বিশ্বাসের সংজ্ঞায়নে ব্যক্তিগত দুর্বলতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৩/২০০৯ - ৯:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা ভাবতে গেলে প্রায়শই চিন্তাভাবনা এগোতে পারে না, এটা হয়ত পরিপক্কতার অভাব ,যেমন প্রাচীন মানুষরা আকাশের তারকা কে অলৌকিক শ্বাপদের চোখ ভাবত। এখানে যত মানুষ জেনেছে ততই ভ্রান্ত এবং অলৌকিকের ধারনা থেকে মুক্ত হয়েছে। এই মুক্ত হওয়াটা কোন সার্ব্জনিন বিষয় নয় অবশ্যি, এখনো হস্ত রেখায় বিশ্বাসী মানুষ তাবিজ কবজে বিশ্বাসী মানুষ রয়েছে অনেক। তবে এ মানব সভ্যতার আওতায় জ্ঞান বলতে সেই জ্ঞানটি কিছু মানুষের হাতে থাকলেই তাকে আমাদের আওতাধীন বলতে পারি। ১৯২০ এ বলা হত মাত্র তিনজন মানুষ জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝে। সেভাবে সঙ্গায়িত করলে আমরা এগিয়েছি অনেক্টুকুই,আমি প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিবাদে যাব না। মানুষ বলতে আমি আন্তর্জাতিক মানুষই বুঝাচ্ছি। এখন আমাদের জীবনে যদি র্যাশনালিটিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরি তাহলে বলা যাবে ইন্টেলেকচুয়াল দৃষ্টি থেকে অলৌকিকতা মোটামুটি এক্সটিঙ্কট একটা অধ্যায়। মেইনস্ট্রীম মানুষ রা ,যারা সভ্যতার অর্জন জ্ঞান সমুহ কিছুটামাত্র আয়ত্ব করতে পেরেছে সে নিজের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা পরিবেশে অলৌকিকতাকে পাত্তা দিবে না। সুতরাং অলৌকিকতার শেষ আশ্রঅয় এখন পূরাণে, সাহিত্যে আর ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞানে। আর সর্বপরি রিলিজিয়াস স্ক্রিপচার গুলোতে।

তাহলে বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায় প্রোথিত? কোথাথেকে আমাদের মাঝে আত্নপ্রেরনা আসে সরলরেখার আবশ্যিকভাবে একটি শুরুবিন্দুর কল্পনা ?(যদিও আধুনিক গনিত বিজ্ঞান আমাদের ইন্টুশন থেকে অনেক এগিয়ে ,কিন্তু অধিবিদ্যিক চিন্তাধারা এই ইন্টুশঙ্কে ঘিরেই তৈরী। অইক্লিডিয় জ্যামিতি আমাদের জানায় রেখার শুরুবিন্দুর কোন প্রোয়োজন নেই, সেইসাথে সরলরেখাও আসন্নীকরন ছাড়া আর কিছুই নয় তখনো মেটাফিজিক্সের ধারনা প্রনেতারা সেই ইন্টুশনের বাইরে যেতে পারেন না। আমরা এখনো একই এন্টিটির যুগপত ভিন্ন অবস্থানে থাকা স্বীকার করে উঠতে পারি নি, যদিও কোয়ান্টাম পরিমন্ডলে তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। )যেকারনে সকল মেটাফিজিক্যাল চিন্তাই ইন্টুশন থেকে আসা, একধরনের স্থুল সাধারনীকরন যা প্রধানত বিশ্ব সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক চেতনাই প্রকাশ করে। এদের এক মাত্র ডিফেন্স মেকানিজম হচ্ছে বিজ্ঞানের অসুম্পূর্নতা। বিজ্ঞান সম্পুর্ন নয়,এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল। সেকারনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আসে নতুন তত্ব। কিন্তু এই অসুম্পুর্নতা মেটাফিজিক্সের কোন বৈধতা হতে পারে না। এটা অনেকটা এরকম দৃষ্টিভঙ্গী যে “টার্বুলেন্ট ফ্লুইডের ” কোন স্ট্যাবল তত্ব নেই সুতরাং টার্বুলেন্ট ফ্লুইড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোন চিন্তাতীত প্রকৃয়া দ্বারা। এই দৃষ্টিভঙ্গী মানব সমাজের ইতিহাসে খুবি জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙী সন্দেহ নেই,একসময় বজ্রপাত ,রোগবালাই ও এই ব্যাখ্যার আওতায় ছিল। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে মেটাফিজিক্সের কারিশমা সঙ্কুচিত হতে হতে বর্তমানে না না বহুরুপে সার্ভাইব করার চেষ্টায় মড়িয়া। প্রথমত মেটাফিজিক্স ঢুকে পড়েছে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে, কারন বর্তমান যুগের অলৌকিকতা গ্রহনযোগ্য নয়। সেই সাথে বিজ্ঞানের অসম্পূর্ন অংশ গুলোতে। মেটাফিজিক্সের কিছু রুপভেদও আছে যারা মেটাফিজিক্সকে সামাজিক এবং নৈতিক মুখোশে গ্রহনযোগ্যতার যুক্তি প্রদর্শন করে। কেঊ কেউ মেটাফিজিক্স কে সামাজিকভাবে অসাড় ভাবায় একে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিবেকজাত উদ্দীপনা হিসেবে সঙ্গায়িত করার চেষ্টা করছে। প্রতিক্রিয়াশীলতা মেটাফিজিক্সের অনেক বড় বৈশিষ্ঠ্য কিন্তু এমন না যে মেটাফিজিক্স ধারঙ্কারী এন্টিটি বা পোষক প্রতিক্রীয়াশীল। এই সহনশীলতা কিন্তু মেটাফিজিক্সের অবদান নয়। কারন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা দেখেছি কিভাবে মানব সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সহনশীলতার স্কেল এক্সপনেনশিয়ালি ইঙ্ক্রিজিং গ্রাফের মত আচরন করে।

এই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যক্তি স্বত্বা আমি। আমার চারপাশ কে ঘিরেই আমার অনুভুতি এবং বোধের বিবর্তন। আমি জানতে চাই বা বুঝতে চাই দেখেই চারপাশের গড়ে ওঠে নানা ডিসিপ্লিনের নানা জ্ঞান। এই বোধের উত্তর দিতেই আমরা যেটা (সকল ক্ষেত্রেই ব্যাক্তি আমির ই সম্প্রসারন)। কারন সকল কিছুই এসেছে কোন না কোন ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা থেকেই। আমি সুখ পাই এই অইঊক্লিডিয় বিসৃতির বক্র স্তানকে বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতি দ্বারা বুঝতে। সুখ পাই ইয়েটস এলিয়ট সুধীন দত্তের কবিতায় জীবন বোধের ধারনাতীত কারুকার্যে। এ সুখ সত্য স্বীকারের সুখ। বস্তুগত মানুষকে জোর করে অবস্তুগত করারে চেষ্টা কোন বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতিতে পরে না।
মানুষ কে মানুষ ভাবাই মানুষ কে সর্বোচ্চ সম্মানিত করা অতিলৌকিক উচ্ছিষ্ট ভাবার চেয়ে। তাই নৈর্বত্তিক হতে চাই ,তীব্র ভাবেই নৈর্বত্তিক হতে চাই।

হোসেন


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

নতুন হওয়ার এই ঝামেলা,কেঊ পড়ে না

অপ্রিয় এর ছবি

আপনার কথাগুলো ভৌত বাস্তবতার ক্ষেত্রে সত্য। ইনটিউশন মানেই কিন্তু মেটাফিজিক্স বা অলৌকিকতা নয়। ক্যওটিক সিষ্টেম, জীবজগত বা বিশেষ করে মানুষের মন যে সমস্থ ঘটনার সাথে জড়িত তাকে কিন্তু বিজ্ঞান দিয়ে বোঝা না ও যেতে পারে। অনেক নিয়ম জৈব জগতে খাটেও না। যেমন এনট্রপি; জৈব বিবর্তন জগতের এনট্রপির নিয়মের বিপরীতে চলে। যে সব মানুষের ইনটিউশন অভিজ্ঞতা নির্ভর স্ট্রাটেজি থেকে আসে তা কিন্তু মেটাফিজিক্স নয়। রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদীর অনেক ইনটিউশনই অভিজ্ঞতা নির্ভর, তাকে তো বিজ্ঞান ও বলা যাবে না আবার মেটাফিজিক্সও বলা যাবে না। তাই বিজ্ঞান ও মেটাফিজিক্সের মাঝখানে আমাদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধের কিছু কারিশমা আছে যা আমাদেরকে ইন্দ্রীয় বাস্তবতার চেয়েও বেশী কিছু দেয় - তাকে অবজ্ঞা করলে ভূল হবে।

একটি সাবধাণবানী: অইঊক্লিডিয় বিসৃতির বক্র স্তানকে বুঝতে যদি সুখ পান তাতে ক্ষতি নেই কিন্ত শুধু কোন বিশেষ পদ্ধতিতে সুখ পাওয়া কিন্তু মৌলবাদের লক্ষণ!

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

হোসেন [অতিথি] এর ছবি

এটা ঠিক জ্ঞানের অনেক শাখায় অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখানে আমার একটা দ্বিমত আছে। এসকল অভিজ্ঞতা নির্ভর জ্ঞান, যেমন অর্থনীতি,সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি কিন্তু একধরনের পারিসাংখ্যিক বিশ্লেষন। যা ঘটেছে অনেকবার তা আরো একবার ঘটার সম্ভাবনা আছে এইভাবেই এই বিষয়গুলো ডিজাইন করা। সেক্ষেত্রে ভৌতবিজ্ঞানে স্বতস্বিদ্ধের অনুপস্থিতি বা পরীক্ষনের সুযোগের অভাব কোন হাইপোথিসিস কে তত্বে রুপান্তর অনুমোদন করে না। কিন্তু পরিসংখ্যানের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভাব্য ফলাফল অন্তত ব্যবহারিকভাবে গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু অধিবিদ্যিক বুজরুকী তথা চিরায়ত অলৌকিক সমন গুলো কেবলমাত্র গড ইন গ্যাপ্স ধারনাক্রান্ত।

রায়হান আবীর এর ছবি

মানুষ কে মানুষ ভাবাই মানুষ কে সর্বোচ্চ সম্মানিত করা অতিলৌকিক উচ্ছিষ্ট ভাবার চেয়ে। তাই নৈর্বত্তিক হতে চাই ,তীব্র ভাবেই নৈর্বত্তিক হতে চাই।

চলুক

হোসেন [অতিথি] এর ছবি

মজা হচ্ছে এই সত্যটা এড়িয়ে আমরা আত্নপ্রসাদ পেতে চাই খুব,ভাবতে চাই অলৌকিক সমর্পনে মহান হচ্ছি। নিদারুন রসিকতা এটাই উঠতে গিয়ে কি ভয়ংকরভাবে নেমে যাই আমরা।

রায়হান আবীর এর ছবি

সেইটাই। অবশ্য তাদের এই কথা বললে ... থাক!! ইয়ু বেটার নো...

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

লেখাটার পেছনের চেতনাটা খুব ভালো লেগেছে। বিজ্ঞান নিয়ে অনেক লেখাই সম্ভব এবং অবৈজ্ঞানিক চেতনা নিয়েও বিজ্ঞানের তথ্যমূলক লেখা সম্ভব। কিন্তু চেতনা বিজ্ঞানের দর্শনের সাথে একাত্ম না হলে সে লেখা বিজ্ঞান চর্চার জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।