ক্রমাগতই পিছিয়ে পড়ে যারা; ক্রমাগতই পেছনে ঠেলছি যাদের

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০২/২০০৮ - ২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(ক্যামেলিয়া আলম)

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী বন্ধুকে আমি দেখেছি কত কষ্টে উঠছে সিঁড়ির একটার পর একটা ধাপ। এই ওঠার কষ্টের জন্যে ও প্রায়ই ক্লাসে আসতে পারতো না। বর্তমানে ও ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিন্তু তারপরও এই যে সবার মতো না হবার ব্যর্থতার কষ্ট ও সবসময়ই বয়ে বেড়ায়। ওর একটাই কথা আমি তো তোদের মতো একা চলতে পারি না। আমি টোটালই একজন ডিপেন্ডেন্ট মানুষ। সেই থেকেই আমার প্রায়ই মনে হতো এমন কি হলে একজন শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষটি কখনোই নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা মনে করবে না। একজন মানুষ তখনই এরকম হীনমন্যতা থেকে মুক্তি পবে যদি মানুষটিকে সেলফ ডিপেন্ডেন্ট করানো যায়। কিন্তু আদৌ কি এটি সম্ভব ?

জাতিসংঘ সনদের একটি ধারায় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অন্তত দুটি কোটা রাখা হবে প্রতিবন্ধীদের জন্য। মূলত একজন প্রতিবন্ধী মানুষও যেন একজন সাধারণ লোকের মতো জীবন ধারণ করতে পারে সে লক্ষ্যেই প্রস্তাবটি রাখা হয়েছে। এবার দৃষ্টি ফেরাই আমার এই দেশে।

আমাদের দেশের মূলনীতি নির্ধারণীর জায়গা জাতীয় সংসদ। একটি কোটাও কি পূরণ হচ্ছে কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধীকে দিয়ে? এমনকি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য কি সেখানে একটি হুইল চেয়ারও কেনা হয় সেই ভবনে?

চারপাশে এত সুপার শপিং কমপ্লেক্সের ছড়াছড়ি, রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মার্কেট, সেখানে কি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের উঠবার কোনো প্যাসেজ রাখা হয়েছে ? বা আলাদা কোনো ইকুইপমেন্ট?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানেই নেই কোনো লিফট। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উঠতে হয় অন্যের কাঁধে ভর করে, তাও আবার সরু সরু সিঁড়ি দিয়ে।

আরেকটা ব্যাপার, যেখানেই লিফটের ব্যবস্থা থাকুক না কেন, বেশির ভাগ স্থানগুলোতেই দোতলা বা তিনতলা বা বেশ অনেকগুলো সিঁড়ির ধাপ বেয়ে যেতে হয় লিফটে। আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টগুলোর কথাই ধরি, সেখানেও এ চিত্রের বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়বে না।

তাহলে?

এই মানুষগুলো কি সব ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে পিছিয়ে পড়া কিংবা অযোগ্য হিসেবে আবিষ্কার করবে?


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমাদের বাসে ট্রেনে লঞ্জেও কিন্তু তাদের উঠার জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই
হাসপাতালগুলোর অবস্থাও তাদের প্রতিকূলে

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধী দেখি যখন, খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আবার ভুলেও যাই। এভাবে আসলে কখনো ভেবে দেখিনি।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

উন্নত বিশ্বে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী শব্দটাই বদলে ফেলা হচ্ছে। handicapped না বলে বলা হচ্ছে specially abled. এটা করা হচ্ছে ঐ সমাজটাকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্য এবং তাদের কিছু বিশেষ ক্ষমতা থাকার ব্যাপারটিকে অনুমোদন দেবার জন্য।

আমাদের অবস্থান সম্পর্কে এখনও অধৈর্য হবার সময় আসে নাই। কারণ সেখানে স্বাভাবিক মানুষের সব মৌলিক অধিকারগুলোই এখনও সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। সুবিধাবাদি মানুষ আগে নিজের কথা ভাবে তারপর অন্যের।

আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। শুধু ধৈর্য্য ধারণের ক্ষেত্রে দ্বীমত করলাম হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

প্রতিবন্ধীদের অলিম্পিক নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি ছবি দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম। কষ্টে এবং আনন্দে। অপরিসীম মানসিক শক্তির জোরে শারীরিক ত্রুটি আর অক্ষমতাকে তুচ্ছ করে ফেলে যথাসম্ভব পূর্ণ জীবন যাপন করতে অদম্য যাঁরা, আনন্দ হয়েছিল তাঁদের জন্য।

লেখাটি চমত্কার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

দাঁড়াও অতিথি
জন্মিলে যদি তব এ ব্লগে
তিস্ট ক্ষনকাল.....

**ভবিষ্যতে মন্ত্রী হবেন এরকম যারা এই পোস্ট দেখবেন,তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।