বাতিক সমাচার

বিবাগিনী এর ছবি
লিখেছেন বিবাগিনী (তারিখ: রবি, ২১/১০/২০০৭ - ৫:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যদিও লিখে পাতার পর পাতা ভরাতে খুব ভাললাগে আজীবন,লেখা শেষ করার পর নিজের লেখা পড়লেই আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া সবসময় হয়,"শুধু শুধু কাগজ নষ্ট"।আর অন্য কাউকে দেখাই না পাবনায় বিনামূল্যে রপ্তানী হয়ে যাবার ভয়ে।সচলায়তনে কাগজের বালাই নেই।আমার নিরস্তিত্ব টিকিটাও এইখানে কেউ নাগাল পাবে না। তাই পাগলাগারদ এ চালান হবার ভয় নেই।তবে আমি নিজেও বুঝে পাইনা লিখতে গেলে এই সব বিদঘুটে বিষয় মাথায় কেন ঘুরে।এই যেমন এখন বারবার মগজে লেফট রাইট করছে আমার আশে পাশে কার কি বাতিক আছে সেই কাহিনী।

বাতিক বা বদভ্যাস অনেকেরই তো কম বেশি থাকে। আমার নিজেরই আছে খানতিনেক।আমি দাঁত দিয়ে নখ কাটি।আমি ঠোঁট চিবাই।আর অবচেতনে নিজের চুল একটা একটা করে ছিড়ি।দাঁত দিয়ে নখ অবশ্য অনেকেই কাটে।উত্তেজনার মধ্যে থাকলে আমি হাভাতের মত কাটতে থাকি দাঁতে নখ।পরে নখের ব্যাথায় কাতর হই।বাবা রাগ করে বলতেন আগে,"মা খাইতে দেয়না?"আমি একটু হেহে করে সরে পড়তাম সামনে থেকে তারপর দ্বিগুণ উৎসাহে নিজের কাজে ফিরে যেতাম।কি যে মজা আল্লাহ জানে।আমার ৮ বছর বয়সী ভাই আমার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই অভ্যাসটা পেয়েছে।বাবা দেখি ওকেও একই বকা দেন।সেও ঠিক আমি যা করতাম তাই করে।আমি আসলেই ভেবে পাইনা এর কারণ কি।দুশ্চিন্তায় থাকলে আমি যেটা করি তা হল অবচেতনে নিজের চুল একটা একটা করে ছিড়ি।এতদিনে আমার মাথার আগাছা মার্কা "সন্ন্যাসী কাট" মারা ঝোপঝাঁড়টা সাফ হয়নি কেন তাই ভাবি।আর ঠোঁট চিবানো দেখলে আমাকে যে কেউ ক্যানিবাল ভাবতে বাধ্য!

আমার ছোটো মামার বাতিক হল আঙ্গুল মটকানো।এটাকে তিনি শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।হাত এর কোন আঙ্গুল কত ডিগ্রী কোণে কিভাবে চাপ বা টান দিলে টুস টাস করে পপকর্নের মত ফুটবে এই বিষয়ে তিনি রীতিমতো একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করতে পারবেন।আমাদের বুয়েট কোয়ার্টারের এক দারোয়ান ভাই নাকি এই বিষয়ে আরেক কাঠি উপরে।আমার ছোটো ভাই বলল একদিন যে তিনি নাকি বিচিত্র উপায়ে ঘাড় গলা আর কোমর ফুটানোর ফরমায়েশি সার্কাস দেখান পাড়ার পিচ্চিদের।আমি শুধু ভাইয়া কে মুখ তেড়া করে বললাম খবরদার নিজে ওইগুলা করবিনা।ভাইয়া একটা বিপজ্জনক নির্বিকার হাসি দিয়ে ভাগল। আমি বুঝলাম পাগল কে আমি সাঁকো নাড়াতে মানা করলাম।আমারই তো ভাই!

আমার মতে সবচেয়ে বিশ্রী আর বিদঘুটে বাতিক হল জনসমক্ষে নাসিকা গহবরে অঙ্গুলি সঞ্চালন।একেবারেই বিবমিষক যাকে বলে।একবার অনেক আগে টিভিতে প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী আলাউদ্দিন আল আজাদ একটা আলোচনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।নিজে যতক্ষণ বলছিলেন ততক্ষণ তো ভালই।কিন্তু বাকি পুরোটা সময় তিনি প্রবল বিক্রমে নাসিকা কোটরে এমন জোরদার অভিযান চালাচ্ছিলেন যে আমি ভাবছিলাম উনার চোখ দিয়ে না আঙ্গুল বের হয়ে আসে!আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষক ছিলেন (তিনি গত হয়েছেন।অনেক দোয়া তাঁর জন্য)যিনি অবশ্য এই ব্যাপারে একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলেন।নাসিকা কোটর অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত গুপ্তধন নিয়ে তিনি মহা উৎসাহে হ্যান্ডবল খেলতেন। এই নিয়ে মাশীদ আপু আর আমি কত যে হেসে খুন হয়েছি!

আরেকটি বাতিক আমি অনেকের মধ্যে দেখেছি।সেটি হল কর্ণ কোটর আন্দোলন।এরা সামনে যা পায় তাই কানে ঢুকিয়ে ঘুরানোর তালে থাকে।যেমন কলম,দেশলাই,টুথপিক ইত্যাদি। না পেলে কাগজ পাকিয়েও কাজ চলে। আর সঙ্গে চলে মুখ হা করে,চেহারা তেড়াবেড়া করে চোখ বুঁজে আরামের অনুভূতি প্রদর্শন।বাতিকের কথা বলতে গেলে যখন তখন বিভিন্ন জায়গায়-বেজায়গায় অবিরাম চুলকানোর কথা না বললেই নয়। হাত না পৌঁছালে এইসব কাজে "প্রপ" হিসাবে খুন্তি,রুলার ইত্যাদি ব্যবহার হয়।এমনকি এই বাতিকে আক্রান্ত লোকজনের সুবিধার্থে বাজারে এক ধরনের প্লাস্টিকের লাঠির আগায় থাবা টাইপ এর জিনিষ পাওয়া যায়!

বাতিকের কোন শেষ নাই!আমার মনে হয় বিদঘুটে সব ফালতু হাবিজাবি লেখাও একটা বাতিক,যাতে আমি করুণভাবে আক্রান্ত।ধুর এইবার থামি!


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

খুঁজতে গেলে তো দেখি অভ্যাসের চেয়ে বদভ্যাসই বেশী
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

হো হো হো চমৎকার লেখা... আপনাকে সাধুবাদ।
আমার বদঅভ্যাস আছে ঠোঁট কামড়ানোর। মাঝে মাঝেই ভাবি যথেষ্ঠ হয়েছে, আর না, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে যেই কে সেই!

প্রকাশ্যে নাখে কিংবা দাঁতের কোনা-কাঞ্চিতে আঙুল চালনার বদভ্যেস আমার কাছে অসহ্য লাগে!


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

বিবাগিনী এর ছবি

হাসান হেহ্ হেহ্ দেঁতো হাসি

অমিত, অসংখ্য ধন্যবাদ!!
আপনার আমার লেখা ভাললাগা মানে আপনিও আমার প্রজাতির!খাইছে
এখন যদি আমাকে এইসব হাবিজাবি লেখার জন্য কেউ পঁচায় তো সব দোষ আপনার।আপনি প্ররোচনা না দিলে লিখতাম না।

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

অমিত আহমেদ এর ছবি

পঁচাইলে দোষ আমার, আর ফুলাইলে গুন আপনার? এইটা কেমুন বিবেচনা? আচ্ছা তাও মাইনা নিলাম, কিন্তু পাঠককূল তো দেখি সবাই আপনের প্রশংসাই করতেছে, আমার ভাগে কম পইড়া গেল না? ইয়ে, মানে...


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখা পড়তে পড়তে আনমনেই সবগুলা 'বাতিক' একবার করে টেরাই মারলাম! কি সাংঘাতিক!

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তারেক এর ছবি

আমি ঠোঁট কামড়াই, নখ কামড়াই না। আর কথায় কথায় বলি, "তোর মাথা ফাটাই ফেলবো"- এইটাও বোধহয় বদ অভ্যাস হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতিথি লেখক এর ছবি

হা...হা...হা...দারুন লিখেছেন!

জুয়েল বিন জহির

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আর যারা কানের মধ্যে চশমার ডান্ডা দিয়ে চুলকায়, তারা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বেশি করে প্রশংসা দিলাম ।অমিত আর বিবাগিনী ভাগাভাগি করে নাও ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হ প্রশংসা। ভালো হৈছে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিঘাত তিথি এর ছবি

হা হা। বাতিকগ্রস্ত লেখাটা তো খুবই সুপাঠ্য হয়েছে দেখি। আমার প্রচুর বাতিক আমি বহুকষ্টে দূর করেছি, কিছু সময়ে আপনিই চলে গেছে। কিন্তু বীর বিক্রমে যেগুলো থেকে গেছে সেগুলো হচ্ছে, আঙুল চোষা এবং নখ কামড়ানো। আরও হয়ত আছে, টের পাই না।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

বিবাগিনী এর ছবি

ওরে,ওরে!সবাই দেখি আমার প্রজাতির!মাশীদ আপু আমাকে ভাল জায়গাতেই আনছে দেখি! দেঁতো হাসি
অজস্র হৃদয় মোচড়ানো ধন্যবাদ সবাইকে!!

অমিত,আমি কখন বললাম যে ফুলাইলে আমার?দোষের ভাগ নিতে যখন রাজি হলেন তখন গুণও আপনার।এমনকি আরিফের দেয়া পোঁটলাতে যা আছে পুরাটাই আপনার।(অনেক ধন্যবাদ আরিফ কে)অমিত সত্যি আপনি না বললে লিখতাম না এই সব হাবিজাবি পঁচা ডিম আর টমেটোর গুদাম খুলতে বাধ্য হবার ভয়ে।অনেক ধন্যবাদ। হাসি

কনফুসিয়াস,তারেক,তিথি হেহ্ হেহ্ লেখাটা আপনাদের বাতিক কে নাড়া দিয়েছে জেনে আমি খুব পুলকিত!
অনেক ধন্যবাদ!!

অমিত,তিথি,জুয়েল,তারেক,নজরুল,আরিফ,
প্রকৃতিপ্রেমিক (প্র-প্রে,আপনি ওইটা দিয়ে কান চুলকান?)আমার হাবিজাবি লেখাকে এত প্রশ্রয় দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর ২পাটি দাঁত বের করা এক গাল হাসি।লিখতে লিখতে ভরিয়ে ফেলব।আরিফ কে সচলায়তন ঝাড়ু দিতে হবে দুইবেলা!

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

সৌরভ এর ছবি

অসাধারণ!



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

বিবাগিনী এর ছবি

সৌরভ,অনেক অনেক ধন্যবাদ!আসলে আপনারা সবাই অসাধারণ!এইটাই আসল কথা

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চমৎকার সাবলীল লেখা। আরও চাই।...

(অফটপিক: প্রথম পাতায় একই লেখকের পর পর দুটি লেখা একটু দৃষ্টিকটু লাগে। এটি আমার ব্যাক্তিগত অভিমত।)


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। প্রথম প্রতিক্রিয়াঃ "ঘরের কথা পরে জানলো কেমনে?" বাতিকের তালিকাটা আর বড় করলাম না। অবিবাহিত যুবক, বিয়ে-শাদির ভয় আছে কিনা! আজকাল নাকি ফেসবুক-মাইস্পেস প্রোফাইলও যাচাই করে নেয় লোকে!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সবই তো বাতিক দেখি আমার।
মিলার মধ্যে মিলে, নখ দিয়ে নখ কাটা, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো। সেই গুপ্তধন 'থু' করে ফিচিক করে মারা। বড়ই খারাপ জিনিষ। মন খারাপ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

বিবাগিনী এর ছবি

বিপ্লব অনেক ধন্যবাদ। আমি ব্যাপারটা খেয়াল করব এখন থেকে। নতূন তো!একটু নিজ গুণে মার্জনা করে দিয়েন।

ধূসর গোধূলি হেহ্ হেহ্!

ইশতিয়াক,কার ঘর?কে কি জানল?
‌‌

::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ঘর আমার, কিন্তু ঘটি-বাটির খবর দেখি আপনি জানেন! আমি যা-কিছু খোঁচাই, গুতাই, চুষি, চাবাই, নাড়াই, গালাই, ইত্যাদির মোটামুটি একটা তালিকা দেখে বিপন্ন বোধ করছি। মনে হচ্ছিল এখন থেকে একটু সাবধান থাকতে হবে যাতে বাতিকগুলোর কথা কেউ জেনে না যায়। 'সংস্কার' যোগ করলে যে এই তালিকা কত বড় হবে আরো!!

মাশীদ এর ছবি

আরে জটিল!
এই রকম লেখাই তো চাই!
পঁচার হ্যান্ডবল খেলার কথা মনে করিয়ে দিলি। আহা! সেসময় ওনাকে নিয়ে ২৬ লাইনের একটা কবিতা লিখেছিলাম। সেটার কথাও মনে পড়ে গেল।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মাশীদ, তুই এই মহিলারে চিনোস?
তোর প্রতি সম্বোধন কি পাল্টানো লাগবেরে মামী শাশুড়ি? চোখ টিপি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মাশীদ এর ছবি

চিনি মানে?!?
এক্কেরে গ্যাঁদাকাল থেকে!
তয় আমাকে আমার নাম ছাড়া আর কোন কিছু তোর সম্বোধন করা হয় কি-না কে জানে! দিনকাল খুব খারাপ। বুকে পাথর বেঁধে রাখ। তোর কপালে যে কী আছে!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

বিবাগিনী এর ছবি

মাশীদ আপু অনেক অনেক ধন্যবাদ!তুমি ভাল বলা মানে অনেক কিছু।তুমিও এইটা জান।

অরূপ ভাইয়া আমি খুবই দুঃখিত। যথা আজ্ঞা।

হাসান ভাই,আপনাকে আমি আপনার জ্যেষ্ঠত্ব না বুঝে নাম ধরে বললেও আপনি অবশ্যই আপনার অবিসংবাদিত জায়গাতেই আছেন।তবু আমি খুবই দুঃখিত।আর ভুল হবে না।

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।