ঈদলিপি

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/১০/২০০৮ - ৩:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈদলিপি

ঈদের সকালটাই কেমন যেন ঘুম ঘুম ভাবে শুরু হল ।প্রতিবার ঠিক করি এই বার অবশ্যই জাতীয় ঈদগায়ে নামায পড়ব কিন্তু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলেই সিদ্ধান্ত পালটে ফেলি । আজকেও ঘুম থেকে উঠে মনে উঠল দার্শনিক ভাব - কি হবে জাতীয় ঈদগায়ে গিয়ে , দুই দিনের দুনিয়ায় সবই এক, থাক বাসার পাশেই নামায পড়ি । কোন রকমে মসজিদে নামায ধরলাম , হুজুর দ্বীন দুনিয়া আখিরাতের সবার জন্য দোয়া দিয়ে নামায শেষ করল । নামায শেষে পরিচিত কাওকে পাইনা যে একটু কোলাকুলি করব , শেষে কলেজের এক পুরান বড় ভাই কে পেলাম । উনার প্রথম কথা,

-আমি তোমাকে কয় বছর ধরে চিনি ?
-এইতো ভাইয়া প্রায় দশ বছর
-মিঞা তুমি একটুও পাল্টাইলা না
-কেন কি হইছে?
- আরে তোমারে দেখলে বুঝা যায় বাজারে কি ফ্যাশন চালু

আমি তো খুশিতে বাক বাকুম কিন্তু উনি আমার খুশিতে পানি ঢেলে বলে মিঞা তুমি এখনো প্রতি বার উলটা ফ্যাশন এর জামা পড়া ছাড় নাই । আমি বলি কি করলাম আবার ? উনি বলে এইযে তুমি যে পানজাবি পড়ছ এই ফ্যাশন তো আউট অফ মার্কেট প্রায় দুই বছর । এই বার একটু আশে পাশে তাকাই কেউ আমাকে লক্ষ্য করে কিনে দেখার জন্য । তারপরও ঐ ভাইকে বলি বুঝলেন ভাইয়া আমি যুগকে অনুসরন করি না যুগ আমাকে অনুসরন করে ।ভাইয়া ক্ষেপে বলে ধুর ঈদের দিনেও তোমার খালি ফালতু প্যাচাল ।

০২
.........................................................
ঢাকা শহর বড়ই অদ্ভুত , নামায থেকে বাসায় যাবার সময় ঠিক করলাম এবার ছোটবেলার মত যত পাড়ি কোলাকুলি করব । তাই পরিচিতদের সাথে শেষ করে এবার চোখ বাড়ালাম অপরিচিতদের দিকে । সবার সামনে যাই বলি আঙ্কেল আসসালামুআলাকুম , এই বলে সামনে হাত বাড়াই কোলাকুলি করার জন্য । এইবার দেখি সবায় অবাক হয়, বলে আপনেকে তো ঠিক চিনলাম না । আমি এবার মিষ্টি স্বরে বলি জ্বী আমিও আপনাকেও আমি চিনি না তবে ঈদর দিন তাই কোলাকুলি করতেতো মানা নাই, কি বলেন? এই কথা শুনেয় সবার চোখ বড় বড় হয়ে যায় । আমি মনে মনে বলি ভাইরে কোলাকুলি করার জন্য এত প্রশ্ন করার কি আছে ? এই ভাবে দুই ভদ্রলোকের(!) সাথে ট্রাই নেবার পর ভাবি থাক দরকার নাই ছোটবেলায় ফেরত যাবার । হুম শহরে শুধুই সন্দেহ ।

০৩
.................................
নামায শেষে অবশিষ্ট দোস্ত কুলদের সাথে মানে যারা এইবার গ্রামের বাড়ি যায় নায় তাদের সাথে আলাপ হয় । বলি চল বাসায় সালাম টালাম শেষ করে ঘুরতে বের হই । কিন্তু সবাই দেখি গাইগুই করে, বলে দোস্ত আজকে না । আমি বলি আরে আজকে না হইলে কেমনে ? এরপর সবার ভাবসাবে বুঝা গেল তারা সবাই তাদের পরান পাখির সাথে দেখা করতে যাবে সেখানে আমারে টাইম দেয় কেমনে। আমি সবগুলারে শুনায়ে বলি আহারে সেই দিন আর নাই মানুষ আর বন্ধুদের আর সিরাম দাম দেয় না । তোদের মত বন্ধুদের সাথে থাকাও বৃথা । আর মনে মনে আফসোস করি শালা কেন যে একটা প্রেম করলাম না?

নিবিড়


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম।

কোলাকুলির ব্যাপারটা পড়ে এখানের একটা ঘটনা মনে পড়ল। কানাডায় ফেডারেল নির্বাচনের ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। স্হানীয় এমপি এনডিপি'র ব্রায়ান ম্যাসে। ঈদের নামাজের পড়েই মসজিদের বাইরে তাকে দেখা গেল। সবাইকে ঈদ মোবারক বলছে। একেবারে দেশের মত অবস্থা। উনি সবার সাথে হাত মিলাচ্ছেন। আমার এক বন্ধু নাকি কোলাকুলি করার চেষ্টা করেছিল। বেচারা ম্যাসে কিছুটা অবাক হয়েছিল, কী করবে বুঝতে পারছিলনা। বেশ অস্বস্তিকর একটা অবস্থা। হা হা..

অতিথি লেখক এর ছবি

বেচারা ম্যাসে কিছুটা অবাক হয়েছিল, কী করবে বুঝতে পারছিলনা। বেশ অস্বস্তিকর একটা অবস্থা।
.................... সত্যিই অস্বস্তিকর অবস্থা হওয়ার কথা ।
নিবিড়

রণদীপম বসু এর ছবি

মনে মনে আফসোস করি শালা কেন যে একটা প্রেম করলাম না?

বয়স কি পার হইয়া গেছে ? প্রেমের কোন বয়স নেই। চেষ্টা করেন পাক পবিত্র মনে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা মেয়েরা যদি আপনার মত সহানুভূতির দৃষ্টিতে আমাকে দেখতো তাইলে কি আর বন্ধুদের বেড়াতে যাবার কথা বলি ? তাইলে তো আমি নিজেই ওদের মত গাইগুই করতাম ।
নিবিড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমারে যে সালাম করতে আসে তার মাথায় খটাশ করে একটা গাট্টা লাগাই
আর যে কোলাকুলি করতে আসে তার বুকে মাঝ আঙুল দিয়ে দেই একটা হুক

কয়েক বছরের এই প্রাকটিসের ফলে এখন আমি সালাম আর কোলাকুলি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত
কারণ পায়ের কাদাপানি ছুঁয়ে আর গায়ে গা ঠেলাঠেলি করে যে সম্পর্ক প্রমাণ করতে হয় সে সম্পর্কের কী দরকার?

ষোলো বছর ধরে ঈদের সারাদিন আমার কেটে ঘুমিয়ে
আজ সাড়ে চারটার সময় মা জননী মাথার মধ্যে মোবাইল দিয়ে বাড়ি মেরে ঘুম ভাঙিয়ে দিলেন
উঠে দেখি একটা মাইয়া এক প্যাকেট বেনসন নিয়ে হাজির
বলল তার সাথে রিকশায় ঘুরতে গেলে আরো এক প্যাকেট দেবে

তারপর এক কার্টুনের শর্তে ঘুরতে বের হয়ে এক কার্টুন বেনসন আর পাঁচশো টাকা নিয়ে ফেরত আসলাম

পাঁচশো টাকাটা বাড়তি জরিমানা
কারণ সে রাস্তায় বের হয়ে শর্ত বদলে ফেলে
বলে তাকে সালাম না করলে সিগারেট্ দেবে না
এরপর শুরু করলাম রিকশায় বসেই সালাম
পরে সালাম থেকে মুক্তি পেতে সে আরো পাঁচশো টাকা দিলো

সবজান্তা এর ছবি

এরই নাম রাজকপাল

এক প্যাকেট বেনসন, পাঁচশো টাকা। ফাওয়ের উপর দিয়ে আপনার রিকশা ভ্রমন।

হায়, এক প্যাকেট বেনসন আর পাঁচশো টাকার জন্য তো আমি লীলেন ভাইরেও খুন করতে পারি হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লীলেন ভাইয়ের যা কপাল তাতে সবারই হিংসে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হায়রে কবে যে এই কপাল পাব । আশা করি আমকেও কেও ঘুরতে যাবার জন্য এই অফার দিবে ( ফিচলে হাসি)
নিবিড়

সবজান্তা এর ছবি

নিবিড় ভাই আপনার কোলাকুলির গল্প পড়ে মজা পাইলাম। আমার এক বন্ধু ছিলো, অচেনা মানুষ দেখলেই ইচ্ছা করে সালাম দিতো। কত লোক যে অস্বস্তিতে পড়তো। ওর কথা মনে পড়ে গেল।

প্রেমের কি আর ভাই বয়স আছে নাকি। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করে ফেলেন একটা।


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তবে প্রেম শুরু করার আগে নিজের ক্যাটাগরিটা ঠিক করে নেয়া দরকার
আপনি দাতা প্রেমিক হবেন না গ্রহিতা প্রেমিক হবেন?

দাতা প্রেমিক হলে জীবনটা যাবে দান করতে করতে
(দণ্ড জরিমানা মাশুল খেসারত সবই দান ক্যাটাগরিভুক্ত)
আর গ্রহিতা প্রেমিক হলে মনোযোগ দিতে হবে মার্কেটিংয়ের দিকে

অতিথি লেখক এর ছবি

সমস্যায় ফেলে দিলেন লীলেন ভাই , পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই তাই আপনার সাহায্য চাই । তবে আপনি কোন ধরনের দাতা না গ্রহীতা? আমি আপনার লাইন ফলো করবো ঠিক করছি ।
নিবিড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছি ছি ছি
বিশ্বব্যাং আইএমএফ সহ সকল দাতা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যখন পুরো জাতি সোচ্চার তখন আমি কীভাবে দেশ ও জাতির সাথে বেইমানি করে নিজে দাতা গোষ্ঠীতে নাম লেখাবো?

এটা যে ভাবে সে আমার জন্মশত্রু ছাড়া আর কিছু না

তানবীরা এর ছবি

নিবিড়, আপনার এই অনুভূতি আমি জানি। আমার বান্ধবীরা আবার ডেট করতো এই বলে যে আমার বাড়ি বেড়াতে আসছে। না কোথাও যেতে পারি, না কাউকে বলতে পারি অবস্থায় গেছে শেষ স্টুডেন্ট লাইফটা।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

যাক আপু আপনি অন্তত তাহলে বিরক্তির ব্যাপার টা বুঝতে পারবেন।
নিবিড়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঈদের কয়টা দিন ঘুমানোই ছিলো আমার পেশা... কিন্তু বিয়ার পরে সেই নীতিতে ফাটল ধরছিলো।
এইবার থেকে আবার পুরনো ফর্মে ফেরত যাবার চেষ্টা করছি। আগের রাত্রেই বউ পোলাপানরে শ্বশুড়বাড়িতে পাঠায়ে দিয়ে আরাম করে ঘুমাইছি দুপুর পর্যন্ত... দুপুরে বের হয়ে তাদের নিয়ে মায়ের বাড়িতে রেখে দিছি আবার ঘুম। সেখান থেকে উঠে ভায়ের বাড়ি হয়ে তাদেরকে আবার শ্বশুড়বাড়িতে রেখে সেই যে ঘুম দিছি... উঠলাম এই একটু আগে।

আগামী বছর থেকে আরো বেশি শান্তি নিয়ে ঘুমাতে হবে... সিদ্ধান্ত পাকা।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।