেখা চলতেছিল এবং সম্ভবত বাংলাদেশের অর্ধেক ছেলে ইতিমধ্যে দেখাও হয়ে গেছে। কিন্তু কাউকেই পছন্দ হইতেছিল না, এ দেখতে ভাল তো শুনতে খারাপ, ও শুনতে ভাল তো বলতে খারাপ এই চলতেছিল এতদিন। অবশেষে সবেধন নীলমনিকে পওয়া গেছে। এখন শফি সাহেব আপনার কি মত?
- ইনটারেস্টিং।
- হুম ইনটারেস্টিংতো বটেই। আচ্ছা ব্যাপারটা আমি আরো ইনটারেস্টিং কইরা দিতাছি, মনে হয় আগেও বলছি যে আমার ওই খালার দুই মেয়ে, বড়জন বাইরে সেটলড আর যে বাড়িতে গেছিলা ওইটা ওনাদের নিজেদের বাড়ি। আর মেয়েকেতো তুই দেখছসই, এমনিতে খুবই ভাল মেয়ে। এইবার বল অগ্রসর হইতে রাজী আছিস কিনা।
- অগ্রসর হইতে আমার কোন আপত্তি ছিল না, কিন্তু...
- কিন্তু কী?
- আমার সাথে কেন মেয়ে বিয়ে দেবে?
- কেন দিবে না?
- কিন্তু আমিতো ব্যাচেলর।
রিফাত এবং রাজু দু'জনেই একটু ধাঁধাঁয় পড়ে- তুই কি বিয়ে করার আগে আরেকটা বিয়ে করতে চাস নাকি?
- না, কথা সেইটা না।
- তাইলে?
- ধর আমার বোনের বিয়ের ব্যাপারে নিশ্চই আমি কোন চোরকে নির্বাচন করব না, ঠিক?
- তা তো ঠিকই।
- তাহলে তারা আমাকে নির্বাচন করছে কেন?
রাজু আর রিফাত আবারও ধাধায় পড়ে- তুইতো আর চোর না।
- আহা কথা সেটা না, কথা হচ্ছে আমি চোরকে কেন নির্বাচন করব না?
- কেন?
- সোজা উত্তর, কারন আমি চোরকে পছন্দ করি না, চোরকে পছন্দ করি না কারন চোর অন্যের ধন চুরি করে, মিথ্যা কথা বলে....
- তুইতো আর অন্যের ধন চুরি করিস না.....
- আহ তুই বার বার পয়েন্টটা মিস করছিস, ধন চুরি করাটা পয়েন্ট না, পয়েন্ট হচ্ছে পছন্দ করা আর পছন্দ না করা। কেউ কেউ চুরি করা পছন্দ করতেও পারে।
- তোর কথা কিছুই বুঝতে পারতেছিনা, খোলাসা কইরা বল।
- আচ্ছা খোলাসা করেই বলছি। আমরা পাশ করে বেরিয়েছি কত দিন হল?
- দেড় বছরের মত হবে।
- এই দেড় বছরে সবচেয়ে কঠিন কাজ কি ছিল?
- চাকরী জোগার করা...
- হ'ল না, পাশ যখন করেছি চাকরী দু'দিন আগে পরে পেতামই
- তাহলে... বাসা ভাড়া নেয়া...
- একজাক্টলী। যেখানেই বাসা ভাড়া নিতে গেছি সবজায়গাতেই প্রথম প্রশ্ন- ব্যাচেলর? আমরা যখনই উপরে নীচে মাথা নাড়িয়েছি তখনই জানিয়ে দেয়া হয়েছে- ব্যাচেলর অপাঙ্কেয় হেথায়। বেশ কথা, না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু কথা হচ্ছে যার কাছে তুমি ন্যায্য ভাড়ায় বাড়ির একাংশ ভাড়া দিতে পার না তার কাছে গোটা মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে? তাহাতো হইতে পারে না। ব্যাচেলর হওয়া যদি অযোগ্যতা হয় তা হলে সেটাকে সবসময়ই অযোগ্যতা হিসাবেই ধরতে হবে, নিজের ইচ্ছেমত একই গুনকে কখনো দোষ কখনো গুন হিসাবে বিবেচনা করা চলবে না। ব্যাচেলর যদি তোমার এতই অপছন্দ হয় তাহলে তোমার উচিৎ হবু জামাইকে প্রথমে বিয়ে করিয়ে তাকে দিয়ে কয়েক বছর সংসার করিয়ে তাকে পূতঃ পবিত্র ক'রে তারপর তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া। ঠিক কিনা?
- তুইতো আর ওই বাসায় ভাড়া নিতে যাস নাই। তারা হয়ত দিত।
- শোন মানস সরোবরের পানি আর বুড়িগঙ্গার পানি সব একই পানি, সবই H-2-O.
- এইসব ফাও প্যাচাল বাদ দে, বিয়ে করবি কিনা তাই বল?
- করব, নিশ্চই করব। কিন্তু ঢাকা শহরের কোন বাড়িওলার মেয়েকে না॥

এরপর শফি ঠিক কাকে বিয়ে করেছিল কিংবা আদৌ করেছিল কিনা জানা নাই।

[এই গল্পিকায়(উদাহরণ- নাটক->নাটিকা) লেখক সম্ভবত সচেতনভাবে বাড়িওয়ালাদের খোঁচা দিবার চেষ্টা চালাইয়াছেন। আমরা এ ব্যাপারে লেখককেই দায়ী করিব। কিন্তু লেখক দুঃখ প্রকাশ করিবেন কিনা আমি নিশ্চিত নহি। শুনিতে পাই লেখক বাড়ী ভাড়া করিবার অভিলাষে সম্প্রতি এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করিয়াছেন, বলা বাহুল্য লেখক ব্যাচেলর এবং তাহার অভিজ্ঞতা সুখকর হয় নাই। আমি যতদূর জানি, লেখকের সত্ত্বর বিবাহ করিবারও কোন পরিকল্পনা নাই, কাজেই আমরা আশা করিতে পারি তাহার দুর্দিন চলিতে থাকিবে এবং ব্যাটা খোঁচা দিবার উপযুক্ত শাস্তি পাইবে। লেখক বাংলা বানানে অত্যন্ত কাঁচা, এইজন্য দুঃখ প্রকাশ করিতে তাহার কোন লজ্জ্বা নাই বলিয়া শুনিয়াছি।]


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঘটনাটিকা বেশ উপাদেয় হৈছে।
আপনাকে খালাতোবোনদায়গ্রস্ততা থেকে উদ্ধার করিতে এই আদম তথা অধম সর্বদা প্রস্তুত আছে। কবুল কমু?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ফাজলামো লেখাটি ভালো হয়েছে। মাঝে মাঝে এরকম ফাজলামো লেখা চাই। ...

(বিপ্লব) @ ধুসর গোধূলি।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

আমি দায়গ্রস্ত নাতো। আর আপনি ব্যাচেলর হইয়া কিভাবে বিবাহ করতে চান?

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

শেখ জলিল এর ছবি

হাহাহা। বাড়িওয়ালাদের ব্যাচেলর সমস্যা!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হুম
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

সবাইকে ধন্যবাদ।
ব্যাচেলরের দুঃখ কি আর আপনারা বুঝবেন? যদি ব্যাচের হইয়া জন্মাইতেন আর ঢাকা শহরে থাকতে হইত তাইলে বুঝতেন :D।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

রিম সাবরিনা এর ছবি

গাদাখানেক সিরিয়াস লেখার মাঝে এই লেখাটা পড়ে মজা পেলাম। এরকম এক আধটা উড়াধুড়া লেখা চলতে থাকলে ভালও হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।