ঘরে ফেরা হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৬/০৪/২০০৮ - ২:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘরে ফেরা হয় না

আমারিকার সাথে বঙ্গবাসীর একটা লাভ-হেট সম্পর্ক আছে। তারা যেকোনো দেশী আড্ডাতে করুণ মুখে গল্প করবেন, আহা দেশে কত ভাল ছিলাম। সকালে মরজিনা চা বানিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো… সাথে সাথে পাশ থেকে দুচারজন স্বপ্নময় দৃষ্টিতে বলবেন করবেন, মায়ের আচার আর পুদিনার চাটনি।সেখান থেকে নিত্য নতুন রেসিপি সংগ্রহ। তখন আমি নতুন এসেছি, ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি এসব আড্ডাতে। মায়ের সাথে যাই…তাই এসব আলোচনাতে অংশ নেয়ার খুব একটা দরকার পড়ে না। শুধু শ্রোতা হয়ে শেষ রক্ষা হল না, কদিনের মধ্যেই মার কাছে কম্পলেইন আসা শুরু হল, “আপা আপনার মেয়েটা এত্ত অহংকারী…”। এরপরের ঝারির পরিমাণ বলাই বাহুল্য।

পরের আড্ডাতে তাই বলেই ফেললাম, তো দেশে ফেরত গেলেই তো হয়? এটা শুনে তারা এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন আমি এই মাত্র অন্য কোন গ্রহ থেকে আমেরিকাতে লান্ড করেছি। তারপর হটাত্ করে যেন আমাকে এ দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে সবাই একসাথে বলতে লাগলেন “ দেশে কিভাবে মানুষ থাকে, লোডশেডিং, জ্যাম, ছিনতাই…”।

ফিরে আসার পথে ভাবি এত কষ্টের মেরিকাতে থাকার জন্য বাঙালী কেন এত উতলা? সবাই বলে দূঃখের কথা তবু কেন দেশের সোনার সন্তানরা দেশে ফেরত যেতে চায় না?
কারণ অবশ্য সহজ সরল। মোটা মাইনে আর অবাধ স্বাধীনতা। এক্ষত্রে বাংলাদেশিদের দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রতিষ্ঠিত তথা চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, সবুজপাতাধারী এবং ছাত্র।

প্রতিষ্ঠিতরা দেশে ফেরত যেতে চান না তার কারন হিসাবে বলেন, দেশে গিয়ে কি করব? ছেলে মেয়েরা গরম সহ্য করতে পারে না, ভাল স্কুল কলেজ নাই, হামানা হামানা…
আমি বলি, ভাই আপনি যদি গ্রামের স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারীন, আপনার ছেলে মেয়ে কেন পারবে না??
ভাবীদের ভাবনা আরও খোলামেলা, “আমি বাবা, ওই বুড়ি শ্বশুরি আর ননদের মুখ ঝামতা খেতে পারবো না। অনেকে আবার একটু রেখে ঢেকে বলেন “এখানে জীবনের নিরাপত্তা আছে…”।

এবার আসি দ্বিতীয় গ্রুপে, যারা F1 ভিসা নিয়ে আসে। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। এদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে সবুজ়পাতা পাওয়া যায়। এরা দেশে ফিরতে চায় না তার প্রধান কারণ ভীষন high tuition rate. যা দিতে অনেকের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে, কেউ আবার চড়া সুদে স্টুডেন্ট লোন নেয়। পড়া শেষে তারা ভাবে, যত টাকা খরছ করে পড়লাম, তার খানিকটা অন্তত তুলে নিয়ে যাই। সময়ের সাথে সাথে খানিকটাই , সবটা, আরেকটা হয়ে যায়…

বাঙালীর আর ঘরে ফেরা হয় না… দেশ আর দেশবাসীর সাথে দূরত্ব যেন দেশপ্রেমকে আরও গাঢ় করে তুলে। আমরা আক্রান্ত হই দুঃখ বিলাসে। একটু বাংলা কথা বলার জন্য অপরিচতকে আপন করেনি, নতুন বাংলা গানের জন্য ঘুরে বেরাই youtube আর polapain.com, দেশের খবর জানার জন্য পরে ফেলি ৩-৪ তা দৈনিক পত্রিকা, নতুন বইয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াই নানা পাইরাটেড সাইট গুলোতে। ঠিক তখনি বুঝে যাই দেশী আড্ডার করুণ মুখের স্মৃতিচারনের কারণ।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

আহা দেশে কত ভাল ছিলাম। সকালে মরজিনা চা বানিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো…

“ দেশে কিভাবে মানুষ থাকে, লোডশেডিং, জ্যাম, ছিনতাই…”

দারুন লিখেছেন...কিন্তু আপামণি আপনার নামটা তো দিলেন না????
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

অতিথি লেখক এর ছবি

নদীর একূল কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস...

সুখ নাই রে পাগল!
আছে শুধু ৭০ এর ঘরের নামতা।
~রেনেট

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালই বলেছেন......
বাংলো-মেরিকান'দের ঘরের কথা ফাঁস হয়ে গেল না তো? হাসি

কালবেলা

অপরিচিতা এর ছবি

ইসস্‌ নাম দিতে ভুলে গেছি...

অপরিচিতা

oporecheta@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত। খুব ভাল লিখেছেন। কিছুদিন আগে দেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এমন ভাব করল যেন আমি স্বর্গে থাকি। দেশে বসে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না যে প্রবাসীরাও কষ্টে আছে। কি আশ্চর্য, সে দিনের সেই আমি আজ যেন তাদের কাছে অধরা। মনের অজান্তেই কখন যেন ১২০০০ মাইলের পাথির্ব দূরত্ব তৈরি করেছে হাজার মাইলের মনের ব্যবধান।

এস্কিমো এর ছবি

অতিথি লেখক লিখেছেন:

ভালই বলেছেন......
বাংলো-মেরিকান'দের ঘরের কথা ফাঁস হয়ে গেল না তো? হাসি

কালবেলা

- না মোটেও ফাঁস হয়নি। এটাতো মাত্র ধূয়াঁ দেখলেন - আগুনতো অনেক বড়।

মোল্লা বাহাউদ্দিনের একটা বিরাট উপন্যাস - "স্বপ্ন নগর নিউইয়র্ক" পড়ে দেখতে পারেন।
বিস্তারিত লিখেছন ভদ্রলোক।

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

অতিথি লেখক এর ছবি

তীরন্দাজ,
বইটা পেলে অবশ্যই পড়ে দেখার ইচ্ছে রইল! ধন্যবাদ আপনাকে।

কালবেলা

অতিথি লেখক এর ছবি

বইটা কোথায় পাব? প্রকাশক কে?

মৃদুল আহমেদ

ময়না 2 এর ছবি

ভালই লিখছেন। কিন্তু এই সব কেন লিখেন?
মন খারাপ হয়ে যায় তো!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।