অফিসের দিনপঞ্জি : বউ বিভ্রাট

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৬/২০০৮ - ৩:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(যথারীতি আবার এলাম আমার অফিসের কাহিনী নিয়ে। তবে এবারের কাহিনী ঠিক অফিসের নয়। আমারই এক সহকর্মীর ব্যাক্তিগত জীবনের ঘটনা। সঙ্গত কারনেই আবারো নামগুলো পাল্টে দিলাম। সত্যি ঘটনা বলার এই এক ঝক্কি।)

আমাদের অফিসের আলম ভাই খুর অমায়িক, মিশুক এবং সৎ একজন মানুষ। বয়স হবে চল্লিশ/পয়তাল্লিশ। অফিসে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। অফিসের যেখানেই যান সেখানে যেন হাসির বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তাঁর মতো লোক হাসাতে পারা মানুষ আমি আমার জীবনে আর দেখিনি। এমন একজন নিখাদ ভালো মানুষের একটাই সমস্যা ছিল। অবশ্য অনেকে এটাকে সমস্যা বলতে নারাজ হবেন। তারা হয়তো বলবেন এটা তাঁর অন্যতম গুন। এমন গুন সংসারে কজনের থাকে? যাই হোক - দোষ হোক আর গুন হোক - বিষয়টা হচ্ছে তিনি খুব সহজে মেয়েদের প্রেমে পড়ে যান। আর মেয়েরাও (বেশিরভাগ) তাঁর সঙ্গ খুব উপভোগ করে। আলম ভাই নিজে তাঁর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে গুন হিসেবে জাহির করেন সবসময়। আর আমরা যারা তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ তারা প্রায়ই তাঁর কাছ থেকে শুনতে পাই মেয়েদের নিয়ে ঘটে যাওয়া তাঁর জীবনের না না ঘটনা।

এমনি এক ঘটনা এখন আপনাদের বলছি - বছর পাঁচেক আগের কথা। আলম ভাই দেশের একটি পর্যটন শহরে গেছেন বেড়াতে। সাথে বউ নয় এক বান্ধবীকে নিয়ে। এটি তাঁর কলেজ জীবনের প্রেমিকা। আলম ভাইর মতো তিনিও চাকরি করেন ঢাকার একটি বড় প্রতিষ্ঠানে। বিয়ে করেছেন, বাচ্চা আছে কিন্তু কলেজ জীবনের প্রেমিককে এখনো ভুলতে পারেন নি। তাই বাসায় অফিসিয়াল ট্যুরের অযুহাত দেখিয়ে লুকিয়ে চলে এসেছেন আলম ভাইর সাথে। আর আমাদের আলম ভাই - তাঁর তো সংসারে হাজার প্রেমিকা (তাঁর নিজের ভাষ্য মতে)। তাই এরকম অফিসিয়াল ট্যুর (!) তাঁর হরহমেশাই হয়।

তো দুজনে বেশ মজা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই পর্যটন শহর। রাতে থাকছেন ওখানকার সবচেয়ে দামি হোটেলে। দুজনের সুখের আর সিমা নেই। এমনি একদিন বিকেল বেলা তাঁরা একটি রাস্তা ধরে হাটছিলেন। উদ্দেশ্য এখানে যে লোকাল মার্কেট আছে সেখানে যাওয়া - ঢাকার বাইরে ঘুরতে এসেছেন পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু কিনতে হবে না? দুজনে হাত ধরাধরি করে হাটছেন, গল্প করছেন। হঠাৎ রাস্তা দিয়ে চলতে থাকা একটি মিলিটারি জীপ তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আরে আলম মামা না ! - বলতে বলতে একজন মিলিটারি পোষাক পরা বলিষ্ঠ তরুন জীপের দরজা খুলে তাঁদের সামনে দাঁড়ালো। আলম ভাই একটু শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তরুনটির দিকে তাকালেন। তাঁর বান্ধবীর মুখও তখন পাংশু বর্ন ধারন করেছে। তরুন মিলিটারি তখন আবার বলে উঠলো - আরে মামা আমি রিপন। আপনার বন্ধু হাকিম আমার মামা হন। আলম ভাইর মুখ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠলো - ও হো রিপন। তুমি হাকিমের মেজো বোনের ছেলে না ? তরুন হাসি মুখে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। আলম ভাইর মুখেও হাসি ফুটলো - আরে রিপন, তোমাকে দেখেছি সেই কবে। আমি আর হাকিম তখন এক সাথে কলেজে পড়ি। এখন তুমি কতো বড় হয়ে গেছ। আর্মি অফিসার হয়েছো। আমি তো তোমাকে চিনতেই পারি নাই। তুমি আমাকে চিনলা কিভাবে?

কি যে বলেন মামা, আপনাকে কি ভোলা যায়? - রিপন তখনো হাসছে। আপনার সঙ্গ একবার যে পেয়েছে তার কি আর আপনাকে ভোলার সাধ্য আছে? তাছাড়া আপনার চেহারাও তো আছে আগের মত। একটু শুধু মুটিয়ে গেছেন। তারপর দুজনের মধ্যে বেশ অনেক কথা চললো। কথার ফাকেই আলম ভাই জানলেন তাঁর বন্ধুর ভাগ্নে এখন আর্মির ক্যাপ্টেন। এই এলাকাতে পোস্টিং। প্রায় পাঁচ সাত মিনিট এটা ওটা নিয়ে কথা বলার পরে রিপন জানতে চাইলো - তা মামা আপনার সাথে কি মামী না কি? পরিচয় করিয়ে দিলেন না তো!

আলম ভাই কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললেন - এ্যা হ্যা হ্যা। এ হচ্ছে মলি। আর মলি এ হচ্ছে আমার বন্ধুর ভাগ্নে রিপন। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। রিপনের মুখে তখনো হাসি লেগে আছে । সে মলিকে সালাম দিল - স্লামালিকুম মামী। তারপর আলম ভাইকে বলল - মামা চলি তাহলে এখন। জরুরি কাজ পরে আছে। আপনার বাসার ঠিকানা দেন । ঢাকায় তো প্রাযই যাই, দেখা করে আসবো। আলম ভাই ঠিকানা দিলেন, মিথ্যা ঠিকানা নয়, সত্যিই নিজের বাসার ঠিকানা দিলেন। ভাবলেন - যে ছেলের সাথে দশ বারো বছর পর দেখা হয়েছে তার ওপর বন্ধুর ভাগ্নে, সে কি আর আমার বাসায় যাবে? রিপন ঠিকানা নিয়ে আবার মামা মামি কে সালাম দিয়ে বিদায় নিল। আলম ভাই আর তাঁর বান্ধবী হাঁপছেড়ে বাঁচলেন।

বিপত্তি বাঁধলো দু মাস পরে এক ছুটির দিনে। আলম ভাই সেদিন নিজের বাসার বারান্দায় বসে পেপার পড়ছিলেন আর চা পান করছিলেন। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো - টুং ! টাং ! আলম ভাই নিজেই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললেন। এবং সাথে সাথে তাঁর চোখ ছানাবড়া! দরজায় দুকান বিস্তৃত হাসি নিয়ে রিপন দাঁড়িয়ে আছে। হাতে মিষ্টির প্যাকেট - স্লামালিকুম মামা। বলেছিলাম না ঢাকা আসলে দেখা করবো? তাই চলে এলাম। আলম ভাইর মনে যাই থাক তিনিও হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানালেন - আরে রিপন তুমি! সত্যি খুব খুশি হয়েছি তুমি এসেছো। এসো ভেতরে এসো। রিপন বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলল - হ্যা মামা, ছুটির দিন দেখে চলে এলাম। আজ সারা দিন আপনার বাসায় থাকবো - মামীর হাতের রান্না খাবো আর আপনার গল্প শুনবো। আপনার গল্পগুলো আমি এখনও খুব মিস করি।

আলম ভাই শঙ্কিত মন নিয়ে রিপনকে বসালেন। ভেতরে গিয়ে বউকে বলে এলেন - আমার এক মিলিটারি ভাগ্নে এসেছে। আজ সারাদিন থাকবে। খাবে আমাদের সাথে। তুমি এখন চা দাও ওকে। আর চলো পরিচয় করিয়ে দেই তোমার সাথে। বউ সম্মতি দিলেন - তুমি যাও আমি চা নিয়ে আসছি।

আলম ভাই তখন ড্রইং রুমে রিপনকে সঙ্গ দিচ্ছেন আর মনে মনে ভাবছেন - যা থাকে কপালে। শুধু শুধু ভয় পেয়ে লাভ নাই। সংসার যদি ভাঙেই তা তো আর ভয় পেলে জোড়া লাগবে না। একটু পরেই তাঁর বউ এসে ঘরে ঢুকলেন। হাতে ট্রে - চা আর অন্যান্য খাবারে ঠাসা। আলম ভাই রিপনের দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে আস্তে বললেন - রিপন এ হচ্ছে তোমার মামী। রিপনের হাসি তখনো আকর্ন বিস্ত্রিত। সে উঠে দাঁড়িয়ে মামীর দিকে তাকালো। মুহুর্তে তার হাসি মিলিয়ে গেল। মুখের কথা গেল আটকে - স্লামালিকুম মা....। কিন্তু তা মাত্র দুই সেকেন্ডের জন্য। তারপরই আবার তার হাসি স্বাভাবিক হয়ে গেল। মুখে ফুটলো কথা - স্লামালিকুম মামী। ভালো আছেন? আমার নাম রিপন। আলম মামার অন্ধ ভক্ত আমি। ইত্যদি ইত্যাদি ..........

আলম ভাইর মনের শঙ্কা নিমেশে দূর হয়ে গেল। তিনি তাঁর মিলিটারি ভাগ্নের বুদ্ধির তারিফ করলেন মনে মনে।

রিপনও নতুন মামীকে দেখে মুহুর্তে ঘটনা কি আঁচ করে নিয়েছিল এবং এ ব্যাপারে কখনোই কোন উচ্চ-বাচ্চ করেনি। এখনো সে প্রায়ই আলম ভাইর কাছে আসে। তার প্রিয় মামার সাথে গল্প করে যায়। আর আলম ভাই আছেন আগের মতোই। চুটিয়ে প্রেম চালাচ্ছেন। এরকম দু একটা ঘটনায় তিনি কি আর দমবার পাত্র? বরং আমাদের সাথে গল্প করেন এসব নিয়ে। আর আমরা হাসি প্রানখুলে।

কীর্তিনাশা


মন্তব্য

কালো কাক এর ছবি

গল্প হিসেবে মজার। কিন্তু সত্যি হলে লোকটাকে ময়লার স্তুপে চাপা দেয়া উচিত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।