অন্তরীণ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৫/২০০৯ - ৪:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফজর নামাজ পড়েই কাস্তে হাতে ঘর থেকে বের হয় জয়নাল মিয়া। নিজে খাওয়ার পূর্বেই গরু দুটোর জন্য ঘাস কাটতে যাওয়া জয়নাল মিয়ার বহুদিনের অভ্যাস। এখন গ্রীষ্মের শেষ, কাটা ধানক্ষেতগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বর্ষার নদী উপচানো পানির জন্য। আর সেই ফাঁকে লকলকে ঘাসগুলোও বিনা বাধায় শুষে নিচ্ছে জমির সমস্ত রস । জয়নাল মিয়া হেঁটে যায় সে বিশাল ঘাস মাড়িয়ে। নিজ ক্ষেতের আইলে এসে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয়। সুবিশাল এই পৃথিবীতে এই কয়েক কাঠা জমিই তার সম্পত্তি। তাতে দুঃখ নেই তার, কিন্তু কখনও কখনও খুব বেশি উচ্চবিত্ত হবার বাসনাটা মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠে। তখন কিছু্ক্ষণের জন্য হলেও সেই দুঃখটা যেন ছুঁয়ে যায় মনকে।

আজও তার মনটা বড় উতলা, বড় হবার এই স্বপ্ন বারবার তার মনে উঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার স্বভাব তার নেই। তাই ওই সকল চিন্তাকে প্রসারিত হতে না দিয়ে মনটাকে স্থির করে কাজে আত্মনিয়োগ করে। কিছুক্ষণ পরেই একটা অভাবনীয় ঘটনা ঘটে যায়। লম্বা লম্বা ঘাসগুলো কাটতে কাটতে এক সময় ঘাসের ফাঁক দিয়ে তার চোখে ধরা পড়ে একটি অকল্পনীয় বস্তু। ছোট একখানা প্যাকেটে মোড়া কয়েকখানা বড় বড় টাকার তোড়া। বড় হবার যে অপূরিত স্বপ্ন এতক্ষণ জয়নাল মিয়ার চোখ জুড়ে খেলা করেছে তার সবকয়টিকে অনায়াসে পূরণে সক্ষম এই ক্ষুদ্র প্যাকেটটি। তার আধমরা হয়ে বেঁচে থাকা জীবনের রূপ বদলে দিতে পারবে নিমিষেই। নতুন আশা ও স্বপ্নের ভীড়ে চকচক করে উঠে জয়নাল মিয়ার চোখ।

ফসলের তাড়া নেই তাই বিশাল মাঠটি এখন কৃষকহীন, নির্জন। এই বিশাল শূন্যতা জুড়ে কেবল জয়নাল মিয়া আর ছোট প্যাকেটটি। স্বপ্নের প্রচণ্ডতায় হাতখানা সে বাড়িয়ে দেয় প্যাকেটটির দিকে, কিন্তু তাকে ধরতে পারে না। প্যাকেটটি ছোয়ার আগেই তার হাত থেমে যায় আচমকা এক অনাকাঙ্ক্ষিত স্থিরতায়। ধর্মভীরু জয়নাল মিয়ার মনের অবচেতন বোধটুকু জেগে উঠে। তার মনের কোণে ভয় জেগে উঠে নির্জন বিশাল মাঠ তবু সৃষ্টিকর্তা উপরে প্রহরী। পরধনের প্রতি তার এই লোভ নিমেষেই মন থেকে বিলীন হয়ে যায় ঐ একটি দৃষ্টির ভয়ে। অগোচর স্বপ্ন সফলের যে প্রবল বাসনা এতদিন তাকে কেবল ভাবিয়েছে, আজ সেই বাসনাকে যেন সে পায়ে মাড়িয়ে দিল। হাতখানা ধীরে ধীরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে জয়নাল মিয়া, অতঃপর কাস্তেখানা হাতে তুলে আধকাটা ঘাস নিয়ে নিজের বাড়ির পথে নত মস্তকে যাত্রা শুরু করে।

সালাহউদদীন তপু


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অতি কাল্পনিক মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় আপনি একটু সময় নিয়ে লেখুন, ভালোবেসে লিখুন। এত তাড়াহুড়ার কিছু নাই।

স্পর্শ এর ছবি

প্রথম প্যারাটি ভালো লেগেছে। লিখতে থাকুন। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তানবীরা এর ছবি

জয়নাল মিয়ার হাত দিয়ে টাকা না ধরাটা অবিশ্বাস্য। এতো বেক্কল আজকাল বাচ্চাও জন্মায় না ঃ)

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।