আমেরিকা ও বাথরুম সমাচার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৯/০৩/২০০৮ - ১১:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার মনে হয়, দেশ থেকে আমরা যারাই বিদেশে এসেছি, তাদের সবারই টয়লেটের বিদেশী ব্যবহার নিয়ে কম -বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজন্ম বদনা ব্যবহার করে অভ্যস্ত, হঠাত টয়লেট পেপার তার স্থলাভিসিক্ত হবে, পশ্চাতদেশ তা সহজে মেনে নিবে, তা তো হয় না!
যাহোক, আমার শুরুরদিকের কিছু কাহিনী বলি। আমার এক মামা স্বপরিবারে থাকেন ম্যারীল্যান্ড এ। তো আমি এসেছি স্টুডেন্ট ভিসায়। মামাদের এখানেই থাকবো। এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেল মামাতো ভাই, বাকি সবাই তখন কাজে। সেও কাজ থেকে ১ ঘন্টার ছুটি নিয়ে এসেছে। আমার সাথে আরেক বাঙ্গালি ছেলে (সঞ্চয়)এসেছে, আমেরিকাতেই থাকে, তাকে রিসিভ করতেও তার ভাই, বন্ধু এসেছে। তো আমার মামাতো ভাই বললো, এখন বাসায় গিয়ে কাজ নেই, তারচেয়ে সঞ্চয়দের বাসায় যাই সবাই মিলে একসাথে, ওখানে খাবার দাবার রেডি আছে, খেয়ে দেয়ে তারপর তোমাকে বাসায় ড্রপ করে অফিসে চলে যাব।
গেলাম সঞ্চয়দের বাসায়। দীর্ঘ যাত্রা শেষে এসে পৌছেছি, ভাবলাম টয়লেটে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। টয়লেটে ঢুকে দেখি মেঝে কার্পেটিং করা। যাহোক, আমি ছোট টয়লেট করে সিঙ্কে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসলাম। বের হতে না হতেই মামাতো ভাই জিজ্ঞেস করে, কি বাবু, পা ধোয়ার ব্যবস্থা নাই টয়লেটে ? ওয়েলকাম টু আমেরিকা !
সঞ্চয় বলে, হ, আমেরিকায় পা ধোয়া নিষেধ আছে, বুশ মামা না কইরা দিছে। হয় হাত ধোও না হয় গোসল কর, মাগার পা ধুইতে পারবা না!
অতঃপর খাবার দাবারের পর মামাতো ভাই আমাকে বাসায় ড্রপ করে, বিভিন্ন রুম টুম দেখিয়ে চলে গেল।
আমিও কাপড় চোপড় ছেড়ে টয়লেটের দিকে গমন করলাম। উদ্দেশ্য ২ দিন ধরে চেপে রাখা চাপ হাল্কা করা, আর একটা লম্বা গোসল দেয়া। টয়লেটে ঢুকে পেট হাল্কা করছি, আর আশেপাশে তাকিয়ে বাথরুমের ডেকারেশন দেখছি। আমাদের দেশে টয়লেট মানে ভেজা মেঝে, ২/১ তা বালতি, মগ, বদনা ইত্যাদি। আর এখানে দেখি শুকনা মেঝে, দেয়ালে ঘড়ি, বালতি টালতি নাই... গোসলের জন্য বাথটাব...কিন্তু একি! কোন বদনা নাই! একি যন্ত্রনা?!? দেয়ালে ঘড়ির মত অদরকারী জিনিস আছে, অথচ বদনার মত অতীব প্রয়োজনীয় জিনিস নাই এটা কেমন কথা? এতখনের পেট হাল্কা করার আনন্দ মুহুর্তেই উড়ে গেল। দ্রুত চারপাশে আবার চোখ বুলালাম। সম্বল বলতে পেলাম কমোডের পাশেই ঝুলন্ত টয়লেট পেপার! (এতক্ষণ ভুলেও টয়লেট পেপার দেখি নাই...কারন আমার চোখ মেঝেতে ছিলো...বদনা আবিস্কারের আশায়)। কি আর করা, টয়লেট পেপার দিয়ে কাজ সারলাম আর আমেরিকাকে এক প্রস্থ গালাগালি করলাম। কিন্তু তারপর ও আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস, বদনা আছেই, কোথাও না কোথাও । চার চার টা বাঙ্গালি এই বাড়িতে, অথচ বদনা থাকবে না, অসম্ভব ব্যাপার... । অতঃপর বদনা অনুসন্ধানে নেমে পরলাম। বদনা মিললো না, কিন্তু কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর একটা মগ পাওয়া গেল, কিছুটা আড়ালে। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো...এই তাহলে ব্যাপার? আমার সাথে মামাদোবাজী?
যাহোক, এবার গোসলের পালা। উঠে পড়লাম বাথটাবে। শাওয়ার ছাড়লাম, কিন্তু পানি পরার নাম নেই। উপরন্ত, শাওয়ার এর নিচে কল টাইপের জিনিস টা দিয়ে পানি পরা শুরু করল। ভালো যন্ত্রনা। নিচের বস্তুটা দিয়ে পানি পরছে কেন? আমি তো ওটাকে কিছু করি নাই? আর, শাওয়ারের নব ঘুরালাম, শাওয়ার দিয়ে পানি পরছে না কেন? শাওয়ার কি নষ্ট?নাকি আমি কোন কিছু নষ্ট করে ফেললাম?
আমার মেজাজ গেল চড়ে। প্রথমে শৌচ কাজ করতে দিবে না, এখন গোসল করতে দিবে না, তামাশা নাকি? মামা বাড়ির আবদার? এটা তো আমার মামা বাড়ি... আবদার তো করবো আমি! যাহোক, কিছুক্ষণ এই নব ওই নব টিপাটিপি করে শাওয়ার দিয়ে পানি বের করালাম। যাক, বাঁচা গেল! আমি তাহলে কিছু নষ্ট করি নাই! সেইরকম একটা গোসল দিয়া বের হলাম। মনের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ ও, এক টয়লেটে ঢুকেই কত কিছু আবিস্কার করে ফেললাম!
ছিলাম বোকা...

(রেনেট)

ranet_usa@yahoo.com


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা ।
অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
জাঝা

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল ভাই। পারলে একটা বদনা পাঠিয়ে দিয়েন...বড় কষ্টে আছি।
~রেনেট

তারেক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
বদনা তুমি বেদনা!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

কালো কাক এর ছবি

প্রবাসী বাঙ্গালীদের উপকারে একটা রাবারের বদনা আবিষ্কার করা জরুরী। ফোল্ড করে হ্যান্ডব্যাগে ভরে নেয়া যাবে যেকোন জায়গায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।