বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইএমএফ বিদায় হোক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০১/২০০৯ - ১০:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আইএমএফ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। মার্কিন মুল্লুকে সদর দপ্তর। কোন দেশ আর্থিক অনটনে পড়লে দাঁড়িয়ে আছেন গৌরিসেন, শেষ ভরসা হিসেবে। টাকা এম্নি এম্নি দেয় না, নানারকম শর্ত থাকে তার সাথে। কনসালটেন্ট নাও, সংস্কার কর, ধমক খাও। আর অবশ্যই টাকা সুদসমেত ফেরত দিতে ভুলোনা যেন। এর মূল কাজ যদিও মুদ্রা বিনিময় হার এবং লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর নজর রাখা, তবু এর বাইরেও ম্যাক্রো অর্থনীতির নানান বিষয়ে 'গবেষণা' আর 'পরামর্শ'দেয়াও এর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইএমএফ-এর হিসেব-নিকেশের মূল অনুসিদ্ধান্তগুলো মূলত উন্নত দেশের অর্থবাজার আর বাণিজ্যিক সূত্রের ওপর ভর করে থাকে। তাই এর পরামর্শগুলোও হয় পশ্চিমা ধাঁচের, যেগুলো প্রায়ই বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশে প্রয়োগের অনুপযোগী। বিশ্বব্যাঙ্ক-আইএমএফ যমজ প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এশিয়াতে এডিবি তৈরি হলেও এটা দিনকানা, বিশ্বব্যাঙ্ক-আইএমএফ-এর পিছু পিছু সাদা ছড়ি নিয়ে চলাই এর কাজ।

আফ্রিকা আর ল্যাটিন আমেরিকাতে নিজস্ব উন্নয়ন ব্যাংক হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্যাভেজ আর তার ল্যাটিন মিত্ররা মিলে আইএমএফ-এর বিকল্প 'ব্যাংক অব দ্য সাউথ' বা ব্যাঙ্কোসুর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

হালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে নানান নেতিবাচক কথাবার্তা বললেও কিভাবে এর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে তা কিন্তু আইএমএফ বলছেনা। মাঝখান থেকে দেশে দেশে 'সাপ্লাই সাইড ইকনমি' আর 'ইনফ্লেশন টার্গেটিং'-এর ঝাঁড়ফুঁক দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর দেশজুড়ে যখন দামবৃদ্ধি শুরু হল তখন সে 'ইনফ্লেশন টার্গেটিং'-এর পরামর্শ দিল বাংলাদেশ ব্যাংককে। আর ব্যাংকও 'জ্বি হুজুর' বলে 'টাকা ঠেকাও' টাইপের মুদ্রানীতি দিল। বলাই বাহুল্য, সে মুদ্রানীতিতে দেশজুড়ে 'স্টাগফ্লেশন'-এর লক্ষণ দেখা দিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ভুল বুঝতে পেরে টাকা ঠেকানো নীতি থেকে সরে এলো পরের জানুয়ারিতে।

দেশে এই অথর্ব প্রতিষ্ঠানটি ঢুকে আছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পেটের ভেতর। অফিস বাংলাদেশ ব্যাংকের 'মেইন বিল্ডিং'। আশ্চর্য ঘটনা! আর এর পরামর্শকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথা দেশের অর্থনীতির সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য যেসব 'গবেষণাপত্র' তৈরি করছেন তা নিম্নমানের। ওগুলো একটি মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ.-র টার্ম পেপার হবার মতও নয়। অখাদ্য-কুখাদ্য পেটে ঢুকলে বদহজম না হয়ে উপায় আছে?

আইএমএফ'কে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিদায় করা হোক। ব্যবসা করার জন্য দেশে ভাড়া দেবার মত আরো জায়গা আছে।

প্রফাইল

....................................................................................................................
এভাবেই স্থবির ঘর একদিন উড়ে যাবে
উড়ে উড়ে যাবে


মন্তব্য

গৌতম [অতিথি] এর ছবি

মজার ব্যাপার হলো, আইএমএফদের নিয়ে একসময় বামপন্থীরা মাথা ঘামালেও এখন ডানপন্থীরাও আইএমএফের খবরদারি নিয়ে চিন্তিত। আজকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদের প্রায় লেখাতেই আইএমএফের বিষয়ে উদ্বিগ্নতা লক্ষ করা যায়। বামপন্থীরা যখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতো, তখনও আইএমএফের উগ্র-খবরদারি দেশবাসী দেখেনি, কিন্তু তারা যে সেটা করবে তা ভবিতব্যই ছিলো। ফলে ডানপন্থীরা আইএমএফের বিরোধিতাকারীদের সরাসরি টিটকারি মেরেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। এটুকু খুব স্বস্তির যে, আজকাল ব্যবসায়ী-রাজনীতিক থেকে শুরু করে সবাই আইএমএফের মূল চরিত্রটা ধরতে পারছে।

এদেরকে পত্রপাঠ বিদায় দেওয়া হোক। পত্রটা আসুক সরকারের তরফ থেকেই।

প্রফাইলকে ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আইএমএফ'কে বিদায় করার কথা বলছি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পেটের ভেতর থেকে। ওখানে বসে অসুখ বাঁধাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধান অফিসের ভেতর অন্য কারো অফিস থাকলে তা হতে পারে একমাত্র রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের, কোন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আবাসিক প্রতিনিধি'র নয়। ওই প্রতিনিধি চাইলে আইডিবি ভবনে আশ্রয় নিতে পারেন, যেখানে তার মত আরো বহুজাতিক প্রতিনিধি রয়েছেন। বিশ্বব্যাঙ্ক-এডিবি অফিসের পেছনেও কিছু জায়গা হয়ত খালি আছে।

আবু'র এরকম আরো অনেক বিষয়ে উদ্বেগ লক্ষণীয়, কেননা তিনি এখন ক্ষমতাহীন। তিনি যখন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন কোন উদ্বেগ ছিলনা। তখন ছিল শুধু প্রশান্তি।

বামপন্থীদের উদ্বেগ কিন্তু বরাবরই যথেষ্ট বিশ্লেষণহীন। তথ্য-উপাত্ত, গাণিতিক ও আধুনিক পরিসংখ্যানের যথাযথ প্রয়োগ কখনই ছিল না তাদের গবেষণায়। তাই ওগুলো বোদ্ধা মহলে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। প্রেসক্লাবে তাদের সাম্প্রতিক গণশুনানি যথেষ্ট হাস্যকরও বটে।

প্রফাইল

....................................................................................................................
এভাবেই স্থবির ঘর একদিন উড়ে যাবে
উড়ে উড়ে যাবে

গৌতম এর ছবি

আপনার লেখা আর মন্তব্যে বিরোধ দেখতে পাচ্ছি। বক্তব্য অনুযায়ী আপনার অবস্থান পরিষ্কার নয়। অথবা আমি বোধহয় বুঝতে ভুল করছি।

যাই হোক, আইএমএফ ব্যাংকের ভেতর থেকে বের হয়ে আলাদা ভবনে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, বিষয়ের মূল সুর বোধহয় এটা ছিলো না। ভবনে কী এসে যায়?

শেষ প্যারাটি পড়ে মজা পেলাম। ভালো হয় বামপন্থীদের কিছু বিশ্লেষণ পড়ে তারপর কথাগুলো বললে।

আর কী!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

১. আপনার লেখা আর মন্তব্যে বিরোধ দেখতে পাচ্ছি।

বিরোধটা কোথায়, একটু বুঝিয়ে দেবেন কি? আমি আবার বুদ্ধিতে খাটো কিনা, বুঝিয়ে না দিলে বুঝতে পারি না।

২. বক্তব্য অনুযায়ী আপনার অবস্থান পরিষ্কার নয়।

আমার অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আমি ওটাকে "দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের" ভেতর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছি। রোগজীবাণু আপনার বাড়িতে থাকা আর শরীরে থাকা এক কথা নয়।

৩. আইএমএফ ব্যাংকের ভেতর থেকে বের হয়ে আলাদা ভবনে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ...

না, সমাধান হয় না। তবে ওটা একটা ইন্ডিকেশন, তার 'আন্ডারপার্ফরম্যান্সে'র শাস্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওটা যে ওর জায়গা নয় তা-ও বলা হয়ে গেল।

সম্প্রতি নিশ্চয় দেখেছেন অর্থ উপদেষ্টা আর বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর বিশ্বব্যাঙ্ক-কে একহাত দেখে নিলেন। এদ্দিন স্করার্লি কেউ বলেননি বলে ওদের বাড় বেড়েছে। তবে ওদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা সোভিয়েত যুগের ডিপ্লম্যাটিক ট্রিটমেন্টের মতই বোকামি। পদে পদে ওদের অথর্ব প্রমাণ করতে পারলে এমনিতেই ওরা কেটে পড়বে।

৪. ভালো হয় বামপন্থীদের কিছু বিশ্লেষণ পড়ে ...

পড়তে পড়তে এবয়েসেই চুলে পাক ধরল যে। মানে পেশাদার পড়ুয়া হলে যা হয়। দেশের বামপন্থী স্কলারদের সাথে তাই একটু আধটু কাজের সম্পর্ক রয়েছে।

প্রফাইল

....................................................................................................................
এভাবেই স্থবির ঘর একদিন উড়ে যাবে
উড়ে উড়ে যাবে

এনকিদু এর ছবি

আমি অর্থনীতির লোক না, অর্থনীতির গভীর বিষয়গুলো বুঝিও না খুব একটা । তবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, আমার দেশের অর্থনীতিতে (বা অন্য কোন বিষয়ে) বাইরের কারো খবরদারী একেবারেই ভাল লাগেনা । সেটা আইএমএফ হোক বা অন্য যেকোন সংস্থাই হোক ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।