গরু

এনকিদু এর ছবি
লিখেছেন এনকিদু (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৭/২০০৯ - ৫:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টানা প্রায় দশদিন ধরে তারা হেঁটে চলেছে বিদঘুটে এক মরুময় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে । কে বলেছে মরুভূমি মানেই বালির সাগর । রোদে পুড়ে পাথরের মত শক্ত হয়ে যাওয়া মাটি, বালির সাগর সাহারা মরুভূমির থেকে কোন দিক থেকে কম না । মাটিতে ফাটল ধরেছে, কিন্তু ফেটে চৌচির হয়নি । মাটির দিকে তাকালে ফাটল ছাড়াও মাঝে মাঝে চোখে পড়ে মরা শুকনো ঘাস আর ছোট ছোট উদ্ভিদের দেহাবশেষ । কোন এক সময় এগুলো হয়তো ঝোপ-ঝাড় ছিল, কিন্তু এখন খরতাপে শুকিয়ে খড়ি হয়ে যাওয়া লাশ ছাড়া আর কিছু না । গ্রীষ্ম এদিকে এরকমই । প্রতি বছর গ্রীষ্মে এই বিশাল অঞ্চলটি পুরোপুরি ভাবে মরুভূমিতে পরিনত হয়, আবার সবুজে ভরে যায় বর্ষা এলে । কিন্তু অস্বাভাবিক এবছরে যেন পর পর দুটি গ্রীষ্মকাল পার করতে হচ্ছে । স্বাভাবিক বছর গুলোতে গ্রীষ্মের সময় যেখানে পানি থাকে স্বাভাবিক ভাবেই সেই সব পানির উৎস শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই । সপ্তাহ খানেক আগে ধারে-কাছের চেনা সব গুলো ছোটবড় পানির উৎস ঘুরে সেগুলোর শুকিয়ে পাথুরে মাটির বড় গামলায় পরিনত হওয়াটা নিশ্চিত হওয়ার পর তারা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল । তাদের চেনা জানা শেষ পানির উৎসটার, যা কিনা এখন এক বিরাট বড় শক্ত মাটির গামলা, কিনারে দাঁড়িয়ে তারা যখন মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে - এমন সময় ধীরে সুস্থে হেঁটে আধা সন্ন্যাসী বুড়োটা এসে তাদের মাঝে দাঁড়াল ।

---

একটা ন্যাড়া বাওবাব গাছের শেকড়ের উপর বসে থাকা লোকটির চোখে পড়ল দিগন্তের কাছে কয়েকটি ধীরে চলমান আবয়ব । ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকা মূর্তী গুলো অল্প অল্প কাঁপছে । মাটির কাছা কাছি বায়ু স্তর উত্তপ্ত হওয়ায় তার ঘনত্ব কমে যায় । মাটি থেকে ক্রমশ উপরের দিকে বায়ু স্তরের তাপমাত্রা কমতে থাকে, সেই সাথে ঘনত্বও বাড়ে । ক্রমপরিবর্তনশীল ঘনত্বের বায়ুর স্তর ভেদ করে আসতে আসতে আলোর প্রতিসরণের ফলে এই দৃষ্টি বিভ্রমটা তৈরী হয় । তাপমাত্রার হেরফের আরেকটু বেশি হলেই মরিচীকা তৈরী হয়ে যাবে ।

বসে থাকা লোকটির চোখে রোদ পড়ছিল তাই দেখার সুবিধার জন্য ভ্রু'র উপর হাত ঠেকিয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করে দেয় সামনে । প্রায় দশ জনের দলটা, চলার ভঙ্গী দেখেই বোঝা যায় তারা এসেছে দূর থেকে, যাবেও অনেক দূরে । তার মতই ওরাও আধা যাযাবর । এক জনের পেছনে একজন করে লম্বা সারি বেঁধে এগিয়ে আসছে । জন্মের সময় পাওয়া কাল চামড়াটা ছাড়া আর কিছুই নেই গায়ে । অবশ্য লালচে মাটি আর ধুলো লেগে চামড়া এখন ঠিক পুরোপুরি কাল নেই, মেটে রঙের হয়ে গেছে । দলে দুইজন আবার শিশু আর সবার সামনে এক বৃদ্ধ ।

---

এরা এক রকম যাযাবর জীবন যাপন করে । কাচ্চা বাচ্চা সব সহ দলটা সারা বছর ধরেই এদিকে সেদিক ঘুরে ফিরে খায় দায় । আসলে পুরো দলটাই একটা পরিবার, তাতে এই মুহূর্তে চার প্রজন্ম রয়েছে । মাঝে মাঝে বিশ্রামের নাম করে মাটিতে গড়িয়ে ছোট খাট গাছ গুলোর দফা রফা করে । তেষ্টা না পেলেও মাঝে মাঝে পানির আশে পাশে যায়, পানি ঘোলা করে সমস্ত জীবের বিরক্তির উদ্রেক করে । এই দলটা যেখানেই যায়, তাদের পেছনে ধীরে ধীরে এই আধা সন্ন্যাসী বুড়োটাও চলে আসে । আর সবাই যেখানে ঘাঁটি গাড়ে তার আশে পাশেই থাকেন, কিন্তু ঠিক দলের মধ্যে না । মধ্যবয়সী এক নারী আছেন এদের দলে, আপাতত তাকে আমরা নানি ডাকতে পারি, তাকেই সাধারন ভাবে সবাই নেতা মানে ।

তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন । চেনা জানার মধ্যে শেষ পানির উৎস সেই ডোবাটার, এখন যেটা একটা গামলা, পাশে দাঁড়িয়ে যখন সবাই হতাশায় ভেঙ্গে পড়ল - তখন থেকেই বুড়োটা এসে নেতৃত্ব নিয়ে নিল । সেদিন থেকেই বুড়োটা দলের সদস্য হয়ে গেল । আসলেই কি তাই, বুড়ো কি আদৌ কোনদিন দলের বাইরে ছিল ? বুড়ো হলেই আসলে এদের পুরুষ গুলো এক আজগুবি সন্ন্যাস গ্রহন করে । যৌবনে সন্তান জন্ম দিতে হয়না যাদের, তাদের সাথে খাতির জমেনা দলের আর সব মেয়েদের । তাই বার্ধক্যে পৌঁছে দলের নেতৃত্বের তাদের কাছে যায় না । বিরাট বলশালী পুরুষ গুলোর বার্ধক্য যতই এগিয়ে আসতে থাকে তারাও ততই নিজেদের কে একটু একটু করে দল থেকে বের করে নিতে থাকে । কিন্তু তাই বলে নাড়ির টান যেই গোত্রটার সাথে তাদেরকে একেবারে ফেলে যাওয়াও তো যায়না । যাবেই বা কিভাবে, তাদেরকেও তো তার দরকার । তাই রয়ে যায় ধারে কাছেই ।

যাই হোক, এই মূহুর্তে সেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ।

এই বৃদ্ধ যখন টগবগে তরুন ছিলেন, সেই সময়ে এরকম তীব্র গ্রীষ্ম এসেছিল আরেকবার । সেসময়ের আধা সন্ন্যাসী বুড়োদের মধ্যে কেউ একজন পথ দেখিয়ে সবাইকে নিয়ে গিয়েছিল মরুভূমি পার করে অনেক দূরে এক জলাধারের কাছে । প্রায় পঞ্চাশ বছর পুরনো স্মৃতি থেকে পথ চিনে নিয়ে আজকের বৃদ্ধও নিজের দলটিকে নিয়ে চলেছেন সেই পথে । যদি সব ঠিকঠাক মনে থাকে, তাহলে আর মাত্র দুই দিনের পথ । টানা আরো দুইদিন আগুন ঝরানো সূর্যের নীচে হাঁটার পর পানির নাগাল পাওয়া যাবে ।

পথ ভুল হয়নি, এই ব্যপারে তিনি নিশ্চিত । আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও যেসব এলাকার উপর দিয়ে হেঁটে এসেছিলেন, গত কয়েকদিনে সেগুলো একটি একটি করে পার হয়েছেন । পঞ্চাশ বছরে অনেক কিছুই বদলে যায়, আবার প্রায় কিছুই বদলায় না । সূর্যাস্তের দিকে বড় পাহাড়ের চুড়া দেখা গিয়েছিল পঞ্চাশ বছর আগে, সেই চুড়া দেখা গেছে গতকাল । তার আগে পার হতে হয়েছিল শুকিয়ে যাওয়া একটা নদী, সেই নদীও পার হয়েছেন কয়েকদিন আগে । শুকিয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে মসৃন মাটি খুঁড়ে পানিও বের করা হয়েছিল খানিকটা । সেই পানিটা অবশ্য কোন রকমে গলা ভেজানর আগেই শেষ । পথের সব কিছুই ঠিক আছে, কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হয়েছে অন্য কোথাও । তারা মূল গন্তব্যের খুব কাছে চলে এসেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা । আর একটা আজব স্বত্ত্বার অস্তিত্ব ধরা পড়েছে সবারই অনুভূতিতে । আশে পাশেই কোথাও একটা আজব গন্ধের উৎস রয়েছে । গন্ধটা তাদের অপরিচিত, তাই ভয় পাওয়া উচিত কিনা বুঝতে পারছেনা ।

যেই জলাধারটার দিকে তারা চলেছেন, তার অপর দুই পাশের অঞ্চলে তাদের জাতির আরো দুইটি গোত্রের বসবাস ছিল । পঞ্চাশ বছর আগে প্রথম বারের মত এই পথ পাড়ি দেয়ার সময় প্রথম ও শেষ বারের মত দেখা হয়েছিল সেই গোত্র দুটির সাথে । তারাও পানির টানে অনেক দূর পাড়ি দিয়ে এসেছিল, একদল সূর্যাস্তের দিক থেকে আরেক দল সূর্যোদয়ের দিক থেকে । এবং এখানেই কোথাও এক সাথে দেখা হয়েছিল তিনটি গোত্রের । তবে চোখের দেখা হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই প্রত্যেকে অপর দুই দলের অস্তিত্ব টের পেয়েছিল । প্রকৃতির সন্তানেরা দৃষ্টিসীমার বাইরের জিনিসও দেখতে পায় দুই কান দিয়ে । কান পর্যন্ত যেই শব্দ পৌঁছায় না, কঠিন মাটি বেয়ে এসে পায়ের পাতায় ধরা দেয় তার কম্পন ।

---

বাওবাব গাছের শেকড়ের উপর বসে থাকা লোকটি দৃষ্টি নামিয়ে তার সামনে শুয়ে থাকা মৃতদেহের দিকে তাকাল । তার এই সঙ্গীটি সেৎসি মাছির কামড় খেয়ে কয়েকদিন ভীষণ ঘুমিয়ে অবশেষে মারা গেছে গতরাতে । তারপর থেকেই শুরু হয়েছে বাকিদের বড় রকমের ভোগান্তি । তৃতীয় আরেক জন এই মূহুর্তে গাড়ির ভেতর বসে আছে । রেডিওটা চালানর চেষ্টা করছে, কিন্তু তাতে খুব একটা সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছে বলে মনে হয়না । বাইরের জগতের সাথে তাদের যোগাযোগের একমাত্র উপায় রেডিওটা অব্যবহৃত পড়ে আছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হল । যার পক্ষে রেডিওটা কাজে লাগান সম্ভব ছিল, সে এই মূহুর্তে মৃত ।

ছোট্ট দলটায় ছিল মোট এই তিনজন । তাদের মধ্যে দুইজন ছিল মূলত শিকারী, আর একজন ছিল বাকি সব কাজের কাজী । অন্তত শুধুমাত্র শিকারের কাজে সক্ষম বাকি দুইজনের তুলনায় । গাড়ি থেকে শুরু করে রেডিও-টেলিভিশন পর্যন্ত অনেক রকম যন্ত্র চালাতে পারে, নষ্ট হলে সারিয়ে তুলতে পারে, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ভাল যন্ত্রকে নষ্টও করতে পারে । পশ্চিমে কোন একটা দেশে, অথবা একাধিকও হতে পারে, কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ করে পোড় খাওয়া লোক । বল বাহুল্য, সেই লোকটাই আসলে তাদের নেতা । সকল কাজের কাজী হলেও, নেতা শুধু দরকার মত ট্রাকটা চালিয়ে নিয়ে আর দিনে একবার রেডিওতে রুটিন মাফিক যোগাযোগের কাজটা করে তাদেরকে ধন্য করত । দিনের এবং রাতের বাকি সময়টা ট্রাকের ভেতর ঘুমিয়েই পার করে দিত লোকটা, অসুস্থ হওয়ার আগেও । তাই মাছির কামড় খাওয়ার কয়েকদিন পর রোগের অন্য লক্ষণ গুলো প্রকাশিত হওয়ার আগে কারো বোঝার সাধ্য ছিলনা যে লোকটাকে দুইদিন আগেই সেৎসি মাছি কামড়েছে ।

একটা মাঝারি আকারের ট্রাকে কিছু রসদ পত্র, গুলি এবং শিকারের সবরকম সরঞ্জাম ছিল তাদের সাথে । কিছু টুকটাক ঔষধ ও ছিল, কিন্তু ওগুলো দিয়ে আসলে সেৎসির কামড়ের চিকিৎসা হয়না । তাই সময়মত টের পেলেও খুব একটা লাভ হতনা । জঙ্গলে যেসব আঁচড়-কামড়কে কেউ পাত্তা দেয়না, সেসব সারানর জন্য ঐ ফার্স্ট এইড বক্স নামের খেলনাটা লাগেনা । কিছুক্ষণ ক্ষত চেটে পরিষ্কার করে নিলে এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যায় । আর বেশি রক্তপাতের ভয় থাকলে শুকনো মাটি চেপে ধরে রক্তপাত থামাও । এরকম চিকিৎসায় যাদের পোষায়না তারা এই পেশা নিয়ে জঙ্গলে ঢুকেনা, আর ঢুকলেও দুদিনের মধ্যে মরে যায় । আর যেসব আঘাত বা রোগ-বালাইকে লোকে পাত্তা দেয়, সেগুলোর বিরুদ্ধে কাজে লাগানর মত চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং তা ব্যবহার করার মত বিদ্যা এদের সাথে থাকেনা । বিদ্যা থাকলে তো আর এই কাজ করতে হত না ।

তাদের কাজটা একই সাথে খুব সহজ আবার খুব কঠিনও । এক মাসের জন্য সেরেঙ্গেটির অরক্ষিত অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে বুনো জন্তু শিকার করতে হবে । প্রতিটি শিকার করা জন্তুর চামড়া, শিং, দাঁত ইত্যাদির জন্য বেশ ভাল দাম পাওয়া যাবে বিনিময়ে । সাথে যেই রেডিওটা থাকবে তার মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করবে মালিকের লোকেরা । শুরুতেও সেরকমই চলছিল । মালিকের লোকেরা প্রতিদিন একবার করে রেডিওতে যোগাযোগ করত । এদিক থেকে জানান হত কাজের অগ্রগতীর খবর আর ঐদিক থেকে জানিয়ে দেয়া হত বন রক্ষীদের গতিবিধি । বিশাল সাভানার মধ্যে যেই অংশে আজ বন রক্ষীরা টহল দিচ্ছেনা সেটাই অরক্ষিত অঞ্চল, সেটাই সেদিনের মত তাদের কর্মস্থল ।

---

প্রতিবছর গরমের সময় প্রচুর জীব-জানোয়ার সেরেঙ্গেটির এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায় পানির খোঁজে । সেরেঙ্গেটি জুড়ে কিছু জলাধার রয়েছে যেগুলোতে গ্রীষ্মেও পানি থাকে । গরমে সব জীব-জন্তু সেসব জলাধারের চারপাশে এসে জড় হয় । গ্রীষ্মের শেষে যখন বৃষ্টি নামে, সম্পূর্ণ সেরেঙ্গেটি ভরে যায় সবুজে । সবাই আবার ফিরে যায় নিজের এলাকায় । কয়েক হাজার বছর ধরে একই পথ ধরে তারা বছর ঘুরে আসা যাওয়া করতে করতে এই ঘটনাটাকে মোটামুটি সূর্যের পূর্ব দিকে ঊদিত হওয়ার মত ধ্রূব সত্য বানিয়ে ছেড়েছে । বন্য জন্তুরা নিয়মিত ভাবে যেসব পথ ব্যবহার করে আর যেসব জলাধারের চারপাশে জড়ো হয়, বন রক্ষীদের সতর্ক প্রহরা সেসব জায়গাতেই বেশি । মোটামুটি অপ্রচলিত সব জলাশয় আর অভিবাসন পথের উপর তাদের নজর একটু কম । এরকম একটা পথ খুঁজে বের করে তার উপর একমাস ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারলে এক মাসেই দুই বছর চলার খরচ উঠিয়ে ফেলা সম্ভব । অথবা আরেকটা অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র এবং গোলাবারুদের খরচের বড় অংশ । এই চিন্তা মাথায় নিয়েই লোকটা কঙ্গো থেকে তাঞ্জানিয়ায় ঢুকেছিল গ্রীষ্মের আগে ।

দুই শিকারীকে সে জোগাড় করেছিল তাঞ্জানিয়া থেকেই । যেখানে দারিদ্র সেখানেই অনাহার, আর অনাহারী মানুষ মাত্রেই বেপরোয়া । আজ থেকে কয়েকশ বছর আগেও সমগ্র সেরেঙ্গেটি জুড়ে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করত মাসাইদের বারটা গোষ্ঠী । অসম সাহসী এই যোদ্ধা জাতির লোকজনদের পারলে এড়িয়েই চলত মধ্য যুগে দাস ব্যবসায়ীরা । এমনকি ঊনবিংশ শতাব্দীতেও ব্রিটিশদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা ভালই লড়ে যাচ্ছিল । হার মানতে হল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে একগাদা ছোঁয়াচে রোগের মড়ক লাগায় । কঙ্গো নদী আর নীল নদে অনেক পানি গড়িয়ে যাওয়ার পর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে দেখা গেল নিজেদের দেশেই মাসাইরা এখন সাজিয়ে রাখার জিনিসে পরিনত হয়েছে । বিভিন্ন দেশের সরকার সেরেঙ্গেটির জায়গায় জায়গায় বন ও বন্য প্রানী সংরক্ষণের প্রকল্প বসিয়ে আধা যাযাবর মাসাইদের তাড়িয়ে দিয়েছে তাদের হাজার বছরের পুরাতন চারনভূমি গুলো থেকে । আর যেই দুই এক ঘর মাসাইকে থাকার জায়গা দেয়া হয় সেই সংরক্ষিত অঞ্চলে তাদের কাজ হল বছরের বার মাস কোন খৎনা অনুষ্ঠান ছাড়াই খৎনা অনুষ্ঠানের নাচ নেচে বিদেশীদের মজা দেয়া ।

এরকম অবস্থায় দুইজন বেপরোয়া মাসাই যুবক খুঁজে বের করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না । খাদ্যের জন্য মাসাইরা শিকারের উপর খুব একটা নির্ভর করেনা, চাষ-বাসেও তারা খুব একটা পটু না, পশুপালনই তাদের আসল কাজ । কিন্তু বিপদে পড়লে বাঘেও ঘাস খায় । অভাবে পড়ে বেপরোয়া মাসাইও শিকারের দিকে ঝুঁকে পড়ায় অস্বাভাবিক কিছু নেই । আর শিকার করা জন্তুর দাঁত, শিং, চামড়া ইত্যাদির খদ্দেরের সাথে পরিচয় আগে থেকেই ছিল । ট্রাক এবং শিকারের অন্যান সরঞ্জাম তারই দেয়া । দক্ষিন আফ্রিকা থেকে আসা মালিক নামের লোকটা চোরা শিকারের বিরাট ব্যবসা ফেঁদে বসেছে অনেক বছর ধরেই ।

---

হঠাৎ কিছু একটা দেখে থমকে দাঁড়িয়েছেন বৃদ্ধ । ধীরে ধীরে পেছনের জনেরা এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়ালে তাদেরও চোখে পড়ে জিনিসটা । সামনে পড়ে আছে প্রমান আকারের একটি কঙ্কাল । কার কঙ্কাল এটি ? তাদের কারো না - এই ব্যাপারে নিশ্চিত । জলাধারের অপর দুইপাশের দুই অঞ্চলের কারো হতে পারে । বৃদ্ধ এগিয়ে যান কঙ্কালটির দিকে । গভীর মনযোগের সাথে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন । আকার দেখেই বোঝা যায় পূর্ণবয়ষ্কের কঙ্কাল এটি । কয়েকটি হাড় মাটির মধ্যে বসে গেছে । তার মানে বেশ কিছুদিন আগেই মৃত্যু ঘটেছে, গত বর্ষার আগে, হয়ত গত বছর গ্রীষ্মে । মাথার খুলি আর বস্থি কোটরের ভারী হাড়টার মাঝখানে, যেখানে এক সময় মেরুদণ্ডটা ছিল, সেখানে কশেরুকার হাড় গুলো একসার বেঁধে পড়ে আছে । বোঝাই যাচ্ছে, কোন শিকারী জন্তুর হাতে প্রান হারায়নি অথবা মৃত্যুর পরও হায়েনা বা অন্য কোন মাংসখেকো জন্তুর হাতে পড়েনি লাশটা । ওদের হাতে পড়লে হাড় গোড় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যেত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে । বড়জোর দুই একটা শকুনের ঠোকর পড়ে থাকতে পারে লাশের গায়ে ।

খুলিটা নেড়ে চেড়ে পরীক্ষা করেন বৃদ্ধ । অন্যেরাও স্পর্শ করে দুই একটা হাড় । শিশুরা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে দেখে, বিশুদ্ধ বিস্ময়, ভয়ের কোন ছিটে-ফোঁটাও নেই তাতে । গন্ধ শুঁকে দেখেন বৃদ্ধ, তার কাছে গন্ধটি পরিচিত মনে হয় । যেদিকে সূর্য অস্ত যায় সেদিক থেকে এসেছিল এরা । প্রকৃতির সন্তানদের পরিচয় তাদের গায়ের গন্ধে । গন্ধই বলে দেয় কোন গোত্রে কোন প্রজন্মের কার কঙ্কাল এটি । সেই গোত্র গতবছরও এই পথে এসেছিল একবার, তখনই হয়ত মারা পড়েছে তাদের একজন । গত বছর এখানে যেহেতু এসেছিল, গোত্রটা এখনো টিকে আছে এবং এবছরো তাদের এদিকে আসাই স্বাভাবিক । কিন্তু এখনো তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার মত কিছুই কেউ অনুভব করেনি এখন পর্যন্ত । হয়ত তারা আসছে, এখনো পিছিয়ে রয়েছে । নিজেদের অস্তিত্বের কিছু প্রমান রেখে আবার এগিয়ে যাওয়া শুরু করে নানির দলটা ।

---

পশুপালক মাসাইদের কাছে পৃথিবীর সব কিছুর হিসাব গরু দিয়ে । তাদের প্রিয় প্রানী গরু । ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করেছেন জগতের সমস্ত গরুকে তাদের মালিকানায় দিয়ে । কেউ কারো ক্ষতি করলে ক্ষতি পূরণ গরু । কেউ কারো উপর খুশি হলে উপহারও গরু । কেনা বেচায় হিসাবের ভিত্তি গরু । মান সম্মানের হিসাবও মালিকানায় কয়টা গরু আছে তাই দিয়ে । পঞ্চাশটি গরু থাকলে যে কোন মাসাই পুরুষ নিজের সমাজে উচ্চবিত্তের মর্যাদা পায় । দুই মাসাইকে কাজে নেয়ার সময় পারিশ্রমিকের হিসাবটাও করা হয়েছিল গরু দিয়েই । টানা একমাস নিজেদের গরুগুলো চরান বাদ দিয়ে তার সাথে সেরেঙ্গেটির ভেতর শিকার করলে দুইজনকেই দশটা করে গরু দেয়া হবে । এই ছিল কঙ্গো থেকে আসা লোকটার প্রতিশ্রূত পারিশ্রমিক ।

যদিও মালিক যে কোন শিকার করা জন্তুর চামড়া, শিং ইত্যাদি কিনতে রাজি তারপরেও কয়েকটি বিশেষ জিনিসে তার আগ্রহ বেশি । তার একটি হল হাতির দাঁত । গত বেশ কয়েক দশকে অবাধে বড় বড় দাঁতের হাতি শিকার হয়েছে । প্রথম দিকে আইনী বাঁধা ছিলনা, পরে আইন করে নিষিদ্ধ করার পরেও খুব একটা লাভ হয়নি । হাতির দাঁতের লোভে মানুষ হাতি মেরে তাদেরকে ঝাড়ে বংশে উজাড় করে ফেলেছিল প্রায় । এমন সময় প্রাকৃতিক ভাবেই হাতিদের রক্ষা পাওয়ার একটা আশা তৈরী হল । বড় দাঁতের হাতিগুলোকে "দেখিবা মাত্র শিকার" করায় তাদের সংখ্যা খুব দ্রূত কমছিল । ফলে কয়েক প্রজন্ম ধরে তাদের বংশবৃদ্ধিও কমতে থাকে । শেষ দিকে দেখা গেল শুধুমাত্র ছোট বিকৃত আকৃতির গজদন্ত বিশিষ্ট অথবা দন্তহীন হাতিরাই শুধুমাত্র নির্বিঘ্নে বছর বছর শান্তিতে বাচ্চা বিইয়ে চলেছে । একশ বছর আগেও যেসব দন্তহীন অথবা ত্যাড়া গজদন্তের অভাগা পুরুষ গুলো 'কুমারত্ব' নিয়ে মরত তারাও এই ঘোর কলিকালে গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চার বাপ হতে শুরু করেছে, বলা বাহুল্য বাচ্চারাও বাপের মতই দন্তহীন । এক সময় যা ছিল জেনেটিক ত্রুটি, মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগের মধ্যে হয়ত দেখা যেত, তাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে বংশগত বৈশিষ্ট্য । আজকাল আফ্রিকার হাতির মোট জনসংখ্যার ত্রিশ ভাগেরি এই জন্মগত ত্রুটি রয়েছে । ভবিষ্যতে একশভাগেরই এই সমস্যা থাকবে । পৃথিবীতে গজদন্ত বিশিষ্ট হাতি আর জন্মাবেনা, গজদন্তের জন্য হাতিদের আর শিকার করাও হবেনা । এখনি সময় হাতির দাঁত সংগ্রহ করার ।

বেশ কিছুদিন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে টুকটাক জীব জন্তু শিকারের পর একদিন তাদের চোখে পড়ল একটা হাতির কঙ্কাল । লালচে মাটির মধ্যে আংশিক দেবে আছে হাড়গুলো । বেশ ছিমছাম সাজান গোছান অবস্থাতেই আছে কঙ্কালটা । জীব বিজ্ঞানের ক্লাসে এই কঙ্কালটা দেখিয়ে জীব বিজ্ঞানের প্রফেসর বলতে পারবেন, "ইহা একটি হাতির কঙ্কাল । পূর্ণবয়ষ্ক হাতির সাধারনত একজোড়া বিরাট গজদন্ত থাকে, এই কঙ্কালে অবশ্য উহা অনুপস্থিত । "

হ্যাঁ, গজদন্ত দুটো একেবারে গোড়া থেকেই সুন্দর করে কেটে নেয়া হয়েছে যান্ত্রিক করাত দিয়ে । নিঃসন্দেহে গত বছর কোন চোরা শিকারির দল করেছিল কাজটা । মানচিত্র বলছে কাছেই রয়েছে একটা বড় আকারের জলাধার, ট্রাক চালিয়ে যেতে এক বেলা লাগবে হয়ত । তার মানে আমরা এখন একটা অপ্রধান কিন্তু অব্যবহৃত না - এমন একটা পথের উপর দাঁড়িয়ে আছি । এবং অপ্রধান বলেই বন রক্ষীদের নজর নেই এদিকে । এবং এই পথে হাতিরাও চলাফেরা করে । অতএব এখানেই অপেক্ষা করা যাক কয়েকটা দিন, যাদের খুঁজছি তাদের দেখা পেয়েও যেতে পারি । দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, অপেক্ষা শেষ হওয়ার আগেই একদিন কঙ্গোর লোকটাকে একটা সেৎসি মাছি কামড়ে দিল । সেই মাছিটা আবার উড়ে এসেছিল ঐ জলাধারটির ওদিক থেকেই । মাছি কামড়ানোর ঠিক সাতদিন পর লোকটা মারা গেল । দুই মাসাই শিকারী তো দূরের কথা, সে নিজেই খেয়াল করেনি তার অসুস্থতা । গেরিলা যুদ্ধের নিয়ম হল ঘুমানর মত সুযোগ আর মাথা রাখার জন্য এক ইঞ্চি জায়গা পেলেই ঘুমিয়ে নেয়া । এই নির্বিঘ্ন শিকার অভিযানে তাই সে কঙ্গোর যুদ্ধে বকেয়া হওয়া সমস্ত ঘুম সুদে আসলে উসুল করে নিচ্ছিল । আসল কাজের জন্য তো ঐ দুজন আছেই ।

---

লোকটা মরার পর সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ল কারা ?
কঙ্গোতে তার দলের অন্য লোকেরা যারা তার উপর নির্ভর করে ছিল নতুন অস্ত্র এবং গোলাবারুদের জন্য, তারা নয় । গেরিলা যোদ্ধারা একজনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করার মত কাঁচা কাজ করেনা । কঙ্গো থেকে বেশ কয়েকজনকে আশে পাশের বিভিন্ন দেশে, যেখানে এখন যুদ্ধ চলছেনা, পাঠান হয়েছে । একজনের মিশন ব্যর্থ হলেও যেন বিপদে পড়তে না হয় । চোরা শিকারের ব্যবসায়ী, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে আসা মালিক নামের লোকটিও না । কারন মালিক নিজেও গেরিলা যোদ্ধাদের থেকে কোন অংশে কম বুদ্ধিমান না । আজ হোক কাল হোক বন রক্ষীদের একটা টহল দল এদিকে আসবেই । আসলেই তারা এই ট্রাক আর ট্রাকের ভেতর জমান সমস্ত চামড়া, শিং ইত্যাদি পেয়ে যাবে । বিভিন্ন হাত ঘুরে সেগুলো আবার মালিকের হাতেই চলে যাওয়ার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে ।

সবচেয়ে বড় বিপদের পড়েছে দুই মাসাই শিকারী ।

যেই লোকটা গাড়ির ভেতরে রেডিওটা চালানর চেষ্টা করেছিল, কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে এসে অন্য লোকটার মুখোমুখি বসেছে আরেকটা শিকড়ের উপর । বেশ কিছুক্ষণ বিভিন্ন জিনিস টিপেটুপে টেনেটুনে কোনভাবেই রেডিওটা থেকে একটা শব্দও বের করাতে পারেনি সে । পারবে আশাও অবশ্য করেনি । সে নিছক কৌতুহল থেকেই কিছুক্ষণ জিনিসটা হাতড়েছে । আজ সকালেই নেতাকে মৃত আবিষ্কার করার পর থেকে এই আলাপ তারা শুরু করেছে, এখনো শেষ করতে পারেনি । আলাপের বিষয় হল এই মৃতদেহটা নিয়ে কী করনীয় । তাদের সংস্কৃতিতে সৎকার মানে হল দূরে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ ফেলে আসা যেন বন্য জন্তুতে এসে খেয়ে যায় । মাসাইরা মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলায় বিশ্বাস করেনা, কারন তাহলে মাটি দূষিত হয়ে যাবে । শুধুমাত্র বিরাট বীর পুরুষ আর মহান গোত্রপ্রধানদের মৃতদেহই কবরস্থ হতে পারে । কিন্তু এই মৃতদেহটি খোলা মাঠের মধ্যে ফেলে রাখা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছেনা তারা । কারন এই লোকটি মাসাই না । লোকটা যে আসলে কী, তাও অবশ্য তারা জানেনা । তবে যদ্দূর জানে, কিছু লোক আছে যাদেরকে মাটির তলে চাপা দিতে হয়, নাহলে নাকি সেই লোকেদের ঈশ্বর নানারকম ঝামেলা লাগায় । জগতের সবার ঈশ্বর এনগাই, এই সোজা কথাটা যদি সবাই মেনে নিত তাহলে অনেক ঝামেলা কম হত । কিন্তু মানুষ ঝামেলা পাকাতে ভালবাসে, তাই ঝামেলা পাকানর ওস্তাদ সব ঈশ্বর খুঁজে বের করে তাদের উপাসনা করে । পরিষ্কার ভাবেই এখন দরকার একজন বিদগ্ধ গুরুজনের পরামর্শ । কিন্তু এই দুই মাসাই যুবক এখনো মুরান পদমর্যাদার অধিকারী, গুরুজন হতে তাদের আরো অন্তত দশ বছর লাগবে । কাজেই একে অপরকে কোন রকম পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই । এদের সংস্কৃতিতে মাথার চুল ছেঁড়ার ব্যপারটা নেই, থাকলে হয়ত এতক্ষনে তারা তাই শুরু করে দিত ।

হাতির পালটা এগিয়ে এসেছে অনেক কাছে । এখান থেকে নিশ্চিত ভাবে গাড়ির পেট্রোল পোড়া গন্ধ টের পাওয়ার কথা । কাজেই তাদের অস্তিত্বের হাতির দলের কাছে আর অজানা নেই । দুজনেই কথা বার্তা থামিয়ে সতর্কতার সাথে হাতিগুলোকে লক্ষ্য করতে থাকে । তাদের সামনেই হাতিগুলো সেই গত বছর মারা পড়া হাতির কঙ্কালটা আবিষ্কার করল । কঙ্কালটা হাতির দলের মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি করল । তবে সাতদিন আগে চোরা শিকারীরা যেরকম চাঞ্চল্য অনুভব করেছিল তার থেকে হাতিদের চাঞ্চল্যের ধরন ভিন্ন । শিকড়ের উপর বসে থাকা মাসাইদের মনে হল, হাতির দলও স্বজাতির একজনের মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ আবিষ্কার করে চিন্তায় পড়েছে । নিজেদের পরিস্থিতির সাথে এই কাকতালীয় মিলের কারনে হাতি গুলোকে এনগাইয়ের প্রেরিত পশু বলে মনে হতে থাকে তাদের কাছে ।

হাতির দল যখন কঙ্কালটা নেড়ে চেড়ে দেখার পর তাকে আবার যেরকম ছিল সেরকমই রেখে দিয়ে নিজেদের পথে এগিয়ে যেতে শুরু করে, তখনি দুই মাসাই বুঝে যায় এনগাই স্পষ্ট ভাবেই দেখিয়ে দিয়েছেন কী করনীয় । মৃতদেহটা যেরকম ছিল সেরকম ফেলে রেখে তারা হাতির দলটার পিছে রওনা দিবে । পানি তাদেরও দরকার, তার থেকেও বেশি দরকার পথ খুঁজে বের করা । হেঁটে হেঁটে আজীবন ঘুরে বেড়ালেও মাসাই সেরেঙ্গেটিতে পথ ভুলে না । পথের হিসাব ভুল হয়ে যায় গাড়িতে চড়লেই, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদেরকে "পথ হারা" বলা যেতে পারে । আর হাতির দল যেই জলাধারের দিকেই যাক, তার আশে পাশেই মানব বসতী থাকবে । দুই মাসাই ট্রাকের ভেতর থেকে শুধু মাত্র তাদের লাঠি দুটো বের করে নিয়ে হাঁটা শুরু করে । জানেওনা পেছনে ট্রাকের ভেতর যা ফেলে গেল তাই দিয়ে দু'জনেই পঞ্চাশটা করে গরু কিনতে পারত ।










কৃতজ্ঞতা : উইকিপিডিয়া


মন্তব্য

হিমু এর ছবি
এনকিদু এর ছবি

হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

পান্থ রহমান রেজা  [অতিথি] এর ছবি

পড়তে পড়তে হ্যাগার্ডের পড়া উপন্যাসগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। সুন্দর হয়েছে এনকিদু।

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ভুতুম এর ছবি

পুরোপুরি ভিন্নস্বাদের একটা গল্প হয়েছে। খুব ভালো লাগলো।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌এটা কি গল্প? পড়তে পড়তে মরুপথে হাটা শুরু করেছিলাম আমিও। যেন প্রামান্যচিত্র দেখছি। দারুনসে দারুন!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়ার খুব লোভ হইলেও এখন পড়ুম না। এতবড় লেখা পড়ার এখন ধৈর্য নাই। আর সময়ও নাই। রাতে পড়বো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এনকিদু এর ছবি

আগে দেখতাম লেখার মাঝে চা খাইতেন, এখন কি পড়ার মাঝেও চা খাওয়া ধরলেন নাকি ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শামীম রুনা এর ছবি

পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের অনুবাদ পড়ছি। চমৎকার একটা গল্প।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ ।

সবাই হ্যাগার্ডের কথা বলছেন, এটা মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে । আর লজ্জা দিয়েন না হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শঙ্কর এর ছবি

দুর্ধর্ষ বর্ণনা। মনে হচ্ছে নিজেই যেন ওখানে পৌঁছে গেছি।

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

কদু ভাই চ্রম হইসে !
-------------------------

--------------------------------------------------------

এনকিদু এর ছবি

চ্রম ধন্যবাদ ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

দময়ন্তী এর ছবি

বড় ভাল৷ বড্ড বড্ড ভাল লিখেছেন৷
ভারী সুন্দর৷
---------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্পর্শ এর ছবি

লেখায় যত্ন, প্রস্তুতি, পরিশ্রম... আরো অনেক কিছু রয়েছে।
এরকম লেখা আরো চাই।
গল্পটা আগেই বলেছিলে। তাই সে সম্পর্কে মন্তব্য করছিনা। দৃশ্যকল্প অসাধারণ। এরকম ভিন্ন স্থান-কাল-পাত্রে আরো গল্প চাই। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ । চ্যাষ্টা করুম ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রানা মেহের এর ছবি

এটা খুব ভালো হয়েছে এনকিদু
হ্যাগার্ড দলে ভোট দিলাম
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ, রানা আপা ।
সবার ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগল ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আমার কল্পনাশক্তি এম্নিতেই ভাল, আর আপনার চ্রম বর্ণ্নাতেতো সবকিছু মনে হল জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেখছি। সুন্দর বা অসাধারন বলব না বলব নাটকের মত দৃশ্য পরিবর্তন গুলো আমি দেখতে পেয়েছি।
দেঁতো হাসি...
------------------------------------------------
চাঁদের আলো আজ যদি ভাল লাগে, কাল হয়ে যায় ঝাপসা...
আমার এ তরী, যদি চলে যায়, ফিরে আর আসবেনা।

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ দুষ্টু বালিকা ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ! অনেক তথ্যবহুল একটা গল্প, মনে হল যেন কোন প্রামাণ্যচিত্র দেখছি। আরো চাই।

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ । আমিও চাই, সবসময় পারিনা ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

এনকিদু এর ছবি

হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

প্রায় তিনদিন পরে সময় নিয়ে পড়লাম অসাধারন এই গল্পটা। অভাব, অভাবের কারনে পোচিং, এবং হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলা ( খাইছে ) - এটাই বোধহয় গল্পটার 'সিন্থেসিস'। ভবিষ্যৎ হ্যাগার্ড কে অভিনন্দন।

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

দুর্দান্ত...

অ.ট. উপরেই সিমন ভাই এর মন্তব্য। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।