আমি এক রাজাকার বলছি-

এহেছান লেনিন এর ছবি
লিখেছেন এহেছান লেনিন (তারিখ: রবি, ১১/১১/২০০৭ - ১১:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি এক রাজাকার বলছি-

১.
একটু ভাবুন-
আমাদের সবার হাতে একটা করে চুড়ি! ফখরুদ্দীন থেকে ইয়াজউদ্দিন , এমনকি গলির ন্যাংটা ছেলেটা সেও একটা চুড়ি পড়ে আছে। তার মা তাকে এই চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সে ওটা নিয়েই ঘুরে বেড়ায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে ১৫ কোটি চুড়ি একদিনে বিক্রি হয়ে যাওয়া উচিত। চুড়ি বিক্রেতারাও চুড়ি পড়ে করছেন বিক্রি। দাম রাখছেন একদম কম। দুইটাকার জিনিস দুই টাকাই।

এবার ভাবুন-
কারা বাদ পড়েছেন। একজনও না। একজনও বাদ পড়ার কথা নয়।

এবার বলছি আসল কথা- চুড়ি পড়ার শান-এ-নযুল। আরবি শব্দ। এটা দিয়ে লেখাটাকে পবিত্র করলাম। আসলেকি তাই! বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধানে একটা শব্দ আছে। অবশ্য সেটা অনেকদিন আগের অভিধান। ‌‌রাজাকার- মানে স্বেচ্ছাসেবক। আরও অনেকগুলো অর্থই আছে। তবুও এই স্বেচ্ছা সেবকদের জন্যই আমাদের এই চুড়ি পড়া। মুক্তিযোদ্ধারাও তো স্বেচ্ছাসেবকই ছিল। তারাও তো দেশের স্বার্থেই গণ্ডগোল (যুদ্ধ) করেছে। গণ্ডগোল শব্দটা এখন আমি সমর্থন করি। সমর্থন করতে বাধ্য। দেশে যখন যুদ্ধাপরাধী নেই তো দেশে কোনোদিন যুদ্ধ হয়েছে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

তবে আমাদের চুড়ি পড়ার কারণ, যে দেশে কখনো যুদ্ধ হয়নি, সে দেশে যুদ্ধাপরাধী থাকবে এটা কেমন কথা। ওই বাইনচোত(অত্যন্ত সম্মাণ নিয়ে বলছি) এটা কি বললেন। সবাই চুড়ি পড়ছে ওই কথার প্রতিবাদ জানাতেই। ওসব যুদ্ধাপরাধী সংক্রান্ত কথা বলার জন্যই।

আমি এখন একটা চুড়ি পড়ি। না স্টাইল-ফিস্টাইল নয়- লজ্জায়। সত্যি বলছি- কেউ যদি চেক করতে চান, দেখে যেতে পারেন।

২.
গণতন্ত্র এখন পাগলা জগাইদের খপ্পরে! ওসব তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে সবাই পেচাল পাড়ে। আর যারা আত্মত্যাগ করে তাদের একটি দিনের জন্য লাশ থেকে বানিয়ে ফেলি পোস্টার। এই আমাদের চরিত্র।

ঝিনুক থেকে স্ফুটনিক সর্বত্র এখর রাজনীতি। রাজনীতিকরা আমাদের বাপ-আমার দাদা। তাদের কথা শুনবো না তো কার কথা শুনবো। ওদেরকে তো আর শালা বলে গালি দিতে পারি না, জলপাই রঙের পোষাক এখন আমাদের চরিত্র ঢেকে দিয়েছি।

পিয়াল ভাইয়ের এই লেখাটা পড়তে গিয়ে একটা কথা মনে পড়লো। অবশ্য সেটা কিছুদিন আগের। আলী মুজাহিদ নামক এক কুলাঙ্গারের কথা। এই বিষয়টা নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে, হয়েছে বাক যুদ্ধ।

সেদিন আমার এক বন্ধু, কাজ করে ফ্লোরা টেলিকমে। স্মৃতি নাম তার। বললো - এখন যদি আবার আরেকটি যুদ্ধ হয় নিশ্চিন্ত তোরা সবা রাজাকার হবি। প্রগতিতে এখন আর গতি নেই। সৃষ্টিশীলতায় এখন আর শালিনতা নেই। তোরা কেন সেদিন ওই বদজ্জাৎটাকে টুটি চেপে ধরতে পারলি না।

সত্যি, খুব অসহায় মনেহচ্ছিল! একটা মেয়ে যদি এ ধরনের সাহসিকতার কথা এখনো বলতে পারে, এখনও যদি সে টুটি চেপে ধরতে চায়, আমাদের কি করা উচিত?

৩.
আমি টুটি চেপে ধরতে পারিনি। তাই একটা চুড়ি হাতে দিয়ে ঘুরি। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলি- এটা লজ্জার, এটা অপমানের, এটা প্রতিনিয়ত আমি রাজাকার হয়ে উঠছি তার-ই সিমটম!

৪.
ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে করতে হাতে কালার ব্যান্ড পড়ার একটা প্রচলন শুরু হয় ক'বছর আগে। সে হিসেবে বাংলাদেশেও যদি যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অভিপ্রায়ে এমন ব্যবস্থা চালু করা যেত! যারা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি চান, যারা তাদের টুটি চেপে ধরতে চান, তাদের জন্যই হবে- লাল আর সবুজের ব্যান্ড।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

৯৮ সালে রংপুরের দেবীচৌধুরাণীতে ওমর আলী নামের ছোটখাট এক মানুষরে সাথে পরিচয় হয়েছি। দেখলে মনে হয় কোনো টোকাইও যদি তাকে ধমক দেয় তবে তিনি দৌড়ৈ পালাবেন। কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে শুনলাম তিনি ছিলেন এক দুধর্ষ মুক্তি যোদ্ধা এবং তার চেয়ে বড়ো হলো দুর্দান্ত দূরদৃষ্টির মালিক। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি নাকি জানুয়ারিতেই টের পেয়ে যান যে রাজাকারদের বিচার হবে না। তিনি তার যোদ্ধা এবং গ্রামের লোকজনকে আদেশ করেন যে যেখানে যত রাজাকার পাও তার একটা করে কান কেটে দাও। এরা এই দেশে থাকলে একটা কান নিয়েই থাকবে। আর দূর থেকে সবাই তাদেরকে চিনবে

আমি এরকম কানকাট দুতিনজনকে দেখেছিও সেদিন

তখন যদি আমাদের সবার ওমর আলীর মতো দুরদৃষ্টি থাকতো তাহলে চুড়ি পরে নিজেদের চিহ্নিত করতে হতো না। কাটা কান দেখে রাজাকারদেরকেই সবাই চিনতে পারতো

ওমর আলী এখন আছেন কি না আমি জানি না। কিন্তু তাকে স্যালুট

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ওমর আলীকে স্যলুট!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

স্যালুট

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রথমটা লিখেছে লেনিন
আর ওমর আলীর কথা লিখেছে লীলেন

নো প্রব্লেম
ওমর আলীদের সালাম দিতে হলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হয় না
যে যেখানে আছে সেখানে দাঁড়িয়েই কপালে হাত ঠেকিয়ে সালাম করা যায়

আমি তাকে আবারও সবার পক্ষে স্যালুট করছি এই দশ বছর পর

বিপ্লব রহমান এর ছবি

. শাবাশ ওমর আলী!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

এহেছান লেনিন এর ছবি

মাহবুব লীলেন ভাই এর মন্তব্যটা পড়ার পর দুচোখ বন্ধ করে একটু কল্পনা করে নিলাম, কেমন লাগতো আসলেই যদি ওমর আলীর কথার বাস্তবায়নটা আমরা করতে পারতাম!

ইস... কান কাটা মজিদ, কান কাটা আযম, কি সুন্দর। আমাদের সংসদ ভবনের চেয়ারগুলোতেও কেউ কেউ বসে আছেন কানহীন। ইস..। অসাধারণ।

তবে এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে- আচ্ছা ওদের কান যেহেতু কাটতে পারছি না, সো আমাদের কানই যদি কেটে ফেলতে পারতাম। দু'একজন থাকতো দু কান ওয়ালা। বাকিদের থাকবে এক কান। বিবর্তনের সূত্র অনুযায়ী দু কান ওয়ালাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হবে দু কান ওয়ালা (আমরা তাদের চিহ্নিত করবো রাজাকার প্রজন্ম)। আর যাদের কান থাকবে তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের।

ইস.. এমন কি করা যায় না।

ধন্যবাদ লীলেন ভাই। ওমর আলীর নাম শুনেছিলাম অনেক আগে। আমার ... এর বাবার কাছে। এবার শুনলাম আপনার কাছে।

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

সাপ্তাহিক বিচিত্রার ৮০-৮১ সালের একটি সংখ্যায় জানা যায় জামাত-ই ইসলামী রাজনীতির ছাড়পত্র পাবার পর তাদের অনেক কানকাটা কর্মীকে বিদেশ থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এনেছে


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

এম. এম. আর. জালাল এর ছবি

আমি টুটি চেপে ধরতে পারিনি। তাই একটা চুড়ি হাতে দিয়ে ঘুরি। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলি- এটা লজ্জার, এটা অপমানের, এটা প্রতিনিয়ত আমি রাজাকার হয়ে উঠছি তার-ই সিমটম!

আপনারা সবাই এতো সুন্দর করে লিখেন কিভাবে?

====
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"


এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অথবা সংশপ্তকের হুরমতীর মতো কপালে ছ্যাকা ।
দেখবেন রাজাকাররা আমাদের নাটক,কবিতাকে আক্রমন কারন আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এদের চিহ্নিত করে । এরা মিশে যেতে চায় ।
প্রাসংগিক একটা লেখা এখানে
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরশাদ রহমান এর ছবি

রাজাকার গুলোর স্পর্ধা দেখে নিজেকে খুব ছোট মন হয়।

বিবাগিনী এর ছবি

হাসান ভাইয়ের ওষুধ টা আমার মনে ধরেছে।আমার আঞ্চলিক ভাষায় (খাস ঢাকাইয়া) কিছু গালি মনে আসছে।এদের নোলা আজকাল খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে।আমি বেশি কিছু করতে পারিনি।একবার শুধু আমার চির ডানপিটে মুক্তিযোদ্ধা চাচার নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জের এক আল বদর এর উচ্ছিষ্টর বাড়িতে ময়লার স্তুপ জড়ো করে নাকাল করেছিলাম পিচ্চিগুলা মিলে।উফ‌‌ এত মজা আর কোনদিন কিছুতেই পাইনি!সবগুলারে মাছ মারার টেঁটা দিয়ে খুচাইয়া মারা উচিত।

::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

নাশতারান এর ছবি

শ্রদ্ধা

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সংসপ্তক এর ছবি

ওমর আলির কাজ কমপ্লিট করতে হবে। কান কাটার প্লাস্টিক সার্জারি আছে, একেবারে মাথা কেটে দিতে হবে।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।