তোরা সব বোকার দল, মরবি না তো কে মরবে

এহেছান লেনিন এর ছবি
লিখেছেন এহেছান লেনিন (তারিখ: শনি, ১৭/১১/২০০৭ - ২:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সিডর: তোরা সব বোকার দল, মরবি না তো কে মরবে

[দুঃখিত : সঞ্জিবের মৃতু্যর খবরটা সত্যি নয়। তিনি কোমায় আছেন। তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।]

কথা ছিল অনেক কিছুই! তবে কখনো কথা ছিল না সংবাদপত্রের কনিষ্ঠ কেরানি হয়ে জীবন যুদ্ধ শুরু করবো। কথা ছিল না এত এত মৃত্যুর খবর নিয়ে হাসি মুখে বলে উঠি ‘তোরা সব বোকার দল, মরবি না তো কে মরবে’। আশ্চার্য্য নিজের মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই না, এতোটা আবেগহীন এই আমি- ভাবতে অবাক লাগে।

“গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া। পটুয়াখালীর আফজাল স্ত্রী, পুত্র নিয়ে তখনো ঘরেই। নিরাপদে যাওয়া তখনো তার হয়নি। জোরদার হচ্ছে ঝড়ের এর বেগ। ভাবলেন- ঘরে থাকা আর নিরাপদ নয়। ছুটলেন আশ্রয়ের খোঁজে। আফজালের কোলে ১২ বছরের কন্যা মুক্তা আর মা জাহানুরের সাত বছরের ছেলে মিরাজ। শো শো শব্দে ধেয়ে আসছে ঝড়। সঙ্গে পায়রা নদীর বেড়িবাধ উপচে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। মুহূর্তেই সর্বগ্রাসী ঢলের পানি গ্রাস করলো ওদের। আফজাল শুধু স্ত্রী জাহানুরের আর্তচিৎকার শুনলেন। চোখের সামনে দিয়ে ভেসে গেল স্ত্রী-সন্তান। বাঁচলেন নিজে।”

তোরা সব বোকার দল, তোরাই তো মরবি। আধুনিক এই বিশ্বে তোদের গালি দেবে ‘বোকার দল’ বলেই। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে হাতরিয়ে বেড়াবি কিছু ত।

কথা ছিল অনেক কিছুই! কাস ফাইভে যখন পড়ি তখন স্বপ্নগুলো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতো আকাশে। পাইলট হবো এমনই খায়েস ছিল তখন। তারপর নাইনে রাজনীতিক, টেনে ডাক্তার, কলেজে ভর্তি হয়ে সেটা ঘুরে গেল প্রকৌশলমুখী। হতে পারিনি। হয়েছি সংবাদপত্রের কনিষ্ঠ এক কর্মী।

এক স্টেশনের টিকিট কেটে অন্য স্টেশনে নেমে গেছি বহুবার। বহুমাত্রিক গমনে একমাত্রিক ভাবনা কখনোই ছিল না নিজের মধ্যে। তাই ঠকেছি বারবার। ঠকিয়েছে নিজের স্বত্ত্বাকে। আধুনিকতাকে সাঙ্গ করে ছেটেছি আদর্শ। ছেটেছি স্বপ্নগুলো।

কলেজ শেষ করে ভার্সিটি ভর্তির আগে হঠাৎ খায়েস ‘ক্রিকেটার হবো’। তখন ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতাম কুমিল্লায়। উইকেট কিপার। জীবনে হাজারো বল আটকিয়েছি বাউন্ডারি হওয়ার হাত থেকে, অথচ এখন নিজেই বাউন্ডারির বাইরে। বাউণ্ডুলে। প্রেমিকা বলেন আর বউ বলেন সবাই বলে ‘তুই আস্ত একটা বাউণ্ডুলে’। সংবাদপত্রের আধুনিক বার্তা সম্পাদকরা বলেন- ‘তুমি বড্ড অস্থির, তোমার দ্বারা কিছু হবে না’। একটু প্রতিবাদ করলেই তাদের কড়া দৃষ্টি। বলেন- ‘ছেলেটা বড্ড বেয়াদব’। আমি আমার বিশেষণগুলো এক এক করে জুড়ে দেই নিজের নামের সঙ্গে। এক একটা সংবাদ প্রস্তুত করে দিই ওদের মনের মতো করে, দু’একটা বানান হয়তো ভুল হয়ে যায় মাঝে মাঝে। আমি ধরিয়ে দিলেই কেবল ধরা পড়ে তাদের চোখে, নইলে না।

মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে- মরেছে ওমুক, মরেছে তমুক। শুধু মরি না আমি। আমি বড্ড বেহায়া। এই পৃথিবীর মায়া আমি ছাড়তে পারিনি। বেঁচে থাকি সংবাদপত্রের কোনো কনিষ্ঠ কেরানি হয়ে।

ডেস্ক ভরে উঠে মৃতের খবরে। আমি হাঁসি মুখে বলে উঠি- ‘তোরা সব বোকার দল’। ওপার থেকে শব্দ করে কেউ একজন বলে উঠে- ‘বরগুনায় আরও সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে- সাতীরায় ছয়, ওদের সংখ্যাটা যোগ করে দাও তো’। আমি ভাবি- ‘ওরা এখন সংখ্যা, ওরা এখন অঙ্ক।” বলি নামটা দিলে হয় না- ওপার থেকে আবারো বলে উঠে - ‘কি দরকার, স্পেস বেশি খাবে’। আমি ভাবি- ছোট্ট দুটো অরের ওদের নামগুলো এতটাই বর্জ্য। পৃথিবীর কত বড় স্পেস ছেড়ে দিল, অথচ পেল না সংবাদপত্রের ছোট্ট দু অরের স্পেস। এই আমাদের আধুনিকতা। এই আমাদের মতবাদ।

তুমি কি মরেছ, মরোনি এখনও। সঞ্জিব চৌধুরী। একজন সাংবাদিক, একজন গায়ক। বার্তা সম্পাদক জিজ্ঞেস করে পারলে এমন করেই। এই মাত্র মরেছে সঞ্জিব, পত্রিকার লিডটা চেঞ্জ করে দাও- ‘সঞ্জিব আর নেই’। সঞ্জিব তুমি এখন কোনো ওয়েবের ব্যানার হেডিং। তুমিও তো স্পেস। কত মানুষ এতটুকু জায়গাও পায়নি কখনো। দু অক্ষরের স্পেস। লাল দাগে বড় বড় অর তুমি নেই। তুমি মৃত। তুমি এখন ব্যানার স্পেস।

তবে শেষমেষ খবর সঞ্জিব এখনো বেঁচে আছে। বার্তা সম্পাদককে লোভনীয় কোনো সংবাদ থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিরত থাকতে হবে। মনে মনে খায়েস : সঞ্জিব তুমি মরলে কি হতো।

আর আমি মনে মনে বলি দলছুটের সঞ্জিব, তুমি বেঁচে উঠো। বেঁচে উঠে এসব মিথ্যে প্রমাণ করো।

এহেছান লেনিন, সহ-সম্পাদক, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দলছুটের সঞ্জীব?? কিভাবে মারা গেলেন?

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

নিঘাত তিথি এর ছবি

সঞ্জীব চৌধুরী? কিভাবে?? কিছুই তো জানি না...!!!
কোমায় আছেন? খোদা, যেন বেঁচে থাকেন, যেন বেঁচে থাকেন...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুজিব মেহদী এর ছবি

সামহ্যোয়ারে ইতোমধ্যেই এরকম কয়েকটি পোস্ট এসেছে যে সঞ্জীব চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি না মারা যান, কোমা থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে উঠুন। আমিন।

...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শেখ জলিল এর ছবি

সঞ্জীব চৌধুরী বেঁচে উঠুক।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

এহেছান লেনিন এর ছবি

সঞ্জীব চৌধুরীর জীবন সংকটাপন্ন। রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালে তাকে নিউরোলজি বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে সংকটাপন্ন অবস্থায় সঞ্জীব চৌধুরীকে অ্যাপেলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আলীম আখতার ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে আছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মতিষ্কে রক্তরণ হলে শুক্রবার সঞ্জীবকে প্রথমে মিরপুর আল হেলাল হার্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে অ্যাপেলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি বলেছেন, ‘‘তাকে লাইফ সার্পোট দিয়ে রাখা হয়েছে। ৩/৪ দিনের আগে তার অবস্থা সর্ম্পকে কিছু বলা যাবে না। আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। চেষ্টাও করছি। তার মতিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি এখন অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। আপনারা দোয়া করুন।’’

সঞ্জীব চৌধুরী সর্বশেষ যায়যায়দিন পত্রিকার ফিচার এডিটর ছিলেন। তিনি আরেক শিল্পী বাপ্পা মজুমদারকে নিয়ে ‘দল ছুট’ সঙ্গীত দল গঠন করেন।

*******************************************
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

হিমু এর ছবি

সুস্থ হয়ে উঠুন সঞ্জীব।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি বড়বেশী স্তব্দ হয়ে আছি । গত একটা বছরে এতোটা কাছের মানুষজন হারাতে হলো ।
মউজদিন ভাইয়ের শোক সামলানোর আগেই সঞ্জীব'দা ।

-----------------------------------------
'জলপ্রিয় হে যুবক, তোমার ভিতরে এত
ভাঙনের পতনের শব্দ শুনি কেন!'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জুয়েল বিন জহির এর ছবি

সঞ্জীব চৌধুরীর জন্য শুভকামনা-তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।

অমিত আহমেদ এর ছবি

সঞ্জীব'দার ব্যাপারটা আমি ঠিক ডাইজেস্ট করতে পারছি না! মনে হচ্ছে অন্য কারো কথা পড়ছি। এত প্রানবন্ত একজন মানুষ। একদিকে আড্ডা হচ্ছে অন্যদিকে উনি চুপচাপ অন্যমনস্ক বসে আছেন। মনে হবে উনার কানে কিচ্ছু যাচ্ছে না। হঠাৎ হুট করে একটা কথা বলবেন আর পুরো আড্ডার স্রোত এক নিমিষে উলটো বইবে।

উনি সুস্থ হবেন।
হবেন।


ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সঞ্জীব ভালো হয়ে উঠুন।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সঞ্জীব দা বোধ হয় এখন এইসব আলোচনার উপরে উঠে গেছেন

এহেছান লেনিন এর ছবি

সঞ্জিব দা দু-একদিনের মধ্যেই স্পেস হয়ে যাক পত্রিকার- এমন আমরা চাই না।
তিনি জেগে উঠবেন, ঘুমিয়েছেন কিছুক্ষণের জন্য। মাথায় যন্ত্রণা হয়তো হয়েছে।
আমরা সেই অপেক্ষায়।
**********************************************
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।