আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০২/২০০৮ - ২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ নাকি নিজেকেই সবচেয়ে ভালবাসে। আর তাই মানুষ অন্যের প্রেমে পড়ে। প্রেমের মধ্য দিয়ে নিজেকে সুখী করতে চায়। কিছুদিন আগেও আমি কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারতাম না। তবে এখন করি। প্রেমের পেছনে কী রসায়ন রয়েছে বা মানুষ কেন প্রেমে পড়ে এ নিয়ে বোধ হয় বিস্তর গবেষনা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। তবে নিজেকে কতটুকু ভালবাসলে প্রেমে পড়ে নিজেকে কষ্ট দেয়া যায়,অপমান করা যায় , ছোট করা যায় জানি না।এনিয়ে কোন গবেষনা হয়েছে তাও জানি না। তবে খুব জানতে ইচ্ছে করে। একটু খুলে বলি।
আমার অন্তর্মূখী স্বভাবের জন্য কিনা জানিনা আমার বন্ধু ভাগ্য খুব একটা ভাল নয়। যে কজন বন্ধু আছে তাদের সাথেও কোথায় যেন একটা দূরত্ব থেকেই যায়। যেটা কোন পক্ষই ঘুচাতে পারি না। হঠাৎ করেই ভাগ্য দেবী আমার প্রতি মনে হলো কিছুটা সুপ্রসন্ন হলেন। একজন বিশেষ মানুষ আমার বন্ধু হয়ে উঠল। আমার মত কিছুটা অন্তর্মূখী হলেও সে দারুণ সংবেদনশীল এবং সৃষ্টিশীল একজন মানুষ। আমার চারপাশের যে দেয়াল কেউ ভাঙ্গতে পারে নি সেটা সে নিমেষেই গুড়িয়ে ফেলল। আমার মনে হলো এতদিন বুঝি তার মত বন্ধুর অপেক্ষায় ছিলাম।
কিন্তু আমার এই সুখ বেশীদিন টিকল না। হঠাৎআমরা দুজনই আবিষ্কার করলাম আমরা শুধু ভাল বন্ধু নই। আরও বেশী কিছু। একে অন্যকে বেশীক্ষণ না দেখে থাকতে পারি না। সারাদিন কথা বলেও কথা শেষ হয় না ।তার পর মোবাইলে কথা চলতে থাকে। আমার মনোজগতে কি যে আলোড়ন শুরু হলো তা বলে বুঝানো যাবেনা। প্রচন্ড সুখানুভূতির পাশাপাশি একধরণের বোবা কষ্ট যেন আমাকে চেপে ধরলো। দুজনই প্রচন্ড স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করি কিন্তু কোথায় যেন সব আটকে যায়। কেউ কিছু প্রকাশ করি না। এ দূর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চিরকালের মুখচোরা আমি তাকে সব খুলে বললাম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সমস্ত ঝুকিঁ নিয়ে । কী আশ্চর্য সেও আমার প্রতিএকই অনুভূতির কথা স্বীকার করলো । ব্যস ,এখান থেকে আমার জীবন নতুন ভাবে শুরু হতে পারতো আর দশজন সুখী প্রেমিক/প্রেমিকার মত।
না সেটা হয় নি । কিছুদিন পরই বুঝলাম আমাদের ভালবাসা আমাদের বন্ধুত্বকে গলা টিপে হত্যা করেছে।। সে আর যোগাযোগ রাখতে চায় না। তার ভালবাসা নামক মোহ(?) কেটে গেছে। কিন্তু আমার ভালবাসা যে আমাকে মুক্তি দেয়না। আমার মোহ তো কাটে না। যোগাযোগ করলে সে এড়িয়ে যায়। মাঝে মাঝে ভীষণ বাজে ব্যবহার করে। কষ্টে বার বার রক্তাক্ত হতে থাকি । নিজেকে কেন অপমান করি , ছোট করি জানিনা। তবু হাল ছাড়ি না । কেন জানি বার বার মনে হয় সে ভুল বলছে অথবা কোন খেলা খেলছে । কোন এক সুন্দর আলো ঝলমল সকালে উঠে দেখব সব ঠিক হয়ে গেছে।হায়রে ভালবাসা! আজকাল খুব অপরাধবোধে ভুগি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যওয়ায়।কোথাও পড়েছিলাম(নাটক, উপন্যাসের সংলাপে নয় কোন বিশ্লেষনধর্মী লেখায়) যে প্রথম প্রেমের আকর্ষ্ন, মোহ একসময় কেটে গেলে ও ভালবাসা নাকি হারায় না, থেকে যায়। হয়তো অন্যরূপে প্রকাশিত থাকে। কিন্তু আমার মত সহজ সাদামাটা মানুষের জীবনে তার প্রতিফলন দেখি
না । আমার কাছে ভালবাসার পরীক্ষায় সে বার বার ফেল করে। কোনভাবে ই তাকে পাশ করাতে পারি ন॥
আজকাল সামাজিক অনুষ্ঠান গুলো এড়াতে পারলেই বাচিঁ॥অন্তত নানা প্রশ্ন বানে জর্জরিত হওয়া থেকে তো মুক্তি পাওয়া যাবে এই আশায়।কিন্তু মুক্তি কি এত সহজ? পরিবার,সমাজ,কর্মক্ষেত্র সবাই যে মুখিয়ে আছে আমাকে আক্রমন করতে।আমার ভালবাসার শক্তি নিয়ে বার বার দাড়াঁতে চাই সব কিছু উপেক্ষা করে। জানি না আমার অপেক্ষার পালা শেষ হবে কিনা। কেবল কবিগুরুর গানের লাইনগুলো কেন জানি বার বার মনে পড়ে-
আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়।
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথে যে জন ভাসায়।
অবন্তী


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।