আমসি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১২/০৩/২০০৮ - ৩:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা পাঁচজন বিকাল চারটার মধ্যে বাসার সামনের মাঠে হাজির হতাম প্রতিদিন।রুবেল মামা,মাহিদ,রায়হান,আমি আর সুরভী।রুবেল মামা সবসময় ভালমানুষ ভাব নিয়ে থাকত আর ১০০ নাম্বারের ব্যবধানে ক্লাসে ফ্রাস্ট হতো।মাহিদ আর সুরভী গোবেচারা,আমরা বড়রা যা বলতাম বোকার মত তাই মেনে নিতো।সবচেয়ে দুষ্টু ছিল রায়হান।আর আমি মনে হয় তখন একটু গাধাই ছিলাম।তবে আব্বু ছাড়া আমরা পাঁচজন কারো ধার ধারতাম না,কারো কথা শুনতাম না,ভয়ও পেতাম না কাউকে।

ক্লাস থ্রি কিংবা ফর এ পড়ি,রবিন হুড সবার হিরো।টিভি দেখে দেখে তাদের অনুকরন করে তীর-ধনুক বানাই। তীর-ধনুক ছুরাছুরির টার্গেট হয় আমার আব্বাজানের প্রানের প্রিয় কলা গাছগুলো।তার চেয়েও অমানবিক কাজ হত সিরিঞ্জ দিয়ে কলা গাছের পানি সব বের করে নিলে।কলাগাছগুলো শুকিয়ে মরে মরে অবস্থা।আব্বু রেগে আগুন-"বলছিনা ছেলেদের সাথে খেলাধুলা আমি পছন্দ করি না।মেয়েমানুষ মেয়েমানুষের মত থাক।আমি যেন আর কোনদিন ছেলেদের সাথে খেলতে না দেখি।"কঠিন শাসন।দুই তিন দিন সবাই চুপ।কিন্ত এরপর আবার আগের মত।

আমাদের পাশের বাসায় দুইটা বড় বড় আম গাছ ছিল।বৈশাখে ছোট ছোট আম গছের নিচে বসেই খেতাম কিন্তু যখন আর উদর পুর্তি সম্ভব হত না তখনই বিপদ হত।এতো আম বাকি এখন কি করব?ঠিক হল রায়হানের রেসিপি অনুযায়ী লবন,মরিচ দিয়ে পলিথিনের ব্যাগে করে আমগুলোকে আধা হাত মাটির নিচে পুঁতে রাখা হবে এবং পরে সময় সুযোগ মত আমগুলো আবার খাওয়া হবে।আর এই দীর্ঘমেয়াদি রেসিপির নাম হল আমসি।দীর্ঘমেয়াদি এজন্য যে কোনদিন সেই আমসি মাটির নিচ থেকে আর তোলা হত না।নতুন করে গাছ থেকেই পেরে খেতাম।

এখন সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যস্ত।পুরনো আমসি যেমন পরদিন কেউ মনে রাখত না,পুরনো মানুষগুলোও এখন হারিয়ে গেছে।ফ্রাস্ট বয় রুবেল মামা এইচ এস সি শেষ পর্যন্ত পাস করতে পারেনি।মাহিদ তার ভাইকে অনুসরন করে লেখাপড়ার সমাপ্তি টেনেছে ক্লাস এইটে।আর রায়হান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে,একই সাথে সংসারের কর্তা হয়ে বসেছে।নানাভাই মারা যাবার পর দুই ভাইবোন আর নানুকে নিয়ে একাই মিরপুরে পরে আছে। আমার গুনধর ছোটবোন,হবুডাক্তার সুরভী মাশাল্লাহ অনেক বেয়াদব হয়েছে।আমি গাধা কেন যেন গাধাই রয়ে গেলাম?

তখন ঢাকার বাসা মানেই ছিল তালতলার টিন সেডের বাড়ী।গ্রাম থেকে যারাই পড়তে আসতো সবাই আশ্রয় নিত সেখানে।মিলন মেলা ছিল আমাদের তালতলার বাসা।কিন্ত আজ সবাই প্রতিষ্ঠিত সবাই নিজেদের ফ্ল্যাট বড়ি নিয়ে ব্যস্ত।আর আমাদের তালতলার বাসা আগের মতই আছে তবে নিরব,নিস্তব্ধ।

-নিরিবিলি


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

কনফুসিয়াস এর ছবি

স্মৃতি আর আমসি। দুটোই পুরনো হলে বেশি জমে।
ভালো লাগলো।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।