(২) পৃথিবী নামের দেশটার টরন্টো নামের শহর থেকে...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৪/০৪/২০০৯ - ১০:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোল্ড আউট, এহ্?
জীবনে প্রথম বরফ দেখতে চীন বর্ডারে সিকিমের ইয়ামথাং গিয়েছিলাম, পরিচয় লুকিয়ে ভারতীয় সেজে, ধরা খেলে এদ্দিনে কই যে থাকতাম! তখন নিশ্চয়ই বিধাতা মুচকি হেসে বলেছিলেন, তোর কপালে তো বরফ-চুবা লিখে রেখেছি, তুই আবার বরফ দেখতে এত কষ্ট করিস ক্যান রে বোকা? টরন্টোর -২৩ ডিগ্রী সেঃ আমাকে স্বাগত জানায় । এখানকার বিচারে এটা নাকি তেমন ঠান্ডা না! তবে উইন্ড-চিল জিনিষটা কি সেটা আমি প্রথম বারের মত হাড়ে হাড়ে টের পেলাম (আক্ষরিক অর্থেই)! দিনের বিভিন্ন সময় এখানে তাপমাত্রার তারতম্য থাকতে দেখেছি ১৫ ডিগ্রী সেঃ পর্যন্ত । আজকে আবার সাড়াদিন ধরেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি । এখানকার লোকেরা যেকোন জায়গায়, যেকোন অবস্থায় আবহাওয়া নিয়ে কথা বলতে বা হা-হুতাস করতে পছন্দ করে, আর তাপমাত্রা একটু ভালোর দিকে হলে এদের আনন্দ বুঝি ধরেনা । আর প্রায় কথার পিছনে “এহ্?” যোগ করে আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়াটা হলো কানাডীয় বৈশিষ্ট্য ।

কত্তো বড় দেশ রে বাবা...
রাশিয়ার পরে আয়তনে কানাডা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ, ৬৯টা বাংলাদেশ অনায়াসে এর মধ্যে এটে যাবে, কিন্তু লোকসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি ! সুতরাং, দলে দলে লোক এইখানে আসা দরকার । তবে এখানকার নতুন অভিবাসন-নীতিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আসা বেশ কঠিন হয়ে গেছে । অস্ট্রেলিয়া আর ইউকেতেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশীদের জন্য সু্যোগ কমে আসছে । এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিমি’র দেশটা কোন ভাবেই আজ থেকে ১০ বা ২০ বছর পরে ২০ বা ২৫ কোটি লোকের ভাড় নিতে পারবে না । উপায়টা কি ?

চলতে ফিরতে বই/পত্রিকা...
এখানে একটা জিনিষ দেখতে খুব ভালো লাগে, সেটা হচ্ছে এখানকার মানুষ বাসে, ট্রেনে, ট্রামে পড়ে – দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বই; অনেকে সুডোকু বা ক্রস ওয়ার্ডে মাথা খাটাতে থাকে । অনেকেই বাসে-ট্রেনে পড়ার জন্য বই সাথে নিয়ে ঘুরে, ভীড়ের মধ্যেও যে যার মত পড়ে । বাস ড্রাইভারকেও দুটি ট্রিপের ফুসরতে ক্রস ওয়ার্ডে মাথা ঘামাতে দেখেছি । ইউরোপ আমেরিকাতেও এটা দৈনন্দিন চিত্র বলে জানি । সম্ভবত এটা একটা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর লক্ষন । আর এখানকার বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা বিনা পয়সায় পাওয়া যায়, যেগুলোর মান ভালোই । এই পত্রিকাগুলো খেটে খাওয়ে মানুষদেরকেও পড়ার মধ্যে রাখছে ।

চলতে চলতে পড়াচলতে চলতে পড়া

কুকুর-ময়-ভাগ্য
এখানকার লোকদের কুকুর-প্রীতি দেখলে ছোটবেলায় পড়া সাহেবের তিন-ঠ্যাং-ওয়ালা কুকুরের ঠ্যাং-প্রতি মাসিক খরচ আর সংস্কৃতি-পন্ডিতের বিশাল পরিবারের মাসিক খরচের সমীকরণ মনে পড়ে যায় । কত বিচিত্র আকার আর ধরনের কুকুর-মহাশয়দের সাথে যে দেখা হলো । এখানে কারো হাতে একটা কুকুরের চেইন বাঁধা, কারো হাতে বেশী । কুকুরেরা রীতিমত লিফটে চলাফেরা করে, তবে সাইজ বেগতিক হলে আমি সঙ্গী হই না । প্রচন্ড শীতে-বরফেও মালিক/মালকিনরা এনাদের হাটাতে, প্রকৃ্তির ডাকে সাড়া দেয়াতে বের হন । এখানকার মানুষ হয়তো জীবনের কিছু একটা অবলম্বন খুঁজে নিতেই কুকুরকে বেছে নেয় । ক’দিন আগে গার্বেজে চার মাস বয়সী এক কুকুরছানাকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেটা নিয়ে চারদিকে তোড়জোর, পুলিশ মাঠে নেমে পড়েছে দোষী মালিককে খুঁজে বের করতে, অনেকেই কুকুরছানাটির সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, বেশ কিছু লোক আগ্রহ প্রকাশ করেছে এর দায়িত্ব নিতে ! পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ কুকুর-ময়-ভাগ্য পেলে মন্দ হোত না !!

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভাল্লাগতেছে...

অতিথি লেখক এর ছবি

@ আনোয়ার সাদাত শিমুল ... ধন্যবাদ

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা প্রথম পাতায় দেখছিনা !?!

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অভিজ্ঞতা থেকে জানি - সচলায়তনে সম্মানিত অতিথিদের লেখা মডারেশন প্যানেলের বিবেচনায় প্রকাশিত হতে পারে - ১ম পাতায় কিংবা কেবল অতিথি লেখকের পাতায়। অথবা একেবারেই প্রকাশিত হয় না। প্রকাশের স্থান নির্ভর করে লেখার মান ও পর্যায়ের উপর।

আপনি এসব একদম না ভেবে নিয়মিত লিখে যান, অন্য সচলের লেখায় কমেন্ট করে যান...। গুড লাক।

আলাভোলা এর ছবি

চলুক
--
আমার এই দেশেতে জন্ম, যেন এই দেশেতেই মরি...

টুটুল এর ছবি

বিনা পয়সায় কানাডা ভ্রমন হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

@ আনোয়ার সাদাত শিমুল ... ধন্যবাদ, বুঝলাম

@ আলাভোলা, টুটুল ভাই ...ধন্যবাদ

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।