অনুবাদ-৪: ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট বুশ

জি.এম.তানিম এর ছবি
লিখেছেন জি.এম.তানিম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০৬/২০০৯ - ১১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(লেখাটি Paulo Coelho এর Like the Flowing River বইয়ের Thank you, President Bush থেকে অনুবাদ করা হয়েছে)

(এই আর্টিকেলটি প্রথম প্রকাশিত হয় ৮ মার্চ,২০০৩ একটি ইংরেজি ওয়েবসাইটে। এটি ইরাক আক্রমণের দুই সপ্তাহ আগের ঘটনা। সেই মাসে এটি ছিল যুদ্ধ বিষয়ে সর্বাধিক প্রচারিত কলাম, যা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন পাঠকের কাছে পৌঁছেছে।)

ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট বুশ
**********************
ধন্যবাদ, মহান নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ।

ধন্যবাদ সবাইকে বুঝিয়ে দেবার জন্যে সাদ্দাম হুসেইন কতটা বিপজ্জনক।আমরা অনেকেই ভুলে গিয়েছিলাম সে তার নিজের দেশের লোক, কুর্দি ও ইরানীদের বিপক্ষে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। হুসেইন একজন রক্তপিপাসু একনায়ক এবং বর্তমান পৃথিবীতে অশুভ শক্তির স্পষ্ট নিদর্শনগুলোর একটি।

এটাই কিন্তু আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার একমাত্র কারণ নয়। ২০০৩ এর প্রথম দুই মাসে আপনি এই পৃথিবীকে দেখিয়েছেন আরো অনেক জরুরী কিছু।

তাই খুব ছোটকালে পড়া একটা কবিতা মনে করে, আপনাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ, কারণ আপনি সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন তুর্কি জনগণ এবং তাদের সংসদ বিক্রয়যোগ্য নয়, এমন কি ২৬ বিলিয়ন ডলার এর বিনিময়েও।

ধন্যবাদ, কারণ ক্ষমতাসীনদের সিদ্ধান্ত ও জনগনের ইচ্ছার মধ্যেকার যে বিশাল ফারাক, তা আপনি পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে, কারণ আপনার কারণেই আজ এটা পরিষ্কার যে হোসে মারিয়া আজনার কিংবা টনি ব্লেয়ার, কেউই জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভোটের প্রতি বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয় না অথবা নূন্যতম সম্মান দেখায় না। আজনার যুদ্ধের বিপক্ষে থাকা ৯০ ভাগ স্পেনীয়ের মতামত অগ্রাহ্য করতে পেরেছেন। যুক্তরাজ্যের বিগত ৩০ বছরের মধ্যে যে বৃহত্তম জনসমাবেশ হয়েছে, সেটাও ব্লেয়ারের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেনি।

ব্লেয়ারকে দশ বছর আগে এক ছাত্রের লেখা সাজানো দলিল নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এ পাঠানো এবং সেটাকে "ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সংগৃহীত অব্যর্থ প্রমাণ" বলে উপস্থাপন করানোর জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ, কারণ আপনিই কলিন পাওয়েলকে পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ছবি ও প্রমাণসহ, যেগুলোকে এক সপ্তাহ পরেই ইরাক নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচির ইন্সপেক্টর হান্স ব্লিক্স প্রকাশ্যে বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।

ধন্যবাদ আপনার অনড় অবস্থানের জন্যে। তার ফলেই জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সভায় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক দ্য ভিলেপ্পিনের যুদ্ধবিরোধী বক্তব্য তুমুল করতালিতে গৃহীত হয়েছে। আমার জানা মতে জাতিসংঘের ইতিহাসে যা আর একবারই হয়েছিল, নেলসন ম্যান্ডেলার কোন একটি বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পর।

ধন্যবাদ, কারণ যুদ্ধকে প্রোমোট করার এতো চেষ্টার পরেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কায়রোতে অনুষ্ঠিত সভায় সদাবিভক্ত আরব রাষ্ট্রগুলো প্রথম বারের মত সর্বসম্মতিক্রমে যেকোন প্রকার হামলার ব্যাপারে নিন্দা জানিয়েছে।

ধন্যবাদ আপনার সেই দ্ব্যর্থবোধক মন্তব্যের জন্য যেখানে আপনি বলেছেন, "জাতিসঙ্ঘের হাতে এখন সুযোগ এসেছে তার উপযোগিতা প্রমাণ করার।" সেই বক্তব্যের পর সবচেয়ে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রও ইরাক এর উপর কোন আক্রমণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ধন্যবাদ, কারণ আপনার বৈদেশিক নীতির জন্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্র বাধ্য হয়েছিলেন বলতে যে এই একবিংশ শতাব্দীতেও "যুদ্ধের নৈতিক ন্যায্যতা থাকা সম্ভব" এবং একথা বলে নিজের সকল বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।

একতাবদ্ধ হওয়ার জন্যে যে ইউরোপ বহুদিন ধরে লড়াই করছে, তাকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টার জন্যে ধন্যবাদ। এই বিপদের সম্ভাবনার দিকে ভবিষ্যতে সবার মনোযোগ থাকবে।

ধন্যবাদ আপনার সেই অর্জনের জন্য যেটা এই শতকে খুব কম মানুষই করতে পেরেছেন। বিভিন্ন মহাদেশের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে আপনি একই লড়াইয়ে সামিল করতে পেরেছেন, যদিও তা ছিল আপনার বিপক্ষে।

ধন্যবাদ আমাদের আবারো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে যে আমাদের কথা হয়তো শোনা যাবে না, কিন্তু আমরা কথা বলতে পারব ।এটা আমাদের ভবিষ্যতে শক্তি যোগাবে।

ধন্যবাদ আমাদের অবজ্ঞা করার জন্যে, যারা আপনার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে হেয় করার জন্যে, কারণ ভবিষ্যতের পৃথিবী এই বঞ্ছিতদের ।

ধন্যবাদ, কারণ আপনাকে ছাড়া আমরা বুঝতে পারতাম না আমাদের আন্দোলনের সক্ষমতা। এবারে হয়তো এতে কোন সুফল পাবো না, কিন্তু পরের বার এটা থেকে আমরা নিঃসন্দেহে উপকৃত হব।

এখন যুদ্ধের এই দামামা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। তাই আমি আপনাকে বলব সেই কথা যা এক প্রাচীন ইউরোপীয় রাজা তার রাজ্য আক্রমণকারীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,"তোমার দিনের শুরুটা সুন্দর হোক, তোমার সৈনিকদের বর্ম সূর্যের আলোতে দীপ্ত হোক, কারণ দিনের শেষে আমি তোমাকে পরাজিত করব।"

আমাদের এই অজ্ঞাতপরিচয় জনতার এই বাহিনী সারা পৃথিবীর রাস্তায় রাস্তায় চেষ্টা করছে এমন একটি প্রক্রিয়া কে থামাতে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ আমাদেরকে এক হতে দেওয়ার জন্যে, কারণ এখন আমরা জানি নিজেদের শক্তিহীন দেখতে কেমন লাগে, এবং কিভাবে আমরা সেই অসহায় অনুভূতি আঁকড়ে ধরে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি।

অতএব আপনি আপনার এই দিনের শুরুটা উপভোগ করুন,এর সাথে আসা সকল বিজয়যশ উৎযাপন করুন।

আমাদের কথা না শোনার জন্যে ধন্যবাদ, আমাদেরকে মূল্য না দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু মনে রাখবেন, আমরা শুনেছি আপনি কী বলেছেন এবং আমরা আপনার একটি কথাও ভুলবনা।

ধন্যবাদ, মহান নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


মন্তব্য

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আমাদের এই অজ্ঞাতপরিচয় জনতার এই বাহিনী সারা পৃথিবীর রাস্তায় রাস্তায় চেষ্টা করছে এমন একটি প্রক্রিয়া কে থামাতে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

আসলেই কি শুরু হয়েছে? আমি তো কোন চিহ্ন দেখি না যুদ্ধ থামার! মন খারাপ

জি.এম.তানিম এর ছবি

বোঝানোর ভুল হয়েছে এখানে, বলতে চেয়েছিলাম, যুদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও লোকজন চেষ্টা করছে সেটাকে থামাতে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আমিও পুরা বুঝাতে পারিনি। তবে তোর কথা বুঝছি। আমাদের চেষ্টা আসলে কোন কাজে লাগে না। বুশ এবং চেনিশাবক মানুষ মেরেই চলে গেল। কোন যুদ্ধাপরাধও হলো না তাদের। এইটা হইলো সভ্যসমাজের নমুনা! এর চাইতে তো আফ্রিকার লোকজনই ভাল (কোন স্বৈরশাসকের জানি বিচার করছিল, ভুলে গেছি)!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

স্পর্শ এর ছবি

কী লাভ হলো?... হবে?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

লীন এর ছবি

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। বেশীরভাগ পয়েন্ট দুঃখজনক কিন্তু উপস্থাপন মজার হইছে।

______________________________________
কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়

______________________________________
লীন

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

এখন আমরা জানি নিজেদের শক্তিহীন দেখতে কেমন লাগে, এবং কিভাবে আমরা সেই অসহায় অনুভূতি আঁকড়ে ধরে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি।

তাতে কী কোন লাভ হয়েছে?

তুলিরেখা এর ছবি

কি আর বলবো?

মানুষে কত সাধ করে বলে টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি, কত সাধ করে বলে স্পেস এজ, কত সাধ করে ভাবে অন্যগ্রহে খুঁজে পাবে প্রাণ, বুদ্ধি, সভ্যতা, কত সাধ করে বলে আর দেরি নেই খুঁজে পাওয়া গেল বলে হিগস বোসন-সব রহস্যের সমাধান হবে।
আর চলতে থাকে আদিমযুগের অসভ্যতা, যুদ্ধ। থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, একখানে থামে তো আরেকখানে শুরু হয়।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রানা মেহের এর ছবি

অনুবাদটা ভালো লাগলো তানিম
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদের মাজেজাটা বেশ মজারই...!
ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুশফিকা মুমু এর ছবি

নাইস! এই বুশটা এখোনো মরেনা কেন?

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

লীন এর ছবি

এখন মরলেই বা কি? ক্ষতি যা করার কইরে ফেলসে।

______________________________________
আমার গরল বন্ধুরা সব কই রে !!!

______________________________________
লীন

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ অনুবাদ।

বুশরে আমার অসহ্য লাগে। সব মানুষের জীবনেরই মূল্য আছে, বিশ্বাস করি। কিন্তু বুশের কথা মনে হইলে মনে হয়, এই মানুষটা দুনিয়াতে না আসলে খুব একটা ক্ষতি হয়ত হতো না, বরং ভালই হতো।

নদী এর ছবি

নৈতিকতা শব্দটাই ভুল বা এর আঞ্চলিক অর্থ আছে এই সত্যটি এই মহামানব (শয়তান)মানবজাতিকে উপহার দিয়েছেন।

এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে তিনি একাই এই মহৎকাজটি করেছেন। একটি সম্প্রদায় বা তার একটি অংশ এই বিশ্বাস ধারণ করেই বড় হয়। তারা কি মরে গেছে? আসলে এই শক্তি দেশে দেশে বিরাজমান।

আমরা একটি মুখোসই চিনি। তার পিছনের মুখগুলো কিন্তু কম নয়। তবুও আমরা আশাবাদী হতে চাই; এ ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে?

নদী

তানবীরা এর ছবি

তারা পাঁচটাই দিলাম কারন এর বেশী নাই। আমার মনের কথাগুলো এখানে লেখা।

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

জি.এম.তানিম এর ছবি

যুদ্ধের মত একটা অশ্লীল ব্যাপারের পক্ষে সভ্যতার রথী মহারথী বলে যারা পরিচিত তারা সবাই বিজ্ঞাপনের ঢংয়ে নৃত্য করেছেন। তবে আমি সেই সব আশাবাদী মানুষের পক্ষে। আজকে আমাদের কন্ঠস্বর শোনা যায় না। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কালকের পৃথিবী আমরা নতুন করে গড়ব। কালকে আমাদের আওয়াজ শোনা যাবে। সকলকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে এবং মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।