অতঃপর নিষিদ্ধ (এক)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১২/০১/২০০৮ - ২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বয়সটা তখন ঠিক কত হবে, হিসেব করলে ঠিক বেরিয়ে যাবে। ক্লাস এইট কি নাইনের ছাত্র। পাশের বাড়ীর কাজের ছেলেটার কাছ থেকে সবে শিক্ষা নিয়েছি কিভাবে কাগজে মুড়ে, ফেলে দেয়া সিগারেটের টুকরো গুলো কাজে লাগানো যায়। ইতোমধ্যে তার আকিজ বিড়িতে টান দিয়ে সুখের ধুয়াও ছেড়েছি বার কয়েক। স্কুলে গিয়ে আমার এই বিদ্যায় সহযোগী করেছি আরো জনা কয়েক কে। আমিই তখন পালের প্রধান। সাবেক প্রধান রাও আমার এসব কির্তীকর্মে অবাক। কারন হঠাৎ করেই যে আমি বদলে গেলাম।
আমিতো জানি আমার গুরু,পাশের বাড়ির কাজের ছেলেটি। ছেলেটির নাম ছিলো মিজান। আমার সেই বয়সে ওকে সব বিজ্ঞানীর বড় বিজ্ঞানী মনে হত যখন কাঠ আর আয়না দিয়ে ও এমন এক যন্ত্র বানিয়ে দেখাতো যা দিয়ে দেয়ালের এপাড়ে দাড়িয়ে ওপাড়ের সব দেখা যেত। আমি শুধুই অবাক হতাম আর আমার গুরুর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে স্কুলে গিয়ে শেখাতাম আমার শিষ্যদের। দিনে দিনে আমার শিষ্য বাড়তে লাগলো, আর এদিকে আমার বয়স।
এখন আর সিগারেটের ধুয়া গিলতে কষ্ট হয়না, বরং ধুয়া কে গোল গোল করে পাকিয়ে ছাড়তেও শিখেছি। স্কুলের গলিতে দাড়িয়ে রিক্সা করে যাওয়া মেয়েদের দেখিয়ে এমন ধুয়া ছাড়া আমার টিফিন পিরিয়ডের প্রধান কাজ।
আমার গুরু মিজানও আজকাল আমাকে একটু সমীহ করে, শিষ্য হিসাবে। ইদানিং ওর বিদ্যার বাহারও বদলে গেছে খানিকটা।একটু যেনো রঙ্গীন হয়েছে আরো। ইদানিং পিন সাটা কিছু ছোট ছোট বই নিয়ে আসে, রঙ্গীন ছবি দেয়া বই, নতুন রাস্তার সওজের পাইপে বসে সেই বই গুলো দেখি আর পুলকিত হই ভেতরে ভেতরে। নতুন এই শিক্ষা বস্তুটাকে আমার গুরুর অনুমতি নিয়ে নিয়ে যাই স্কুলে, বন্ধুরা বিস্মিত,অবাক। ওদের টানাটনিতে অমূল্য বইটার এক পাতা ছিড়েও যায় খানিকটা। ধমক দিয়ে নিয়ে আসি দিন কয়েক তোষকের নীচে রেখে ফিরিয়ে দিই গুরুকে।
গুরুর এবারের কাজে আমারও অবাক হবার পালা। টিফিন পিরিয়ডে একদিন দেখি লুঙ্গি পড়া গুরু আমার দাড়িয়ে আছেন স্কুল গেটে। আমার শিষ্যদের কাছ থেকে দূরে সরে জানতে চাইলাম '' কি ব্যাপার?''
গুরু বললেন,''চলো এক জায়গায় যাবো''
গুরুর আদেশ বলে কথা। শিষ্যদের বললাম, বাসা থেকে খবর এসেছে, যেতে হবে।
প্রথম স্কুল পালালাম সেদিন। গুরু নিয়ে গেলেন, রংমহল সিনেমা হলে। এক টিকেটে দুই ছবি। গুরুর কিন্তু টিকেট কিনলেন না, দরজায় দাড়ানো লোকটার সাথে কথা বলে ঢুকে গেলন আমাকে নিয়ে ভেতরে। অন্ধকার সয়ে আসতে বিরাট পর্দায় দেখলাম সেই পিন আটা বইয়ের সচল দৃশ্য। সব অনুভুতি এক হয়ে অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম। ঘন্টা দেড়েক পড় দরজার ঐ লোকটি আমাদের বের হয়ে যেতে বলল। গুরু বললেন ''চলো যাই।''

আমি তথনো বাকরুদ্ধ। কি ভাবে এমন এক অভিজ্ঞতা হয়ে গেলো। মনে মনে তখন ভাবছি কিভাবে এমন অভিজ্ঞতা স্কুলে বর্ণনা করবো।

সেই থেকে শুরু আমার। স্কুল পালিয়ে নিষিদ্ধ সিনেমা দেখা, অশ্লীল আর নিষিদ্ধ সব কিছুর প্রতি এক তীব্র আকর্ষন তখন থেকে বেড়েই চললো। এরপর আরো অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি বয়স বাড়ার সাথে সাথে। কলেজে পা রাখার আগেই জানলাম নিজস্ব বান্ধবী না হলে এখন আর মান থাকেনা। কিন্তু এতো আর সহজ সাধ্য কান্ড নয়,এতা নয় টিকেট কেটে সিনেমা দেখা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? বান্ধবী ছাড়া যে মান থাকছে। বয়সের পরিক্রমায় নতুন অভিজ্ঞতার হলো শাখা বিস্তার। প্রেম -ভালোবাসার পার্থক্য খুজঁতে নয়, নয় কোন রূপসীর মনের রং-এ নিজেকে রাঙ্গাতে শুধূই একটি মেয়ে কে শুধু নিজের করে পাবার আকাঙ্খায় প্রত্যাখাত হয়েছি বহুবার। নিষিদ্ধ আর অশ্লীলতা যে কখন আমার রুচীবোধ পালটে দিয়েছে, বোঝতে পারিনি। আঘাত এনেছে আমার শিক্ষায় আমার ব্যক্তিত্বে। মন শুধু তখন একদিকেই ছুটছে। ইতোমধ্যে বার কয়েক ঘুরে এসেছি বিভন্নি নিষিদ্ধ পল্লী। এখন আমার সব ইয়ার বন্ধু হলো, সব আমারই মতো।

অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেলো এক। অবশেষে জীবনে আমার প্রেম এলো, না না ঠিক প্রেম কিনা বোঝিনি তবে একজন শুধু আমার হলো, যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করে, আর আমি যার সবকিছুকেই ভালো বলতে পারি। স্বর্নালী মেয়েটিকে আমি সত্যি শুধূ আমার করেই পেলাম। হারিয়ে গেলাম ওর মাঝে আবিষ্কার করলাম নিজেকে অন্যভাবে। বিস্মিত হই যখন বন্ধুদের অশ্লীল ইংগিত আমাকে আর উৎসাহ যোগায় না, অবাক হলাম তখন যখন স্বর্ণালীর উষ্ণতা আমাকে লজ্জিত করে, আমি যেনো ভূলে গেছি আমি পুরুষ। এই কি তবে ভালোবাসা যা শুধু মন রাঙ্গায়।
বদলে যাওয়া আমাকে নিয়ে আমি তৃপ্ত এখন, এখন আর কোন নিষিদ্ধতার পতি আমার উৎসাহ নেই আমি আমার স্বর্ণালী কে নিয়েই তৃপ্ত। ও আমার এখন ঘরনী, ভালোবাসার সব উপুর করে আমি দিয়েছি তাকে।
ইদানিং তবু যেনো কেমন আনমনা থাকে সে, আমার ভালোবাসার ধন, মনে প্রশ্ন জাগে, আমি তো তৃপ্ত তাকে নিয়ে কিন্তু
স্বর্ণালী কিতৃপ্ত আমাকে নিয়ে??
এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে ভাবায়, কিন্ত উত্তর জানতে চাইনা।

...................প্রীয়ক


মন্তব্য

জিফরান খালেদ এর ছবি

জটিল সিনেমারে ভাই...

তৃপ্তি-অতৃপ্তির কাহানী পইড়া বড়ই আরাম পাইলাম...

চালায়া যান। হাক মাওলা!!!

মুজিব মেহদী এর ছবি

কী সব কথা যে মনে করিয়ে দিলেন প্রীয়ক!
মনে হয় বলি, আবার মনে হয় না।
থাক বরং।
আচ্ছা, আপনি কি প্রীয়ক রশীদ?
..................................................................................
শোনো, বীণা আমি বাজাইনি প্রতিবারই নিজে, এমনও হয়েছে
বীণায় রেখেছি হাত, নিজেই উঠেছে বীণা বেজে!

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

না ভাই মুজিব মেহেদী,
আমি প্রীয়ক রশীদ নই। তবে আমি প্রীয়ক রশীদের একসময়ের সহযোদ্ধা।
আমি শুধুই প্রীয়ক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।