বাংলাদেশের অভ্যুদয়

গীতিকবি এর ছবি
লিখেছেন গীতিকবি (তারিখ: বুধ, ২৮/১১/২০০৭ - ১১:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের অভ্যুদয়
-শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
(অ্যারিজোনা, জুলাই ২০০৪)

আগষ্ট মাস, সাল ঊনিশ শ’ সাতচল্লিশ
দুই শ' বছর শোষণ করে পালালো ব্রিটিশ।
দুই ভাগ হলো দেশটা, ভারত - পাকিস্তান
ধর্মই ছিল প্রধান বিভেদ, হিন্দু মুসলমান।
পাকিস্তানের দুই ভাগ - পূর্ব আর পশ্চিম
শাসনের নামে শুরু হলো শোষণ অপরিসীম।

জিন্নাহ সাহেব ঢাকায় এলেন - দিলেন বক্তৃতা
“উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা” - মানতে হবে তাঁর কথা।
ফেটে পড়লো বাঙ্গালী, জনতা আর ছাত্র
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” - দাবী একমাত্র।
তারপর এলো সাল ঊনিশ শ' বায়ান্ন
কত রক্ত ঝরে পড়লো মাতৃভাষার জন্য !
সালাম, রফিক, বরকতসহ আরো যে কত নাম
ভাষার জন্য অকাতরে দিয়ে গেছেন প্রাণ।
শহীদ রক্তে রাঙানো অমর একুশে ফেব্রুয়ারী
ভুলিতে কি আমরা তা কোনও দিনও পারি ?

শেরে বাংলার যুক্তফ্রন্ট, সাল চুয়ান্ন
রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলেন শুধু অল্প দিনের জন্য।
ক্ষমতার হাত বদল হলো আরো অনেক বার
পরে এলেন আইয়ুব খান, আগে ইস্কান্দার।

পূর্ব পাকিস্তানে এবার আইয়ুবী শোষণ -
হটাও আইয়ুব, বাঁচাও বাংলা, করো আন্দোলন।
আন্দোলন এবার পেলো নতুন এক মাত্রা
ছিষট্টির ছয় দফায় স্বাধীকারের যাত্রা।
'আগরতলা ষড়যন্ত্র' মামলা করলো সরকার
“এক্ষুনি আন্দোলন সব বন্ধ করা দরকার”।
মিথ্যা মামলায় রাজনীতিকরা বন্দী হলেন সবে-
বুঝলো না- একদিন তো তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থান প্রকট হলো, সাল ঊনসত্তর
শহীদ হলেন আসাদ আর বীর মতিউর।
গণরোষের মুখে আইয়ুব হটতে বাধ্য হলেন
স্বৈরাচারের নতুন রূপে ইয়াহিয়া খান এলেন।

“আসসালামালেকুম” - বললেন মওলানা ভাসানী
“ওদের সাথে আর নয়” - এই শুধু তাঁর বাণী।
সত্তরের নভেম্বরে প্রলয় - ঘূর্ণিঝড়
শত শত মৃতদেহ - মানুষ শোকে পাথর।
হতাশ জনগণ এবার সরকারের ভূমিকায়
ফল হলো নির্বাচনে - শোচনীয় পরাজয়।
প্রধান মন্ত্রী হবেন এবার শেখ মুজিবর
জনগণ বেজায় খুশী - শুণে এই খবর।
এখনই নয়, আগে হোক তো আলোচনা
ক্ষমতা হস্তান্তরে শুরু হলো টালবাহানা।

একাত্তরের সাতই মার্চ - রেসকোর্স ময়দান
বজ্রকন্ঠে আওয়াজ দিলেন শেখ মুজিবর রহমান।
এবারের সংগ্রাম হলো মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম শুধু স্বাধীনতার সংগ্রাম।

ইয়াহিয়া আর ভুট্টো মিলে খেললো নতুন খেলা
গোপনে ঢাকায় আসে বিরাট সৈন্যের মেলা।
এরপর এলো সেই ভয়াল পঁচিশে মার্চ
হত্যাযজ্ঞ চালালো এবার পাক নরপিশাচ।
গভীর রাতে যখন সারা ঢাকা শহর ঘুমিয়ে
গণহত্যায় ব্যস্ত তারা রাইফেল বেয়োনেট খুঁচিয়ে।

সেই রাতে শেখ মুজিব হলেন কারারুদ্ধ
ছাব্বিশে মার্চ থেকে শুরু হলো যুদ্ধ।
স্বাধীনতার ঘোষণা এবার - কন্ঠ মেজর জিয়ার
সাতাশে মার্চ কালুরঘাট থেকে শোনাল বারবার।
দিশাহীন বাঙ্গালীকে তা করলো উদ্বুদ্ধ
দেশকে মুক্ত করতে হলে, করতে হবে যুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ওরা গেল পালিয়ে
অস্ত্র ধরার ট্রেনিং নিল দেশের সীমা ছাড়িয়ে।
অস্ত্র হাতে ফিরল দেশে করে অনেক চেষ্টা
শপথ নিলো ওরা এবার মুক্ত করবে দেশটা।

টিক্কা খান ছিলেন তখন নতুন গভর্নর
খান সেনাদের আদেশ দিলেন হতে আরো বর্বর।
পাক সেনারা কত যে গ্রাম পুড়িয়ে দিল জ্বালিয়ে
নির্বিচারে মানুষ মারলো বন্দুকের গুলি চালিয়ে।
বাঙ্গালীর নেই কোনই জান-মালের হেফাজত
মিলিটারীরা লুটে নিলো বহু মা-বোনের ইজ্জত।
সারা বাংলায় অত্যাচারীর জাল হলো বিস্তার
মায়ের কোলের অবুঝ শিশুও পেলো নাকো নিস্তার।
লাখ লাখ লোক প্রাণ নিয়ে শুধু দেশ ছেড়ে পালালো
হানাদারের হাতে মৃত্যুর থেকে নিজেদের বাঁচালো।

সতেরোই এপ্রিল গঠিত হলো অস্থায়ী সরকার
মুজিবনগর নাম হলো সেই প্রসিদ্ধ জায়গার।
কারাবন্দী শেখ মুজিব তার প্রথম রাষ্ট্রপতি
কর্নেল ওসমানী যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি।
তাজউদ্দীন আহমেদ সাহেব প্রধান মন্ত্রী হলেন
সৈয়দ নজরুল রাষ্ট্রপতির ভার কাঁধে তুলে নিলেন।

খানসেনারা তাদের সেবায় পেলো কিছু দালাল
শান্তি কমিটির নামে তারা চাললো নতুন চাল।
মিলিটারীর কাছে তারা দিত ‘মুক্তি’র খবর
নাম ছিল তাদের রাজাকার এবং আল-বদর।
রাজাকারেরা খানসেনাদের সন্তুষ্ট করতে
মা-বোনদের তুলে দিত নরপশুদের হাতে।
গোলাম আযম আর নিজামী রাজাকারদের নেতা
ধর্মের নামে যতো সব কুকীর্তির হোতা।

পাকিস্তানের কুকর্ম হলো বিশ্বজনে ধিকৃত
চেষ্টা তাদের কম ছিল না করতে ঘটনা বিকৃত।
পাক বাহিনীর অত্যাচার তুললো বিশ্বে আলোড়ন
মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশ পেলো জনসমর্থন।
'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' বিশাল এক আয়োজন
অংশ নিলেন রবি শংকর এবং জর্জ হ্যারিসন।

বীর বাঙ্গালী যুদ্ধেরত হাতে নিয়ে অস্ত্র
“বাংলাদেশ স্বাধীন করো” - এই মূল মন্ত্র।
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ভারত পাশে দাঁড়ালো।
প্রতিবেশীকে মুক্ত করতে সাহায্যের হাত বাড়ালো।

মুক্তিযোদ্ধারা এবার সবে নিল এক হাত
হানাদার বাহিনী দিকে দিকে কুপোকাত।
জেলাগুলি একে একে হচ্ছে সবে মুক্ত
বিনিময়ে ঝরলো কেবল এক সাগর রক্ত।
শত্রুপক্ষ বুঝলো এবার পরাজয় নিশ্চিত
মুক্তিবাহিনী নাড়িয়ে দিয়েছে তাদের শক্ত ভিত।

পরাজয়ের আগ মুহূর্তে দিল শেষ কামড়
রাজাকারদের সহচার্যে চৌদ্দই ডিসেম্বর।
"বাঙ্গালী জাতিকে করতে হবে পঙ্গু চিরতরে
বুদ্ধিজীবীদের সব মেরে ফেল নীল-নক্সা করে"।
শহীদ হলেন অধ্যাপক আর অনেক ডাক্তার
বধ্যভূমিতে পরিণত হলো ঢাকার রায়ের বাজার।
প্রাণ দিল যতো বাংলার সব সন্তান সর্বশ্রেষ্ঠ
কেঁপে উঠলো বাংলার বুক - অবর্ণনীয় কষ্ট।

ষোলই ডিসেম্বরঃ বাংলায় নতুন সূর্য উঠলো আজি
আত্মসমর্পনে সাক্ষর করলেন জেনারেল নিয়াজী।

নয় মাস ধরে লড়াই এর পর যুদ্ধ হলো শেষ
স্বাধীন হলো তোমার আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এলো মহান স্বাধীনতা
স্মরণ করি চিরদিন সেই আত্মত্যাগের কথা।

(এই লেখাটি আগষ্ট ২০০৪ এ ফিনিক্স, অ্যারিজোনা থেকে প্রকাশিত বার্ষিক পত্রিকা “সিঁড়ি”তে প্রকাশিত হয়েছে)


মন্তব্য

আরশাদ রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ গীতিকবি। আরো লিখুন।

শেখ জলিল এর ছবি

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পুরো ইতিহাস উঠে এসেছে লিখায়।...ধন্যবাদ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

উত্তেজনায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, এই ছড়াটা আগামী ১৬ই ডিসেম্বর স্টিকি করার আবেদন জানিয়ে গেলাম মডুদাদাদের কাছে। আমাদের গীতিকবি কোথায় হারিয়ে গেলেন কেউ জানেন নাকি?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।