অতৃপ্ত জনরোষ প্রায়শ আত্মকলহে মাতে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১২/১১/২০০৭ - ৯:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
বিগতযৌবনা গণবনিতার মতো ক্লান্ত নিরীহ ছিল সেই গাছ বনতলী ঘেঁষে, যুক্ত যা করেছে সে প্রতিবেশে, কখনো হয় নি তার মাপজোক ঢাকে-ঢোলে, পাতায় ফুলে ও ফলে, কাণ্ডে ও মূলে ছাড়া

যে পাখি এসেছে যখন, ফেরায় নি কাউকে কখনো, ঢেরগান প্রযোজিত পান্থপাদপে, নিহিত ভূগোলে, শ্যামে কী কৃষ্ণে নিজ কাণ্ডকলাপে

ছায়ার মায়ায় বেঁধেছে সে বহুজনে, টেনেছে দূরের পাখি, ফড়িং ও মৌমাছি দারুবনতটে

একটা ফুল তার ছুড়েছে কামনাধনুকে তীর
একটা ফল তার ডেকেছে মৃত্যুকে বাড়িতে
একটা পাতা তার গেছে কুঞ্ঝটিকার দিকে
একটা কাণ্ড তার এনেছে সত্যের মহামারি
একটা মূল তার দিয়েছে ভূকম্পনের ভীতি

মাত্র এ পঞ্চদোষে পাড়া-প্রতিবেশী যত মরু ও জলাশয়, পথ ও টিলা-ট্যাঙ্গর, পাহাড় ও গাছপালা, ভূমি ও ঘরবাড়ি ঠুকেছে গাছের নামে পোক্ত নালিশ--- সমাজ নেই এর, এরে একঘরে কর, ফুলে যৌনতা ও ফলে বিষ, পাতার রেখায় এর পাপ লেখা আছে, কাণ্ডে মিথ্যা ও মূলে এর বিনাশমন্ত্র গাঁথা, এরে সমাজচ্যুত কর, কর সাষ্টাঙ্গে নির্মূল

ঘোর বৃষ্টিকে ডেকে আনা হয়--- গাছ তেমনি থাকে
আসে অগ্নিরোদ--- গাছ যেমন তেমন
বজ্র আসে--- কিছুই হয় না গাছের

ক্রমে করাতি প্রস্তুত, ক্রমে পাকানো হয় রশি, সাজ সাজ রব পড়ে পাড়ায়, হৈচৈ-এ জেগে ওঠে জলমীনতক, রাত না ফুরাতে
ভোরে, প্রান্তরে ভেঙে পড়ে পাড়া, পাড়ার গড় চোখ দেখে যে গাছটি আপনা থেকেই নুয়েছে ভূতলে, মানে সে বরণ করেছে ইচ্ছামৃত্যুরে, ফলে হতাশায় জনতা নির্বাক, ফলে বেদনায় বিমূঢ় আক্রোশ

অথচ জনরোষ চেয়েছে দিতে গাছটিকে উচিত শিক্ষা, চেয়েছে তড়িঘড়ি তজ্জাত রোষের দমন

অতৃপ্ত জনরোষমালা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি শেষে হানতে আরম্ভ করে নিজেরা নিজেকে, এ ওর কণ্ঠায় বসায় মারণ কামড় তো ও মটকে দেয় এর নিশপিশে হাত

মুজিব মেহদী

বৃষ্টিগাছের তলায়


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অক্ষমতার আক্রোশ হয়তো নিজের ওপরই এসে তার ঝাল মিটায়, অবশ্য যদি হাতের কাছে ভাঙচুরের জন্য পর্যাপ্ত কিছু মজুদ না থাকে। চোখ টিপি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বৃক্ষের বেদনা বুঝেনি দলবদ্ধ মানুষ অথবা মানুষের দল ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নীচের লিংক দেয়ায় ধন্যবাদ । কিছু কবিতা পড়া যাবে এবার
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

একটা ফুল তার ছুড়েছে কামনাধনুকে তীর
একটা ফল তার ডেকেছে মৃত্যুকে বাড়িতে
একটা পাতা তার গেছে কুঞ্ঝটিকার দিকে
একটা কাণ্ড তার এনেছে সত্যের মহামারি
একটা মূল তার দিয়েছে ভূকম্পনের ভীতি

এই না হলে গাছ! চমত্কার লাগল কবিতা!!
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

মুজিব মেহদী এর ছবি

উৎসাহ বোধ করছি।

...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।