প্রবাসে একুশ

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন এলোমেলো ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২২/০২/২০১০ - ১:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রবাসে এবারই প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে গেলাম।মিলনায়তনের প্রবেশপথে ঝুলানো একুশের পোস্টার। বাংলাদেশের নানা বিখ্যাত স্থাপত্যের ছবি; পাশে ছোট্ট করে বর্ণনা। শিল্পমানের দিক থেকে তেমন কিছু না হলেও, বিদেশে নিজের দেশের সামান্য চিহ্নও বড্ড আপন লাগে।

যেতে একটু দেরী হয়েছিলো, যখন হলে ঢুকলাম ততক্ষণে অনুষ্ঠানের প্রায় অর্ধেকটা শেষ। প্রথমেই নজর কাড়ে মঞ্চের উপর বানানো শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। লাল সূর্যটা বানানো হয়েছে কেবল আলো দিয়ে।অদ্ভুত ভালো লাগে আমার । বাচ্চারা গাইছে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কী ভুলিতে পারি? " প্রবাসী শিশুদের মুখে আড়ষ্ঠ উচ্চারণের বাংলা গান শুনে আমার ভারী গর্ব হয়। বহুদিন পর একসাথে এত্ত বাংলা কথা শুনি; দেখি শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়া লোকজন। কয়েকজন আবার নিজেই টি-শার্টে বর্ণমালা লিখে নিয়েছে। সবার মাঝেই একুশের চেতনা। এর পর শুরু হয় বড়দের গান। স্থানীয় গায়ক-গায়িকারা একে একে গেয়ে চলেন নানা দেশাত্ম্রোধক গান। বাংলাদেশ থেকে শত হাজার মাইল দূরে বসে দেশের গান শুনতে শুনতে কী যে এক অনুভুতি আমায় পেয়ে বসে। আমিও গানের সাথে তাল মিলাই।

এরপর মঞ্চে উঠে আসেন এক গায়ক, পরণে তার পাকিস্তানের পতাকার রঙের ক্যাটক্যাটে সবুজ স্যুট। মাইক হাতে বলেন তিনি নিজে সুব করা ভিন্নধর্মী গান গাইবেন। প্রায় উর্দু গজলের সুরের সাথে তিনি গেয়ে চলেন “অমর একুশ জিন্দাবাদ”। জিন্দাবাদ শব্দটা বেশ জোরালো, কানে লাগে। আমি অবাক হয়ে যাই, ভাবি গায়ক হয়তো জাতীয়তাবাদি দলের সমর্থক।
এরপর মঞ্চে আসেন আরেক গায়িকা। অসাধারণ তার গলার কারুকাজ, প্রায় নিখুঁত গায়কী। গজলের সুরে বাংলা ভাষায় তিনি গেয়ে চলেন… “স্বাধীনতা তুমি করলে যে দেশকে দু’ভাগ… মধ্যে তার কাঁটাতার…/ স্বাধীনতা তোমার জন্য আমার সোনার দেশ হলো যে আজ বিদেশ বিভুঁই ।” আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। ক্ষোভে আমার হাত মুঠো হয়ে আসে। ইচ্ছে হয় তার মাইক্রোফোন কেড়েনি। আরো অবাক হয়ে যাই যখন দেখি গান শেষে দর্শক হাততালি দিচ্ছে। আমার বড্ড ঘেন্না হয়। ৩০ লক্ষ্য শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার এই অপমান আমি সহ্য করতে পারি না। রাগে, ঘৃণায় আমার কেবলই কান্না পায়।

অনুষ্ঠান শেষে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি এই গায়কের নাম কি? কিভাবে আয়োজকরা একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে এ ধরনের গান গাইতে দিল। সে আমাকে নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে বলে- “ তোমার এগুলো নিয়ে বেশি ঘাটাঁঘাটির দরকার নাই।"

রাত ১২ টায় শুরু হয় প্রভাতফেরী। জুতা খুলে হাতে শহীদ মিনার বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছোট বড় সকলে। মাইকে বাজতে থাকে “তুমি বাংলা ছাড়…”
আমার মনে প্রশ্ন জাগে বাংলা থেকে পাক হানাদারদের তাড়াতে পারলেও পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়া এই পাক-মন –পেয়ারুদের নিয়ে আমরা কী করবো?


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

গজলের সুরে বাংলা ভাষায় তিনি গেয়ে চলেন… “স্বাধীনতা তুমি করলে যে দেশকে দু’ভাগ… মধ্যে তার কাঁটাতার…/ স্বাধীনতা তোমার জন্য আমার সোনার দেশ হলো যে আজ বিদেশ বিভুঁই ।”

এটা কি একলব্যের সবুজ পাতার বাঁশী এলবামের "তোমার আছে তিতাস আর চুন্নি আছে আমার, স্বাধীনতা ভাঙলোরে দেশ মধ্যে কাঁটাতার" - এই গানটা?

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

গানটা আমার পরিচিত নয়। আপনার কাছে কি এর কোন লিঙ্ক আছে? আবার শুনলে হয়তো বলতে পারবো ।



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

অতিথি লেখক এর ছবি

দু:খজনক। মন খারাপ
দেশে এই পাকমনপেয়ারেরা ছাড় পেয়ে যায় কেবল বাহুবলে। মন খারাপ

- মুক্ত বয়ান

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

মন খারাপ

ধন্যবাদ মুক্ত বয়ান।



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ডালাসের অনুষ্ঠান - আয়োজক কি BANT ছিল?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিলো BANT ও ABBAC



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

আলমগীর এর ছবি

আমার ধারণা (ভুল হতে পারে) এসব অনুষ্ঠানের আয়োজকের সাধ্য থাকে সীমিত। ইচ্ছে করে তারা পাকিস্তানি সবুজ রঙের পোশাক পড়ান সেটা মনে হয় না। বা দেশবিভাগের গান যে উপলক্ষ্য সঠিক বুঝে গান, তাও না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব অনুষ্ঠান তারা করেন, প্রবাসে বসে শত প্রতিকূলতার মধ্যে সেটার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিতেই হয়।

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

অবশ্যই । পুরো অনুষ্ঠানে আয়াজকদের নিরলস প্রচেষ্টা চোখে পড়েছে। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে- বিশেষ করে বাচ্চাদের গানগুলো।
আর পোষাক যে কারো ব্যক্তিগত অভিরুচি। তবে সেদিন ডালাসে ঠিক স্যুট পরার মত ঠান্ডা ছিলো না। হাসি
ধন্যবাদ .



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সবুজ স্যুট পড়লে যদি পাকি হয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা। আর কি কি গান গেয়েছিল সেটা বললেন না যে? একটা গানেই অনুষ্ঠান শেষ?

অনুষ্ঠান শেষে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি এই গায়কের নাম কি? কিভাবে আয়োজকরা একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে এ ধরনের গান গাইতে দিল। সে আমাকে নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে বলে- “ তোমার এগুলো নিয়ে বেশি ঘাটাঁঘাটির দরকার নাই।"
বেশ নাটকীয়।

লেখার জন্য ধন্যবাদ, মনে হচ্ছে আপনি অহেতুক সন্দেহ করছেন (ধারনা ভুল হতে পারে)।

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

পোষাক যে কারো ব্যক্তিগত অভিরুচি। হয়তো একুশ জিন্দাবাদ শুনে আমি বায়াসড হয়ে গিয়েছিলাম।
আমিও চাই আমার সন্দেহ যেন ভুল হয় হাসি
ধন্যবাদ



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

লাবণ্য [অতিথি] এর ছবি

ছবি কিভাবে সংযোজন করতে হয়? আমি এই বাচ্চাদের গানের ছবি addকরতে চেষ্টা করে পারলাম না। prompt windowতে browse এর কোনো অপসন পেলাম না।

হিমু এর ছবি
লাবণ্য [অতিথি] এর ছবি

http://www.flickr.com/photos/23980645@N03/4380973534/

এমবেড করতেও জানি না (আমি খুব একটা টেকি না)। ছবিটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। লিংকটা দেখা যাবে নাকি জানি না।

হিমু এর ছবি

এমবেড করতে হলেঃ

১. ফ্লিকারে লগ-ইন করবেন।
২. ছবিটায় ক্লিক করে খুলবেন।
৩. ডানে এক কোণায় দেখবেন শেয়ার দিস।
৪. সেটাতে ক্লিক করলে পাবেন গ্র্যাব দিস এইচটিএমএল।
৫. ওখানে ক্লিক করলে একটা কোড পাবেন, সেটা কপি করবেন।
৬. পেস্ট করে দিলেই কাম শ্যাষ।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

লাব্ণয় এর ছবি

21_2

21

হিমু আপনাকে অনেক অনেক ধণ্যবাদ আমার মত একজন 'অচল'কে সাহায্য করার জন্য।

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

ছবির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বাচ্চাদের পরিবেশনা আসলেই দুর্দান্ত ছিলো হাসি



দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।