অভিযোজন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৭/০৩/২০০৯ - ৮:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উত্তর আমেরিকার ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত (এবং ৫০টি নানা আকারের রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত) এই সুবিশাল দেশটিতে আমার পদার্পণ গত বছরের আগস্ট মাসে। আটলান্টা এয়ারপোর্টের রসিক ইমিগ্রেশন অফিসারের বিকট শব্দের D/S সিল পাসপোর্টের I-91 ফর্মে পড়ার পর দেখতে দেখতে ৭ মাস হয়ে এল। এর আগের সবগুলো প্রবাস ভ্রমণই ছিল নিছকই ভ্রমণ, কোনটা ১০ দিন তো কোনটা ২ মাস; 'দেশ ছেড়ে দূরে আছি' - এমন অনুভূতির জন্ম হতে না হতেই ঐতিহাসিক জিয়া বিমানবন্দরে অবতরন। তাই এবারের 'অনির্দিষ্টকালীন দেশত্যাগ' ছিল বিভিন্ন দিক দিয়ে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেসব 'তাৎপর্যপূর্ণ দিক' - গুলোর বর্তমান অবস্থার স্বরূপ অনুসন্ধানের (বাহ, এসএসসি-র বাংলা প্রথম পত্রের 'ব্যাখ্যা কর' প্রশ্নের মুখস্ত শব্দগুচ্ছ দেখি হার্ড ডিস্কে এখনো বাইট আগলে রেখেছে!) অভিপ্রায়েই মূলত সচলায়তনে পাঠক ছেড়ে লেখক হবার 'ব্যাপক' দুঃসাহস দেখানো। ব্যাঘ্রপ্রতিম লেখকগণের নখর থাবা, আর সর্পপ্রতিম লেখকগণের বিষদন্তের হাত থেকে মুক্তি পেলেই অধমের ঘাম দিয়ে কালাজ্বর-বাতজ্বর সবই ছাড়বে।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশের সবচাইতে দুর্বল খেলোয়াড় সম্ভবত শীতকাল। জানুয়ারি মাসের প্রথম ১০ দিনের কোন একদিন ঢাকায় ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামবে তাপমাত্রা, আর পরদিন 'তীব্র ৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত' শিরনামে প্রথম আলোর রিপোর্ট - এমনটাই হয় প্রতি বছরের চিত্র। তার মাঝেই আমার অবস্থা হয়ে ওঠে ত ৈবচ। আমার ঠান্ডাজ্বর আর মুহূর্মুহ হাঁচির যন্ত্রণায় সমগ্র ঢাকাবাসী না হোক, পরিবারের সবার জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। এ প্রসংগে লন্ডন ভ্রমণের করুণ ইতিহাসও স্মরণ করা যেতে পারে। বানর-টুপিতে নাক-কান-মাথা সবই ঢাকা, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে দেখে কায়দা করে চোখও প্রায় ঢেকে রেখে হাঁটছি (শুধু রাস্তা দেখতে পাচ্ছি আরকি)। মা-কে বলা আছে আগে থেকেই, তাই সময়ে সময়ে "এই দেখ এখন, হাইড পার্কের এন্ট্রান্স" বা "এই যে তাকাও, ট্রাফালগার স্কয়ার" ডাকে "বাহ, হাইড পা... হ্যাঁচচচছোঁওওও" আর "ওহ, এই সেই বিখ্যাত সিংহ ... হ্যাঁচচচছোঁওও" - এ-ই ছিল আমার বিলেতদর্শন :(। সেই আমি কিনা যাচ্ছি আমেরিকার উত্তর প্রান্তে - যেখানে শূন্যের নিচের তাপমাত্রা এক নিত্য ৈমিত্তিক ব্যাপার - এবং যার পরিণতি হবে সম্ভবত আরেকটি ক্যাপ্টেন কুকের হাওয়াই অভিযানের মত। যাই হোক, পরিবারবর্গকে একরাশ চিন্তার সাগরে ভাসিয়ে চলে এলাম আটলান্টিকের এপাড়ে। তখন সবে ফল্ - এর শুরু, বেশ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। প্রথম কিছুদিন মহানন্দেই কাটলো। শীত টের পেলাম অক্টোবরে এসে। নভেম্বরের শুরুতে একদিন হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছি, পাশেই কন্সট্রাকশনের কাজ চলছিল। সাদা দানাদার আকৃতির ধুলো সদৃশ বস্তু উড়ে এসে নাকে মুখে লাগতেই মেজাজ গেল বিগড়ে, এই তোদের উন্নত বিশ্বের কন্সট্রাকশন সেফটির নমুনা, হাহ্! মাথা ঘুরাতেই দেখি এ জিনিস নির্মানাধীন দালান নয়, বরং সব দিক থেকেই উড়ে আসছে। মস্তিষ্কের প্রপাগেশন ডিলে কাটতেই বুঝলাম এ ছিল আমার তুষারপাতের প্রথম অভিজ্ঞতা। তুষারপাত বিষয়ে ব্যাপক স্বস্তি অনুভব করলাম শুরুতেই। চুল বা পোশাক ঝাড়তেই দানার মত পড়ে যাচ্ছে, লন্ডনের সর্বনাশা বৃষ্টির পানির মত সাইনাস আর টনসিলের ওয়ান-ইলাভেন বা নাইন-ইলাভেন ঘটাচ্ছে না। সাময়িক মোহ কেটে গেল অল্পদিনেই যখন তাপমাত্রা এক্সপোনেনশিয়ালি হ্রাস পাওয়া শুরু করল, 20F, 14F … হয়ে -10F, -20F। আর আমিও এক্সপোনেনশিয়ালি লেয়ার বাড়াচ্ছি, শার্ট, সোয়েটার, তার উপর হাল্কা জ্যাকেট / হুডি, সবার উপর বিকটদর্শন স্নো জ্যাকেট, হাতে ডাব্ল গ্লাভ্স, ঘাড়ে স্কার্ফ, পায়ে স্নো বুট – সব মিলিয়ে এলাহি কান্ড। জানুয়ারির শেষ দিক পর্যন্ত আমি-ই জয়ী ছিলাম। হঠাৎ করেই পাশার দান উল্টে গেল, ধরল তথাকথিত সিজনাল ফ্লু-তে, খাঁটি বাংলায় ঠান্ডা জ্বর। স্প্রিং সিমেস্টারের শুরুতেই মিস দিলাম বেশ কিছু ক্লাস। বাসায় বসে অন্তর্জালে ঘুরে আর গরম পানি পান করে সময় কাটাই আর প্রফেসর দের ই-মেইল করি কেন এই সপ্তাহের হোমওয়ার্ক সাবমিট করা সম্ভব না। অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মনটা একটু খারাপই লাগতো আচমকা পেয়ে যাওয়া ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার হতাশায়। তবে একই সাথে এ-ও অনুভব করলাম যে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি এই প্রতিকূল পরিবেশের সাথেই। মার্চ-এর শুরুতে এখন ঠান্ডাটা কমছে ধীরে ধীরে। কোন কোন দিন তো অস্বাভাবিক বেশীই থাকে তাপমাত্রা। আমিও ৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটেই উল্লসিত হয়ে যাই আমেরিকানদের মত, টুপি-গ্লাভ্স খুলে ফেলি, স্নো জ্যাকেট খুলে হালকা সোয়েটারটা পরেই হাঁটতে থাকি। মনে মনে কনভার্ট করে চমকে উঠি, এ তো ঢাকার সেই হাড়-কাঁপানো ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস!

['চলতে পারে...' (পাঠক প্রতিক্রিয়ার সাপেক্ষে)]

বিশেষ অজ্ঞ


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এখানেই থেমে গেলেন! দারুন লাগছিল তো। আপনার লেখার হাত বেশ ভাল। নিয়মিত লিখবেন আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

'দারুণ লাগছিল' শুনে আমার তো দ্বিগুণ দারুন লাগছে। লিখেছি আরেকটা হাবিজাবি, এপ্রুভ হলে পড়ে দেখবেন আশা রাখি। কমেন্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!

বিশেষ অজ্ঞ

ফারুক হাসান এর ছবি

চলুক!
*********************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! আরেকটু চল্‌ল, এপ্রুভের অপেক্ষায় আছে।

বিশেষ অজ্ঞ

নিবিড় এর ছবি

হুম...... চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের উৎসাহে সাহস বেড়ে যাচ্ছে, আরেকটা লিখা দিলাম। 'থাম্বস আপ' পেয়ে ভাল লাগলো।

বিশেষ অজ্ঞ

স্নিগ্ধা এর ছবি

আটলান্টা এয়ারপোর্ট হয়ে আপনি কোন শীতরাজ্যে আসলেন? মানে, নর্থের কোথাও আসতে হলে আটলান্টা হয়ে কেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো পয়েন্ট। ক্লাস শুরুর বেশ কিছু সময় আগেই এসে টেক্সাসে ছিলাম ক'দিন, সেজন্যই আটলান্টা ছিল পোর্ট অফ এন্ট্রি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি কিন্তু সব জানি! চোখ টিপি

রাফি এর ছবি

চলুক...

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।